তাজ ইলোর প্রণয়ালাপন পর্ব:৩৮

0
338

#তাজ-ইলোর প্রণয়ালাপন
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি
পর্ব:৩৮

সবেমাত্র চোখ দুটোতে তদ্রা এসে ভর করেছে, ওমনি সারা মুখে ঠান্ডা পানির ফোঁটার অস্তিত্ব অনুভব করলাম। প্রথমে অলসতার কারণে চোখ মেলতে ইচ্ছে করল না। কিন্তু পরপর কয়েকবার একই ঘটনা ঘটায় অলসতা কাটিয়ে চোখ খুলতেই হলো। চোখ খুলতেই চোখ-কপাল কুঁচকে এল। ঝট করে উঠে বসে মুখের পানি মুছতে মুছতে তেতে উঠলাম,
“কী সমস্যা আপনার?”
“এই প্রশ্ন তো আমার তোকে করা উচিত। কী সমস্যা?” অতি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাতের পানির গ্লাসটা টেবিলে রাখতে রাখতে বললেন তাজ ভাই।
আমি ওনার কথাটা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে ত্যাড়াভাবে উলটো প্রশ্ন করলাম,
“আপনি পারমিশন ছাড়া আমার রুমে এসেছেন কেন?”
“তুই নিজে কবে পারমিশন নিয়ে আমার রুমে গিয়েছিস?”
“আপনি যান তো। এই রাতবিরেতে ভূত চেপেছে মাথায়? পানির ছিটা দিলেন কেন?”
“ডিনার করিসনি কেন?” টেবিল থেকে খাবারের প্লেট হাতে নিতে নিতে প্রশ্ন করলেন তাজ ভাই।
সঙ্গে সঙ্গে আমি শক্ত মুখে বললাম,
“খাব না আমি। আপনাকে এত দরদ দেখাতে কে বলেছে? যান এসব নিয়ে।”
আমার কথা তোয়াক্কা না করে তাজ ভাই আমার মুখোমুখি বসে ধমকে উঠে বললেন,
“সাট আপ স্টুপিড। বাড়তি কথা শুনতে চাই না। তোর এসব আজাইরা বকবক শোনার সময় নেই আমার। শখে আসিনি আমি।”
আমার চোখ দুটো হঠাৎ করেই ছলছল করে উঠল। মুখটাও শক্তপোক্ত হয়ে গেল। আমার এটুকু কথাতেই এভাবে ধমকে উঠলেন উনি। কই? জেসিকার সাথে তো এমন করেন না। সবসময় কী মিষ্টি করে কথা বলেন। তো আমি কি দোষ করলাম?
“তো আসেন কেন আমার আজাইরা বকবক শুনতে? আমি কি বলেছি আসতে? নিজেই তো যেচে আসেন আমার মাথা খেতে। চলে যান, আসবেন না আর আমার রুমে। কারো দরদের দরকার নেই আমার। আপনার দরদের জন্য আমি মরে যাচ্ছি না। আপনি আসার আগেও আমি বেঁচে ছিলাম।”
কাঁদো কাঁদো গলায় কিছুটা জোরেই কথাগুলো বলে আমি দ্রুত বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালাম। যেন সারাদিনের সমস্ত রাগ একবারে উপড়ে দিলাম। তারপর আর ওনার দিকে ফিরেও তাকালাম না। হনহন করে হেঁটে সোজা বেলকনিতে চলে গেলাম। দুহাতে শক্ত করে রেলিং আঁকড়ে ধরে থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম লক্ষ্যভ্রষ্ট দৃষ্টি বাইরে নিবদ্ধ করে। এভাবে কোনোদিন আমি কারো সাথে চেঁচামেচি করে কথা বলেছি বলে আমার মনে পড়ে না। এতটা রাগও কাউকে দেখানোর সুযোগ হয়নি। আম্মু চলে যাবার পর তো বাবাই একমাত্র সঙ্গী। রাগ দেখাব কার সাথে? হঠাৎ করে যে এমন আচরণ করে ফেলব তা বুঝে উঠতে পারিনি। এভাবে রিয়্যাক্ট করা কি ঠিক হয়েছে? না হোক, আমার কি? আসে কেন জোর দেখাতে? আমি কখনও বলি ওনার অনুগ্রহ প্রয়োজন আমার? যেচে আসবে, আর