তাজ ইলোর প্রণয়ালাপন পর্ব:১৪

0
405

#তাজ-ইলোর প্রণয়ালাপন
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি
পর্ব:১৪

বনলতা,
তোমার প্রশ্ন, আমি কেন তোমাকে বনলতা নামে ডাকি। তুমি যা মেয়ে! এই প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া অবধি যে তোমার মাথার মধ্যে এটাই ঘুরপাক খাবে সে ব্যাপারে আমি একদম নিশ্চিত। তাই ভাবলাম উত্তরটা দিয়েই দেই। তুমি বলেছিলে তুমি বনলতা নামের একজনকেই চেনো। জীবনানন্দ দাশের কবিতার বনলতা। হ্যাঁ, তাকে হয়তো সবাই চেনে। কিন্তু আমি আরও একজন বনলতা খুঁজে পেয়েছি। সে কিন্তু জীবনানন্দ দাশের বনলতার থেকে কমও না। আমার উদ্দেশ্যহীন জীবন পথে হঠাৎ করেই তার দর্শন পেয়েছি। প্রথম দর্শনেই মনে হয়েছিল আমার মনের খাঁ খাঁ ফাঁকা বনে আমি এমন এক লতাগুল্মের সন্ধান পেয়েছি, যা সহসা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এই একটা লতাগুল্মই আমার প্রাণহীন জীবন বনে প্রাণ ফিরিয়ে দিবে। সেজন্যই হয়তো তাকে দেখে আমার মনে একটা নামই এসেছিল, ‘বনলতা।’ তার এই নাম পছন্দ না হলেও আমি তাকে এ নামেই ডাকব। এই নামটা শুধুমাত্র তার জন্যই। আমৃত্যু আমি তাকে এক নামেই চিনতে চাই, ‘আমার বনলতা।’

বিঃদ্রঃ আইসক্রিম যখন খেতে চেয়েছিলে তখন খাওয়াতে পারিনি। বাইরের খাবার অস্বাস্থ্যকর, তা তো বুঝেও বুঝতে চাও না। পিচ্চি মানুষ, তাই মায়া করে কিনে আনলাম। এখন মনভরে খাও।

