তবু সুর ফিরে আসে পর্ব-৪৩

0
1522

#তবু_সুর_ফিরে_আসে

৪৩ পর্ব

সেদিনের পর থেকে পারুল হেরাকে যথেষ্ট ভয় পায়। এমনকি ন‌ওশাদের সামনে আসলে তার হাত পা কাঁপে। আগে যেরকম দাপট দেখাতো অন্য কাজের মানুষদের উপর সেটা আর দেখায় না। বিষয়টা আনারের মা পর্যন্ত খেয়াল করলো! একদিন পারুলকে বলেও ফেলল আনারের মা ,
কি রে পারুল তোর কি হ‌ইছে রে ?
ক‌ই কি হ‌ইছে খালা ?
হেইডা তো তুই ক‌ইবি ?
কিছু হয় নাই ।
এবার বাড়িত থে আইলি তারপর থে দেহি তুই চুপচাপ থাকস আগে তো সারাক্ষণ ঠাসঠাস ক‌ইরা কথা ক‌ইতি ।
কিছু না খালা এমনি, কিছু না।
জরিনা বুয়া বলল, খালা পারুলের মোবাইল হাত থে প‌ইড়া ভাঙছে এর জন্য মন ডা খারাপ ।
কবে ভাঙছে রে পারুল ?
পনের ষোল দিন আগে খালা , জরিনা বলল।
পারুল দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।
মন খারাপ করিস না বেতনের টাকা দিয়া নতুন মোবাইল কিনিস বুঝলি পারুল , আনারের মা পারুলকে স্বান্তনা দিলো।
পারুল তার মোবাইলে দুঃখে না সে হেরার ভয়ে দিন কাটাচ্ছে। না জানি হেরা কিভাবে ওকে শাস্তি দেয়! সে কোন ভাবেই বীথিকে কিছু বলতে পারছে না।
হেরাও নিজেকে অনেক সামলে নিয়েছে। সে আর আগের মতো সবকিছু নিয়ে গুটিয়ে থাকে না। সংসারের তার দ্বায়িত্ব গুলো সে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। গত দেড় বছরে সে বুঝে গেছে নিজের রাজত্বে নিজের নিয়ন্ত্রন টা ধরে রাখতে হয়।
নিশাল কলেজ থেকে ছুটিতে এসেছে । হেরার সামনে সে বাচ্চা বিষয়ে কোন কথা তুলে নাই। হেরার কঠিন নির্দেশে ন‌ওশাদ , এলিন, নাহিন কেউ নিশালকে বলেনি কি হয়েছিল হেরার সঙ্গে।
নিশাল খুব নরমাল ভাবেই ছুটিটা কাটাচ্ছে। এর মধ্যে একদিন বীথি আর যুথীর বাসায় গিয়ে ঘুরে এসেছে। নিশাল হেরাকে কিছু বলেনি কিন্তু হেরা ন‌ওশাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছে তার নানু আর মামা মামী আসছে অস্ট্রেলিয়া থেকে।
ন‌ওশাদ‌ একদিন রাতে বলল,
আগামীকাল নিশালের নানু আর মামা আসবে দেশে ।
জানো হেরা একটা সময় আমার শ্বাশুড়ি কোন এক অজানা কারণে আমাকে দেখতে পারতো না ।
হেরা অবাক হয়ে বলল, কেন ?
জানি না ।
না মানে আপনি পাত্র হিসেবে কোন দিক দিয়ে কম ছিলেন? ইন্জিনিয়ার, দেখতে মাসাআল্লাহ এত ভালো তারপরেও!
আমার গ্রীন কার্ড ছিল না হয়তো তাই । উনারা গীতির জন্য যাকে পছন্দ করেছিলেন তিনি উন্নত দেশের গ্রীন কার্ড ধারী ছিলেন।
বিয়ের অনেক বছর পর উনি আমাকে মেনে নেন। তাও গীতির সঙ্গে যেতাম ওদের বাসায় কিন্তু আমাকে আসার জন্য কেউ খুব একটা বলতো না । গীতির মন রক্ষায় যেতাম। তারপর একটা ঘটনা ঘটলো হয়তো সে জন্যেই উনি আমার প্রতি হঠাৎ অনেক বেশি নরম হয়ে গেলেন ।
কি ঘটনা ?
