তবু সুর ফিরে আসে পর্ব ১১

0
504

#তবু_সুর_ফিরে_আসে

১১তম পর্ব

ন‌ওশাদ হেরার আঁচড়ের দাগটা শাড়ি দিয়ে নিজেই ঢেকে দিলো । তারপর গলার গয়না টা ঠিক করে দিলো ! হেরার বন্ধ চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়ছে তখনো ! ন‌ওশাদ হেরার গাল দুটো নিজের দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে তাকিয়ে দেখছে ! এত সুন্দর , পবিত্র একটা মুখ চোখ ভরে দেখে নিচ্ছে সে!
তার খুব ইচ্ছে করছে হেরার চোখের এই ঝড়ে পড়া স্ফটিকের মত পানিটা ঠোঁট দিয়ে শুষে নিতে ! এই প্রথম সে হেরার মুখটা এত কাছ থেকে দেখছে! এই প্রথম হেরা কে এত টা আবেগ দিয়ে সে স্পর্শ করে আছে! কি সুন্দর পাতলা দুটো ঠোঁট ! ঠোঁটের নিচে একটা ছোট্ট তিল! ঠোঁটের সঙ্গে সঙ্গে তিলটাও কাঁপছে ! ন‌ওশাদ এর খুব খুব ইচ্ছে করছে তিলটাতে চুমু খেতে !
নিজেকে সংযত করলো সে ! হাত দিয়ে হেরার চোখের পানি মুছে দিল! প্লিজ হেরা কাঁদে না! মনে মনে বলল, ঘটনা গুলো ঘটেছিল বলেই আমি তোমার জীবনে এসেছি হেরা !
সব কথা তো বলা যায় না! নিজেকে সামলে ন‌ওশাদ বলল,
কান্না বন্ধ করো ! আমি তোমার এই দাগ মুছে দিব হেরা ! প্লাস্টিক সার্জারি বলো স্ক্রীন গ্রাফটিং যা লাগে করিয়ে এই দাগ তোমার শরীর থেকে তুলে ফেলব ! যত টাকা লাগুক দেশে না হলে প্রয়োজনে দেশের বাহিরে নিয়ে যাব ! তোমাকে প্রতিদিন এই দাগ দেখে ভয় বা লজ্জা কোনটাই পেতে হবে না !
তাকাও আমার দিকে !
হেরা চোখ খুলে তাকালো !
শরীরের এই দাগ মুছে দেয়া যাবে আমার চিন্তা হচ্ছে তোমার মনের ভেতরের দাগটা নিয়ে, কষ্টটা নিয়ে ! তুমি দেখো একদিন সেই দাগ ,সেই কষ্ট‌ও আমি মুছে দিব অনেক অনেক আনন্দ দিয়ে !
প্রমিজ হেরা !
তুমি আমাকে বিশ্বাস করছো তো ?
হেরা মাথা ঝাকালো !
এখন তুমি কান্না বন্ধ করো ! এভাবে কাঁদলে তোমার শ্বাস কষ্ট আবার শুরু হয়ে যেতে পারে ! গেস্ট রা আসবে এখন এত কান্নাকাটি করলে তোমার সুন্দর চোখ গুলোর সৌন্দর্য কমে যাবে ! ন‌ওশাদ হেরার চোখ দুটো হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিল ! কাউকে সে বলতে পারে না এই দুটো চোখ তার ভেতরটা স্পর্শ করে ! একদম তার বুকের ভেতরে গিয়ে নাড়া দেয় ! এই চোখ তাকে অনেক বছর পর বেঁচে থাকার ইচ্ছে টা জাগিয়ে তুলছে আবার! অনেক বড় মায়ায় বেঁধে ফেলছে ! ওকে কঠিন এক বন্ধনে জড়িয়ে ফেলেছে এই দুটো মায়া ভরা চোখ!
হেরা তোমাকে শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে! একদম হলুদ একটা গোলাপ ফুল ! তুমি আয়নায় তাকিয়ে দেখো !
হেরা নিজের চোখ মুছলো !
এবার হাসো একটু !
হেরা হাসার চেষ্টা করলো !
এভাবে না সুন্দর করে হাসো , যেভাবে সব সময় হাসো !
হেরা ন‌ওশাদের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করলো আবার!
দরজায় নক করছে আনারের মা!
ন‌ওশাদ ভেতর থেকেই বলে উঠলো , কিছু বলবে আনারের মা ?
মেহমান রা আসছে স্যার !
বসতে বলো আমরা আসছি !
এই গয়না গুলো গুছিয়ে রাখো তারপর চলো আমরা নিচে যাই সবাই এসে গেছে হয়তো!
জ্বি আচ্ছা !
হেরা গয়নার বক্স গুলো ন‌ওশাদের আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখলো!
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চোখ মুছলো আবার! চুল ঠিক করছে যখন তখন ন‌ওশাদ এর মোবাইলে ফ্লোরিডা থেকে তার বড় বোন ফোন দিল!
হেরা তুমি ঠিক হ‌ও আমি একটু বুবুর সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছি! ন‌ওশাদ বারান্দায় গিয়ে বড় বোনের সঙ্গে কথা বলা শুরু করলো!
আজ সে তার বোনকে বিয়ের কথাটা বলে দিল ! মায়ের পরে তার একমাত্র বড় বোন তাকে অনেক আদর, আশ্রয়-পশ্রয় দিয়েছে । ওর সঙ্গে মিথ্যে কথা বলে সে শান্তি পাচ্ছে না !
সব খুলে না বললেও একটা পরিস্থিতি তে পড়ে সে বিয়ে টা করেছে বলল!
তার বড় বোন কোন প্রশ্ন করলো না ওকে, ন‌ওশাদ বিয়ে করেছে এতদিন পরে এতেই তিনি খুশি !
বাবু তুই কাকে বিয়ে করেছিস সেটা বড় কথা না , এত বছর পর তুই একটা সঙ্গী পেয়েছিস এটাই আমার জন্য অনেক! আমাদের সবার চিন্তা তো কমলো ! কেউ একজন তো এসেছে , যে সব কিছুর আগে তোকে নিয়ে চিন্তা করবে !