আমাকেই ধমকে যাবে কেন সবসময়? মগের মুল্লুক পেয়ে বসেছে। মাথাটা রাগে দপদপ করছে। কেন জানি চোখের কার্নিশ বেয়ে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। আমি চোখ বন্ধ করে নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করলাম। হঠাৎ পেছনে পদধ্বনি শুনতে পেলাম। জানি তাজ ভাই এসেছেন, তবু ঘুরে দাঁড়ালাম না। একইভাবে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলাম। বাহুতে হাতের স্পর্শ পেলাম। আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তাজ ভাই নিজেই হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন আমার মুখের দিকে। ওনার অবাক হওয়ার কারণ বুঝতে আমার অসুবিধা হলো না। দ্রুত হস্তে চোখের নিচের পানিটুকু মুছে ফেললাম। ফাঁকা একটা ঢোক গিলে অন্যদিকে মুখ করে আমতা-আমতা করতে লাগলাম। তাজ ভাই সশব্দে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তারপর দুহাতে আমার মুখটা আলতো করে তুলে ধরলেন। সস্নেহে চোখের পানি মুছে দিতেই আমি বললাম,
“আমি……।”
“হুঁশ, একদম চুপ। এসব কী হ্যাঁ? বাচ্চা তুই? কাঁদছিস কেন? এটুকু বকুনিতেই এভাবে কাঁদা লাগে? এমন তো প্রতিদিনই বকি। একদিনও তো এভাবে কাঁদতে দেখলাম না।” আমার কথা মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে নরম কন্ঠে বললেন তাজ ভাই।
আমি থমথমে গলায় বললাম,
“কাঁদছি না।”
“আমি অন্ধ নই।”
আমি আর উত্তর দিলাম না। গাল থেকে ওনার হাত দুটো আস্তে করে সরিয়ে পুনরায় ঘুরে দাঁড়িয়ে রেলিংয়ে হাত রাখলাম। পরক্ষণেই তাজ ভাইয়ের আকস্মিক কান্ডে চমকে উঠলাম। উনি পেছন থেকে আমার দুহাতের ওপর হাত ঠেকিয়ে কাঁধে থুতনি রাখলেন। আমি কিছু সময়ের জন্য থমকে গেলাম। শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কেমন গা ছাড়া ভাব এসে ভর করল সারা শরীরে। শুকনো একটা ঢোক গিলে কাঁপা গলায় বললাম,
“কী করছেন? সরে দাঁড়ান।”
উনি আমার কথা কানে না নিয়ে কাঁধে থুতনি রেখেই আমার নত মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“জেসিকা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমরা সেইম ইয়ার। ভাইয়ার বিয়ের পর জেসিকার সাথে সবসময় চলাফেরা করতে করতে ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যায়। ও মেয়ে হিসেবে খুবই ভালো। ওর মন সুন্দর বলেই ফ্রেন্ড হিসেবে ওকে খুব ভালো লাগে আমার। আমার থেকে বেশি ও আমাকে ভরসা করে। ওর ভাষ্যমতে আমি থাকতে ওর আর কোনো ফ্রেন্ডের প্রয়োজন পড়ে না। সমস্যা হচ্ছে ও আমার নামটা শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে পারে না। তাজ বলতে গেলে টাজ বলে ফেলে। এতে ও নিজেই বিরক্ত হয়, তাই হানি ডাকে। আমরা এটাকে অস্বাভাবিক মনে করলেও ওর কাছে স্বাভাবিক। তাছাড়া ওর বয়ফ্রেন্ড আছে। তো? আর কোনো প্রশ্ন আছে এই মোটা মাথায়?”
