তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা ৩৪.

0
2101

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৩৪.
#WriterঃMousumi_Akter

বিহান ভাই এর গালে চুমু দিতেই উনি যেনো আশি ভোল্টেজ এর শকড খেলেন।চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালেন।উনার মাঝে মারাত্মক কোনো শিহরণ বয়ে গেলো।উনাকে চুপ থাকতে দেখে নিজেই চমকে গেলাম।উনার মাঝে কোনো রিয়্যাক্ট নেই।কেমন যেনো কোমায় যাওয়ার উপক্রম তার।এক অদ্ভুত নিরবতা পালন করছেন।ছেলেদের চুমু দিলে বুঝি এমন ই করে।

কিছুক্ষণ পরে উনার নিরবতা ভাঙতেই আমি ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম।বিহান ভাই উনার গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।এটা আমি কি করলাম।উনি বা কি ভাবলেন।চট করে উঠে বিছানায় এসে কম্বল মুড়ি দিয়ে সুয়ে পড়লাম।

বিহান ভাই ল্যাপটপের সাটার অফ করে ওয়াশ রুমে গিয়ে ট্রাউজার পরে বাইরে এলেন।ট্রাউজারের এক অকেটে হাত দিয়ে একটা কফি বানিয়ে খেতে খেতে বলেন আপনি কি ঘুমিয়ে গিয়েছেন ম্যাডাম।

আমি লজ্জায় উনাকে মুখ ই দেখাতে পারছি না।ঘুমের ভান ধরে পড়ে রইলাম।এই মুহুর্তে দিয়া আর জেগে নেই।সে যেভাবেই হোক ঘুমিয়ে পড়েছে এটাই প্রমান করতে হবে।দিয়ার কনফিডেন্স ভেঙে বিহান ভাই বলে ওঠেন….

“আমি জানি তুমি ঘুমোও নি।ঘুমের ভান ধরে কুমিরের মতো পড়ে থাকলেই সেটা কে ঘুম বলে না।দ্রুত উঠে পড়ুন”

“আমি কোন ভাবেই কোনো রেসপন্স করছি না।আমি রেসপন্স করবোই না”

“তোমার খবর আছে আজ দিয়া।ভারী দুষ্টু হয়েছো।তোমার জন্য কাজে মন দিতে পারলাম না”

“মুখ থেকে কম্বল সরিয়ে বললাম উহু বিরক্ত করছেন কেনো?সকালে আমার ক্লাস আছে।আমাকে ঘুমোতে না দিলে সকালে বিহান স্যার এর ক্লাসে এটেন্ড করবো কিভাবে শুনি।”

“বিহান স্যার কে ক্লাস নেওয়ার অবস্থায় রেখেছো তুমি।”

“কেনো কি হয়েছে স্যার এর।?”

“স্যার এর বারোটা বাজিয়ে এখন শোনা হচ্ছে কি হয়েছে।”

“একদম মিথ্যা বলবেন না।এখন ১২ টা বাজে নি।”

“ঘড়িতে বাজে নি।বিহান স্যার এর বেজেছে।”

উনি ঠিক কি বোঝাতে চাইছেন।মনে হচ্ছে অন্য দিকে যাচ্ছেন।উত্তর, দক্ষিণ,পশ্চিম যেদিকে যাকে যাক তাতে আমার কি।একটু আগে যা করেছি যেটা উনার মনে না থাকলেই হচ্ছে।

রুমের লাইট টা অফ হওয়ার সাথে সাথে ডিম লাইটের মিটিমিটি আলোতে সুঠাম দেহের অধিকারী মিস্টার বিহান ভাই ওরফে আমার স্যার কম্বলের মাঝে আমার পাশে এসে সুয়ে পড়লেন।আমার সাথে টাস লাগায় সাথে সাথে আমি খানিক টা সরে গেলাম।উনি আবার এগিয়ে এলেন আমার দিকে।সরতে সরতে খাট থেকে ঠাস করে পড়ে গেলাম আমি।