যার সঙ্গে গীতির বিয়ে ঠিক হয়েছিল সেই খালাতো ভাই বিয়ে করেছিল ঢাকার স্বনামধন্য এক ব্যবসায়ী ফ্যামিলিতে । বিয়ের বছর খানেক পর উনার ডিভোর্স হয়ে যায়। আত্মীয়-স্বজন যারা দেশে থাকতো সবাই জানতো না কি কারণে বিয়েটা ভাঙ্গে। কিন্তু গীতির মা প্রিয় ভাগ্নের জন্য আফসোস করে নিজের মেয়ের সঙ্গে বিয়েটা হলে ভাগ্নেও সুখী হতো মেয়েও আমেরিকার নাগরিক হতো। কোথাও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন এই ভেবে।
তারপর কয়েক বছর পর আমিও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছি যখন হঠাৎ উনার আমার প্রতি আচরণ পরিবর্তন হতে থাকলো। আমি ভাবলাম যাক এত বছর পর মেয়ের জামাইয়ের মর্যাদা পাচ্ছি তখন একদিন গীতির কাছ থেকে শুনলাম ঐ খালাতো ভাইয়ের বিয়ে টা ভেঙে যায় কেন । কারণ উনার ফিজিক্যাল সমস্যা ছিল যার জন্য উনার স্ত্রী ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে। তখন আমি হাসতে হাসতে বললাম গীতিকে , আজ বুঝলাম হঠাৎ শ্বাশুড়ি মা কেন আমার প্রতি আদর প্রদর্শন করছেন ।
গীতি বলল , যাহ্ তা হবে কেন আম্মা কাউকে আপন করতে একটু সময় নেয় । তোমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে ।
আমি বললাম, না গীতি আসল ঘটনা তাহলে এই । তারপর থেকে আমি গীতিকে ক্ষ্যাপাতাম বিয়েটা যদি গ্রীনকার্ডের সঙ্গে হতো কি অবস্থা হতো তোমার । তোমার রাত তো সব দীর্ঘ শ্বাস ফেলেই কেটে যেতো । কথাটা বলছে আর আজো ন‌ওশাদ হাসছে।
ধীরে ধীরে আমি গীতির মায়ের কাছে প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেছি। গীতি চলে যাওয়ার পরেও তিনি আমাকে ছেলের মতো আদর স্নেহ করেছেন। এক সময় বললেন বিয়ে করো ন‌ওশাদ কতদিন আর একা থাকবে ? তোমার বাসাটা কন্ট্রোল করার জন্যেও একজন মানুষ দরকার।
হেরা ন‌ওশাদের হাত ধরলো ।
বিয়ে করেছি শুনে ফোন দিয়েছিলেন খুশি হয়েছে কিনা বোঝা যায় নাই মুখে বলেছেন, ভালো করেছো ন‌ওশাদ। নিশালের খেয়াল রেখো তোমরা।
নিশালকে খুব ভালোবাসেন তাই না , হেরা বলল?
হ্যাঁ। আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে এলে এই বাসায় থাকতো কয়েক দিন। এখন হয়তো থাকতে চাইবে না ‌। হেরা আমি উনাকে বাসায় আসার জন্য বলতে চাই ?
ছিঃ আপনি আমার কাছে অনুমতি চেয়ে আমাকে লজ্জায় ফেলছেন নিশালের পাপা !
এটা এখন তোমার সংসার হেরা তোমার কাছ থেকে অনুমতি নেয়াটা আমার কর্তব্য।
হেরা ন‌ওশাদের হাত ছুঁয়ে বলল,আমার আগে এই সংসার যার ছিল, যে এই সংসার টা তিল তিল করে গড়েছিল তার মা কে এখানে আসার জন্য বলতে আমার অনুমতি নেয়ার দরকার নেই প্লিজ।
ঠিক আছে উনারা আসলে এখানে আসতে বলব । অবশ্য তিনি আগেই বলেছেন তোমাকে দেখতে আসবেন একদিন।
এক কাজ করুন উনি যেদিন আসবেন সেদিন সবাইকে দাওয়াত দিন আপনি ।
সবাই মানে ?
বীথি আপু , যুথী আপু সবাই । নিশালের ভালো লাগবে সবার সঙ্গে সময় কাটালে ।
ঠিক আছে। থ্যাংকস হেরা ।
এই দেখো আবার আমাকে থ্যাঙ্কস দিচ্ছেন !
ন‌ওশাদ হেরার দিকে তাকিয়ে হাসলো ।

তিনদিন পর ন‌ওশাদ গীতির পুরো ফ্যামিলিকে ডিনারে দাওয়াত দিলো। হেরা শখ করে রান্না করলো নিজের হাতে।
নিশাল এসে একবার জিজ্ঞেস করলো , মামনি হঠাৎ দাওয়াত কেন ?
বারে তোমার নানু, মামা মামী এসেছেন এত বছর পর দাওয়াত দেয়াটা আমাদের দ্বায়িত্ব বাবা ।
তাই বলে তোমার এই গরমে রান্না করার দরকার ছিল না মামনি লোকজন তো ছিলই!
আমার কোন সমস্যা হয়নি শখ করে করলাম ।
সন্ধ্যায় তিনটে গাড়ি দিয়ে সবাই এক সঙ্গে এসে বাসায় ঢুকলো । ন‌ওশাদ এগিয়ে গিয়ে শ্বাশুড়ি কে সালাম দিয়ে গাড়ি থেকে ধরে নামালো।
কেমন আছেন মা ?
