তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা ৪০.

0
2707

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৪০.
#WriterঃMousumi_Akter

হসপিটাল থেকে মেহনুবা আপু কে নিয়ে সবাই ঢাকা ছেড়ে চলে আসলাম।মেহনুবা আপু মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে।পরিবারের প্রতিটি মানুষ সাপোর্ট করছে আপুকে।আবির ভাইয়া আর মেহনুবা আপুর বিয়েটা ধুমধাম করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।বিভোর ভাই বলে আবির ভাইয়ার সাথে এক ই দিনে সে রিয়াকে বিয়ে করতে চাই।প্রস্তাব টা মন্দ নয় সবাই অনেক এক্সসাইটেড প্রস্তাব টা শুনে।ফ্যামিলির সবাই মিলে ঠিক করলো তিন দিন পরেই ওদের বিয়ে দিবে।এমন সময় মামি বলে আমি চাইছি বিহান আর দিয়ার ও এদের সাথে গায়ে হলুদ বিয়ে হোক।বিহান ভাই এর আপত্তি থাকলেও সবার খুশির জন্য উনি মেনে নিতে বাধ্য হলেন।

এখন ফ্যামিলিতে মারাত্মক একটা বিয়ের লগন পড়ে।বিয়েটা অন্য রকম ভাবে দেওয়ার ব্যাবস্থা করে ফ্যামিলি থেকে।আমাদের ছ জনের এক ই সাথে গায়ে হলুদ দিবে।এমন টা হয়তো কোথাও হয় না কিন্তু আমাদের ফ্যামিলি থেকে একটু এক্সট্রা আনন্দের জন্য এমন ভাবেই বিয়ে ঠিক করে।

মোটামুটি সব ঝামেলা মিটে গিয়েছে।।

কিন্তু মেজ কাকা কাকি কে বেশ কয়েক টা থাপ্পড় মারেন।কাকি কে ডিভোর্স দিবেন বলে সোজা জানিয়ে দিয়েছেন।উনি কোনভাবেই কাকির সাথে আর সংসার করবেন না।উনার ভাগনির জীবন টা তার ভাগনে ই করেছে।মাঝ রাস্তায় একা ছেড়ে চলে গিয়েছে।মেজ কাকা কোনভাবেই কাকি মনির সাথে আর সংসার করবেন না।আমাদের কারো কথাই কাকা শুনছেন না।আলিপের আম্মুকে ফোন দিয়ে বলে দেন যে তার বোন কে যেনো নিয়ে যায়।আর তাদের ফ্যামিলির সাথে কাকা কোনো আত্মীয়তা রাখতে চাই না।কাকা তার শ্বশুর বাড়ির সবার সাথে জঘন্য বাজে বিহ্যাভ করেন।কাকি মেহনুবা আপুর কাছে এসে কেঁদে কেঁদে ক্ষমা চাই।কাকি বলে মা আমি কখনো চাই নি যে তোর সাথে এমন কিছু হোক আমি আলিপ কে কখনো ক্ষমা করবো না।আমাকে ক্ষমা করে দে মা।আমার আর বিহান ভাই এর কাছে এসেও ক্ষমা চান।অবশেষে সবার রিকুয়েষ্ট এ কাকা কাকি কে ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেন।কিন্তু সোজা বলে দেন তার বাবার বাড়ির কারো সাথে কোনো রিলেশন সে রাখতে পারবে না।কাকি ও সেটা মেনে নেন।এখন পরিস্হিতি সব টা স্বাভাবিক।

বাড়ির সবার মনে এক্সট্র হাসি আনন্দ।পরিবারের ছ ছটা ছেলেমেয়ের বিয়ে বলে কথা।ছেলেদের জন্য সেইম সেরওয়ানি মেয়েদের জন্য সেইম বেনারসি গহনার অর্ডার দেওয়া হয়।বাসায় রীতিমতো সব হাজির হয়েও গেলো।বাড়ি সাজানো কাজে বিজি সবাই।বিয়েটে আমাদের বাড়িতেই হবে।পুরা বাড়ি ঝলমল করে সাজানো হলো আগামিকাল গায়ে হলুদ। হলুদের সব কিছুই রেডি হয়ে গিয়েছে।বাসায় বড় বক্স আনা হয়েছে।কাজিন গুষ্টির সবাই মিলে বিভিন্ন ধরনের গান চালাচ্ছে কেউ নাচছে কেউ গাইছে সবার মনে একটা অন্য রকম আনন্দ কাজ করছে।

ছাদের এক কর্নারে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আলিপ আর মেহনুবা আপু।

“আবির ভাই তুমি কেনো আমার জন্য তোমার জীবন টা নষ্ট করছো?”

“কে বললো নষ্ট করছি?”

