তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা ৮.

0
2123

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৮.
#WriterঃMousumi_Akter

?
আকাশে সাদা মেঘের খেলা চলছে।হঠাত সাদা মেঘ গুলো বিলীন হয়ে কালো মেঘের আবির্ভাব ঘটলো।চাঁদটা মেঘে ঢেকে ফেললো।পৃথিবী অন্ধকারে ঘনিয়ে গেলো।গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ফোটা পড়ছে বাইরে।আমি তখনের কথা গুলো ভেবেই যাচ্ছি।।বিভোর ভাই আর রাফি হাজার চেষ্টা করেও আটকাতে পারলো না বিহান ভাই কে।আমার গায়ে একটুও বল পাচ্ছিলাম না।আসলে আমার কি করা উচিত।এইদিকে লাজ্জা ও পাচ্ছিলাম বিহান ভাই এর বলা কথা গুলো সবাই শুনে নিলো ওরা কি ভাববে এখন থেকে।যদিও বিহান ভাইয়ের সেসবে পাত্তা নেই। কে কি ভাববে সেটা ভাবার ও সময় নেই তার।

বিভোর ভাই আর রাফি বিহান ভাই এর পিছু ছুটলো।মামি আমাকে কি বলবে বুঝতে পারছে না।আমি অনেক্ষণ নিশ্চুপ থেকে মামিকে বললাম মামি আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি। আমি এখানে থাকলে তোমার ছেলে হয়তো আর কোনদিন ই এ বাড়িতে আসবে না।মামি আমার হাত ধরে বলে দিয়া আমার তো মেয়ে নেই তাই তুই ই আমার মেয়ে।মামি বলে কি মায়ের অধিকার নেই।ছেলে তো চলেই গেলো এখন তুই ও চলে যাবি।আমি মামিকে বললাম মামি তুমি বোঝার চেষ্টা করো তোমার ছেলে আমাকে সহ্য ই করতে পারে না।আমি এখানে থাকলে সে আর কোনদিন ই আসবে না। মামি কঠিন গলায় বলে দিলো,,বিহান যেখানে খুশি যাক তুই অন্তত আমাকে একা ফেলে চলে যাস না।বিহান রাগি কিন্তু এতটা রুড কিভাবে হলো।আমার ছেলের মাঝে এতটা পরিবর্তন। আমি মামিকে জড়িয়ে ধরে ভীষণ আবেগের সাথে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।মামি আমাকে বলে দিয়া তুই কাঁদছিস কেনো? বিহানের এমন ব্যবহার কি তুই আজ প্রথম বার দেখলি।ও তো আগে থেকেই এমন।রাগ ঠিক হলে আবার নিজেই ফিরে আসবে।আমি নিঃশব্দে কেঁদে গেলাম।

মামা তার ব্যবসায়ের কাজে বেশীর ভাগ ই বাইরে থাকে বাড়িতে মাসে দু এক দিন আসে।এ বাড়িতে মামির সাথে আমাকেই থাকতে হয়।ছোট বেলা থেকেই এ বাড়িতে আমার জন্য বরাদ্দ রুম রাখা আছে।মামিকে কিছুই না বলে আমি আমার রুমে গিয়ে সুয়ে পড়লাম।

বাইরে হালকা ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে।দমকা বাতাস ও বইছে। ঝড় বৃষ্টির মাত্রা টা বেড়ে চলেছে।বুকের মাঝে ভীষণ যন্ত্রণা আর ব্যাথা করছে।একমাত্র বিহান নামক ওষুধ ই পারে আমাকে এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে।মনের মাঝের যন্ত্রণা গুলো বৃষ্টি হয়ে চোখ দিয়ে অঝরে ঝরে পড়ছে।কিছুতেই চোখের পানি বন্ধ করতে পারছিনা।এই মুহুর্তে বিহান ভাই কে পেলে জড়িয়ে ধরে মনের সব অশান্তি মিটিয়ে নিতাম।কিন্তু বিহান ভাই কি আর কোনদিন আসবেন আমার কাছে।আমি জানি আর কোনদিন আমার সাথে কথা বলবেন না উনি।পৃথিবীতে আমিই বোধহয় একমাত্র প্রেমিকা যে কিনা নিরবে ভালবেসে যাচ্ছি।তাকে কষ্ট হলেও বলতে পারি না। সে আমাকে নিয়ে আদেও কিছু ভাবে কিনা সেটাও জানিনা।এই ভয়ানক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে কি বিহান ভাই আসবে।।

