#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৩১.
#Mousumi_Akter
রাতের নিরবতায় বাস চলছে।বাসে বসে বড্ড বোরিং লাগছে।ইস একটা গল্পের বই থাকলেও ভালো হতো।কিভাবে সময় কাটাবো।আমি হয়েছি আম্মুর মতোই।আমার আম্মুর কাছ থেকে বই পড়ে পড়েই বই পড়ার অভ্যাস হয়েছে আমার।ইয়ারফোন টাও আনিনি কিভাবে গান শুনবো।তড়ি ঘড়ি তে কোনো কিছুই আনা হয় নি।বিহান ভাই ফোন স্ক্রল করা রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন কিরে এত বিরক্ত হচ্ছিস কেনো? আরেক বার চাই।আমি কপাল কুচকে উনাকে বললাম আরেক বার চাই মানে।বিহান ভাই ঠোঁট এগিয়ে এনে বলে আগের বার প্রাকটিস ছিলো মানে ওটা টেস্ট ম্যাচ ছিলো।উনার কথা শুনে হতবাক আমি। ওই ভয়ানক মুহুর্ত ভাবতে ভাবতে আমি স্টোক হওয়ার মতো অবস্থা। ওটা যদি টেস্ট ম্যাচ হয় তাহলে ফাইনাল ম্যাচ কেমন হবে।
এইদিকে রিয়া ওয়াক ওয়াক করে বমি করে বিভোর ভাই এর গা ভিজিয়ে দিলো।ইহ কি বিশ্রি একটা ব্যাপার।বিভোর ভাই নিজেও ঘেন্নায় বমি করি দিলেন।বিভোর ভাই কি বিশাল পোজ দিয়েই না এসছিলেন সব পন্ড করে দিলো রিয়া বমি করে।এইতো বাসের মধ্য সবাই হাত তালি দেওয়া শুরু করলো।আবির ভাইয়া ক্যামেরা অন করে ভিভিও করা শুরু করে দিলো।আবির ভাইয়া রিয়াকে বলেন এইতো আমার বোনের মতো কাজ করেছিস।সাব্বাস রিয়া সাব্বাস।বিভোর ভাই তো আবির ভাইয়ার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন।আবির ভাই এই বমি তোমাদের সব কয় ভাই বোন কে খাইয়ে দিবো।আবির ভাই ক্যামেরা অফ করো প্লিজ।বিহান ভাই বিভোর ভাই কে বলেন বিভোর টেস্ট কেমন রে সন্দেস নাকি।বিভোর ভাই দাঁত খিচে বলেন হ্যাঁ ক্ষিরের সন্দেস তুই খাবি।
বিহান ভাই ভ্রু কুচকে বলেন নাহ না বিভোর এ স্বাদের ভাগ হবে না।রিয়ার সব কিছুর উপোর তোর একার অধিকার।তাই তুই একাই খা ভাই।আমরা কেউ চাচ্ছি না।আস্তে ধীরে খা।।
ইস বিভোর ভাই কে দেখার মতো লাগছিলো।মনে হচ্ছিলো কেঁদেই দিবেন যে অবস্থা।
রিয়ার আম্মু একটা টাওয়াল এনে বিভোর ভাই কে দিয়ে বলে বিভোর এটা দিয়ে মুছে নাও।দেখলে মেয়েটা কি করলো।ছিঃকি বিশ্রি কান্ড টাই না হলো।রিয়াকে তো মাইর দিবেই কাকি মনি।ফাজিল মেয়ে বমি আসার আগে বলবি না।ছেলেটার শরীরে কি করলি।ও এখন বিয়ে বাড়িতে কিভাবে যাবে।তোর কান্ড জ্ঞান কোনদিন হবে না।বিভোর ওকে জানালা দিতে ফেলে দাও।এই টুকু জার্নি করতে পারে না আবার উনি ডাক্তার হবে।আমার উচিত ছিলো বাড়ির পাশের কোনো রিক্সাওয়ালা ছেলের সাথেই বিয়ে দেওয়া।বিভোর ভাই বলেন আন্টি বাড়ির কাছে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা থাকলে বলবেন প্লিজ।আশে পাশে অনেক ভালো স্মার্ট ছেলে আছে কিন্তু।কাকি মণি বলেন তেমন পাচ্ছি না বাবা।পেলে ঠিক ই দিবো।
আলিপ আর মেহনুবা আপু কি যেনো কথা বলছে।এমন সময় আলিপ ঝাড়ি মেরে উঠে পেছনে গিয়ে বসলো।
আমি উঠে মেহনুবা আপুর পাশে গিয়ে বসে বললাম,,,
কি হয়েছে মেহনুবা আপু তোমার?তোমাকে কেমন যেনো লাগছে।আলিপের সাথে কি কিছু নিয়ে মান অভিমান হয়েছে।আমি মেহনুবা আপুর হাত টা ধরতেই হাত টা এক ঝটকা দিয়ে সরিয়ে নিয়ে নিলো মেহনুবা আপু।আমি অবাক হয়ে গেলাম উনার চোখে মুখে যেনো আমার প্রতি মারাত্মক বিরক্তি।এই বিরক্তির কারণ কি কিছুই বুঝলাম না।আমি মিহি কন্ঠে আপুকে ডাকলাম আপু কি হয়েছে?