বুবু নিশাল কে নিয়ে আমার ভয় হচ্ছে , ও কিভাবে রিয়েক্ট করবে ?
চিন্তা করিস না দেখবি প্রথম প্রথম মন খারাপ করলেও ঠিকই এক সময় মেনে নিবে ! তোর আর গীতির ছেলে কখনও কারও উপর রাগ করে থাকতে পারবে বল? তাও নিজের বাবার সঙ্গে! চিন্তা করিস না !
বুবু মেয়েটার বয়স খুব কম !
এসব কোন ব্যাপার না বাবু ! আব্বা কি বলল রে ?
আব্বা র কোন হুঁশ আছে ওকে গীতি ভাবছে !
থাক ভাবুক ! আমি আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি তুই চিন্তা করিস না নিশাল কে নিয়ে !
রাখলাম ফোন বাবু! ভালো থাকিস!
ঠিক আছে!

ন‌ওশাদ রুমে ঢুকে দেখে হেরা রেডি হয়ে আছে!
সরি সরি হেরা ! চলো সবাই বসে আছে আমাদের জন্য!
ন‌ওশাদ আর হেরা রুম থেকে এক সঙ্গে বের হয়ে এলো!
উপর থেকেই সবার হাসাহাসি গল্প শোনা যাচ্ছে!
হেরা ন‌ওশাদ কে বলল,
আমার না লজ্জা লাগছে!
কেন, লজ্জার কি আছে ?
জানিনা কেন ?
সুমনা আর রেজোয়ানের সঙ্গে দেখা হয়েছে তোমার ! আর আমার ছোট ভাই রা আর তাদের ব‌উ বাচ্চারা, সবাই ফ্যামিলি মেম্বার নিজেদের মানুষ! এসো তো লজ্জার কিছু নেই!
ন‌ওশাদ এর ছোট দুই ভাইয়ের ব‌উ খুব ই আধুনিক , নিজের সাজ – সজ্জা , স্ট্যাটাস নিয়ে খুব সচেতন ! একজন হাউজ ওয়াইফ ! আর ডাক্তার ছোট ভাইয়ের বউ সে নিজেও ডাক্তার !
মেঝ ভাইয়ের বউ খুব ফিগার সচেতন তার মোটামুটি দিন কাটে রূপচর্চা আর নিজের জন্য ডায়েট ফুড বানিয়ে ওর নাম নাদিয়া ! আর ছোট ভাইয়ের বউ মিলা ডাক্তারি করতে যতনা পছন্দ করে তার চেয়েও বেশি পছন্দ করে ঘুরতে আর শপিং করতে ! প্রচুর কথা বলে সে ! সারাদিন শাড়ি, ড্রেস, গয়না , কসমেটিকস এর বিভিন্ন পেজ গুলোতে ঘুরে আর অর্ডার করে !
এতক্ষণ সে সুমনা আর নাদিয়ার সঙ্গে কিছুদিন আগে ভুটান ঘুরতে গিয়েছিল সেই গল্প করছিল !
ন‌ওশাদ আর হেরা ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই ছোট ভাই আর তাদের ব‌উ রা সব উঠে দাঁড়ালো!
ন‌ওশাদ হেসে বলল,সরি তোমাদের বসিয়ে রাখলাম এতক্ষণ!
ন‌ওশাদ আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
বাচ্চারা কোথায় ?
ভাইয়া নিশাল নেই তাই নাকি ওরা বোর হবে আসতে চাইলো না , মেঝ ভাই আরমান বলে উঠলো!
এটা কেমন কথা ওরা আসলে আমার তো খুব ভালো লাগে, আব্বাও পছন্দ করে!
এই তোমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই ও হচ্ছে হেরা !
ন‌ওশাদ তার দুই ভাই আর তাদের ব‌উ দের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল হেরাকে !
ওরা সবাই হেরা কে দেখে একটু থতমত অবস্থায় আছে! কম বয়সী শুনেছিল বীথির কাছ থেকে এতটা কম বয়সী মেয়ে বড় ভাই বিয়ে করেছে ভাবতে পারেনি !
দুই ব‌উ হেরার রূপ দেখে একটু ধাক্কা খেলো !
রেজোয়ান উঠে ন‌ওশাদ এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে কানে কানে বলল,
দেরি করে বের হয়েছিস ব্যাপার না , নতুন নতুন বিয়ে করলে বেড রুম থেকে বের হতে সবার একটু বেশি সময় লাগে বন্ধু!
ন‌ওশাদ হেসে বলল, তোর তো শালা আঠারো বছর পরেও রুম থেকে বের হতে সময় লাগে! আর কিছু বলিস না আমি বলা শুরু করলে পালিয়ে যেতে হবে এখান থেকে তোর রেজোয়ান !
এই তোমরা ফিসফিস করে কি বলছো ন‌ওশাদ , সুমনা প্রশ্ন করলো !
সুমনা তোমার বর এর মাথার স্কু গুলো টাইট দিচ্ছিলাম ! ঢিলা হয়ে গেছে!
আমরাও এখানে আছি স্কু অফিসে বসে টাইট দিও !
তোমার জন্য মাফ করে দিলাম ওকে যাও !
আমার জন্য মাফ করতে হবে না তোমাদের দুই বন্ধুর ব্যাপারে আমি থাকতে চাই না ! কি বলো হেরা ?
হেরা হাসলো শুধু!
হেরা সরি,তুমি অসুস্থ ছিলে আমি জানতাম ই না ওদিকে আমার বাসার সবার জ্বর ছিল !
আমি উনার কাছ থেকে শুনেছি আজকে ভাবি !
ন‌ওশাদের ছোট ভাইয়ের বউ মিলা ফিসফিস করে নাদিয়া কে বলল, ভাবি ভাইয়া এই মেয়ে কে কোথা থেকে এনেছে ?
জানিনা ,তুমি ফিগার দেখেছো একবারে বলিউডের নায়িকা , গায়ের রং দেখো মিলা মাই গড একবারে মাখনের মত !
