#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
27.
#WriterঃMousumi_Akter
পৃথিবীতে সব থেকে বড় মানসিক তৃপ্তি বোধহয় এখানেই আছে যেখানে মনের মানুষ নিজেকে বুঝতে পারে।বিহান ভাই আমার হাত থেকে পানিটা নিয়ে আমার হাত ধরেই গ্লাস থেকে পানিটা খেলেন তারপর আবার খাওয়াতে মনোযোগ দিলেন।মানুষটা আমার মন পড়তে শিখে গেছেন।আমার মনে মেঘ জমলে সাথে সাথে তা বৃষ্টিতে রূপান্তর করে দেন।এটাকেই বুঝি ভালবাসার ম্যাজিক বলে।
বিহান ভাই হঠাত খেয়াল করেন আমি না খেয়ে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। বিহান ভাই আমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বলেন খেতে আমি তবুও তাকিয়ে আছি উনার দিকে। উনার খাওয়া দেখেই যেনো আমার তৃপ্তি লাগছে।আমাকে বোকার মতো তাকিয়ে থাকতে থেকে ডান চোখ টিপে দিলেন।আশে পাশে দ্রুত খেয়াল করলাম যে কেউ আবার দেখে নেই নিতো মারাত্মক লজ্জা ও পেয়ে গেলাম।উনি সাথে সাথে মেসেজ ও দিলেন কিহ আমার হাতে খেতে ইচ্ছা হচ্ছে।আজকের মতো নিজে হাতে খেয়ে নাও পুচকি।উনার এমন হৃদয় ব্যাকুল করা মেসেজ দেখে আবার খাওয়ার দিকে মন দিলাম।
মেহনুবা আপু খাওয়ার মাঝে বার বার ফোন চাপছেন। আমার একটা মাত্র ফুফি তার ই মেয়ে মেহনুবা।মেহনুবা আপু আমাকে মারাত্মক ভালবাসেন।আমার সব থেকে প্রিয় আপু।আমি মানুষকে বলি আমরা দু ‘বোন।মেহনুবা আপুর ঠোঁটে হালকা হাসি।আমি অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করলাম ব্যাপার টা কি?দেখে মনে হচ্ছে উনি কারো সাথে মেসেজ করছে আর সেই ভাল লাগা থেকে হাসছেন।অদ্ভুত ব্যাপার আলিপ ও ফোন চাপছে।খেয়াল করলাম আলিপ আর মেহনুবা দুজন দুজনের দিকে বার বার তাকাচ্ছে আর দুজনে মুচকি হাসছে।কেমন যেনো রহস্যর গন্ধ পাচ্ছি।ওদের মাঝে কি সামথিং সামথিং কোনো ব্যাপার আছে।আমার সন্দেহ টা আরো গাড় হলো দুজনের চোখে চোখ দেখে।দুজনের চোখ ই ভীন্ন কিছু বলছে।
খাওয়া শেষ করে সবাই বিহান ভাই এর রুমে আড্ডাতে বসে গেলো।
বৃষ্টিতে হালকা শীত শীত লাগছে আমার। আম্মুদের বাসা থেকে কোনো গরম কাপড় ই আনা হয় নি।ঠান্ডায় পশম গুলো দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।বিহান ভাই আমাকে গুটিশুটি মেরে বসতে দেখে উনার একটা হুডি বের করে দিলেন আমাকে।শুধু দিলেন না আমার গায়ে পরিয়ে দিলেন।উনার হুডি আমার হাটু ছাড়িয়ে গেলো।কিছুই করার নেই আমার ঠান্ডায় শ্বাসকষ্ট বাড়ে খুব।
উনার কাপড় নিজের শরীরে জড়ানো মনে হচ্ছে যেনো উনি লেপ্টে আছেন আমার শরীরে।ক্যান যেনো খুব লজ্জা লজ্জা লাগছে আমার।এক উষ্ণ ভাল লাগা কাজ করছে উনার কাপড় পরে।
বিভোর ভাই,রিয়া,রুশা,আলিপ সবাই লুডু খেলতে লেগে গেলো।আমি মামির সাথে প্লেট গুলো পরিষ্কার করছি।মামি আমাকে বারবার বলছেন তুই যা আমি করে নিবো।মামির গলা জড়িয়ে ধরে বললাম সব কাজ তুমি একা করবে তাই কখনো হয় এটুকু কাজ আমি পারবো।বাইরে বৃষ্টি আরো বেড়েছে।আমি প্লেট গুলা পরিষ্কার করে ওদের সাথে আবার আড্ডায় জয়েন দিলাম।
