জীবন মানে তুমি পর্ব-৬৩

0
3478

#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Rini (Irini Ori)
#পর্ব:৬৩

(২১৪)

আসলেই কী এটা ধোঁকা?নাকী চোখের ভুল।কিছুই ভাবতে পারছেনা মেয়েটা।গত দুই সপ্তাহ ধরে দেখে আসছে সে,শুনছে নানা কথা যা মনের উপর গভীর প্রভাব ফেলছে তার।এখন মনের মধ্যে কিছু হারানোর যন্ত্রনা উপলব্ধি করছে,মনে হচ্ছে প্রিয় কোনো জিনিস হারিয়ে যাচ্ছে।হারিয়ে যাচ্ছেনা বরং হারিয়ে ফেলেছে ইয়ারাবী।প্রথমে আবরারের খাপছাড়া ব্যাবহারকে বেশি গুরুত্ব না দিলেও এখন বুঝতে পারছে আবরার ওর প্রতি তিক্ত।আর যদি তিক্তই না হয় তবে নতুন সম্পর্কে জড়াতো না।

আসলে দেখতে দেখতে দুই বছর পার হয়ে গেছে।এই দুই বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে।তবে বদলায়নি স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা,বরং ওদের মধ্যে আরো গভীর হয়ে উঠেছিলো সব।কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে আবরারকে লক্ষ্য করে দেখেছে,অনেক রাত করে বাসায় ফেরে,ঠিকভাবে কথা বলেনা।শুধু নিজের দায়িত্বগুলো পাগল করে।প্রয়োজন হলে খোঁজ-খবর নেয় শুধু।প্রথমে ইয়ারাবীর মনে হয়েছিলো কাজের চাপ খুব তাই ওকে সময় দিতে পারছেনা।কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে মেডিকেলে অনেকের মুখে শুনছে নতুন কোনো মেয়ের সাথে আবরারকে প্রায় দেখা যায় এবং তাদের বিহেভ দেখে মনে হয় কোনো সম্পর্ক আছে তাদের মধ্যে।ইয়ারাবী এসব বিশ্বাস করতে চাইনি।তাই দুই দিন আগে ক্লাস শেষ করে,ওর ক্লাসমেট ন্যানসির সাথে আবরারের ক্লিনিকে যেয়ে দেখে একটা মেয়ে খুব ক্লোজ ভাবে বসে আবরারের হাত ধরে আছে।মেয়েটার চুলগুলো সোনালি রঙের,চোখের মনি গাড় নীল,আর চেহারা প্রচুর ফর্সা।মেয়েটা আবরারের হাত আকড়ে ধরে এক মনে কথা বলেই যাচ্ছে,আর আবরার ওর কথাতে শুধু মুচকি মুচকি হাসছে।

কোনো স্ত্রী যদি স্বামীর এইরুপ অবস্থা দেখে তবে তার মনের ভিতর কী হয় সেটা সেই ভালো বলতে পারে।ইয়ারাবী ওই জায়গায় প্রচুর ভেগে পড়ে, ন্যানসি নামের মেয়েটা ওকে সামলিয়ে বাসায় নিয়ে এসে বলে,
-“এয়া,অনেক সময় ভুল হয় চোখের দেখাতেও।”

ইয়ারাবী চোখ মুছে তাকিয়ে বলে,
-“কীসের ভুলের কথা বলছো তুমি ন্যানসি?নিজের চোখেই তো দেখলাম।”
-“ভালোবাসার মানুষকে অন্যের সাথে দেখলে কেমন লাগে সেটা নিজেও উপলব্ধি করেছি।আমার তো বয়ফ্রেন্ড ছিলো,কিন্তু ডা.এআর তোমার স্বামী।তুমি একটা কাজ করবে,তোমার স্বামীর সাথে আলাপ করে সব স্পষ্ট ধারণা নিবে।যদি সে নিজ মুখে বলে তবে তুমি অন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”
-“আমি জানতে চাইলে কী সে বলবে?”
-“দেখ,আবেগের বসে কোনো কিছু করা ঠিক নয়।সম্পূর্ন তথ্য যেনে তবে সিদ্ধান্ত নিবে,আর হ্যাঁ এই মুহুর্তে পরিবারকে জানাবেনা।কেননা তুমি তাদের থেকে অনেক দূরে,তারা চিন্তা করবে।হতে পারে যা দেখেছো সেটা অন্যকিছু,কিন্তু আমরা ভাবছি আরেক।ডা.এআরের কোনো বন্ধু বা পরিচিত কেউ।”
-“তাই বলে এই কয়েকদিন যেটা শুনছি সেটা তো ভুল হতে পারেনা ন্যানসি।আর ওই মেয়েটা….”
-“এয়া,প্লীজ ক্রন্দন করবেনা।আর কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিবেনা।আমি এখন ডোমেটরিতে ফিরছি, আবারও বলছি উল্টো-পাল্টা কিছু করবেনা দয়া করে।ঈশ্বর সব মঙ্গলের জন্যই করেন।আজ আসি আমি,পরশু দেখা হবে বন্ধু।”

