তবু সুর ফিরে আসে পর্ব ৩

0
539

#তবু_সুর_ফিরে_আসে

৩য় পর্ব

ন‌ওশাদ অফিসে যাওয়ার পথে গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে ! কোন কথা বলছে না ! শোয়েব পাশে বসে উসখুস করছে । তার জানতে ইচ্ছে করছে কি হচ্ছে এসব ! বলা নেই কওয়া নেই মামা এভাবে বিয়ে করে চলে আসছে! আর কেউ কিছু না জানলেও , মামা তাকে না জানিয়ে এত বড় ডিসিশন কখনো নিবে না এটাই তার বিশ্বাস ছিল ! কিন্তু কি এমন ঘটনা যে মামা তাকে না জানিয়ে একদম বিয়ে করে ব‌উ সঙ্গে নিয়ে বাসায় এসে হাজির?
মামাকে বিয়ে করানোর জন্য আত্মীয়-স্বজন কত বার বলেছে কিন্তু মামা সব সময় বিয়ের প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছেন! বড় খালাম্মা কত কান্নাকাটি করেন মামাকে বিয়ের জন্য রাজি করানোর জন্য। কিন্তু মামা খালাম্মা র কথা কখনো হেসে উড়িয়ে দিতেন কখনো বুঝিয়ে শুনিয়ে বলতেন। কিন্তু হঠাৎ করে মামার কি হলো?কোথায় বিয়ে হলো , মেয়েটি বা কে ? আর বীথি খালামনি কেন বারবার কম বয়সী কম বয়সী মেয়ে বলছিল বুঝতে পারছে না শোয়েব!
সে নির্দ্বিধায় মামাকে প্রশ্ন করতে পারে কিন্তু শোয়েব জানে মামা নিজে থেকেই জানাবে তাকে । তাই সে অপেক্ষা করছে!
এই মামা তাকে অনেক আদর করে , সেও ন‌ওশাদ মামা বলতে অজ্ঞান। তার মা ছোটবেলায় বড় হয়েছে ফুফুর বাড়ীতে ! ন‌ওশাদ মামার আম্মাই তার মায়ের বিয়ে দিয়েছে । ছোট থেকেই নিজের মামাদের থেকে ন‌ওশাদ , আরমান , ফারহান এই তিন মামা তাদের ভাই বোনদের আদর করেছে বেশি। পড়াশোনা শেষ করে বসে ছিল ন‌ওশাদ মামা তাকে চাকরি দেয়। তাকে অন্ধের মত বিশ্বাস করে এবং সেও মামার বিশ্বাসের মূল্য রাখতে পছন্দ করে!
ন‌ওশাদ এর মোবাইলে ছোট ভাই আরমান এর ফোন এসেছে!
কিছুক্ষণ স্কীনের দিকে তাকিয়ে থেকে ন‌ওশাদ ফোন টা রিসিভ করলো !
: হ্যাঁ বল কি অবস্থা?
: কখন আসছো তুমি খুলনা থেকে ভাইয়া ?
: অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল !
: তুমি কেন যে বাই রোডে গেলে কত কষ্ট হলো তোমার !
: আমি ঠিক আছি আরমান!
: অফিসে আসছো তো ?
: হুম ছুটি নেয়ার কথা ছিল নাকি ?
: না ভাবলাম অন্য কোথাও এপোয়েন্টমেন্ট আছে নাকি তোমার !
: বিজিএমইএ তে এটা মিটিং ছিল সেটা কেনসেল হয়েছে তাই এখন সোজা অফিসে আসছি !
: আচ্ছা ভাইয়া !
ন‌ওশাদ ফোন নামিয়ে রাখতেই ফ্লোরিডা থেকে বুবুর ফোন ! ওখানে তো এখন মাঝ রাত এখন বুবুর ফোন ! তারমানে খবর ফ্লোরিডা তে ও পৌঁছে গেছে অলরেডি ! সব বীথির কাজ !
ন‌ওশাদ ফোনটা শোয়েব এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল ,বুবুর ফোন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না ! তুমি কথা বল !
শোয়েব ফোন রিসিভ করলো,
: আসসালামুয়ালাইকুম খালাম্মা আমি শোয়েব , কেমন আছেন ?
: ন‌ওশাদ কোথায় ?
: খালাম্মা মামা তো মন্ত্রী র সঙ্গে মিটিং এ ব্যস্ত ফোন আমার কাছে !
: তোর মামাকে বলবি মিটিং শেষ হ‌ওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে কল দিতে !
: ঠিক আছে খালাম্মা আমি বলব !
ফোন কেটে দিল শোয়েব !
সব বীথির কাজ বুঝলে ।আজ আমার কাজ ফেলে শুধু ফোনের উপর থাকতে হবে ! আত্মীয়-স্বজন আমাকে জ্বালিয়ে ফেলবে !
আপনি চিন্তা করবেন না মামা আমি দেখছি !
