#তাজ-ইলোর প্রণয়ালাপন
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি
পর্ব:৪১
“সবার আগে তোমাকে একটা প্রশ্ন করব। আশা করি সঠিক উত্তর দিবে”, আমার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বললেন শ্রেয়ান ভাইয়া।
আমি প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথা কাত করে সম্মতি জানালাম। শ্রেয়ান ভাইয়া নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে খানিক বাদেই বলে উঠলেন,
“তুমি কি জানো তাজ তোমাকে ভালোবাসে?”
আমি কিছু সময়ের জন্য থমকে গেলাম। এ কথা শ্রেয়ান ভাইয়া জানেন কীভাবে? তাজ ভাই বলেছেন না কি? কিন্তু শ্রেয়ান ভাইয়া এ কথা জেনেও তাজ ভাইয়ের সামনে আমাকে প্রপোজ করলেন কীভাবে? আশ্চর্য! আমি দ্বিধাভরা মুখ করে আমতা-আমতা করতে লাগলাম। শ্রেয়ান ভাইয়া দৃঢ় কন্ঠে বললেন,
“নির্দিধায় বলতে পারো। জানো না কি?”
এবার আমি ধীর গতিতে ওপর-নিচে মাথা ঝাঁকালাম। শ্রেয়ান ভাইয়া সঙ্গে সঙ্গেই ভ্রুকুটি করে বললেন,
“তাজ তো কখনও নিজের মনের কথা তোমাকে বলেনি। জানলে কীভাবে?”
আমি শ্রেয়ান ভাইয়ার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বললাম,
“ওনার আচার-আচরণে বুঝতে পেরেছি।”
“আচ্ছা। ও নিজের মনের কথা কখনও বলে না কেন, তা জানো?”
আমি ডানে-বায়ে মাথা দুলিয়ে বললাম,
“না। এটা জানার অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু কখনও জানতে পারিনি।”
“কারণ ও তোমাকে বিয়ে করে তারপর নিজের মনের কথা বলতে চায়।”
আমি অবাক হয়ে শ্রেয়ান ভাইয়ার কথা শুনলাম। শ্রেয়ান ভাইয়া একটু থেমে আবার বললেন,
“সুইডেন থেকে ফেরার পর থেকেই ও তোমাকে ভালোবাসে। এ কথা আমি নিজেও জানতাম না। কয়েকদিন আগে জেনেছি। জানলে আমি কখনোই তোমাকে নিজের মনের কথা বলতাম না। আমি তোমাকে ভালোবাসি, এটা যেমন সত্যি। তেমনি আমি তাজকে ভালোবাসি, এটাও সত্যি। তোমাকে আমি যেদিন প্রপোজ করেছিলাম, সেদিন রাতেই জানতে পারি তাজও তোমাকে ভালবাসে। আমার আগে ও তোমাকে ভালোবেসেছে। তা-ও স্বয়ং তাজ নিজের মুখে আমাকে বলেছে। সেদিন আমি অন্তত এটুকু বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমার থেকে দ্বিগুণ বেশি তাজ তোমাকে ভালবাসে। ওর মতো করে হয়তো আমি কখনোই তোমাকে ভালোবাসতে পারব না। সেদিন তাজ খুব বিধ্বস্ত মুখে আমার সামনে এসেছিল। কিছু বলতে গিয়েও বারবার আটকে যাচ্ছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম ও খুব দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে। তাই অভয় দিয়ে বলেছিলাম যা বলার নির্দ্বিধায় বলতে। ও খপ করে আমার হাত দুটো মুঠোয় চেপে ধরেছিল। অসহায় মুখে বলেছিল ওর জীবনে ও একজনকেই ভালোবেসেছে। আর সে হচ্ছ তুমি। ওর এলোমেলো জীবন সেদিন থেকেই গুছিয়ে নিয়েছে, যেদিন ও তোমার প্রতি ভালোবাসা অনুভব করেছে। সুইডেন থাকাকালীন ও বেশিরভাগ সময় প্রচন্ড ডিপ্রেশড থাকত। আন্টি-আঙ্কেলকে, নিজের দেশকে, আপন মানুষদেরকে খুব মিস করত। তুমি ওর জীবনে আসার পর ওর জীবনটাও বদলেছে। ওর ধারণা ও তোমাকেও অনেকটা বদলে দিতে পেরেছে। ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে তোমাকে লাইফ পার্টনার করে বাকি জীবন সাচ্ছন্দ্যে কাটিয়ে দিবে। তোমাকে নিয়ে ও খুব ভয়ে থাকে। কখনও কোনোভাবে যদি তোমাকে হারিয়ে ফেলে, তাই। আমি শুধু অবাক হয়ে শুনে গেছি। আমি ওকে যতটুকু চিনি তাতে আমার ধারণা ছিল, ওর মতো মানুষ আর যাই হোক কারো প্রেমে পড়তে পারে না। অথচ সেদিন আমার বিস্ময় ক্রমশ বেড়েই চলল। ও আমার হাত দুটো ধরে অনুরোধ করে বলেছিল, আমি যেন আর কখনও তোমাকে নিজের ভালোবাসার কথা না বলি। কারণ ও কোনো মূল্যেই তোমাকে হারাতে চায় না। ওর থমথমে মুখ আর এলোমেলো অবস্থা দেখে আমি ওর মনের অবস্থাটা বুঝতে পেরেছিলাম। আর এটাও আন্দাজ করতে পেরেছিলাম যে, তাজের মন যতই শক্ত হোক, সেটা তোমার ক্ষেত্রে বিপরীত। একমাত্র তোমার ক্ষেত্রে ওর মন তুলোর মতো নরম। তোমার দিক থেকে ও কোনো আঘাত পেলে তা সামলাতে পারবে না। রামিশাকে হারিয়েও আমি নিজেকে সামলে এই পর্যন্ত এসেছি। কিন্তু তাজ পারবে না। আমি নিশ্চিত ও উলটা-পালটা কিছু করে বসবে। কষ্ট হয়েছিল, তবু আমি ওকে কথা দিয়েছিলাম আমি কোনোদিনও তোমাদের দুজনের মাঝে আসব না। তাই নিজেই তোমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। হ্যাঁ, তাজ আমাকে বলেছিল আমি যেন তোমার সাথে যোগাযোগ রাখি। আমিই না করেছিলাম। ভালোবাসার আঘাতগুলো খুব তীব্র হয় ইলোমিলো। আর আমি দ্বিতীয়বারের মতো সেই আঘাত পুনরায় ফিরে পেয়েছি। নিজেকে সামলে নিতেই তোমার থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম। সেজন্য আমি দুঃখিত।”
শ্রেয়ান ভাইয়া থামলেন। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করলেন। ওনার মুখোভাব দেখে বুঝলাম কথাগুলো বলতে ওনার কষ্ট হচ্ছে। এদিকে আমি স্তব্ধ হয়ে শুনে যাচ্ছি। তাজ ভাই আমার জন্য শ্রেয়ান ভাইয়ার হাত ধরে অনুরোধ করলে, এখন কেন সে নিজেই আমাকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিতে চাইছে? এ কেমন রহস্য? ইতোমধ্যে চোখের কার্নিশ বেয়ে নিঃশব্দে জল গড়াতে শুরু করেছে। আর কত বিস্ময় আমার জন্য অপেক্ষা করছে তা জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে শ্রেয়ান ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। শ্রেয়ান ভাইয়া মিনিট খানেক পর পুনরায় বলতে শুরু করলেন,
“গত তিনদিন আগেও তাজ সেই একই অবস্থায় আমার কাছে এসেছিল। তবে সেদিন শুধু ওর মুখটাই বিধ্বস্ত ছিল না, চোখ দুটোও ভেজা ছিল। জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছিলাম ও নিজে তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করছে। তোমার বিয়ের কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়েছিলাম। নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পরে ও বলল ও তোমাকে নিয়ে এখন আরও বেশি ভয় পায়। ওর ভয়টা বেড়েছে তুমি কিডন্যাপ হওয়ার পর। ওর ধারণা ভবিষ্যতে তুমি এমন আরও বিপদের সম্মুখীন হতে পারো। কারণ ওর দুর্বলতা বলতে তুমিই আছো। আর শত্রুর নজর দুর্বল জায়গাতেই আগে পড়ে। তুমি মনের দিক থেকে খুবই দুর্বল আর ভীতু। তাই এসব সামলে ওঠা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়। এসব নিয়ে ও আগে কখনও ভাবেনি। কিন্তু কিডন্যাপিংয়ের পরেই ওর মনে