#তনয়া
#পর্ব-১৭+১৮
আয়রা প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে বুঝিয়ে যাচ্ছে অথচ তনুর কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। মায়ের ফোন পাওয়ার পর থেকে তনু অস্থির হয়ে আছে। রাফাত কাল সকালের টিকিট কেটেছে।দ্রুত ঢাকা ফিরতে হবে।ফিরেই সোজা গিয়ে আরাফের গালে কষে একটা চড় বসাবে।অতিরিক্ত করে ফেলেছে সবকিছু। কি প্রয়োজন ছিল তনুর আর মিশকাতের সম্পর্ক নিয়ে আজে বাজে কথা বলার?ওরা নিজেরাই নিজেদের নিয়ে ভাবে না মাঝখান থেকে আরাফ ঝামেলা তৈরী করলো।
মিশকাত নিবির্কার ভঙ্গিতে বসে আছে সোফায়।দেখে বোঝা যাচ্ছে সে খুব ভালো মুডে আছে।সেজন্যই বোধহয় আয়েশ করে ফোনে গেম খেলছে।বরং বোঝা যাচ্ছে তনুর ফোঁপানোর আওয়াজে বিরক্ত হচ্ছে সে।মনোযোগ হারাচ্ছে এবং সেই বিরক্তিটা সে প্রকাশ করছে।এতে তনুর কষ্টের থেকে রাগটা বেশি হচ্ছে। সব হয়েছে এই বদমাশ মিশকাতের জন্য। এই জন্যই সে এতদিন এড়িয়ে চলেছে।কিন্তু কি হলো, শেষে এসে সেই একি ঘটনার সম্মুখীন হতে হলে।এতদিন ধরে এত কষ্ট সব বানচাল করে দিলো মিশকাত ভাই।তনু মনে মনে কঠিন সিদ্ধান্ত নিলে ফেলল,মিশকাত ভাইকে সে সময় মতন কঠিন কোনো শাস্তি দেবে!
তানভীর সাহেব মিশকাতকে ফোন করছে।তাই মিশকাত ইশারায় রাফাত কে ডেকে নিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
“কি হয়েছে মিশকাত,তোর ফুপি এত রেগে আছে কেন তোর আর তনুর ওপর?”
“ফুপি সব জেনে গেছে যদিও যা জেনেছে তা আংশিক সত্যি, বাকিটা বানোয়াট।”
“সেটা আমি জানি।কি হয়েছে সেটা আগে বল?”
“তুমি রাফাত ভাইয়ের থেকে শুনে নাও।” মিশকাত ফোনটা রাফাতকে এগিয়ে দিলো।
রাফাত ধীরে ধীরে সবটা বলল তানভীর সাহেবকে।সব শুনে তিনি বললেন,
“এগুলা কোনো ঝামেলা হলো?বরং ভালোই হলো সবারই জানা দরকার।আমি মিশকাতের বাবার সাথে কথা বলব। আমার বিশ্বাস ও কথাগুলো শুনে অনেক খুশিই হবে। তোমরা সাবধানে ফিরে এসো।”
রাফাতের একটু হালকা লাগলো।ফিরে গিয়ে শুধু আরাফের মুখোমুখি হওয়া।কবে যে এত বেয়াদব হয়ে গেল ছেলে?আগে তো ভালোই ছিল,এরকম ডেস্পারেট তো ছিল না কখনও!