ন‌ওশাদ অফিসে ঢুকেই তার রিয়েল এস্টেট বিজনেস এর একমাত্র বিজনেস পার্টনার বন্ধু রেজোয়ান কে রুমে আসার জন্য শোয়েব কে বলে দিল!
রেজোয়ান তার খুব ভালো বন্ধু, বুয়েটে একসঙ্গে পড়াশোনা করেছে। ওর সঙ্গে ই সে রিয়েল এস্টেট এর বিজনেস টা শুরু করেছিল। দুজনের ব্যবসায়িক এবং মানসিক চিন্তা ধারনা এক । খুব হাসিখুশি , উৎফুল্ল একজন মানুষ রেজোয়ান। তাই তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক টা অন্য রকম!

অফিসের রুমে ঢুকে স্যুট টা খুলে জানালার পাশে দাঁড়ালো! গুলশান এর সুউচ্চ বিল্ডিং থেকে বাহিরের শহরটা দেখা যাচ্ছে। উপর থেকে ঢাকা শহরটাকে আরো ঘিঞ্জি লাগে তার !
পিওন রমিজ কফি নিয়ে ঢুকলো!
অফিসে এসেই সে প্রথমে এক মগ ব্ল্যাক কফি খায় ।এটা বহু পুরনো অভ্যাস তার!
আরো এক মগ কফি আনো রমিজ রেজোয়ান আসছে!
জ্বি স্যার , বলে রমিজউদ্দিন চলে গেল!

পাঁচ মিনিট পর বন্ধু রেজোয়ান এসে ঢুকলো । কি অবস্থা দোস্ত তোর খুলনার কাজ কেমন হলো ?
: হুম ঠিক ঠাক !
পিওন রমিজ রেজোয়ান এর জন্য কফি নিয়ে ঢুকলো !
রমিজ চলে যাওয়ার পর ন‌ওশাদ কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বলল ,
একটা ঘটনা ঘটে গেছে আমার লাইফে রেজোয়ান !
রেজোয়ান কফির মগ হাতে নিয়ে ন‌ওশাদের দিকে চোখ তুলে তাকালো!
কি ব্যাপার ?
আমি বিয়ে করেছি !
মানে ? রেজোয়ান চিৎকার দিয়ে উঠল!
মানে আমি গতকাল বিয়ে করেছি রেজোয়ান !
কি বলছিস ন‌ওশাদ ? আমি তো জানতাম তুই তোর শীপের আপডেট দেখতে খুলনা ডকে গিয়েছিস কিন্তু সেটা যে বিয়ে করার জন্য জানতাম না তো ?
গিয়েছিলাম শীপ দেখতেই , কিন্তু ঘটনা চক্রে বিয়েটা হয়ে গেল !
বন্ধু ঝেড়ে কাশো প্লিজ আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে!
ন‌ওশাদ কিছুক্ষণ চুপ করে কফিতে চুমুক দিল ! তারপর রেজোয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
: রেজোয়ান কেন জানি এবার বাই রোডে খুলনা যেতে ইচ্ছে করলো ! এর একটা কারণ ছিল ছোটবেলায় কয়েক বছর খুলনা ছিলাম আমরা ! আব্বার পোস্টিং ছিল খুলনায়! অনেক স্মৃতি ছিল সেখানে! ভাবলাম গাড়ি নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখব সব ! কাজ তো আমার একদিনে শেষ হয়ে গেল ! শীপ আগামী মাসে আমাকে হ্যান্ড‌ওভার করবে ওরা ! শীপ দুইটা দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল দোস্ত!
: সে না হয় বুঝলাম বিয়েটা কিভাবে, কাকে করলি সেটা আগে বল ?
: খুলনা গিয়েছিলাম মাওয়া- কাওড়াকান্দি দিয়ে ! আসার সময় যশোর কুষ্টিয়া হয়ে র‌ওনা হলাম এর কারণ হলো আমার ছোটবেলার টিচার সাইফুল ইসলাম স্যারের সঙ্গে একবার দেখা করা !
সাইফুল ইসলাম স্যার ক্যাডেট কলেজ এ ঢুকার আগে আমাকে অংক আর বিজ্ঞান পড়াতেন ! আমি অংকের বেসিক শিখেছি এই স্যারের কাছে ! আব্বার পোস্টিং ছিল তখন কুষ্টিয়ায় ! স্যার আমাকে আর আরমান কে বাসায় এসে পড়াতেন। গ্রামের একটা স্কুলে তিনি শিক্ষকতা করতেন। জমিজমা বিষয়ে একটা কাজ করতে এসে আব্বার সঙ্গে পরিচয় ! তখন আব্বা আমাদের দুই ভাই কে পড়ানোর দ্বায়িত্ব উনাকে দেন। সাদাসিধা দরিদ্র মানুষ দুই বছর উনার কাছে পড়েছি ! তারপর আমি ক্যাডেট কলেজে চলে গেলাম আর আব্বার পোস্টিং হয়ে গেল কুষ্টিয়া থেকে খুলনা। স্যার আমাকে ক্যাডেট কলেজে খুব সুন্দর চিঠি লিখতেন। আমিও লিখতাম। একবার খুলনায় আমাদের বাসায় ও বেড়াতে গেছেন। যাই হোক একটা সময় আর যোগাযোগ র‌ইলো না।
ন‌ওশাদ কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইলো।
ছয় সাত মাস আগে এক রাতে হঠাৎ স্বপ্ন দেখলাম আমি আর আরমান ছোটবেলায় যেরকম স্যারের কাছে পড়তাম সেরকম পড়ছি !
