তবু সুর ফিরে আসে পর্ব-৭

0
1403

#তবু_সুর_ফিরে_আসে

৭ম পর্ব

ন‌ওশাদ ড্রয়িং রুম থেকে বের হয়ে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ালো। কেয়ারটেকার রিয়াজ আর শোয়েব অপেক্ষা করছে সেখানে।
ন‌ওশাদ এর পিছনে পিছনে হেরাও এসেছে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে সে ।
রিয়াজের সঙ্গে কথা বলছে ন‌ওশাদ। হেরার কেমন যেন অস্থির লাগছে। এই বাড়িতে ঐ মানুষটা ছাড়া কারো সঙ্গে কথা হয়নি তার ! মানুষ টা বিদেশ যাচ্ছে তার মন খারাপ লাগছে খুব । কেন এই মন খারাপ লাগা সে বুঝতে পারছে না ! এই শহরে এই মানুষটা ছাড়া আর কাউকে সে চিনে না ! অবশ্য ন‌ওশাদ মানুষ টা কেও সে চিনে নাই এখনও। তবে মানুষ টা খুব ভালো এটা সে বুঝে গেছে !
পিছন ফিরে আবার ন‌ওশাদ হেরার কাছে এসে দাঁড়ালো !
তো আসি হেরা , ভালো থেকো !
কবে আসবেন ?
পাঁচ দিন পর ! ভালো থেকো ! ন‌ওশাদ হাসি মুখে হেরার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে এসে উঠলো !
শোয়েব ওকে সিঅফ করতে যাচ্ছে সঙ্গে।
হেরা পোর্চের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে ! ড্রাইভার বাহার গাড়ি স্টার্ট দিতেই ন‌ওশাদ জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে হেরার চোখ ছলছল করছে !
হেরার চোখ কি ওর জন্য ভিজে উঠেছে ? ন‌ওশাদ এর বুকের মাঝেও কেমন যেন অস্বস্তি বোধ হচ্ছে ! জীবনে তো বহুবার দেশের বাহিরে গেছে ! গীতি যাওয়ার পর কখনো প্রতি মাসে কখনো এক দুই মাস পর পর ! আজ অনেক বছর পর এই যাওয়ার সময় কেউ একজন ওকে বিদায় দেয়ার জন্য পোর্চের নিচে দাঁড়িয়ে আছে !

গাড়িটা আস্তে আস্তে গেট পার হয়ে গেল ! হেরা দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ । ওর খুব মন‌ খারাপ লাগছে ! তিন দিন ধরে দেখলো, দুই দিন মাত্র মানুষ টা ওর সঙ্গে কথা বলেছে। এতেই এখন মনে হচ্ছে মানুষ টা যখন এখানে থাকবে না তার সব কিছু ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে তাকে কেউ বিপদে পড়লে রক্ষা করবে না !
জীবন তাকে কখনো ভালো কিছু দেয় নাই ! নিজের বাবা মা আবর্জনা র মত ছুড়ে ফেলে রেখে চলে গেছে। বাবা তো জীবনে কখনোই আর খোঁজ নেয় নাই ! মা হঠাৎ হঠাৎ অনেক বছর পর পর বাপের বাড়ি এসেছে সবার সঙ্গে ঝগড়া করেছে হেরার খোঁজ নিতে আসেনি কখনো।
আদর করে দুটো কথা বলেনি ! কিন্তু কি অদ্ভুত জানাশোনা নেই হঠাৎ তার চরম বিপদে একটা মানুষ কোথা থেকে উড়ে চলে এলো তারপর তাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করে এক রাজ প্রাসাদে নিয়ে এলো। রূপকথার গল্পে রাজার কুমার আসতো আর তার জীবনের গল্পে একজন রাজা চলে এসেছে !
জীবনের এই অংশটুকু কি রূপকথার মত হচ্ছে ! সে কোন স্বপ্ন দেখছে না তো ?
দুই দিন ধরে যে রুমটায় আছে সে তার নরম বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো হেরা ! এরকম সুন্দর ঘর, যত্ন করে সাজিয়ে রাখা প্রতিটি জিনিস সে কখনো দেখেনি আগে ! সারাজীবন অযত্নে অবহেলায় বড় হয়েছে সে ! আজ
তারজন্য যে সব কাপড় কিনে আনা হয়েছে তার একটির দাম দিয়ে সারা বছরের কাপড় হয়ে যেত তার !
এসব কিছুর কি সত্যি সে যোগ্য ! ন‌ওশাদ মানুষ টার যোগ্য সে কখনো হয়ে উঠতে পারবে না । হেরার খুব কান্না পাচ্ছে ! এখানে আসার পর এরকম বুকের ভেতরে চাপা কষ্ট অনুভব হয়নি তার কিন্তু এখন এত কষ্ট হচ্ছে কেন?
বেশ অনেক্ষণ শুয়ে শুয়ে কাদলো হেরা !