এসব ভয় দানা বেঁধেছে। ও চায় না ওর জন্য তোমার জীবনে কোনো দুর্যোগ নেমে আসুক। তাই নিজের মনে পাথর চাপা দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে করে হোক ও তোমাকে সুখী দেখতে চায়। আর ওর মনের কথা এখনও তোমাকে জানায়নি বলেই সিদ্ধান্তটা এত দ্রুত নিতে পেরেছে। সিদ্ধান্তটা ওর জন্য সহজ ছিল না। ও সেদিন খুব কেঁদেছিল আমার চোখের সামনে। ওর মায়ের মৃত্যুর পর দ্বিতীয়বারের মতো আমি ওকে আবার ডুকরে কাঁদতে দেখেছিলাম। আমি সেদিন বারবার নিষেধ করেছিলাম এসব সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য। এই নিয়ে রীতিমতো ঝগড়া বেঁধে গিয়েছিল ওর সাথে। কিন্তু ও নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। শুনেছি তোমার বাবাকে ও হাতে-পয়ে ধরে অনুরোধ করে রাজি করিয়েছে এই বিয়েতে। তোমার ভালোর কথা ভাবতে গিয়ে ও ওর জীবনে সবথেকে বড়ো ভুল সিদ্ধান্তটা নিয়েছে ইলোমিলো। আমি শিওর এই বিয়ে হলে ও এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে। বিশ্বাস করো, ও বাঁচবে না। ভালোবাসার ক্ষেত্রে আমার মতো সহ্য ক্ষমতা ওর নেই। ও নিজেও তা জানে। তবু জেদ ধরে বসে আছে। যেচে নিজের মরণের পথ তৈরি করছে। ও আমাকে নিষেধ করে দিয়েছিল আমি যাতে তোমাকে এসবের একটা কথাও না বলি। কিন্তু আমি ওর কথা রাখতে পারলাম না। বন্ধু যেচে মরতে চাইছে জেনেও চুপ থাকব কীভাবে? ইলোমিলো, আমি এসব কথা তোমাকে বলেছি কারণ এখন শুধুমাত্র তুমিই শেষ ভরসা। যা করার তোমাকেই করতে হবে। এই বিয়েতে তুমি রাজি হবে না ইলোমিলো। আমি তোমার কাছে রিকোয়েস্ট করছি, প্লিজ। আমি জানি আঙ্কেলের সিদ্ধান্তের ওপর কথা বলার সাহস তোমার নেই। কিন্তু বিশ্বাস করো, তুমি সাহস করে একবার না বললে সেই বিয়ে কখনোই হবে না। তাজ যেভাবে হাতে-পায়ে ধরে আঙ্কেলকে বিয়েতে রাজি করিয়েছে, তুমিও ঠিক সেভাবেই আঙ্কেলকে না বলে দাও। পারবে না?”
আমি উত্তর কী দিব? চোখের পানি আটকাতেই তো হিমশিম খেতে হচ্ছে। আশেপাশের কয়েকজন ছেলে-মেয়ে আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে। অনেকে নিজেদের মধ্যে ফিসফাসও করছে। আমি মাথা নিচু করে বারবার চোখ মুছে চলেছি। লোকটা আমাকে ভালোবাসে জানতাম, কিন্তু এতটা তা জানতাম না। বুকের মধ্যে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। ইচ্ছে করছে ছুটে চলে যাই তার কাছে। শ্রেয়ান ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে হয়তো আমাকে সময় দিলেন। আমি যতটা সম্ভব নিজেকে সামলে নিলাম। অতঃপর থমথমে মুখে বললাম,
“এতকিছু হয়ে গেল অথচ আমি খুনাক্ষরেও টের পেলাম না!”
শ্রেয়ান ভাইয়া একটা তপ্ত দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
“আমাকে উঠতে হবে ইলোমিলো। তুমি কিছু তো বলো প্লিজ।”
“ঠিক আছে। আমি চেষ্টা করব ভাইয়া”, আশ্বাস দিয়ে বললাম আমি।
শ্রেয়ান ভাইয়া এবার ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসির রেখা টানলেন। বললেন,
“আমি তোমার ওপর ভরসা রাখছি। কোনোভাবেই ভয় পাবে না। কখনও কখনও কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গেলে একটু সাহস জোগাতে হয় ইলোমিলো। পারবে তো?”