আজ বিকেলে ঘুম থেকে উঠেই শিয়রের পাশে এই চিঠি আর একটা আইসক্রিমের বক্স পেলাম। এবার আর প্রেরক চিনতে কষ্ট হলো না। দেখেই বুঝে গিয়েছি। দরজা লাগিয়ে এসে চিরকুটটা দ্রুত পড়ে শেষ করে আমি ‘থ’ হয়ে গেলাম। মনে এক অন্যরকম অনুভূতি নাড়া দিয়ে উঠল। এত আবেগ মেশানো চিঠি পড়ে আমার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে। একটা মানুষ এত সুন্দর করেও ভাবতে পারে! কই? তাকে দেখে তো এটা বুঝার উপায় নেই। কিন্তু আজ আমি এটা বলতে বাধ্য যে লোকটার চিন্তা-ভাবনার ধরণ আসলেই অনেক সুন্দর। শুধু সেটা বাইরে প্রকাশ করে না। হঠাৎই আমার মস্তিষ্ক জানান দিলো, চিঠিতে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে এই চিঠির প্রেরকের মনে প্রাপকের জন্য সত্যি সত্যিই আলাদা কোনো অনুভূতি আছে। কথাটা মাথায় আসতেই আমি থমকে গেলাম। এর মানে উনি সত্যিই আমাকে পছন্দ করেন! এবার আর এই ভাবনা ছাড়া অন্য কোনো ভাবনা মাথায় এল না। আমার হাত-পা কেন জানি ঠান্ডা হয়ে আসছে। এই মুহুর্তে ঠিক কেমন অনুভূতি হচ্ছে তা নিজেরই বোধগম্য হচ্ছে না। অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটে গেলে যা হয় আর কী। আমি বার কয়েক চিঠিটা পড়লাম। তারপর ঝিম মেরে বসে থেকে বেশ অনেকটা সময় নিয়ে আকাশ-পাতাল ভাবলাম। আমার ভাবনার সুতা ছিঁড়ল আইসক্রিমের বক্সটার দিকে দৃষ্টি পড়ায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চিরকুটটা নিয়ে আমার ব্যাগের মধ্যে লুকিয়ে রাখলাম। তারপর বিছানায় উঠে পদ্মাসন করে বসে আইসক্রিম খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। আইসক্রিম খেতে খেতে আবার তাজ ভাইয়ের চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়লাম। লোকটা মনের দিকে একরকম আর বাইরে অন্যরকম। আর এটা বোধ হয় শুধুমাত্র আমিই বুঝলাম। বনলতা নামের রহস্য তো পেয়ে গেলাম, কিন্তু উনি যে চিঠিতে আমাকে তুমি বলেন। এটা তো বুঝতে পারলাম না। যাকগে, এটা পরে জেনে নিব। কিন্তু এখন আবার অন্য চিন্তা মস্তিষ্কে কড়া নাড়ল। ওনার সামনে যাব কীভাবে আমি? এই চিঠিটা পড়ে এখন তো কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে। আচ্ছা? উনি কি আমাকে শুধুই পছন্দ করেন? না-কি ভালোও বাসেন? বাঁ হাতের চুড়ি জোড়ার দিকে তাকিয়ে ভাবলাম উনি হয়তো সত্যিই আমাকে ফুপির পুত্রবধূ করার চিন্তা-ভাবনা থেকেই এগুলো দিয়েছেন। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব? সম্পর্কে উনি আমার ফুপাতো ভাই হন। আর তাছাড়া বাবা এটা মানবেও না। তাহলে উনি কী ভেবে এসব মাথায় নিয়ে বসে আছেন? আবার তো বললেন এ বছরই চলে যাবেন। চলে গেলে আমাকে নিয়ে এসব ভাবার মানে কী? আসলে ওনার মনের মধ্যে কী চলছে? কী জানি! লোকটার মনের খবর পাওয়া মুশকিল। আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, এমন একটা সত্য জানার পরও ওনার প্রতি আমার একটুও রাগ বা বিরক্তি আসছে না। বরং সম্পূর্ণ অন্যরকম একটা অনুভুতির সৃষ্টি হচ্ছে। ভাবনার মাঝে আমি পুরো এক বক্স আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলেছি। এখন আমার মাথায় হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু তাজ ভাইয়ের থেকে এসব প্রশ্নের উত্তর কীভাবে পাব? তখনই দরজায় টোকা পড়ল। আমি উচ্চস্বরে প্রশ্ন করলাম,“কে?”

দরজার বাইরে থেকে আফরা আপু উত্তর দিলো,“আমি, দরজা খোল।”

আমি হন্তদন্ত হয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালাম। আইসক্রিমের বক্সটা খাটের নিচে লুকিয়ে ফেললাম। তারপর গিয়ে দরজা খুলে আফরা আপুকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিলাম। আপু রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,“দরজা আটকে ঘুমাচ্ছিস কবে থেকে আবার?”

আমি মেকি হেসে বললাম,“আজ এমনিতেই আটকেছিলাম।”

“কথা ছিল তোর সাথে।”

“হ্যাঁ বলো।”

আফরা আপু খাটে পা ঝুলিয়ে বসে বলল,“তাজ ভাই তো আমাকে সময়ই দিচ্ছে না। কী করি বল তো?”

কথাটা শুনে আমার মুখের হাসিটুকু মিলিয়ে গেল। কেন হলো তা বুঝতে পারলাম না। আমি ভাবলাম আফরা আপু তো তাজ ভাইকে ভালোবাসে। কিন্তু তাজ ভাইয়ের তো তার জন্য কোনো ফিলিংসই নেই। এখন আমার কী করা উচিত? কিছুই তো মাথায় আসছে না। আফরা আপু আবার বলল,“কী হলো? কিছু বল।”

আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম,“এখন কিছু মাথায় আসছে না আপু। ভেবে পরে বলি?”

আপু গোঁ ধরে বসল এখনই কিছু একটা ভেবে বলতে হবে। মাথায় এত চিন্তা নিয়ে বসে থেকে আবার এই আরেক জ্বালায় পড়লাম আমি। এখন আপুকে একটা আইডিয়া না দিলে সে এখান থেকে এক পা-ও নড়বে না। ভাবতে লাগলাম কী আইডিয়া দিব। কিছুক্ষণ ভেবে পরে চট করে বলে উঠলাম,“পেয়েছি। শোনো আপু, তুমি তাজ ভাইকে নিয়ে বাইরে কোথাও ঘুরতে যাও। তোমার কোনো ফ্রেন্ডের বাড়ি বা অন্য কোথাও। একসাথে অনেকটা সময় কাটাতে পারবে আর আলাদা কথা বলারও সুযোগ পাবে।”

আপু প্রথমে একটু খুশি হলেও পরে মুখ কালো করে বলল,“কিন্তু তাজ ভাইয়া কি তোকে আর অলিকে রেখে যাবে?”

