তাজ ইলোর প্রণয়ালাপন পর্ব:২৬

0
352

#তাজ-ইলোর প্রণয়ালাপন
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি
পর্ব:২৬

বনলতা,
শুভ্র রংটা বরাবরই আমার খুব প্রিয়। অবশ্য এর কোনো কারণ নেই। মানুষের সব প্রিয় জিনিসগুলো প্রিয় হয়ে ওঠার বিশেষ কোনো কারণের প্রয়োজন হয় না। অজানা কারণে এমনিতেই প্রিয় হয়ে যায়। শুভ্র রং আমার প্রিয় হওয়াটাও ঠিক তেমনি ছিল। কিন্তু এখন আমার এই ধারণাটা পালটে গেছে। এতদিন ভাবতাম শুভ্র রং পছন্দ হওয়ার বিশেষ কোনো কারণ নেই। কিন্তু তখন তো আর জানতাম না, আমার প্রিয় রং যে প্রেয়সীকে শুভ্র মেঘেদের রানির মতো সাজাবে। যেদিন শুভ্র মেঘেদের রানির সাজে প্রেয়সীকে স্নিগ্ধ রূপে দেখলাম, সেদিনই বুঝেছিলাম আমার শুভ্র রং পছন্দের কারণ। কলমের জাদুঘর হুমায়ূন আহমেদ বোধ হয় এজন্যই বলেছিলেন,“বাঙালি মেয়েদের সবচেয়ে সুন্দর লাগে সাদা শাড়িতে, অথচ এরা সাদা শাড়ি সচরাচর পরে না। কারণ সাদা বিধবাদের রং।‌” কয়েকদিন আগে গ্রামের বাড়িতে ঠিক বিকেলে, হঠাৎ করেই শুভ্র শাড়ি জড়ানো এক রমণী আমার সামনে উদয় হয়েছিল। কয়েক মুহূর্তের জন্য আমি থমকে গিয়েছিলাম। সেদিন আমার মস্তিষ্ক জানান দিয়েছিল আমার পছন্দের শুভ্র রং কেবলমাত্র বনলতার জন্য। তাকে শুভ্র রং-এ রাঙিয়ে দিতেই আমার এ রং পছন্দ। সেদিনের পর আর তাকে শুভ্র মেঘেদের রানির সাজে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আজ যখন সেই বহুল আকাঙ্ক্ষিত সুযোগটুকু এসেছে, তখন কি আর তা ছাড়া যায়? আমি তো বলব, আমার মনের আকাঙ্ক্ষাটুকু পূরণ করতেই এই সুযোগটা এসেছে। আজ পুনরায় আবার শুভ্র মেঘেদের রানিকে দেখতে চাই। আমার চোখ দুটো সেই শুভ ক্ষণের অপেক্ষায় আকুল হয়ে আছে। আমার অপেক্ষার অবসান ঘটাও প্রিয়তা।

চিঠিটা পড়া শেষ করে সামনের প্যাকেটটা হাতে নিলাম। আজ আবার ঘুম থেকে উঠে শিয়রের পাশে একটা প্যাকেট আর চিরকুট পেয়েছি। আজ আর এই বিষয়টা নিয়ে আমার কনফিউশন নেই। এই কাজ কার তা আমার কাছে স্পষ্ট। চিরকুট রেখে আমি দ্রুত প্যাকেটটা খুলে ফেললাম। প্যাকেটের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল একটা সাদা কটনের শাড়ি, যার আঁচল আর পাড়ের দিকে সাদা বুটিকের কারুকার্য খচিত। শাড়ির সাথে আছে সাদা ব্লাউজ, পেটিকোট, দুমুঠো সাদা কাঁচের চুড়ি, সিলভার কালারের কানের দুল, একটা কালো টিপের পাতা আর একটা কাজল। জিনিসগুলো সব এত সুন্দর যে আমি হা করে কয়েক মিনিট সেগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলাম। একবার চিরকুট আর একবার জিনিসগুলোর দিকে তাকিয়ে আজ অজান্তেই আমার ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠল। এই হাসির অর্থ বোধ হয় আমার নিজেরই জানা নেই। কেন হাসলাম, কী ভেবে হাসলাম তা ভাবতে গিয়ে নিজেই কনফিউশনে পড়ে গেলাম। এই কনফিউশন শব্দটা বোধ হয় তাজ শব্দের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কারণ এই দুটো শব্দই আমার জীবনে একসঙ্গে এসে জেঁকে বসেছে।