তুমি আগে হাতের গোল্ডের চুড়ি আর গলার সেট টা দেখো মেঝ ভাবি, কি সুন্দর ! এগুলো কি গীতির ভাবির ছিল?
আরে না দেখেই তো বোঝা যাচ্ছে এক বারে নতুন ! ভাইয়া দিয়েছে ! গীতি ভাবির কিছু ভাইয়া কখনো দিবে না ! আর দিতেই বা হবে কেন মিলা, ভাইয়ার কি টাকার অভাব ! ইদানিং ভাইয়া আরো নতুন নতুন বিজনেস শুরু করছে যেখানে টাকা আর টাকা !
ওসব বাদ দাও ভাবি মেয়েটার চেহারা দেখো ভাইয়া এই চেহারা দেখে পাগল হয়েছে নির্ঘাত! তা না হলে এত বছর পর বিয়ে করে !
হুম! আমি দেখে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছি মিলা !
এই নাদিয়া , মিলা তোমরা চুপচাপ দূরে বসে আছো কেন ? হেরা আর আমার কাছে এসে বসো , সুমনা ডাক দিল ওদের!
মিলা বলে উঠলো, আমরা বড় ভাবিকে দেখে ফ্রীজ হয়ে গেছি সুমনা ভাবি !
তারপর ন‌ওশাদ এর দিকে তাকিয়ে বলল , ভাইয়া ভাবি তো অনেক সুন্দর আমাদের নজর লেগে যাবে কিন্তু !
ন‌ওশাদ একটু লজ্জা পেল , ওর সবচেয়ে ছোট ভাইয়ের বউ টি একটু বেশি কথা বলে সে জানে !
সমস্যা নেই মিলা তুমি ডাক্তার মানুষ নজর লেগে গেলে ওষুধ দিয়ে দিও তাহলেই হবে !
সবাই ন‌ওশাদ এর কথা শুনে হাসছে !
হেরা ন‌ওশাদ এর দিকে তাকালো ! কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলে মানুষ টা ! পুরুষ মানুষের হাসি এত সুন্দর হয় বুঝি !
ওর হার্টবিট বেড়ে যায় মানুষ টা কে দেখলে ! আজ ওর এত কাছে ছিল মানুষ টা ,ওর দুটো গাল ধরে চোখের পানি মুছিয়ে যখন দিচ্ছিল ওর মনে হচ্ছিল হৃদপিন্ডটা লাফাতে লাফাতে ওর দম বন্ধ করে দিবে! মনে পড়তেই ওর গা এখনও এক অন্য ভালো লাগায় শিরশির করে উঠছে! হেরা নিজের গাল দুটো স্পর্শ করলো !
ন‌ওশাদ ওর দিকে তাকাতেই সে চোখ নামিয়ে ফেলল !
সুমনা হেরাকে বলল, তোমাকে এই শাড়িটাতে খুব সুন্দর লাগছে হেরা !
আপনি দিয়েছেন শাড়িটা ভাবি ! আমারো খুব পছন্দ হয়েছে শাড়িটা !
মিলা হেরার পাশে বসে বললো , ভাবি তোমার হাতের চুড়ি গুলো খুব সুন্দর ! আর গলার সেটটাও ! ভাইয়া দিয়েছে ?
হেরা মাথা নাড়লো !
তোমার পছন্দে কেনা ?
না উনি দোহা থেকে এনেছেন !
ভাইয়ার পছন্দ সব সময় এক্সক্লুসিভ! ভাইয়া যেসব গিফট দেয় আমাদের অসাধারণ থাকবে ! ফারহান লন্ডন থেকে আসার সময় দুবাই থেকে আংটি, চুড়ি আনলো আমার জন্য এত জঘন্য ডিজাইন । দুবাইয়ে সবচেয়ে বাজে ডিজাইন নিয়ে চলে এসেছিল ! একটুও রুচিবোধ নেই ওর !
নাদিয়াও মিলার সঙ্গে তাল দিয়ে বলল, আরমান ও একি রকম ! কোন রুচিশীল জিনিস খুঁজে পায় না কখনো !
হেরার খুব মজা লাগছে ওদের কথা শুনে !

ন‌ওশাদ তার দুই ভাইয়ের বউ কে ডেকে বলল, যাও আব্বার সঙ্গে দেখা করে আসো তোমরা !
জ্বি ভাইয়া যাচ্ছি ,বলে চারজন দোতলায় উঠে গেল !
হেরা সুমনার সঙ্গে কথা বলছে !
রেজোয়ান ন‌ওশাদের দিকে তাকিয়ে গাইতে শুরু করলো,
‘ শোনো গো দখিনো হাওয়া
প্রেম করেছি আমি !
লেগেছে চোখেতে নেশা
দিক ভুলেছি আমি ‘
সত্যি রেজোয়ান ঘটনা এই , সুমনা কে বলব তুই কার জানি প্রেমে পড়েছিস ?
ঘটনা আমার না আপনার এই গানের মত অবস্থা ! কখন থেকে দেখছি তোর চোখ শুধু হেরাকেই দেখছে !
ন‌ওশাদ বলল, স্বাভাবিক ! বিয়ে করা বউ আমার !
তাহলে দূরে দূরে থাকা কেন বন্ধু ?
ও তুই বুঝবি না রেজোয়ান !
ও আচ্ছা আমি বুঝবো না !
না !
তোর যে কি প্ল্যান তুই ই জানিস ন‌ওশাদ ! কিন্তু মনে রেখো এটা তোমার লাইফ কোন বিজনেস প্রজেক্ট না বন্ধু !
ন‌ওশাদ রেজোয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো !

আনারের মা এসে ন‌ওশাদের কাছে জানতে চাইলো ডিনার লাগবে কিনা ?
ন‌ওশাদ ঘড়ির দিকে তাকালো , আর একটু পর আমি বলব!
আরমান বলল,ভাইয়া আর কেউ আসবে ?
আরমান বীথি আর যুথী কে ফ্যামিলি নিয়ে আসতে বলেছি !
