তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা ৪২.অন্তিম পর্ব

0
4634

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৪২.অন্তিম পর্ব
#WriterঃMousumi_Akter

বিহানের অসুস্থতা দিন দিন বাড়তেই থাকে।বিহানের বুকে একটা সময় প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয়।ব্যাথা বাড়ছে কমছে কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই আছে বিহান।বিহান কাউকে বলে নি সে অসুস্থ। নিজের মতো করে ট্রিটমেন্ট নিচ্ছিলো।এরই মাঝে দিয়া ও হঠাত অসুস্থ হয়ে পড়ে।সব খাবারে অরুচি, বমি,মাথা পেইন বিহান ব্যাপার টা দেখে দিয়াকে বলে দিয়া কোনো খুশির খবর নেই তো।কেমন যেনো ডাউট লাগছে আমার।বিহান দিয়াকে বলে কাল সকালে ইউরিন টা টেস্ট করে নিও।দিয়া ইউরিন টেস্ট করে দেখে সত্যিই মা হতে চলেছে।দিয়া বিহান বলে বিহান ভাই পজেটিভ।বিহান এই পজিটিভ কথাটা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়। একটা ছেলের কাছে বোধহয় ভীষণ বড় কোনো পাওয়া এটা।এই আনন্দ টার থেকে বড় কোনো আনন্দ নেই।বিহান কিছু সময় চুপ থেকে দিয়াকে জড়িয়ে ধরে গালে কয়েক টা চুমু দিয়ে বলে দিয়া ইটস বিগ সারপ্রাইজ।আমি তো ভাবতেই পারছি না।দিয়া বলে বিহান ভাই আমাকে নামান আগে নামায়ে দিন।বিহান দিয়া কে নামিয়ে দিয়ে দিয়ার পেটে কান পেতে বলে এই যে জুনিয়র রাজকুমার বা রাজকুমারী তোমাদের মম এখনো আমাকে ভাই ডাকে।নালিশ টা তোমার কাছে রইলো।দিয়া বিহানের কাধে আধো আধো গলায় কিল দিতে দিতে বলে দুষ্টু কোথাকার।বিহান দিয়ার গলা জড়িয়ে ধরে বলে তুমি ভাই ডাকলে তোমার বেবি তো মামা ডাকবে আমায়।আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে আর ভাই ডাকবো না তুমি ডাকবো খুশি।এক গাল হেসে দিয়ে বিহান বলে হুম অনেক বেশী খুশি।

বিহান ফেসবুকে একটা বেবির পিকচার আপলোড দিয়ে ক্যাপশন দেই জুনিয়র আসছে।

পোস্ট টা দেখেই,রিয়া,বিভোর,মেহনুবা সবাই ফোনের পর ফোন দিচ্ছে।এই প্রথম তাদের ভাগনে বা ভাগনি আসছে।সবাই নামের লিস্ট খুলে বসে আছে কে কি নাম রাখবে।যে হারে নামের লিস্ট করা হয়ে হয়েছে তাতে দিয়ার বেবির নাম ৫০ টার উপরে চলে যাবে।দিয়ার বেবি আসার আগমনে দিয়ার ফ্যামিলি আরেকবার উৎসব মুখর হয়ে উঠলো।দিয়ার মা, বিহানের মা তাদের নাতি নাতনির জন্য ছোট ছোট নকশী কাঁথা সেলাই করছে।

বিহান রোজ বাইরে থেকে এসেই দিয়ার পেটে কান পেতে তাদের জুনিয়র এর কথা শোনে।

দিয়ার প্রেগ্ন্যাসির সময় দিয়া হঠাত মারাত্মক ভাবে সারপ্রাইজ হয়ে যাবে।বেবি হওয়া টাইমে সন্ধ্যার পর বাইরে থাকা খুব একটা ভাল কথা নয় তাই বিহান একটা নৌকা সাদা ফুলে সজ্জিত করে।পুরা নৌকাটা সাদা ফুলের বাসর এর মতো করে সাজিয়ে তোলে।ফুল দিয়ে নোকায় বাদাম টাঙানোর মতো লেখা ছিলো শুভ জন্মদিন বউ।বিকাল বেলা বিহান দিয়া কে নিয়ে নদীর পাড়ে গিয়ে এমন সুন্দর সারপ্রাইজ দিবে দিয়া ভাবতেই পারে নি।দিয়ার সারপ্রাইজ টা এমন ই ভাল লাগে খুশিতে লাফিয়ে উঠে।দিয়ার এই হাসি মুখের জন্যই তো বিহানের এত আয়োজন।

ফুলের নৌকায় বসে আছে ফুলের রাণি দিয়া।বিহান দিয়ার কোলে মাথা রেখে সুয়ে আছে।

দিয়া আমাকে তুমি এতটা ভালবাসো৷ কেনো?