ক্লান্ত মন নিয়ে গান শুনতেছি।গান টা যেনো বুকে বিধতেছে।

Sajda tera kar na sakoon
Toh bandagi kya bandagi
Tere bina jeena pade
Toh zindagi kya zindagi
Kya rang laaya Dil ka lagaana
Kya rang laaya Dil ka lagaana
Goonje hawaa mein
Bichhde dilaan diyaan duhaiyaan
Vey badi lambiyaan se judaiyaan
Tere nishaan yaadon mein hain
Tu kyun nahi taqdeer mein
Nadaan dil hai dhoondta
Qurbat teri tasveer mein
Mumkin nahin hai tujhko bhulaana
Mumkin nahin hai tujhko bhulaana
Dekhe Khudaya do aashiqaan diyaan tabahiyan
Vey badi lambiyaan se judaiyaan

দু চোখের পাতা এক করতে পারছি না।ঘুম আসছে না কিছুতেই।হঠাত দেখি রুমের মাঝে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে স্ট্রেট সোজা হয়ে।রুমে আলো নেই বাইরে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে।এ বাড়িতে আজ আমি আর মামি ছাড়া কেউ নেই।তাহকে কে উনি?ফোনের আলো জ্বালিয়ে চমকে গেলাম ভেজা চপচপে শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বিহান ভাই।এই প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টির মাঝে উনি ফিরে এসেছেন।এটা কি মনের ভাবনা নাকি নিছক ই কল্পনা নাকি সত্যি উনি এসেছেন।

ভেজা শরীর নিয়ে আমার কাছে এগিয়ে আসে উনি।উনাকে দেখে ভয়ে আমি পেছনে হাটতে থাকি। উনি আমার দিকেই এগিয়ে আসছেন আর আমি পেছনে এক পা দু পা করে পিছিয়ে ওয়ালে গিয়ে ঠেকে গেলাম।বিহান ভাই ওয়ালে এক হাত বাধিয়ে আরেক হাত আমার মুখে আলতো স্পর্শ করলেন।রক্তাক্ত হাত টা দেখে আমি কাঁন্নার বাঁধ আটকাতে পারলাম নাহ।হাতে এখনো হালকা রক্ত বেরোচ্ছে।

“এভাবে কাঁদছিস কেনো? এখনো ঘুমোস নি কেনো?”

“কেনো কাঁদছি আপনার মতো হৃদয় হীন কিভাবে বুঝবে।”

“দিয়া আমি তো হৃদয়হীন তুই বলিস সব সময়। তাহলে আমার হৃদয়ে এত উথাল পাথাল ঝড় কেনো? আমার হৃদয়ে কান পেতে শোন দিয়া কি আছে আমার হৃদয়ে। তোকে আজ বলতেই হবে আমি কেনো ঢাকা যেতে গিয়েও যেতে পারলাম না।কিসের টানে ফিরে এলাম।আমার মন কি চাই সেটা তোকেই বলতে হবে।”

“আমি কিভাবে বলবো বিহান ভাই।”

“তোকেই বলতে হবে কারণ সব সমস্যা তোকে নিয়ে হচ্ছে আমার মনে।মনের চারপাশ দিয়া নামক ভাইরাস দিয়ে আক্রমণ করে রেখেছিস।মনের গন্ডি থেকে তুই নামক ভাইরাস টা বের ই করতে পারছি না।”

“আমাকে নিয়ে কিন্তু কেনো?”

“এই কিন্তুর কারণ তো তুই জানিস।সারাক্ষণ মন নিয়ে গভেষণা করিস।আমি তো তোর মতো মনের মাঝে কি আছে পড়তে পারি না।তাই তোকেই বলতে হবে আমার মনে কি আছে।প্লিজ দিয়া বল।কি চাই আমার মন।”

বিহান ভাই বড্ড উদাসীন ভাবে প্রশ্ন করছেন।কেমন মাতাল মাতাল লাগছে।এত টা ভিখারীর মতো আচরণ কখনো করতে দেখি নি।

“কারো মনের খবর কিভাবে বলা যায় বিহান ভাই।”

“আমি আর পারছি না দিয়া।মনের মাঝে ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে।তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করে ও খারাপ লাগছে।আগে তো কখনো এমন হতো না।”

“বিহান ভাই ওই চিঠিটা কে আমাকে লিখেছে আমি জানিনা। আপনি কি ওই চিঠিটার জন্য আরো রেগে আছেন।”

“তুই কি সত্যি জানিস না কে লিখেছে।”

“না”