আমি স্তব্ধ হয়ে পুরো কথাগুলো শুনলাম। উনি যে আমার রাগের আসল কারণটা আন্দাজ করতে পেরেছেন তা ভেবে আমি খানিক লজ্জায় পড়ে গেলাম। নতজানু হয়েই মিনমিনে গলায় বললাম,
“আমি এসব জেনে কী করব?”
তাজ ভাই ক্ষীণ আওয়াজে হাসলেন, কিন্তু কোনো উত্তর দিলেন না। আমি কাঁচুমাচু মুখে পুনরায় বলে উঠলাম,
“আমি আসলে ওভাবে রিয়্যাক্ট করতে চাইনি। কীভাবে হয়ে গেল জানি না। সরি।”
“সরি কেন?”
“চেঁচামেচি করার কারণে।”
“তো?”
“আপনার হয়তো খারাপ লেগেছে।”
“আমি কি একবারও বলেছি আমার খারাপ লেগেছে? আজকাল দেখছি ওভার থিংকিংয়ে মাথা বিগড়ে যাচ্ছে।”
কথাটা যে আমাকে খোঁচা মেরে বলা হয়েছে তা আমার কাছে স্পষ্ট। তবু আমি প্রতিউত্তর করলাম না। চুপ মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম। তাজ ভাইও আর কথা বাড়ালেন না। না তাকিয়েও বুঝতে পারলাম উনি মোহাচ্ছন্ন হয়ে আমার মুখের পানে তাকিয়ে আছেন। ওনার প্রতিটা নিঃশ্বাস এসে আমার গলার কাছে আছড়ে পড়ছে। এদিকে আমি একচুলও নড়তে পারছি না। একে তো উনি ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন, তার ওপর আবার রেলিং ধরা হাত দুটোও মুঠোবন্দী করে রেখেছেন। এভাবে বেশিক্ষণ থাকা সম্ভবপর হয়ে উঠল না। শরীর জুড়ে শিরশির অনুভূতি হচ্ছে। শুকনো ঠোঁটটা জিব দিয়ে ভিজিয়ে বার কয়েক ঢোঁক গিলে আমি মৃদু স্বরে বললাম,
“আপনি একটু সরে দাঁড়ান প্লিজ।”
“কেন?” নিচু স্বরে প্রশ্ন করলেন তাজ ভাই।
আমি চোখ-মুখ কুঁচকে বললাম,“আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। প্লিজ।”
উনি পুনরায় হাসলেন। ওনার হাসির দমকে আমার বুকের মধ্যে হাতুড়িপেটা শুরু হলো। পরক্ষণেই উনি সরে গেছেন টের পেয়ে আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। দুপা পিছিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেই উনি আমার হাত টেনে ধরলেন। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকাতেই উনি আমাকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে যেতে যেতে বললেন,
“আমার সারারাত জেগে থাকার শখ নেই। কাল অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে। একদিকে কাজ, আবার আরেকদিকে ভাইয়া-ভাবি বলেছে কাল বিকেলে সবাই মিলে বাইরে বেরোবে। খাবারটা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন ম্যাম।”
আমাকে পুনরায় বিছানায় বসিয়ে দিয়ে তাজ ভাই খাওয়ানো আরম্ভ করলেন। এবার আর আমি দ্বিরুক্তি করলাম না। খাবার মুখে নিয়ে প্রশ্ন করলাম,
“আপনি খেয়েছেন?”
ওনার ছোট্ট জবাব,“হুম।”
“কাল আমরা সবাই বাইরে যাব?”
“হুম।”
আমি কিছুক্ষণ আপন মনে ভেবে আমতা-আমতা করে প্রশ্ন করলাম,
“শ্রেয়ান ভাইয়াকে আসতে বলবেন?”
