#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৩২.
#WriterঃMousumi_Akter
গ্রামে বিয়ে হওয়ার মতো আনন্দ বোধ হয় অন্য কোনো কিছুতে নেই।গ্রামের রিতী গুলো সত্যি অনেক আনন্দের।কিন্তু রুশা আপুর বরের নানাবিধ সমস্যার কারণে বিয়েটা ঢাকাতেই করতে হচ্ছে।রুশা আপুকে আজ মারাত্মক রকমের সুন্দর লাগছে।এই সুন্দর বলে শেষ করার মতো নয়।গায়ে হলুদের ছোয়া সাথে হলুদের গহনা সব মিলিয়ে রুশা আপুকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে।তোহা আপুর বোন কিন্তু আমি আমার সব কাজিন দের আপন মনে করি।কখনো আলাদা পরিচয়ে বিভক্ত করি না।আমরা সকল কাজিন গুষ্টি যেখানে আছি সেখানে রাত কি আর দিন কি? শহর কি আর গ্রাম কি আমাদের আড্ডাতে বিশেষ আনন্দ লেগেই থাকে।
বাইরে সবাই মাতামাতি করলেও একমাত্র বিহান ভাই পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছেন।সবাই হলুদ আর আবির মাখামাখি তে ব্যাস্ত অথচ বিহান ভাই এদিকে নেই।আমি চারদিকে কোথাও খুজে না পাওয়ার পর আমাদের জন্য সিলেক্ট করা রুমে গিয়ে দেখি বিহান ভাই আরামে ঘুমোচ্ছেন।এটা কি মানুষ না ভিন্ন প্রজাতির কোনো কিছু বুঝলাম না।খুব ই অদ্ভুত লাগছে আমার কাছে।বাইরে এত উল্লাস উনার নাকি এগুলাতে এলার্জি আছে।কখনো দেখি নি এসব অনুষ্টানে আড্ডা দিতে।বেরসিক মানুষ একটা।আমার বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিলো সব একাই ধ্বংস করেছে।না হয়েছে গায়ে হলুদ না কোনো কিছু।মনে চাচ্ছে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেই।এইদিকে উনি ঘুমিয়ে আছেন। ডাকাডাকি করলেও আস্ত রাখবেন না।আমি উনার বউ আমি কেনো উনাকে ভয় পেতে যাবো এটাই বুঝলাম না।বউ কাকে বলে আজ বুঝাবো আজ শুধু কিছু বলুক।বুকে একটা ফুউউউউ দিয়ে কোমরে শাড়ি পেচিয়ে উনাকে ডাকাডাকি শুরু করলাম।
“বিহান ভাই উঠুন বলছি বাইরে হলুদের অনুষ্টান চলছে আর আপনি এখানে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছেন।উঠুন বলছি।”
“বিহান ভাই বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলেন কি সমস্যা তোর আমাকে বিরক্ত করছিস কেনো?”
“আরে আপনি বাইরে আসুন না সবাই কত মজা করছে আর আপনি এখানে কেনো?”
“দেখ দিয়া তোদের ওসব হাভিজাবি অনুষ্টান দেখার টাইম আমার নেই।ওগুলা কি করছিস তোরা?সিরিয়াসলি পারিস ও বটে।বিয়ে করতে হবে জাস্ট কবুল বলে নিলেই তো হয়ে যায়।এতসব আদিক্ষেতা করার কি আছে শুনি।উফফফ যা তো এখান থেকে। আমাকে ঘুমোতে দে।”
“না আপনাকে যেতেই হবে।”
“বিহান ভাই ভ্রু কুচকে বলেন আমাকে কি জন্য যেতে হবে শুনি।”
“আমি আপনাকে হলুদ মাখাবো।।”
“হলুদ আমাকে ইম্পসিবল।জাস্ট ইম্পসিবল ব্যাপার এটা।আর তুই এটা কি অদ্ভুত ভাবে শাড়ি পরেছিস।কোমরে এভাবে শাড়ি পেচিয়েছিস কেনো বাংলার কালজয়ী নায়কা শাবানার মতো। ”
“কি বললেন আমি শাবানা।”
“তো কি ক্যাটরিনা তুই।”
“দেখুন আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন।আজ কিন্তু আমি ভয় ও পাবো না।”
“বিহান ভাই বিছানায় সুয়ে উড়ামুড়া দিয়ে বলেন আজ কি বউ থেকে কটকটি হয়েছিস।আয়নায় দেখ নিজেকে বরের ঘাড় মটকানোর জন্য কি ভয়ানক ভাবে কোমরে শাড়ি পেচিয়েছিস।আচ্ছা দিয়া একটু রোমান্টিক হতে পারিস না।এসে তো গালে কয়েক টা চুমু দিয়ে বলতে পারিস বিহান ওঠো।তা না এসে ভ্য ভ্যা করছিস।ভাই ভাই বলে এই অত্যাচার আর কতদিন চলবে।”
