#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৩৫.
#WriterঃMousumi_Akter
পড়ন্ত শীতের বিকালের মিষ্টি রোদ বড়ই মিষ্টি লাগে।কালো জ্যাকেট আর কালো জিন্স পরে বিভোর ভাই কে অস্হির লাগছে দেখতে।আমি, রিয়া, আর বিভোর ভাই বাসার সামনে দিয়ে হাঁটছি।বাদামি কালারের চাদর এনে দিয়েছেন বিভোর ভাই আমাকে আর রিয়াকে।আমি আর রিয়া দুজন ই বাদামি কালারের চাদর পরেছি।সামনেই একটা হালিমের দোকান।যদিও হালিম আমার তেমন পছন্দ নয়।কিন্তু রিয়ার অনেক পছন্দ।ওর পছন্দের জন্যই বাধ্য হয়ে হালিমের দোকানে গেলাম।আমার এমনিতেও হালিম খেতে ভাল লাগছে না।আমি এক সাইডে বসলাম।বিভোর ভাই আর রিয়া কে একটু স্পেস দিলাম আলাদা সময় কাটানোর জন্য।
এমন সময় একটা বাচ্চা শীতে কাঁচছে আর আমার মুখের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।বাচ্চাটার বয়স ছয় হতে পারে আনুমানিক।খুব মায়াবী দেখতে বাচ্চাটা।আমি বললাম খাবে বাবু তুমি।বাচ্চাটা হেসে দিয়ে বললো হ্যাঁ।আমি ওর মুখে হালিম দিচ্ছিলাম আর ও খাচ্ছিলো।মূহুর্ত টা মারাত্মক সুন্দর লাগছিলো দেখতে।বাচ্চাটা কে খাইয়ে দিলে আমার গালে একটা পাপ্পা দিয়ে বলে তুমি খুব ভালো।ওর হাসিটা কি মারাত্মক ছিলো।ওই মুহুর্তে আমার মনে হচ্ছিলো আমার নিজের ও একটা বেবি থাকলে এভাবে গলা জড়িয়ে ধরে পাপ্পা দিতো।ইস কি কিউট সেই মুহূর্ত।
ভাবতে ভাবতে তাকিয়ে দেখি রিয়া আর বিভোর ভাই এর রোমান্টিক মোমেন্ট। বিভোর ভাই রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলছেন,,
“হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে,
মনবাড়িয়ে ছুঁই
দুইকে আমি এক করি না
এক কে করি দুই।
হেমের মাঝে শুই না যবে
প্রেমের মাঝে শুই,
তুই কেমন করে যাবি?
পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া
আমাকেই তুই পাবি।”
বিভোর ভাই এর কথা গুলো মারাত্মক মিষ্টি।বিভোর ভাই রিয়াকে হালিম খাইয়ে দিতে দিতে বলেন,,
“রিয়া ছোট বেলা থেকে তোমাকে আমার মারাত্মক ভাল লাগতো।কিন্তু বলতাম না কারণ তুমি অনেক টাই ছোট ছিলে।তাছাড়া কিছু বললে যদি বাড়িতে বলে দিতে সবাই আমাকে উল্টাপাল্টা ভাবতো।মেয়েরা তো অনেক স্মার্ট এ দিক থেকে।কেউ তাকে হাজার মাইল দূর থেকে ফলো করলেও বুঝে যায় আর তুমি এত বছরেও বুঝলে না।”
“আমি সব সময় ই বুঝতে পারতাম।সত্যি বলতে আমার ও খুব ভাল লাগতো আপনাকে বুঝতে দিতাম না।”
“আমাকে কি সত্যি তোমার ভাল লাগতো।”
“কেনো লাগবে না শুনি।এমন সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলে কার না ভাল লাগে।”
“তুমি তো ডাক্তার হবে।আমার থেকে অনেক বেশী দাম হবে তোমার।এই ছোট্ট ব্যাংকার কে কি ভাল লাগবে।”
“এটা কেমন কথা।ভালবাসা কি ছোট বড় যোগ্যতা বিচার করে হয়।আপনি যেদিন থেকে আমাকে ভালবাসেন সেদিন কিন্তু আমার মেডিকেল পড়ার কথা ভাবিও নি।আজ মেডিকেল পড়ি বলে আমার পেশার সাথে সাথে কি আমি মানুষ টাও বদলে যাবো।আপনি চাইলে আমি ডাক্তারি পড়বো না।তবুও আপনি এভাবে ভাববেন না প্লিজ।”
