তাজ ইলোর প্রণয়ালাপন পর্ব:৩০

0
352

#তাজ-ইলোর প্রণয়ালাপন
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি
পর্ব:৩০

আজ তিনদিন হলো আফরা আপু আমাদের বাসায় আছে। দুদিন আগে আমি তাজ ভাইকে বলেছিলাম, সে যেন এখন থেকে দোতলায় গিয়ে থাকে। অথচ মহাশয় আমাকে উলটো ধমক দিয়ে বসিয়ে রেখেছেন। এই তিনদিনে আফরা আপু আমার সাথে ঠিকমতো কথাও বলেনি। আমাকে দেখলেই তার মুখের রং বদলে যায়। বিশেষ করে তাজ ভাই আমার সাথে কথা বলার সময় আপুর মুখটা চুপসে যায়। কেন জানি এখন আর তাজ ভাইকে পটানোর কৌশল বলতে ইচ্ছে করে না আপুকে। যদিও সে কয়েকবার তাজ ভাইয়ের ব্যাপারে আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিল, কিন্তু আমিই সুযোগ দিইনি। কিন্তু আজ আপু নাছোড়বান্দা। দুপুরের খাবারের পর তাজ ভাই বাইরে বেরিয়েছেন। আমি রুমে বসে ফেসবুকিং করছিলাম। তখনই আপু এসে বলল,“ইলো শোন, আমি একটা প্ল্যানিং করেছি।”

আমি প্রশ্ন করলাম,“কিসের প্ল্যানিং?”

“আমি তাজ ভাইয়াকে প্রপোজ করব।”

আমি চোখ দুটো ছানাবড়া করে বলে উঠলাম,“কিহ্!”

“হ্যাঁ, কিন্তু তার আগে ওনাকে ইমপ্রেস করব।”

“আগেরবারও তো চেষ্টা করেছিলে, কোনো লাভ তো হলো না।”

আপু দৃঢ় কন্ঠে বলল,“এবার হবে। তুই শুধু আমাকে একটু হেল্প করবি।”

আমি আমতা-আমতা করে বললাম,“আমি?”

“হ্যাঁ। আগেরবার তো তোর প্ল্যানেই চেষ্টা করেছিলাম। এবারের প্ল্যান আমার। তুই তো বলেছিলি তুই আমার হেল্পিং হ্যান্ড। ভুলে গেলি?”

আমি মেকি হেসে বললাম,“না, না। ভুলব কেন? বলো, কী করতে হবে?”

আপু উৎফুল্ল হয়ে বলল,“আমি ওনার সাথে লং ড্রাইভে যাব। আলাদা করে সময় কাটাব আর কী। ঘুরব-ফিরব, রেস্টুরেন্টে খাব-দাব, অনেক গল্প করব। তারপর দেখবি আস্তে আস্তে উনি আমার প্রতি আকৃষ্ট হবেন। আর তারপর সুযোগ বুঝে আমি প্রপোজ করব। তোর কাজ হচ্ছে ওনাকে রাজি করানো। যেভাবে হোক ওনাকে আমার সাথে লং ড্রাইভে যেতে রাজি করবি।”

আমি আমতা-আমতা করে বললাম,“কিন্তু আপু, আমি বললেই কি উনি রাজি হবেন? তুমি বলো না।”

“কী যে বলিস! দেখ, আমি আর তুই দুজনেই তো ওনার কাজিন। কিন্তু তফাৎ দেখেছিস? তোর প্রতি ওনার আলাদা টান আছে। প্রতিদিন খাবার মুখে তুলে দেওয়া, ভার্সিটিতে দিয়ে-নিয়ে আসা, পড়তে বসানো, এসব কখনও উনি আমার বেলায় করেন? করেন না। বাই দা ওয়ে, তুই আমাকে হেল্প করতে পারবি না?”