কি আশ্চর্য ব্যাপার।এই মানুষ টা কোন লাইন থেকে কোন লাইনে চলে যাচ্ছে।দিন দিন বয়স হচ্ছে আর অসভ্য হচ্ছে।
“দেখুন বিহান ভাই আমাদের বিয়েতে এগুলা কিছুই হয় নি।আমার কি শখ আহলাদ হয় না।সবার বিয়ে দেখে আমার অনেক আফসোস লাগে।”
“বিহান ভাই কপাল কুচকে বলেন তোর মাথায় এসব পোকা কে ঢুকাইছে শুনি।নিশ্চয়ই আম্মু।আম্মু আর বিভোর এগুলা বলে তোকে পাঠিয়েছে তাইনা।আমাকে দিয়ে এসব হবে না।তাই গুটি হিসাবে তোকে কাজে লাগালে কাজ হবে না।আমার অনেক কাজ সামনে বিয়ের জন্য এত সময় নষ্ট করার কোনো প্রশ্নই আসে না।”
“ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম। কাঁন্নাটা অভিনয়ের ই বেশী ছিলো।আমি জানি আমার কাঁন্না দেখলেই উনি গলে যাবেন।আপনি আমাকে একটুও ভালবাসেন না। মানে একটুও ভালবাসেন না।আমার কোনো ইচ্ছার দাম নেই আপনার কাছে।”
“বিহান ভাই কপালে হাত চালাতে চালাতে উঠলেন।এই প্লিজ স্টপ এই যে আমি উঠেছি। আমাকে হলুদ মাখিয়ে ভূত বানিয়ে দে সমস্যা নেই।তোর হাত ব্যাথা না হওয়া পর্যন্ত হলুদ মাখা সমস্যা নেই।বলেই নিজের গাল এগিয়ে দিলেন।আমার কাঁন্না টা ছিলো জাস্ট উনাকে দেখানোর জন্য।আমি লাফিয়ে উঠে উনার গালে খুব করে হলুদ মাখিয়ে দিলাম।বিহান ভাই আমার হাত দুটো ধরে উনার গাল দিয়ে আমার গালে হলুদ লাগিয়ে দিলেন।”
কানে ফিস ফিস করে বললেন,,
“হলুদ ছোয়া চায় তোর।”
“হুম চাই।”
“আগে ডাক্তার হতে হবে তারপর পুরা শহর কে জানিয়ে হলুদ লাগাবো।সেই দিন টা হবে বিশেষ স্পেশাল আমাদের জন্য।আর শোন মেডিকেল কলেজের পাশেই বাসা নিয়েছি।বিয়ে শেষ হলে সোজা আমরা বাসায় উঠবো।আর দুই ফ্ল্যাট নিয়েছি এক সাথে।বিভোর এর তো জব হয়েছে ও আমাদের সাথেই থাকবে।”
“বিভোর ভাই কে এবার বিয়ে করিয়ে দিলে কেমন হয় বলুন তো?।”
“আমিও ভেবেছি রিয়ার আম্মুর সাথে এবার কথা বলবো।বিভোরের সাথে থাকলে রিয়ার ও ঢাকায় থাকতে অসুবিধা হবে না।”
যাক বিভোর ভাই এর মনের ইচ্ছাটা এবার পূর্ণ হবে।ভেবেই শান্তি লাগছে।
সন্ধ্যায় সবাই মেহেদী লাগাচ্ছে।রিয়া আর আমি সবাই কে মেহেদী লাগিয়ে দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।রিয়া ওর হাত দু খানা এনে আমার সামনে ধরলো।বিভোর ভাই এর অনুরোধ এ রিয়ার হাতে সুন্দর করে B লিখে দিলাম।রিয়া আর বিভোর ভাই এর মনে মনে যে ভালবাসা হয়ে গিয়েছে সেটা বুঝতে আর আমার বাকি নেই।
এমন সময় আলিপ এসে আমাকে অনুরোধ করে আমি যেনো তার হাতে মেহেদী লাগিয়ে দেই।হাত দুখানা আমার হাতের সামনে এনে ধরলো।আমার আপত্তি থাকলেও মুখের উপর কিছুই বলতে পারলাম না জাস্ট M লিখে দিলাম।আলিপ সাথে সাথে হাত টা মুছে বলে দিয়া আমি কি তোমাকে এটা লিখতে বলেছি।এটা কিন্তু ঠিক করো নি।আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললাম আপনার প্রেয়সীর নাম ই লিখেছি ভুল কি করেছি।আলিপ রিয়্যাক্ট করে বললো আমার প্রেয়সী কে তুমি ভাল ভাবেই জানো। কাটা ঘায়ে নূন দিও না প্লিজ।আলিপ ভয়ানক রকমের মুড দেখিয়ে চলে গেলো।
“মেহনুবা আপু আলিপ কে বলে তুমি দিয়ার কাছে মেহেদী লাগাতে গিয়েছো কেনো?আমাকে বললেই তো লাগিয়ে দিতে পারতাম।”
“দিয়া আর তুমি কি এক মেহনুবা।দিয়া যেটা ভাল পারে সেটা তুমিও ভাল পারবে এটা তো সম্ভব নয়।আর দিয়া যেমন ই পারুক আমার কাছে ওর টা বেটার।”
“আলিপ তুমি কি দিয়া কে ভালবাসো?..”