ভাল তো আপনি ও আমাকে বাসেন মিস্টার বিহান।

হুম বাসি তো তাই আগে রাগ দেখাতাম।

রাগ দেখাতেন কেনো?

জানিনা আমি কোনো কিছু প্রকাশ করতে পারতাম না তবে যেকোনো ভাবে তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করতো।আমি তোমার আশে পাশে কোনো কিছুই সহ্য করতে পারতাম না।তবে তখন আমি দূর থেকে বেশী ফলো করতাম তোমাকে।

আর আমার তো খুব ই খারাপ লাগতো যে বিহান ভাই আমাকে হয়তো কোনদিন ভালবাসবে না।আমার ভীষণ দূর্বলতা ছিলো।

আমি জানি দিয়া তখন তোমার অনেক দূর্বলতা ছিলো।তোমার আমার প্রতি যে ভীষণ ভালবাসা ছিলো আমি সত্যি অবাক হয়ে যেতাম।এত বার মেরেছি কখনো কিছুই বলো নি।

জানেন দিন গুলো খুব মিস করি।ভালো ছিলো সেই দিন গুলো।কত দুষ্টুমি করতাম বিভোর ভাই,রাফি,আবিদ, রিয়া সব গুলাতে মিলে।

বিহান দিয়ার হাত ধরে বলে দিয়া আজ সবাই অনেক হ্যাপি আছে ভাল আছে এটাতেই অনেক ভাল লাগে।দিয়া তোমার মুখের এই হাসিটা যেনো সারাজীবন অক্ষত থাকে।

আপনি আমার হাত টা এভাবে ধরে রাখলেই আমার মুখে এমন হাসি সারাজীবন থাকবে।আমার ভাল থাকার মেডিসিন তো আপনি।জানেন খুব মানসিক তৃপ্তি পাই আমি আপনি পাশে থাকলে।

আচ্ছা আমি যদি হারিয়ে যায় হারিয়ে যায় দিয়া।

প্লিজ বিহান ভাই এমন কিছু বলবেন না।

না দিয়া কেউ তো চিরদিন সাথে থাকে না।জন্ম হলে মৃত্যু আছেই।

এমন কিছু কখনো হবে না বিহান ভাই।হলেও আমি নিজের জীবন দিয়ে আপনাকে বাঁচিয়ে তুলবো।আমি প্রমাণ করে দিবো নিজের জীবনের থেকে ভালবাসার মানুষের জীবন টা অনেক কিছু মূল্যবান।

দিয়ার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।কথা বলতেই গিয়ে দিয়ার হৃদয় এ বেদনার এক অস্হির তোলপাড় হচ্ছিলো

বিহান দিয়ার চোখ মুছে দিয়ে বলে পাগলি।আমি মরে গেলেও সাথে থাকবো।

ছয় মাসের প্রেগন্যান্ট দিয়া।বিহান রোজ ক্যালেন্ডারে দাগ দেই কবে তাদের অনাগত সন্তান পৃথিবীতে আসবে।নিজের অসুস্থ বউ কে নিয়ে রোজ ভার্সিটিতে যাচ্ছে বিহান। একজন সম্পূর্ণ কেয়ারিং হাজবেন্ড।

ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে এসেছে দিয়ার।আবির,মেহনুবা,বিভোর,রিয়া,বিহানের মা বাবা,দিয়ার মা বাবা সবাই ঢাকায় এসছে।

বিহানের একটা ওটি থাকায় বিহান সেদিন বাসায় আসতে পারে নি।দিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে।হঠাত মাঝ রাতে দিয়ার আম্মু দিয়া কে ডাকাডাকি করে।এত রাতে ডাকার কোনো কারণ ই দিয়া খুজে পাই না।দিয়া চোখ মুছতে মুছতে গিয়ে বলে কি হয়েছে আম্মু।বাড়িতে কারো কোনো প্রব্লেম হয় নি তো।দিয়ার আম্মু বলে দিয়া কারো কোনো প্রব্লেম হয় নি কিন্তু।

