তবু সুর ফিরে আসে পর্ব-২৫

0
1738

#তবু_সুর_ফিরে_আসে

২৫ তম পর্ব

নিশাল কলেজ থেকে বাসায় এলে ঘুম থেকে উঠে পড়ে কলেজের মতোই সকাল সকাল। একবার ঘুম ভেঙ্গে গেলে বিছানায় পড়ে থাকতে তার ভালো লাগে না। এই স্বভাবটা সে তার পাপার কাছ থেকে পেয়েছে ! শীতের সকাল বলেই আজ কমফোর্টারের নিচে শুয়ে একটা ব‌ই নিয়ে পড়ছে ! হঠাৎ দরজায় হালকা শব্দ হতেই ভাবলো আনারের মা এসেছে !
এসো দরজা খোলা !
হেরা এসে ঢুকলো ঘরে !
আন্টি তুমি! আমি ভেবেছি আনারের মা !
উঠে গেছো তাহলে চলো পাপার সঙ্গে ব্রেকফাস্ট করো ! রাতে ব্যাঙ্কক চলে যাবে পাপা তোমার সঙ্গে খেতে চাইছে !
ঠিক আছে আসছি তুমি যাও !
হেরা নিশালের ঘর থেকে বের হয়ে এলো !
ডাইনিং এ শুধু ওরা তিনজনই ! বুবু , দুলাভাই আরো পরে খাবেন !
সরি নিশাল তোমাকে রেখে যেতে হচ্ছে আমাকে , ন‌ওশাদ নিশালের দিকে তাকিয়ে বলল !
সরি র কি আছে পাপা তোমার কাজ আছে তুমি যাবে !
হেরা নিশালের প্লেটে খাবার তুলে দিতে দিতে বলল, আবার কবে ছুটি হবে তোমার ?
একবারে পরীক্ষা দিয়ে আসব । তখন অনেকদিনের ছুটি থাকবে আন্টি !
ন‌ওশাদ বলল,তখন আমরা কোথাও ঘুরতে যাব নিশাল কেমন !
ঠিক আছে পাপা !
কোথায় যেতে চাও ?
ঠিক করিনি পাপা আগে শেষ হোক পরীক্ষা!
আমরা তিনজন ফুপির বাসায় গিয়ে ওদের সারপ্রাইজ দিবো কি বলো ?
ফ্লোরিডায় ! খারাপ বলোনি ফুপি খুব খুশি হবে পাপা !
হুম ! এখন বলো না আবার তোমার ফুপিকে !
ঠিক আছে।
নিশাল তো অনেক পড়াশোনা করে ,বাসায় যতক্ষণ থাকে শুধু পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত দেখি , হেরা বলল!
আন্টি কিছু করার নেই ! এবার বের হতে ইচ্ছে করেনি খুব একটা বন্ধুরা সবাই পড়া নিয়ে ব্যস্ত !
বুঝলে হেরা আমার খুব ইচ্ছে নিশাল কে ভার্সিটিতে ভর্তি করার আগেই বিয়ে করিয়ে দেই চোখের সামনে দেখি কিভাবে ছেলে আর ছেলের ব‌উ পাখির মত উড়ে বেড়ায় ! ছোট্ট পাখির মত একটা ব‌উ আনব !
এসব কি বলো পাপা আশ্চর্য ! নিশাল লজ্জা পেয়ে বলল!
সিরিয়াসলি বলছি তোমার পছন্দের কেউ আছে নিশাল ?
না পাপা আমি বিয়ে করবো না !
এটা আবার কি কথা বিয়ে করবে না ?
পাপা পড়াশোনা শেষ করার আগে বিয়ে করব না ! আর আমার পছন্দের কেউ নেই ! তুমি না কি যে বলো পাপা!
তোমার মত বয়সে তোমার মাম্মার সঙ্গে আমার সিরিয়াস প্রেম ছিল ! হাসতে হাসতে বলল ন‌ওশাদ।
জানি শুনেছি এই কথা !
শোন বাচ্চা তোমার পছন্দের কাউকে পেলে আমাকে নির্দ্বিধায় বলবে আমি মেয়ের ফ্যামিলির কাছে বিয়ের প্রোপোজাল পাঠাব !