বিহান ভাই রুশা আপুকে বলছে রুশাদি তোমার হবুর কি খবর।বিয়ে শাদী তো পিছোয় গেলো।রুশা আপু স্যাড স্যাড মুড নিয়ে বললো বিহান তুমি তো কাজের কাজ করে ফেলছো মানুষ জন না ডেকে একাই বিয়ে করে ফেলছো। আর আমার সে হবু যেদিন পরিস্হিতি স্বাভাবিক হবে সেদিন ই করবেন। তাতে যদি আমাকে বুড়ি হতে হয় তাও ভালো তবুও সে জাকজমক ভাবে ছাড়া বিয়ে করবে না।বিহান ভাই সুন্দর ভাবে উত্তর দিলেন যে বিয়ে করলেই যে অনুষ্টান করতে হবে তার কি কোনো মানে আছে।দুনিয়ার আলোর রোশনাই থাকলো চারদিক উল্লাসের আমেজ থাকলো কিন্ত বিয়েটা মনের মানুষের সাথে হলো না তাতে কি হবে।যদি মনেই আলোর রোশনাই না থাকে।আমার যাকে প্রয়োজন তাকে পেয়েছি মানে পৃথিবীর সব উৎসব এর থেকে বড় তৃপ্তি আমি পেয়েছি।রুশা আপু বলেন তোমার সব কিছুই যেনো অন্য রকম এক ভাল লাগা বিশেষ স্পেশাল বিহান।তোমার ভাবনা গুলো ও যেনো বিশেষ ভাল লাগার মতো।এই লক ডাউনে একটা খুশির খবর ও হয়ে যাক।
বিহান ভাই কপাল কুচকে বলেন কিসের খুশির খবর।
রুশা আপু বলে,এই যে আমরা আন্টি হয়ে গেলাম ধরো।
বিহান ভাই যেনো মারাত্মক লজ্জা পেয়ে গেলো।হালকা কেশে নড়েচড়ে আমার দিক তাকালেন।
তোহা আপু যেনো মারাত্মক সিরিয়াস হয়ে গেলো। তোহা আপু খানিক টা মুড নিয়ে বলে রুশা আপু তুমি এইসব উদ্ভট বুদ্ধি মানুষকে কিভাবে দাও বুঝি না।আজকাল যুগে মানুষের বিয়ে টা টেকাই মুশকিল।কার লাইফে কখন কি হয় বলা যায় না।আগে ওদের বিয়ে তো টিকে থাকুক।
তোহা আপুর কথা শুনে আমার চোখে পানি ছল ছল করে উঠলো।বিয়ে টিকবে না কথা টা শুনেই আমার বুকের মাঝে আচমকা বাড়ি মেরে উঠলো।একটা অজানা ভয় কাজ করলো বুকের মাঝে।আমি তো কখনো ভেবেই দেখি নি আমাদের বিয়ে না টেকার ব্যাপার টা।
মেহনুবা আপু বলে ওঠে,তোহা তোর খালি অলুক্ষণে কথা।দেখ দিয়ার মুখ টা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে তোর এই রূপকথার আজগুবি গল্প শুনে।বিয়ে টিকবে না মানে টা কি?ঠিক কি কারণে টিকবে না শুনি।
তোহা আপু একটু মশকরা করে বলে ওঠে,এইযে দেখো না সিনেমা বা মুভিতে হঠাত হিরোর জীবনে অন্য কেউ আসে। বা এক্স গফ এসে হাজির হয়।অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসে।বাই এনি চান্স এমন হলো তখন কি হবে।দেখা গেলো বিহান ভাই তার এক্স কে দেখে আবেগে আপলুত হয়ে দিয়াকে ভুলে গেলো।
আমি তো কেঁদে দিবো দিবো এমন একটা অবস্থা।
বিহান ভাই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলেন তোহা একটা গান শুনেছো না।
তোহা আপু বলে কি গান।
চলে গেছো তাতে কি
ভালবেসে মরেছি
তুমি আছো
হৃদয়ের আয়নায়
এইটা ছিলো আবেগের কথা
আর বাস্তবতা সম্পূর্ণ আলাদা
চলে গেছো তাতে কি
নতুন একটা পেয়েছি
তোমার থেকে অনেক সুন্দরী
তোহা বাস্তব আর আবেগ এক নয়।