_________________________________________

দুপুর দুইটা বাজতে চলল। অথচ সেই সকাল থেকে এখন পর্যন্ত একবারও আমি তাজ ভাই, শ্রেয়ান ভাইয়া আর নাসের ভাইয়ার দেখা পাইনি। কাউকে জিজ্ঞেস করতে দ্বিধা হচ্ছে আর ফোন করতেও দ্বিধা হচ্ছে। সকালে অবশ্য ব্যাপারটা আমি স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম বিয়ে বাড়ির এত ঝামেলার মধ্যে ব্যস্ত থাকতেই পারে। কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো। তাজ ভাইয়ের দেওয়া শাড়ি পরে আমি সেজেগুজে রুম থেকে বেরিয়ে এসেও ওনাকে পেলাম না। ওদিকে বরযাত্রী চলে এসেছে। বাইরে খাবারের তোড়জোড় চলছে। সকালে ঠিকমতো খাইনি, বিধায় প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে কেন জানি খেতেও ইচ্ছে করছে না। বাড়ির সবাই কাজে ব্যস্ত। এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করছে। এর মধ্যে শুধু একবার জুম্মান ভাইয়া এসে আমার সৌন্দর্যের প্রশংসা করে গেছেন আর খেতেও ডেকে গেছেন। পেটে ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও আমি ওনাকে বলেছি একটু পরে খাব। যার দেওয়া জিনিস দিয়ে এত খুশিমনে নিজেকে সাজালাম, এখন তারই কোনো খবর নেই। অজান্তেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। তাই আপাতত সোফার কোণে চুপটি মেরে বসে আছি আর ভাবছি, বাড়িতে এত মানুষ থাকা সত্ত্বেও কেউ আমার খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না। আমি খেয়েছি কি না সে বিষয়ে কারোর ভ্রুক্ষেপ নেই। অথচ তাজ ভাই অন্য ক্ষেত্রে যেমনই হোক, আমার খাবারের ব্যাপারে খুব যত্নশীল। উনি থাকলে এতক্ষণ আমাকে না খেয়ে বসে থাকতেই দিতেন না। আমার ভাবনার মাঝেই হাতে হেঁচকা টান পড়ল। কেউ হেঁচকা টানে আমাকে বসা থেকে দাঁড় করিয়ে দিলো। আমি প্রচন্ড চমকে উঠে সামনে তাকাতেই খুশি হয়ে গেলাম। ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে হাসতে ইচ্ছে করল। কিন্তু তাজ ভাইয়ের রাগত শক্ত মুখ দেখে দমে গেলাম। ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে প্রচুর ক্লান্ত। সারা শরীর ঘামে ভিজে আছে, মাথার চুলগুলোও এলোমেলো হয়ে আছে। আবার চোখে-মুখে রাগ স্পষ্ট। আমি কিছু বলার আগেই উনি আমার হাত ধরে টানতে টানতে দোতলায় চললেন। আমি কিছু বুঝতে না পেরে ভ্রুকুটি করে ওনার সাথে সাথে চললাম। উনি ওনার রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই আমি চোখ পিটপিট করে তাকালাম। তাজ ভাই দরজা আটকে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। ওনার রাগত দৃষ্টির সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় হতেই আমি ভয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। হঠাৎ করে এত রাগের কারণ বুঝতে পারলাম না। কী জানি! হয়তো বাইরে গুন্ডামি করতে গিয়ে কেলানি খেয়ে এসেছে, আর এখন সেই রাগ আমার ওপর ঝাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন যদি আবার গান বের করে! আমার উলটা-পালটা ভাবনার মাঝেই তাজ ভাই হুট করে আমার কাঁধের কাছের শাড়ির পিনটা খুলে ফেললেন। ওনার এহেন কান্ডে আমি হকচকিয়ে গেলাম। চোখ দুটো ছানাবড়া করে কাঁধের কাছের আঁচলটা চেপে ধরে দু’পা পিছিয়ে যেতে নিতেই উনি আমার হাত চেপে ধরলেন। আমার দিকে দু’পা এগিয়ে এসে চোখ পাকিয়ে তাকাতেই আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা গলায় বললাম,“কী করছেন এসব?”