উনি স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলেন,
“আচ্ছা।”
“উনি হঠাৎ করে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলেন কেন বলুন তো?”
“আমি কীভাবে জানব? তোদের ব্যাপার।”
“কী জানি! আমার তো বিশ্বাস হয় না শ্রেয়ান ভাইয়া ইচ্ছে করে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিবে।”
“ও তো বাচ্চা না। ইচ্ছে থাকলে অবশ্যই যোগাযোগ করত।”
“এটাই তো প্রশ্ন। আমাকে প্রপোজ করার পরদিনই উনি চুপ মেরে গেলেন। ব্যাপারটা কেমন যেন অবিশ্বাস্য না?”
“তো তোকে যোগাযোগ করতে বারণ করেছে কে?”
“ভেবেছি করব। নিজে থেকে ফোন করতে কেমন যেন অস্বস্তি লাগে। আপনি কিছু জিজ্ঞেস করেননি?”
“কোন ব্যাপারে?”
“এই যে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো।”
“কাজের প্রচুর চাপ এখন। অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলার সুযোগ হয় না, আর মনেও থাকে না তখন।”
“ওহ্।”
বিভিন্ন কথায় কথায় খাওয়া শেষ হওয়ার পর তাজ ভাই সস্নেহে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
“শুয়ে পড়।”
আমি ওনার কথামতো চুপটি মেরে শুয়ে পড়লাম। উনি আমার পাশে বসে মিনিট খানেক তাকিয়ে থেকে হঠাৎ গলা ঝেড়ে নিচু স্বরে বললেন,
“মাঝে মাঝে সুইডেন আর বাংলাদেশের মধ্যকার তফাত মাপার নিয়মটা ভঙ্গ করা কি গুরুতর অপরাধ বলে গণ্য হবে পিচ্চি?”
লজ্জায় আমার কান লাল হয়ে গেল। চোখ দুটো বড়ো করে আমি ঝট করে বিপরীত দিকে ঘুরে শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজলাম। ভেতরের সত্ত্বা লাজুক কন্ঠে বলল,“অবশ্যই অপরাধ, দণ্ডনীয় অপরাধ। আমি যদি দম বন্ধ হয়ে মরে-টরে যাই, তবে?”
তাজ ভাই এবার মৃদু শব্দ তুলে হেসে উঠলেন। ‘গুড নাইট’ বলে উনি পাশ থেকে উঠে গেলেন। পরমুহূর্তেই পদধ্বনি কানে ভেসে আসতেই বুঝলাম উনি চলে যাচ্ছেন।

________________________

আজ সারাদিন আমি বেশ উত্তেজিত ছিলাম। সবাই মিলে একসাথে বাইরে ঘোরাঘুরি করব ভেবেই মনটা বারবার আনন্দে নেচে উঠছিল। রাজ ভাইয়াদের সাথে এই নিয়ে অনেক প্ল্যানিংও হয়েছে। প্ল্যান মতো বিকেল হতেই আমরা রেডি হয়ে তাজ ভাইয়ের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। তাজ ভাইয়া ড্রাইভিং সিটে আর রাজ ভাইয়া তার পাশে। আমি, জেনিফার ভাবি আর জেসিকা পেছনের সিটে।‌ রাজ ভাইয়া ঘোষণা করলেন, এত বছর পর যেহেতু দেশে ফিরেছে, সেহেতু আজ সে ঘুরেঘুরে শুধু খাবে। তার কথায় সবাই সম্মতি জানাতে বাধ্য হলো। আমিও একই সুবর্ণ সুযোগটা কাজে লাগাতে ভুললাম না। চট করে ফুসকা খাওয়ার বায়না ধরে বসলাম। তাজ ভাই আজ আর ধমকাতে সক্ষম হলেন না। শুধু সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,”বাইরের খাবার বেশি খাওয়ার দরকার নেই। খেলেও কম পরিমাণে খাবে।”
রাজ ভাইয়া সঙ্গে সঙ্গে ওনার মাথায় টোকা মেরে বললেন,
“এত বছর পর দেশে এসে দেশী খাবার খাব না? গাধা। এই তুই আমার ভাই হয়েছিস কোন আক্কেলে বল তো। শালা নিরামিষ একটা।”
তাজ ভাই ভ্রুকুটি করে বললেন,
“হেই ব্রো, আমি তোমার কোন জন্মের শালা?”