ইয়ারাবী চোখের পানি মুছে দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
-“তুমি বসো আমি এনাকে নাস্তা দিতে বলি।”
-“এই না না,এমনিতেও অনেক দেরি হয়ে গেছে।আজ সন্ধ্যায় ক্লাবে যাবো তার প্রস্তুতি নিতে হবে।অন্য কোনোদিন খাবো।”

ন্যানসি কথাটা বলে ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে পরে।এনা কিছুই বুঝতে পারেনি,তাই ইয়ারাবীর পাশে এসে বলে,
-“ম্যাম আপনি ক্রন্দন করছেন কেন?”
-“ক..কই নাতো।আমি ঠিক আছি এনা,আসলে খুব মাথা ব্যাথা ধরেছে।আমাকে একটা হ্যাঙওভার ড্রিংকস্ বানিয়ে দিবে?”
-“ম্যাম আপনি একটু শুয়ে থাকুন,আমি ড্রিংকস্ আনছি।”

সেদিন আবরার অনেক রাত করে বাসায় ফিরে দেখে ইয়ারাবী ঘুমিয়ে আছে।ব্যাপারটা ওর কাছে খুব অদ্ভুত লাগে।কেননা ও না আসা অব্দি ইয়ারাবী ঘুমায়না বরং বই পড়ে সময় পার করে দেয়।তবে বেশি ভাবলো না আবরার,মনে করলো দুর্বলতার জন্য ঘুমিয়ে পরেছে।তাই ফ্রেস হয়ে এসে ইয়ারাবীকে বুকে নিয়ে নিজেও শুয়ে পরে।বাইরের থেকে ডিনার করে আসার কারণে আর খায়নি।

আজ সকালে আবরার ফজরের নামায পড়তে উঠে দেখে ইয়ারাবী এখনো ঘুমাচ্ছে।ও নামাযের জন্য ডাকতে যেয়ে বুঝতে পারে গাঁয়ে জ্বর এসেছে।বিষয়টা ওর কাছে কেমন ঘোলাটে মনে হতে লাগলো।ও ইয়ারাবীকে দুই বার ডাকতেই উঠে যায়।আবরার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“নামায পড়তে হবে,সময় চলে যাচ্ছে।”

ইয়ারাবী কোনো কথা না বলে আস্তে করে বেড থেকে নেমে যেয়ে ওযূ করে এসে নামাযে দাঁড়ায়। আবরার ভাবে অসুস্থ এই জন্য চুপচাপ,তাই ও নিজেও পাশে দাঁড়িয়ে নামায পড়ে নেয়।তারপর কাউচে বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করতে থাকে,এদিকে ইয়ারাবী বিছানায় উল্টোদিকে মুখ করে শুয়ে পরেছে।আবরার কাজ করতে করতে বলে,
-“আজ মেডিকেলে যেতে হবেনা তোমাকে।”
-“আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার।”
-“মানে?কী বলছো তুমি এসব।
আবরার ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে কথাটা বলে উঠে।আর অবাক হবেনা কেন?আজ পর্যন্ত ইয়ারাবী এতটা রুড ভাবে কোনো কথার জবাব দেয়নি।ইয়ারাবী উঠে বসে নিজের হাতের এপিঠ-ওপিঠ পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলে,
-“একটা কথা বলুন তো,আমি কী দেখতে আগের থেকেও খারাপ হয়ে গেছি?”
-“কী হয়েছে তোমার?কী সব ফালতু কথা বলছো।”