স্যারের সাথে যোগাযোগ এর কোন ওয়ে জানা ছিল না ! আমিও ব্যাপার টা নিয়ে এত সিরিয়াস হলাম না, যে এত বছর পর স্যারের খোঁজ নেই। বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন জানিও না !
এবার খুলনা গিয়ে হঠাৎ মনে হলো যাওয়ার সময় কুষ্টিয়া হয়ে যাই স্যারের একটা খোঁজ নিয়ে যাই ! আমি শুধু জানতাম স্যারের স্কুলের নাম টা ! সেটা দিয়ে ঐ এলাকার নাম ম্যাপে সার্চ করে চলে গেলাম কুষ্টিয়ার প্রত্যন্ত এক গ্রামে !
: তার পর কি হলো , স্যারের মেয়ে কে বিয়ে করে ফেললি ? রেজোয়ান উদ্বগ্রিব হয়ে বলল!
: না শোন ঘটনা, বাংলা সিনেমার চেয়ে কম না ঘটনা !
আমি লোকজন কে জিজ্ঞাসা করে করে সেই স্কুল খুঁজে বের করলাম। বিকেলে বিকেলে সেই স্কুলের সামনে গিয়ে হাজির হলাম ! দূর থেকে দেখি অনেক মানুষের ভীড় ! ভাবলাম স্কুলের কোন প্রোগ্রাম হচ্ছে ! কিন্তু কাছে গিয়ে দেখি ঘটনা তো ভয়াবহ !
আমার সেই সাইফুল স্যারের নাতনি র নামে শালিশ বসেছে ! গ্রামের মাতব্বর শ্রেণীর লোকজন হাজির। উৎসুক জনতার ভিড়। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া একজন বৃদ্ধ অসহায়ের মত লোকজনের কাছে অনুরোধ করে যাচ্ছেন। তিনিই আমার সাইফুল স্যার।
আমি স্যারের কাছে গিয়ে পা ছুঁয়ে সালাম করলাম ! বৃদ্ধ, দরিদ্র এক অসহায় মানুষ ! পরিচয় দিতেই চিনতে পারলেন। বুকে জড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললেন,
ন‌ওশাদ আল্লাহ তোমাকে পাঠিয়েছে আমার জন্য আমার নাতনি কে রক্ষা করতে তাই না ?
আমি স্যারের কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছিলাম না প্রথমে !
ঘটনা যা শুনলাম স্যারের মেয়ের দিকের নাতনি স্যারের কাছে ই থাকে বাবা মা নেই বেঁচে আছে কিনা জানিনা! সেই মেয়েকে গ্রামের কিছু ছেলে সব সময় উত্যক্ত করে ! এক পর্যায়ে মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় এদের অত্যাচারে ! কিন্তু তাতেও রক্ষা হয় না ! মেয়েটি বাড়ির আঙিনায় ও বের হতে পারে না !
একদিন একদল ছেলে মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যায় গ্রামের একটা পরিত্যক্ত বাড়িতে ! হয়তো তারা মেয়েটিকে রেপ করে ! ঘটনা টা গ্যাং রেপ ছিল ! সেই মুহূর্তে সাপ একটি ছেলেকে কামড় দেয় , এতে রেপিস্ট দের ঐ দল টা ভয় পেয়ে যায় ! তারা মেয়েটিকে ফেলে পালিয়ে যায় ! যাকে সাপ কামড় দেয় ছেলেটা মারা যায়নি কিন্তু মানসিক ভাবে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যায় কিছুটা ! ভয়ে হয়তো।
মেয়েটি বাড়ি ফিরে আসলে পরে বাড়ির মানুষ জন ঘটনা ধামাচাপা দিতে চুপ করে যায় ! কারণ ঐ ছেলেদের কারো ফ্যামিলি তে পলিটিক্যাল ফিগার কেউ আছে ।
সাপের ঐ ঘটনার পর ছেলে গুলো আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। দিনেদুপুরে মেয়েটি র বাড়িতে চলে আসে। মেয়েটির জীবন একরকম দূর্বিশহ করে দেয় !
এর মধ্যে মেয়েটির কোন এক মামি হয়তো ঐ ছেলেদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রাতে ঘরের ছিটকিনি খুলে দেয়। ছেলে গুলো মেয়েটিকে আবার তুলে নিতে ঘরে ঢুকে পরে !
মেয়েটি আত্মরক্ষার জন্য দা টাইপের কিছু একটা দিয়ে কোপ দেয়, একজনের হাত এ কোপ পরে আহত হয় মারাত্মক ভাবে!