কথাটা বলতে বলতে আপুর চোখ-মুখের ভাব পালটে গেল। আমার প্রতি তাজ ভাইয়ের আলাদা কেয়ারিং দেখে হয়তো সে মনে খুব কষ্ট পেয়েছে। আমার কোমল মনে মায়ার উদয় হলো। কিছু না ভেবেই হুট করে বলে বসলাম,“তুমি চিন্তা কোরো না আপু। উনি এলে আমি বলে দেখব।”

আপুর চোখে-মুখে খুশি উপচে পড়ল। মিষ্টি হেসে বলল,“এলেই বলবি কিন্তু। রাজি করতে পারলে স্পেশাল ট্রিট পাবি।”

আমি মাথা ঝাঁকালাম। একবারও ভাবলাম না যে, তাজ ভাইয়ের মতো উন্নতমানের ঘাড়ত্যাড়াকে এসব কাজে রাজি করানো আমার মতো চুনোপুঁটির কর্ম নয়। তাজ ভাই বাড়িতে এলেন মাগরিবের নামাজের পর। সঙ্গে সঙ্গে আফরা আপু আমাকে ঠেলেঠুলে তাজ ভাইয়ের রুমে পাঠালেন। মনে বেশ সাহস জুগিয়ে আমি ধীর পায়ে তাজ ভাইয়ের রুমে ঢুকলাম। দেখলাম তাজ ভাই বিছানায় পা গোল করে বসে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে একটা ফাইল দেখছে। আমি এগিয়ে গিয়ে বিছানার পাশে দাঁড়ালাম। তাজ ভাই মুখ তুলে আমার দিকে তাকালেন না। আমি বিছানায় পা ঝুলিয়ে ওনার মুখোমুখি বসলাম। তবু ওনার মাঝে কোনো হেলদোল দেখা গেল না। উনি যে ইচ্ছে করেই মুখ তুলে তাকাচ্ছেন না, তা বুঝতে আমার অসুবিধা হলো না। অথচ আমি কিছু বলতে গিয়েও পারছি না। কন্ঠনালি দিয়ে শব্দ বের করতে চাইলেই সব সাহস ফুস করে উড়ে যাচ্ছে। আমি ঠোঁট উলটে ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি, কখন উনি মুখ তুলবেন সেই আশায়। অবশেষে প্রায় পাঁচ-ছয় মিনিট পর আমার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মহারাজ মুখ তুলে তাকালেন। সরাসরি আমার চোখে চোখ রেখেই গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন,“বলে ফেল।”

তার মানে উনি বুঝতে পেরেছেন আমি কিছু বলার জন্য বসে আছি। কিন্তু এখন কিছু বলার সাহসটাই তো পাচ্ছি না। তবু আমতা-আমতা করে বললাম,“একটা কথা বলার ছিল।”

“কী কথা সেটাই জানতে চাইছি।”

আমি ঠোঁট উলটে বললাম,“আপনি মাইন্ড রিড করে জেনে নিন না, আমি কী বলতে চাইছি।”

তাজ ভাই ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে বললেন,“বললে দ্রুত বল, তা না হলে যা এখান থেকে। আমার কাজ আছে।”

“শুনুন না।”

তাজ ভাই এবার চোখ পাকালেন। আমি গাল ফুলিয়ে বললাম,“প্রথমেই এমন করলে বলব কীভাবে? ধুর!”

তাজ ভাই মুখ দিয়ে ফুস করে একটা বিরক্তিকর শব্দ করে বললেন,“বল, শুনছি।”

আমি আমতা-আমতা করে বলেই ফেললাম,“আফরা আপু আপনার সাথে লং ড্রাইভে যেতে চাইছে।”

কথাটা বলে আমি ওনার উত্তরের আশায় উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। অথচ উনি মিনিট খানেক কপাল কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে পুনরায় ফাইলে মুখ গুঁজলেন। আমি অধৈর্য হয়ে বললাম,“কী হলো? কিছু বলবেন না? যাবেন না লং ড্রাইভে?”