তাজ ভাই ধমকে উঠে বললেন,“বাইরের মানুষজনকে পেট দেখানোর শখ জেগেছে? এভাবে শাড়ি পরতে কে বলেছে? থাপ্পড় দিয়ে মোটা মাথাটা ফাটিয়ে ফেলব ফাজিল মেয়ে।”

এতক্ষণে বুঝলাম ওনার রাগের কারণ। চোখ নামিয়ে পেটের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সত্যিই পেটের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। এর কারণ আমি সম্পূর্ণ আঁচল কাঁধে উঠিয়ে শাড়ি পরেছি। আমি ইতস্তত করে তাজ ভাইয়ের মুখের দিকে তাকাতেই উনি চোখের ইশারায় হাত সরাতে বললেন। কাঁধের কাছের আচঁলটা আমি চেপে ধরে রাখার পরও উনি ছাড়েননি। ওনার ইশারায় এবার আমি ঢোক গিলে হাতটা নামিয়ে নিলাম। উনি আমার আচঁলের একপাশ টেনে নামিয়ে হাতের ওপর রাখলেন, আর একপাশ আবার পিন করে দিলেন। আমার খুব অস্বস্তি লাগলেও চুপচাপ দাঁড়িয়ে মেঝের দিকে চঞ্চল দৃষ্টি বিচরণ করতে লাগলাম। তাজ ভাই শাড়ি পিন করে সূক্ষ্ম চোখে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত নিরীক্ষণ করতে লাগলেন। এবার আমি আরও অস্বস্তিতে পড়লাম। উনি আমাকে বিপরীত দিকে মুখ করে দাঁড় করিয়ে দিলেন। আমি কিছু বুঝতে না পেরে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই উনি আমার মাথাটা আবার ঘুরিয়ে দিয়ে আমার পিঠে ছড়িয়ে রাখা চুলগুলো নিজের দুহাতের মুঠোয় নিলেন। তারপর আস্তে আস্তে খুব যত্ন সহকারে চুলগুলো খোপা করে দিলেন। উনি কোনো কথা বলছেন না বলে আমি নিজেও সাহস পাচ্ছি না। উনি টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে আমার গলার নিচে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামটুকুও মুছে দিলেন। গলায় ওনার আঙুলের স্পর্শে আমি পুনরায় একটা শুকনো ঢোক গিলে দুহাত এক করে কচলাতে লাগলাম। তাজ ভাই এবার টিস্যু দিয়ে নিজের মুখের ঘামও মুছলেন। তারপর ক্লোজেট থেকে নিজের জামা-কাপড় বের করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বললেন,“চুপচাপ এখানে বসে থাক। রুম থেকে এক পা বের হলে পা ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখব।”

আমি কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ ফেলে তাকালাম। ততক্ষণে উনি ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমি কী করব বুঝে উঠতে পারলাম না। চলে যাব, না-কি থাকব? চলে গেলে যদি আবার ধমকায়? এখানে একা একা বসে থেকেই বা কী করব? অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে ফোন বের করে ফেসবুক স্ক্রলিং করতে লাগলাম। প্রায় দশ মিনিট পর দরজায় টোকা পড়ল। আমি সোজা হয়ে বসে ভাবলাম কে নক করছে। দরজা খুলব কি-না সে বিষয়েও কনফিউশনে পড়ে গেলাম। আমাকে এই রুমে দেখে যদি কেউ কোনো আপত্তিকর কথা বলে? আমার ভাবনার মাঝেই দরজার ওপাশ থেকে পুরুষালি কন্ঠস্বর ভেসে এল,“স্যার, দরজা খুলুন।”

কন্ঠস্বর শুনে বুঝলাম এটা নাসের ভাইয়া। আমি এবার বিছানা থেকে উঠে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললাম। আমাকে দেখেই নাসের ভাইয়া একগাল হেসে বললেন,“ম্যাডাম, স্যার খাবার আনতে বলেছিল। এই নিন।”

নাসের ভাইয়া আমার দিকে খাবারের ট্রে এগিয়ে ধরলেন। আমি ওনার হাত থেকে ট্রেটা নিতে নিতে ভ্রুকুটি করে বললাম,“ভাইয়া, আপনাকে কতবার বলব আমাকে ম্যাডাম ম্যাডাম করবেন না? আপনার মাফিয়া স্যারকে চব্বিশ ঘন্টা স্যার স্যার করেন ভালো কথা। আমি কি আপনাদের টিমের কেউ? আমাকে ম্যাডাম ম্যাডাম করেন কেন? তাছাড়া আমি কিন্তু আপনার অনেক জুনিয়র। বোনও তো বলতে পারেন।”

নাসের ভাইয়া ইতস্তত করে বললেন,“সরি ম্যাডাম। না, সরি বোন। এবার থেকে মনে রাখব। স্যার কোথায়?”

“শাওয়ার নিচ্ছে।”

“আচ্ছা আমি যাই।”

নাসের ভাইয়া তাড়া দেখিয়ে চলে গেলেন। আমি দরজাটা ভেজিয়ে রেখে ট্রেটা নিয়ে টেবিলে রাখলাম।

“নাসের এসেছিল?”