আমি বললাম,“যাবে যাবে। আমি আগেই না বলে দেব যে আমি যাব না।”

আফরা আপু খুশি হয়ে বলল,“আচ্ছা, তাহলে আজ রাতেই যাই। বলব আমার এক ফ্রেন্ডের থেকে ইমিডিয়েটলি একটা নোটস আনতে হবে। ঠিক আছে?”

আমি মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালাম। আফরা আপু উৎফুল্ল মনে দুলতে দুলতে রুম থেকে চলে গেল। আফরা আপুকে দেখে আমার মায়া লাগছে। আবার চিঠির কথাগুলোর কথাও ভাবছি। তাজ ভাই কেন এ বিষয়ে আমার সাথে সরাসরি কথা বলছেন না? সমস্যা কী তার? আমার তো অনেক প্রশ্নের উত্তর চাই। আসরের নামাজ পড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখলাম বাবা আর শ্রেয়ান ভাইয়া একসাথে বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে। আমি গিয়ে বাবার পাশ ঘেঁষে বসে অভিমানী কন্ঠে বললাম,“গ্রামে এলে তুমি আমাকে একদম ভুলে যাও বাবা।”

বাবা হেসে আমাকে একহাতে আগলে ধরে বলল,“শুধু আমিই ভুলে যাই? তুমি কী করো আম্মা? গ্রামে এলে তো তুমি সারাক্ষণ এ বাড়ির মানুষের সাথেই ব্যস্ত থাকো। যাই হোক, চা খাবে?”

আমি মাথা নেড়ে না বললাম। শ্রেয়ান ভাইয়া বললেন,“চা কি অপছন্দ না-কি তোমার?”

আমি বললাম,“অপছন্দ না, আবার খুব বেশি পছন্দও না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হলে খাই।”

“আমি আর তাজ বরাবরই চা পাগল। যখন স্কুলে পড়তাম তখন আমরা আড্ডায় বসে কাপের পর কাপ চা শেষ করতাম।”

তাজ ভাইয়ের কথা উঠে আসায় আমি প্রশ্ন করলাম,“তাজ ভাইকে দেখছি না যে?”

বাবা বলল,“ও তো একটু বাইরে বেরোলো।”

আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম,“শ্রেয়ান ভাইয়াকে রেখেই বাইরে চলে গেল?”

শ্রেয়ান ভাইয়া হাসিমুখে বললেন,“আমি নিজেই যেতে চাইনি। আজ বাইরে বেরোতে ইচ্ছে করছে না। এমনিতেই এই দুদিনে অনেক ঘোরাঘুরি করেছি। বলতে গেলে পুরো গ্রামই চষে বেড়িয়েছি।”

বাবা চায়ের কাপটা রেখে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,“জরুরী একটা কল করতে হবে। ফোনটা রুমে রেখে এসেছি। তোমরা গল্প করো, আমি যাই।”

আমি বললাম,“আমি এনে দিচ্ছি। তুমি বসো।”

বাবা ততক্ষণে রুমের দিকে পা বাড়িয়ে বলল,“না আম্মা। আমিই যাচ্ছি।”

বাবা যাওয়ার পর আমিও উঠে দাঁড়ালাম। কিন্তু শ্রেয়ান ভাইয়া বাঁধা দিয়ে বললেন,“বসো, গল্প করি।”

অগত্যা আবার বসে পড়লাম। মিনিট খানেক চুপ থেকে শ্রেয়ান ভাইয়া বললেন,“ইলোমিলো, তুমি না রামিশার সম্পূর্ণ বিপরীত। কিন্তু মনের দিক দিয়ে কোথাও একটা মিল খুঁজে পাই আমি।”

আমি কিছুটা অবাক হয়ে শ্রেয়ান ভাইয়ার দিকে তাকালাম। তার মুখে মেকি হাসি। আমি একটু নড়েচড়ে বসে বললাম,“আপনি নিজেকে কীভাবে সামলান ভাইয়া?”