তাজ ভাই আমার কথায় কান দিলেন না। আমি আবার বললাম,“আরে যান না। গেলে কী হয়? একটু ঘোরাঘুরি করবেন, খাবেন-দাবেন, তারপর চলে আসবেন। আফরা আপু আপনাকে কত্ত পছন্দ করে বোঝেন না?”

তাজ ভাই আবার মুখ তুলে শক্ত মুখে বললেন,“বলিস তো আজই বিয়ে করে ফেলি?”

আমি লাফিয়ে উঠে বললাম,“আররে, এটা ভালো বলেছেন তো। আপনার ওই আমিরার থেকে আফরা আপু অনেক ভালো। আফরা আপু যে আপনাকে কত ভালোবাসে, তা তার কথায় বুঝা যায়। এজন্যই তো বলছি, আপুকে নিয়ে লং ড্রাইভে যান। কিছু সময়ের মধ্যে এমনিতেই বুঝে যাবেন তার মনের কথা।”

তাজ ভাই আমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে পুরো কথাটা শুনলেন। তারপর ধমকের সুরে বললেন,“আর এক মুহূর্তও এখানে দাঁড়াবি না, যা এখান থেকে।”

আমি মন খারাপের ভান করে বললাম,“কেন? আমি কি খারাপ কিছু বলেছি?”

“ইলু, আমার মেজাজ খারাপ করবি না এখন। এমনিতেই কাজের চাপে আছি। আমার রাগ তো এখনও দেখিসনি। যেচে রাগ উঠালে পরে সামলাতে পারবি না। ভালোয় ভালোয় বলছি, চলে যা।”

আমি ত্যাড়াভাবে বললাম,“যাব না। আগে বলুন, আপনি আপুকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবেন।”

তাজ ভাই দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,“যেতে বলেছি তোকে।”

আমি মুখ ভার করে উঠে দাঁড়ালাম। উনি সঙ্গে সঙ্গেই আবার ফাইলে মুখ গুঁজলেন। বুঝলাম আর লাভ হবে না কিছু বলে। ভুল সময়ে এসেছি। শয়তানটার মাথা আগে থেকেই গরম ছিল। গাল ফুলিয়ে আমি দ্রুত পায়ে ওনার রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। সঙ্গে সঙ্গে আফরা আপু এসে প্রশ্ন করা শুরু করল, তাজ ভাই কী বলেছেন। আমি বললাম তাজ ভাইয়ের মেজাজ খারাপ, তাই আমাকে ধমকে বের করে দিয়েছেন। আপুর মনটা খারাপ হয়ে গেল। এদিকে রুমে ফেরার পর আমার মনটা কেমন উস-খুশ করতে লাগল। তাজ ভাইয়ের এত রাগ কিসের, মাথার মধ্যে এটাই ঘুরপাক খাচ্ছে। না চাইতেও ওনাকে নিয়ে ভাবনা চলে আসে। অনেকক্ষণ ধরে ভাবাভাবির পর রুম থেকে বেরিয়ে বাবার রুমে উঁকি দিলাম। বাবা এইমাত্র ফিরেছে। আমি চুপচাপ রান্নাঘরের দিকে চলে গেলাম। মিতা আমাকে দেখেই প্রশ্ন করল,“চা বানাবে না কি?”

আমি ওপর নিচে মাথা ঝাঁকালাম। মিতা সবকিছু এগিয়ে দিলো। আমি চা করে মিতাকে দিয়ে বাবা আর আফরা আপুর জন্য পাঠিয়ে দিলাম। তারপর দু কাপ চা নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে তাজ ভাইয়ের রুমের দিকে হাঁটা দিলাম। রুমে ঢুকে দেখলাম তাজ ভাই ফাইল রেখে এখন ল্যাপটপ নিয়ে বসেছেন। আমি এগিয়ে যেতেই এবার ফিরে তাকালেন। কোনো কথা না বলে আমি চায়ের কাপটা বাড়িয়ে ধরলাম। তাজ ভাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। ওনার বিস্ময়ের কারণ বুঝতে আমার অসুবিধা হলো না। ইতিপূর্বে কখনও আমি যেচে ওনার জন্য চা করে আনিনি। সবসময়ই উনি ধমকে চা করতে পাঠান। আশ্চর্যজনকভাবে তাজ ভাই আজ চায়ের কাপ সামনে দেখেও মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম,“কী হলো? খাবেন না?”