ইয়ারাবী তাছ্যিল্যের হাসি হেসে বলে,
-“ও ভুলেই গেছিলাম, আমার সব কথাতো আপনার কাছে ফালতু লাগবে।”
-“ইয়ু কী হয়েছে তোমার?কয়েকদিন তোমাকে সময় দিতে পারছিনা কাজের চাপে,তাই অভিমান হয়েছে।আসলে খুব ব্যাস্ত সময় যাচ্ছে।”
-“মান-অভিমান আমার কোনোকালেই নেই,আর আপনি কতটা ব্যাস্ত মানুষ সেটা খুব ভালো করেই জানি।আমি বাংলাদেশে যেতে চাই।”
-“হুম নিয়ে যাবো তো রোযার ইদে,তোমার এক্সাম শেষ হোক।”
-“আপনি ব্যাবস্থা করে দিন,আমি একাই যেতে পারবো।আমাকে নিয়ে ভেবে আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করবেন।”

আবরারের এসব কথা শুনে প্রচন্ড পরিমানে রাগ উঠে যায়।ল্যাপটপটা টান মেরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে ভেঙে ফেলে,টেবিলটা লাথি মেরে ফেলে দেয়।ইয়ারাবীর এসব দেখে জান যায় যায় অবস্থা,তবুও চাদরটা শক্ত করে মুঠে ধরে শান্ত ভাবে বলার চেষ্টা করে,
-“সকাল স…সকাল কী শুরু করেছেন?”

আবরার ওর সামনে যেয়ে ওর দুই বাহু প্রচন্ড জোরে শক্ত করে ধরে বলে,
-“ও রেইলি শুরু আমি না তুমি করেছো?কী ভাবো নিজেকে?তোমাকে নিয়ে না ভেবে কাকে নিয়ে ভাববো।ও কী যেন বললে?আমাকে নিয়ে ভেবে আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করবেন না।আমি কী বলেছি আমার সময় নষ্ট হচ্ছে।”
-“আব…আবরার আমি হাতে ব্যাথা পাচ্ছি।”

কথাটা শোনার সাথে সাথে ওর হাত ছেড়ে দেয়।তারপর নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতে করতে বলে,
-“গত দুই সপ্তাহ ধরে কাজের চাপে তেমন সময় দিতে পারিনা,তাই বলে এসব আমি মোটেও মানবোনা।”
-“আপনাকে সময় দিতেও হবেনা,তাছাড়া আমাকে সময় দিয়ে করবেন বা কী?আমিতো আপনার বাবা ডাক শোনাতে ব্যার্থ।”
-“কী?হাতির পাঁচ পা দেখেছো নাকী?কীসের ভিতরে কী নিয়ে এসেছো?আমি কখনো এই বিষয়ে অভিযোগ করেছি তোমাকে।সময় তো এখনো আছে।”

ইয়ারাবী বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
-“তিন বার টেস্টে নেগেটিভ আসার পর আপনার খারাপ লাগেনি।নিজেকে আমার বা আমার পরিবারের সামনে মহান বানানোর কোনো প্রয়োজন নেই।আর কী যেন বললেন?ও হ্যাঁ,সময় আছে।ঠিকই বলেছেন সময় আছে কিন্তু আপনার কাছে অপেক্ষা করার মতো সময় নেই।তাই জন্যই তো…ছিঃ।”
-“কী করেছি আমি যে এভাবে রিয়্যাক্ট করছো?”
-“কী করেননি সেটা বলবেন?আরে কে বলেছিলো আপনাকে মহান সেজে বিয়ে করতে?বাপ-মা মারলে কাটলেও জীবনটা এমন হতোনা।আমিও কী পাগল,সবার কথা শুনে আপনাকে বিয়ে করতে গেলাম।”
-“কী হয়েছে ক্লিয়ার করে বলবে দয়া করে আমাকে?”

