#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৩৯.
#WriterঃMousumi_Akter
(Diya ahmed আইডি টা আমার।নাম চেঞ্জ করে মৌ দিবো।কেউ বিভ্রান্ত হবেন না।)
হসপিটালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে মেহনুবা আপু।অবস্থা অনেক সিরিয়াস।ডাক্তার সিওর নয় আপু বাঁচবে কিনা।হাতে স্যালাইন নাকে অক্সিজেন দেওয়া।খিচুনি হচ্ছে অনেক।দেখে মনে হচ্ছে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। আপুকে দেখে অঝরে কেঁদে চলেছি আমি।বিহান ভাই অনেক দৌড়াদৌড়ি করছেন।ডাক্তার সাথে কথা বলছেন যেনো যেকোনো ভাবে মেহনুবা আপু সারভাইব করে যায়।ফুপ্পি কে আরেক টা বেডে স্যালাইন দেওয়া।মেয়ের এমন অবস্থা দেখে ফুপ্পির অবস্থা অনেক খারাপ।কোনো মায়ের পক্ষে সম্ভব নয় সন্তানের এমন অবস্থা দেখে সহ্য করে থাকা।
পৃথিবীতে বোধহয় ভাল মানুষদের ঠকানো অনেক সোজা।বারবার ভাল মানুষেরা ঠকে, বেঈমানি আর প্রতারণার স্বিকার হয়।বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজন ভালবাসার মানুষ সব সময় সহজ সরল মানুষ গুলাকে ঠকায়।একটা মানুষের মাঝে জটিলতা থাকলে তাকে ঠকানো ইজি নয়।যে মানুষ গুলো সহজে মানুষের মুখের কথা বিশ্বাস করে নেই ইতহাস সাক্ষি আছে বারবার তারাই ঠকে।আজ তার নিদর্শন আপু মেহনুবা আপু।মেহনুবা আপু অচেতন হয়ে পড়ে আছে হসপিটালের বেডে।এই বুঝি প্রাণ টা যায় যায় অবস্থা। ইনোসেন্ট মুখ টা দেখলেই যে কারোর ই মায়া হবে।আমাদের পুরা ফ্যামিলি হসপিটালে ছুটাছুটি করছে।
পেটে বিষাক্ত বিষক্রিয়া যাওয়াতে বাচ্চাটা মারা গিয়েছে।প্রচন্ড ব্লিডিং হচ্ছে আপুর।এক দিকে বিষক্রিয়ার যন্ত্রণা অন্যদিকে বাচ্চা নষ্ট হওয়াতে ব্লিডিং সব মিলিয়ে আপুর লাইফ রিস্ক।
ফ্যামিলির কেউ জানে না তার সুইসাইড এর কারণ।সবাই এটা নিয়ে আলোচনা করছে কিন্তু কেউ কোনো সমাধান পাচ্ছে না।এমন সময় ডাক্তার এসে জানান তাদের মেয়ে প্রেগন্যান্ট ছিলো।কথাটা শুনে আব্বু,চাচ্চুরা,কাকিরা,কাজিন রা সবাই চমকে যায়।বাড়ির মেয়ের এমন টা কথা শুনে যে কেউ ই চমকে যাবে।আর চমকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ব্যাপার নয়।এখন সবার মনে একটা প্রশ্ন বাচ্চাটা কার।বাচ্চাটা কার এই প্রশ্নর থেকে সবার এখন একটাই চিন্তা মেহনুবা আপু যেনো সুস্থ হয়ে ওঠে।সবাই যেমন কাঁন্না কাটি করছে তেমন দোয়া ও করছে।