এখন সেই ছেলেদের ফ্যামিলি শালিশ বসিয়েছে তাদের দাবি এই নষ্ট মেয়েকে চুল কেটে, মুখে কালি দেয়া হোক এর মধ্যে একদল হুজুর ও ফতোয়া দিয়েছে এই মেয়ে কে দোরড়া মারা হোক ! নষ্ট মেয়ে এলাকার ছেলেদের মাথা নষ্ট করছে !
চিন্তা কর রেজোয়ান এই যুগে এসে এখনো এদেশের গ্রামে এই জিনিস চলছে ! দোরড়া মারা?
: তারপর তুই মেয়েটির সঙ্গে কিভাবে জড়িয়ে গেলি ন‌ওশাদ সেটা বল ! তুই তো ইচ্ছে করলেই ঐ এলাকার পুলিশ কল করতে পারতি । হোম মিনিস্টার কে ফোন দিলেই তো তোর দ্বায়িত্ব শেষ হয়ে যেত !
: আমি সেই চেষ্টা করতে গিয়ে দেখি আমার মোবাইল এর চার্জ শেষ মোবাইল বন্ধ। কপাল দেখ ড্রাইভার বাহার তার মোবাইল এর ও চার্জ নাকি আগেই শেষ ! আমার কারো নাম্বার মুখস্থ নেই শোয়েব কিংবা তোর কারো নাম্বার আমার জানা নেই ।
: কি বলিস !
: সেটাই !
: তারপর ?
: এলাকার লোকজন কে বোঝানোর চেষ্টা করলাম আপনারা দয়া করে এই কাজ করবেন না ! কিন্তু পাবলিক আমার কথা শুনবে না ! অগত্যা আমি বললাম ঠিক আছে আমি মেয়েটিকে গ্রাম থেকে নিয়ে চলে যাচ্ছি আপনারা শান্ত হন ! আজ থেকে এই মেয়ের দ্বায়িত্ব আমার!
: তারপর ?
: গ্রামের লোকজন এত খারাপ বিশেষ করে ফতোয়াবাজ হুজুর গুলো, বলে বেগানা পুরুষের কাছে গ্রামের মেয়ে কে আমরা কেন দিব ! আপনি কে হন ওর ? মেয়ে নিয়ে যদি বিক্রি করে দেন আপনি !
চিন্তা কর দোস্ত এদের কথা !
: বুঝলাম পুলিশ কি করে ?
: আরে পুলিশ , পুলিশ কে খবর টা দিবে কে ? মেয়ের মামা দুটো মেয়েটিকে ঘাড় থেকে ঝাড়তে পারলে বাঁচে ! পুলিশের ঝামেলায় যাবে না ! দোরড়া মেরে মেরে ফেলুক এতেই তারা খুশি !
সাইফুল ইসলাম স্যার ছুটে এসে আমার পায়ে পড়ে গেল আমি স্যারকে কি আশ্বাস দিব বুঝতে পারছি না !
এক অসহায় নানা তার নাতনিকে বাঁচাতে প্রতিটি লোকের পায়ে পড়ছে কি যে করুন দৃশ্য ছিল রেজোয়ান !
: মেয়েটি কোথায় তখন ?
: বোরকা পড়া নেকাব দিয়ে মুখ ঢাকা মেয়েটি কে দুই তিনটা মেয়ে ধরে বসে আছে ! একবার শুধু চোখ পড়লো মেয়েটির দিকে ! চোখ দুটো শুধু দেখলাম ! অসহায় মেয়েটি শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে !
তোর কাছে মিথ্যা বলব না ঐ চোখ দুটো দেখে আমার মনে হলো এই মেয়ে টিকে আমার বাঁচাতে হবে যে কোন উপায়ে ! কিন্তু কিভাবে কি করব জানি না !
: আমি গ্রামের চেয়ারম্যান কে ডেকে একটু দূরে নিলাম বললাম, আমি টাকা দিতে রাজি আছি আপনি যে কোন উপায়ে এই ঘটনা বন্ধ করার ব্যবস্থা করুন ! উনি বলে সাইফুল ইসলাম স্যার আমার ও স্যার ছিলেন আপনার কি মনে হয় আমার খারাপ লাগছে না ? মেয়েটি ছোট থেকেই অসহায় কিন্তু আমার হাতে করার কিছু নেই লোকজন খুব উত্তেজিত । সবচেয়ে বড় কথা মেয়েটির মামা রা ই আপদ বিদায় করতে চাইছে । দেখছেন না !
এখন উপায় কি সেটা বলুন চেয়ারম্যান সাহেব ?
: আপনি মেয়েটিকে এখান থেকে যেভাবেই হোক নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন !
: কিন্তু কিভাবে চেয়ারম্যান সাহেব ?
: সেটাও তো আমি বুঝতে পারছি না স্যার !
আচ্ছা দেখি আমি হুজুর দের রাজি করাতে পারি কিনা !