“তুই এত অবুঝ কেনো দিয়া।কবে বড় হবি আর কবে বুঝবি।”

“কি বুঝবো বিহান ভাই”

“তুই কি সত্যি বুঝিস না চিঠি দেখে।
তুই কার বাইকে জিন্স টপ্স পরে উঠেছিলি।”

“শুধু মাত্র আপনার ই বিশ্বাস করুণ।আর কারো বাইকে উঠি নি।”

“আর কারো বাইকে উঠলে আমি এই পৃথিবী থেকে বাইক ই বিলুপ্ত করে দিতাম।”

“চিঠিটা কার বিহান ভাই”

“আমি তোকে দিয়েছিলাম।”

“আপনি”

“হ্যাঁ আমি”

“আপনি আমাকে? ”

আমার মাথায় বজ্রপাত পড়লো বিহা ভাই এর কথা শুনে।উনি আমাকে চিঠি লিখেছেন।উনি।মানে বিহান ভাই।এটা আদেও পসিবল।আমি নির্বাক হয়ে আবার প্রশ্ন করলাম সত্যি আপনি আমাকে।

“আমি তোকে কিছুই না দিয়া।তোর চোখ মুখ এমন লাগছে কেনো খাস নি কিছু।”

“আপনি ও তো কিছুই খান নি।”

“তুই তো চাস না আমি খেয়ে বেঁচে থাকি।”

“তাহলে তো বারবার আমার রাগের কারণ হতিস না।”

“বিহান ভাই ভেজা কাপড় টা চেঞ্জ করুণ আগে।”

“আগে তোকে খাওয়াবো তারপর।ওয়েট আমি রান্না ঘর থেকে আসছি।”

আমাকে বসিয়ে রেখে রান্না ঘর থেকে ফিরে এলেন উনি ডিম ভাজি আর ভাত নিয়ে।মানুষ টা কি অদ্ভুত তাইনা।

আমার মুখের সামনে বসে,, “হা কর ডিম ছাড়া কিছুই ভাজি করতে পারি না।আম্মুর আজ মন খারাপ তাই খাবার ফ্রিজে রাখে নি ওটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।ডিম ভাজিতে চলবে নাকি অন্য কিছু চাই।”

আমি ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলাম।

“ওভাবে কি দেখছিস।আমি এর বেশী আর কিছুই পারি না।এত রাতে জ্বালাবি না খাবো না বলে। বাইরে ঝড় না হলে তোকে এখন রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতাম”

আমি হেসে দিয়ে বললাম এটাতেই চলবে।

উনি আমাকে খাইয়ে দিতে দিতে আবৃত্তি করেন,,

“তুমি দেখে নিও, আমার এই অসুখী
চোখজোড়ার অসহায়ত্বের কথা ভেবে কোন
এক মাঝরাতে তোমার ঘুম ভেঙে যাবে।
সে রাতে তুমি আর ঘুমোতে পারবে না।
তোমার চারপাশে ঘুরেফিরে খুঁজবে
আমাকে।
আমার অভাবে সেই সকালটা
মৃত্যু যন্ত্রণাময় হবে তোমার।
আমার চোখের ভেতরকার এইসব অসহায়ত্ব
জেঁকে বসবে, তোমার বুকের ভেতর।

তুমি খুঁজবে এই চোখ, এই অসুন্দর মুখ।
এই চিবুক , তোমার নামে দলিল করে দেওয়া-
আমার বুক।
কখনো কখনো খুঁজবে,
আমার মতন একজোড়া বিশ্বস্ত হাত।
প্রচন্ড রাগের শেষে,
রাগটুকু ঝেড়ে ফেলতে,
যাচ্ছে তাই বলে গালি দেবার জন্য
আমাকেই মনে পড়বে তোমার।

মন খারাপের এক বিকেলে,
আমার কাঁধের অথবা বুকের তীব্র
অভাববোধে তুমি নিঃশব্দে কাঁদবে।
কোন কোনদিন, এই অসুন্দর ঠোঁটে চুমু খেতে
ইচ্ছে করবে তোমার।

তুমি পৃথিবী সুদ্ধ মানুষের মাঝে খুঁজবে
আমাকে পাগলের মতন।
এই সমস্ত বিশ্বস্ত ভাবনা নিয়ে,
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ হয়ে একদিন আমি
মরে যাবো।”

চলবে,,

(ভাল লাগলে অবশ্যই জানাবেন।গান টা শুনতে শুনতে লিখছিলাম।সবার কমেন্ট চাই, কবিতাংশের কবির নাম জানিনা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here