ও আচ্ছা !
সবাই যখন গল্প করছে বীথি তার বর হাসিব আর দুই মেয়ে কে নিয়ে এলো ! যুথীর বর আসেনি ও একাই এসেছে ! ওর শ্বাশুড়ি অসুস্থ তাই ওর বর আসেনি!
দুই বোন আসতে চায়নি আজ কিন্তু ন‌ওশাদ ডেকেছে না গেলে বিষয়টা আরও বড় হবে সেজন্য ই এসেছে!
ন‌ওশাদ কোন ঝামেলা চায় না ফ্যামিলির মধ্যে! বীথি,যুথীর সঙ্গে কথা বলে সমাধান করতে চায় ওদের কষ্ট টা !
বীথি,যুথী এসে হেরার সঙ্গে কোনো কথা বলেনি! শুভেচ্ছা বিনিময় ও না ! হেরা সালাম দিলো, শুধু তাকিয়ে রইল দুজন ! ন‌ওশাদ সব ই খেয়াল করছে ! অবশ্য এসব তার কাছে অনেক ছোট খাটো ব্যাপার! হেরা কে মাথায় নিয়ে নাচার দরকার নেই ওদের কিন্তু খারাপ ব্যবহার করার অধিকার নেই কারো !
হেরাকে অসন্মান করা মানে তাকে অসন্মান করা , এটাই বিশ্বাস করে ন‌ওশাদ !

আনারের মা এসে হেরার পাশে দাঁড়ালো ,
কিছু বলবে ?
দাদা আপনারে ডাকে আম্মা !
কিসের জন্য জানো কিছু ?
না আম্মা , বড় বৌমা কে ডাকো বারবার বলতেছে !
চলো তো গিয়ে দেখি কেন !
হেরা শ্বশুরের সঙ্গে দেখা করতে উপরে উঠে এলো আসার সময় ন‌ওশাদ এর কাছে গিয়ে বলে আসতে ভুলে গেল না !
হঠাৎ ন‌ওশাদের মনে হলো হেরা যখন এখানে নেই এই ফাঁকে সবার সঙ্গে কথা টা বলাই যায়!
সে সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
আমার দুই ভাই , তাদের স্ত্রী, বীথি, যুথী এবং হাসিব তুমিও সবাই যখন এখানে আছো কিছু কথা বেশ কিছু দিন থেকে ভাবছি তোমাদের বলা দরকার! হঠাৎ করে বিয়ে করাতে তোমাদের প্রত্যেকের মনে অনেক প্রশ্ন জমা হয়েছে জানি!
ন‌ওশাদ এর কথা শুনে সবাই নড়েচড়ে বসলো ! বীথি, যুথী একটু দূরে ছিল কাছে এসে বসলো !
বিয়েটা আচমাক‌ই করেছি , হেরার নানা আমার আর আরমানের টিচার ছিলেন!
আরমান ন‌ওশাদের দিকে তাকালো মাথা তুলে!
আরমান আমরা যখন কুষ্টিয়ায় ছিলাম সাইফুল ইসলাম স্যারের কথা মনে আছে তোর ?
আমাদের দুই ভাই কে বাসায় এসে পড়াতেন !
খুব বেশি মনে নেই, একজন পড়াতেন মনে আছে !
তিনি হেরার নানা ! হেরার বাবা মা নেই নানার কাছে মানুষ হয়েছে ! এই বয়সে বৃদ্ধ নানা মেয়েটিকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় ছিলেন কারণ তার অবর্তমানে কেউ নেই মেয়েটির দ্বায়িত্ব নেয়ার!
আমি খুলনা থেকে আসার সময় কুষ্টিয়া গিয়েছিলাম তখন স্যারের শারীরিক অবস্থা খারাপ ছিল আর বুঝতেই তো পারছো কম বয়সী , সুন্দর একটা মেয়ের জন্য গার্ডিয়ান ছাড়া এই সমাজে সার্ভাইভ করা কতটা দূরহ ব্যাপার! স্যার এর কাছ থেকে আমি দ্বায়িত্ব নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু গ্রামের মানুষ জন, প্রতিবেশীরা বলল আমাকেই বা কিভাবে ভরসা করে ! আমার ও মেয়েটিকে দেখে ভালো লাগলো ইনফেক্ট তোমরা চাইছিলে আমি যেন বিয়ে করি আবার!
তাই বিয়েটা করে ফেলেছি!
হ্যাঁ তোমাদের জানাই নি এটা আমার ভুল ছিল কিন্তু আমার লাইফের ডিসিশন যেহেতু আমি নেই তাই যেটা আগে বলতাম সেটা তোমাদের এখন বলছি ! বিয়েটা তখন না করে উপায় ছিল না মেয়েটি সেই মুহূর্তে অসহায় ছিল! আর দ্বিতীয় বিয়ে নিশ্চয়ই আমি বিশাল বরযাত্রী দলবল নিয়ে গিয়ে করতাম না !
ছোট ভাই ফারহান কথার মাঝখানে বলে উঠলো ভাইয়া তোমাকে এত এক্সপ্লেইন করতে হবে না ! বিয়েই তো করেছো, আমরা গীতি ভাবি যাওয়ার পর সব সময় চেয়েছি তুমি বিয়ে করো !
ভাইয়া ফারহান ঠিক কথা বলেছে , বুবু ও সব সময় তোমাকে নিয়ে চিন্তা করে ! তুমি সুখে থাকো আমরা সবাই সেটা চাই !
ন‌ওশাদ বলল,আরমান তারপরও সবাই কে জানানো আমার দ্বায়িত্ব ! সবাই কে বলে বিয়ে করিনি একটা দ্বায়িত্ব পালন করিনি তাই বলে সব সময় বিষয় টা এড়িয়ে যাব তা তো না !
ভাইয়া আমার মনে হয় বিয়েটাই বড় কথা আমাদের সঙ্গে নেননি কেন এসব কিছু না ! আপনি প্লিজ মনে কোন কিছু রাখবেন না আমাদের মনে কিছু নেই কি বলো মিলা , নাদিয়া বলল!