কিন্তু কি আম্মু।

বিহান নাকি আজ ওটিতে সেন্সলেস হয়ে পড়ে গিয়েছে।

দিয়া বলে মানে আম্মু।বিহান ও ঠিক আছে তো। ও তো কখনো সেন্সলেস হয় না।আম্মু ওর কি হয়েছে এক্ষুণি আমাকে নিয়ে চলো।আবির বলে দিয়া তুই এত উত্তেজিত হলে বেবির জন্য খুব ক্ষতিকর।মানুষের শরীর হয়তো প্রেসার লো হয়েছে তাই এমন হয়েছে।দিয়ার বাসা থেকে হসপিটাল সামান্য একটু দূরে সে রাতেই সবাই হসপিটালে পৌছালো।ততক্ষণে বিহানের সেন্স ফিরে এসছে।দিয়া ছুটে গিয়ে বিহান কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলে কি হয়েছিলো আপনার।আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম।আমার কেমন অস্হির অস্হির লাগছিলো।আপনি ঠিক আছেন তো।বিহান দিয়ার কপালে চুমু দিয়ে বলে আরে পাগলি এভাবে কেঁদো না।সব ঠিক হয়ে যাবে।আমার কিছুই হয় নি।একটু সেন্স লেস হয়েছি আর তো কিছু না।

বিহান সেদিন থেকে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ে।বুকের ব্যাথায় বিহানের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।আবার ও বিহান সেন্সলেস হয়ে যায়।বিহানের সব রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানা যায় বিহানের হার্ট এ বেশ বড় রকমের ইনজুরি।হার্ট এ কয়েক টা ছিদ্র যে কোনো টাইমে হার্ট ব্লক হয়ে যাবে আর বিহান কে বাঁচানো যাবে না।হসপিটালের সব থেকে বড় হার্টের ডাক্তার বিহান।যার হাতে সব মানুষের প্রাণ বাঁচে আর সে নিজেই বুঝতে পারে নি তার হার্ট এ এত বড় সমস্যা।

আই সি ইউ তে শিফট আছে বিহান কোনো হুশ নেই বিহানের।

রিপোর্ট গুলা বিহানের ফ্যামিলির কাছে বলাতেই দিয়া ডাক্তারের কলার চেপে ধরে প্রচন্ড জোরে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে কিসের ডাক্তার আপনি।একটা মানুষকে বাঁচাতে পারবেন না।বিহান কে আপনাকে বাঁচাতেই হবে।বিহান এখনো ওর অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে পারে নি আর তার আগেই ও চলে যাবে।বিহানের কিছু হতে পারে না ডাক্তার।দিয়াকে উত্তেজিত হতে দেখে দিয়ার আম্মু,আবির সবাই মিলে দিয়াকে ছড়িয়ে বলে শান্ত হ দিয়া।আল্লাহ যদি কারো আয়ু রাখে সে মরে না।বলতে বলতে দিয়া সেন্সলেস হয়ে যায়।

দিয়ার জ্ঞান ফিরতেই দিয়া আবার ও কেঁদে ওঠে বিহানের আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলে মামি ওরা কি বলছে এসব।আমার বিহান নাকি বাঁচবে না।মামি ওদের চুপ করতে বলো।ডাক্তার রা এসব কি বলছেন।মামি তোমার ছেলে আমার প্রাণ। তোমার ছেলেকে ছাড়া দিয়া বাঁচবে না।বিহানের সন্তান কে নিয়ে বিহানের অনেক স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন মিথ্যা হতে পারে না মামি।আমার বিহান কে আমার চাই মামি।দিয়ার এই ভীষণ কাঁন্না দেখে কারো চোখের পানি থেমে থাকে নি।

বিহান মানেই পুরা ফ্যামিলিতে আস্ত একটা ভালবাসা।বিহান নামেই যেনো ভালবাসা।কাজিন গুষ্টির সব থেকে প্রিয় মানুষ টাই বিহান।

