#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
২৩.
#WriterঃMousumi_Akter
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা প্রায়।সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢোলে পড়েছে। সূর্যের কমলা কালারের আভা চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।চারদিকে কমলা রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে।আমি ছাদে বেত লাফাচ্ছি আর বিহান ভাই উনার রুমেই ল্যাপটপে বিজি আছেন।
এমন সময় মামির ফোন বাজছে।ফোন রিসিভ করতেই মামি বলেন দিয়া দ্রুত রেডি হ বিহান এর সাথে তোর আন্টিদের বাসায় আয় একটু বলেই ফোনটা কেটে দিলেন মামি।আমি বুঝলাম না মামি সাডেন এভাবে তড়িঘড়ি করে ফোন কেটে দিলেন কেনো? কোনো বিপদ হয় নি তো।এই লক ডাউনে চারদিকে সব বন্ধ অনেক দিন কোথাও যাওয়া ও হয় নি।মামি গিয়েছেন উনার বোনের বাসায়।মানে বিহান ভাই এর খালায় বাসায় গিয়েছেন।বিহান ভাই এর তো এক্সাম উনি তো এখন কিছুতেই যাবেন না।উনাকে আমার বলার ও সাহস নেই।আমি চুপ হয়ে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি মামি তার ছেলেকে বললে বলুক না বললে নাই আমি কিছুতেই তার সামনে যাবো না।আমাকে একবার দুই ঘন্টা ধরে খাটিয়ে মেরেছে।আমি আর কোনো ভুল করবো না। এইবার দেখা গেলো আমাকে দিয়ে সারারাত চা কফি বানালো উনি।
এমন মুহুর্তে দেখি ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছেন বিহান ভাই।আমার দিকে কপাল ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলেন এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেনো?আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বলেন বেত লাফিয়েছিস।এমন ৫ কেজির বডি নিয়ে লাফালাফি করেও যদি হাঁপিয়ে যাস তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।আর তোর হাতে ওটা কি? আমি থত মত খেয়ে বললাম ইয়ে চানাচুর।উনি বিশ্রি একটা ভংগী দেখিয়ে বললে হোয়াট চানাচুর।তুই এখন চানাচুর খাচ্ছিস তোকে এসব কে কিনে দেই শুনি।এগুলা শরীরের জন্য আনহেলদি তুই জানিস না।এইদিকে চানাচার আমার মারাত্মক ফেবারিট। উনি চানাচুর আমার হাত থেকে নিয়ে ফেলে দিতে পারে সেই ভয়ে আমি অনেক গুলা চানাচুর হাতে ঢেলে মুখের ভিতর দিয়ে দিলাম।মুখ ভরা চানাচুর আমি হা ও করতে পারছি না।ঠোঁটে মুখে ঝাল লেগে গিয়েছে।বিহান ভাই আমাকে এভাবে চানাচুর খেতে দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলেন ষ্টুপিড একটা।আস্তে আস্তে খা।এভাবে খেলে নাকে মাথায় উঠবে।বলতে বলতেই মাথায় উঠে গেলে কাশতে কাশতে। ঝাল আমার নাকে চলে গেলো,,ঝালে নাক ঝলে যাচ্ছে।বিহান ভাই আমাকে পানির পট টা এগিয়ে দিয়ে বলেন পানি খা আগে।
পানি খেয়ে নিজেকে সামলে নিলাম।বিহান ভাই আমাকে বলেন বিভোর কে দেখে নিবো এইগুলা সব বিভোর এনে দেই তোকে তাইনা।দিন দিন শুটকি মাছ হচ্ছিস। এইসব হাবিজাবি খেয়ে ভাত খাস না তুই।তাছাড়া তুই কি এখন বাচ্চা আছিস চিপস,চানাচুর,চকলেট ছাড়া চলে না তোর।
আজ থেকে তোর খাবারের রুটিন আমার মতোই হবে।তৈলাক্ত কোনো খাবার খেতে পারবি না।সারাদিনে কোনো ফাস্টফুড খেতে পারবি না।সকালের ডিম সিদ্ধ খাস নি কেনো?