উনি গম্ভীর মুখে উত্তর দিলেন,“না।”

“কেন?”

উনি নিশ্চুপ। মুখ দেখে মনে হচ্ছে এখনও রেগে আছেন। আমি চায়ের কাপ সমেত হাতটা বাড়িয়েই রাখলাম। পুনরায় বললাম,“নিন। এত রেগে আছেন কেন?”

উনি ভ্রুকুটি করে বললেন,“আমি বলেছি রেগে আছি?”

“রাগলে আবার বলতে হয় না কি? আপনার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে রেগে আছেন।”

“আচ্ছা? মুখ দেখে এতকিছু বুঝতে পারিস না কি তুই?”

“চা-টা নিন।”

“আফরাকে বল চা করে আনতে।”

“আমি তো করেছি, আবার আপু করবে কেন?”

“সেকি! আমার বউ হবে, তো চা করে খাওয়াবে না?”

আমি অধৈর্য হয়ে চায়ের কাপটা ওনার সামনে রেখে দিয়ে বললাম,“কালকে থেকে খাওয়াতে বলব। এখন এটাই খান।”

“খাব না।”

“প্রতিদিন তো ধমকে চা করতে পাঠান। আজ ইচ্ছে করে করেছি বলে খাবেন না?”

“করতে বলেছে কে?

“আপনি কি খাবেন?”

“না।”

“আচ্ছা, না খেলে ফেলে দিন।” বলে আমি উলটো দিক ঘুরে দরজার দিকে পা বাড়ালাম। সঙ্গে সঙ্গে উনি উঠে এসে আমার হাত টেনে ধরলেন। আমি ওনার দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই উনি আমার হাতটা পিছমোড়া করে মুচড়ে ধরে শক্তপোক্ত মুখে বললেন,“শ্রেয়ানের সাথে কিসের এত কথা তোর?”

আমি হাতের ব্যথায় মুখ কুঁচকে অবাক হয়ে বললাম,“মানে?”

“মানে ও আমার কিছুদূর দাঁড়িয়ে টানা আধঘণ্টা তোর সাথে ফোনালাপ করেছে। কী এত কথা হলো ওর সাথে?”

আমি অবাক হলেও হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,“হাতে লাগছে, ছাড়ুন।”

“কী কথা বলেছিস?”

আমি অসহায় মুখে বললাম,“শ্রেয়ান ভাইয়া তো এমনিতেই ফোন করেছিলেন, ওনার না কি কাজ ছিল না। তারপর ওনার ফ্যামিলি নিয়ে গল্প করলেন।”

তাজ ভাই কপাল কুঁচকে বললেন,“ওর ফ্যামিলির গল্প তোর সাথে করে কেন?”

আমার মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। একে তো হাতে ব্যথা পাচ্ছি, তার ওপর আবার ওনার আবোল-তাবোল কথা। হুট করে বলে বসলাম,“উনি আমার জামাই হবেন তো, সেজন্য আগে থেকেই ওনার ফ্যামিলির ব্যাপারে জানিয়ে দিলেন।”

কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে তাজ ভাই আমার মুচড়ে ধরা হাতটা আরও চেপে ধরলেন। এবার আমি ব্যথাতুর শব্দ করে উঠলাম। চোখ জোড়া ছলছল করে উঠতেই তাজ ভাই আমার হাতটা ছেড়ে দিলেন। এক পা পিছিয়ে গিয়ে পুনরায় শক্ত মুখে বললেন,“নেক্সট টাইম যেন এসব না দেখি। শ্রেয়ানের থেকে মেপে মেপে বিশ হাত দূরে থাকবি।”