দুপুরের দিকে আনারের মা এসে ঢুকলো ঘরে !
আম্মা আপনি কি ঘুমে ?
হেরা তাকালো ! আচ্ছা আনারের মা তুমি আমাকে আম্মা ডাকো কেন ?
তাহলে কি ডাকমু ? আপনি হ‌ইলেন স্যারের ব‌উ আপনারে তো আম্মাই ডাকতে হ‌ইব আমার!
আগের জন রে শুধু আম্মা ডাকতাম আর আপনে হ‌ইলেন নতুন আম্মা !
তোমার আগের আম্মা কেমন ছিল গো ?
মানুষ ভালা ছিল সবাইরে আদর সোহাগ করতো আবার রাগ ও ছিল অনেক ! স্যার তো ভয় পাইতো আমরা সবাই ভয় পাইতাম ! হঠাৎ ক‌ইরা মরলো মানুষ টা । ভালো মানুষ সন্ধ্যা সময় শুধু আমারে ক‌ইলো শরীর ডা খারাপ লাগছে আনারের মা !
তারপর ডাক্তার স্যার আইলো তিনি জোড় ক‌ইরা হাসপাতালে নিয়া গেল তার কতক্ষণ পর খবর আসলো আম্মা নাই !
স্যার খুব কানছে, কোন পুরুষ মানুষ রে ব‌উ মরলে এত কানতে দেখি নাই এই জন্মে ! খুব বাসনা করতো আম্মা রে স্যার ! বিয়া করে নাই এত বছর , সবাই কত ক‌ইছে বিয়া করতে ! আসলে আপনে ছিলেন তো স্যারের ভাগ্যে তাই করে নাই !
তোমার স্যার খুব ভালো তাই না আনারের মা ?
হুম স্যার খুব ভালো মানুষ গো আম্মা কিন্তু খুব দুঃখি । নিশাল ভাইয়া রে কত ভালোবাসে কিন্তু ভাইয়া শুধু দূরে দূরে থাকে বাপের কাছে আসে না !
ভাইয়া আসলে স্যার কি যে করে ছেলেরে খুশি করতে ! কিন্তু ভাইয়া চুপচাপ থাকে । পড়াশোনা করে , বন্ধুর বাসায় যায়, খালার বাসায় যায় কিন্তু বাপের সাথে দুই মিনিট বসতে চায় না !
স্যার মন খারাপ করে ! এত বছর ধরে আছি তো সব বুঝি আম্মা ! নিশাল ভাইয়া তো চোখের সামনে হ‌ইছে , কোলে করে বড় করছি ! এতটুকু ছোট রাইখা মা মরলো তারপর থেইকা ভাইয়া চুপচাপ হয়ে গেছে ! আনারের মা চোখের পানি মুছশো শাড়ির আঁচল দিয়ে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে হেরার উদ্দেশ্যে বলল,
এখন উঠেন দুপুরের খাওয়া আনছি খান !
ইচ্ছা করছে না আনারের মা !
এ কেমন কথা উঠেন আম্মা ! আপনার তো গলাও ভাঙ্গছে!
ঠান্ডা লাগেছে ! ও কিছু না আমার একটু ঠান্ডা র ধাত ঠিক হয়ে যাবে !
ওষুধ লাগলে বলিয়েন আম্মা আনায় দিব ! স্যার বলছে আপনার যেন কোন অযত্ন না হয় !
তোমাকে বলে গেছে এই কথা ?
হুম , সবাই কে বলছে ! এখন উঠেন ভাত খান !
ওদের কথার মাঝখানে ই পারুল কডলেস ফোন নিয়ে এসে রুমে ঢুকলো !
আম্মা সুমনা ম্যাডাম ফোন দিসে আপনার সাথে কথা বলতে চায় !
হেরা হাত বাড়িয়ে কডলেস ফোন টা নিলো !
: হ্যালো
: কেমন আছো হেরা ?
: জ্বি ভালো !
: তোমার গলার এই অবস্থা কেন ন‌ওশাদ এর জন্য মন খারাপ ?
: লজ্জা পেয়ে গেল হেরা , আমার একটু ঠান্ডা লেগেছে !
: বেশি সমস্যা হচ্ছে , ডাক্তারের কাছে যাবে ?
: না না ঠিক আছি অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যায় একটু গরম কিছু খেলে ঠিক হয়ে যাবে !
: লাঞ্চ করেছো ?
: করব এখন!
: ঠিক আছে লান্চ করে রেডি হয়ে থাকো আমি আর তুমি বের হব !
: আমি ?
: কেন কোন সমস্যা ?
: না মানে কোথায় যাব ?
: তোমাকে নিয়ে টেইলার্সের কাছে যাব তারপর দেখি আর কোথায় কোথায় যাওয়া যায় ! আর ন‌ওশাদ এর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে তুমি নির্দ্বিধায় যেতে পারো আমার সঙ্গে !
: জ্বি আচ্ছা !
ফোন রেখে হেরা লান্চ করতে বসলো !

