তাজ ইলোর প্রণয়ালাপন পর্ব:৩৭

0
437

#তাজ-ইলোর প্রণয়ালাপন
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি
পর্ব:৩৭

জেসিকা নামক মেয়েটা হঠাৎ তাজ ভাইয়ের মতো আমাকেও জাপটে ধরায় আমি হকচকিয়ে উঠলাম। পরক্ষণেই মেয়েটা আমার গালেও গাঢ় করে চুমু খাওয়ায় আমি চোখ-মুখ কুঁচকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম। মেয়েটি হাস্যোজ্জ্বল মুখে স্পষ্ট ইংরেজিতে বলল,
“হেই ইলোরা। হাউ আর ইউ?”
আমার মুখটা বিস্ময়ে হা হয়ে গেল। এই মেয়ে আমার নাম জানল কীভাবে? তাজ ভাই বলেছে না কি? কিন্তু তাজ ভাই আমার নাম এই মেয়ের কাছে বলতে যাবে কেন? আমি ফট করে উত্তর দিলাম,
“ভালো, আপনি?”
মেয়েটা আমার কথা শুনে ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে ফেলল। তারপর তাজ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে অসহায় মুখ করে বলল,
“হানি, হোয়াট ডিড সি সে?”
তাজ ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“ও বাংলা বোঝে না, মাথামোটা।”
আমি বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে বললাম,
“ফাইন, অ্যান্ড ইউ?”
“অলসো ফাইন। ইউ আর সো কিউট অ্যান্ড আদরাবল।”
“থ্যাংকস। ইউ আর অলসো কিউট।”
মেয়েটার মুখে আবার হাসি ফুটল। মেয়েটা পুনরায় শুদ্ধ ইংরেজি ভাষায় বেশ দ্রুত কিছু বলল। কিন্তু আমি তার এক রত্তিও বুঝতে পারলাম না। একে তো ইংরেজিতে দুর্বলতা আছে, তার ওপর আবার মেয়েটা রকেটের গতিতে কথা বলে। একটা শব্দ বোঝারও উপায় নেই। মেয়েটার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে দারুণ কোনো প্রশ্ন করে আমার উত্তরের অপেক্ষায় আছে। এবার আমার মুখে অসহায়ত্ব ফুটে উঠল। চুপসানো মুখে তাজ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মহাশয় আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছেন। আমি কিঞ্চিত রাগত স্বরে বললাম,
“মজা নিচ্ছেন?”
তাজ ভাই এবার হুঁ-হা করে হেসে উঠলেন। হাসতে হাসতেই জেসিকার দিকে তাকিয়ে ইংরেজীতে কিছু বললেন। জেসিকাও হাসিমুখে উত্তর দিলো। জেসিকার উত্তর শোনার সাথে সাথেই তাজ ভাইয়ের চোখে-মুখে উচ্ছলতা খেলে গেল। উনি আমাকে আর জেসিকাকে ফেলে রেখেই দরজার দিকে ছুট লাগালেন। তার পেছনে জেসিকাও ছুটল। আমি হাবাগোবা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তাদের কান্ড দেখে অগত্যা নিজেও তাদের পেছনে ছুট লাগালাম। ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই এক ঝটকা খেলাম। সোফায় বসা নর-নারীকে দেখে মনটা আনন্দে নেচে উঠল। তাজ ভাই ছুটে গিয়ে দুহাতে তাদের দুজনকে জাপটে ধরলেন। উচ্ছসিত কন্ঠে বললেন,
“ভাইয়া-ভাবি! ওহ্ মাই গড! হোয়াট অ্যা প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ!”
রাজ ভাইয়া তাজ ভাইয়ের পিঠ চাপড়ে বলল,
“সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই তো হুট করে চলে এলাম।”
তাজ ভাই তাদেরকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে বললেন,
“কেমন আছো তোমরা?”
জেনিফার ভাবি মিষ্টি হেসে ভাঙা ভাঙা বাংলা ভাষায় বলল,
“বালো আছি, টুমি?”
তাজ ভাই বললেন,
“এই তো, একদম ফাটাফাটি আছি। না জানিয়েই চলে এলে!”