জেনিফার ভাবি বলল,
“ঠিক আসে। ও টোমার শালা, আর আমার ভাই। এইবার বোলো, টুমি আমার ভাইকে নিরআমিষ বললে কেনো?”
রাজ ভাইয়া হতাশ গলায় বলল,
“ব্যস, শুরু হয়ে গেল দেবরের পক্ষে কথা বলা।”
তাজ ভাই বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে জেনিফার ভাবিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“লাভ ইউ ভাবি। আমার এই বলদ মার্কা ভাইকে এভাবেই জব্দ করবে।”
রাজ ভাইয়া কপাল কুঁচকে বললেন,
“ওই তুই নিরামিষ না তো কি? আজীবন ভালো খাবারে তোর অনীহা। তোর জন্য ছোটো বেলায় আমিও ভালো ভালো খাবারগুলো খেতে ব্যর্থ হতাম। শালা, ওসব মনে পড়লে দুঃখে কলিজা ফেটে যায়।”
আমি আর জেসিকা এতক্ষণ ঠোঁট টিপে এদের কথা শুনছিলাম। এবার দুজনেই একসাথে খিলখিল করে হেসে উঠলাম। পরমুহূর্তে জেসিকা মুখ খুলতেই আমি চুপ মেরে গেলাম। অসহায় মুখে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম জেসিকার কথা শুনে বাকিরা বেজায় হাসছে। ইংরেজির গোষ্ঠীর তুষ্টি উদ্ধার করতে চাওয়া আমার মনকে বহু কষ্টে দমিয়ে রাখলাম। পথে ফুসকার দোকানের সামনে গাড়ি থামানো হলো। আমি তো পারলে নেচে উঠি। তাজ ভাইয়ের বিরক্তভরা মুখটা লক্ষ্য করে মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ পেলাম। শয়তান লোকটা আমাকে কখনও একটু শান্তিতে ফুসকা খেতে দেয় না। আজ রাজ ভাইয়ার সাথে জমিয়ে খাব। মহানন্দে ফুসকা খাওয়ার সময় শ্রেয়ান ভাইয়ার কথা মনে পড়ল। একমাত্র শ্রেয়ান ভাইয়ার সাথেই শান্তিতে ফুসকা খেতে পারতাম। লোকটার কী হলো কে জানে? আজ বাড়ি ফিরে খোঁজ নিতেই হবে। তাজ ভাই ছাড়া আমরা বাকিরা সবাই বেশ তৃপ্তি নিয়ে ফুসকা খেলাম। ফুসকার বিল মিটিয়ে সবাই গাড়ির দিকে পা বাড়ানোর সময় আমার দৃষ্টি চলে গেল রাস্তার ওপারে। হাওয়াই মিঠাই। অনেকদিন ধরে খাওয়া হয় না। দেখেই লোভ লাগছে। কিন্তু কিনতে হলে রাস্তার ওপারে যেতে হবে। হুট করে আমি তাজ ভাইয়ের বাঁ হাতটা চেপে ধরলাম। উনি দাঁড়িয়ে পড়ে প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকালেন। আমি ইশারায় রাস্তার ওপারে দেখিয়ে বায়না ধরলাম,
“হাওয়াই মিঠাই এনে দেন না।”
সঙ্গে সঙ্গে উনি নাকোচ করে বলে বসলেন,
“দরকার নেই। মাত্র ফুসকা খেয়েছেন, এরপর আরও কী কী খাওয়া হয় আমার ভাই জানে। শরীরের অবস্থা বেহাল করে বসে থাকবেন তারপর।”
আমি অসহায় মুখ করে হাত ঝাঁকিয়ে বললাম,