ন‌ওশাদ দের প্লেন যথাসময়ে টেক অফ করেছে ! এবং সত্যি সত্যি প্লেন টা যখন ঢাকার মাটি থেকে শূন্যে উঠে গেল সঙ্গে সঙ্গে গতকাল রাতের সুমনার কথা টা মনে পড়ে গেল ! তার মনে হচ্ছে আসলেই এবার কেমন যেন একটা পিছুটান ফীল করছে সে। বাসা থেকে বেরিয়ে আসার সময় হেরার ছলছল করা চোখ দুটো ওকে খুব অবাক করেছে !
হেরা কি ওর চলে আসার জন্য মন খারাপ করেছে ?
বাচ্চা বয়সী মেয়ে আবেগী হয়ে গেছে এটাই স্বাভাবিক !
ন‌ওশাদ তার মোবাইল টা বের করলো । গ্যালারি তে গিয়ে গতকাল সুমনা যে ছবি গুলো তুলেছিল সেগুলো বের করলো !
তার আর হেরার ছবি । লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে হেরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ওর পাশে! হেরার একটা সিঙ্গেল ছবিও আছে । অদ্ভুত সুন্দর একটা মুখ ! সবচেয়ে বেশি সুন্দর ওর চোখ ! এটাই খুব নাড়িয়ে দিচ্ছে ন‌ওশাদ কে !
এয়ার হোস্টেজ এসে কাছে দাঁড়ালো লাঞ্চ নিয়ে, ন‌ওশাদ মোবাইল টা ঢুকিয়ে রাখলো তার ব্যাগে।
আগামী কয়েকদিন ব্যস্তায় কাটবে তার !