মেহনুবা আপুকে ঘিরে আমরা সবাই বেডের চারপাশে আছি।কেবিন জুড়ে ই আমরা।আব্বু মেহনুবা আপুর মাথায় হাত দিয়ে বলছে মা তোকে কখনো মেয়ে ছাড়া ভাগনি ভাবিনি।যে ভুল ই করিস আমাদের কাছে না বলে আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে যেতে চাস কেনো?মানুষের জীবনে অনেক কিছুই ঘটে তাই বলে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।আমরা তোর সাথে আছি মা।মা তুই চোখ খোল প্লিজ। সবাই আবেগে বিভিন্ন কথা বলেই যাচ্ছে।বিহান ভাই বার বার চেক করেই যাচ্ছে।বিহান ভাই দুঃচিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছেন।কেটে গেছে চার টা ঘন্টা।
আমি অবাক করা নয়নে তাকিয়ে আছি নিষ্পাপ আপুর মুখের দিকে।শুধু মনে মনে বলছি আপু তুমি সুস্থ হও তোমার সাথে হওয়া সব অন্যায়ের প্রতিশোধ আমি নিবো।আমি ছাড়বো না ওই শয়তান কে আপু।
এমন সময় আবির ভাইয়া ছুটে এলো হসপিটালে।ভাইয়া খুব হাঁপাচ্ছে।মেহনুবা আপুর খবর টা শুনে ভাইয়া ছুটে এসেছে।ভাইয়া বাসায় ছিলো না।হসপিটালে এসেই বিহান ভাইয়ের সাথে দেখা আবির ভাইয়া।আবির ভাইয়া বলে বিহান মেহনুবার কন্ডিশন কেমন এখন।বিহান ভাই বলে আবির ভাই এসো আমার সাথে প্লিজ এত উত্তেজিত হইও না।
ভাইয়া কেবিনে প্রবেশ করতেই মেহনুবা আপুর জ্ঞান ফিরে আসে।মেহনুবা আপুর জ্ঞান ফিরতেই আম্মু আপুকে জড়িয়ে ধরে। কাকি রা সবাই আপুকে জড়িয়ে ধরে।ফুপ্পি পাশের বেডে অচেতন। সবাই আপুকে বলে তুই কেনো এমন করলি বল কেনো এমন করলি।মেহনুবা আপু কাউকে কিছু না বলে ফুফিয়ে কাঁদে।
আপুর চারপাশে সবাই আপুকে ঘিরে আছে।আপুকে ঘিরে সবার নানান প্রশ্ন।
তখন আপু কাঁদতে কাঁদতে বলে আমাকে ক্যানো বাঁচালে তোমরা।আমার বেঁচে থাকার অধিকার নেই।আমি তোমাদের দেওয়া ভালবাসার মূল্য দিতে পারিনি।আমি তোমাদের মান সম্মান নষ্ট করেছি।এই মুখ দেখানোর কোনো মুখ নেই আমার।প্লিজ আমাকে মরতে দাও।
‘আবির ভাইয়া প্রচন্ড রাগে মেহনুবা আপুর গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে খুব সাহস হয়েছে তাইনা।তাই বলে তুই মরে যাবি।হেরে যাবি তুই।নিজের জীবন এতই সস্তা তোর।’
‘আমাকে আরো মারো আবির ভাই, মেরে ফেলো।তবুও আমাকে মরতে দাও।’
‘কেনো মরবি তুই বল।”
‘তাহলে কি করবো।সমাজ আমাকে কলঙ্কিনী বলবে।ফ্যামিলির সবাই আমাকে খারাপ নজরে দেখবে।তাছাড়া কে এসব জেনে আমাকে গ্রহন করবে আবির ভাই।সব কষ্টের ভাগ কি সবাই দেওয়া যায়।এসব জেনে কোনো ছেলে আমাকে মেনে নিবে না আবির ভাই।তাই আমার মরে যাওয়ায় ভালো।আমি অনেক ভুল করেছি আমি ঠকেছি এই কষ্ট আমি আর বইতে পারছি না।’
মেহনুবা আপুর কথা শুনে সবাই কেঁদে দিলো।আসলে এই প্রশ্নের উত্তর কারো কাছেই নেই।
সবাই কে চমকে দিয়ে আবির ভাই বলে আমি নিবো তোর কষ্টের ভাগ।আমি দায়িত্ব নিবো তোর।আমি সব জেনে গ্রহন করবো তোকে।কিন্তু আমি তোকে মরতে দিবো না মেহু।আমি তোকে নতুন পৃথিবী দিবো।তোর আপত্তি না থাকলে আমি বিয়ে করবো তোকে।
চলবে,,
(দুঃখিত ছোট পর্বের জন্য রাত ১০ টায় আরেক টা পর্ব দিবো)