ভালো আছি বাবা , শ্বাশুড়ি ন‌ওশাদের মাথায় হাত রাখলো।
গীতির বড় ভাই ফাহমিদের সঙ্গে আগে থেকেই ভালো সম্পর্ক ন‌ওশাদের। তিনি অস্ট্রেলিয়া তে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ভাবি ডাক্তার ।
ফাহমিদ ন‌ওশাদকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি তো দেখি আগের থেকে আরো ইয়ং হয়ে গেছো ন‌ওশাদ ।
ভাইয়া কি যে বলেন , ন‌ওশাদ হাসতে হাসতে বলল।
পাশে থেকে স্বভাব সুলভ বীথি বলে উঠলো, দুলাভাই কেন ইয়ং হয়ে গেছে একটু পরেই দেখবে ভাইয়া ।
ন‌ওশাদ বীথির খোঁচা টা গায়ে মাখলো না ।
সবাই মিলে ড্র‌য়িং রুমে বসতেই হেরা দোতলা থেকে ছুটে এলো।
হালকা কমলা রঙের ভেতর বেগুনী সুতার কারুকাজ করা একটা সফট সীল্ক শাড়িতে তাকে অপূর্ব লাগছে। অনেক দিন পর শাড়ি পড়েছে ন‌ওশাদ‌ও তাকিয়ে দেখছে মুগ্ধ হয়ে।
গীতির মায়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো হেরা। কেমন আছেন মা ?
গীতির মা ও মুগ্ধ হয়ে হেরাকে দেখছে । হেরাকে তিনি বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন , তোমাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তুমি মা ডেকেছো শুনে খুশি হলাম ।
আপনি নিশালের পাপার মা মানে তো আমার‌ও মা হলেন তাই না ।
হেরার গালে হাত ছুঁয়ে তিনি বললেন তুমি অনেক সুন্দর দেখতে মাসাআল্লাহ!
তারপর ন‌ওশাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ন‌ওশাদ ওর বয়স কম হলে কি হবে ওর চেহারা দেখে বুঝতে পারছি ও ওর সংসারের দ্বায়িত্ব শক্ত হাতে বুঝে নিয়েছে।
হেরা গীতির মায়ের হাত ধরে বলল, আপনি আমার জন্য দোয়া করবেন মা।
বীথি আর যুথী অবাক হয়ে দেখছে হেরাকে । কতটা আত্মবিশ্বাসী কতটা দৃরতা হেরার মধ্যে।
অবশ্যই দোয়া করি তোমাকে হেরা, তুমি আমার মা হারা নাতিকে মায়ের আদর দিচ্ছ তোমার জন্য সব সময় আমার দোয়া রইলো। আমাকে ফোন দিয়ে নিশাল তোমার গল্প করবে তার মা মনি কি কি করে সব বলে। আচ্ছা আমার নিশাল কোথায় ?
হেরা বলে উঠলো, মা নিশালের টিচার এসেছে আধা ঘন্টা পরে আসছে।
আনারের মা সবার জন্য জুস নিয়ে আসতেই হেরা নিজের হাতে তুলে দিলো সবাইকে। বীথির দিকে তাকালে ওর ঘৃণা হচ্ছে যদিও তবুও সে হাসিমুখে গ্লাস তুলে দিয়ে বলল, হাসিব ভাই আসলেন না যে আপু ?
ওর এক প্রফেসরের মেয়ের বিয়ে আছে সেখানে গিয়েছে ।
হেরা হাসলো ও ।
একটুপর নিশালের টিচার চলে যাওয়ার পর নিশাল এসে তার নানুর পাশে বসলো। নিশালকে জড়িয়ে ধরে চোখ ভিজে উঠলো ওর নানুর।
নানু সবসময় আমাকে দেখলেই কাঁদতে হবে , নিশাল নানুকে জড়িয়ে ধরে বলল?
কারণ তোমার চেহারাটা তো তোমার মাম্মার মতো ভাইয়া ওকে তো দেখতে পাচ্ছি না কোথাও ।
নিশাল হাত ধরে বসে গল্প করছে ওর নানুর সঙ্গে।
ন‌ওশাদের দিকে তাকিয়ে নিশালের নানু বলল, ন‌ওশাদ ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হলে নিশালকে আমার কাছে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাই ওখানে পড়াশোনা করবে ও কি বলো ?
ন‌ওশাদ বলল, মা তাহলে আমি কিভাবে থাকব বলেন আমি তো অপেক্ষা করছি ও আসলে ওর বাকি পড়াশোনা আমার চোখের সামনে থেকে করবে ।
নিশালের মামা জিজ্ঞেস করলো , নিশাল কি নিয়ে পড়তে চাও ?
মামা আমি তো আর্মিতে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু পাপা না করলো । এখন দেখি আগে পরীক্ষা দেই রেজাল্ট হোক ।
ন‌ওশাদ বলল, আর্মিতে গেলে ভবিষ্যতে আমার বিজনেস কে দেখবে ?