সুমনা হেরাকে নিয়ে দর্জির কাছে নিয়ে সব আনস্টিচ ড্রেস আর ব্লাউজ বানাতে দিল ! তারপর দুজন মিলে হেরার জন্য স্যান্ডেল , ব্যাগ , কসমেটিকস কিনলো ! হেরার এত এত শপিং করতে খুব অস্বস্তি লাগছে কিন্তু সুমনা নাছোড়বান্দা ! সে কিনে দিবেই !
তারপর দুজনে কফি খেতে ঢুকলো !
হেরা তুমি এত লজ্জা পাচ্ছো কেন ? আমি তোমার বড় বোনের মত ! তুমি জানো না ন‌ওশাদ ,আমার আর রেজোয়ানের জন্য কি ! আমরা এত ভালো বন্ধু কখনো কখনো আত্মীয়ের চেয়েও বেশি ! আজ প্রায় পঁচিশ বছর আমরা একেঅপরের সুখে দুঃখে পাশে আছি !
হেরা সুমনার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো শুনছে !
সুমনা বলল,আমরা চার ভাই এক বোন । আমি আর আমার বড় ভাই দেশে থাকি আর সব ভাই রা ইউএসএ তে থাকে । বড় ভাইয়ের দুই ছেলে আমার দুই ছেলে কোন মেয়ে নেই দুই ফ্যামিলিতে। রেজোয়ান রা দুই ভাই বোন নেই ছোট ভাইয়ের একটা ছেলে ওখানেও মেয়ে নেই ! কাউকে যে এসব শপিং করে দিব কাকে দিব বলো ? দেশের বাহিরে ভাইদের মেয়ে আছে ওরা সব ছোট ছোট। ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়তেই পছন্দ করে তাই একটু আনন্দ নিয়ে শপিং করা হয় না ! নিজের বয়স হয়েগেছে নিজের জন্য আর কত শপিং করব একটা মেয়ে থাকলে কি কিনতাম , কিভাবে সাজাতাম প্রায় সময়ই চিন্তা করি । তোমার জন্য শপিং করে অনেক বছর পর মজা পেয়েছি তাই তুমি কিছু মনে করলেও করার কিছু নেই ! হাসছে সুমনা।
হেরা সারাজীবন একটা বোন এর জন্য হাপিত্যেশ করেছি ইস যদি একটা বোন থাকতো ! তারপর মেয়ের জন্য !কত শখ ছিল একটা মেয়ে বাচ্চা র কিন্তু হলো দুই ছেলে এখন এদের ব‌উ আসলে পরে বাসায় মেয়ে আসবে আর তো কোন উপায় নেই । ঐ জীনস পেন্ট আর গেঞ্জি, শার্ট দেখতে দেখতে চোখ পচে গেল আমার !
হেরা মাথা নিচু করে বলল,এত এত টাকা খরচ করছেন আপনারা আমার খুব খারাপ লাগছে !
এখানে খারাপ লাগার কিছু নেই হেরা । পছন্দের মানুষের জন্য টাকা খরচ করার মাঝে আনন্দ আছে বুঝলে !
তোমার তো বয়স এখন শপিং করবে , ঘুরবে আনন্দ করবে ! শোনো হেরা তোমার বর কিন্তু খুব পশ তার সব কিছু হতে হবে বেস্ট ! দেখবে ও যা পড়বে যা খাবে সব ভালো হতে হবে ! তা না হলে ছুঁয়েও দেখবে না ! গীতি যখন ছিল এত এত কাজের লোক থাকলে কি হবে ন‌ওশাদ গীতির হাতের রান্না ছাড়া খেতো না ! গীতি মারা যাওয়ার পর ছয় সাত মাসে ন‌ওশাদ শুকিয়ে কাঠি হয়ে গিয়েছিল। খেতে পারতো না !
খাবে কম কিন্তু যা খাবে রান্না ভালো হ‌ওয়া চাই!
তুমি রান্না জানো হেরা ?
মামি দের সংসারে ছিলাম সেই ছোট থেকেই মাছ কাটা থেকে রান্না করা, ঘর মোছা থেকে হাঁড়ি পাতিল ধোয়া সব করতে হয়েছে আমাকে !
তাহলে তো ভালো ই হলো ন‌ওশাদ এর জন্য রান্না করতে পারবে তুমি । শোন রান্না কি জানো, ভালোবাসা নিয়ে কারো জন্য কিছু করছো সেটা অসাধারণ হবেই । সেই ভালোবাসা কি রান্নার ভেতর কোন কাজের মানুষ দিতে পারবে বলো যেটা স্ত্রী তার স্বামী র জন্য দিবে ?
আমি তো এত ভালো রান্না পারি না ! উনি কি পছন্দ করে সেটাও জানি না ?
পারবে দেখো ! ন‌ওশাদ খুব সিম্পল খাবার খেতে পছন্দ করে বাঙালি খাবার ! তুমি ওর জন্য তাই করতে পারো ! আর টাকা খরচ করা নিয়েও চিন্তা করতে হবে না তোমার, তোমার বরের এত টাকা আছে এত টাকা আছে তুমি প্রতিদিন খরচ করেও কিছু করতে পারবে না বুঝলে ! সুমনা হাসছে!