এমন সময় দিয়ায় লিভার পেইন ওঠে।বিহানের অসুস্থতার কথা শুনে মারাত্মক উত্তেজিত হয়ে দিয়ার কন্ডিশন ও খুব খারাপ।এই মুহুর্তে ডাক্তার রা কি করবে।দিয়ার হাজবেন্ড এখন অসুস্থ কার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে কি করবে।দিয়ার নাকেও অক্সিজেন দেওয়া হয়।ডাক্তার দিয়াকে বলে আপনি বিহান স্যার এর ওয়াইফ আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিহান স্যার আর তার সন্তান।এই মুহুর্তে বাচ্চার মা হিসাবে আমরা আপনাকে বলছি আপনার কন্ডিশন ভাল না নরমাল ডেলিভারি পসিবল নয়।আপনাকে এই মুহুর্তে অপারেশন করতে হবে।দিয়া নাক থেকে অস্কিজেন খুলে বলে স্যার আমাকে একটু বিহান এর কাছে নিয়ে যাবেন।ডাক্তারের জীবনে এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্য এই প্রথম বার ই দেখলো।ডাক্তারের চোখ ছল ছল করছে।দিয়া যেনো পাথর হয়ে গিয়েছে।দিয়ার রঙিন আকশ টা বেরঙিন হয়ে গিয়েছে।বিহান কে নিয়ে দেখা সব স্বপ্ন কালো মেঘে ছেয়ে গিয়েছে।দিয়া সব সময় বর্ষণের অপেক্ষা করে কালো মেঘ সরিয়ে বর্ষন কে শুভেচ্ছা জানায় আর আজ দিয়ার জীবনে কাল বৈশাখী ঝড় এ ছেয়ে গিয়েছে।

ডাক্তার স্ট্রেচারে করে বিহানের কেবিনের নিয়ে গেলো দিয়াকে।পাশাপাশি দুইটা স্ট্রেচারে সুয়ে আছে বিহান দিয়া দুজনের নাকেই অক্সিজেন। দিয়া পেটের পেইনে ছটফট করছে।এই পেইন দিয়ার বিহানের অসুস্থতার পেইনের থেকে বড় নয়।

বিহানের মুখ টা দেখে কাঁন্না পাচ্ছে দিয়ার।চোখ বুঝে অচেতন ভাবে পড়ে আছে।দিয়ার দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।

দিয়া বিহানের হাত টা আস্তে করে ধরে।বিহানের দিকে ঘাড় কাত করে তাকিয়ে আছে অশ্রু ভেজা চোখে দিয়া।আস্তে করে ডাকছে বিহান প্লিজ আমার ওটির আগে একবার চোখ খোলো বিহান।

অলরেডি ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছে বিহানের হাতে আর এক ঘন্টা টাইম আছে।অপারেশন না করে রেখে দিকে এক ঘন্টার মাঝেই মারা যাবে বিহান।অপারেশন করলে ১% চান্স বাঁচানোর।বিহানের ফ্যামিলি এই ১% চান্সের উপর বিহানের অপারেশন করতে বলেছে।বিহান কে বাঁচাতে হলে নতুন হার্ট দিতে হবে।কিন্তু এত অল্প সময়ে কোথাও কোনো হার্ট পাওয়া যায় নি।প্রতিটি মানুষের কাছে নিজের প্রাণের থেকে প্রিয় অন্য কিছু নেই।কেউ স্বইচ্ছায় নিজের হার্ট দিতে চাইবে না।কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে এটা সম্ভব নয়।বিহান দিয়ার এক ই সাথে ওটি সন্ধ্যা ৬ টায়।সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য যদি কোনো মেয়ে ওটি তে ঢুকার আগে জানতে পারে ফিরে এসে আর তার স্বামিকে দেখতে পাবেনা সেই মেয়ে জানে কষ্ট কতটা ভয়ানক হতে পারে।