এই কথা বলে চেয়ারম্যান হুজুর দের সঙ্গে কথা বলতে গেল।
হুজুর দের এক কথা বেগানা পুরুষের সাথে গ্রামের মেয়েকে তারা ছাড়বে না ! এই নষ্ট মেয়ের জন্য দোরড়াই সবচেয়ে বড় শাস্তি !
চুল কাটার জন্য নাপিত চলে আসছে খুড় আর কেচি নিয়ে !
ঠিক সেই মুহূর্তে আমার কি হলো জানি না রেজোয়ান, আমি বললাম আমি মেয়েটিকে এই মুহূর্তে বিয়ে করে সঙ্গে নিয়ে যেতে চাই ! তাহলে তো কারো কোন সমস্যা নেই?
দেখি আশেপাশে সবাই চুপ হয়ে গেল ! তখন একদল বলল ঠিক আরেক দল বলল , না । তখন চেয়ারম্যান এসে আমাকে বলল,
স্যার আপনি কি বলছেন এটা ? আপনার ঘরে নিশ্চয়ই স্ত্রী আছে হঠাৎ এভাবে ডিসিশন নিবেন না !
চেয়ারম্যান সাহেব আমার স্ত্রী মারা গেছে ছয় বছর হয়েছে !
আপনি শিওর হয়ে বলছেন তো স্যার ?
আমি শিওর !
তখন এই চেয়ারম্যান তার ক্ষমতা দেখিয়ে হুজুরা যেহেতু বিয়ের পক্ষে ছিল তাদের দিয়ে মাতব্বর শ্রেণীর লোকদের রাজি করালো !
সাইফুল স্যার আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল , আমি জানতাম আল্লাহ কোন একটা ব্যবস্থা করবে ! বাবা ন‌ওশাদ তুমি সত্যি ওকে বিয়ে করবে ?
আমি বললাম, স্যার আপনি ঠিক শুনেছেন !
এই মেয়েকে নিয়ে আর কখনো এখানে ফিরে এসো না ন‌ওশাদ ! ওর দ্বায়িত্ব তোমার যা ইচ্ছা করো কিন্তু এখানে আসতে দিও না ! বাহিরের মানুষের কথা কি বলব ঘরের মানুষ আরো বেশি খারাপ এখানে!
: তারপর ? রেজোয়ান বলল।
: আধা ঘন্টার মধ্যে বিয়ে পড়ানো হলো আমি মেয়েটিকে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে উঠে চলে এলাম !
রেজোয়ান কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ন‌ওশাদ এর দিকে !
তারপর বলল,দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ন‌ওশাদ আজমী, সরকারের মন্ত্রী আমলাদের সঙ্গে যার উঠা বসা , সে কিনা এতটা সিনেম্যাটিক বিয়ে করে ফেলল !
ন‌ওশাদ অসহায়ের মত বলল, রেজোয়ান আমার মাথায় তখন আর কোন উপায় জানা ছিল না !
বুঝতে পেরেছি বন্ধু , কিন্তু এখন সমস্যা টা কোথায়? ভালো তো গীতি ভাবি যাওয়ার পর আমরা সবাই তোকে অনেক বার বলেছি বিয়ে করতে !
রেজোয়ান মেয়েটির বয়স কত জানিস ?
কত ?
মাত্র বাইশ বছর আমার ছিচল্লিশ চলছে !
সমস্যা কি তুই তোর বয়স বিশ বছর কম ভাবতে শুরু কর ! আচ্ছা বাসর রাত কেমন গেল সেটা বল ?
সাট আপ রেজোয়ান ! আমি ফাজলামি র মুড়ে নাই এখন !
সরি দোস্ত , কিন্তু তুমি বিয়ে করেছো সংসার তো করতেই হবে তাই না ?
আমি বুঝতে পারছি না !
মানে এটা আবার কি বলছিস ? ওয়েট মেয়েটি কে রেপ করা হয়েছে বলে তোর অস্বস্তি হচ্ছে ন‌ওশাদ?
: আরে ঐ সব কিছু না ! আমি বোঝাতে পারছি না তোকে ?
: ন‌ওশাদ বিয়ে যখন করেছিস সী ইজ ইওর রেসপনসিবিলিটি । তোর বউ । স্ত্রীর অধিকার পাওয়া এখন ঐ মেয়ের প্রাপ্য অধিকার ! নাম কি মেয়ের ?
: নাম ভুলে গেছি ! একটু অন্যরকম একটা নাম !
: দেখতে কেমন ?
: এটাও একটা বড় বিষয় মেয়েটা অসম্ভব সুন্দর ! বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না এমন সৌন্দর্যের দিকে !
: তাই নাকি ?
: আমি বিয়ের আগে চোখ ছাড়া কিছুই দেখি নাই তারপর ঢাকা ফেরার পথে প্রথম সম্পূর্ণ মুখটা দেখলাম !
