#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৭..
#WriterঃMousumi_Akter
বিহান ভাই এর মুড অফ মানে পৃথিবীর কেউ তার মুড অন করতে পারবে না।দুনিয়াতে কেয়ামত শুরু হলেও না।উনার মুড অফ থাকলে কেউ ধারে কাছেও যায় না।রুমের সব জিনিসপত্র ভেঙে অস্হির করে তুলবেন।ওয়ালে নিজের হাত নিজে ঘুষি মেরে নিজেকে আহত করবেন।তোহা আপু আর রুশা আপুর ব্যার্থ চেষ্টা বিফলে গেলো বাকিরা ভুলেও চেষ্টা করার সাহস টুকুও করলো না।সবাই এক ঘন্টা ডাকাডাকির পর নিরাশ হয়ে বাসায় চলে গেলো।মামা মামি আর বিভোর ভাই আমাকে জোর করে আটকে রাখলেন।কারণ এর আগে যতবার উনি রেগে গিয়েছেন পৃথিবীর কেউ কন্ট্রোল করতে পারে নি একমাত্র আমি ছাড়া।আমি থেকে গিয়েছি কিন্তু আজ আমি বেঁচে থাকবো কিনা জানিনা।দোয়া দুরুদ যা আছে সব ই পড়লাম।বিভোর ভাই রাফি আর আমি বসে আছি।রাফি বলছে বিহান ভাই এর রাগের কারণ কি আমরা ফুচকা খাচ্ছিলাম সে জন্য কি উনি বিরক্ত হলেন।বিভোর ভাই বলে না না আমার তো মনে হচ্ছে দিয়াকে আলিপ খাইয়ে দিয়েছে এই নিয়ে রাগ বলেই শয়তানি একটা হাসি দিলেন।আমি বললাম বিভোর ভাই আপনিও না।রাত আট টা বেজে গেছে। পায়চারী করেই যাচ্ছি আমরা ড্রয়িং রুমে।মামি এসে বললেন বিহান দুপুরে খাই নি।এতক্ষণে ডাকাডাকি করছি কোনো পাত্তাই নেই।কার উপর আবার আজ ক্ষেপলো রে বিভোর।বিভোর বলে কাকিমা আমার মনে হচ্ছে তোমার বউমার উপরে রেগে আছে।বউমাকে কেউ খাইয়ে দিয়েছে কিনা তার ঠিক নেই।রাফি আড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দেই।মামি ও আমার দিকে তাকিয়ে বলে কিরে দিয়া বিহানের গার্লফ্রেন্ড কি এমন কাজ করেছে।আমি মামি কে বললাম মামি তোমার এমন কর্কট ছেলের প্রেমিকাও আছে সেটা ভাবা যায়।কে ওর সাথে প্রেম করবে। মামি বলে সময় হলে দেখা যাবে দিয়া।মামি খুব ই ফ্রেন্ডলি আমাদের সবার সাথে।
মামি আমাকে বলে দিয়া তুই একটু বিহান এর জন্য খাবার নিয়ে যাবি মা।আমার ছেলে আজ সারাদিনে কিছুই খাই নি।আমি মামিকে বললাম অকালেআ আমার প্রাণ হারাতে বলছো আমি।আমি মরে গেলেও এই মুহুর্তে উনার সামনে যাবো না।উনাকে আমার ভয় লাগে এমনি সারাক্ষণ চড় থাপ্পড় মারতে থাকে।মামি বলে তুই যা আমি বলছি তো যতই রাগ থাকুক তোকে কিছুই বলবে না।
ভাতের প্লেট টা মামি আমার হাতে দিলো।বিহান ভাই পাবদা মাছের ঝোল খুব পছন্দ করেন।মামি পাবদা মাছের ঝোল আর দেশী মুরগী রান্না করেছে।মামি আমার হাতে প্লেট টা দিয়ে এগিয়ে দিলেন।বিভোর ভাই আর রাফি বলছে কোনো ঝড় উঠলে আমাদের বলিস দিয়া।আল্লাহর নামে বিহান ভাই এর রুমেত দিকে রওনা হলাম।উনি কখন দরজা খুলেছেন জানিনা।একভাবে ৪ ঘন্টা রুমের দরজা লাগিয়ে ছিলেন উনি।রুমের মাঝে প্রবেশ করি দেখি রুম অন্ধকার।রুমের লাইট টা ভয়ে ভয়ে অন করলাম।পকেটে এক হাত গোজা আরেক হাত ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছেন উনি।আমি বললাম বিহান ভাই আপনার খাবার সারাদিন কিছুই খান নি খেয়ে নিন।কোনো উত্তর পেলাম না।আবার ও বললাম আপনার খাবার।বিহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলেন তুই কোন সাহসে আমার রুমে এসছিস।তোকে কে আসতে বলেছে এখানে।