আমি মাথা দুলিয়ে বললাম,
“পারব।”
“ফুসকা অর্ডার দিই?”
“নাহ্, রুচি নেই। অন্য একদিন খাব।”
শ্রেয়ান ভাইয়া জোর করলেন না। স্থির দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হুট করে বলে উঠলেন,
“তুমিও তাজকে খুব ভালোবাসো, তাই না ইলোমিলো?”
আমি খানিক থমকালাম। এক পলক শ্রেয়ান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে পুনরায় দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম। মন বলল সম্মুখে বসা ভগ্ন হৃদয়ের প্রেমিকের সামনে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা খুব বড়ো স্বার্থপরতা হয়ে যাবে। আড়চোখে একবার তাকিয়ে বুঝলাম শ্রেয়ান ভাইয়ার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে মলিন হাসি। কৃত্রিম হাসি দিয়ে লোকটা নিজের কষ্টগুলো আড়াল করতে চাইছে।
ওনার কষ্টগুলোর কাছে আমার বা তাজ ভাইয়ের কষ্টগুলো বলতে গেলে খুবই তুচ্ছ। পরপর দু-দুটো ধাক্কা সামলেও উনি কীভাবে এত স্বাভাবিক আছে কে জানে? আল্লাহ্ ওনাকে এতটা ধৈর্য দান করেছেন বলেই হয়তো কষ্টগুলো ওনার ঝুড়িতেই গিয়ে জমা হয়। আরও কিছুক্ষণ টুকটাক কথা বলে শ্রেয়ান ভাইয়া তাড়া দেখিয়ে চলে গেলেন।
দুপুরে বাবার সাথে ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরেই আমি সবকিছু বিছানায় এলোমেলো করে রেখে আগে তাজ ভাইয়ের রুমে ছুটলাম। বাবার সাথে কথা বলার আগে ওনার সাথে কথা বলতে হবে। কিন্তু ওনার রুমে গিয়ে ওনাকে পেলাম না। বাড়ি ফেরেননি না কি? হয়তো কোনো কাজে ব্যস্ত আছেন। নিরাশ হয়ে আমি পুনরায় নিজের রুমে ফিরে এলাম। কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। গোসল করে বেরিয়ে চুলগুলো কোনোরকমে মুছে তোয়ালেটা বেলকনিতে মেলে রেখে এলাম। তখনই হখৈ জেসিকার আগমন ঘটল। দরজায় টোকা দিতেই আমি ফিরে তাকালাম। সে মিষ্টি হেসে বলল,
“মে আই কাম ইন?”
আমিও মৃদু হেসে বললাম,
“ইয়েস, কাম, কাম।”
এসময় জেসিকার আগমন আমার জন্য মোটেও খুশির ব্যাপার না। তবু ভদ্রতার খাতিরে সৌজন্যমূলক হাসিটুকু মুখে ঝুলিয়ে রাখতে হলো। জেসিকা রুমে ঢুকে আমার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ডান হাতটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো। দেখলাম ওর হাতে একটা ভাঁজ করা কাগজ। আমি কিছুটা অবাক হয়ে ভ্রুকুটি করলাম। জেসিকা হাসিমুখে বলল,
“টেক ইট।”
এবার আমি হাত বাড়িয়ে কাগজটা নিলাম। প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে কাগজের দিকে তাকাতেই জেসিকা বলল,
“রিড দিস, ওকে?”