ইয়ারাবীর কান্না পাচ্ছে,কোনো ভাবেই আটকাতে পারছেনা চোখের পানিকে।হাতের উল্টোপিঠে চোখ মুছে বলে,
-“স..সত্যিই বুঝতে পারছেন না কী হয়েছে?নাকী অভিনয় করছেন?আপনি আসার পরে লাইফে কতকিছু ভাবতে শিখেছি,মাঝে মাঝে ভা…ভাবতাম ভবিষ্যতে আপনি যদি না থাকেন পাশে তবে আমার কী হবে?এই মানুষটা ছাড়া যে আমার কোনো অস্তিত্ব নেই,একমাত্র আপনজন।কিন্তু আমি কীভাবে জানবো আমার ভাবনা সত্যি হয়ে যাবে।যাকে ভীষণ আপনজন ভাবতাম কিন্তু আমি তার প্রয়োজন ছিলাম,একটা সময়ের ক্ষণিকের মোহ ছিলাম।আসলে বাস্তবতা অনেকটা কঠিন,অাসলে ভালোবাসা কমলে আপনাআপনি দূরত্ব বেড়ে যায়।আপনি কী বললেন?ব্যাস্ততার জন্য ঠিকভাবে কথা বলতে পারেননি,সময় দিতে পারেননি।আসলে আপনার যদি ইচ্ছা থাকতো তাহলে হাজার ব্যাস্ততা হলেও আমাকে একটু সময় দিতে পারতেন।গত দুই সপ্তাহ ধরে বাইরে ডিনার করে এসে নামায পড়ে শুয়ে পরেন,কখনো জানতে চেয়েছেন আমি খেয়েছি কীনা?আজকাল আমি যেটাই বলি সেটাই ফালতু কথা হয়ে দাঁড়ায়।”

আবরার নিজের চুলগুলো ডান হাত দিয়ে মুঠোয় ধরে বলে,
-“কী বলছো এসব?কী হয়েছে তোমার একটু বলবে?আর কে বললো আমার সময় নেই,ইচ্ছা নেই।”
-“নেই তো,আর না আমাকে এখন ভালো লাগে।যদি আমি আপনার কাছে অবহেলার বস্তু নাই হতাম তবে আজ আমি থাকতে অন্য একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়াতেন না।”
-“ইয়ারাবী!মুখ সামলিয়ে কথা বলো।তুমি ভুলে যেওনা কাকে কী বলছো?”

আবরার অনেকটা ধমক দিয়ে কথাটা বলে।ইয়ারাবী প্রচন্ড ভয় পেলেও নিজের মনকে শক্ত করে।আবরার লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলে,
-“কী পাগলের মতো কথা বলছো তুমি?”
-“পাগল সব সময় পাগলের মতোই কথা বলে, পাগল কখনো ভালো হয়না।যাই হোক আমি বাংলাদেশে যেতে চাই,আপনি ব্যবস্থা না করেন তবে আমিই করতে পারবো।”
-“তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি।”

ইয়ারাবী তাছ্যিল্যের হাসি হেসে বলে,
-“সাহস!সাহসের কথা বলতে গেলে সেটা আপনার ক্ষেত্রেই বেশি ভালো মানায়।”
-“দেখ ইয়ারাবী,যা বলার সরাসরি বলো।”
-“ওকে শুনতে চান,তবে শুনুন।আপনার ভালো মানুষের মুখোশের আড়ালে যে ব্যাক্তিটা লুকিয়ে ছিলো এতদিন তাকে খুব ভালো করেই চিনেছি।সে লোক যার ঘরে বৌ থাকতে বাইরের কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়।সেই লোক যে অন্য একটা মেয়ের আগমনে নিজের স্ত্রীকে সময় দিতে পারেনা,দিতে পারে শুধু বাহানা।”

আবরার অবাক হয়ে ওর দিকে তাকায়,আসলে ইয়ারাবী কী বলছে কোনোটাই বোধগম্য হচ্ছেনা ওর।মাঝে মাঝে ইয়ারাবীর প্যানিক অ্যাটাক হয়, মাঝ রাতে এখনো মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্ন দেখে অদ্ভুত আচারণ করে কিন্তু এখন যা বলছে সেটা কী।ইয়ারাবী ওর দিকে তাকিয়ে নিজের ফোনটা বেড় করে কিছু ছবি দেখাই যেগুলো সে আবরারের হাসপাতাল থেকে তুলে এনেছিলো ন্যানসির সাথে যেয়ে।আবরার ছবিগুলো দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায়, বিস্ময়ের দৃষ্টিতে শুধু ইয়ারাবীর দিকে তাকায়।ইয়ারাবী ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“কী অবাক হয়ে গেলেন?ভাবছেন এগুলো আমার কাছে এলো কীভাবে?গত দুই সপ্তাহে আপনার আচারনে খারাপ লাগলেও মনকে বোঝাতাম এসব ব্যাস্ততার জন্য।কিন্তু মেডিকেল থেকে শুরু করে কিছু মানুষের কথায় শুনতে পেলাম আপনার সাথে নতুন কোনো মেয়ের সম্পর্ক আছে।জানেন কখনো বিশ্বাস করতে চাইনি।তাই কাল ক্লাস শেষে নিজের চোখেই দেখলাম,এরপরেও কী বলবেন আমি পাগলামি করছি?নিজের থেকে বেশি ভরসা আর বিশ্বাস করতাম আপনাকে।কিন্তু আপনি কী করলেন?আপনার ভাগ্য ভালো আমি এখনো কাউকেই জানায়নি কথাটা।যদি আত্মহত্যা পাপ না হতো তবে সেটাই করতাম আজ।”