মেঝ ভাবি ঠিক বলেছে ভাইয়া !
দুলাভাই নিশাল জানে, যুথী প্রশ্ন করলো?
যুথী নিশাল কে আমি বুঝিয়ে বলব আশাকরি সে খুব বেশি রিয়েক্ট করবে না!
দেখেন আপনি যা ভালো মনে করেন! কিন্তু আমাদের জানালে আমরা আপনাকে নিশ্চয়ই বাঁধা দিতাম না !
আমি জানি যুথী , পরিস্থিতি টাই সেরকম ছিল না !
আর মেয়েটির বয়স খেয়াল করলেন না আপনি দুলাভাই ? বীথি ন‌ওশাদের দিকে তাকিয়ে বলল !
রেজোয়ান হেসে বলে উঠলো , এই বীথি পুরুষ মানুষের আবার বয়স কি সালমান খান তো আমাদের থেকে সাত বছরের বড় এখনো একটাও বিয়ে করেনি ! করলেও দেখবে ইয়ং কাউকে ই করবে ! ন‌ওশাদের কপালে লেখা ছিল তাই কম বয়সী ব‌উ পেয়েছে বাদ দাও না ! হেরার যদি ন‌ওশাদের বয়স নিয়ে সমস্যা না থাকে আমাদের কারো সমস্যা হ‌ওয়ার তো কথা না !
বীথি বলে উঠলো,রেজোয়ান ভাই আপনারা নিজেদের সালমান খান ভাবেন নাকি ?
কেন ভাবলে সমস্যা কি ? আমরা ছেলেপুলের বাবা হয়ে গিয়েছি বলে আমাদের মন ও কি বুড়ো হয়ে গেছে!
তাহলে তো ভালো ই হলো, দুলাভাই ইয়ং ব‌উ নিয়ে নিজেকে সালমান খান ভেবে জীবন কাটাক !
বীথি ন‌ওশাদ এর একা জীবন টা তোমাদের কাছে কখনো কষ্টের ছিল না তাই না ?
সারাদিন পর ঘরে ফিরে এটা একা বসে থাকে ,অসুস্থ হলে কাজের লোক ছাড়া কেউ নেই সেগুলো তোমাদের খারাপ লাগেনি কখনো‌ ? সুমনা বীথিকে উদ্দেশ্য করে বলল!
বীথি চুপ করে আছে !
গীতি বিয়ের পর কখনো ন‌ওশাদ কে রেখে তোমাদের বাসায় গিয়ে থাকতো না কেন জানো ? কারণ গীতি কখনো চাইতো না ন‌ওশাদ একা থাকুক ! কিন্তু দেখো ওর ভাগ্যটা গীতি ই ওকে ছেড়ে চলে গেল একা করে ! অনেক গুলো বছর তো গেলো গীতির শোকে এখন ন‌ওশাদের জীবনে কেউ এসেছে তাকে নিয়ে সুখী হোক সেই দোয়া করি আমরা ! রেজোয়ান এর কথা গুলো দুই বোন মাথা নিচু করে শুনছে ! বীথির চোখে পানি চলে এসেছে!
ওর বর হাসিব বলে উঠলো, বীথি রেজোয়ান ভাই ঠিক কথা ই বলছে বড় আপুর কষ্ট বুকে নিয়ে কতদিন ন‌ওশাদ ভাই একা জীবন কাটাবে ? শোনো একটা মহিলা মধ্য বয়সে স্বামী মারা গেলে ছেলে মেয়েদের সংসারে , কখনো নিজেও একা কাটিয়ে দিতে পারে জীবন ! কিন্তু পুরুষ মানুষ পারে না হঠাৎ করে অন্য কোন সংসারে ছেলে হোক বা মেয়ের কাছে জীবন কাটাতে । একা তো আরও অসম্ভব! তোমরা কে কয়দিন পারো ন‌ওশাদ ভাইয়ের খোঁজ নিতে । নিশাল এখানে থাকে না আট দশ দিনের জন্য ছুটিতে আসে তখন ওর সঙ্গে তোমরা সময় কাটাও কিন্তু সব সময় এখানে নিশাল থাকতো যদি তখন কি পারতে নিজের সংসার, বাচ্চাদের রেখে ওর খবর নিতে ? যুথী আপু তো এখন বাসা থেকেই বের হতে পারে না শ্বাশুড়ি অসুস্থ ! তাহলে ? তোমরা যে যাই বলো আমার মনে হচ্ছে ন‌ওশাদ ভাই ভালো থাকলে আমাদের ও হ্যাপি হ‌ওয়া উচিত!
এতক্ষণ ন‌ওশাদ শুনছিল চুপ করে এবার সে বলে উঠলো , তোমরা যদি ভাবো বিয়ে করেছি বলে আমার জীবনে তোমাদের গুরুত্ব কমে যাবে এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা করবে ! তোমরা গীতির বোন গীতির বোন সারাজীবন আমার বোন ছিল এখনও এবং ভবিষ্যতেও থাকবে !
হেরা এসে রুমে ঢুকল !
সবাই চুপ করে গেল ওকে দেখে !
আব্বা কেন ডেকেছে হেরা ?
হেরা ন‌ওশাদের কাছে এসে বলল ,
আম্মা কে ফোন দিতে বলছে বারবার আমাকে !
ও আচ্ছা !
এখন কি করব বলুন ?
কিছু করার দরকার নেই একটু পর এমনিতেই ভুলে যাবে ! তুমি বসো এখানে !
হঠাৎ বীথি উঠে এসে হেরার হাত ধরলো , তুমি আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট ! তুমি করেই বলছি আমাদের বোন এই সংসার অনেক যত্ন করে তৈরি করেছিল দুলাভাই আর নিশাল ওর পৃথিবী ছিল । তুমি দুলাভাই এর খেয়াল রাখবে জানি। একটা অনুরোধ নিশাল কে কখনো অবহেলা করো না ও আমাদের জন্য অনেক কিছু আমাদের দুই বোন কখনো কখনো নিজের বাচ্চাদের চেয়েও বেশি ওর প্রতি দুর্বল ! ওর খেয়াল রেখো ! এর বেশি কিছু তোমার কাছে চাই না!