তাহলে তো তোমাকে বলাই যাবে না ! প্রেম করার আগেই বিয়ে করিয়ে দিবে তুমি ! নিশাল হাসতে হাসতে উঠে চলে গেল !
ন‌ওশাদ পেছন থেকে বলছে, তার মানে কেউ আছে নিশাল !
না পাপা বিলিভ মি ! তুমি চা খাও !
আরে তোমার খাওয়া শেষ হয়ে গেল নিশাল , হেরা অবাক হয়ে বলল!
আপনার জন্য না খেয়ে লজ্জা পেয়ে ছেলেটা চলে গেল !
নিশাল চলে যেতেই ন‌ওশাদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলল, এভাবে ছেলের সঙ্গে বন্ধুর মতো কথা বলব সত্যি ভাবিনি হেরা !
আপনাদের দুজনের কথা শুনে খুব মজা পাচ্ছিলাম ! আপনি এত ছোট ছেলেকে বিয়ে করিয়ে দিবেন?
হুম সমস্যা কি ?
আশ্চর্য !
শোন ছেলে আর্মি তে যাওয়ার প্ল্যান করছে যেকোনো উপায়ে হোক আমি যেতে দিব না ! ভাবলাম কাউকে পছন্দ করে থাকলে তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে আর্মিতে যাওয়ার ভূত ঘাড় থেকে নামাব !
আপনার কথার অবাধ্য সে হবে না ! আপনি যখন না করেছেন সে শুনবে!
তুমি জানো না এসে যদি বলে তাঁর মাম্মার ইচ্ছে ছিল ছেলে আর্মি অফিসার হবে তখন আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে ফেলতে পারে! সঙ্গে ওর দুই খালা তাল দিবে !
এবার সেরকম কিছু করবে না হয়তো !
কি জানি !
ন‌ওশাদ অফিসের জন্য বের হয়ে যাচ্ছে ! তোমার চোখ কেমন লাল লাগছে হেরা !
তাই খেয়াল করিনি তো !
হুম ঘুম হয়নি ঠিক মতো ?
হয়েছে কিন্তু কয়েকবার ঘুম ভেঙ্গে গেছে!
তাহলে দুপুরে ঘুমিয়ে নিও ! আমি আসছি !
জ্বি !
হেরা গাড়ি পর্যন্ত এলো ন‌ওশাদের সঙ্গে !

দুপুর থেকে বাসাটা খুব চুপচাপ! নিশাল বন্ধুর বাসায় গিয়েছে ! বুবু আর দুলাভাই তাদের এক ছেলের শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছে রাতে আসবে। এলিন, নাহিন ভার্সিটিতে! হেরা নিজের ঘরে তার সোফায় কমফোর্টার গায়ে শুয়ে আছে!
কিছুক্ষণ পর আনারের মা এসে ঢুকলো ঘরে !
আম্মা আপনার কি শরীর খারাপ ?
ঠান্ডা লাগছে খুব, শরীর কেমন ব্যথা ব্যথা ও করছে ! কেন?
আপনার চোখ তো লাল হয়ে আছে!
জ্বর আসবে কিনা বুঝতে পারছি না !
তাহলে ঘুমান !
বাসাটা কেমন খালি লাগছে ! ভালো লাগছে না আনারের মা !
আমার অভ্যাস আছে এই বাসা তো অনেক বছর ধ‌ইরা খালিই দেখতাছি ! আপনে আসার পর এখন অন্যরকম লাগে!
সব লোকজন আছে তাই তোমার ওরকম লাগছে !
না আম্মা , আপনে হ‌ইলেন ঘরের সৌন্দর্য আপনে আছেন তাই ঘরটা সুন্দর বুঝছেন ! এখন ঘুমান আমি যাই !
ঠিক আছে যাও। নিশাল ফিরে আসলে আমাকে ডেকো!

হেরা ঘুমিয়েছে অনেক্ষণ ! পারুলের ডাকে তার ঘুম ভাঙলো !
আম্মা উঠেন বীথি খালাম্মা আসছে !
হুঁ কে এসেছে ?
বীথি খালাম্মা আপনারে ডাকে !
তুমি যাও আমি আসছি !