“এমন কথা ভুলেও বলবে না কখনো।আমার বউ একজন এমবিএস ডাক্তার হবে।আমার বউ হওয়ার থেকে ডাক্তার হওয়াটা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। একজন ডাক্তার দেশের সম্পদ।মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য তোমার মতো ডাক্তার লাগবে।”
“একটা বেলি ফুলের মালা রিয়ার চুলে বেঁধে দিয়ে বিভোর ভাই বলেন তোমার কি বেলি ফুল পছন্দ। রিয়া হেসে দিয়ে বলে আপনি দিলে সব ই পছন্দ আমার।তবে আজ থেকে বেলি আমার পছন্দ।”
ওদের ভালবাসাটা সত্যি নিঁখুত।দেখে দু’চোখ জুড়িয়ে গেলো।
সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরে এলাম।বিহান ভাই এখনো বাসায় আসেন নি।ফোনে কথা হয়েছে উনার আজ অফিসিয়াল কাজ আছে তাই লেট হচ্ছে।মন কেমন আনচান করছে কত সময় হয়ে গিয়েছে উনাকে দেখি না।মাত্র এতটুকু টাইম উনাকে৷ ছাড়া থাকতে পারছি না মানুষ ভালবাসা হারিয়ে সারাটাজীবন কিভাবে থাকে।
হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে পড়ার টেবিলে পড়তে বসলাম।বিহান ভাই কে খুব মিস করছি।ফোন দিবো।না উনি হয়তো কাজে বিজি আছেন।এখন বিরক্ত করা ঠিক হবে না।বই খুলে নিয়ে বসে আছি এমন সময় টেবিল সহ কাঁপছে ভাইব্রেশনে। খুশি মন নিয়ে ফোন টা হাতে নিলাম ভেবেছি বিহান ভাই এর ফোন।ফোন টা হাতে নিয়ে দেখি আলিপ এর ফোন।খুব ই বিরক্ত হলাম ওর ফোন দেখে।ফোন টা কেটে দেওয়ার সাথে সাথে আলিপ আবার ও ফোন দিলো।ফোন টা উল্টা করে রেখে দিলাম।দশ বারের বেশী ফোন বেজে যাচ্ছে বিরক্ত হয়ে ফোন টা রিসিভ করে বললাম কি সমস্যা কি আপনার।এত বার ফোন দিচ্ছেন ক্যানো?
“এমন সময় খুব নরম কন্ঠে বলে ওঠেন বিহান ভাই একটু নেট অন করবে। ভিডিও কল করবো?অনেক সময় দেখিনা তোমাকে পরাণ পুড়ছে খুব।আসবে একটু।”
উনার কন্ঠ শুনে বুকটা কেমন করে উঠলো।আলিপ ভেবে কি বাজে বিহ্যাভ টাই না করলাম।কিন্তু বিহান ভাই কোনো রিয়্যাক্ট করলেন না যে।
নেট অন করেই উনাকে ভিডিও কল দিলাম।
উনার মুখ টা খুব ক্লান্ত লাগছে দেখতে।আমাকে চোখ ইশারা দিয়ে বলেন কে বিরক্ত করছিলো আমার বউ কে।ওই গন্ডার আলিপ নিশ্চয়। আমি চমকে গেলাম উনি কিভাবে জানলেন এখন কি বকা দিবেন এটা নিয়ে।কিন্তু না উনি কিছুই বললেন না এটা নিয়ে।মনে হচ্ছে সারাদিনে কিছুই খান নি উনি।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম কখন আসবেন।
বিহান ভাই বলেন রাগ করোনা প্লিজ বিদেশ থেকে ডাক্তার আসছে।তাদের নিয়ে ইমারজেন্সি মিটিং আছে। তাছাড়া ওটি আছে আজ খুব ক্রিটিক্যাল প্রেসেন্ট।
মন খারাপ হলেও কিছুই করার নেই।কারণ উনি ডাক্তার উনাকে তো রুগিকে টাইম দিতেই হবে।কিছু না বলে চুপ হয়ে বসে ভিডিও কলে উনাকে দেখছি।
বিহান ভাই একটা ফ্লায়িং কিস দিয়ে বলেন এই অল্প আদর নিয়ে আজ ঘুমিয়ে যেও লক্ষি।কাল সকালে দেখা হবে।রাতে খেয়ে নিও প্লিজ।আর রিয়াকে সাথে নিয়েই ঘুমিও।
যখন ই খারাপ লাগে কল দিও।
উনি ফোনটা কাটার পরে এক ভীষণ অস্হিরতা কাজ করছিলো আমার।মনে হচ্ছে কতকাল কত যুগ দেখা হয় নি আমাদের।
এমন সময়ে আলিপ মেসেজ করেছে সে বিদেশ চলে যাচ্ছে।আমার মন আলিপের মেসেজে কোনো রেসপন্স করলো না।মন তখন বিহান ভাই এর দিকেই ছিলো।মিনিট,সেকেন্ড সময় কোনো কিছুই যেনো কাটছিলো না।