“আমি জানি এটা যে কোনো ছেলের পক্ষে অনেক বড় একটা ব্যাপার।এমন একটা মেয়েকে মেনে নেওয়াটা খুব বেশী ইজি ব্যাপার নয়।”

“মেহু অনুরোধ করবো আর কখনো এগুলা মনে করবি না।অতীত কে বার বার কেনো টেনে আনছিস।”

“আবির ভাই তোমার কি একটুও খারাপ লাগছে না। সত্যি করে বলো।আমি চাইনা তুমি মনের সাথে যুদ্ধ করে তোমার জীবন টা নষ্ট করো।”

“আমার কেনো খারাপ লাগবে মেহু?”

“তুমি এমন অদ্ভুত কথা বলছো যে আবির ভাই।আমার শরীর অন্য পুরুষ স্পর্শ করেছে এটা জেনেও তুমি বিয়ে করতে চাইছো এটা কি খারাপ লাগা নয়।
আমি জানি পরিবারের সম্মান আর আমার জীবন বাঁচাতে তুমি বাধ্য হয়ে বিয়েটা করছো।”

“থ্যাংক্স গড একটা জিনিস বুঝেছিস আমার কাছে তোর জীবন টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ”

“হ্যাঁ এজন্যই তো বাধ্য হয়ে বিয়েটা করছো?”

“আমাকে কেউ বাধ্য করেনি মেহু।আমার মন আমাকে বাধ্য করেছে। ”

“তোমার মন।”

“হুম আমার মন!আচ্ছা সবাই তোর নাম ধরে ডাকে আমি যে মেহু মেহু করে ডাকি। তোর কি কখনো মনে হয় নি আমি মেহু মেহু করি কেনো?”

“এত বড় নাম ধরে ডাকতে পারো না তাই।”

“হুম মেহু হুম।চোখের ভাষা কখনো বুঝলি না বা আমি বুঝাতে পারলাম না এটাই ব্যার্থথা।”

“মেহনুবা আপু আবার ও কেঁদে দেই।আবির ভাই মেহনুবা আপুর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে আবার কাঁন্না কেনো?”

“আবির ভাই আমার নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী লাগছে অন্য কেউ ছুঁয়েছে আর তুমি আমাকে গ্রহন করতেছো।তোমার মতো এমন কঠিন হৃদয়ের মানুষ আমার জীবনে আমি আর দেখি নি।তুমি সত্যি মহান।”

“মেহু শরীর স্পর্শ করলে কি ভালবাসা কমে যায়।আমার তো তোর শরীর চাই না মেহু।তোর শরীরের প্রতি আমার লোভ নেই।আমার মাথায় কখনো এটা আসে নি কে তোকে স্পর্শ করেছে না কি হয়েছে।ওটা আমার কল্পনাতেও আসে না।আমার কল্পনাতে শুধু তুই।তোর ওই হাসি খুশি মুখ আর ইনোসেন্ট মন টা কে চাই।”

“মেহনুবা আপু তাও কাঁদছে।আবির ভাইয়া বলে এভাবে কাঁদলে আমি বুঝবো আমাকে তোর পছন্দ নয়।”

“না আবির ভাই ভালবাসার মানুষ চিনতে আমি ভুল করেছি তাই কাঁদছি।”

“এখন কি সঠিক মানুষ কে চিনতে পেরেছিস।”

“মেহনুবা আপু আবির ভাইয়ের বুকে কয়েক টা কিল ঘুষি মেরে বলে সব তোমার জন্য।তুমি যদি আমার জীবনে আগে আসতে তাহলে আজ এত কিছু হতো না।সব কিছুর জন্য তুমি দায়ী।”

“আমার সকল অপরাধের জন্য ক্ষমা করুণ আমায় মহারাণি।”

আবির ভাইয়া আর মেহনুবা আপুর সুন্দর বন্ডিং টা দেখে আমার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটলো।যেনো প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিলাম।এমন সময় কানের কাছে গরম নিঃশ্বাস পড়তেই শিউরে উঠলাম।তাকিয়ে দেখি বিহান ভাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।বুকে হাত বেধে সাদা একটা টি-শার্ট পরে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।আজ মনে হচ্ছে অনেক দিন পরে উনাকে দেখছি আমি।বিহান ভাই এর সুন্দরের আলাদা বর্ণনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আজ যেনো নতুন করে ভাললাগার ছোয়া পেলাম।বিহান ভাই আমার কানের কাছে এসে বলেন মিসেস বিহান কি এখনো আমাকে ঘৃণা করে।সে কি সেপারেশন চাইছে নাকি ডিভোর্স। রাগি রাগি চোখ নিয়ে তাকিয়ে বললাম দেখুন বিহান ভাই ওগুলা আমি বলি নি আমার রাগ বলেছে।ওগুলা বলে আমাকে খোঁচা দিবেন না মোটেও।বিহান ভাই আমাকে বলে এগুলা আমি বলবো রোজ বলবো।আমাকে যখন বলেছিলে আমার কেমন লেগেছিলো।আর আমি যখন আপনাকে ওই তোহার সাথে দেখেছিলাম আমার কেমন লেগেছিলো।আর সব দোষ আপনার।আপনি তো আমাকে সব টা খুলে বলতে পারতেন।আচ্ছা চলো মেহনুবার কাছে যায় ওর কাছেই ঘটনাটা শুনবে।