পারুল ছুটতে ছুটতে চলে গেল। বীথি আসলে সে খুব এক্সাইটেড থাকে।
হেরা শরীরে ভালোই জ্বর অনুভব করছে ! মাথা তুলে দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছে ! চোখে মুখে পানি দিয়ে সে রুম থেকে বের হয়ে এলো তারপরও !
বীথি লিভিং রুমে বসে চা খাচ্ছে আনারের মা আর পারুল দাঁড়িয়ে আছে পাশে ! তার মেয়েরাও এসেছে সঙ্গে ! হেরা রুমে ঢুকতেই বীথি বলে উঠলো,
কি খবর হেরা এই অবেলায় ঘুমাচ্ছো যে ! রাতে দুলাভাই ঘুমাতে দেয়না বুঝি ?
হেরা চুপ করে আছে।
আনারের মা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, আম্মার ঠান্ডা লাগছে তাই শরীর খারাপ খালাম্মা !
তোমার কি ঘন ঘন ঠান্ডা লাগে নাকি ?
আমার এজমার সমস্যা আছে তাই ঠান্ডা খুব জলদি কাবু করে ফেলে আপু !
নিশাল কোথায় আনারের মা ডাকো ওর খালামনি এসেছে হেরা আনারের মা কে বলল !
আম্মা ভাইয়া এখনো আসে নাই বন্ধুর বাসায় !
ড্রাইভার আছে তো সঙ্গে ?
হুম সবুজ আছে আপনে চিন্তা ক‌ইরেন না !
তাহলে ফোন দাও খালামনি আসছে খবর দাও !
বীথি বলল,হেরা আমি নিশালের কাছে আসিনি তোমার সঙ্গে কাজ আছে আমার !
জ্বি আপু বলেন !
নিশালের পরীক্ষা যখন চলবে তখন ওর জন্মদিন থাকবে ও তো আসতে পারবে না তাই ঠিক করেছি ওর বার্থডে গিফট টা কিনে সঙ্গে দিয়ে দিব !
ওর বার্থডে কবে ?
ফেব্রুয়ারি তে !
তুমি চলো তুমি কোন গিফট দিবে না ছেলেটাকে ?
গিফট তো দিতেই হবে কিন্তু এখন কিভাবে যাবো ?
কেন কি সমস্যা ?
উনাকে তো বলিনি কিছু আর আমার কাছে টাকাও নেই !
তুমি ফোন দাও দুলাভাই কে বলো আমার সঙ্গে যাচ্ছো টাকা নিয়ে চিন্তা করো না আমি সঙ্গে আছি তোমার !
হেরা কিছু বলার আগেই বীথি কর্ডলেস এ ন‌ওশাদের নাম্বার ডায়াল করে এগিয়ে দিল কথা বলো দুলাভাই এর সঙ্গে ! বলবে তুমি যেতে চাচ্ছো খুশি হবে ! যাও রুমে যাও কথা বলে এসো !
হেরা ফোন হাতে নিয়ে নিজের রুমে চলে এলো!
হ্যালো !
আমি হেরা !
কি খবর তোমার খুব ব্যস্ত আছি তাড়াতাড়ি বলো কি বলবে ?
বীথি আপু এসেছে !
হুম সমস্যা কি ?
নিশালের বার্থডে গিফট কিনতে যেতে চাচ্ছে আমাকে সঙ্গে যেতে বলছে !
বুঝলাম না ! ওর বার্থডে তো অনেক দেরি আছে !
সেটাই, বলল তখন পরীক্ষা থাকবে এর মধ্যে নিশাল তো আর আসবে না বাসায়!
তোমাকে বীথি সঙ্গে নিতে চাইছে ?
হুম !
অবাক হচ্ছি !
এখন কি করব বলুন ?
তোমার ইচ্ছে হলে যাও !
আপনি বলুন কি করব ?
ঠিক আছে যাও ! আমার আলমারির ডান পাশের ড্রয়ার খুলেই দেখবে একটা লেদারের ওয়ালেট আছে সেটাতে কার্ড আছে সেখান থেকে যেকোন একটা কার্ড নিয়ে যাও ! চিনো তুমি কার্ড ?
দেখেছি সুমনা ভাবির কাছে !