আর দুলাভাই সরি সেদিন আপনার সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি আসলে হঠাৎ করেই ঘটনা টা নিতে পারিনি জাস্ট নিজের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছিলাম! সরি দুলাভাই ;
ইটস ওকে বীথি তুমি আর যুথী সব সময় আমার কাছে আমার ছোট বোনের মত ছিলে এবং থাকবেও !
এখন চলো সবাই ডিনার করি ! চলো চলো ! এসব কথা বাদ দাও !
‌ন‌ওশাদ সবাই কে নিয়ে ডিনার করতে উঠে এলো ! ওর মনে হচ্ছে বুকের ভেতর থেকে একটা পাথর নামলো ! বীথি, যুথী আর ফ্যামিলি র সবাই হেরাকে নিয়ে কমফোর্টেবল হচ্ছে !
এবার শুধু নিশালের আসার অপেক্ষা!
বীথি, যুথী বেশিক্ষণ থাকেনি ডিনারের পর পর ই চলে গেছে !
ন‌ওশাদ এর ভাইয়ের বউ রা হেরার সঙ্গে অনেক সহজ হয়ে গেছে বোঝা যাচ্ছে! ওদের নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। ন‌ওশাদ জানে এরা অসম্ভব বুদ্ধিমতি হেরাকে বিয়ে না করে একটা কলাগাছ কে বিয়ে করে নিয়ে আসলেও এই দুজন বলতো ভাইয়া দারুন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কলা একটা হেলদি ফ্রুট!
কথাটা চিন্তা করেই ন‌ওশাদ একা একা ই হেসে দিল !
ওর হাসি দেখেই রেজোয়ান আবার পেয়ে বসলো ! হয় হয় এমন‌ই হয় বন্ধু নতুন নতুন প্রেম মনের ভেতরে দানা বাধলে একা একাই হাসি আসে !
তুই কি প্রেম বিশেষজ্ঞ নাকি ?
কি বলিস প্রেম করেই তো বিয়ে করেছি , হোক আঠারো বছর আগে তাই বলে ভুলে তো যাইনি কিছু ! ঐ যে বলে না অস্ত্র জমা দিয়েছি ট্রেনিং জমা দেই নাই !
তো আর কি কি হতে পারে বলতো শুনি ?
কেন ন‌ওশাদ তুই তো প্রেমের উপর পিএইচডি করা লোক সেই ক্লাস এইটে যখন পড়িস তখন থেকে গীতির সঙ্গে প্রেম করেছিস !
ও সব বহু যুগ আগের ঘটনা ! এখনকার প্রেম কেমন সেটা বল ? যার সঙ্গে প্রেম টা করব সে তো এই যুগের মানুষ তাই জ্ঞান থাকতে হবে আপডেট!
সিরিয়াসলি বলছিস তো তুই ? ফাজলামি করছিস না তো আমার সঙ্গে ন‌ওশাদ ?
আরে না ফাজলামি করব কেন ?
আমার তোকে বিশ্বাস নেই !
তাহলে আর কি ! কিন্তু আমি সিরিয়াসলি বলছিলাম কিন্তু !
সত্যি ন‌ওশাদ ? রেজোয়ান খুব উৎসাহী হয়ে উঠলো ! শোন ঐ দিকে চল তোকে দারুন দারুন সব টিপস দিব আয় আমার সঙ্গে !
আরে এখানেই বল ঐ দিকে যেতে হবে কেন ?
আয় তো আমার সঙ্গে !
ন‌ওশাদ আর রেজোয়ান সুইমিং পুলের পাশে গিয়ে বসলো !
শোন তুই যার সঙ্গে প্রেম টা করতে চাইছিস তোর এডভান্টেজ হচ্ছে সে তোর বিয়ে করা বউ ! আর ডিজ এডভান্টেজ হচ্ছে তোর আর ওর বয়সের ব্যবধান টা বেশি !
হুম !
এখন তোকে প্রথমে নিজেকে ভাবতে হবে তোর বয়স আন্ডার থার্টি !
এটা কিভাবে সম্ভব ?
সম্ভব ! তুই ঐ বয়সী ছেলেদের মত কাজ করবি !
কিন্তু কিভাবে রেজোয়ান ঐ বয়সে আমি নিজে কে প্রতিষ্ঠা করতে রাত দিন খেটে যাচ্ছিলাম ! আমি তো জানি ই না তখন কি করে কাউকে খুশি করতে !
হ্যাঁ তখন যা যা করতে ইচ্ছে করতো কিন্তু টাকার জন্য সময়ের জন্য করতে পারিস নাই এখন তাই কর ! কারণ এখন তোর টাকাও আছে ইচ্ছে করলে সময় ও আছে ! সিম্পল !
তাই ?
ইয়েস ! একটা কথা বলতো তুই হেরাকে ভালোবেসে ফেলেছিস ?
বুঝতে পারছি না রে কিন্তু তোর কাছে কখনো তো কিছু গোপন করি নাই আমার হেরার সঙ্গে সময় কাটাতে ভালো লাগছে ! ওর কথা গুলো শুনতে ভালো লাগছে !
এক্সিলেন্ট ! এভাবেই এগিয়ে যা দেখবি তোরা দুজন দারুন একটা কাপল হবি !
কিন্তু আমি চাই না হেরার ইচ্ছে র বিরুদ্ধে ওকে বাধ্য করতে ! এমন অসমবয়সী একটা বিয়ে ওর দিক থেকে অনুভূতি টা কি আমি তো জানি না ! তারচেয়ে ও বড় কথা আমি ওকে নিজের একটা পরিচয় দিতে চাই সব কিছুর আগে !
মানে ন‌ওশাদ আজমীর স্ত্রী এর চেয়ে বড় পরিচয় আর কি হতে পারে ?