আবরার ওর দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ বোঝার চেষ্টা করে।তারপর মুচকি হেসে বলে,
-“তো বাংলাদেশে গেলে সব ঠিক হবে এটার জন্য যেতে চাইছো?”
-“না।”
-“তাহলে?”
-“আমি কারোর বোঝা হতে চাইনা,আপনি আজ পর্যন্ত যা যা করেছেন কিছু সময়ের মধ্যে সবটা পরিশোধ করার চেষ্টা করবো।আর হ্যাঁ,আমি জানি আমার মতো মেয়ের সাথে আপনি সুখী নন তাই..”

আবরার খানিকটা ঝুঁকে বলে,
-“তাই কী করতে হবে?”

ইয়ারাবী আবরারের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর চোখে-মুখে হাসির ঝলক।এমন একটা সিরিয়াস ব্যাপারেও মানুষটা হাসছে যে কিনা কিছুক্ষণ আগেও রাগের বসে ঘরের জিনিসপত্র ভাংচুর করেছে।হঠাৎ ছবিগুলো দেখতে এমন শান্ত প্রকৃতির হয়ে গেলো কেন?তাহলে কী ভুল ভাবছে ও।নিজেই নিজের মনকে প্রশ্ন করে ইয়ারাবী।আবরার ওর সবুজ চোখগুলো পিটপিট করে দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে ওর দিকে ঝুঁকে বলে,
-“তা কী করতে চাও সেটা তো বললেনা?”

ইয়ারাবী নিজের মনকে শক্ত করে উল্টোদিকে ঘুরে বলে,
-“ডিভোর্স।”

(২১৫)

দুই বছরে বদলে গেলে অনেক কিছু,কিছু সম্পর্কের জোড়া লেগেছে তো কিছু ভেঙেছে।কিছু সম্পর্কে ইতি টেনেছে তো কিছু অসমাপ্ত থেকে গেছে।কেউ হারিয়ে গেছে চিরতরে তো কেউ হারিয়েছে লোকালয়ের ভিড়ে।কারোর সময় আর ভাগ্য দুইটা একসাথে খেলা করেছে।

এক বছর হতে চললো,ইরাক আর রোজের বিয়ে হয়েছে।কোরবানি ইদের পরেই ওদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে,তবে বেশি বড় করে হয়নি।কেননা ওর মায়ের মৃত্যু,য়ুহার-শৈলের মৃত্যু,ওর মামা অসুস্থ,ওর ফুপিও অসুস্থ তাই অনেকটা ঘরোয়া ভাবে বিয়ে করেছে ইরাক।অবশ্য ইরাক এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চেয়েছিলো না।কিন্তু ওর বাবা, ইফাজ, ইমন,ইয়ারাবী,ফুপু এমনভাবে ধরলো যে শেষে না করতে পারলোনা।ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার যে অনুভুতি হয় তা প্রকাশ করতে গেলে শব্দ অনেক কম হয়ে যায়।কিন্তু ইরাকের ভালো লাগলেও মন থেকে কেন যেন খুশি হতে পারছেনা ভাইদের দিকে তাকিয়ে।