“সারপ্রাইজ।”
আমি উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে চুপচাপ একপাশে দাঁড়িয়ে আছি। ভেতরে চাপা উত্তেজনা থাকলেও এত বছর পর কেমন যেন বোধ হচ্ছে রাজ ভাইয়াকে দেখে। একসময় এই মানুষটা আমায় কত কাঁধে নিয়ে ঘুরেছে। এত বছর পর তার সামনে যেতে কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। রাজ ভাইয়া নিজেই এগিয়ে এল। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আদুরে গলায় ডেকে বলল,
“ইলু? কেমন আছিস?”
আমি ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে বললাম,
“ভালো, তুমি?”
“এই তো, দিব্যি আছি বলেই চলে আসতে পারলাম। ফোনে তো খুব বুলি আওড়াতে দেখলাম। এখন সামনে আসার পর বুলি কোথায় গেল?”
বলতে বলতে রাজ ভাইয়া এক হাত আমার অপর বাহুতে ঠেকিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরলেন। আমি হেসে ফেললাম। জেনিফার ভাবি আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
“ভাইকে পেয়ে ভাবিকে বুলে গেসো ইলু?”
আমি রাজ ভাইয়ার থেকে সরে এগিয়ে গিয়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখে ভাবিকে জড়িয়ে ধরলাম। সঙ্গে সঙ্গে সে-ও জেসিকার মতোই টুকুস করে গালে চুমু খেয়ে বসল। ইচ্ছে করল কপাল চাপড়াতে। তবু নিজেকে ধাতস্থ করে মৃদু হেসে বললাম,
“ভুলব কেন ভাবি? এমন মিষ্টি ভাবিকে ভোলা যায়? কেমন আছো?”
“ওনেক বালো, টুমি কেমন আচো?”
“ভালো।”
“জেসিকার সাঠে পরিসয় হয়েচে?”
“না”, জেসিকার দিকে তাকিয়ে বললাম আমি।
তাজ ভাই বললেন,
“ভাবির ছোটো বোন। মানে ভাইয়ার একমাত্র শ্যালিকা।”
“আচ্ছা আমি বাবাকে ফোন করে বলছি তোমাদের কথা”, ঘুরে দাঁড়িয়ে উলটো দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে কথাটা বললাম আমি।
পেছন থেকে রাজ ভাইয়া বাঁধা দিয়ে বলল,
“আমি মামুকে বলেই এসেছি। মামু আগে থেকেই জানত, তোদের বলতে নিষেধ করেছিলাম আমি।”
তাজ ভাই এগিয়ে এসে বলল,
“ব্রো, এটা একদম ঠিক করিসনি। মামুকে বললি আর আমাকে বললি না? আমাকে বললে আমি এয়ার পোর্ট থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসতাম।”
আমি বললাম,
“আরে বললে কি আর সারপ্রাইজ হত?”
“রাখ তোর সারপ্রাইজ।”
“আপনি তো একটা মিষ্টি কুমড়া। ভালো কিছুতে ইন্টারেস্ট নেই।”
“কী বললি? আবার বল, আবার বল।”
বলতে বলতে তাজ ভাই আমার দিকে এগিয়ে আসতে নিতেই আমি দ্রুত রাজ ভাইয়ার পেছনে লুকিয়ে পড়লাম। পেছন থেকে উঁকি মেরে কপাল কুঁচকে বললাম,
“সত্য কথার ভাত নেই।”
রাজ ভাইয়া হেসে বলল,
“আচ্ছা থাম। এসেই তোদের খুনসুটি দেখতে চাই না। ফ্রেশ হতে হবে আমাদের। রুম দেখিয়ে দে। নিচে না ওপরে থাকতে হবে?”
“ওপরে।”
“আচ্ছা চল। জেসিকা, কাম অন।”
জেসিকা এবারও তাজ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ইংরেজিতে ফটফট করে কী যেন বলল। উত্তরে তাজ ভাই বললেন,
“আমি নিচেই থাকি। নিচের কোনো রুম খালি নেই জেসি। তোমাকে ওপরেই থাকতে হবে।”
জেসিকা মুখ গোমড়া করে ওপর-নিচে মাথা দোলালো। আমার মেজাজটাই বিগড়ে গেল। বেশ বুঝতে পারলাম এই সোনালী চুলওয়ালী জেসিকা তাজ ভাই নিচে থাকে বলে নিজেও থাকতে চায়। বোনের দেবরের সাথে এত ঘেঁষাঘেঁষি কিসের? ঢং! তাজ ভাই একটা লাগেজ হাতে তুলে বললেন,