বিহান ভাই উনার হাসি আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যার্থ হলেন।উনার চেষ্টার বাধ ভেঙে হাসি বেরিয়ে এলো।আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম এটা কি হচ্ছে শুনি।আপনার টাকা দিয়ে খাট কিনেছেন বলে নিজে দখলদারী করছেন।

উনি দুষ্টুমির সাথে হাসতে হাসতে বলেন আমার খাটে ঘুমোতে হলে খাটের টাকা দিতে হবে।

আমি উনার মতলব ঠিক বুঝলাম না।উনি কি বলতে চাইছেন।উনি তো এসব অদ্ভুত কথা বলার মানুষ নন।তাহলে এগুলা কেনো বলছেন।কাহিনী তো কিছু একটা আছেই।কিন্তু কাহিনী টা কি?

“আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললাম ঠিক আছে আম্মুকে বলবো তোমার ভাতিজা কে টাকা দিয়ে দাও।”

“নো নেভার অন্য কারো টাকা নিলে হবে না।তোমাকে নিজে ইনকাম করে দিতে হবে।”

“আমি কি এখন জব করি নাকি।কিভাবে টাকা দিবো।বাড়ি থেকে না দিলে।তাছাড়া আপনি আমার বর হন।বিয়ের পর আমার সব খরচ তো আপনি ই দিবেন তাইনা।স্বামি হিসাবে কি আপনার কোনো দায়িত্ব নেই।লজ্জা করছে না বউ এর কাছে টাকা চাইতে।”

“আমি অত ভালো স্বামি না বুঝলে।খাট কেনা টাকার ভাগ না দিলে খাটে ঘুমোতে পারবে না।তাছাড়া এ ফ্ল্যাট ভাড়ার টাকা ও দিতে হবে।সব কিছুতে সমান সমান টাকা দিতে হবে।সব জায়গা নারী পুরুষ সমান অধিকার আর এ ক্ষেত্রে উল্টা হবে কেনো?এখন প্রমান করো নারী পুরুষ সমান অধিকার।”

“হ্যাঁ আমি কাল ই জব খুজতে যাবো।যেভাবেক হোক জব খুজবো আর সমান সমান টাকা ও দিবো।”

“মাত্র ইন্টার পাশে গার্মেন্টস ছাড়া কোথাও জব পাবে না তুমি।গার্মেন্টস এ জব করলে ডাক্তারি পড়া তো হবে না তোমার।আমার ক্লাস মিস দিলে কি ভয়ানক অবস্থা হবে বুঝতেই পারছো।”

“তাহলে কি করবো আমি এখন।”

“আমি হেল্প করতে পারি।আমি তোমাকে জব দিতে পারি।মাসে ৩০০০০ টাকা স্যালারি দিবো।”

“আমি বিরক্তির হাসি দিয়ে বললাম থ্যাংকিউ।বেটা খাটাস।নিজেই জব দিবি তাহলে তো টাকা তোর ই যাবে।তাহলে এসব আমার টাকা দিতে হবে এগুলা নাটকের কি প্রয়োজন ছিলো।

উনার দিকে তাকিয়ে বললাম জব টা কি শুনি?”

“আমি যা বলবো সেটাই শুনতে হবে।কোনো না বা অজুহাত দেওয়া যাবে না।”

“বাধ্য হয়ে মাথা নাড়ালাম। কি বলবে কি জানি।”

“ওকে তোমার জব এখন থেকেই শুরু।”

“আচ্ছা কি করবো বলুন”

“ওখান থেকে উঠে বেডে উঠে এসো আগে”

“বেডে গিয়ে উনার দিকে তাকালাম।”

“আমার পা টিপে দাও।”