“হ্যাঁ বাসি!আর দিয়া ও আমাকেই ভালবাসে।দিয়া আমার প্রথম অনূভুতির নাম।কিছু মনে করো না মেহনুবা দিয়া কে ভোলা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।আর ইদানিং আমি দিয়াকে বেশী মিস করছি।আই থিংক তুমিও সেটা বুঝতে পারো”
“তুমি দিয়াকে ভালবাসো তাহলে আমি কে?”
‘তুমি কে আমি জানিনা।প্লিজ লিভ মি।আমি তোমার এই প্রেম ভালবাসা আর নিতে পারছি না।আমি সেপারেশন চাইছি।একজন কে ভালবেসে আরেকজন এর সাথে জীবন কাটানো সম্ভব নয়”
“সেটা তোমার আজ মনে হচ্ছে।আমাকে তো আগে বলো নি দিয়াকে ভালবাসো”
“আমি তোমাকে ভালবাসার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি।আমাকে মুক্তি দাও প্লিজ।আমার দিয়াকে চাই।আর আমি এটা বুঝি দিয়া ও আমাকেই চাই”
মেহনুবা আপুকে একা একা কাঁদতে দেখে এগিয়ে গিয়ে বললাম আপু মেহেদী লাগাবে না।
আপু আমার গালে ঠাসসস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে চরিত্রহীন।আমাকে কোন মুখে আপু ডাকিস।লজ্জা করে না তোর।
দিয়া তুই আমার সাথে এত বড় ছলনা করতে পারলি।আলিপ কে যদি তুই ই ভালবাসবি আমাকে বলতে পারতি।আমি নিজে আলিপ কে ছেড়ে দিতাম।তাছাড়া তুই বিবাহিতা মেয়ে হয়ে কিভাবে পরকিয়াতে জড়াতে পারিস।ছিঃদিয়া ছিঃ।তুই নিজেও জানিস না আমার জীবনের কত বড় ক্ষতি টা তুই করেছিস।আলিপ আর তুই কোনদিন সুখি হবি না।আমার চোখের পানি ভাল থাকতে দিবে না তোকে।তুই বোন নামের কলঙ্ক।আমি আমার সব কিছু দিয়ে আলিপ কে ভালবেসেছিলাম আজ আমি কিভাবে বেঁচে থাকবো দিয়া কিভাবে।আজ থেকে তোর মুখ ও আমি দেখতে চাই না।আমার আলিপ কে ছেড়ে দে প্লিজ দিয়া আমি হাত জোড় করছি।বিহান ভাই কে ঠকাস না প্লিজ।আলিপের সাথে আমার অনেক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।আলিপ আমাকে এক্সেপ্ট না করলে আমাকে সুইসাইড করতে হবে দিয়া।
হাত পা কাঁপছে আমার।চোখ দিয়ে নিজে থেকেই পানি ঝরছে।দরজায় বিহান ভাই দাঁড়িয়ে আছেন।
মেহনুবা আপুকে বলেন তুমি কোন রাইটে আমার বউ এর গায়ে হাত দিলে।তুমি ওর বোন বলে তোমার হাত টা আস্ত আছে।না হলে গুড়ো গুড়ো হয়ে যেতো।যে ফুলের উপর আমি ভ্রমর পড়তে দেই না আর তার গায়ে তুমি হাত তুললে।কারো ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলানো টা পছন্দ নয় আমার।তাই তোমার ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে কিছু বলবো না।কিন্তু নেক্সট টাইম দিয়া কে দায়ী করবে না এগুলা নিয়ে।
মেহনুবা আপু কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলো।
চলবে,,,
(বিহান -দিয়া কে কি ভুলে গিয়েছো তোমরা)