তাজ ভাইয়ের কন্ঠ শুনে আমি পেছন ফিরে তাকালাম। উনি তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। কিন্তু ওনার উন্মুক্ত লোমশ বুকটা চোখে পড়তেই আমি খানিক থমকালাম। দ্রুত দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে এলোমেলো দৃষ্টি মেঝেতে বিচরণ করতে করতে ওপর নিচে মাথা ঝাঁকালাম। তোয়ালেটা চেয়ারে ঝুলিয়ে রেখে উনি ক্লোজেটের দিকে এগিয়ে গেলেন। আমি আড়চোখে একবার তাকিয়ে আবার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালাম। মিনিট তিনেক পর তাজ ভাই এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে বিছানায় বসালেন। টেবিল থেকে খাবারের ট্রেটা নিয়ে নিজেও আমার মুখোমুখি বসলেন। আপাতত আমার বিস্মিত দৃষ্টি ওনার পরনের পাঞ্জাবিতে নিবদ্ধ। আমি একবার ওনার পাঞ্জাবির দিকে তো আরেকবার নিজের পরনের শাড়ির দিকে তাকাচ্ছি। আমার শাড়ি আর ওনার পাঞ্জাবি, দুটোই সেইম কালার, সেইম ডিজাইন! তাজ ভাই যে আমার মুখের সামনে খাবার ধরে আছেন সেদিকে আমার খেয়ালই নেই। উনি যখন আমার মুখটা মৃদু চেপে ধরে খাবার মুখে পুরে দিলেন, তখন আমার হুঁশ ফিরল। মুখের খাবারটুকু কোনোমতে গিলে নিয়ে আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বললাম,“আপনার পাঞ্জাবি আর আমার শাড়ি সেইম!”

উনি প্লেটের দিকে দৃষ্টি রেখে ভাবলেশহীনভাবে বললেন,“তো?”

আমি আরও অবাক হয়ে বললাম,“কাপল সেট!”

উনি আমার মুখের সামনে খাবার ধরে একইভাবে বললেন,“তো?”

আমি খাবার মুখে না তুলে বিরক্তি নিয়ে বললাম,“তো, তো করছেন কেন? স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেন না?”

উনি শক্ত মুখে বললেন,“আর একটাও বাড়তি কথা বলবি না। হা কর।”

আমি গোমড়া মুখে হা করে খাবার মুখে নিলাম। তারপর প্লেটের দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো বড়ো করে বললাম,“এত ভাত কে খাবে?”

উনি রোস্টের টুকরো থেকে মাংস ছিঁড়তে ছিঁড়তে বললেন,“যার জন্য আনা হয়েছে সে-ই খাবে।”

আমি ডানে বায়ে মাথা দুলিয়ে বললাম,“আমি এতগুলো খাব না। আমাকে কি রাক্ষস মনে হয় আপনার? শুধু শুধু খাবার নষ্ট হবে। এর অর্ধেকও খেতে পারব না আমি।”

উনি আমার মুখে মাংসের টুকরো পুরে দিয়ে বললেন,“বলেছি না বাড়তি কথা না বলতে? চুপচাপ খা।”

আমি গাল ফুলিয়ে খাবার চিবোতে চিবোতে নিচু স্বরে বললাম,“বাইরে মাফিয়াগিরি করে ঘরে এসে আমাকে রাগ দেখান?”

আমার কথায় উনি শুধু একবার শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। কিন্তু কিছু না বলেই খাবারের প্লেটে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেন। আমি আবার বললাম,“বেড়াতে এসেও আপনার গুন্ডামি না করলে চলে না? কটা দিন অন্তত এসব ছেড়ে থাকুন।”

উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন,“এসব কে বলল তোকে?”

“বলা লাগে না-কি? এমনিতেই বুঝতে পেরেছি।”

“কীভাবে?”

“সেই সকালে বেরিয়েছেন, কিছুক্ষণ আগে ফিরেছেন। সবাইকে বলে গেছেন খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা কাজ আছে। কেউ না জানলেও আমি তো জানি আসল কাহিনি।”

উনি পুনরায় আমার মুখে খাবার তুলে দিয়ে মৃদু হেসে বললেন,“মোটা মাথায় বুদ্ধি হয়েছে দেখছি।”

আমি কপালটা খানিক কুঁচকে ফেললাম। কিন্তু রাগ দেখানোর পরিবর্তে ওনার ঠোঁটের কোণের হাসির রেখাটুকুতে দৃষ্টি আটকে গেল। এসে হতে ওনার মুখে রাগ আর বিরক্তি ছিল। তা এতক্ষণে হাসিতে পরিণতি পেল। উনি হাসতে হাসতে নিজের মুখে খাবার তুলে নিলেন। তারপর আবার যখন আমার মুখে খাবার তুলতে যাবেন তখনই দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলেন তাজ ভাইয়ের ফুপু। ফুপুকে দেখে আমি হা করা মুখটা বন্ধ করে ফেললাম। ফুপুর মুখ দেখে মনে হলো উনি অবাক হওয়ার সাথে প্রচন্ড বিরক্তও হয়েছেন। তাজ ভাই ফুপুর দিকে একবার তাকিয়ে বললেন,“কিছু বলবে ফুপু?”