এটা আমার পরিচয় ! আমি চাই ওর নিজস্ব পরিচয় থাকুক! যাতে কখনো ওর মনে না হয় ও শুধুই আমার স্ত্রী এর বাহিরে আর কিছু নেই নিজের মত !
ঠিক আছে সেটাও হবে তুই ওর সঙ্গে যখন আছিস তখন সব হবে !
সে জন্যই আমি চাই মেয়েটা বাঁচার মত আগে বাঁচুক আমি আছি ওর সঙ্গে ! আমার সব কিছু দিয়ে ওর পাশে আছি !
তুই ওর ভালো লাগা গুলো জানার চেষ্টা কর !
শোন এত দুঃখ কষ্ট পাওয়া মেয়ের জীবনে ভালো লাগা বলে কিছু তৈরি ই হয়নি ! ওর ভালো লাগা টা আমি তৈরি করে দিতে চাই ! পৃথিবীটা যে কত সুন্দর আমি দেখাতে চাই রেজোয়ান !
খুব ভালো লাগছে তোর চিন্তা ভাবনা টা দেখে বন্ধু!
ন‌ওশাদ রেজোয়ান এর দিকে তাকিয়ে হাসলো !

সবাই চলে গেলে ন‌ওশাদ আর হেরা গোল্ড ফিশ গুলোর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো !
এই মাছ গুলো যে এত বড় হয় আমার জানা ছিল না !
এদের বয়স ও অনেক হেরা !
তাই ?
হুম! নিশাল এর শখ ! ওর শখ কবুতর ! পাখি ! এই বাসার ছাদে গিয়েছো তুমি ?
না !
ছাদে অনেক পাখি আছে ! কবুতরের ঘর আছে ! সব নিশালের ! আমার ছেলেটা অন্য রকম ! এই বয়সী ছেলে রা কত বেখেয়ালি, অবুঝপানা করে আমার ছেলে টা ঐ রকম না ! চুপচাপ ! বিশ্বাস করবে না আমার বন্ধু, এসোসিয়েট এ লোকজন নিজেদের ছেলে কে নিয়ে কত কমপ্লেইন টাকা উড়ায়, কেরেক্টার ঠিক নেই এমনকি কলেজে পড়া ছেলে ড্রিংক করে, নেশা করে , মেয়ে নিয়ে বাসায় চলে আসে নয়তো হোটেলে চলে যাচ্ছে ! আর আমার নিশাল আমি বাবা হয়ে টাকা দিচ্ছি বলছি বাবা কি লাগবে খরচ করো কিন্তু তার ওসবে মন নেই ! সে খেলাধুলা নয়তো পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ! দশটা জিনিস দিলে একটা নিবে !
আমি চাই ও কৈশোর টা এনজয় করুক ঘুরে বেড়াক, যা ইচ্ছা কিনুক আমি যা পাইনি এই বয়সে নিশাল সব পাক ! কিন্তু না ও আছে খেলাধুলা নয়তো পড়াশোনা !
ভালো তো ! বাবা হিসেবে গর্ব করার উচিত আপনার!
আমি গর্ব করি কিন্তু আমি চাই না আমার ছেলে টা যন্ত্র হোক ! ও পড়াশোনা করুক কিন্তু জীবনটাকে ও এনজয় করুক !
ওর মা ছিল যখন ,তখন কেমন ছিল নিশাল ?
তখন বয়স ছিল মাত্র দশ বছর ঐ বয়সী বাচ্চা যেমন থাকে চঞ্চল ছুটোছুটি করতো কিন্তু গীতি যাওয়ার পর ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে গেল। আর ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার পর একদম বয়সের তুলনায় বেশি ম্যাচিউর!
চিন্তা করবেন না আপনার ছেলে আপনার মত ভালো মানুষ হবে দেখবেন !
তাই আমি ভালো মানুষ ?
হুম আমার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ!
ন‌ওশাদ হেরার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে !
হেরা আজ সবাই কে তোমার কেমন লেগেছে ?
খুব ভালো!
ওরাও তোমাকে খুব পছন্দ করেছে !
তাই ?
হুম!
কথা বলতে বলতে দুজন উপরে উঠে এলো !
হেরা তুমি ঢাকায় কয়বার এসেছো ?
ছোটবেলায় এসেছিলাম তারপর আপনার সঙ্গে এলাম !
তাই নাকি ?
হ্যাঁ আমাকে নিয়ে কে আসবে বলেন আর দরকার ও ছিল না কোন!
বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে ?
না তেমন না হালকা একটু হয়েছিল মনে হয় !
এক কাজ করবে শাড়ি চেন্জ করে আমার ঘরে চলে আসো তাড়াতাড়ি !
এখন ?
হ্যাঁ এসো আগে তারপর বলছি !
জ্বি ঠিক আছে !
দুজন দুজনের রুমে ঢুকে গেল!
হেরা শাড়ি বদলে সেলোয়ার কামিজ পড়লো ! চুড়ি গুলো খুলতে গিয়েও খুললো না ! ন‌ওশাদ বলেছে সব সময় পড়ে থাকতে ! এত সুন্দর চুড়ি গুলো মনে হয় শুধু তাকিয়ে থাকি ! আর কি সুন্দর শব্দ করে ওর খুব ভালো লাগছে শব্দ টা শুনতে !
হেরা চুল ঠিক করতে করতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের গাল দুটো আবার স্পর্শ করলো ! ওর কাছে মনে হচ্ছে ন‌ওশাদ এখনো গাল দুটো ধরে আছে ! নিজেকে দেখে নিজের ই লজ্জা লাগছে ওর !
রুম থেকে বের হয়ে দেখে ন‌ওশাদ নিজের রুম থেকে বের হচ্ছে ! পাঞ্জাবি বদলে জিনস আর গেঞ্জি পড়েছে !
হেরা কাছে এগিয়ে যেতেই ন‌ওশাদ বলল,
চলো হেরা তোমাকে ঢাকা শহর দেখিয়ে নিয়ে আসি !
এখন এত রাতে !