তোর কিসের এত দরদ দিয়া আমার প্রতি।তোর এত দরদ আমার আর সহ্য হচ্ছে না।
আপু এভাবে বলছো কেনো? তুমি তো জানোই তোমাকে আমি কত বেশী ভালবাসি।
তোর এই ন্যাকামো আর নেওয়া যাচ্ছে না।এত বেশী ভালবাসা আমার আর হজম হচ্ছে না দিয়া।এখন থেকে তুই তোর মতো আমি আমার মতো।অন্যর লাইফ নিয়ে এত নাক না গলালেও চলবে।নিজের সংসার নিয়ে ভাব না দিয়া।আমার লাইফের কোনো ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করতে আসবি না।
আপু তুমি এভাবে বলছো কেনো?তুমি কি আমার আপু।
হ্যাঁ আমি বলছি।কারন তুই আপন হয়ে আমার পিঠে ছুরি ঢুকিয়েছিস।আমি তোর কি ক্ষতি করেছিলাম দিয়া।আমার জীবন টা এভাবে তছনছ করে কি শান্তি পেয়েছিস তুই।বিহান ভাই তো তোকে সব দিক দিয়ে ভাল রেখেছে তাহলে কিসের সমস্যা তোর।তুই যদি নেক্সট আর আমাকে বিরক্ত করিস আমি বিহান ভাই কে বলতে বাধ্য হবো মাইন্ড ইট দিয়া।
আসলে কি বলবে মেহনুবা আপু।আর আমি বা কি করেছি।আমার জানা মতে আমি এমন কিছুই করি নি যার জন্য আমার সব থেকে কাছের প্রিয় আপু আমার সাথে এমন করতে পারে।মেহনুবা আপুর মারাত্মক ক্ষতি হলেও তো উনি আমার সাথে এমন করার কথা নয়।ঠিক কি হয়েছে আপুর।
আপু তুমি বিহান কে যা খুশি তাই বলো আমার সমস্যা নেই। অন্তত বিহান কে বললেও বুঝতে পারবো তোমার রাগের কারণ।তুমি আমার সাথে শেয়ার করো প্লিজ।
দিয়া তোর এই ন্যাকা ন্যাকা কাঁন্না দেখে বিহান ভাই ভুলতে পারে আমি না ওকে।এইসব বিহান ভাই এই দেখা।
মেহনুবা আপু আমার হাত টা ঝাড়ি মেরে গিয়ে অন্য সিটে বসলো।হাতের আঙুল আমার মচকে যাবার মতো অবস্থা। খুব ব্যাথা পেলেও আমি চুপ হয়ে রইলাম।রাগে,দুঃখে,কষ্টে কেঁদেই দিলাম।
এমন সময় বিহান ভাই এসে আমার পাশে বসলেন।আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলেন দিয়া আমি তোর চোখের পানিকে খুব ভয় পাই।এই চোখের পানির কারণ যে হবে সেই আমার কাছে সব থেকে বড় শত্রু হবে।মেহনুবা তোকে মারাত্মক ভালবাসে আমি জানি কিন্তু সাডেন এমন করলো কেনো?মেহনুবার জায়গা অন্য কেউ থাকলে আমি সাথে সাথে প্রতিবাদ করতাম।কিন্তু এর পিছনে নিশ্চয় কোনো কারণ আছে।
আমি চুপ হয়ে বসে আছি।চোখের পানি বার বার আটকানোর চেষ্টা করছি।কিন্তু কোনো ভাবেই আটকাতে পারছি না।বিহান ভাই আমার ঘাড়ের উপর দিয়ে হাত দিয়ে বলেন আহা পুচকু তুই না বিহানের বউ।বিহান একজন স্ট্রং ছেলে।তার বউ কে আরো বেশী স্ট্রং হতে হবে।দিয়া তুই এমন সামান্য কারণে ভেঙে পড়লে আমাকে সামলাবে কে?আমি যে আমার থেকে তোকে বেশী ভরসা করি।আমি এটা বিশ্বাস করি আমার দিয়া আমাকে সব খারাপ সিসুয়েশন এ সামলে নিবে।আমার খারাপ সময়ের ডান হাত হবে।আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে অনুপ্রেরণা দিবে।