নিশালের মামির সঙ্গে গল্প করছে হেরা আর
বীথির দিকে পুরো মনোযোগ দিয়ে আছে । ওর মন বলছে বীথি পারুলের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ খুঁজবে। কিন্তু হেরা তা চাইছে না। এলিন, নাহিন উপরে পারুলকে আলমারি গোছানোর নাম করে বিভিন্ন কাজ দিয়ে ব্যস্ত করে রেখেছে।
হেরার ইচ্ছে করছে না এত সুন্দর পরিবেশ টা নষ্ট করতে। নিশালের নানু যতদিন আছে ততদিন এসব কিছু সামনে আনতে চাইছে না হেরা।
কিন্তু ঐ যে বলে না মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক।
ডিনার পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু ডিনারের পর ঘটলো অন্য ঘটনা।
খাওয়ার সময় সবাইকে নিজের হাতে খাওয়া পরিবেশন করতে ব্যস্ত থাকায় হেরা খেয়াল করেনি বীথি কি করছে।
নিশাল এলিন, নাহিনকে ডেকে এনেছে ডিনারের জন্য। সেই ফাঁকে পারুল তিন তলা থেকে নিচে নেমে এসেছে।
হেরা খেয়াল করেছে পারুল কে রান্নাঘরের আশেপাশে কিন্তু তখন সবার সামনে পারুলকে কিছু বলতে পারেনি সে।
সে মনে মনে চাইছিল বীথি যেন পারুলের সঙ্গে কোনো কথা না বলে। এক বীথির জন্য এত গুলো মানুষকে সে লজ্জায় ফেলতে চায় না। বিশেষ করে নিশালের নানুকে যাকে সে শ্রদ্ধা ভরে মা বলে ডেকেছে। অনেক বছর কাউকে তো মা ডাকা হয় নাই অন্তত সেই ডাকটার সন্মানে সে চায় না কোন ঝামেলা আজ।
নিশাল বীথির দুই মেয়ে সঙ্গে দুষ্টুমি করছে, খেলছে তাই দেখে হেরা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। ছেলেটা বাচ্চাদের কত পছন্দ করে।
খাওয়ার সময় কোন ফাঁকে বীথি পারুলকে ইশারায় পাশের গেস্ট রুমে নিয়ে গেল হেরা খেয়ালই করিনি।
কি রে পারুল তোর কোন খবর নাই কেন ?
পারুল চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
তুই যে সেই বাড়ি থেকে এসে ফোন দিলি তারপর একদম ডুব দিয়ে দিলি। মোবাইল কোথায় তোর ফোন দিলেই দেখি বন্ধ !
পারুল কি বলবে বুঝতে পারছে না । সে বীথির দিকে তাকিয়ে আছে ।
কথা বলছিস না কেন ? হা করে তাকিয়ে আছিস কেন ?
পারুল ছুটে এসে বীথির পায়ে ধরে ফেলল, খালাম্মা আপনি এত দিন যা যা করতে বলছেন সব করছি কোন ভালা মন্দ চিন্তা করি নাই এখন আমারে মাফ করেন। আমারে বাড়ি যাইতে দেন।
বীথি অবাক হয়ে গেল পারুলের কথা শুনে ! তারচেয়েও অবাক করা‌ কান্ড বীথি আর পারুলের পিছনে নিশাল দাঁড়িয়ে আছে ওরা খেয়ালই করিনি।
এটাকেই কি বলে কাকতালীয় ব্যাপার তা না হলে হঠাৎ কেন নিশাল গেস্ট রুমে আসবে।
পারুল বীথির পা ধরে আহাজারি করছে, আমি এখানে থাকতে চাইনা খালাম্মা। আম্মা সব জাইনা গেছে আপনার কথায় আমি উনারে স্টোর রুমে আটকায় রাখছিলাম। বাচ্চা ডা নষ্ট হ‌ইছে এর জন্য , এখন আম্মা আমার সঙ্গে কখন কি করে সেই ডরে আমি আর থাকতে পারতাছি না।
চুপকর কান্না বন্ধ করে আগে বল এসব হেরা জানলো কিভাবে ? ওর তো জানার কথা না!
আমি জানি না খালাম্মা আম্মা সব জানে । আম্মা যে কি ক্ষ্যাপছে আমি দেখছি হের রাগ ! আমার আর আপনের জন্য নিজের বাচ্চা ডা নষ্ট হ‌ইলো রাগ তো হ‌ইব‌ই।
চুপ কর পারুল , বীথি পারুলকে ধমক দিলো।
না খালাম্মা আপনে ক‌ইছলেন বড় কোন ক্ষতি হ‌ইতো না কিন্তু আম্মার সব শেষ হ‌ইছে। স্যার জানলে আমারে গুলি ক‌ইরা মারব খালাম্মা। পারুল কাঁপছে ভয়ে।
আমারে বিদায় ক‌ইরা নিয়া যান এই বাসা থেইকা। আমি গরীব মানুষ আপনার কথায় একটা কাজ করছি বুঝতাম পারছি না কি হ‌ইতে পারে। আমার লাইগা কত বড় সর্বনাশ হ‌ইলো আম্মা আর স্যারের এহন বুঝতাছি।
এত বোঝাবুঝির দরকার নেই এখন চুপ কর আমার পা ছাড় পারুল। আচ্ছা ঠিক আছে দেখি আমি কি করা যায় তোর জন্য। হেরা সব জেনে গেছে এই কথা তোকে কে বলছে ?