আচ্ছা কার্ড তুমি ব্যবহার করতে পারবে না পিন কোড ভুলে যাবে ! ওখানে একটা খামে টাকাও আছে সবটা নিয়ে যাও । যা ইচ্ছে খরচ করতে পারো !
নিশালের জন্য কি গিফট কিনব বলুন ?
তোমার যা ভালো লাগে ।
আমি তো জানি না ওর কি পছন্দ !
বীথির সঙ্গে যাচ্ছো তো ওকে জিজ্ঞেস করে নিও ! ন‌ওশাদ হেসে বলল,আমি নিশালের জন্য দারুন একটা গিফট আনাচ্ছি ! ইপিফোনের একটা গিটার ! খুব খুশি হবে তাই না !
হুম !
ঠিক আছে রাখি এখন !
বাসায় ফিরে ফোন দিবে আমাকে আমি অপেক্ষায় রইলাম !
জ্বি আচ্ছা !
হেরা ফোন কেটে রেডি হয়ে গেল ! যাওয়ার আগে জ্বরের ওষুধ খেয়ে নিলো !

গাড়িতে উঠে বীথি বলল, দুলাভাই রাগ হয়নি তো আমার সঙ্গে যাচ্ছো দেখে !
না রাগ হবে কেন ?
না তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি রাগ হতেই পারে !
না । আমাকে বলল, নিশালের কি পছন্দ আপনার কাছ থেকে জেনে নিতে !
ঠিক আছে !
বীথি হেরা কে নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্কে এসে ঢুকলো ! বাচ্চাদের পারুল আর আনারের মায়ের কাছে রেখে এসেছে সে !
আগে কখনো এখানে এসেছো তুমি হেরা ?
জ্বি না আপু !
অনেক বড় শপিং মল এটা ! ঘুরতে ঘুরতে আমি‌ই হারিয়ে যাই বীথি হেসে বলল !
আমার ভয় লাগছে আপু !
ভয়ের কি হলো আমি আছি সঙ্গে ! এখানে কারো কাছে সাহায্য চাইবে না ঢাকার মানুষদের তো চিনো না যখন বুঝবে তুমি বিপদে পড়েছো এমনি তোমাকে অসহায় ভেবে ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।
এক্সেলেটরে উঠতে পারো ?
জ্বি সুমনা ভাবি শিখিয়ে দিয়েছেন একদিন।
ভালো তো !
বীথি নিশালের জন্য পারফিউম কিনলো ! গেঞ্জি কিনলো ! শার্ট কিনলো ! হেরা কে বলল কি কি কিনলে খুশি হবে নিশাল। সেও এক গাদা ড্রেস কিনলো ! দামী দেখে একটা ঘড়ি কিনলো !
প্রায় দুই ঘণ্টা শপিং মলে ঘুরলো ওরা ! হেরার শরীর খারাপ লাগছে তাও সে বীথির পাশে পাশে চুপচাপ হাঁটছে ! জ্বর টা মনে হয় বেড়েছে মাথা ব্যথা করছে !
একটা দোকানের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে বীথি কিছু একটা কিনে আবার বের হয়ে এলো !
হেরা চলো বাসায় ফিরে যাই , তার আগে আমি একটু ওয়াস রুমে যাব ঠিক আছে !
জ্বি !
শপিং মল বন্ধ হ‌ওয়ার সময় প্রায় হয়ে গেছে বীথি একটা মোটামুটি নির্জন ওয়াস রুমের সামনে শপিং ব্যাগ গুলো হেরার হাতে দিয়ে বলল, আমি না আসা পর্যন্ত কোথাও যাবে না এখানে দাঁড়িয়ে থেকো ! এই জুসটা খেতে থাকো আমি আসছি ! বীথি হেরার হাতে একটা জুসের বোতল ধরিয়ে দিয়ে ওয়াস রুমে ঢুকে গেল !

হেরা বীথির জন্য ওয়াস রুমের সামনে অপেক্ষা করছে । এখন জুস খেতে ইচ্ছে করছে না তার কিন্তু না খেলে বীথি আপু রাগ করতে পারে !সে জুসটা খেলো । কেমন একটা স্বাদ অর্ধেক টা খেয়ে সে বোতল টা পাশে রাখা ডাস্টবিনে ফেলে দিল ! হেরা তাকিয়ে আশেপাশটা দেখছে।
এদিকে দোকান সব গুলোই বন্ধ তাই লোকজন ও কম ! জায়গাটা যথেষ্ট নির্জন। এত বড় কোন মার্কেট হয় সে কোন দিন ভাবেইনি !