রেজোয়ান উঠে এসে ন‌ওশাদ এর ঘাড়ে হাত রাখলো । দোস্ত আমি জানি তোর মনে অনেক ঝড় চলছে। ধরে নে এটাই আল্লাহর ইচ্ছা ! বয়স এর গ্যাপ ব্যাপার না তোকে দেখলে কে বলবে তুই ছিচল্লিশ বছরের পুরুষ মানুষ ! পুরুষ মানুষের আবার বয়স কি ,আরে দেখবি বছর ঘুরতেই তুই বাচ্চার বাবা হয়ে গেছিস !
চুপ করবি রেজোয়ান !
রেজোয়ান বলল,শোন দুষ্টামি না যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে ! আর গ্রামের মেয়ে বলে তোর খারাপ লাগছে আমি একজনকে পাঠাই তোর বাসায়। এমন গ্রুমিং করবে তোর ব‌উকে রাতে বাসায় ফিরে দেখবি ঢাকা শহরের আধুনিক মেয়ে বানিয়ে ছেড়েছে।
গ্রামের মেয়ে না শহরের মেয়ে সেটা আমার মাথা ব্যথা না !
তাহলে কি ন‌ওশাদ?
আত্মীয়-স্বজন সবাই কে ফেইস করব কিভাবে? এই যে দেখ হাজার টা ফোন আসছে মোবাইলে ! বীথি সবাই কে অলরেডি বলে দিয়েছে ! আমি ভাবছি নিশাল কে নিয়ে!
তোর ছেলে অনেক বুঝদার ও এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন মনে করবে না ন‌ওশাদ!
মেয়ে হলে চিন্তার বিষয় ছিল , মেয়েরা খুব আবেগী হয় এসব বিষয়ে!
ন‌ওশাদ মন খারাপ করে বলল,ছেলেটা আরো দূরে চলে যাবে আমার থেকে !
ছেলেরা বাবাদের কাছ ঘেঁষা হয় না । আমি তুই ছিলাম আমাদের বাবাদের ক্লোজ, তাহলে ? আমার দুই ছেলে শুধু টাকার বেলায় বাবা, তারপর খবর নেই আর !
রেজোয়ান আমার কি করা উচিত বলতো ?
কি আবার সংসার করা উচিত ! বাদ দে অন্য চিন্তা ! তুই কি এক কাপড়ে নিয়ে আসছিস তোর ব‌উ কে ?
হুম ! তাই তো আমার তো খেয়াল ই হয়নি মেয়েটি কি পড়ে থাকছে এখন !
থাক তোকে চিন্তা করতে হবে না আমি জীনাত কে ডেকে আনছি ও সব সামলে নিবে !
মানে বুঝলাম না রেজোয়ান ,জীনাত কি করবে ?
দেখ না তুই ! স্মার্ট মেয়ে সুন্দর শপিং করবে।
রেজোয়ান তাদের অফিসের মার্কেটিং হেড জীনাত কে ন‌ওশাদ এর রুমে আসতে বলল!

কিছুক্ষণ পর জীনাত দরজা ধাক্কা দিয়ে ঢুকলো !
: গুড আফটার নুন স্যার !
: জীনাত তোমাকে একটা কাজ করতে হবে ।
: জ্বি স্যার !
: অফিসিয়াল কিছু না তুমি একটু শপিং করে দিবে একজনের জন্য !
: অবশ্যই স্যার !
: বাইশ বছরের একটা মেয়ের জন্য কিছু ড্রেস কিনবে যেন সে আজকেই পড়তে পারে ! আপাতত রেডি ড্রেস তারপর আনস্টিচ যা কিনার সেগুলো পড়ে মাপ দিয়ে বানানো যাবে ।
: স্যার জিনস টপস এসব ও কিনব ?
: ন‌ওশাদ এসব কিনবে বলে রেজোয়ান ন‌ওশাদের দিকে তাকালো?
ন‌ওশাদ রেজোয়ান এর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো !
রেজোয়ান ন‌ওশাদের দৃষ্টি উপেক্ষা করে জীনাত কে বলল, জীনাত আপাতত সেলোয়ার কামিজ আর কয়েকটা সুন্দর শাড়ি কিনে আনবে ! কিনে আমাকে ফোন দিও ! বিলটা তুমি একাউন্স এ জমা দিয়ে দিও !
: জ্বি স্যার ! গায়ের রং কেমন স্যার !
রেজোয়ান বলল, অনেক ফর্সা সুন্দর !
আর একটা কথা যা কিনবে মাথায় রেখো ইট হ্যাজ টু বি দ্য বেস্ট !
: স্যার !
যাও শুরু করো !
জীনাত রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর ন‌ওশাদ বলল,
এখন অফিসের সবাই জেনে যাবে ঘটনা !
: তুই কি লুকিয়ে রাখতে চাইছিস ন‌ওশাদ ?
: না !
: তাহলে আর কি ? আমি বলি একটা রিসিপশন পার্টি দিয়ে দে ! যে সব রমনীরা ন‌ওশাদ আজমী কে পেতে চাইতো তারা জানুক ন‌ওশাদ আজমী কাউকে পেয়ে গেছে !