আমি মাথা নিচু করে বললাম আমি ডিম খেতে পারি না বমি আসে বিহান ভাই।
কাল থেকে যদি ডিম না খাস বাচ্চাদের মতো মুখ হা করিয়ে কিভাবে খাওয়াতে হয় সেভাবে খাওয়াবো।
একজন ডাক্তার কে বিয়ে করা যে কত্ত বড় সমস্যার সেটা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।আমার সব থেকে বড় সমস্যা খাবার খাওয়া আর উনি এখন সেই খাবারের পেছনেই লেগেছেন।কত গুলা জিনিস নিয়ে বকা দিবেন বলে হয়তো লিস্ট করে রেখেছেন।
এসব চ্যাপ্টার ক্লোজ করে বলেন, তুই আজ অন লাইনে ক্লাস করিস নি ক্যানো?ওহ মাই গড আজ ক্লাস ছিলো উনাকে তো বলি নি।উনি কিভাবে জানলেন।সমস্যার উপোর সমস্যা।উনি ভ্রু কুচকে বলেন কিরে উত্তর দিস না ক্যানো? ক্লাস করিস নি ক্যানো?
চুপ চাপ থেকে উত্তর দিলাম আমার ল্যাপটপ নেই বিহান ভাই।
বিহান ভাই সন্দিহান ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন তোর ফোনে কি হয়েছে।
ফোনে নেট ছিলো না।আর ফোনে একটু সমস্যা হয়েছে।
বাসায় যে ওয়াইফাই আছে সেটা তুই জানিস না।
আমি পাসওয়ার্ড জানি না।
পাসওয়ার্ড একটু ভাবলেই পেয়ে যেতি।স্টুপিড হলে যা হয় আর কি।যআ নিচে গিয়ে রেডি হয়ে নে দ্রুত।
আশ্চর্য ব্যাপার উনি রেডি হয়ে আমাকে বলেন দ্রুত রেডি হয়ে নে।
এইদিকে এই সন্ধ্যা নামার আগের মূহুর্তের বিহান কে দেখে আমি মারাত্মক ক্রাশ খেয়ে গেলাম।উনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি আমি।কালো জিন্স, কালো শার্ট, শার্টের হাতা গোটানো, হাতে কালো ঘড়ি, চোখে সানগ্লাস।
আমাকে বলে দেখ তো দিয়া আমাকে কেমন লাগছে?
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।
বললাম কেমন লাগছে আপনাকে?
বিহান ভাই বলেন সেটাই তো জানতে চাইছি কেমন লাগছে আমাকে।
আমি মাথা নেড়ে শুধু বললাম ভাল লাগছে।কারণ উনার এই ভয়ানক সুন্দরের বর্ণনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
বিহান ভাই আমাকে বলেন তোর জন্য একটা কালো গাউন রাখা আছে দেখ ওইটা পর তোকে মানাবে ভালো।আর সাথে কালো কাচের চুড়ি গুলা পরবি।দ্রুত রেডি হবি কিন্তু।
কোনো কথা না বলে কালো গাউন আর কাচের চুড়ি গুলা পরে নিলাম।নিচে বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছেন বিহান ভাই।চুপচাপ বাইকের পেছনে গিয়া উঠলাম।বিহান ভাই আমাকে বলেন ওয়েট কর বলেই চট করেই বাইক থেকে নেমে রুমে গিয়ে আবার বেরিয়ে এলেন।আমার কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ পরিয়ে দিয়ে ফোন এর আয়না আমার সামনে ধরে বলেন এবার দেখ তোকে পরীর মতো লাগছে। একটা ছোট্ট কালো টিপ তোর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।
উনার কথা শুনে মারাত্মক লজ্জা পেয়ে গেলাম।