রাগে শরীর রি রি করছে।মাঝ রাতে বউ দিয়ে পা টেপাচ্ছে।ঘুমে আমাকে কাত করে ফেলে দিচ্ছে।উনার কোনো গভীর চক্রান্ত আছে যেটা বোঝা যাচ্ছে।আসল কাহিনী কিছু একটা আছেই।

“উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন কি ঘুম পাচ্ছে।”

“রেগে বললাম আপনি তো আমাকে নাইট ডিউটির জব দিছেন।”

“উনি উড়ামুড়া দিতে দিতে বলেন তুমি যদি আমার নাইট এলোমেলো করে দাও আমার তো তোমাকে নাইট ডিউটির জব দিতেই হবে।”

“কি করেছি আমি।”

“কাছে এসো বলছি।”

“আস্তে করে উনার কাছে গেলাম।আর সাথে সাথে ঠোঁটে চুমু দিয়ে বলেন এমন সর্বনাশ আমার না করলেও পারতে।তুমি কি জানোনা তোমার এমন আলতো স্পর্শ তে আমি এলোমেলো হয়ে যায়।ভয়ানক এক নেশা কাজ করে।আমিও তো মানুষ। আমার ও তো মনের মাঝে সুপ্ত ইচ্ছা কাজ করতে পারে তাইনা।এই ভদ্র আমি টাকে অসভ্য করার চেষ্টা করার জন্য শাস্তি হিসাবে জব দিয়েছি।”

আমার নিঃশ্বাস যেনো ঘন ঘন আচড়ে পড়ছিলো উনার নাকে মুখে।আস্তে করে বললাম আর কি করতে হবে আমাকে।উনি মুখের সাথে মুখ মিশিয়ে বললেন হুম ১০০ বার আই লাভ ইউ বিহান বলতে হবে।একবার করে আই লাভ ইউ বলবে আর একটা করে চুমু দিবে এটাই তোমার জব।

আমিও আস্তে আস্তে বললাম এটা কেমন জব।

ভালবাসার জব।এই জব শুধু আমার কাছেই আছে তোমার জন্য।

হালকা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আই লাভ ইউ বিহান বলতে বলতে উনার বুকে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরের দিন রিয়া আর আমি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম কলেজের দিকে।বিহান ভাই এর অফিসিয়াল কাজ আছে উনি অনেক আগেই গিয়েছেন।বিভোর ভাই ব্যাংকে যাওয়ার আগে আমাদের দুজন কে নামিয়ে দিয়ে গেলেন।

ক্লাসে প্রবেশ করেই শুনি কয়েক টা মেয়ে বলাবলি করছে কার্ডিওলজির টিচার কি ভয়ানক রকমের হ্যান্ডসাম বাবাহ।এত হ্যান্ডসাম ছেলে আমি জীবনেও দেখি নি।আরেকজন বলে অনেক হট লুকিং উনার।আবার অন্য একজন বলছে স্যার কি সিঙ্গেল আছে তাহলে উনাকে প্রপোজ করবো।

ওদের কথা গুলো শুনে রাগে ফুস ফুস করে ক্লাস রুমে চলে গেলাম আমি।রিয়া আর আমি এক বেঞ্চে বসলাম।আমাদের সামনের সিটে বসে আছে সেই মেয়ে গুলো।এনি নামের একটা মেয়ে একটু বেশী বিহান বিহান করছে।এনির ক্লোজ ফ্রেন্ড রা বলছে এনি তোর হিরো বিহান স্যার এর ক্লাস এখন।রিয়া আমার রাগ দেখে হেসে যাচ্ছে।রিয়া মেয়েদের এক্সকিউজ মি! তোমরা যেভাবে ক্রাশ খাচ্ছো দেখো যেনো সেভাবে আবার স্যাকা খেও না।