: রেজোয়ান এত নাটকের চিন্তা তোর মাথায় কিভাবে আসে ?
ন‌ওশাদ তোর সঙ্গে এত বড় সিনেমা হয়ে গেল তুই আমার নাটক নিয়ে পড়ে আছিস ।
: আত্মীয়-স্বজন কে কিভাবে সামলাব সেটা আগে বল ?
: কিছু বলার দরকার নেই চুপ করে থাক !
: তাই ?
: হুম ! ঠিক আছে আমি এখন উঠি কিছু ক্লায়েন্ট এর সঙ্গে মিটিং আছে আমার !
রেজোয়ান উঠে যাচ্ছে ! পেছন ফিরে বলল , কনগ্রাচুলেশন দোস্ত তোর বিবাহিত জীবন সুন্দর হোক !
ন‌ওশাদ হতাশ দৃষ্টিতে বলল, রেজোয়ান আবার !
: উইস করলাম তোকে ! আচ্ছা ভালো কথা তুই আর তোর ব‌উ নাম যেন কি ?
: মনে পড়েছে হেরা !
: ওয়াও ইন্টারেস্টিং নেইম ! তুই আর হেরা আজ ডিনার কর আমার বাসায়, সুমনা দারুন সারপ্রাইজ হবে ! ও যদি শুনে তুই বিয়ে করেছিস দৌড়ে চলে যাবে ব‌উ দেখতে !
: রেজোয়ান প্লিজ এত তাড়াতাড়ি আমি কিছুই চাইছি না ! আমি নিজেও মেয়েটির সঙ্গে দুই মিনিট কথা বলিনি এখনও!
: তারমানে বাসর হয়নি এখনও তোদের ! এক কাজ করলে কেমন হয় আমি আর সুমনা সাজাই তোর বাসর ঘর !
ন‌ওশাদ বলল, তুই এখন ভাগবি নাকি কলম ছুড়ে মারব রেজোয়ান !
হাসতে হাসতে রেজোয়ান রুম থেকে বের হয়ে গেল !
ন‌ওশাদ অফিসের কাজে মন বসাতে পারছে না ! তার খুব অস্বস্তি লাগছে ! কি একটা ব্যাপার হয়ে গেল জীবনে ! সে কখনো কি এরকম কিছু ভেবেছিল তার জীবনে !
বিয়ে ব্যাপার টা তার জীবনে দুইবার ই নাটকের মত হয়ে গেল ! গীতিও পালিয়ে চলে এসেছিল , তারপর কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেছিল বন্ধুদের সাথে নিয়ে ! এবার তো পুরোই মুভি হয়ে গেল !
মোবাইল এ রিং হচ্ছে । বুবুর ফোন ! এখন ফোন না ধরলে হার্ট অ্যাটাক করবে বুবু!
: আসসালামুয়ালাইকুম বুবু !
: বাবু কি শুনছি আমি এসব ? উত্তেজিত হয়ে বলল বুবু।
: কি শুনেছো তুমি, আমি কিভাবে জানব ?
: তুই নাকি বিয়ে করেছিস ?
: ও আচ্ছা এই খবর , বিয়ে করব ভাবছি ! তুমি ও অনেক দিন থেকে পিছনে লেগে আছো তাই ভাবছিলাম আর কি !
: খুব ভালো ডিসিশন নিয়েছিস ! আমার কলিজা টা ফেটে যায় তোর একা জীবন টা দেখে বলেই অন্য প্রান্তে যথারীতি বুবু কাঁদছে !
: হলো তো এখন কান্নাকাটি বন্ধ করে খুশি হ‌ও !
: যে মেয়েকে বিয়ে করবি সে কি তোর বাসায় ? কোন সমস্যা নেই । আমার ভাই বিয়ে করবে তার জীবনটা স্বাভাবিক হবে এতেই আমি খুশি ! আমি ইরফান কে বলছি আমার ঢাকা যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে আমি আর তোর দুলাভাই এসে তোর বিয়ে দিব ! গীতি তো অসময়ে চলে গেল । তোর বুড়ো বয়স টা কিভাবে কাটবে সেই চিন্তায় অস্থির হ‌তাম রে বাবু !
: বুবু আমি এখন অফিসে তোমার সাথে পরে কথা বলব , রাখলাম!
: ঠিক আছে পরে কথা হবে ! চোখের পানি মুছতে মুছতে জান্নাত আজমী ফোন টা রাখলো।
ন‌ওশাদ কখনো মিথ্যা কথা বলতে চায় না । কিন্তু বুবু র সঙ্গে এই মুহূর্তে মিথ্যা টা তাকে বলতেই হলো ! কেন যেন সে বলতে পারলো না বিয়েটা করে ফেলেছে !

একটু পর শোয়েব এসে ঢুকলো রুমে ,
: আসব স্যার ! অফিসে সব সময় শোয়েব তাকে স্যার ডাকে শুরু থেকেই!
: এসো , বসো !