আমি আবার ফুপুর দিকে তাকাতেই তাজ ভাই আমার মুখটা ঘুরিয়ে খাবার সামনে ধরে চোখের ইশারায় খেতে বললেন। আমি আড়চোখে আরেকবার ফুপুর দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করে খাবার মুখে তুললাম। ফুপু একপ্রকার তেড়ে এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে ঝাঁজালো গলায় বললেন,“এই মেয়ে, তোমার কি কান্ড-জ্ঞান কিছুই নেই? ছেলেটা সেই সকালে সামান্য কিছু খাবার মুখে তুলে বেরিয়েছে। এত বেলা হয়েছে এখনও দুপুরের খাবারটুকু খায়নি। এখন গোসল করে একটু খাবার মুখে তুলবে, তা না। তুমি এসে ওর হাতে খেতে বসে গেলে! তোমার কি হাত নেই? না-কি তুমি বাচ্চা মেয়ে? এত বড়ো হয়েছ অথচ আদব-কায়দা কিছুই দেখছি জানো না!”

আমি ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনেই মাথা নিচু করে ফেললাম। চোখ দুটো বর্ষা কালের ভরা পুকুরের মতো পানিতে টইটুম্বুর হয়ে গেল। এভাবে কখনও তাজ ভাইও আমাকে বকেনি। ফুপুকে কিছু বলতে ইচ্ছে করলেও বেয়াদব ভাববে ভেবে চুপ রইলাম। তাজ ভাই খাবারের প্লেট রেখে ফুপুর দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললেন,“তোমার কথা শেষ হয়েছে? তাহলে যাও এখান থেকে।”

ফুপু যথাসম্ভব আদুরে গলায় বললেন,“বাবা, তুই কোন আক্কেলে এই মেয়েকে খাওয়াতে বসেছিস বল তো? তোর নিজেরও তো ক্ষুধা পেয়েছে। তুই আগে খেয়ে নিতিস। ওকে তুলে খাওয়াতে হবে কেন? তোর কী ঠেকা পড়েছে?”

“ফুপু, ওর শরীর আমার মতো ভালো নেই। ডক্টর বলেছে ও যেন ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে। কিন্তু ও নিজের হাতে খেলে চারভাগের একভাগ খাবার খায়। আর ও আমার কাছে খেতে আসেনি। আমি নিজেই ওকে খাওয়াতে নিয়ে এসেছি।”

“হয়েছে বাপ, আমি অত বোকা নই। কার মনে কী চলে তা ঠিকই বুঝতে পারি।”

কথাটা ফুপু আমার দিকে তাকিয়েই বললেন। তাজ ভাই এবার উঠে দাঁড়িয়ে কিঞ্চিৎ রাগ দেখিয়ে বললেন,“ফুপু প্লিজ। মুখ বন্ধ করে এখান থেকে যাও। আমি এখান থেকেই খেয়ে নিচ্ছি।”

ফুপু অবাক হয়ে বললেন,“সেকি! তুই ওর এঁটো খাবার খাবি কেন বাবা?”

“তুমি কি চাও আমি আজই এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাই?”

“এমন কথা বলছিস কেন? আমি তো চাই তুই সারাজীবন আমাদের চোখের সামনে থাকিস।”

“আজ বাড়িতে অনুষ্ঠান চলছে। এখন আমি কোনো প্রকার ঝামেলা চাই না। প্লিজ যাও।”

ফুপু মোটেও সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। তবু নরম কন্ঠে বললেন,“আচ্ছা বাবা চলে যাচ্ছি। তুই বরং আয়, আমি তোকে যত্ন করে খেতে দিচ্ছি। এসব এঁটো খাবার খাস না যেন। একটু তাড়াতাড়ি আসিস, তুই তো এখনও বরের বাড়ির কারো সাথে পরিচিতও হলি না।”

তাজ ভাই মৃদু কন্ঠে বললেন,“আসছি।”