এমন সময় কালো জিন্স সাদা এপ্রোন পরে ক্লাস রুমে হাজির বিহান ভাই।আহা কি ক্রাশিত লুকিং তার।আমার বর কে তো সত্যি সুন্দর লাগছে।এজন্য এই মেয়ে গুলা এমন করছে।উনি ক্লাসে প্রবেশ করার সাথে সাথেই সবাই উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো।বিহান ভাই সালামের উত্তর দিলেন।কিন্তু উনি এমন মুড নিয়ে আছেন কেনো? ও এম জি অনেক দিন তার এমন রূপ দেখি না।মানে কি উনি শুধু আমার কাছেই চেঞ্জ হয়েছেন আর বাকিদের কাছে আগের মতোই আছেন।

বিহান ভাই এর প্রথম ক্লাস আজ আমার।বিহান ভাই বলেন আজ সবার পরিচয় নিবো।একে একে কয়েকজনের নাম ঠিকানা জানতে চাইলো।কি ভদ্রতা উনার সব স্টূডেন্ট দের সাথে আপনি আপনি করে কথা বলছেন।এখানের নিয়ম কি বুঝলাম না প্রায় স্যার রাই আপনি করে বলছেন।

বিহান ভাই এর নেক্সট প্রশ্ন আমার কাছে।আমার কাছে এগিয়ে এসে বলেন স্ট্যান্ড আপ।

আমি উঠে দাঁড়ালাম।

–আপনার নাম কি?

—স্যার দিয়া।

—শুধুই দিয়া।

—দিহান দিয়া।

—ওয়াও নাম টা সুন্দর আপনার।

—ডাক্তার হতে চান কেনো?

—স্যার একজনের ইচ্ছা পূরন করতে।

—ওয়াও গুড।ট্রাই টু ইওর বেষ্ট।

এনি উঠে দাঁড়িয়ে বলে স্যার আমার নাম এনি।

বিহান ভাই বিরক্তি নিয়ে বলেন “ওহ”

–স্যার জাস্ট ওহ।ওর নাম টা কি আমার থেকেও সুন্দর।

—এখানে কি কমপিটিশন করতে এসেছেন।আর আপনার কাছে কি আমি কোনো প্রশ্ন করেছি।আমার ক্লাসে কেউ ভুলেও কখনো ডিসিপ্লিন ভঙ্গ করবেন না এটা আমার পছন্দ নয়।নেভার ফরগেট ইট।

বিহান ভাই এই মেডিকেল কলেজের হেড।উনার থেকে বড় ডাক্তার এই হসপিটালের আর কেউ নেই।উনাকে সবাই ভয় ও পায় খুব।

বিহান ভাই কিছু সময় পর ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।

আজ আর কোনো ক্লাস নেই।

আমাকে ক্যান্টিন থেকে একজন ডেকে বললো ম্যাম আপনার জন্য খাবার রেডি।

আমি সন্দিহান দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বললাম আমি তো খাবার অর্ডার দেই নি।

আপনি না ম্যাম বিহান স্যার দিয়েছেন।

রিয়া আমাকে বলে বিহান ভাই এর কত্ত কেয়ার দিয়া দেখ।আর ওই দিকে বিভোর টা জাস্ট অসহ্য।একটু খোজ ও নিতে পারে।এমন সময় গেটের সামনে একরাশ গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিভোর ভাই।রিয়ার মুখেও মিষ্টি হাসি।ফুল টা যে রিয়ার ই জন্য সেটা বুঝতে একটু বাকি নেই রিয়ার।

বিভোর ভাই এর সাথে বেরিয়ে গেলাম আমি আর রিয়া।বিভোর ভাই একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলেন আমাদের নিয়ে।রিয়ার হাতে ফুল গুলো দিয়ে প্রপোজ ও করেন।রিয়া ওর মিষ্টি হাসি দিয়ে বিভোর ভাই এর প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে দিলো।

চলবে,,,,,

(স্টোরি টা রেগুলার দেওয়া হবে।তবে এর থেকে বড় দিতে পারবো না।স্টোরি টা কার কেমন লাগে জানাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here