খুব ই অদ্ভুত ভাবে দিয়া বিহানের হাত ধরাতে বিহানের জ্ঞান ফিরে আসে।বিহান আস্তে করে চোখ খুলে অক্সিজেন খুলে বলে দিয়া।দিয়া প্রচন্ড আবেগে কেঁদে বলে তুমি খুব নিষ্টুর বিহান।এভাবে অচেতন থেকে আমাকে কেনো শাস্তি দিলে।তোমার সন্তান তার বাবাকে চাই বিহান।সে তার বাবা ছাড়া থাকতে পারে না।তোমার পুচকু খুব কাঁদছিলো তোমায় ছাড়া।বিহানের চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে।বিহান দিয়াকে বলে দিয়া আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে।প্লিজ আমার সামনে কেঁদো না।আমায় ক্ষমা করে দিও দিয়া আমি তোমাকে একা করে দিয়া চলে যাচ্ছি।কিন্তু কখনো নিজেকে একা ভেবো না আমি ওপারে তোমার অপেক্ষায় থাকবো।আমি চলে গেলে কোনো পাগলামো করবে না কথা দাও।আমাদের পুচকু কে একজন বড় হার্টের ডাক্তার বানাবে তুমি।দিয়ার চোখের পানি অঝরে ঝরছে।

বিহান প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না।দিয়া পাগলের মতো কাঁদতে কাঁদতে উত্তেজিত হয়ে বলে,,বিহান প্লিজ আমায় একা ছেড়ে যেও না।আমার এ পৃথিবীর কিছুই চাই না।শুধুই তোমায় চাই বিহান।প্লিজ বিহান আমাকে নিঃস্ব করে চলে যেও না।আমি সহ্য করতে পারবো না।আমি থাকতে পারবো না তোমায় ছাড়া বিহান।আমি মরে যাবো বিহান আমি পাগল হয়ে যাবো।তুমি মাটির নিচে থাকবে আর আমি সেই মাটির উপর দিয়ে হাঁটতে পারবো না।আমি মাটিতে পা রাখতে প্রতিটি পদক্ষেপ আমাকে মনে করিয়ে দিবে তুমি মাটির নিচে আছো।এত বড় শাস্তি আমায় দিও না বিহান।দিয়ার আত্মচিৎকারে হসপিটালের এমন কেউ নেই কেঁদেছিলো না।

—আমাদের পথচলা এতটুকুই ছিলো দিয়া। নিয়তির বাইরে আমরা কিছুই করতে পারি না।আমার শেষ চাওয়া তুমি উল্টা পাল্টা ডিসিশন নিও না কখনো।বিহান নাম টা তোমার ভালবাসায় থেকেই যাবে।

—-মরতেই যদি হবে চলো এক সাথে মরে যায়।

—-দিয়া আমাদের সন্তানের কি হবে।আমি চলে গেলে তুমিও চলে গেলে পৃথিবী ওকে বড় অবহেলা করবে।আমাদের সন্তানের জন্য তোমাকে শক্ত হতেই হবে।

—আই লাভ ইউ বিহান ভাই।আই রিয়েলি লাভ ইউ।জানিনা ওটিতে কার কি হবে।যদি আমার কিছু হয় আর আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করে তুলেন আমাদের সন্তানের নাম সকাল রাখবেন।ওকে খুব বড় ডাক্তার বানাবেন।

ওটির সব কিছুই রেডি।বিহান দিয়ার হাত ধরা অবস্থায় স্ট্রেচারে করে দুজনকেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।ওটির দুইটা রুম পাশাপাশি অবস্হিত।দুজন কে দুই রুমে নেওয়ার সময় দুজন কেউ কারো হাত ছাড়তে চাইছিলো না।দুজনে দুজনের দিকে অশ্রভেজা চোখে তাকিয়ে ছিলো।

বাইরে বিহানের আম্মুর অবস্থা খুব খারাপ।একমাত্র ছেলের এমন করুণ পরিণতি ভাবতেই পারছে না।মাতৃ হৃদয় হাহাকার করছে।বিভোর, আবির,আবিদ,রাফি,রিয়া,মেহনুবা হসপিটালে গড়াগড়ি করছে কাঁন্নায়।ভাগ্যর এই নির্মম পরিনতি কেউ মেনে নিতে পারছে না।

সবাই শুধু এটাই ভাবছে দিয়া ওর সন্তান কে নিয়ে ফিরে এসে কিভাবে বিহানের মৃত মুখ দেখে সহ্য করবে।এত টুকু বয়সে দিয়া বিহান কে হারিয়ে পাগল হয়ে যাবে।বিহানের অপারেশন চলছে।দিয়ার ওটির আলো নিভে গিয়েছে।বাইরে থাকে বাঁচ্চার কাঁন্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