“চল আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।”
জেনিফার ভাবি বললেন,
“ইলোরা, চলো। আমরা গোলপো কোরবো।”
আমি হেসে বললাম,
“তোমরা ফ্রেশ হও গিয়ে। তারপর গল্প করা যাবে। আমি কিচেনে যাচ্ছি একটু।”
“আচ্চা।”
ওনারা চারজন ওপরে চলে গেলেন। আমি আর গেলাম না। রান্নাঘরে গিয়ে বলে এলাম রাজ ভাইয়াদের জন্যও রান্না করতে। রিতা চোখ-মুখ কুঁচকে বলল,
“আপু গো, ওই সোনালী চুলের মহিলা এত খচ্চর কেন?”
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
“কেন? কী করেছে?”
“এসেই গণহারে সবাইকে চুম্মা-চুম্মি দিতাছে, ইয়াক।”
আমি ফিক করে হেসে দিলাম। হাসতে-হাসতে বললাম,
“তোকেও দিয়েছে?”
পাশ থেকে মিতাও রিতার মতো মুখ করে বলল,
“সবাইকে দিয়েছে।”
মারজিয়া খালা বললেন,
“তবে এটা বুঝা গেল যে মেয়েটার মধ্যে কোনো অহংকার নেই। থাকলে আমাদের সাথে এত মিষ্টি আচরণ করত না। যদিও কথার আগামাথা কিছুই বুঝি না।”
“হেহে, আমি নিজেই বুঝি না”, মেকি হেসে বললাম আমি।
রিতা অবাক হয়ে বলল,
“তুমি বোঝো না?”
“নাহ্। ইংরেজিতে বরাবরই ফাঁকি দিয়ে এসেছি। অত ইন্টারেস্ট ছিল না। এখন মনে হচ্ছে এই জেসিকা-ফেসিকার কথার উত্তর দিতে হলে আমাকে ইংরেজি শিখতে হবে।”
মিতা-রিতা আমার কথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠল। মিতা বলল,
“তার মানে ওনারা যতদিন থাকবে ততদিন ওই সোনালী চুলের মেয়ের থেকে দূরে থাকতে হবে।”
“কেন?” রিতা প্রশ্ন করল।
“ইংরেজি থেকে বাঁচার জন্য।”
“আরে ধুর। ওই মহিলা ইংরেজিতে ফটর-ফটর করলে আমিও বাংলায় ফটর-ফটর করতে থাকব। ওই মহিলাও তো বাংলা বোঝে না। আমার বাংলা ফটর ফটর শুনলে এমনিতেই চুপ মেরে যাবে।”
“আর আমি?” অসহায় মুখ করে বললাম আমি।
রিতা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
“তুমি বড়ো ভাইয়ার থেকে অর্থ জিজ্ঞেস করে নিবে। তারপর বাংলায় উত্তর দিয়ে বড়ো ভাইয়াকে বলবে ইংরেজি বলে দিতে।”
মারজিয়া খালা বললেন,
“রিতা, তাজ বাবাকে বড়ো ভাইয়া, বড়ো ভাইয়া করেছ এতদিন। এখন তো তারও বড়ো ভাইয়া এসে গেছে।”
রিতা মাথা চুলকে বলল,
“তাই তো! তাহলে এখন বড়ো ভাইয়ার বড়ো ভাইয়াকে কী ডাকব?”
আমি শব্দ তুলে হেসে বললাম,
“বড়ো ভাইয়ার বড়ো ভাইয়াই ডাকিস।”
“ওহ্! ভালো বুদ্ধি দিয়েছ তো আপু।”
মারজিয়া খালা প্রশ্ন করলেন,
“রাজ বাবার বউ এত সুন্দর বাংলা বলে কীভাবে রে?”
আমি হাস্যোজ্জ্বল মুখে বললাম,
“তার বাবা-মা তো বাঙালি। সে তার মায়ের থেকে একটু-আধটু বাংলা শিখেছে। বাকিটা রাজ ভাইয়ার অবদান। বউকে পুরো বাংলা ভাষা শিখিয়ে ছেড়েছে সে।”
“তাহলে ওই সোনালী চুলের মহিলা শিখল না কেন?” রিতা ভ্রুকুটি করে প্রশ্ন করল।
আমি ঠোঁট উলটে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললাম,
“কী জানি! আমি তো তাকে চিনতামই না। আজকেই জানলাম ভাবির একটা ছোটো বোন আছে।”
মিতা বলল,
“বাড়িতে ঢুকেই বড়ো ভাইয়াকে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দেখলাম।”
আমার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল। ‘একটু তাড়াতাড়ি রান্না শেষ কোরো’ বলেই গটগট করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।