পাঁচ মিনিট ,দশ মিনিট করে আনুমানিক বিশ মিনিট হ‌ওয়ার পর সে নিজে ওয়াস রুমে ঢুকলো ! কিন্তু বীথিকে পেলো না কোথাও !
শপিং মল বন্ধ হয়ে যাবে লোকজন ও নেই এদিক টায় ! হেরা ওয়াস রুমের বাহিরে এসে দাঁড়ালো আবার ! আশেপাশে তাকাচ্ছে বীথি হয়তো আশেপাশের কোন দোকানে গেছে ! সে জায়গাটা থেকে যেতেও পারছে না আবার বুঝতে পারছে না কি করবে ?
ওর খুব অস্থির লাগছে !
হেরা প্রায় এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছে সব শপিং ব্যাগ নিয়ে কিন্তু বীথির কোন দেখা নেই !
ওর মনের মধ্যে ভয় করছে হারিয়ে গেলাম নাকি ! আপুকে কিভাবে খুঁজে বের করবো ? বাসায় কিভাবে যাব ?
হেরা কি করবে বুঝতে পারছে না ? ওর কাছে কোন মোবাইল নেই, ন‌ওশাদের নাম্বার সে জানে না । বাসার ফোন নাম্বার এমনকি বাসার ঠিকানাটা ও তো সে জানে না ! শুধু ন‌ওশাদের গাড়ির নাম্বার টা সে জানে ! তাহলে কি সে বাসায় ফিরতে পারবে ?
হেরা অস্থির হয়ে আশেপাশে ছুটাছুটি করছে ! ওর শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে গেছে ইনহেলার টাও তো সঙ্গে নেই। খুব পানি পিপাসা পেয়েছে কিন্তু পানি কিনবে কিভাবে দোকান কোথায় ?
হেরা ছুটতে ছুটতে যাচ্ছে শপিং মলের যেদিকটায় তারা গাড়ি থেকে নেমেছে সেদিকে ! কিন্তু তার কাছে সব দিক‌ই এক রকম লাগছে ! কোন দিক দিয়ে তারা মার্কেটে ঢুকেছিল সে বুঝতেই পারছে না ! বীথি আপু বলেছে কারো কাছে হেল্প না চাইতে ও বিপদে পড়েছে বুঝলে লোকজন তার ক্ষতি করবে ! ঠিক কথাই বলেছে ‌। হেরা কাউকে কিছু না জিজ্ঞেস করে মার্কেট থেকে বের হ‌ওয়ার গেট টা খুঁজছে!
নিজেকে খুব অসহায় লাগছে তার , মনে হচ্ছে সে ন‌ওশাদের কাছে হয়তো আর ফিরে যেতে পারবে না কোনদিন !
অনেকক্ষণ পর সে একটা গেটে এসে দাঁড়ালো কিন্তু এটা তো সেই গেট না ! এদিক দিয়ে তো ওরা মার্কেটে ঢুকেনি ! হেরা আবার শপিং মলের ভেতরে ঢুকে গেল !

রাত সোয়া নয়টার দিকে শোয়েবের মোবাইল এ বীথি ফোন দিলো !
শোয়েব তখন‌ও অফিসে । মামা ভোর রাতের ফ্লাইটে ব্যাঙ্কক যাবে তাই আজ অনেকক্ষণ অফিস করছে ! মাসের শেষ দিকে অবশ্য প্রতিদিন ই অফিস থেকে ফিরতে ওদের দেরি হয় !
বীথিরা দুই বোন বিভিন্ন দরকারে ওকে ফোন দেয় ! এরকমই কোন কিছু হবে ভেবে শোয়েব ফোনটা রিসিভ করলো।
হ্যালো খালামনি বলেন !
শোয়েব তুমি কোথায় ?
আমি তো অফিসে !
একটা বিপদে পড়েছি !
বলেন খালামনি !
তোমার নতুন মামি হেরাকে নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্কে গিয়েছিলাম ।
বুঝলাম তারপর !