বাবার মৃত্যুর দিনে সন্তান ভূমিষ্ট হলো এর থেকে দূর্ভাগ্য কোনো সন্তানের হতে পারে না।

সন্তান কে এনে দিয়ার আম্মুর কোলে তুলে দেওয়া হয়।হুবহু দিয়ার মতো হয়েছে দেখতে।আরো একঘন্টা হয়ে গেলো কিন্তু দিয়াকে আনা হলো না ওটি থেকে।সবার কাছে অবাক লাগছে দিয়াকে এখনো ওটি থেকে বেরোনো হচ্ছে না।সবাই জিজ্ঞেস করছে ডাক্তার দের কাছে দিয়া ঠিক আছে তো।এখনো বেরোনো হচ্ছে না কেনো দিয়াকে।বাইরে সবার দুঃচিন্তা আরো কয়েক গুন বেড়ে গেলো।

এমন সময় বিহানের ওটির লাইট বন্ধ হয়।ডাক্তার বাইরে বেরিয়ে এলে সবাই এগিয়ে গেলে ডাক্তার হেসে দিয়ে বলে কনগ্রাচুলেশন বিহান স্যার আউট অফ ডেঞ্জার।উনাকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।কিন্ত দিয়া।

দিয়ার আম্মু বলে দিয়া কি ডাক্তার।

সরি দিয়াকে বাঁচানো সম্ভব হয় নি।

দিয়ার পুরা ফ্যামিলি যেনো থমকে গেলো।সাগরের ঢেউ যেন বন্ধ হয়ে গেলো,ঝর্নার পানি জায়গায় থমকে গেলো, পাখিরা ডানা ঝাপটানো বন্ধ করে দিলো।আকাশে যেনো ঘুর্নিঝড়ের মতো ভয়ংকর মেঘ এর ডাকাডাকি।দিয়ার মৃত্যুর খবরে প্রকৃতির সব কিছু থেমে গেলো।

আবির, বিভোর ওদের কাছে যেনো পৃথিবীর সব থেকে বিষাক্ত কথা ছিলো এটা।বোনের মৃত্যু ভাইয়ের কাছে এতটা যন্ত্রনার সেই ভাই জানে যার বোন হারিয়ে যায়।বিহান হারিয়ে যাবে সেই শোকে এতদিন সবাই পাথর আবার এখন দিয়ার কথা শুনে কেউ নিজেকে সামলাতে পারছে না।দিয়ার পুতা ফ্যামিলি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

এমন সময় বিহানের জ্ঞান ফিরে আসে।বাইরে এত কাঁন্নাকাটি শুনে বিহান মনে করে হয়তো বিহানের জন্য সবাই কাঁদছে।স্ট্রেচারে করে বিহান কে বাইরে আনা হয়।ঠিক তখন ই ওটি থেকে সাদা কাপড়ে ঢেকে আনা হয় দিয়ার মরা দেহ।সাদা কাপড় টা সরাতেই বিহান চমকে ওঠে।বিহান দিয়াকে সাদা কাপড়ে ঢাকা দেখে বলে দিয়া ওর গায়ে সাদা কাপড় কেনো?কি হয়েছে দিয়ার।বিহান কে সান্তনা দেওয়া ভাষা কারো জানা নেই।

বিহান বেড থেকে উঠে দিয়াকে তুলে জড়িয়ে ধরে বলে তুমি তুমি এভাবে সুয়ে আছো কেনো দিয়া।এটা তুমি হতে পারো না।দিয়া তোমাকে উঠতেই হবে।মা ফুপ্পি দিয়া কথা বলছে না কেনো?ডাক্তার আমি বেঁচে আছি কিভাবে আর দিয়া কিভাবে মারা গেলো।

ডাক্তার তখন একটা ভিডিও মেসেজ দেখালো বিহান কে।

“ডাক্তার আমি জানি আমার শরীর এখন রিস্কে আছে।কিন্তু আমার সন্তান কে আমার বাঁচাতেই হবে।আমি মরে গেলে কারো কিছু হবে না।কিন্তু বিহান কে বাঁচতেই হবে।ও বেঁচে থাকলে অনেক মানুষ সুস্থ জীবন পাবে।ও একজন বড় ডাক্তার।তাই ওকে বেঁচে থাকতেই হবে।আমার হার্ট বিহান কে দিন ডাক্তার তবুও আমার সন্তান আর আমার বিহান কে বাঁচতেই হবে।”

