তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা 24.

0
2629

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
24.
#WriterঃMousumi_Akter

?
ড্রয়িং রুমে বসে আছি আমি,বিহান ভাই,বিভোর ভাই, রাফি,রিয়া,আহিন নামের ছেলেটা সাথে বিহান ভাইয়ের মামির ভাইয়েরা,, সাথে তাদের ভাতিজি রাও আছে।বিহান ভাই এর মামির ভাই বলে ওঠেন আমরা কিন্ত চাচা ভাতিজা বেশ ফ্রি মাইন্ডের।তাই আমি আহিনের সামনেই বলছি আহিন দেখ তো ভাতিজা এই যে মিষ্টি মেয়ে দিয়া কে তোর পছন্দ হয় কিনা।সম্পর্কে আমাদের ভাগনি হয়।তোর বিহান ভাইয়ের বোন।আমার কিন্তু মনে হইছে তোর সাথে বেশ মানাবে।বিহান ভাই এর মামির কথা শুনে আমার চক্ষুযুগল আকাশে উঠলো। বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা কত অবিবাহিত মেয়ে আছে তাদের দিকে দেখেন না নিজের যে ভাতিজি গুলা পড়ে আছে সেদিকে খেয়াল দিন না মামা।আবার আমি কেনো?এত সমাজসেবা তো নেওয়া যাচ্ছে না।

আহিন আমার দিকে তাকিয়ে হালকা লজ্জা পেলো মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে তোমার পছন্দ হলে আমার আর নতুন করে পছন্দের কি আছে।তাছাড়া উনি সত্যি খুব মিষ্টি দেখতে।আহিনের তার চাচাকে বলা কথা শুনে অসহায় এর মতো তাকালাম বিহান ভাই এর দিকে।

বিহান ভাই এর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আমি।বিহান ভাই ফোন স্ক্রল করেই যাচ্ছেন উনার মুখ যেনো পুড়ে গিয়েছে।মুখে কোনো হাসি নেই বিন্দুমাত্র।পৃথিবীর সব আনহ্যাপি মুড উনার মুখেই ভর করেছেন।বাড়ি ঘর পুড়ে যেনো ফ্যাক্টরি তে আগুন লেগেছে এমন একটা অবস্থা।

এই দিকে বিভোর ভাই হালকা কেশে নিয়ে বলেন আহিন ভাই বেশী মিষ্টি ভেবো না পরে করোলা ভাজি লাগবে তাইনা রিয়া।রিয়া বলে তোমরা সবাই থাকো সুখে আগুন জ্বলুক একজনের বুকে।বিভোর ভাই বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে বলে বিহান কোথাও কি কিছু পুড়ছে।বিহান ভাই বিভোর ভাই এর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে কি পুড়ছে?বিহান ভাই মুড টা খুব ই গম্ভীর। বিভোর ভাই বলেন আমার নাকে পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে।আই থিংক কারো মন পুড়ছে।বিহান ভাই বলেন জোক করছিস। রিয়া বলে একটু না অনেক বেশী ই পুড়ছে।বিভোর ভাই বলেন বিহান পোড়া গন্ধ টা তোর কাছ থেকেই আসছে।বিহান বলেন একটু ওয়েট করো তোমার ও মন পুড়বে।

আহিন কিছুক্ষণের জন্য বাইরে গিয়ে বাগান থেকে কয়েক টা রোজ এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে দিয়া আমাদের আজ প্রথম সাক্ষাত খালি হাতে প্রিয়জনের মুখ দেখতে নেই।আমি খেয়াল করলাম বিহান ভাই চরম রাগান্বিত চক্ষু নিয়ে আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি দ্রুত আমার হাত সরিয়ে নিলাম।আহিন বলে কেউ কিন্তু মাইন্ড করো না সবার মাঝে ফ্রেন্ডলি দিয়াকে প্রপোজ করছি।বিভোর ভাই বলেন ভাই আহিন শুনেছি যারা আর্মিতে জব করে তারা শেষ বয়সে পাগল হয়ে যায় তুমি তো আগে থেকেই পাগল হয়ে গিয়েছো।দিয়ার প্রেমে যেভাবে হাবুডুবু খাচ্ছো ডুব দিলে তো উঠতেই পারবা না।এই যে রিয়া কে দেখো আমার বিয়াইন হয় আমি কিন্তু ওর প্রেমে পড়েছি কিন্তু সাতার জানি বলে উঠে এসেছি, আমি রোজ ডুবছি রিয়ার প্রেমে আর রোজ ই উঠছি।বিভোর ভাই এর কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।