ওকে ওয়াস রুমের সামনে দাঁড় করিয়ে ওয়াস রুমে ঢুকেছি বের হয়ে দেখি ও নেই ! অনেকক্ষণ খুঁজলাম পাই নাই !
কি বলছেন খালামনি এসব ! শোয়েব আর্তনাদ করে উঠলো!
হ্যাঁ দারুন বিপদে পড়ে গেছি !
আপনি কোথায় এখন ?
আমি অনেকক্ষন অপেক্ষা করে তোমাদের বাসায় চলে এসেছি মেয়েদের রেখে গেছি ওরা কাঁদছে !
খালামনি মামির সঙ্গে তো মনে হয় মোবাইল ও নেই !
আমি তো জানি ই না ওর যে মোবাইল নেই ! এখন কি করব বলো শোয়েব ?
খালামনি কতক্ষণ আগের ঘটনা এটা ?
আমি এক ঘন্টা খুঁজে তারপর এসেছি বাসায় ! এই ধরো দেড় ঘণ্টা আগে ।
আপনি এখন আমাকে ফোন দিচ্ছেন আপনার উচিত ছিল সঙ্গে সঙ্গে আমাকে নয়তো মামাকে জানানো !
আমি নিজেই নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম !
আপনি বুঝতে পারছেন না খালামনি এটা কত বড় ঘটনা ! মামি মামাকে ফোন দেয় নাই শিওর কারণ মামা অফিসে এখনও !
আমি কি করি এখন বলো তো ?
আপনি কি করবেন তার আগে আমি কিভাবে মামাকে এই কথা বলব সেটা চিন্তা করছি ! সর্বনাশ হয়েছে একটা আপনি বুঝতে পারছেন না !
তুমি আমাকে ভয় দেখিও না শোয়েব !
ভয় দেখাব কেন ! মামি কে কিভাবে খুঁজব সেটা আগে চিন্তা করি ! আমি ফোন রাখছি ।
আমাকে জানিও !
কি হয়েছে খালামনি?
ফোন টা কাটতেই নিশাল পিছন থেকে ডাক দিলো বীথিকে !
খালামনি।
নিশাল আব্বু একটা ঝামেলা হয়ে গেছে !
কি ? নিশাল চিন্তিত মুখে তাকিয়ে আছে বীথির দিকে !
হেরাকে নিয়ে শপিং এ গিয়েছিলাম যমুনাতে ওয়াস রুমের বাহিরে দাঁড় করিয়ে ওয়াস রুমে ঢুকেছি বের হয়ে দেখি ও নেই !
নেই মানে ?
কোথাও খুঁজে পেলাম না !
কি বলছো এসব তুমি খালামনি ?
দেখো তো গাধা মেয়ে কোথায় চলে গেছে ?
আন্টির কাছে কোন মোবাইল নেই, পাপার নাম্বার জানে কিনা জানি না ! এই শহর উনি চিনে ও না ! ও মাই গড ! পাপা জানে ? নিশাল উদ্বিগ্ন হয়ে তাকিয়ে আছে বীথির দিকে।
শোয়েব কে ফোন দিলাম মাত্র !
তুমি আন্টিকে ওখানে রেখে চলে এলে সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিলে না কেন খালামনি ?
আনারের মা , পারুল সবাই নিশালের চিৎকার শুনে দৌড়ে এলো !
কি হয়েছে ভাইয়া ?
আন্টি শপিং মলে হারিয়ে গেছে আনারের মা !
ও আল্লাহ আম্মা তো বাসা চিনে না আইব কেমনে ! স্যার রে ফোন দাও ভাইয়া ! আনারের মা আর্তনাদ করছে !
চুপ কর আনারের মা ! বীথি ধমক দিলো !
ওকে ধমকে তো কিছু হবে না খালামনি আন্টিকে খুজতে যেতে হবে এখন !
তোমার পাপা খুঁজবে তোমাকে যেতে হবে না !
পাপা কে সঙ্গে সঙ্গে তোমার ফোন দেয়া উচিত ছিল ! নিশাল নিজের ঘরের দিকে দৌড় দিল মোবাইল টা আনতে !
ফুফুআম্মারে ফোন দে‌ও ভাইয়া বলে আনারের মা নিশালের ঘরের দিকে দৌড় দিল !