_______________________________

আজকের দিনটা অন্য দিনগুলোর থেকে একটু বেশিই সুন্দর ছিল। নাহ্, একটু বললে ভুল হবে। অনেক বেশি সুন্দর। রাজ ভাইয়াদের সবার সাথে হাসি-গল্প-আড্ডায় বাড়িটা কেমন আনন্দমুখর হয়ে উঠেছে! বাবার মুখে বিস্তর হাসি। মনে হচ্ছে এ বাড়িতে আজ সম্পূর্ণ একটা পরিবার গড়ে উঠেছে। শুধু জেসিকার সব কথা বুঝতে না পারায় আমাকে বারংবার কপাল চাপড়াতে হয়েছে। তবে যতটুকু বুঝলাম, মেয়েটার ব্যবহার সত্যিই খুব মিষ্টি। খুবই মিশুক প্রকৃতির মেয়ে সে। দোষ একটাই, তাজ ভাইয়ের সঙ্গে অতিরিক্ত ঘেঁষাঘেঁষি করে। আর ওই লোকও মোমের মতো গলে যায়। জেসিকার সাথে হেসে হেসে কী মিষ্টি ভঙ্গিমায় কথা বলে! এভাবে কোনোদিন আমার সাথে এক সেকেন্ডও কথা বলেছে বলে আমার মনে পড়ে না। এই বজ্জাত লোক প্রশ্রয় দেয় বলেই জেসিকা এমন ঘেঁষাঘেঁষি করার উৎসাহ পায়। ইচ্ছে করে দুটোকেই চুবিয়ে মারি। আমার এই আনাড়ি ইচ্ছে তখনই বিগড়ে গেল, যখন দেখলাম সন্ধ্যার পর রাজ ভাইয়া আর তাজ ভাইয়ের সাথে জেসিকাও ঢেং-ঢেং করে বাইরে চলে গেল। আর মহারাজ আমাকে হুকুম করে গেছেন উনি ফেরার আগে যেন আমি পড়া শেষ করি। কে শোনে কার কথা? এতকিছুর পরও আমি ওনার হুকুম পালন করব? অসম্ভব। এমনিতেই রাগে মাথা ধপধপ করছে। না জানি কখন আবার ফেটেই যায়। রাগে-দুঃখে ফুঁসতে ফুঁসতে আমি বইখাতা ফেলে রেখে গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম। তবে বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না। জেনিফার ভাবি ডেকে নিয়ে গল্প জুড়ে দিলো। রাজ ভাইয়ারা ফিরল রাত সাড়ে নয়টার দিকে। রাজ ভাইয়া রুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য। আর তাজ ভাই রুমে যাওয়ার আগে আমাকে হুকুম করে গেলেন তার জন্য চা করে নিয়ে যেতে। মুখের ওপর বলতে ইচ্ছে করল ‘পারব না।’ তবু বললাম না। বাইরে থেকে এসেছে, মাথা ব্যথা-ট্যথা করলে আবার সমস্যা। মনে মায়ার উদয় হওয়ায় চুপচাপ গিয়ে চা করে রুমে নিয়ে গেলাম। রুমে ঢুকেই আবার মেজাজটা বিগড়ে গেল। রাগে মাথাটা দপ করে জ্বলে উঠল। জেসিকা তাজ ভাইয়ের বিছানার একপাশে বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বসে ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করতে ব্যস্ত। ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকিয়ে বুঝলাম তাজ ভাই ওয়াশরুমে আছেন। আর এরইমধ্যে এই মেয়ে বোধ হয় কোনোরকমে ফ্রেশ হয়ে আবার এসে গেছে ঘেঁষাঘেঁষি করতে। আমি এগিয়ে যেতেই জেসিকা মিষ্টি করে হেসে বলল,