ডিনার সেরে ওরা সবাই রুমে ফিরে এলো।মারুফ মিশকাত ওদের রুমে চলে গেল।আয়রা তনুকে চিন্তা না করে ঘুমোতে বলে নিজের রুমে চলে গেল।শান্তাও শুয়ে পরল তনুর পাশে।দুজনেই টুকটাক গল্প করছে যদিও তনুর মাথায় বিভিন্ন ভাবনা ঘুরছে।শান্তা একসময় ঘুমিয়ে পরলেও তনুর চোখে ঘুম নামল না।ঠিক রাত বারোটার সময় তনুর ফোনে মেসেজ আসলো,
“আমি তোর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।”
তনু দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এটার মানে তনুকে এখন দরজাটা খুলে দিতে হবে।তনু বিছাড়া ছাড়ল। বিরক্তি চেপে রেখে দরজা খুলতেই মিশকাত টেনে নিয়ে গেল তাকে।আকস্মিক এমন কান্ডে তনু হা হয়ে গেছে।সেই সুইমিংপুলের ধারে নিয়ে এসেছে মিশকাত।তনু মনে মনে কয়েকটা ফাঁকা ঢোক গিলল।তাকে কি আজও পানিতে চুবাবে মিশকাত ভাই!তনু ভয়ে ভয়ে সিদ্ধান্ত নিল সে একটা ভোঁদৌড় দেবে।তাই মনে মনে প্রস্তুতি নিতে চোখ বন্ধ করলো।ভাবলো এবার সে বিসমিল্লাহ বলে দৌড় দেবে কিন্তু তার আগেই বাহুতে টান পরল।সামনে তাকাতেই তার চক্ষু ছানাবড়া হবার যোগার হলো।সবাই দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে।কি সুন্দর করে সাজানো সবকিছু।ছোট একটা টেবিল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানো।তার ওপর সুন্দর একটা কেক।কেকটায় লেখা “শুভ জন্মদিন তনয়া”।
তনু নিজের জন্মদিনটাও ভুলে গেছে অথচ সবাই মনে রেখেছে।সবাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালো শুধু মিশকাত ছাড়া।মিশকাত সরে দাঁড়িয়ে লম্বা একটা হাই তুলে বলল,তাড়াতাড়ি কেটে ফ্যাল ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।
মারুফ বলল,
“তুই তনুকে উইশ করলি না?”
আমার শুধু ওকে ডেকে নিয়ে আসার দায়িত্ব ছিল।এখন তোরা যা খুশি কর।আমায় শুধু কয়েক পিস কেক দিস তাহলেই হবে।সবাই ঠোঁট চেপে হাসলেও তনু বুঝে গেল এসব আয়োজন মিশকাত ভাই করেছে।কিন্তু খুশি হতে পারল না। ইদানীং মিশকাত ভাইয়ের জন্য দীর্ঘশ্বাস টা বেশি হয়ে যাচ্ছে!
***
মিশকাত বসে আছে বাবা মায়ের সামনে।যদিও সে মায়ের সাথে তনুকে নিয়ে কোনো আলোচনা করছে না।বাবাকেই সবটা বলছে।সেই শুরু থেকে প্রতিটা বিষয় বুঝিয়ে বলছে।তনুর আর তার কখনোই কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠে নাই।কিন্তু তবুও ওরা দুজন দুজনে ভালোবাসে।এই জটিল সমীকরণ টা বুঝিয়েছে। মিশকাতের মা কিছু বলে নি শুধু শুনেছে চুপ করে।তিনি তো জানেন তনু আর তার ছেলে কোনো সম্পর্কে এগোয়নি।কিন্তু এতদিন পরে এসেও যে তার ছেলে তনুতে আঁটকে থাকবে তা সত্যি ভাবতে পারেন নি।তনু তো নিজের জায়গায় ঠিক আছে অথচ তিনি নিজের ছেলেকে ধরে রাখতে পারলেন না।তিনি তো একজন মা।তনুকে ভালোবাসলেও ছেলের বউ করে আনার কথা ভাবতেই পারেন না।মিশকাত কখনও বাবা হতে পারবে না তনুকে বিয়ে করলে।মিশকাত এখন না বুঝলেও ঠিক একদিন কষ্ট পাবে এ নিয়ে। তখন তিনি ছেলের কষ্ট কিভাবে কমাবেন?আবেগে ভেসে গিয়ে তো তিনি হুজুগে মাততে পারেন না?
মিশকাতের বাবা বললেন,
“এখন তাহলে তুই কি করতে চাচ্ছিস?”
“আমি তনুকে বিয়ে করতে চাই বাবা তবে সেটা এখনই নয়।তুমি শুধু কথা গুলো ফুপিকে বুঝিয়ে বললেই হবে।”
“এখন বিয়ে করতে চাচ্ছিস না ভালো কথা।কিন্তু বিষয়টা তো এভাবে ফেলে রাখলে হবে না? এর একটা সমাধানে আসতে হবে।”
“সমাধান করলেও কিছু হবে না বাবা।তনু বেঁকে বসবে আর মা তো আছেই!”
“তোর মা বেঁকে বসবে কেন?”
“কারণ তনুর সাথে বিয়ে হলে তোমার ছেলে কখনও বাবা হতে পারবে না।” মিশকাতের মা এবার বলে উঠল।
“আশ্চর্য!সেটা তো আমিও জানি।আমি নিজেই তো তনুর সাথে হসপিটালে ছিলাম তোমায় আর নতুন করে সে কথা আমায় শোনাতে হবে না।”
“মিশকাতের বাবা তুমি কি বুঝতে পারছো?”