বিহান ভাই বাইক স্টার্ট দিলেন, রাস্তায় বিভোর ভাই রাফি আর রিয়া অপেক্ষা করছে।তিনজনের একবাইকে যেতে অসুবিধা হচ্ছে।কে কিভাবে উঠবে এটা নিয়ে সমস্যা।বিহান ভাই রাগে গজ গজ করছেন।এই অবেলায় কেনো তাকে তার আম্মুর আবদার রাখতে যেতে হচ্ছে তাই।
উনার খালাদের বাসা মাত্র ১০ মিনিট ও না।তার জন্য বাইক এর কি প্রয়োজন ছিলো।
এরই মাঝে বিভোর ভাই প্রস্তাব দেন আমরা যেনো হেঁটে যায়।বিহান ভাই খিটখিটে মেজাজে রাজি হলেন।কারণ এটা ছাড়া উপায় নেই।বিহান ভাই এর খালা বাড়িতে ছোট পরিসরে অনুষ্টান চলছে।বিভিন্ন জায়গার মানুষ ও এসেছে।বিহান ভাই বিরক্তি নিয়ে বলছেন এই লক ডাউনে খেয়ে কাজ কাম নেই দুনিয়ার মানুষ জড় করে ফাউ ঝামেলা পাকাইতেছে।
যাওয়ার সময় বিভোর ভাই রিয়ার মাথায় টোকা দিয়ে বলেন রিয়া আমার মনে হচ্ছে তোমার বিয়ের ফুল ফুটে গিয়েছে।রিয়া বলে বিভোর ভাই আপনি আমার বিয়ে নিয়ে ইদানিং খুব ভাবছেন।বিভোর ভাই বলেন কারণ তোমার বিয়ের দিন ই আমার বিয়ে হবে।বিহান ভাই বিভোর ভাই এর কথা শুনে হেসে দিয়ে বলেন বিভোর রিয়া কিন্তু কোন ভাবেই পটবে না।এটা কিন্তু তোর ভুল প্রচেষ্টা।বিভোর ভাই বলেন এক বাত না পারিলে দেখো শতবার।রিয়া আমার কানে কানে বলে দেখ দিয়া বিভোর ভাই কে হালকা গোলাপি গেঞ্জিতে কি সুন্দর লাগছে।বুঝতে পারলাম ব্যাপার টা এগোচ্ছে।
অবশেষে আমরা বিহান ভাই এর খালা বাড়ি পৌছালাম।আমাদের ড্রয়িং রুমে বসতে দেওয়া হলো।বিহান ভাই এর মামির ভাতিজি, ভাই এর ছেলে বিভিন্ন মানুষ ও উপস্হিত।বিহান ভাই এর মামির ভাই আমাকে বার বার ফলো করছে।কি জানি উনি কি দেখছে।
আমাকে বলে মা নাম কি তোমার?
আমি বললাম জ্বী দিয়া
তোমরা কয় ভাই বোন।
বিভোর ভাই উত্তর দিলেন ওর তিন ভাই আর তাদের একটাই বোন।মানে ও আমাদের বোন আমাদের ফুফাতো বোন।
ওহ আচ্ছা তোমার ফুফুর তিন টা ছেলে।
না ফুফুর একটা ছেলে আর আমরা দুই ভাই এই নিয়ে তিন ভাই ওর।
তাহলে চার ভাই ধরতে বিহানের ও তো বোন সে হিসাবে।
বিহান ভাই উনার মামার শালার এমন কথায় ভীষণ বিরক্ত।
ভদ্রলোক আবার বলতে শুরু করেন আমার ভাতিজা আর্মিতে জব করে দেখতে সুন্দর তোমাদের বোন কে বিয়ে দিবে।ও এখানে ই আছে।আমার ভাতিজা দেখতে বেশ সুন্দর কিন্তু।এমন মিষ্টি মাখা একটি মেয়ে খুজছি মানাবে ভালো দুজন কে বলেই উনার ভাতিজা কে ডাক দিলেন। এই আহিন এখানে আয় তো বাবা।আয় পরিচয় করিয়ে দেই এটা তোর বিহান ভাইয়া চিনিস না।আহিন নামের ছেলেটি বলে হ্যাঁ চিনি তো নাম অনেক শুনেছি।আহিন বিহান কে বলে ভাইয়া কেমন আছেন আপনার অনেক প্রশংসা শুনেছি।
বিহান ভাই হেসে দিয়ে বলেন হুম ভালো আছি তুমি।
আহিন যে বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিলো সেটা যেনো বিহান ভাই কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলো না।
চলবে,,
(সবাই কমেন্ট করবেন।বানান ভুল থাকতে পারে সে জন্য দুঃখিত)