পরের দিন খুব ভোরে উঠে বিহান ভাই এর জন্য খাবার রান্না করে টিফিন বক্সে ভরলাম।
আলমারি খুলে বিহান ভাই এর দেওয়া গোলাপি গাউন টা বের করে পরলাম।ঠোটে গোলাপি লিপিস্টিক,চোখে হালকা কাজল আর হাতে ঘড়ি টা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।রিয়া আমার ব্যস্ততা দেখে বলে কি সমস্যা কি দিয়া আজ এত ব্যস্ততা।
রিয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললাম কাল থেকে বিহান ভাই কে দেখিনি।মনের মাঝে খুব অশান্তি হচ্ছে।আগে মেডিকেল কলেজে যাবো উনার মুখ দেখবো তবেই শান্তি।এই মুহুর্তে বিহান ভাই কে চাই আমার।
বিহান ভাই কখন যেনো মেসেজ দিয়ে রেখেছে…
“তুমি মেঘলা আকাশে মিটিমিটু তারার খেলা.. তুমি পশ্চিম নীলিমায় লাল টুক টুক সন্ধ্যা বেলা। “তুমি নদীর বুকে কলকল রবে বয়ে যাওয়া ঢেউ… তুমি যে আমার কত আপন জানেনা তো কেউ। “তুমি বসন্ত কালে কোকিলের মুখে কুহুকুহু গান… তুমি এলে ভরে যায় আমার এই প্রাণ। “তুমি বর্ষার আকাশে কখনো কখনো আলো ছায়ার খেলা … তোমাকে ভাবতে ভাবতে মোর কেটে যায় বেলা। “”
উনার মেসেজ টা দেখে বুঝলাম উনিও খুব মিস করছে আমাকে।আজ গিয়েই উনাকে চমকে দিবো।ক্লাসের টাইম হয়ে গিয়েছে।তাও আবার বিহান ভাই এর ক্লাস।উনি তো টাইম মেইন টেইন না হলে বকা দিবেন।
ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে আর ক্লাস টা বিহান ভাই এর ই ছিলো।
ক্লাস রুমের সামনে গিয়ে বললাম,,
মে আই কাম ইন স্যার?
বিহান ভাই প্যান্টের পকেটে হাত গুজে স্ট্রং হয়ে দাঁড়িয়ে হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিয়ে বলেন
“আপনার লেট হয়েছে কেনো?”
“স্যার বেশী লেট হয় নি।”
“৫ মিনিট লেট করেছেন।”
“স্যার মাত্র ৫ মিনিট তো”
“এক সেকেন্ড এর ও অনেক দাম মিস দিয়া।কোনো কিছু এত অবহেলা করা যাবে।সময় কে অবহেলা করলে সময় ও অবহেলা করে।”
“স্যার আপনি কথা বলে তো আরো টাইম লস করছেন।”
“ওপ্স সরি!টেক ইওর সিট প্লিজ।”
এনি নামের মেয়েটা বলে ওঠে,,”এই দিয়া তুই স্যার কে সময় নিয়ে বুঝাচ্ছিস।স্যার যত টাইম ইচ্ছা লস করুক তাই বলে তুই স্যার কে কথা শুনাবি।তাহলে তো তুই ই টিচার হতে পারতি।স্যার আপনি কিছু বলুন যাতে নেক্সট দিয়া আর এমন সাহস ন দেখায়।
বিহান ভাই মারাত্মক রেগে গেলেন এনির কথা শুনে।
“ডোন্ট ক্রশ ইওর লিমিট মিস এনি।আপনাকে এত সাহস আমি দেই নি যে আমার ক্লাসে আপনি কোনো স্টুডেন্ট কে অপমান করবেন।আমার ক্লাসে এমন অসভ্যতা এলাউড নয়।আপনি দিয়াকে বুঝাচ্ছেন আপনার নিজের ই তো কোনো সভ্যতা নেই।নেক্সট টাইম দিয়া কে নিয়ে কিছু না বলার চেষ্টা করবেন”
বিহান ভাই পড়াচ্ছেন।তাড়াহুড়ো তে বই আনতে পারিনি।বিহান ভাই উনার বই টা আমার হাতে দিয়ে বলেন এটা নিন।নিশ্চয় বই আনতে ভুলে গিয়েছেন।মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম।
এনি নামের মেয়েটার যেনো এটাতেও আপত্তি।
সমস্যা কি তার?
চলবে,,,
(এই মুহুর্তে বিহান দিয়ার উপন্যাস টি কেমন হচ্ছে,কমেন্টে জানাবেন)