“কি বুঝতে বলছো?”
মিশকাত বাবা মায়ের কাছ থেকে উঠে দাঁড়াল।সে সবটা বলে দিয়েছে এখন মা বাবই ঠিক করুক আর সে নিজে তো আছেই অন্যদিক গুলো সামাল দেয়ার জন্য। মিশকাত নিজের ঘরে যেতে যেতে ভাবলো,
তনুর জন্য তাকে কতকিছুই না করতে হচ্ছে। এর থেকে পাহাড় কেটে রাস্তা বানানো সহজ ছিল।সময় আসলে সব সুধে আসলে ফেরত নেবে সে।বড্ড জ্বালিয়েছে তনু,এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
“তোমার বোনের মেয়ে জন্য কিছুই চোখে পড়ছে না, তাইনা?”
“তনু যদি তোমার বোনের মেয়ে হতো তবুও আমি একি কথা বলতাম।শোনো মিশকাতের মা,সন্তান দানের মালিক সৃষ্টিকর্তা।তা নিয়ে তুমি ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারো না।ছেলে মেয়ে গুলো সুখি হলে আমরাও সুখি।বিয়ের পর দেখা যাবে কি হয়?দরকার হলে বাচ্চা দত্তক নেবে ওরা।এতে খারাপের কিছু নেই।তুমি নিজে তো একজন নারী,একজন মা একটু ভেবে দেখত জন্মদিলেই কি শুধু মা বাবা হওয়া যায়।একটা সন্তানকে কতটা কষ্ট করে মানুষ করতে হয়?তাই বলছি একটু ভেবে দেখ,তোমার কি মনে হয় মিশকাত এতদিন পরে এসেও যখন তনুকে ভুলতে পারছে না সবটা জানার পরেও তখন তোমার অমতে কতটা কষ্ট পাচ্ছে।ছেলেটা তোমার তুমি ওকে ভালো জানো।তোমার মতামত ছাড়া ও কিছুই করবে না যতই কষ্ট হোক না কেন।তাহলে তুমি কি চাইবে মিশকাত সারাজীবন কষ্টে থাকুক?” মিশকাতের বাবা কথা গুলো বলে থামলেন।একবার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে চলে গেলেন।মিশকাতের মা উঠলেন না। বসে থেকে স্বামীর বলা কথা গুলো ভাবতে লাগলেন।সত্যি কি তিনি কোনো ভুল করছেন?
***
সময় পেরিয়েছে অনেকটা।শায়লা বেগম স্বামীর কাছে সবটা শোনার পর তনুকে কোনো বকাবকি করেন নি।বড়ভাইও সবটা বুঝিয়ে বলেছেন।তবে সেদিনের পর থেকে তার দুশ্চিন্তা বেড়েছে।একে তো তনু বিয়ে করতে চায় না তার ওপর মিশকাতকে ভালোবাসে।এই মেয়ের ভবিষ্যতে কি হবে কে জানে?তনু অবশ্য নিয়মিত ভার্সিটিতে যাচ্ছে,বাসায় থাকলে মায়ের সাথে টুকটাক কাজে সাহায্য করছে, আয়রা ঘুরতে এলে বোনের সাথে আনন্দ করছে, তন্ময়কে রাতে নিয়মিত পড়াচ্ছে সব মিলিয়ে তনু বেশ ভালো আছে।এখন সবাই ওর ব্যাপারটা জেনে যাওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।নিজেকে আর আগের মতন গুটিয়ে নেয় না।এর মাঝে কেটে গেছে অনেকটা সময়।সিলেটে কাটানো সুন্দর স্মৃতি গুলোতে ধুলো জমতে শুরু করেছে। সবাই ব্যস্ত সময় পার করছে।মিশকাতের সাথে প্রায় সাত আটমাস ধরে দেখা হয় না তনুর।অবশ্য তনু সেসব নিয়ে ভাবেও না।যেমন চলছে চলুক না ক্ষতি কি?