আমি কোনো উত্তর না দিয়ে গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে রইলাম। আজ বিকেলে শ্রেয়ান ভাইয়া আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি প্রথমে চিনতে পারিনি, কারণ তার নাম্বার আমার ফোনে ছিল না। পরে শ্রেয়ান ভাইয়া বললেন উনি না কি তাজ ভাইয়ের থেকে আমার নাম্বার নিয়েছেন। ফ্রী আছেন বলে আমাকে ফোন করে অনেকক্ষণ অবধি কথা বলেছেন। তো এতে আমার দোষটা কোথায়? আর শ্রেয়ান ভাইয়ার সাথে কথা বলেছি বলে এই শয়তানটা এত রেগে গেল কেন? মানুষ কী পরিমাণ হিংসুটে হলে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে এমন হিংসা করতে পারে! আমার ভাবনার মাঝেই তাজ ভাই এগিয়ে গিয়ে বিছানা থেকে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চুমুক দিলেন। আমি বললাম,“এখন তো ঠান্ডাই হয়ে গেছে।”

“জিজ্ঞেস করিনি।” বলেই পুনরায় কাপে চুমুক দিলেন। আমি মুখ বাঁকিয়ে বিড়বিড় করে বললাম,“ভালো কথাও ভালো লাগে না।”

তাজ ভাই শরবতের মতো পুরো চা-টা শেষ করে কাপটা আমার দিকে এগিয়ে ধরলেন। আমি ওনার হাত থেকে কাপটা নিতেই উনি বললেন,“তোর রেজাল্ট কবে দিবে?”

আমি না বুঝার ভান করে উলটো প্রশ্ন করলাম,“কিসের রেজাল্ট?”

“কদিন আগে যে এক্সাম দিলি, তার রেজাল্ট।”

“জানি না।”

“জানিস না মানে? প্রত্যেকদিন ভার্সিটিতে যাস, আর রেজাল্ট কবে দিবে তা-ই জানিস না?”

আমি মেকি হেসে বললাম,“কাল জেনে আসব।”

তাজ ভাই মাথা দুলিয়ে বললেন,“শোন, কাল সকালে আমি গ্রামে যাব।”

আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম,“আবার?”

“হ্যাঁ, কাজ আছে।”

“আফরা আপুও যাবে না কি?”

তাজ ভাই আমার মাথায় মৃদু চাটি মেরে বললেন,“কথায় কথায় আফরা আপু, আফরা আপু জপিস কেন? আমি বলেছি ওকে নিয়ে যাব?”

“আপনার মাফিয়া পার্টনার যাবেন না?”

তাজ ভাই ভ্রু কুঁচকালেন। আমি ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে বললাম,“শ্রেয়ান ভাইয়া।”

“না। আমি একা যাব।”

“ও, কদিনের জন্য যাবেন?”

“দুই বা তিন দিন। শিওর না। আমি যতদিন গ্রামে থাকব, ততদিন মামু তোকে ভার্সিটিতে দিয়ে-নিয়ে আসবে।”

“আচ্ছা।”

“আরেকটা কথা। শ্রেয়ান হয়তো ভার্সিটিতে দিয়ে-নিয়ে আসতে চাইতে পারে। ওর সাথে যাবি না। মামুকে বলে রেখেছি, তার সাথেই যাবি।”

হঠাৎ করে আমার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি কড়া নাড়ল। আমি হেসে বললাম,“আরে, তাহলে আর বাবার কষ্ট করার কী দরকার? আমি শ্রেয়ান ভাইয়ার সাথেই যাব।”

তাজ ভাই ধমকের সুরে বললেন,“বললাম না শ্রেয়ানের থেকে মেপে মেপে বিশ হাত দূরে থাকবি?”