ফুপু চলে যেতে গিয়েও আবার থেমে গেলেন। আমি এলোমেলো দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার বাঁ হাতের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমি কিছু আঁচ করতে পেরে হাতটা শাড়ির নিচে গুটিয়ে নিলাম। ফুপু আবার এগিয়ে এসে খপ করে আমার হাতটা টেনে নিয়ে নিজের চোখের সামনে তুলে ধরে আমার হাতের চুড়ি দুটো নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলেন। এবার আমি ভয় পেয়ে গেলাম। বেশ বুঝতে পারলাম আমার হাতে ফুপির চুড়ি দেখে উনি চিনতে পেরেছেন। না জানি এখন আবার কী বলে বসবে! যা ঠোঁট কাটা মহিলা! আমি ফাঁকা ঢোক গিলে তাজ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফুপুর দিকে তাকিয়ে আছেন। ফুপু এবার আকাশ থেকে পড়ার ভান করে বললেন,“আরে, এগুলো তো হুবহু আলো ভাবির চুড়ির মতো দেখতে। আমার স্পষ্ট মনে আছে ওনার চুড়ির ডিজাইন। তুমি এমন ডিজাইনের চুড়ি কোথায় পেলে?”

আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাজ ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ফুপু আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাজ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,“এই তাজ, এগুলো তোর মায়ের চুড়ি না-কি?”

তাজ ভাই ওপর নিচে মাথা দুলিয়ে বললেন,“হ্যাঁ। আগে মায়ের ছিল, এখন ওর।”

ফুপু একপ্রকার চিৎকার করেই বলে উঠলেন,“এটা কেমন কথা? এগুলো ওকে কে দিয়েছে? এগুলো যদি কেউ পাওনা থাকে তবে সে তোর বউ। ওর হাতে কেন?”

তাজ ভাইয়ের সহজ উত্তর,“আমার মনে হয়েছে ওর হাতে আম্মুর মতোই মানাবে, তাই আমি নিজের ইচ্ছেয় দিয়েছি। আর আমি চাই না এখন এটা নিয়েও তুমি কথা তোলো।”

ফুপু আমার দিকে তাকিয়ে নিজের কপাল চাপড়ে বললেন,“ভালোই মেয়ে তুমি। খুব প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। করো করো, যত ইচ্ছে হাত করো। সুযোগ পেয়েছ হাত করার, ছাড়বে কেন? হাত করে যত যা আছে নিয়ে নাও। মুখটা নিষ্পাপ দেখতে হলেও, মনে ভালোই প্যাঁচ আছে বৈকি!”

তাজ ভাই রেগেমেগে কিছু বলতে চাইছিলেন। কিন্তু তার আগেই ফুপু একবার আমার দিকে ক্ষুব্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গটগট করে হেঁটে চলে গেলেন। আমি আবার মাথা নিচু করে ফেললাম। এবার আর চোখের কোণের চিকচিকে পানিটুকু কোনো বাঁধাই মানলো না। বেপরোয়ার মতো গড়িয়ে পড়ল। তাজ ভাই মুখ দিয়ে ফুস করে একটা শব্দ করে পুনরায় নিজের জায়গায় বসে পড়লেন। উনি যে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন তা বেশ বুঝতে পারলাম। তাই চোখের পানিটুকু মুছে নড়েচড়ে বসলাম। তাজ ভাই খাবারের প্লেটটা হাতে তুলে নিয়ে আমার মুখের সামনে খাবার ধরে শান্ত কন্ঠে বললেন,“হা কর।”

আমি ওনার দিকে না তাকিয়েই থমথমে গলায় বললাম,“আর খাব না।”

“কেন?”

“পেট ভরে গেছে।”

“সত্যি?”

আমি ওনার মুখের দিকে তাকালাম। উনি শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন। ওনার সাথে চোখাচোখি হতেই আমি দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে বললাম,“হ্যাঁ।”