আমি আর বিহান ভাই মেহনুবা আপু আর আবির ভাই এর কাছে গেলাম।

মেহনুবা আপু আমাকে দেখে বলে দিয়া আমাকে ক্ষমা করে দে বোন।আমি অনেক খারাপ ব্যাবহার করেছি তোর সাথে।

আমি আপুর কাছে জানতে চাইলাম আপু তুমি কেনো খারাপ ব্যাবহার করতে।

তোহা আমাকে ভুল পথে চালাচ্ছিলো।তোহা আমাকে বলেছিলো তুই বিহান ভাই কে ছেড়ে আলিপ এর সাথে রিলেশন এ আছিস।আর আলিপ আর তুই দুজনে মিলে আমার সাথে প্রতরনা করেছিস।

আপু তোমার একবার মনে হল না এটা করে আমার লাভ।

আমার ঠিক ভুল চিন্তা করার মতো সময় ছিলো না দিয়া।আমার পুরা পৃথিবী উলটপালট হয়ে যাচ্ছিলো।

আপু তুমি এগুলো আমাকে একবার ও বললে না কেনো?

তোহা আমাকে বলতে দেই নি দিয়া।তোহা বলছিলো তোর জন্য আলিপ আমাকে ঠকিয়েছে।তোর কানে এটা গেলে তুই সবাই কে জানিয়ে দিবি আমার আম্মুর মান সম্মান নষ্ট হবে আর আম্মু সুইসাইড করবে।

অবশেষে আমি বাধ্য হয়ে বিহান ভাই এর সরনাপন্ন হই।আমি বিহান ভাই এর কাছে বলেছিলাম তুই এসবের জন্য দায়ী কিন্তু বিহান ভাই আমার সব ভুল ভেঙে দেন।বিহান ভাই না থাকলে আমার ভুল ভাঙতোই না।আমি যখন বুঝতে পারলাম তোহা আমার মামাতো বোন হয়ে আমার ক্ষতি চেয়েছে আমি তখন দুঃখে অভিমানে সুইসাইড করি।

তোহা আপু কি করেছে।

আমি তোহা আর আলিপের কথা গুলো শুনে ফেলছিলাম।তোহা আলিপ কে বলছিলো দিয়া কে কঠিন শাস্তি দিতে হবে।তোহা আর আলিপ দুজনে মিলে আমার সাথে এমন করেছে।ওরা এমন ভাবে নাটক সাজিয়েছিলো তুই যাতে বিহান ভাই কে ভুল বুঝিস।আর তুই এ কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বিহান ভাই কে ডিভোর্স দিস।তোহা অনেক আগে থেকে এসব প্লান করে রেখেছিলো দিয়া।তোহা আর আলিপ মানুষ না অমানুষ। শুধু মাত্র তোকে কষ্ট দিবে বলে আমাকে মাঝ খানে রেখেছে গুটি হিসাবে।

আবির ভাইয়া বলে মেহু দিয়া তোরা কষ্ট পাস না। সব কিছু এখন ঠিক হয়ে গিয়েছে আর তোহা কে যা করতে হয় আমি দেখবানি।

এমন সময় ছাদে তোহা আপু এসে মেহনুবা আপুকে বলে এখন কেমন আছো?

বিহান ভাই তোহা আপুর গালে ঠাসসস শব্দে কয়েক টা থাপ্পড় দিয়ে বলে আমার রাগ শুধু শুনেই গিয়েছো চোখে দেখো নি তাইনা।এবার তোমাকে আমার সব থেকে খারাপ রূপ দেখাবো।আমার এই থাপ্পড় যদি মনে থাকে ভাল হয়ে যেও।এর পর ও যদি ভাল না হও কপালে অনেক দুঃখ কষ্ট আছে বলে দিলাম।নেক্সট যদি এরকম কিছু দেখি কপালে অনেক খারাপ কিছু হবে বলে দিলাম।

চলবে,,,,

সবাই নিচের লিংকে লাইক ফলো দিন।এই পেজ এ রিপোর্ট আসতেছে।লিংকে দেওয়া পেজ Mousumi akter নাম এ পাবেন দুদিন পর থেকে।

https://www.facebook.com/1.mousumi.akter/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here