অন্যদিকে আরাফকে রাফাতই বাড়াবাড়ি করতে দেয়নি।প্রথমদিকে আরাফ তনুর কলেজ পর্যন্ত চলে আসতো পরে রাফাতের সহযোগিতায় সবটা সামলে নেয়া গেছে।আরাফের বাবা ছেলেকে কঠিন বাঁধনে বেঁধে ফেলেছেন।বাড়ি এমনকি ব্যবসা থেকে বাদ দিতে চেয়েছিলেন।আরাফকে তিনি দুটো অপশন দিয়েছিলেন, তনুর ব্যাপারে সব ভুলে যাওয়া আর নাহয় বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া।আরাফ জানে বাবা তাকে বিদেশ পাঠালে সে সহজে ফিরতে পারবে না তাই চুপচাপ সবকথা মেনে নিয়েছিল।
মিশকাতের একটা বেশ ভালো চাকরি হয়েছে।এত তাড়াতাড়ি সে চাকরি পেয়ে যাবে ভাবতেই পারেনি।অবশেষে সে নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে পারবে।অনেকটাই শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যে। তার পরিকল্পনার কথা শুধু রাফাত আর মারুফ ছাড়া কেউ জানে না।মিশকাতের চাকরি পাওয়ায় তার বাবা মা খুব খুশি।মিশকাতের মা ছেলের জন্য পাত্রী দেখতে শুরু করেছেন গোপনে।ছেলেকে তনুর থেকে দূরে সরাতে তিনি ভালো পাত্রীর খোঁজ করছেন।মিশকাতের বাবাকে না জানিয়ে সবটা করছেন।সবাই সবার ভাবনা চিন্তায় ব্যস্ত কিন্তু মিশকাত আর তনুর যে আত্মার সম্পর্ক তা দিন দিন যেন গভীর হচ্ছে। মিশকাত আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তনুর কাছাকাছি পৌঁছোনোর জন্য।
যতদিন যাচ্ছে তনুর থেকে দূরে দূরে থাকতে ততো কষ্ট হচ্ছে। মিশকাতের বাবা তো প্রায় তানভীর সাহেবের সাথে আলাপ করেন ছেলে মেয়ে দুটোকে নিয়ে।ওরা কি করতে চাইছে সেটাই বুঝে উঠছেন না কেউই।
***
ইদানীং প্রচুর গরম পরেছে।তনু আছরের নামাজ আদায় করে একটু ছাঁদে উঠল।হাতে ছোট বালতি মগ।উদ্দেশ্য ফুলের গাছ গুলোর একটু পরিচর্যা করা।এখন সে ছাঁদে বেশি সময় কাটাতে পারে না।ভার্সিটি থেকে ফিরে খেয়ে ঘুমিয়ে পরে।সন্ধ্যায় উঠে নাস্তা বানায় মাঝে মাঝে।তন্ময়কে পড়ায়,ছেলেটা এবার নাইনে উঠল।এই সময় পড়ায় ফাঁকি দিলে রেজাল্ট ভালো হবে না।তাই তনু নিয়মিত ধরে বেঁধে পড়তে বসায়।এরপর নিজে একটু পড়াশোনা করে।রাতে তানভীর সাহেব ফিরলে সবাই মিলে গল্প করে আড্ডা দেয়।আজ ভার্সিটি বন্ধ থাকায় সকালেই ভেবে রেখেছিল ছাঁদে কিছুক্ষণ সময় দেবে। সে সাথে হুমায়ুন আহমেদ এর ময়ূরাক্ষী উপন্যাস টাও নিয়ে এসে।তনুর অবশ্য হিমু চরিত্র কে ভালো লাগে না তবে ময়ূরাক্ষী বইটা তার খুব প্রিয়।সে সময় পেলেই বারবার পড়ে।তনু বালতিটা নামিয়ে রেখে ওরনাটা ভালো ভাবে পেঁচিয়ে নিলো।সবগুলো গাছে পানি দেবার আগেই তন্মায় হাঁপাতে হাঁপাতে ছাঁদে দৌড়ে এসে বলল,
“আপা, মিশকাত ভাই এক্সিডেন্ট করেছে!হাসপাতালে আছে অবস্থা খুব খারাপ তুমি তাড়াতাড়ি নিচে আসো মা কাঁদছে। ”
তনুর কোনো ভাবান্তর হলো না।শুধু হাতে থাকা বালতিটা পরে গেল।নোংরা পানি দিয়ে পরনের জামাকাপড় ভিজে গেল।সেদিকে খেয়াল না করে শুধু অস্পষ্ট গলায় বলল,
“তুই যা আমি আসছি।”