“হেই ইলোরা। আর ইউ লুকিং ফর হানি?”
জেসিকার এই কথাটা বুঝতে পেরে আমি স্বস্তি পেলাম। রাগটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে চোয়াল শক্ত করে মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম,
“ইয়াহ্।”
মনে মনে আল্লাহকে ডাকলাম। এই মেয়ে না আবার এখন ফটর-ফটর শুরু করে। তখনই ওয়াশরুমের দরজা খুলে তাজ ভাই বেরিয়ে এলেন। ওনাকে দেখে রাগটা তরতর করে আরও একধাপ বেড়ে গেল। ‘আপনার চা’ বলে চায়ের কাপটা শব্দ করে বেড সাইড টেবিলে রাখলাম। যেন আমার চাপা রাগটা ওনাকে বুঝানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস এটা। আমি আর ওখানে দাঁড়ালাম না। ওনাদের কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত প্রস্থান করলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম ডিনার করব না। ডিনার টেবিলে বসে আবার এদের নাটক দেখার আর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার। যখন দেখলাম বাবা আর রাজ ভাইয়া ডিনার টেবিলে বসেছে আর ভাবি তাজ ভাইয়ের রুমে যাচ্ছে তাদের ডাকতে,‌ তখনই আমি না খাওয়ার বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করিয়ে ওখান থেকে কেটে পড়লাম। বাবা আর রাজ ভাইয়া প্রথমে জোর করলেও পরে যখন বললাম সন্ধ্যায় ভাবির সাথে হালকা খাবার খাওয়ায় পেট ভরে গেছে। তখন দমে গেল। আমিও শুধু জেমির খাবারটুকু নিয়ে চুপচাপ রুমে চলে এলাম। জেমিকে খাইয়ে চুপটি মেরে শুয়ে পড়লাম। মনে মনে আল্লাহকে বললাম, ওই শয়তানটা যেন আবার খাওয়ার জন্য ডাকতে না আসে। ওনার তো আবার আমার খাওয়ার সাথে দারুণ বন্ধুত্ব। যেন একবেলা না খেয়ে থাকলেই বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। আমার দোআ হয়তো কবুল হলো। পনেরো মিনিট কেটে যাওয়ার পরও যখন দেখলাম তাজ ভাই আসেননি, তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। আপাতত সব রাগ-দুঃখ মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে, চোখ বন্ধ করে ঘুমের প্রস্তুতি নিলাম।

চলবে………………….?

(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। রেসপন্স না পেলে রাগ করব হুঁহ্।?)

পার্সোনাল গ্রুপ লিংক:
https://www.facebook.com/groups/935884643636506/?ref=share

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here