বীথি যুথীকে ফোন দিল কথা বলতে বলতে পোর্চের নিচে এসে দাঁড়ালো !

শোয়েব বীথির সঙ্গে কথা বলে ন‌ওশাদের রুমের দিকে দৌড়ে এসে ঢুকলো !
ন‌ওশাদ অফিসে তার রুমে আরমান আর ওদের হেড অব একাউন্স আরাফাত সাহেবের এর সঙ্গে কিছু একটা নিয়ে হাসাহাসি করছে !
শোয়েব কে দেখে ওর দিকে তাকালো ! কিছু বলবে ?
মামা মামি কি আপনাকে ফোন দিয়েছে ?
হেরা না তো ! কেন তোমাকে কল দিয়েছে ?
মামা একটা ঘটনা ঘটেছে ?
ন‌ওশাদ চিন্তিত মুখে তাকালো শোয়েবের দিকে , আরমান ও তাকিয়ে আছে !
শোয়েব কি ঘটনা ? ন‌ওশাদ সোজা হয়ে দাঁড়ালো !
মামা বীথি খালামনি মাত্র ফোন দিয়েছে আমাকে, মামিকে নিয়ে যমুনা তে গিয়েছিল !
হুম আমি জানি আমাকে বলে গেছে হেরা ! কি হয়েছে ?
মামিকে ওখানে হারিয়ে ফেলেছে খালামনি !
কি ? ন‌ওশাদ চিৎকার দিয়ে উঠলো !
মামা দেড় ঘণ্টা আগের ঘটনা !
ন‌ওশাদের মেরুদন্ড দিয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল ! সে চুপ করে আছে !
মামা ! মামা !
হুম !
এখন কি করব আমরা !
বীথি কোথায় ?
খালামনি আমাদের বাসায় !
ন‌ওশাদ কঠিন গলায় বলল,ও হেরা কে হারিয়ে এখন বাসায় গিয়ে বসে আছে আর দেড় ঘণ্টা পর জানাচ্ছে সবাই কে ! বুঝতে পেরেছি !
আরমান চিন্তিত গলায় বলল,ভাইয়া চলো তাড়াতাড়ি আমরা যমুনা তে যাই !
হুম ! ন‌ওশাদ মোবাইল টা হাতে নিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বের হলো ! ওর সঙ্গে সঙ্গে আরমান আর শোয়েব ও আসছে !
ভাবি তোমার নাম্বার জানে না ?
জানলে এতক্ষণে ফোন দিতো ! তারমানে জানে না আরমান। হেরা আমার নাম্বার, বাসার ফোন নাম্বার, বাসার ঠিকানা কিছুই জানে না ! সে এই শহরে আমার নামটা ছাড়া কিছুই জানে না আরমান কিছুই জানে না ন‌ওশাদ চিৎকার দিয়ে উঠলো!
ও গড ।
ভাইয়া টেনশন করো না আমরা যাচ্ছি হয়তো ভাবি গেটের কাছে অপেক্ষা করছে!
ন‌ওশাদ লিফট দিয়ে নামতে নামতে রেজোয়ান কে কল করলো ঘটনা বলল! রেজোয়ান ও আসছে যমুনা তে!
ওরা যমুনা তে যখন গিয়ে পৌঁছাল শপিং মল অনেকক্ষণ আগেই বন্ধ হয়ে গেছে ! ন‌ওশাদ আসার পথেই যমুনার কতৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ! তারা তাদের সিকিউরিটির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছে বলল !
ন‌ওশাদ রা সিকিউরিটি র অফিসে গিয়ে ঢুকতেই একজন অফিসার ছুটে এলো ! আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম স্যার । আমাকে আমাদের স্যার ফোন দিয়েছেন আপনাকে সব ধরনের হেল্প করতে বলেছেন!
স্যার আমাদের কাছে এমন কোন ইনফরমেশন নেই মার্কেটে কেউ কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না ! আজ এরকম কোন এনাউন্সমেন্ট ও করতে হয়নি আমাদের !
মার্কেটের ভেতরে কেউ রয়ে গেছে এমন হ‌ওয়ার সম্ভাবনা কি আছে ? শোয়েব বলল!