খালাম্মা আম্মা আমারে ধমকি দিসে ?
তুই আমার কথা বলিস নাই তো !
পারুল চুপ করে গেল ।
এই কথা বলছিস না কেন পারুল ?
আম্মা সব জানে খালাম্মা।
বীথি মাথায় হাত দিলো । এত বড় ঘটনা ঘটে গেল তুই আমাকে আগে ফোন দিবি না ?
আমার মোবাইল আম্মা আছাড় দিয়া ভাইঙ্গা ফেলছে খালাম্মা । পারুল চোখ মুছতে মুছতে বলল।
তোর ফোন নাই কিন্তু বাসার কারো ফোন থেকে ফোন দিবি না গাধা। দুলাভাই জানে ?
জানি না, মনে হয় না । স্যার জানলে তো আমারে খালাম্মা মাইরা ফেলব । আফনে কিছু করেন।
বীথি টেনশনে পড়ে গেল।
নিশাল ওদের কথা শুনে মোটামুটি সব বুঝে গেল। সে বীথিকে যত দেখছে তাজ্জব হয়ে যাচ্ছে।! তার খালামনি একবার মামনিকে শপিং মলে ফেলে রেখে চলে আসে। আর এবার তো সবচেয়ে জঘন্য একটা খারাপ কাজ করেছে মামনিকে স্টোর রুমে আটকে রেখেছে যার জন্য বেবিটা নষ্ট হয়ে গেল মামনির পেটেই!
এত বড় কাজটা জেনে বুঝে করেছে খালামনি। পারুলকে দিয়ে কাজটা করাতে পারলো খালামনি !
নিশাল চিৎকার দিয়ে উঠলো , ছিঃ খালামনি ছিঃ ।
বীথি পিছনে তাকিয়ে নিশালকে দেখে আঁতকে উঠলো !
তুমি এত বড় একটা খারাপ কাজ আমার সঙ্গে করতে পারলে তুমি জানো না আমি কতটা এক্সাইটেড ছিলাম বেবিটার জন্য ! তুমি একটা খুনী খালামনি তুমি একটা খুনী ।
তুমি আমার ভাইবোন কে মেরে ফেলেছো।
নিশাল পিছন ফিরতেই বীথি ডেকে উঠলো, নিশাল বাবা আমার কথাটা শুনো । প্লিজ আমার কথাটা শোনো।
নিশাল ছুটে গেস্ট রুম থেকে বের হয়ে এলো ওর পিছনে পিছনে দৌড়ে এলো বীথি।
ডিনার শেষ করে তখন সবাই আবার গল্পে ব্যস্ত।
নিশালের খুব কান্না পাচ্ছে । সে তার খালামনির কাছ থেকে এরকম কিছু কল্পনাই করতে পারেনি !
হঠাৎ ন‌ওশাদ নিশালের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, নিশাল বাবা কি হয়েছে তোমার ? চেহারা এমন লাগছে কেন ?
ন‌ওশাদ উঠে এসে নিশালের সামনে দাঁড়ালো, ঘর ভর্তি লোকজন সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিশালের দিকে !
হেরা খাওয়ার টেবিলের কাছে ছিল সেও এগিয়ে এলো। কি হয়েছে নিশাল ?
নিশাল হেরার দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেললো । বীথি ছুটে এসে হেরাকে সরিয়ে দিয়ে নিশালের হাত ধরে বলল আমার সঙ্গে এসো নিশু প্লিজ । তোমরা সরো হেরা।
নিশাল বীথির হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে ঘর কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠলো, ছাড়ো আমার হাত ! তুমি আমাকে ধরবে না। স্টে এওয়ে ফ্রম মী।
ন‌ওশাদ, হেরা , নিশালের নানু,মামা, মামি, যুথী নিশালকে দেখে সবাই এত অবাক হচ্ছে কেউ কিছু বলতে ই পারছে না।
ন‌ওশাদ ছেলের হাত ধরলো , পাপা কি হয়েছে তোমার আমাকে বলো ? এই নিশালকে ন‌ওশাদ চিনতে পারছে না ! তার ছেলে এতটা রাগ কি নিয়ে করতে পারে বুঝতে পারছে না সে !
নিশাল কি হয়েছে তোমার , হেরা নিশালের ঘাড়ে হাত রাখলো?
পাপা ! এক রকম হাপাচ্ছে নিশাল।
বলো পাপা ন‌ওশাদ ছেলেকে দেখে অস্থির হয়ে যাচ্ছে।
দুলাভাই আমার সঙ্গে রাগ করেছে আমাকে কথা বলতে দেন বলে বীথি আবার নিশালের হাত ধরে টেনে পাশের ঘরে নেয়ার চেষ্টা করলো।
নিশাল ঝাড়া দিয়ে বীথির হাত ফেলে দিলো ।
বাসার সব কাজের মানুষ উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। পারুল সেই ফাঁকে পালানোর চেষ্টা করছিল নাহিন গিয়ে ওকে আটকালো ।
ন‌ওশাদ বীথির দিকে তাকিয়ে বলল, বীথি প্লিজ তুমি দূরে সরো আমার ছেলেটা এরকম কেন করছে বুঝতে দাও আমাকে । কি বলেছো তুমি ওকে ?