“অভ্যস্ত হয়ে গেছি। প্রথম প্রথম ব্যাপারটা অনেক কঠিন ছিল। তারপর আস্তে আস্তে নিজেকে শক্ত করেছি।”

“তবুও তো ভুলতে পারেননি।”

শ্রেয়ান ভাইয়া শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,“সবাইকে ভুলে যাওয়া সম্ভব হয় না ইলোমিলো। কাউকে মনপ্রাণ দিয়ে যেদিন ভালোবাসবে সেদিন তুমিও এটা বুঝতে পারবে।”

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে গেলাম। তারপর বললাম,“এভাবে কতদিন ভাইয়া? আপনার তো পরিবার আছে। তারা আপনাকে বিয়ের কথা বলে না?”

“বলে কিন্তু আমিই কানে নেই না।”

“বিয়ে করবেন না?”

শ্রেয়ান ভাইয়া ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,“প্রথমে ভেবেছিলাম করব না। তারপর সিদ্ধান্ত পাল্টেছি। ও যখন সুখে আছে তখন আমারও মুভ অন করা উচিত। কিন্তু তার জন্য এমন মেয়ে দরকার যে মেনে নিতে পারবে যে আমি রামিশাকে আজও ভালোবাসি। ধরে নাও তোমার মতো একটা মেয়ে পেলে বিয়ে করে নেব।”

আমি কিছুটা চমকালাম। পরক্ষণেই মুচকি হেসে মাথা দুলিয়ে বললাম,“কেউ একজন অবশ্যই পেয়ে যাবেন আশা করি।”

বাইরে থেকে গাড়ির হর্নের শব্দ কানে এল। বুঝলাম তাজ ভাই এসেছে। উনি এখন বাড়িতে ঢুকলেই ওনার সাথে দেখা হয়ে যাবে। হঠাৎ করেই আমার প্রচন্ড লজ্জা আর অস্বস্তি লাগল। আমি তড়িঘড়ি করে উঠে শ্রেয়ান ভাইয়াকে বললাম,“আমি একটু আসছি ভাইয়া।”

শ্রেয়ান ভাইয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমে চলে গেলাম। তারপর আর রুম থেকে বেরোনোর নামও নিলাম না। সন্ধ্যার খানিক পরে আফরা আপু আমার রুমে এল। আমি তার চুপসানো মুখ দেখে ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করলাম,“কী হয়েছে আপু?”

আপু দুঃখী দুঃখী গলায় বলল,“আমি তাজ ভাইয়াকে বলেছিলাম, ভাইয়া আমি একটা নোটস আনতে ফ্রেন্ডের বাসায় যাব। আমার সাথে একটু যাবেন প্লিজ। অথচ উনি উলটা শ্রেয়ান ভাইয়াকে বললেন আমার সাথে যেতে।”

“কেন?”

“ওনার না-কি মাথা ব্যথা করছে।”

আমি খুব ভালো করেই জানি তাজ ভাই মিথ্যা কথা বলেছেন। আসলে উনি আফরা আপুর ধারেকাছেও থাকতে চান না। আমি বললাম,“ওহ্! তো এখন কী করবে? যাবে?”

আফরা আপু গাল ফুলিয়ে বলল,“বলেছি যখন তখন তো যেতেই হবে। তারা তো আর জানে না আমি মিথ্যা কথা বলেছি। আমার ফ্রেন্ডকে কল করে বলে দিয়েছি আমি যাচ্ছি ওদের বাসায়।”

“কখন যাবে?”

“এখনই। ধুর! সব প্ল্যান ভেস্তে যাচ্ছে। ভাল্লাগে না।” কথাটা বলে আফরা আপু গটগট করে হেঁটে চলে গেল। ছোটো কাকি সন্ধ্যার নাস্তা করার জন্য ডাকল তবু রুম থেকে বের হলাম না। আফরা আপু শ্রেয়ান ভাইয়ার সাথে বেরিয়েছে কি না তাও জানি না। বিছানায় পা ভাঁজ করে বসে ফেসবুকিং করছিলাম। তখনই তাজ ভাইয়ের কন্ঠ কানে এল। সম্ভবত ফোনে কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছেন। আমি ফোনটা রেখে পাশ থেকে চাদর টেনে মুড়ি দিয়ে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম। চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে চুপচাপ বিছানায় পড়ে রইলাম। মিনিট দুয়েক পর রুমে কারো উপস্থিতি টের পেলাম। বুঝতে পারলাম তাজ ভাই রুমে এসেছেন। উনি এসে বিছানায় বসলেন তাও টের পেলাম। তারপর প্রায় দুই তিন মিনিট কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না। কী হলো বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ করেই আমার গায়ের ওপর থেকে চাদরটা সরে গেল। আমি প্রচন্ড চমকে লাফিয়ে উঠে বসে পড়লাম। সামনে দৃষ্টি পড়তেই দেখলাম তাজ ভাই ভ্রুকুটি করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। ওনাকে দেখেই আমার বিকেলের চিঠিটার কথা মনে পড়ে গেল।‌ সঙ্গে সঙ্গে আমি চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে এদিক-ওদিক দৃষ্টি বিচরণ করতে লাগলাম। তাজ ভাই বললেন,“কী সমস্যা?”