স্যার সেরকম হলে আমাদের সিকিউরিটি গার্ড রা দেখতো ! সব ওয়াস রুম , নামাজের স্থান মার্কেট বন্ধ করার আগে চেক করা হয় ।
আপনাদের সিসি ক্যামেরা দিয়ে এক্সিট পয়েন্ট গুলো তো মনিটর হচ্ছে আমাকে প্লিজ তার ফুটেজ গুলো দেখান কাইন্ডলি ,ন‌ওশাদ বলল !
জ্বি স্যার !
ঘটনা কয়টার স্যার ?
ঘটনা আটটার দিকের !
দেখছি !
রেজোয়ান ন‌ওশাদের পাশে এসে দাঁড়ালো ! পুলিশের সঙ্গে কথা বলা দরকার ন‌ওশাদ !
আমি আইজিপির সঙ্গে কথা বলি কি বলিস ?
হ্যাঁ কল দে !
ন‌ওশাদ পুলিশের আইজিপি, রেব এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ডিএমপি কমিশনার সবার সঙ্গে কথা বলছে ! এক অজানা আতঙ্কে ওর মন ভীত হয়ে গেছে।
সিকিউরিটির লোকজন সিসিটিভির ফুটেজ দেখে বের করলো হেরা একবার এক্সিট দিয়ে বের হয়ে আবার সঙ্গে সঙ্গে ঢুকেছে মার্কেটের ভিতরে ! আবার আধ ঘন্টা পর সে আরেক টা এক্সিট দিয়ে বের হচ্ছে এবার আর ঢুকেনি মার্কেটে! দাড়িয়ে আছে গেটের পাশে ! প্রায় দশ মিনিট তারপর আর তাকে কোন ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে না ! এটা বসুন্ধরা র দিকের এক্সিট !
ন‌ওশাদ ফুটেজ টা দেখছে । অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে সে ফুটেজ টার দিকে !
রেজোয়ান পাশে এসে ন‌ওশাদের ঘাড়ে হাত রাখলো ! চিন্তা করিস না আমরা ঢাকা শহর ওলটপালট করে হলেও ওকে খুঁজে আনব !
ফুটেজ টা দেখেছিস রেজোয়ান ,ওর মুখটা কতটা আতংকিত দেখাচ্ছে! অসহায়ের মত এদিক ওদিক তাকাচ্ছে ! বুকের সঙ্গে শপিং ব্যাগ গুলো ধরে আছে ! ও আমাকে খুঁজছে রেজোয়ান ! ও আমাকে খুঁজছে! ন‌ওশাদ আর্তনাদ করে উঠলো!
হেরা আমার নামটা ছাড়া এই শহরে কিছুই জানে না ! কিছুই না !
এই রাতে ওর সঙ্গে কি কি হয়ে যেতে পারে ভেবেই আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে রেজোয়ান!
তুই এভাবে ভেঙে পড়লে হবে পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে ! রেব কে জানানো হয়েছে দেখবি কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা হেরাকে পেয়ে যাব !
রেজোয়ান আমার বুকের ভেতরে খুব ভয় হচ্ছে ! দোস্ত কিছু একটা কর ! তাড়াতাড়ি হেরা কে আমার কাছে খুঁজে এনে দে !
আমি কিভাবে এত বড় ভুল টা করলাম বীথির সঙ্গে ওকে যেতে দিলাম ! ওর কাছে একটা মোবাইল নেই , আমার নাম্বার‌ও জানে না ! এত বড় শহরে কোথায় পাব ওকে ?
বেশি নার্ভাস হয়ে গেলে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় ওর সঙ্গে হয়তো ইনহেলার টাও নেই ! এই শীতের রাতে ও কোথায় আছে ?
রেজোয়ান কিছু একটা কর দোস্ত আমার কাছে হেরা কে এনে দে প্লিজ !
রেজোয়ান ন‌ওশাদ কে আজ পঁচিশ বছরের উপর চিনে ! জীবনের কত পরিস্থিতি তে পড়তে দেখেছে কিন্তু আজকের মতো এতটা অসহায় , কাতর হতে দেখেনি কখনো !
কি করবে বুঝতে পারছে না রেজোয়ান ! রাত যত বাড়ছে ততই দুশ্চিন্তা বাড়ছে !

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here