দুলাভাই ও আমার সঙ্গে রাগ করে আছে আমাকে কথা বলতে দিন।
কি নিয়ে রাগ করেছে সেটাই তো জানতে চাইছি ? আর নিশাল তো কখনো এরকম করে না !
বীথি আপু ওর পাপাকে সামলাতে দেন ছেলেকে হেরা বীথির উদ্দেশ্য করে কড়া গলায় বলল।
তুমি চুপ কর হেরা !
চুপ খালামনি আর একটা কথাও তুমি বলবে না , নিশাল চিৎকার করে উঠলো।
হেরা বুঝে ফেলেছে নিশাল কিছু একটা শুনেছে এখন ওর অস্থির লাগছে । ইয়া আল্লাহ।
নিশালের নানু উঠে এসে বলল, কি হয়েছে ভাইয়া কি করেছে খালামনি ?
ন‌ওশাদ‌ও ছেলের হাত টেনে ধরে বলল, আমাকে বলো বাবা ?
পাপা এই মহিলা একটা খুনী ঘর কাঁপিয়ে চিৎকার করে বীথির দিকে ইশারা করলো নিশাল ! ও মামনির বেবিটাকে ইচ্ছা করে মেরে ফেলেছে !
পুরো ঘরের ভেতরে একটা বাজ পড়লে যেমন অবস্থা হবে তাই হয়েছে । সবাই বীথির দিকে তাকিয়ে আছে।
পাপা আমি তোমাকে বলিনি, কাউকেই বলিনি মামনি কে ইচ্ছে করে শপিং মলে ফেলে এসেছিল খালামনি । তখন আমি কিছুই বলতে পারিনি তোমাকে পাপা মাম্মার কথা ভেবে ।
ন‌ওশাদ নিজের কান কেও বিশ্বাস করতে পারছে না । ঘরের প্রতিটি মানুষের এক‌ই অবস্থা !
আর এবার মামনিকে স্টোর রুমে পারুল কে দিয়ে আটকে রেখেছিল বীথি খালামনি । মামনি অসুস্থ হয়ে গেল তাই বেবিটাও …নিশাল আর কিছু বলতে পারছে না।
হেরা দূরে সরে গেল সেখান থেকে । এলিন আর নাহিনের কাছে গিয়ে বলল, তোমরা বাচ্চা গুলোকে নিয়ে উপরে চলে যাও তো । আমি চাইনা বাচ্চা গুলো এসব ঘটনা দেখে ভয় পাক।
এলিন,নাহিন বাচ্চাদের নিয়ে উপরে চলে গেল।
বীথি বলে উঠলো, এসব কি বলছো নিশু ? তুমি কি শুনতে কি শুনেছো !
কি শুনতে কি শুনেছি দাঁড়াও খালামনি পারুল , পারুল বলে চিৎকার করে উঠতেই পারুল ভয়ে ভয়ে সামনে এসে দাড়ালো নিশালের ।
সব সত্যি করে বলো পারুল ।
পারুল ভয়ে ভয়ে বলতে বাধ্য হলো সব ।
যুথী বলে উঠলো, বাহ্ এখন কাজের মানুষ সাক্ষী দিচ্ছে আমার বোনের বিরুদ্ধে ! দুলাভাই আপনার কি মনে হয় ? এটা তো রীতিমত অপমান।
নিশাল যুথীকে বলল, যুথী খালামনি তুমি আর কথা বলো না মামনিকে শপিং মলে ফেলে এসে খালামনি তোমাকে ফোনে যখন সব বলেছে আমি নিজে কানে শুনেছি তুমি এসব কিছু গোপন করে তুমিও অপরাধ করেছো কিন্তু।
আমি কি করতাম বীথি ভুল করে এসে ফোনে জানিয়েছে, আমার কি করার ছিলো বলো যুথী বলল।
ন‌ওশাদ অবাক হয়ে বলল, আমি আসলে বুঝতে পারছি না আমি কি শুনছি আর কি দেখছি ! মা আপনি কিছু বুঝতে পারছেন, ভাইয়া ?
নিশালের নানু উঠে এসে বীথির গালে আচমকাই একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল । তোর জন্য আজ আমি, আমার পুরো ফ্যামিলি আমার মৃত মেয়েটা লজ্জায় ন‌ওশাদ আর ওর ব‌উ এর সামনে মরে যাচ্ছি । ছিঃ ছিঃ বীথি এই বৃদ্ধ বয়সে আমাকে তুই এতটা লজ্জায় ফেললি !
বীথি মায়ের হাতে থাপ্পড় খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাগে কাঁপছে সে।
নিশাল পারুলকে উদ্দেশ্য করে বলল, তুমি এই বাসায় কত বছর ধরে আছো তারপরেও তুমি এত বড় একটা কাজ করতে পারলে পারুল ?