আর সিনেমা আর বিহানের লাইফ এক নয়।বিহানের লাভ স্টোরি টা এমন ই স্ট্রং বিহানের লাইফ থেকে সিনেমা নেওয়া যাবে।এখানে এমন কিছুই হবে না কোনো মেয়ে এসে যদি দিয়াকে বলে আই এম প্রেগন্যান্ট ফর ইওর হাব্বি। দিয়া সেটা বিলিভ করবে এমন প্রশ্নই আসে না।দিয়ার আমাকে ভুল বুঝে চলে যাওয়াটা অতটা ইজি হবে না। সিনেমার কাল্পনিক কিছু আমার লাইফে জায়গা পাবে না।দিয়াকে আমার জীবন থেকে কেউ ভুলেও সরানোর কথা ভাবলে তার জীবন টা খুব একটা সহজ হবে না।আমার ভালবাসার প্রথম অনূভুতির নাম দিয়া আর শেষ অনূভুতির নাম ও দিয়া।তাই কোনো বস্তাপঁচা সিনেমার সাথে বিহানের লাইফ এর কম্পেয়ার করবে না ভুলেও।
তোহা আপুর মুখের দিকে যেনো তাকানো যাচ্ছিলো না।তোহা আপু হয়তো ফান ই করছিলো কিন্তু বিহান ভাই ব্যাপার টা কেমন যেনো সিরিয়াসলি নিয়ে নিলেন।
এইদিকে লুডু খেলায় বিভোর ভাই আর রিয়া মারামারি শুরু করেছে।বিভোর ভাই গুটি চুরি করেছে।এইটা রিয়া দেখে ফেলেছে।বিভোর ভাই জিতে গিয়েছেন রিয়া সেটা কিছুতেই মেনে নিতে চাইছে না।বিভোর ভাই দৌড়াচ্ছেন আর রিয়া সারা ঘর ছুটে বেড়াচ্ছে।কথা ছিলো রিয়া হেরে গেলে বিভোর ভাই কে প্রপোজ করবে।এইদিকে বিভোর ভাই চিটিং করেছে রিয়া সেটা মানতেই চাইছে না।আবির ভাইয়া আর মামি দুজনে গল্প করেই যাচ্ছে।
তোহা আপুর আম্মু আমার আম্মুকে অনেক গুলা বাজে বাজে কথা শুনিয়েছে।আমাকে এ ব্যাপারে কেউ কিছুই বলে নি আবির ভাইয়া আর মামি কথা বলছে সেখান থেকেই শুনলাম।কাকিমনি নাকি বলেছে তোমার ভাই এর ছেলে আমার তোহার জীবন টা নষ্ট করে দিয়েছে।নিজের মেয়েকে জোর জবরদস্তি বিহানের সাথে বিয়ে দিয়েছো।বিহান আমার মেয়েকেই ভাল বাসতো। আমার মেয়ে কিভাবে বাঁচবে বিহান কে ছাড়া।পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে আমার নামে অনেক উল্টা পাল্টা কথা বলেছে।আরো বিভিন্ন ধরনের কথা বলেছেন কাকিমনি।কথা গুলো শুনে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো।আমার চোখে পানি ছলছল করছে।আমার জন্য আমাদের ফ্যামিলিতে এত ঝড় তুফান শুরু হয়েছে।মন টা বেশ খানিক টা খারাপ হয়ে গেলো তবুও কাউকে কিছুই বললাম না।
আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি আমার পাশে মেহনুবা আপু এসে দাঁড়ালো।আমি খেয়াল করেই যাচ্ছি আপু শুধু ফোনে মেসেজিং করছে।কিভাবে শুরু করি আপুকে কিভাবেই বা বলি আপু আলিপের সাথে কি কিছু চলছে।কিন্তু আপু কি ভাববে। কিভাবেই বা এমন প্রশ্ন করি।নিজের কাছেই যেনো কেমন লাগছে।হঠাত দেখি আপুর হাতে একটা ব্রেসলেট।ব্রেসলেট টা চেনা লাগছে খুব।আমি মেহনুবা আপুকে সরাসরি বললাম আপু ব্রেসলেট টা কি কেউ গিফট করেছে।আপু আমার দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিলেন যে হাসির মানে এটাই দাঁড়ায় হ্যাঁ কেউ দিয়েছে।আমি বললাম আপু কি হলো বলো।আপু বললো হুম দিয়া বিশেষ কেউ দিয়েছে।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম আপুর কথা শুনে।আপু অনেক ইনোসেন্ট সাদাসিধা।আপু তো খুব একটা জটিলতা বুঝে না।