আমি ত্যাড়াভাবে বললাম,“আমি ওনার সাথেই যাব। এক্ষুনি গিয়ে আমি ওনাকে ফোন করে বলে দিচ্ছি।”

সঙ্গে সঙ্গে তাজ ভাই আমার বাঁ হাতের কব্জি চেপে ধরে কাছে টেনে, মাথায় গান চেপে ধরলেন। মুহূর্তের মধ্যে কোমর থেকে গান কীভাবে বের করলেন টেরও পেলাম না। ভয়ে আমার ডান হাতের চায়ের কাপটা কাঁপতে শুরু করল। আমি চোখ-মুখ খিঁচে কিছুটা জোরেই বলে উঠলাম,“এইইইইইই, না না না না না, শ্রেয়ান ভাইয়ার সাথে যাব না।”

উনি গানটা আরেকটু চেপে ধরে বললেন,“কেন? কী যেন বলছিলি? শ্রেয়ান ভাইয়ার সাথেই যাব, আবার বল, আবার বল।”

“না না, বলেছি বাবার সাথেই যাব।”

“মনে থাকবে?”

আমি দ্রুত গতিতে ওপর নিচে মাথা দোলালাম। উনি গানটা হালকা করে ধরে প্রশ্ন করলেন,“যদি না থাকে?”

আমি অসহায়ের মতো বললাম,“সব শাস্তি মাথা পেতে নিব।”

উনি বাঁকা হেসে বললেন,“মাইন্ড ইট।”

মাথা থেকে গান সরাতেই আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। উনি গানটা পুনরায় কোমরে গুঁজে সরে দাঁড়ালেন। আমি গাল ফুলিয়ে বললাম,“কথায় কথায় মাথায় গান ধরেন কেন? আমি যদি পুলিশে কমপ্লেইন করি?”

উনি আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে বললেন,“এক্ষুনি কর, যা। আমিও তোর প্রাণপ্রিয় নেহালের চিঠি আর ছবি মামুর হাতে ট্রান্সফার করব।”

“আপনি কি জীবনে ভালো হবেন না?”

উনি চোখ দুটো বড়ো করে বললেন,“আমি ভালো না? এই তোর মতো কিছু মেয়েদের জন্যই ছেলেরা উঠতে-বসতে অপমানিত হয়। তোরা ভালো ছেলেদের ভালো বলতে জানিস না। নিজেরা গর্দভ বলে, ছেলেদেরও তাই ভাবিস। না না, আমি এত শান্তশিষ্ট, কর্তব্যপরায়ণ ছেলে হয়ে এমন অপমান কিছুতেই সহ্য করব না। তোদের মতো মেয়েদের বেছে বেছে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করব।”

আমি বার তিনেক চোখ ঝাপটে বললাম,“ভাষণ থামান মাননীয় স্পীকার। আপনি কত শান্তশিষ্ট, লেজ বিশিষ্ট ছেলে, তা আমার জানা আছে।”

তাজ ভাই ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে এগিয়ে গিয়ে ধপাস করে বিছানায় সটান শুয়ে পড়লেন। পা দোলাতে দোলাতে হুকুম করলেন,“আমার লাগেজটা গুছিয়ে রাখ।”

আমি ত্যাড়াভাবে বললাম,“আমি করব কেন? নিজের কাজ নিজে করুন।”

“কারণ তুই আমার এসিস্ট্যান্ট। কথা না বাড়িয়ে কাজে লেগে পড়।”

“পারব না।” বলেই আমি রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। কয়েক পা এগোতেই আমার মনে পড়ল, উনি এ বাড়িতে আসার পর থেকে আমি কোথাও গেলে উনি আগে থেকেই লাগেজ গুছিয়ে রাখেন। অথচ আমি মুখের ওপর ‘পারব না’ বলে দিলাম! এখন কি আমার উচিত আবার গিয়ে লাগেজ গুছিয়ে দেওয়া? ধুর! যেচে আবার গিয়ে শয়তানটার জ্বালাতন সহ্য করার কোনো মানেই হয় না। নিজেরটা নিজেই গুছিয়ে নিক।

চলবে………………..?

(দুঃখিত, পর্বটা গতকাল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here