হেরা কে সুমনা সন্ধ্যার পর বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেল। রিয়াজ দৌড়ে এসে শপিং ব্যাগ গুলো ধরলো !
উপরে দিয়ে আসব আম্মা এগুলো?
না থাক আমি নিয়ে যাচ্ছি !
আমি নিচ্ছি বলে রিয়াজ ব্যাগ গুলো নিয়ে চলে গেল !
নিচে লিভিং রুমের পাশে দশ ফুট লম্বা একটা ন্যাচারাল একুরিয়াম আছে অনেক টা লেকের মত করা সেখানে অনেক গোল্ড ফিশ , ওয়াকিন গোল্ড ফিশ, এনজি ফিস বিশাল সাইজ এক একটার । এই জায়গাটা হেরা দেখেনি ! মাছ গুলো দেখে ওর মন ভালো হয়ে গেল ! এত সুন্দর মাছ ও জীবনে দেখেনি!
একবার তাদের ভার্সিটির এক স্যারের বাসার ড্রয়িং রুমে গ্লাসের একুরিয়াম দেখেছে সে কিন্তু সেখানে মাছ গুলো ছিল ছোট ছোট পাঁচ ছয়টা মাছ হবে। কিন্তু এখানে কত কত মাছ আর সাইজ ও বিশাল ! মাছ গুলোর ছুটে বেড়ানো দেখে ওর খুব আনন্দ হচ্ছে!
ও পাশে বসে নিচু হয়ে পানিতে হাত দিতেই ওর হাত ধরতে ছুটে এলো মাছ গুলো !
হেরা মুগ্ধ হয়ে গেল !
খুব সুন্দর তাই না ?
চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখে শোয়েব দাঁড়িয়ে আছে !
হেরা তাড়াতাড়ি মাথার ওড়না ঠিক করলো !
কেমন আছেন ? কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো আপনার , মামা বলে গেছেন আপনার খোঁজ রাখতে !
হেরা মাথা নিচু করে বলল,জ্বি আমি ঠিক আছি !
অফিস থেকে এসে শুনলাম আপনি সুমনা ম্যাম এর সঙ্গে বাহিরে গেছেন !
উনি এসে নিয়ে গেলেন !
জ্বি শুনেছি ! একটা প্রশ্ন করব আপনাদের বাড়ি কোথায় ?
জ্বি কুষ্টিয়া !
ও আচ্ছা !
উনি কি বুলগেরিয়া পৌঁছে গেছেন ?
মামা ,দোহা পৌঁছেছেন অলরেডি বুলগেরিয়ার জন্য ফ্লাই করেছে হয়তো ! আমাকে ফোন দিলে আপনাকে জানাব !
জ্বি আচ্ছা ! আমি যাই উপরে ?
ও শিওর ! কিছু লাগলে আমাকে জানাবেন !
হেরা সিঁড়ির দিকে চলে গেল !
শোয়েব মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ! তার কাছে মনে হচ্ছে এতক্ষণ কোন পরীই তার সামনে ছিল ! মামা কোথা থেকে এরকম একটা পরী পেয়ে গেল কিছুই সে বুঝতে পারছে না !