হসপিটালের করিডরে বসে কান্নায় অস্থির হয়ে আছে মিশকাতের মা।তার পাশেই বসা শায়লা বেগমও কাঁদছেন। সবাই এসেছে গেছে।রাফাতও আয়রাকে নিয়ে এসেছে।মারুফ আর রাফাত ছোটাছুটি করছে রক্তের জন্য। মিশকাত বাইক এক্সিডেন্ট করেছে।মারাত্মকভাবে যখন হয়েছে।রক্ত লাগবে জরুরি ভিত্তিতে।সমস্যা হচ্ছে ও নেগেটিভ রক্ত আপাতত কোথাও মিলছে না।ডোনার যোগার করতে সবার গলদ ঘাম হচ্ছে। টেনশনে সবার অবস্থা খুব খারাপ।সন্ধ্যার মধ্যেই রক্তের ব্যবস্থা করতে হবে।রাতে মিশকাতের অপারেশন। মিশকাত এখনও অজ্ঞান।
তানভীর সাহেব ঢাকার বাইরে ছিলেন কাজে। রাফাতের কাছে মিশকাতের খবর পাওয়ার সাথে সাথেই ঢাকায় ফিরছেন এবং সেই সাথে সবাইকে আস্বস্ত করেছেন, রক্ত পাওয়া গেছে কোনো সমস্যা হবে না।তিনি সব ব্যবস্থা করছেন।
বাবার কথা শুনে আয়রার চট করে মনে পরে গেল,তনুর ব্লাড গ্রুপ ও নেগেটিভ!এত চিন্তায় এতক্ষণ মনেই আসে নি। আচ্ছা, বাবা কি তনুর কথাই বোঝাতে চাইছে?আয়রার মনটা হঠাৎ শান্ত হয়ে আসলো।সে যা ভাবছে তাই যদি হয় তাহলে অনেক কিছুই পাল্টে যাবে।
তানভীর সাহেব বাড়ি ফিরে দেখলেন সমস্তবাড়ি অন্ধকারে ডুবে আছে।তানভীর ধীরে ধীরে তনুর ঘরের দিকে এগোলেন।তনুর ঘরটাও পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে আছে।তিনি ঘরের লাইট জ্বালালেন।তনু বিছানায় ঠেস দিয়ে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে।চোখ গুলো লাল হয়ে আছে।চুলগুলো সব উসকোখুসকো ।তানভীর সাহেব অবাক হলেন।এতটুকু সময়ের মধ্যে মেয়েটার একি অবস্থা হয়েছে!সকালেই তো বেশ হাসিখুশি মেয়েটাকে দেখে বের হয়েছেন।তিনি তনুর মাথায় হাত রেখে ডাকলেন,
“তনয়া?”
তনু না তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো,”তোমার এখন হসপিটালে যাওয়া দরকার বাবা। তুমি বাড়িতে এসেছো কেন?”
“আমার থেকেও তোর যাওয়াটা বেশি প্রয়োজন যে, মা!”
“আমি যাব না বাবা।সবাই তো আছে।তুমিও চলে যাও আমি একদম ঠিক আছি।”
“সেটা তো আমি দেখতেই পাচ্ছি।চল একটু ফ্রেশ হয়ে নিবি।আমরা এক সাথে যাব।”
“প্লিজ বাবা জোর করো না,আমি যাব না।”
“মিশকাতের জন্য না হয় না গেলি।কিন্তু মা, হসপিটালে যে একজন মুমূর্ষু রোগী আছে এমুহূর্তে তার ও নেগেটিভ রক্তের প্রয়োজন। সৃষ্টিকর্তা যে তোকে উসিলা করে দিয়েছেন।এবার তুই কি যাবি না?”
তনু কেঁপে উঠলো। অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকালো।তার একটুও বুঝতে অসুবিধা হয়নি বাবা কি বলতে চাইছে!সে বাবাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
***
আরাফ খুশিমনে বাড়িতে ফিরলো।তার পরিকল্পনা এভাবে সত্যি হয়ে যাবে এতটাও আশা করেনি সে।যা ভেবেছিল তার থেকে দ্বিগুণ হয়েছে।অবশেষে মনের সমস্ত রাগ ক্ষোভ গুলো কেটে গেছে। কিছু তো তাকে করতেই হতো।সারাজীবন সবকিছুতে টপে থাকা ছেলেটা এত সহজে কি করে হেরে যাবে?এটা কি মেনে নেয়া সম্ভব? হাসলো আরাফ, বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলো।এখন একটা লম্বা শান্তির ঘুম দেবে।অনেক রাত সে ঘুমাতে পারেনি ঠিক মতো।
চলবে..