বিহান ভাই আহিন কে বলে, তুমি কিন্তু মারাত্মক লেভেলের কবি আহিন মানতেই হয়।যেভাবে রোজ এনে ২ মিনিটের পরিচয়ে একটা মেয়েকে প্রপোজ করার সাহস করে ফেললে অন্যর বউ পটাতে ভালোই এক্সপার্ট তুমি।আহিন বলে বিহান ভাইয়া ছিঃআমি মরে গেলেও অন্যর বউ পটাবো না।বিহান ভাই আহিনের দিকে একটু বাঁকা হাসি দিয়ে তাকিয়ে বলে গুড বয়।

কেউ ইচ্ছা করেই বলছে না বিহান ভাই আর আমার বিয়ের কথা।বিভোর ভাই তো মজা নেওয়ার ওস্তাদ।তাছাড়া দূর আত্মীয়রা অত টা জানে না আমাদের বিয়ের কথা।বিহান ভাই এর ফোন এসছে বিহান ভাই বাইরে বেরিয়ে গেলেন।উনার পিছ পিছ আমিও ছুটে গেলাম।উনি কথা শেষ করে আমার দিকে একবার ও তাকালেন না উনার মতো চলে যাওয়ার চেষ্টা করলেন।

আমি বিহান ভাই এর হাত টেনে ধরে বললাম কি সমস্যা বিহান ভাই সব জায়গা রাগ দেখান।এখানে আমার কি দোষ। আপনি নিজেই তো অনেক গুলা মেয়ে দেখে নিজে ম্যারেড সেটা প্রকাশ করেন নি।এইদিকে খালি আমাকেই রাগ দেখান।বিহান ভাই কপালে হাত চালাতে চালাতে আমাকে কিছু না বলেই ড্রয়িং রুমে চলে গেলেন।অদ্ভুত ব্যাপার এই মানুষ টা খালি আমাকেই রাগ দেখায়।খাবার খাওয়ার জন্য সবাই ডাকাডাকি করছে।নিচে পাটি বিছিয়ে সবাই কে খেতে দেওয়া হয়েছে।খাওয়ার সময় বিহান ভাই এর মামির ভাই মামি কে বলেন আপা আপনার ছেলেটা কিন্তু মাসআল্লাহ দেখতে সুন্দর, শুনেছি মেডিকেলে প্রতি ইয়ারে ঢাকা মেডিকেলে টপার করেছে।আমাদের রিতু কিন্তু অনেক ভাল ছাত্রী বিহানের সাথে মানাবে ভালো।আমি কথা টা শুনেই বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে পড়লাম এই দিকে বিহান ভাই ও আমার দিকে তাকিয়ে পড়লেন।দুজনের চোখে চোখ পড়তেই আবার চোখ নামিয়ে নিলাম।

বিহান ভাই মামির দিকে চোখ কপাল ভাজ করে তাকালেন।উনি যে বিরক্ত হচ্ছেন সেটাই বুঝালেন।আমি হাত ধুয়ে উঠে চলে এলাম।আমাকে আসতে দেখে আহিন ও উঠে চলে এলো।মামি বলে দিলেন ভাই আমার ছেলে বিবাহিত।এই খানে যে মিষ্টি মতো দেখতে মেয়েটা ছিল আমার ননদের মেয়ে ওর সাথেই বিয়ে দিয়েছি।বিহান ভাই এর মামির ভাই এর মুখ টা যেনো এত টুক হয়ে গেলো।বিভোর ভাই বলেন আহা মামা এত সুন্দর ঘটকালি করছিলো দিয়া আর বিহানের সেটা চুলোয় গেলো।ইস কি সর্বনাশ।

বিহান ভাই এর মামির ভাই বিভোর ভাই কে বলেন তোমরা আমার সাথে মজা নিচ্ছিলা।আমাকে আগে বললেই পারতে।আমার বাচ্চা ভাতিজা আহিন টার হৃদয় টা ভেঙে যাবে শুনলে।