আমি উনার দিকে ছল ছল চোখ নিয়ে তাকিয়ে বললাম আমাকে এত বড় উপাধি কেনো দিচ্ছেন বিহান ভাই।আমি কি এত সবের যোগ্য।
বিহান ভাই আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলেন, আমি কি আর এমনি এমনি তোকে বিয়ে বিয়ে করেছি।আমি তো জানি আমার দিয়া কেমন।দিয়া জীবন টা অনেক বড় আর জীবন মানেই সমস্যা।যে জীবনে সমস্যা নেই সেটা কোনো জীবন ই না।এমন কেউ নেই তার জীবনে সমস্যা নেই।পারফেক্ট গার্ল অলওয়েজ ডোন্ট কেয়ার মুডে থাকে।তুই চাইলেও এই পৃথিবীতে সবার কাছে ভালো হতে পারবি না দিয়া।ভুল বোঝা বুঝি,শত্রুতা বিভিন্ন প্রব্লেম লেগেই থাকবে।যদি সবার কথা এত গুরুত্ব দিস তাহলে জীবনে আগাবি কিভাবে পাগলি।আর তাছাড়া তুই এখন মেডিকেল কলেজের ছাত্রী।আগামি দিনের ডাক্তার।মানুষের জীবন বাঁচানোর দায়িত্ব থাকবে তোর হাতে সেই তুই ভেঙে পড়লে কি চলবে।ভুলেও আর এসব ভাববি না কখনো।
উনার কথা গুলো শুনে মন একটু হালকা হলো ঠিক ই কিন্তু মেহনুবা আপুর চিন্তা মাথা থেকে যাচ্ছেই না।বিহান ভাই আমার হাতে একটু চুমু দিয়ে বলেন এই নরম তুলতুলে হাতকে শক্ত হতে হবে।এই হাত শুধু হাত না আমার সামনে আগানোর ভরসা।
আবির ভাইয়া মেহনুবা আপুর পাশে গিয়ে বসে বলেন তোর কি হয়েছে রে মেহু।আজকাল এত ডিস্টার্ব থাকিস কেনো? প্রেম ট্রেম করে স্যাকা খাস নিতো আবার।মেহনুবা আপু আবির ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলে কি যে বলেন ভাইয়া।আবির ভাইয়া মেহনুবা আপুর এক গোছা চুল ধরে টান দিয়ে বলে আমি কি আর বুঝি না।প্রেম না হয় করিনি বরযাত্রী ও কি যায় নি।হাত কেটেছিস কার জন্য ফুপ্পি কে বলবো।মেহনুবা আপু বিরক্ত হয়ে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করলে আবির ভাইয়া বলে বাহ রে সাহস আমাকেই চোখ রাঙানি দেওয়া হচ্ছে।জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিবো একদম।
রাত বারোটায় ঢাকা পৌছালাম।একটা হোটেল বুকিং করা হয়েছে।এখানেই কমিউনিটি সেন্টারে গায়ে হলুদ হবে কাল।জার্নি করে মারাত্মক ক্লান্ত সবাই।যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়লো।
পরের দিন খুব ভোরে উঠে গায়ে হলুদের শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে নিলাম।বিহান ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন এই হ্লুদ পরী এত সুন্দর করে সেজে বউ বউ হয়ে ঘুরে বেড়ালে বর এর কি ভাল লাগে।
আমি বিহান ভাই কে বললাম ভাল লাগে না আপনার।
আরে এই ভাল লাগা সেই ভাল লাগা নয়।
আচ্ছা উনি কোন ভাল লাগার কথা বলছেন!অদ্ভুত!
চলবে,,
(মন ভাল নেই।আইডি নষ্ট হয়ে গিয়েছে।কি লিখেছি জানিনা??)