ন‌ওশাদ রাগে কাঁপছে চিৎকার করে বলল, শোয়েব কোথায় ? ওকে বলো এই পারুল কে পুলিশে হ্যান্ড ওভার করে দিতে । আমি বিশ্বাস করতে পারছি না একটা মেয়ে ঠান্ডা মাথায় এরকম কোন কাজ করতে পারে !
পারুল দৌড়ে গিয়ে হেরার পায়ে ধরলো ,আম্মা আমারে মাফ ক‌ইরা দেন আম্মা। আমি গরীব মানুষ হুকুমের দাস আম্মা।
নিশালের নানু বলল, ঐ পারুল একা কেন যাবে জেলে সবচেয়ে আগে বীথিকে নেয়া উচিত।
ফাহমিদ বীথিকে গিয়ে থাপ্পড় দিতে নিলো হেরা হাত ধরে আটকে দিলো ।
কেউ পুলিশে যাবে না ।
হেরা , ন‌ওশাদ ডেকে উঠলো।
আমার বা আপনার যা গেছে ওদের পুলিশে দিলে কি ফেরত আসবে নিশালের পাপা ? পারুল তুমি এখান থেকে যাও নিজের ঘরে। কালকে সকালে তুমি তোমার বাড়ি চলে যাবে আমি যেন ঘুম থেকে উঠে তোমার চেহারা এই বাড়িতে না দেখি ।
পারুল চোখের পানি মুছতে মুছতে দৌড় দিলো নিজের ঘরে।
নিশাল তখন‌ও রাগে ফুঁপিয়ে কাঁদছে । হেরা এসে নিশালের ঘাড়ে হাত রাখলো ।
মামনি তুমি সব জানতে তাহলে কেন পাপাকে বলোনি ?
ন‌ওশাদ অবাক হয়ে তাকালো হেরার দিকে !
আমি তোমার জন‌্য‌ই কাউকে কিছু বলতে চাইনি নিশাল। চলো নিশাল তুমি আমার সঙ্গে চলো এখানে তোমার আর আমার না থাকলেও চলবে এখন ।
তুমি মামনির সঙ্গে উপরে আসো। বলে হেরা নিশালের হাত ধরলো।
নিশালের নানু হেরার হাত ধরলো, আমি তোমার কাছে লজ্জিত হেরা আমি ক্ষমা চাইছি আমার মেয়ে যে অপরাধ করেছে কোন মেয়ে আর একটা মেয়ের সঙ্গে এই কাজ করতে পারে আমি কল্পনাও করতে পারছি না।
হেরা নিশালের নানুর হাত ধরে বলল, মা আপনি ক্ষমা চাইছেন কেন আপনার তো কোন দোষ নেই।
আমার মেয়ের হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি !
আমি একা ক্ষমা করার কেউ না এখানে একজন বাবাও তার সন্তান হারিয়েছেন তিনি কি বলেন দেখুন। হেরা নিশালের হাত ধরে দোতলায় উঠে গেল।
ন‌ওশাদ বীথির দিকে তাকিয়ে বলল, আমাদের বাচ্চাটা কি সমস্যা করেছিল তোমার বীথি, মানলাম তুমি হেরাকে সহ্য করতে পারো না । কিন্তু যে বাচ্চা টা জন্ম নেয়নি সে কি করেছিল ? তুমি না নিজে একজন মা।
বীথি অন্য দিকে তাকিয়ে আছে কোন কথা বলল না ।
ফাহমিদের স্ত্রী বলে উঠলো আমি বীথির বিষয়ে কোন কথা বলতে চাইনা কখনো ও ওর নীতিতে চলে সারা জীবন। ফয়সালের সঙ্গে সংসার টা করলো না সেটাও ওর জিদের জন্য। কিন্তু এবার তো তুমি সব লিমিট ক্রস করেছো বীথি। তুমি নিজে দুইটা বাচ্চা র মা হয়ে কিভাবে পারলে এমন একটা আজ করতে ?