আমি কোনো উত্তর দিলাম না। উনি পরপর তিনবার একই প্রশ্ন করলেন। কিন্তু আমি একইভাবে বসে ছিলাম। উনি ধমকের সুরে বললেন,“মুখ কি কেউ সেলাই করে দিয়েছে? নতুন বউয়ের মতো লজ্জা পাচ্ছিস মনে হচ্ছে? না-কি আলুর নেহালের কথা মনে পড়েছে?”

এতক্ষণ লজ্জা পেলেও এবার আমি বিরক্ত হলাম। কথায় কথায় উনি এই নামটা কেন টেনে আনেন উনিই জানেন। আমি বিরক্ত মুখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,“সবসময় এক লাইন বেশি বোঝেন কেন আপনি?”

“বাহ্! নেহালের কথা বলা মাত্র মুখ ফুটে কথা বেরিয়ে এল, আর আমি বললেই দোষ!”

“আপনার না মাথা ব্যথা? তো এখানে কী করছেন? যান তো এখান থেকে।”

তাজ ভাই বললেন,“ও হ্যাঁ, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আমার মাথা ব্যথা। মনে করিয়ে দিয়ে ভালো করেছিস। এবার কাজে লেগে পড় তো।”

আমি প্রশ্ন করলাম,“কিসের কাজ?”

উনি হঠাৎ বিছানা থেকে নেমে মেঝেতে বসে পড়লেন। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ওনার কান্ড দেখতে লাগলাম। উনি ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,“এদিকে আয় তো। মাথা টিপে দে। একদম বেশি বকবক করবি না। তুই কিন্তু আমার এসিস্ট্যান্ট।”

আমি গাল ফুলিয়ে বললাম,“আপনি অযথা মাথা ব্যথার ভান ধরে আছেন তা আমি জানি না ভেবেছেন?”

“ওই পিক আর চিঠির কথা ভুলে গেছিস?”

ওনার কথায় আমার আবার ওনার দেয়া চিঠির কথা মনে পড়ল। আমি আবার অপ্রস্তুত হয়ে মাথা নিচু করলাম। উনি ওদিক ফিরে তাড়া দেখিয়ে বললেন,“শুরু কর তাড়াতাড়ি। আর যেন বলতে না হয়।”

আমি এবার ওনার দিকে এগিয়ে গেলাম। বিছানায় ওনার সোজাসুজি বসে আলতো করে ওনার কপালে হাত রাখলাম। তারপর আস্তে আস্তে কপাল টিপে দিতে লাগলাম। বেশ কয়েক মিনিট এভাবেই কাটল। দুজনেই নিশ্চুপ বসে আছি। হঠাৎ নীরবতা ভেঙে আমি সাহস জুগিয়ে চট করে বলে উঠলাম,“কিছু কথা ছিল।”

সঙ্গে সঙ্গে উনি আমার হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে বললেন,“আর টিপতে হবে না।”

উনি উঠে দাঁড়াতেই আমি বললাম,“আমি কিছু বলেছি।”

উনি আমার কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে দ্রুত পায়ে দরজার দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বললেন,“পিচ্চিদের সব বিষয়ে বেশি কৌতুহল রাখতে হয় না।”

আমি অবাক দৃষ্টিতে ওনার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি বেশ বুঝতে পেরেছেন আমি কী বলতে চাই। সেজন্যই আগেভাগে কেটে পড়েছেন। ওনার মনে যদি সত্যিই আমার জন্য কোনো অনুভূতি থেকে থাকে তাহলে এমন লুকোচুরির মানে কী?

চলবে…………………….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here