তাজ ভাই আজ আর জোর করলেন না। খাবার রেখে আমার হাতে পানির গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে চুপচাপ ওয়াশরুমে চলে গেলেন। ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে আসতে দেখে আমি কিছুটা অবাক হলাম। বলতে ইচ্ছে করল ‘আপনি খাবেন না?’ পরক্ষণেই মনে পড়ল ফুপু একটু আগে বলে গেছেন উনি যেন আমার এঁটো খাবার না খান। হয়তো সেজন্যই খাননি। তাজ ভাই আমার সামনে এসে বসায় আমি দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম। উনি টিস্যু দিয়ে আলতো করে আমার ডান চোখের নিচের অংশ মুছতে শুরু করলেন। আমি সরু চোখে তাকিয়ে রইলাম। কারণ চোখের পানিটুকু কিছুক্ষণ আগেই আমি মুছে ফেলেছি। উনি টিস্যুটা নামিয়ে নিতেই আমি টিস্যুর দিকে তাকিয়ে বুঝলাম চোখের কাজল লেপ্টে গিয়েছিল। উনি আমার বাঁ হাতটা নিজের দুহাতের মুঠোয় নিতেই আমি চমকে উঠলাম। ফুপু এই চুড়ি নিয়ে এত কথা বলায় কি উনি চুড়ি জোড়া নিয়ে যাবেন? কিন্তু উনি নিজেই তো বলেছিলেন উনি বললেও আমি যেন কখনও এগুলো না খুলি। হঠাৎ করেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। তাজ ভাই আমার হাতের চুড়ি দুটো নেড়েচেড়ে দেখে মুচকি হাসতেই আমি মনে বল পেলাম। মনে হলো আমার ধারণা ভুল। উনি আমার হাতটা উঁচু করে তুলে ধরে নিজে ঝুঁকে পড়লেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই আবার হাতটা ছেড়ে দিয়ে উনি পিছিয়ে বসলেন। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছোটো একটা নিঃশ্বাস ফেলে উঠে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে লাগলেন। আমি অবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। বেশ বুঝতে পারলাম উনি আগের বারের মতো আজও চুড়ি দুটোতে চুমু খেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ এমন আচরণের কারণ বুঝে উঠতে পারলাম না। কেবলই মনে হতে লাগল এসব ঐ ফুপুর কড়া কড়া কথার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তাজ ভাই নিজেকে পরিপাটি করে ফোন আর ওয়ালেট নিয়ে এগিয়ে এসে বললেন,“চল।”

আমি চুপচাপ বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালাম। পা তুলে বসার কারণে শাড়ির কুঁচিগুলো কুঁকড়ে গেছে। আমি ঝুঁকে পড়ে কুঁচি ঠিক করতে লাগলাম। তাজ ভাই এগিয়ে এসে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসতেই আমি সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। উনি আমার কুঁচিগুলো ঠিক করে দিলেন আর আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ওনার শান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কেন জানি ওনার এটুকু নীরবতা আমি মানতে পারছি না। কুঁচি ঠিক করে দিয়ে তাজ ভাই উঠে দাঁড়িয়ে আবার দরজার দিকে হাঁটা দিলেন। আমিও চুপচাপ ওনার পিছু নিলাম।

বাইরে এসে দাঁড়াতেই শ্রেয়ান ভাইয়া আর আদনান ভাইয়া এগিয়ে এলেন। শ্রেয়ান ভাইয়া অবাক হয়ে মুগ্ধ কন্ঠে বললেন,“ওয়াও ইলোমিলো! সাদা মেঘেদের রানির মতো লাগছে তোমাকে!”

শ্রেয়ান ভাইয়ার কথায় আমি আড়চোখে তাজ ভাইয়ের দিকে তাকালাম। উনি ভ্রুকুটি করে শ্রেয়ান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন। এর কারণও স্পষ্ট। শ্রেয়ান ভাইয়া আমাকে সাদা মেঘেদের রানি বলায় উনি হয়তো আমার মতোই অবাক হয়েছেন। আমি মুচকি হেসে বললাম,“থ্যাংক ইউ ভাইয়া।”

আদনান ভাইয়া বললেন,“শাড়িটাও দারুণ! কার পছন্দে কেনা?”

এবার পড়লাম বিপাকে। এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা থাকলেও, বাকিরা হয়তো উত্তরটা সহজভাবে নিতে পারবে না। উত্তরের আশায় আমি তাজ ভাইয়ের দিকে তাকালাম। অথচ উনি ফোনে ব্যস্ত। এরমধ্যেই কোথা থেকে মিনহা আপু আর আমিরা আপু ছুটে এলেন। দুজনেই ভারী লেহেঙ্গা আর ভারী মেকআপে বেশ আকর্ষণীয়ভাবে নিজেদের সাজিয়েছে। মিনহা আপু অবাক হয়ে আমার খুব প্রশংসা করলেন। তার ভাষ্যমতে সাদা শাড়িতে আমাকে সাদা পরীর মতো লাগছে। কিন্তু এতে আমিরা আপু দ্বিমত পোষণ করলেন। মিনহা আপুর কথা সে মানতে নারাজ। তাজ ভাই এসবের কোনোকিছুতেই কান দিচ্ছেন না। শেষমেষ আমিরা আপুই অবাক হয়ে বলে উঠল,“তাজ ভাইয়া, আপনার পাঞ্জাবি আর ইলোরার শাড়ি তো কাপল সেট! আমি এই সেটটা দুদিন আগেই অনলাইনে একটা পেইজে দেখেছিলাম।”

আমিরা আপুর কথায় বাকিরাও সূক্ষ্ম চোখে আমাকে আর তাজ ভাইকে নিরীক্ষণ করতে শুরু করলে। আমি খুব অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেলাম। বারবার অসহায় দৃষ্টিতে তাজ ভাইয়ের দিকে তাকালাম। কিন্তু এ ব্যাপারে ওনার কোনো হেলদোল নেই, যেন কিছুই হয়নি। এবার আমিরা আপুর সাথে মিনহা আপু, শ্রেয়ান ভাইয়া আর আদনান ভাইয়াও যোগ দিলেন। সবার একই প্রশ্ন,“এই কাপল সেট কে কিনল এবং কেন কিনল?”