ন‌ওশাদ বীথির দিকে তাকিয়ে বলল, এবার বুঝলে কেন তোমাকে বিয়ে করিনি বীথি। আমি তো ব্যবসায়ী , মানুষ চিনে চলতে হয় আমাকে। তুমি সারা জীবন নিজের টা বেশি বোঝার চেষ্টা করেছো। তুমি ছোট থেকেই স্বার্থপর ছিলে। হেরা তোমার হাঁটুর বয়সী একটা মেয়ে, অজপাড়া গাঁয়ের মেয়ে কিন্তু বুদ্ধি, বিবেচনা তোমার থেকে অনেক বেশি। সে জানতো তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস টা তুমি কেড়ে নিয়েছো তবুও তোমাকে আঘাত করতে চায়নি ।
তুমি ওকে ফেলে দিয়ে এলে বিপদের মুখে। আমাকে বলেছে হেরা কিছু বলবেন না বীথি আপুকে তাহলে নিশাল কষ্ট পাবে। বয়সে বড় হলেই যে বিচার বিবেচনা বেশি হবে তা কিন্তু নয় । তুমি তোমার পুরো ফ্যামিলিকে ছোট করলে ওর সামনে। গীতিকে ছোট করলে।
মেয়েটা কতদিন কি কষ্ট করলো আমি দেখেছি । বয়স কত ওর তোমার থেকে কত ছোট।
ন‌ওশাদ ভাই সন্তান কয়েক মাসের পেটের ভেতর নষ্ট হোক আর দুনিয়াতে এসে মারা যাক একটা মায়ের কোথায় যে কষ্ট হয় এটা মা ই জানে শুধু , ফাহমিদের স্ত্রী রূপা বলল।
ফাহমিদ বলল, আমার কিছু বলার নেই ন‌ওশাদ আমি এত বছর পর দেশে এসে এই ঘটনা শুনব কল্পনাও করিনি । তুমি ভাই ক্ষমা করো আমাকে।
ভাইয়া, মা আপনারা সামনে আছেন আপনাদের সামনে বলছি গীতি যাওয়ার পর বীথি নিশালের জন্য যা করেছে আমি কৃতজ্ঞ থেকেছি তার জন্য, কিন্তু হেরার সঙ্গে আমার সন্তানের সঙ্গে যা করেছে তার জন্য আমি চাইনা বীথির সঙ্গে আমার বা আমার পরিবারের কারো কোন সম্পর্ক থাকুক। আজকের পরে বীথি তুমি নিশালের সঙ্গে আমার বাসার সঙ্গে কোন যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। কখন‌‌ই নিশালের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করবে না।
নিশালের নানু উঠে এসে ন‌ওশাদের সামনে দাড়ালো তুমি ঠিক কথাই বলেছো আমাদের আর এখানে আসার মুখ নেই ।
না মা আমি আপনার কথা বা আর কারো কথা বলিনি প্লিজ ভুল বুঝে আমার কষ্ট বাড়িয়ে দিবেন না। আমি শুধু বীথির কথা বলেছি।
ঠিক আছে বাবা আজ আমি উঠব এই বুড়ো বয়সে এত লজ্জা নিয়ে মাথা নিচু করে জীবনে কোন জায়গা থেকে যেতে হবে ভাবিনি।
এটা আপনার মেয়ের বাসা আগেও ছিল এখনো আছে আপনি না আসলে আমি আর নিশাল কষ্ট পাব মা। ন‌ওশাদ শ্বাশুড়ির হাত ধরে বলল, আপনাকে কথা দিতে হবে আপনি আসবেন প্লিজ মা।
ঠিক আছে ন‌ওশাদ আমি যাওয়ার আগে হেরার সঙ্গে দেখা করে যাব কথা দিলাম।
নিশাল আসবে আপনার সঙ্গে দেখা করতে মা আপনি ওকে নিয়ে চিন্তা করবেন না।
সবাই চলে যাওয়ার পর ন‌ওশাদ একা অনেকক্ষণ লনের চেয়ারে বসে রইল। বীথি এতটা প্রতি হিংসা পরায়ন মেয়ে সে সত্যিই কল্পনা করেনি। তার কষ্ট হচ্ছে হেরার কথা ভেবে। এত দিন ধরে এই যন্ত্রনা একা সহ্য করলো মেয়েটা।
ন‌ওশাদ এসে নিজের ঘরে ঢুকলো হেরা চুপচাপ বারান্দায় বসে আছে । সে পিছন থেকে হেরার ঘাড়ে হাত রাখলো ।
কেউ কোন কথা বলছে না চুপ হয়ে আছে। নিরবতাই কত কথা বলে দিচ্ছে দুজনের মাঝে। হেরা ন‌ওশাদের হাতটা ধরে র‌ইলো শুধু।
কিছুক্ষণ পর হেরাই প্রথম বলল, চলেন ছেলের কাছে যাই ও খুব কষ্ট পাচ্ছে ।
ন‌ওশাদ আর হেরা নিশালের ঘরে ঢুকে দেখে নিশাল উপুড় হয়ে শুয়ে তার মাম্মার ছবি দেখছে। ওদের দেখে উঠে বসলো।
হেরা নিশালের মাথায় হাত রাখলো তুমি এত ভেঙে পড়ো না বাবা আমি ঠিক আছি ।
ন‌ওশাদ ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, যা হ‌ওয়ার হয়ে গেছে বাবা তুমি কষ্ট পেলে আমি আর তোমার মামনি অনেক বেশি কষ্ট পাই । আমাদের কে আছে বলো তুমি ছাড়া।
তারপর ন‌ওশাদ ছেলের মুড ঠিক করার জন্য বলল, তোমার আরো দুই তিনটা ভাই বোন যখন হবে ওরা তোমাকে বিরক্ত করবে আমরা বসে বসে দেখব হাসতে হাসতে বলল ন‌ওশাদ। তোমার সব জিনিস ছুড়ে ফেলে দিবে। মোবাইল নিয়ে নিবে। এই বাসায় তোমার একার রাজত্বে ভাগ বসাবে তখন কেমন হবে !
নিশাল‌ও হেসে দিলো পাপার কথায়।
হেরাও হাসছে ন‌ওশাদের কথা শুনে।

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here