: রাতে একটা দাওয়াত ছিল আপনার !
: কোথায় ?
: এইচ এন্ড এন গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেবের মেয়ের বিয়ে !
: আমি যাব না একটা ভালো গিফট কিনে পাঠিয়ে দাও !
: খালাম্মা র সঙ্গে কথা হয়েছে আমাকে বারবার ফোন দিচ্ছিল !
: বুবুর সাথে কথা হয়েছে আমার !
: মামা আপনি কি সত্যি সত্যি বিয়ে করেছেন ? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না !
: শোয়েব আমি বিয়ে করেছি , বীথি ঠিক কথাই বলেছে ! এক রকম হঠাৎ ই বিয়ে করেছি । একটা মেয়ের জীবন রক্ষা করার জন্য। এখন শুধু এতটুকু ই জেনে রাখো ! বাকিটা অন্য কোন সময় বলব!
: আচ্ছা !
: শোয়েব আত্মীয়-স্বজনদের ভীড় চাইছি না এখন বাসায়, বিষয়টা খেয়াল রেখো ! এমনকি আরমান আর ফারহান এর ব‌উ রা ও বাসায় আসুক সেটাও চাইছি না !
: ঠিক আছে মামা আমি অন্য মামাদের বুঝিয়ে বলব !
: থ্যাঙ্কস !
: আপনি কি বিকালে গলফ খেলতে যাবেন আজ ?
: আজ কোথাও যাব না !
: লাঞ্চ দিতে বলি অনেক বেলা হয়ে গেছে !
: দিতে বলো আমি নামাজ পড়ে আসছি !
: আর একটা কথা স্যার আপনার কিন্তু আগামীকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হয়ে বুলগেরিয়া যাওয়ার কথা !
: ভুলে গিয়েছিলাম ! রিয়াজ কে জানিয়ে দাও । ও আমার লাগেজ গুছিয়ে দিবে !
: আপনার লাগেজ আমি গুছিয়ে দেই মামা !
: ও আচ্ছা তাই তো ! হাসলো ন‌ওশাদ শোয়েবের দিকে তাকিয়ে !
শোয়েব রুম থেকে বের হয়ে গেল !

বিকেলের দিকে হঠাৎ কি মনে করে আজ বাসায় ফোন দিল ন‌ওশাদ! অনেক বছর হবে অফিস থেকে বাসায় ফোন দেয়া হয় না !
ফোন ধরলো আনারের মা !
: হ্যালো কে ?
: আনারের মা আমি !
: জ্বি স্যার বলেন !
ন‌ওশাদ ভেবে পাচ্ছে না আসলে ফোন টা কেন দিল সে ! আশ্চর্য তো , সে কি হেরার খোঁজ নিতে চাইছে ? নিজের কাছেই তার নিজের কাজ কর্ম অদ্ভুত ঠেকছে আজ !
: স্যার !
: হ্যাঁ আব্বা র কি অবস্থা দুপুরে খেয়েছে !
: জ্বি স্যার, অনেক আগেই । এখন ঘুমায় !
: ঠিক আছে !
: স্যার একটা সুন্দর ম্যাডাম আসছিল অনেক জামা কাপড় নিয়া নতুন আম্মার জন্য ! বলল আপনি পাঠাইছেন ।
: হুম !
: উনি জোর ক‌ইরা নতুন আম্মা রে সঙ্গে নিয়া গেছে !
: কোথায় ? ন‌ওশাদ অবাক হলো!
: পার্লারে !
: কী ?
: নতুন আম্মা যাইতে চায় নাই বারবার বলছে আপনি না বললে কোথাও যাবে না ! ম্যাডাম বলল আপনি ই নাকি পাঠাইছেন !
: আচ্ছা ঠিক আছে !
ন‌ওশাদ ফোন নামিয়ে রাখলো ! এসব রেজোয়ান এর কাজ ! বেটা হাস্যকর একটা ঘটনা ঘটিয়েই ছাড়বে !

সন্ধ্যায় ন‌ওশাদ জীনাত কে কল করলো !
: হ্যালো জীনাত !
: জ্বি স্যার !
: তুমি কোথায় ?
: স্যার ম্যাডামকে নিয়ে আমি একটা পার্লারে আছি ! আমাদের কাজ অলমোস্ট শেষ !
: ঠিক আছে । উনাকে বাসায় দিয়ে আমাকে জানিও !
: জ্বি স্যার !
ন‌ওশাদ রেজোয়ান এর কাজ দেখে খুব ই অস্বস্তি ফীল করছে !
কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার আজ তার বাসায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে !
গীতি যাওয়ার পর এরকম কখনো হয়নি । এমন‌ও হয়েছে অফিসের সবাই চলে গেছে সে আর শোয়েব কিংবা কখনও একা সে কাজে ডুবে থেকেছে !
তাহলে আজ কেন সন্ধ্যা হতেই বাসায় ফিরতে মন চাইছে ?
আজ কেন বাসাটা হাতছানি দিয়ে ডাকছে তাকে ?

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here