শেষে তাজ ভাই বিরক্ত হয়ে কপাল কুঁচকে ধমকে উঠে বললেন,“সমস্যা কী তোদের? এই কাপল সেট আমি কিনেছি। ও শাড়ি আনেনি আর আমারও পাঞ্জাবি কেনার দরকার ছিল। এই কাপল সেটটা দেখে শাড়ি-পাঞ্জাবি দুটোই খুব পছন্দ হয়েছিল, তাই নিয়ে এসেছি। আলাদা আলাদা কেনার মতো অত সময় ছিল না হাতে। নাথিং এলস। আন্ডারস্ট্যান্ড?”

আদনান ভাইয়া সন্দিহান কন্ঠে বললেন,“সত্যি?”

তাজ ভাই একইভাবে বললেন,“অফকোর্স।”

আমিরা আপু বলল,“ওর শাড়ি আপনি কেন কিনতে গেলেন? আমাদের কারো কাছে শাড়ি চাইলে কি আমরা দিতাম না?”

তাজ ভাই বললেন,“কিনেছি, কারণ এখানে ও আপাতত আমার রেসপন্সিবিলিটি। এ বিষয়ে আমি আর কোনো প্রশ্ন শুনতে চাইছি না।”

কেউ আর কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ পেল না। অর্নি ভাবি এসে তাজ ভাইকে তাড়া দিয়ে বললেন উনি যেন গিয়ে বর পক্ষের সবার সাথে পরিচিত হয়ে আসে। তাজ ভাই বর পক্ষের সাথে পরিচিত হবার জন্য আমাকে নিয়ে সেদিকে হাঁটা দিলেন। আমাদের সাথে শ্রেয়ান ভাইয়াও চললেন। যেতে যেতে শ্রেয়ান ভাইয়া তাজ ভাইকে বললেন,“একটা কথা বলব বলব করে বলা হয়ে ওঠেনি।”

তাজ ভাই প্রশ্ন করলেন,“কী কথা?”

“তুই ইদানীং পাঞ্জাবি ছাড়া বাইরেই বেরোস না। কাহিনি বুঝলাম না। তুই তো কোনোদিন পাঞ্জাবি পাগল ছিলি না। হঠাৎ এত পাঞ্জাবির প্রতি আকর্ষণ বাড়ার কারণ কী?”

শ্রেয়ান ভাইয়ার প্রশ্নটা শুনে আমি কান খাড়া করে তাজ ভাইয়ের উত্তর শোনার অপেক্ষা করলাম। মনে মনে একটু খুশিই হলাম। কারণ এই প্রশ্নটা আমার মনেও জেগেছিল। উনি দেশে ফেরার পর প্রথম প্রথম সবসময় শার্টেই দেখেছি। একদিনও পাঞ্জাবি পরতে দেখিনি। কিন্তু উনি সাতমাস পর বাড়ি ফেরার পর থেকেই ব্যাপারটা আমি লক্ষ্য করছি। কিন্তু কখনও কিছু বলার সাহস হয়ে ওঠেনি। আজ শ্রেয়ান ভাইয়া আমার মনে জমে থাকা প্রশ্নটাই করেছেন। কিন্তু শ্রেয়ান ভাইয়ার প্রশ্নে তাজ ভাই মুচকি হাসলেন। শ্রেয়ান ভাইয়া বললেন,“একদম হাসবি না। কনফিউশনে ফেলার চেষ্টা করিস না ভাই। কারণ তুই যদি বলিস তোর গার্লফ্রেন্ড পাঞ্জাবি পছন্দ করে, তবে আমি বলব তোর তো গার্লফ্রেন্ডই নেই। তাহলে?”

তাজ ভাই এবারেও বিনা উত্তরে মুচকি হাসলেন। আমি হতাশ হলাম। ওনাকে নিয়ে আমার মনে জমে থাকা কোনো প্রশ্নের উত্তরই হয়তো আমি এই জীবনে পাব না।

চলবে………………..?

(কাল এক্সাম আছে। পড়া বাদ দিয়ে বড়োসড়ো এক পর্ব লিখে ফেললাম। সাড়া না পেলে রাগ করমু হুঁহ্‌।?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here