দিয়ার অনুরোধ আমরা ফেলতে পারি নি বিহান স্যার।দিয়ার লাইফ এমনিতেই রিস্কে ছিলো।দিয়া ওর হার্ট আপনাকে দিয়ে দিয়েছে।

আর একটা চিরকুট দিয়েছে।

বিহান চিরকুট টা খুলে দেখে “আমার হয়েই থেকো বিহান”

বিহান দিয়াকে বলে সেল্ফিস নিজে কষ্ট সহ্য করতে পারবি না বলে নিজে ঘুমিয়ে গেলি।আর আমাকে এই অসহনীয় যন্ত্রণার জীবন দিয়ে গেলি।আমি তোকে ছাড়া কিভাবে থাকবো দিয়া।সেদিন বিহান ভীষণ কেঁদেছিলো।কেউ শান্তনা দিতে পারে নি।

দিয়াকে বিহানের বাড়িতেই দাফন করা হয়।বিহান দিয়া দুই পরিবারের হাসি আনন্দ দিয়ার সাথেই মুছে গিয়েছে।

কেটে গেছে ৫ টা বছর।আকাশে প্রচন্ড মেঘ।বিহান আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাত পেছন থেকে হাত ধরে বলে পাপ্পা কি দেখছ।

তোমার মাম্মি কে।

মাম্মি কোথায় পাপ্পা।

ওই আকাশের বর্ষনে সকাল।

পাপ্পা মনে হচ্ছে ঝড় হবে।

বিহান মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে বলে বাবা আমি তো তবুও বর্ষণের জন্য অপেক্ষা করছি।তোমার মাম্মির যে বর্ষণ খুব পছন্দ। তাই বর্ষন হলেই মনে হয় তোমার মাম্মি এসেছে।

মাম্মি কোথায় পাপ্পা।আমার কাছে আসে না কেনো?

তোমার মাম্মি আমার হার্টের মাঝে।বুকে হাত দিলেই ওর হার্টের স্পন্দন শুনতে পাই আমি বাবা।আমার বুকে মাথা দাও মাম্মিকে শুনতে পাবে।

সকাল ওর বাবার বুকে মাথা দিয়ে মাম্মির স্পন্দন শুনতে থাকে।

বর্ষন হলেই বিহান শুনতে পাই আই লাভ ইউ বিহান ভাই।

দিয়া যেনো বিহানের সাথেই আছে।দিয়া ছেড়ে যাবার পর বিহান আর কোনদিন হাসে নি।একজন হাসি হীন গম্ভীর মানুষ হয়ে আছে।শুধু মেয়ের জন্য মরে যেতে পারে নি।প্রতিটি রাত বিহানের জন্য ঘুমহীন।

বিহানের প্রতি দিয়ার এমন ভালবাসা ইতিহাসে থাকার মতো।

বিহান দিয়ার নামে অনেক বড় হসপিটাল করেছে।যেখানে বিনা চিকিৎসায় মানুষ চিকিৎসা নেই আর দিয়ার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে।

দিয়ার কবরে গিয়ে বিহান রোজ বলে আমি তোমার হয়েই আছি।

সমাপ্ত।

(জানি আপনারা কষ্ট পাবেন।আমি চেয়েছি দিয়ার ভালবাসা যেনো সবার মনে স্মৃতি হিসাবে থাকে।উপন্যাসের উদ্দেশ্য এটাই ছিলো দিয়ার নিখুত ভালবাসার প্রকাশ।বিহান দিয়ার পরিপূর্ণ ভালবাসা মৃত্যু কেও হার মানায় সেটাই উদ্দেশ্য ছিলো।দিয়ার বিহান কে জীবন দিয়ে বাঁচানে আর বিহানের দিয়ার জন্য রোজ বর্ষনের অপেক্ষা।আস্ত একটা ভালবাসার প্রমান। বিহান দিয়া আমার লেখা সব থেকে পছন্দের চরিত্র।বিহান দিয়া নিয়ে আশা করবো আপনাদের ইমোশন টা কমেন্টে বর আকারে তুলে ধরবেন।সবাই স্টোরি গ্রুপে রিভিউ দিবেন।বেষ্ট রিভিউ গুলো পেজ এ পোস্ট করা হবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here