মা মা মামি।মামি বললো আপনি খান নি তাই।
তুই এক্ষুনি বের হ আমার রুম থেকে দিয়া।রাগলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।অঘটন ঘটে যাবে।
আপনি না খেয়ে থাকলে শরীর খারাপ করবে।
বিহান ভাই ভাতের প্লেট ঝাড়ি মেরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে আমার হাত খুব শক্ত করে চেপে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছেন উনি।সাপের মতো ফুঁসছেন ।আমার কচি হাত ভেঙে যাওয়ার মতো অবস্থা।
আমি বললাম বিহান ভাই ব্যাথা লাগছে বলেই কেঁদে দিলাম।
লাগুক! তুই আমার শরীর খারাপ হবে সেটা নিয়ে দুঃচিন্তা করছিস। আমার মন খারাপ হবে সেটা নিয়ে তো ভাবিস না।শরীরে আঘাত লাগলে মেনে নিতে পারি কিন্তু মনে আঘাত লাগলে আমি মেনে নিতে পারি না।আমার মনের ক্ষুদা মিটাতে পারিস না পেটের ক্ষুদা মিটাতে এসছিস।
হাতে লাগছে।।।
এতটুকু শরীরের ব্যাথা সহ্য করতে পারছিস না আমার মতো কোনদিন মনে ব্যাথা পেলে কিভাবে সহ্য করবি তুই।।।
কি করেছি আমি বিহান ভাই।
বিহান ভাই আমার হাত তো চেপে ধরে রেখেছেন ই আরেক হাত দিয়ে কাঁচের গ্লাস চেপে ধরে আছেন হাতের মাঝে।
কি করেছিস জানিস না।সমস্যা কি তোর। সারাদিন আলিপ আলিপ আলিপ।কে এই আলিপ।আলিপ এত সাহস কিভাবে পাই তোর মুখে তুলে খাইয়ে দেই।Answer me damd.আমি জাস্ট আর নিতে পারছি না এই আলিপ টপিক্স।আমি তোর আশে পাশে এই আলিপ কে সহ্য করতে পারছি না।তোর মুখে সারাদিন এই আলিপের নাম ক্যানো থাকে। এই আলিপ টপিক্স আমি টোটাল ই আর নিতে পারছি না।বিহান ভাই ভীষণ চিৎকার দিয়ে কথা গুলো বলছিলেন।
সাথে সাথে উনার হাতে থাকা গ্লাস টা ভেঙে উনার হাত কেটে যা তা একটা অবস্থা হয়ে গেলো।রক্তে হাত ভিজে গেলো।রক্ত দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।আমি বিহান ভাই এর হাত ধরতে গেলাম উনি ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দিলেন।
খুব দরদ তাইনা তোর।তোর আমার প্রতি খুব দরদ।এত দরদ আমার আর সহ্য হচ্ছে না সিরিয়াসলি।আমি ফ্যাল ফ্যাল করে কেঁদে দিলাম।আমার কাঁন্না দেখেও বিহান ভাই একবার ও আমার দিকে তাকালেন না।নিজের ব্যাগ গুছিয়ে সোজা ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হলেন।
বাইরে মামি, বিভোর ভাই আর রাফি দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ কথা শুনলো।বিহান ভাই ওদের সামনে দিয়ে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে গেলেন।বিভোর ভাই,রাফি, মামি এত ডাকাডাকির পরেও বিহান ভাই কে আটকাতে পারলো না।বাইকে স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।
চলবে।,,,
(একদিনে দুই পার্ট দেওয়া টা টাফ।তাই একটু ছোট পর্ব হলো।আশাকরি সবাই কমেন্ট করবেন)