“দিন না। এমন করছেন কেন? অনেকদিন ধরে খাই না। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ।”
“পারব না। হাত ছাড়।”
আমি ঝাঁকি মেরে ওনার হাতটা ছেড়ে রাগত স্বরে বললাম,
“থাক, আনতে হবে না আপনাকে। রাজ ভাইয়াকে বলছি।”
গাল ফুলিয়ে গাড়ির দিকে পা বাড়াতেই তাজ ভাই আমার হাত টেনে ধরে বাঁধা দিলেন। আদেশের সুরে বললেন,
“চুপচাপ দাঁড়া, নিয়ে আসছি।”
আমি মনে মনে খুশি হলেও প্রকাশ করলাম না। আমাকে ফুটপাতে দাঁড় করিয়ে রেখে তাজ ভাই খুব সাবধানে রাস্তা পার হলেন। আমি এক দৃষ্টিতে ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। রাজ ভাইয়ারা গাড়িতে উঠে বসেছিলেন। আমাদের দেরি দেখে জানালা দিয়ে মাথা বের করে উচ্চ স্বরে বলল,
“ইলু, আসছিস না কেন? তাজ কই গেল?”
আমি সেদিকে তাকিয়ে জবাব দিলাম,
“আসছি ভাইয়া। তাজ ভাই রাস্তার ওপার গেছেন।”
রাজ ভাইয়া ‘আচ্ছা’ বলে গাড়ির ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে বসলেন। আমি পুনরায় রাস্তার ওপারে তাকালাম। দেখলাম তাজ ভাই দোকানীর টাকা মিটিয়ে দুটো হাওয়াই মিঠাই হাতে নিয়ে এপারে আসার জন্য পা বাড়িয়েছেন। আমি অজান্তেই মৃদু হাসলাম। দৃষ্টি ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকাতেই হঠাৎ দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো। কেউ একজন পেছন থেকে বেশ শক্তপোক্ত করে মুখ চেপে ধরেছে। আমি চিৎকার করতে গিয়েও ব্যর্থ হলাম। রাস্তা পার হওয়া মানুষটার দিকে তাকানোর সুযোগটুকুও পেলাম না। তার আগেই আমাকে টেনেহিঁচড়ে সেখান থেকে সরিয়ে একটা গাড়ির মধ্যে ঢুকানো হলো। যতটুকু দেখলাম, মুখে রুমাল বাঁধা এক বলিষ্ঠদেহী পুরুষ আমার মুখ চেপে ধরে রেখেছে। আমি অনেক চেষ্টা করলাম মুখ থেকে লোকটার হাত সরানোর। কিন্তু সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। গাড়িতে ওঠাতেই কেউ একজন পাশ থেকে মুখে কিছু স্প্রে করে মুখটা বেঁধে দিচ্ছিল। বেশ বুঝতে পারলাম আমাকে কিডন্যাপ করা হচ্ছে। এরা কি আমাকে বাঁচতে দিবে না? তবে? আমি কি আর ছাড়া পাব না এদের হাত থেকে? বাবা, তাজ ভাই। পাগল হয়ে যাবে মানুষ দুটো। আমার চোখ দুটো তখন মুদে আসছিল। অসাড় মস্তিষ্ক চিৎকার করে আকুতি করে উঠল,“আল্লাহ্ রক্ষা করো। আমি বাঁচতে চাই।”

চলবে…………………?

পার্সোনাল গ্রুপ লিংক:
https://www.facebook.com/groups/935884643636506/?ref=share

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here