হুম রাতের ঢাকা দেখতেই সব চেয়ে আকর্ষণীয় ! দিনে বেলায় শুধু মানুষ আর মানুষ , গাড়ি, জ্যাম , গাড়ির হর্ন ! রাতের বেলায় ঢাকা কেমন জানো নতুন ব‌উ এর মত স্নিগ্ধ , শান্ত !
হেরা হেসে দিল ন‌ওশাদ এর কথা শুনে !
চলো আমি ড্রাইভ করবো তুমি পাশে বসে দেখবে ! চলো চলো ! ন‌ওশাদ সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে ! হেরাও ওর পিছনে পিছনে ছুটে আসছে ! ওর খুব এক্সাইটেড লাগছে ! মানুষ টার সঙ্গে থাকতে পারলেই তার ভালো লাগে !
ন‌ওশাদ রিয়াজ কে ডাকতেই রিয়াজ তার রুম থেকে ছুটে বের হলো শার্ট গায়ে দিতে দিতে !
রিয়াজ আমার গাড়ির চাবি নিয়ে এসো !
বাহার কে ডাকব স্যার ?
না ড্রাইভার লাগবে না ! চাবি দাও শুধু !
রিয়াজ ছুটে গিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে এলো !
ন‌ওশাদ নিজে দরজা খুলে দিল হেরা উঠে বসলো গাড়িতে !
উপর থেকে আনারের মা আর পারুল দেখছে ! আনারের মায়ের খুব ভালো লাগলো দেখে তার স্যার অনেক দিন পর এত খুশি !
পারুল আস্তে করে সরে গেল বীথি কে ফোন দিতে !

গাড়িতে উঠে হেরার সীট বেল্ট টা লাগিয়ে দেয়ার জন্য ওর দিকে ঝুঁকতে ই হেরার শরীর থেকে একটা সুন্দর ঘ্রাণ নাকে এসে লাগলো। ন‌ওশাদ এর মনটা ভালো লাগায় ভরে গেল !
অনেক অনেক বছর পর ন‌ওশাদ এত রাতে কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছে !‌ আগে গীতি কে নিয়ে কখনো কখনো বের হতো !
অনেক অনুরোধের পর গীতি বাহিরে যেতে রাজি হতো !গীতি যেতে চাইতো না নিশাল ছোট ছিল ! ওর ঘুমের টাইম নয়তো ঘুম ভেঙ্গে কাঁদবে, সকাল সকাল উঠতে হবে , রাতে বের হ‌ওয়ার‌ই বা কি আছে এসব চিন্তা করে গীতি রাজি হতো না ! নিয়মের বাহিরে গীতি নিজেও যেতে চাইতো না ন‌ওশাদ কেও যেতে দিতো না ! ন‌ওশাদের খুব ইচ্ছে করতো রাতের ঢাকা শহরে এলোমেলো ঘুরতে ! আজ সেই ইচ্ছেটা হেরার সঙ্গে ওর করছে ! হেরা কে সে সম্পূর্ণ তার মত করে পেতে চায় ! ওর মত এলোমেলো করে !
আপনি কিন্তু খুব স্পীডে গাড়ি চালান ঢাকায় আসার দিন ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছিল !
তাই খুব ভয় পাচ্ছিলে ?
খুব যত সূরা জানি সব পড়ে ফেলেছিলাম !
ন‌ওশাদ হাসতে হাসতে বলল আচ্ছা ঠিক আছে খুব বেশি স্পীডে চালাব না ! এখন বলো কি দেখতে চাও আগে ?
আপনি বলেন আপনার শহর !
তারপর ও তোমার দেখার ইচ্ছে থেকে শুরু করি !
এই শহরে আপনার প্রিয় জায়গা কোনটা ?
আমার প্রিয় জায়গা বলে তো কিছু নেই !
সব মানুষের একটা পছন্দের জায়গা থাকে না ?
সে রকম ভাবে কখনো ভাবিনি তো হেরা ! দারুন বলেছো ! যখন পড়াশোনা করতাম তখন ছিল আমার ভার্সিটি প্রিয় জায়গা ! তারপর আর চিন্তা করার সুযোগ ই পেলাম কোথায় ? ব্যস্ত হয়ে গেলাম কাজে । ন‌ওশাদ গাড়ি নিয়ে বনানী থেকে বের হলো !
তবে হ্যাঁ এখন বিকেলের দিকে ফ্যাক্টরি থেকে যখন ফিরি তখন এয়ার পোর্ট রোড টা ভালো লাগে ! সন্ধ্যার পর বা রাতে দেশের বাহিরে যখন যাই কিংবা আসি তখন ও ঐ রাস্তা টা আজকাল ভালো লাগে !
তাহলে চলেন আগে সেটাই দেখি ! আমার ঢাকার রাস্তার উপরে যে ব্রীজের মত যে জিনিসটা হয়েছে সেটা দেখার ইচ্ছে !
ফ্লাই ওভার বলে !
ঠিক আছে তোমার আর আমার ভালো লাগা এক জায়গায় ই আছে ! কুড়িল ফ্লাইওভার দেখিয়ে নিয়ে আসি তোমাকে আগে !
ন‌ওশাদ কাকলি থেকে গাড়ি ইউটার্ন নিয়ে সোজা এয়ার পোর্ট রোডের দিকে র‌ওনা হলো ! রাত তখন বারোটা দশ ! খালি রাস্তা পেয়ে ন‌ওশাদ টোয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার এ স্পীড তুলল একশ !
আপনি কিন্তু বলেছিলেন বেশি স্পীডে চালাবেন না !
আরে মজা নাও তো হেরা ! জানালার গ্লাস গুলো নামিয়ে দিল ন‌ওশাদ বাতাসে হেরার চুল উড়ে যাচ্ছে !
ওর খুব ভয় লাগছে আবার এত ভালো লাগছে ! জীবনে এত আনন্দ সে আগে কখনো পায়নি ! ওর মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে !
ওর স্বপ্ন গুলো ও এত সুন্দর ছিল না কখনো !
আনন্দে হেরার চিৎকার দিয়ে উঠতে ইচ্ছে করছে!

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here