সোফায় বসে আছি আমি আহিন এসে আমার পাশে বসলো।আহিন আমাকে বলে দিয়া তোমার ফোন নং টা পেতে পারি।তোমার কি কাউকে পছন্দ আছে।আমি আহিন এর প্রশ্ন গুলা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।আমার উনি আমার আশে পাশেই ঘুর ঘুর করছেন তোকে তো কিছুই বলবে না বাড়ি গিয়ে যা করার আমাকেই করবে।আমি আহিন কে বললাম দেখুন আমি বিবাহিত।আহিন আমার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিয়ে বলে তুমি তো ভারী দুষ্টু।এত টুক মেয়েকে যে বিয়ে করবে তাকে জেলে পুরে দিবো।আমি আহিনের দিকে তাকিয়ে বলি দেখুন আমি সত্যি বিবাহিত। আহিন এবার আরো জোরে হেসে দিয়ে বলে, এই মেঘকণ্যা আমাকে এভাবে বোকা বানাও কেনো?আমাকে যতটা দূরে ঠেলে দিবে আমি তত টা কাছে আসবো।এমন সময় দেখি বিহান ভাই আহিনের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।বিহান ভাই উনার ফোন জোরে আছাড় মেরে বেরিয়ে এলেন।এইদিকে মামি ও রেডি বিভোর ভাই,রিয়া সবাই বেরিয়ে এলো সবাইকে বিদায় জানিয়ে।বিভোর ভাই আর রিয়া আসার সময় আহিন কে বলে এলো ওয়েলকাম টু অগ্রিম হৃদয় ভাঙা।

বাসায় ঢুকেই বিহান ভাই উনার শখের মাটির ফুলদানি টা আছাড় মারলেন।সাথে সাথে টুকরো হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো।মামি অবাক হয়ে গেলো তার ছেলের এমন উদ্ভব রাগ দেখে।বিহান ভাই সোজা নিজের রুমে গিয়ে সাওয়ার ছেড়ে তার নিচে দাঁড়িয়ে রইলেন।বিহান ভাই এর এমন রাগ দেখে আমি মামি কে বললাম মামি আমি আম্মুদের বাসায় চলে যাচ্ছি।বিহান ভাই এর রাগ না কমলে আসবো না।আমাকে আজ মেরে ফেললেও উনার সামনে যাবো না।আমি কোন ভাবেই উনার মার খেতে পারবো না। মামি আমাকে বলেন খবর দার কোন ভাবেই ও বাড়িতে যাওয়া চলবে না।তাহলে বিহান কে কোনভাবেই ঠান্ডা করা যাবে না।বিহান তোর মুখ দেখলে এমনি তেই ঠান্ডা হয়ে যাবে।কিন্তু দিয়া বিহান রেগে কেনো?আমি মামিকে কিছুই না বলে চুপ হয়ে রইলাম।প্রায় এক ঘন্টা পরে মামি আমাকে একটা কড়া গরম ব্ল্যাক কফি দিয়ে বলেন যা এটা বিহান কে দিয়ে আয়।আর নিজের স্বামির রাগ ভাঙানো শেখ একটু দিয়া।

আমি মামিকে বললেন প্লিজ মামি আজ তুমি যাও না।উনি আমাকে আজ মারবেই মারবে।মামি বলেন তুই যা আগে কিছুই হবে না।আমি রুমে গিয়ে দেখি বিহান ভাই নেই উনি এক্সসারসাইজ রুমে এক্সসারসাইজ করছেন।আমাকে এক্সসারসাইজ রুমে দেখে বলেন গেট আউট।গেট আউট হেয়ার।আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম কি নিয়ে রাগ করেছেন বিহান ভাই।বিহান ভাই উঠে এসে উনার গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে আমার হাত চেপে ধরেন আরেক হাত দিয়ে কফি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন।আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে রইলাম।এতটুকু করেই উনি শান্ত হন নি আমার দুই গানে স্ব জোরে দুইটা থাপ্পড় মেরে দিলেন।আমি ফুফিয়ে কেঁদে দিলাম।বিহান ভাই দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,তোর সমস্যা কি?আমি ঠান্ডা মাথায় থাকলে তোর ভাল লাগে না।কি সমস্যা তোর আজ বলতেই হবে। দিয়া তুই যদি এমন করতে থাকিস তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি কবে।আমি এই পৃথিবীতে একটা জিনিস সব থেকে বেশী অপছন্দ করি সেটা হলো তোকে কেউ ভাল লাগে বা ভালবাসি বললে। আমি কোন ভাবেই এটা মেনে নিতে পারি না।তুই একবার আলিপ,একবার আহিন অদ্ভুত। কাল ই আমি ঢাকা চলে যাবো তুই আলিপ,আহিন এদের নিয়ে থাকিস

চলবে,,,,

(সবাই কমেন্ট করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here