কেউ ঠকালেও বুঝবে না।আমি বললাম আপু সেই বিশেষ মানুষ টা কে আলিপ ভাই।মেহনুবা আপু আমার মুখ চেপে ধরে বলে আস্তে বল দিয়া বিহান ভাই, আবির ভাই শুনে নিবে তো।আমার পায়ের নিচের মাটি যেনো সরে যাচ্ছিলো আপুর কথা শুনে।মেহনুবা আপু আমাকে বলে দিয়া আমি তো তোকে সবই বলি।তুই ছাড়া আর কাকে বলবো শোন,আলিপ সেই ছোট বেলা থেকে আমাকে ভালবাসে।তোর বিয়ের পর ওর পাগলামো টা বেড়ে যায় খুব।জানিস দিয়া আমি না অনেক বেশী লাকি ওর মতো কাউকে পেয়েছি।ও ভীষণ ভালবাসে আমাকে।এই ব্রেসলেট টা আমাকে দিয়ে বলেছে অনেক আগে আমার জন্য কিনে রেখেছিলো লজ্জা আর ভয়ে দিতে পারে নি আমাকে।
আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম কথাটা শুনে এই ব্রেসলেট টা আলিপ আমাকে দিয়েছিলো আমি ফেরত দিয়েছিলাম নেই নি।আর সেটা আপুকে দিয়ে নাম করছে যে আপুর জন্য।কি মিথ্যুক ছেলে।এইজন্য বিহান ভাই ওকে দেখতে পারে না দু চোখে।আপু আমাকে বলে ভুলেও যেনো আলিপ কে বলিস না আমি তোকে বলে দিয়েছি আমাদের রিলেশন। ও বার বার আমাকে নিষেধ করেছে আমি যেনো তোকে কিছু না বলি।তোকে বলে দিলে নাকি সে ব্রেক আপ করে দিবে।আমি আপুকে বললাম আপু চিন্তা করো না আমি কিছুই বলবো না।কিন্ত তুমি যা করার ভেবে চিন্তে করো কিন্তু।আমার মনের মাঝে অশান্তির ঝড় বয়ে যাচ্ছে।আমি কিভাবে আপুকে বোঝাবো আলিপ তোমায় ভালবাসে না আপু।এটা অভিনয় এটা ভালবাসা হতে পারে না।আপুর এই হাসিখুশি মুখটা দেখে বলতে ইচ্ছা করছে না যে আপু এগুলা যা হচ্ছে সব নাটক তাহলে আপুর এই ইনোসেন্ট হাসিটা বিলীন হয়ে যাবে চিরতরে।
রুমের মাঝে সবাই গান গাইছে আনন্দে মেতে উঠেছে সবাই।মেহনুবা আপু ও আড্ডায় চলে গেলো।আপু হাসি মুখে চলে গেলো আর আমাকে দিয়ে গেলো এক রাশ দুঃখ, কষ্ট আর চিন্তা।আপুকে আমি অনেক ভালবাসি আপুর কোনো ক্ষতি হলে আমি মেনে নিতে পারবো না এটা ইম্পসিবল ব্যাপার।
এমন সময় আমাকে চিন্তার জগত থেকে বেরিয়ে আসতে হেল্প করলেন বিহান ভাই।উনিও আমার পাশে এসে বেলকনি হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন।আচ্ছা উনাকে এত সুন্দর লাগছে কেনো?একটা ছেলেকে এতটা পারফেক্ট কেনো হতে হবে শুনি।এতটা ফ্রেশ কেনো উনি।
সাডেন কি উনাকে জ্বীনে ধরলো বুঝলাম না।আমাকে বলেন শোন।আমি উনার দিকে তাকাতেই আমার হার্টবিট বাড়িয়ে দিলেন উনি আস্তে করে ঠোঁট এগিয়ে আনছেন।আমার হার্টবিট খুব দ্রুত বেড়ে চলেছে কি করতে চাইছেন কি উনি আমার ঠোঁটের কাছাকাছি আসতে আসতে আমি দৌঁড় দিলাম।বিহান ভাই সাথে সাথে আমার হাত টেনে ধরলেন।আমার হাত টেনে ধরাতে আমি পেছনে হালকা মুখ টা ঘুরিয়ে উনার দিকে তাকাতেই উনি দুই ঠোঁট এক জায়গা করে ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিলেন।ইস কি লজ্জা।লজ্জায় আমি এক হাত দিয়ে মুখ ঢাকলাম।
চলবে,,,,
(কি অবস্থা তোমাদের সবার।তোমাদের ওদিকে কি বিহান দিয়ার মতো বর্ষন হচ্ছে।লেখিকার শহরে কিন্তু প্রচুর বৃষ্টি)