হেরা উপরে আসতেই তার শ্বশুরের সামনে পড়লো !
এই যে বড় ব‌উমা তোমাকে খুঁজছিলাম ! তোমার শ্বাশুড়ি কোথায় , তার তো দেখাই পাওয়া যায় না ?
হেরা কি বলবে বুঝতে পারছে না !
তুমি আমার সঙ্গে আসো তো ! ন‌ওশাদ কোথায় ?
উনি তো দেশের বাহিরে গেছেন !
এই বাসায় কারো মন টিকে না বুঝলে , তোমার শ্বাশুড়ি তার মেয়ের বাসায় গিয়ে বসে আছে আমাকে বলে যাওয়ার প্রয়োজন‌ও বোধ করে না আজকাল !
হেরা শ্বশুরের সঙ্গে সঙ্গে তার রুমে ঢুকলো !
বসো ব‌উমা ! তুমি এত শুকিয়ে গেলে কেন অসুস্থ ছিলে? কিন্তু অনেক ফর্সা হয়েছো ! ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করবে ! অবশ্য কি খাবে, এরা যা রান্না করে খেতে ইচ্ছে করে না ! কতদিন ভালো কিছু খাই না ! আর তোমার শ্বাশুড়ি তিনি তো রান্না ঘরে ঢুকেই না !
কি খাবেন আপনি বলেন আব্বা আমাকে ?
তুমি রান্না করবে ? তাহলে গরুর গোশত রান্না করো এরা শুধু মুরগি রান্না করে আমার অসহ্য লাগে !
হেরা হেসে দিল ঠিক আছে আব্বা আমি আপনার জন্য কালকে গরুর গোশত রান্না করব আজ তো অনেক রাত হয়ে গেছে আপনার খাওয়ার সময় হয়ে গেছে !
ঠিক আছে তুমি রান্না করলে খাব মজা করে!
যাই এখন আব্বা ?
যাও নিশাল দাদু ভাই তোমার জন্য কাঁদবে , যাও !
হেরা শ্বশুরের রুম থেকে বের হয়ে এলো ! ওর খুব নানার কথা মনে পড়ে গেল ! নানা খেতে খুব পছন্দ করতো কিন্তু ছেলেদের কখনো বলতো না ! হেরা কে বলতো ! হেরার হাতের রান্না খুব আরাম করে খেতো ! হেরার চোখ ভিজে গেল নানার কথা মনে হতেই !
রুমে ঢুকে খুব মন খারাপ করে শুয়ে রইলো !
পারুল এসে ঢুকলো রুমে !
আম্মার কি শরীর খারাপ ?
না কেন ?
এখন শুয়ে আছেন এসি দিয়ে দেই ?
না থাক লাগবে না !
এত গরমে থাকবেন কেমনে? দেই আরাম করে বসেন !
আমার অভ্যাস আছে বরং এসিতে থেকেই ঠান্ডা লেগে গেছে ! আমার একটু ঠান্ডার ধাত তো অল্পতেই বুকে কফ জমে যায় খুব হাঁচি কাশি হয় ! শ্বাসকষ্ট হয়।
সবাই বলে গরম থেইকা আরো বেশি হয় দেই এসি আরাম করেন আম্মা !
পারুল এসি অন করে দিল !
রাতে হেরা যখন ঘুমাতে গেল এসির রিমোট টা খুঁজে পেল না কোথাও ! কাজ টা পারুল ইচ্ছে করে করেছে সে বুঝতেই পারেনি। কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে থেকেও হেরার প্রচন্ড ঠান্ডা লেগে গেল। এমনি তেই তার এজমার সমস্যা আছে । সারারাত এসির ঠান্ডায় ওর বুকে কফ জমে গেছে। হাঁচি শুরু হয়ে গেল প্রচন্ড।
এই কাজ টা পারুলকে দিয়ে যে করিয়েছে সে যা চেয়েছে তাই হয়েছে হেরা ঠান্ডায় একেবারে কাবু হয়ে গেল!

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here