আমি মাথা কাত করে সম্মতি জানালাম। সঙ্গে সঙ্গেই জেসিকা চলে গেল। সে চলে যেতেই আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কাগজের ভাঁজ খুললাম। ইংরেজি অক্ষরের ঝকঝকে কয়েকটা শব্দ চোখে পড়ল। খুব সুন্দর হাতের লেখা। নিশ্চয়ই জেসিকার। যাক, মেয়েটার সুবুদ্ধি হয়েছে। দ্রুত ফোন বের করে জেসিকার লেখা ইংরেজি বাক্য বাংলায় ট্রান্সলেট করলাম। জেসিকা লিখেছে,
“ইলোরা, ভালোবাসা শব্দটা খুব দুর্লভ। ভাগ্য করে তুমি সেই দুর্লভ জিনিসটা পেয়েছ। এত সহজে তা হারিয়ে যেতে দিয়ো না প্রিয়। হানি তোমাকে ঠিক কী পরিমাণ ভালোবাসে, সেই ধারণা তার নিজেরও নেই। প্রকৃত ভালোবাসা ধরে রাখতে শেখো, এত সহজে হারিয়ো না। আমি তোমার পাশে আছি।”
লেখাটা পড়ে আমি বুক ফুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। কাগজটা নিয়ে বইয়ের ভাঁজে রেখে দিতেই হঠাৎ চোখ আটকাল গুছিয়ে রাখা বইগুলোর ওপরে। ভীষণ অবাক হয়ে ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে ফেললাম। আমার হারিয়ে যাওয়া সেই ডায়েরি! হাত বাড়িয়ে ডায়েরিটা হাতে নিলাম। এক বছরেরও বেশি সময় হয়েছে আমি এই ডায়েরিটা হারিয়েছিলাম। সবসময় ড্রয়ারেই রাখতাম। হঠাৎ একদিন ড্রয়ার থেকে উধাও হয়েছিল। সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোথাও পাইনি। সেদিন খুব মন খারাপ হয়েছিল। কারণ এই ডায়েরিটাতে আমার ব্যক্তিগত অনেক কথা লেখা আছে। ডায়েরি লেখার অভ্যাস আমার কোনোকালেই ছিল না। বড়ো হওয়ার পর যখন একাকীত্ব খুব করে আমাকে গ্রাস করতে শুরু করেছিল, তখন থেকেই ডায়েরিকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম নিজের মনের সব কষ্টগুলো উজাড় করে দিতে। আম্মুর মৃত্যুর পর থেকে আমার দিনগুলো কেমন কেটেছে সব লিখে রেখেছিলাম। বলতে গেলে নিজের জীবনকাহিনি সব বিশ্লেষণ করে লিখে রেখেছিলাম। কিন্তু এই গায়েব হওয়া ডায়রি আবার হঠাৎ কোত্থেকে উদয় হলো? আশ্চর্য! চুরি-টুরি হয়ে গেলে চোর তো আর এই এক বছর পর আবার এটা ফেরত দিতে আসবে না। তাহলে? বিস্ময় নিয়ে ডায়েরিটা নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলাম। হঠাৎ একটা পৃষ্ঠায় দৃষ্টি পড়ল। আমি মনোযোগ দিয়ে দেখলাম এই পৃষ্ঠায় আমি লিখেছিলাম জীবনসঙ্গী হিসেবে ঠিক কেমন ছেলে আমার পছন্দ। খুব কেয়ারিং, দায়িত্বপরায়ণ, নামাজী, আমার একাকীত্ব দূর করতে পারবে, পড়ন্ত বিকেলে আমাকে নিয়ে ছাদে আড্ডা দিবে, হুটহাট সারপ্রাইজ দিয়ে আমার মন ভালো করে দিবে, পাঞ্জাবি পছন্দ করবে ইত্যাদি, ইত্যাদি আরও অনেক কথা। কত কথা যে লিখেছিলাম! এখন পড়ে নিজেরই হাসি পেল। কিন্তু লেখাটুকুতে আমার দৃষ্টি স্থির হয়ে রইল। হুট করেই বিরাট এক রহস্য উদঘাটন করে ফেললাম। অতিরিক্ত বিস্ময়ে আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লাম। মাথায় হাত দিয়ে বিড়বিড় করলাম,
“তার মানে তাজ ভাই মাইন্ড রিডার না। সব ভাঁওতাবাজি! হায় আল্লাহ্!”
চলবে………………?
(দুঃখিত, পোস্ট করতে অনেক দেরি হয়ে গেল। নিচের লিংক থেকে গ্রুপে জয়েন হয়ে সবাইকে এক্টিভ থাকার অনুরোধ রইল। হ্যাপি রিডিং।❤️)
পার্সোনাল গ্রুপ লিংক:
https://www.facebook.com/groups/935884643636506/?ref=share