বিয়ের দিন রাতে ইরাক ঘরে ঢুকে রোজকে যে প্রথম কথাটা বলে সেটা হলো,
-“আমার মা নেই,আমার ভাইদের বিশেষ করে ইমনকে ছেলের মতো তোমাকে ভালোবাসতে হবে।তুমি কখনো এমন কোনো ব্যাবহার করবেনা আমার পরিবারের সাথে যাতে করে তোমার সাথে আমার রুড বিহেভ করতে হয়।এমন কোনো আচারণ করাতে আমাকে বাধ্য করবেনা যেটাতে আমার বাবা,ভাই-বোনদের মনে হয় ওদের ভাইয়া বিয়ের পর বদলে গেছে।বাসায় যে রুমটাতে ইয়ারাবীকে থাকতে দেখছো ওইটা ছোট থেকেই ওর জন্য বরাদ্দ করা।তাই ওই ঘরে কোনো দ্বিতীয় ব্যাক্তি প্রবেশ না করতে পারে।মা-বাবা ওকে নিজের মেয়ের থেকে কম দেখেনি,তাই তুমিও নিজের আপন ননদের মতো ওকে দেখবে।যেমন আমার ভাইয়েরা আমার কলিজা তেমন ও আমাদের কলিজা।বাবাকে সব সময় নিজের বাবার মতো দেখবে।”

রোজ মাথায় থাকা ঘুমটা সরিয়ে বলে,
-“আমি কখনো বাবার আদর পায়নি,আমি ছোট থাকতে নিজের খুশির জন্য মাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়।আমি কখনো আপনার বাবাকে অন্যচোখে দেখবোনা,সব সময় নিজের বাবাই মনে করব।আর আপনাদের সম্পর্ক আগে যেমন ছিলো এখনো তেমন থাকবে,তৃতীয় ব্যাক্তির আগমনে সেটা কখনো বদলাবেনা।”

রোজ তার কথা রেখেছে,সবার সাথে খুব ভালো আচারন করে।আগের মতো রহমান পরিবার হেসে উঠছে।ইমনও খুব ভাবী ভক্ত,বিয়ের পর রোজ চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।ইরাক মানা করার পরেও শোনেনি কথা,এখন নামকরা একটা স্কুলে পিটি টিচার হিসাবে জয়েন করেছে আর বিকালবেলা বাচ্চাদের পিয়ানো শেখায়।।ভালোই দিন কাটছে রোজের,যদিও স্বামীর দেখা খুব কম পায় তবুও মন খারাপ করেনা।কেননা ও নিজেও একজন সৈনিক ছিলো আর জানে তাদের জীবন কেমন হয়।

তবে খুশি হতে পারেনি ইফাজ আর না সুখে আছে তারা।দুই জনের ভালোবাসার কাহিনি না ইতি টেনেছে না চলছে।থেমে আছে সেই এক জায়গায়।তারার বাবা-মা আজও সত্যিটা জানেনা,উনারা ভাবেন কোনো রাগারাগিকে কেন্দ্র করে মেয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।তাই উনারা মেয়ে কখনো রেগে যায় এমন কাজ থেকে দূরে থাকেন,একটাই মেয়ে উনাদের।তবে যেই মহিলার স্বামীর তারার সাথে এমন জঘন্য কাজ করেছিলো,সেই মহিলা কোনো ভাবে সত্য জানতে পেরে তারার কাছে এসে পা ধরে ক্ষমা চান।যাতে করে উনার স্বামীর বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন না নেয়।কেননা উনার ছোট ছোট দুইটা বাচ্চা।তাই তারা কোনো কথা বাড়ায়না।এর মাঝে একবার তারা বিয়ের নিয়ে কথা বলেছিলো তারার ছোট চাচা।লোকটা প্রচুর চাপ দিয়েছিলো বিয়ের জন্য,কিন্তু তারার বাবা-মা নিষেধ করে দেন বিয়ের কথা এগোতে।উনারা মেয়ে মতামত ছাড়া কাজ করতে ইচ্ছুক না।এতে করে তারার ছোট চাচার সাথে প্রচুর ঝামেলা বাঁধে উনাদের।আর তারার মত নেই অন্য কাউকে ইফাজের জায়গায় বাসানোর।ওর একটাই ইচ্ছা যেখানে ইফাজের বৌ হতে পারবেনা সেখানে অন্য কাউকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন ও দেখতে চাইনা।

এদিকে ইফাজ ব্যস্ততার মাঝেও নিজেকে শান্ত রাখতে পারেনা।রাতে ঘুমাতে না পারলে মায়ের কবরের পাশে যেয়ে বসে থাকে ফজরের আগ পর্যন্ত।এসব রোজ নোটিশ করে ইরাককে জানায় ফোনে।ইরাক ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসে ভাইয়ের সাথে কথা বলে বিয়ের বিষয়ে।কিন্তু ইফাজের কথা ও ঠিক আছে আর বিয়েটা আরো কিছুদিন পরে যেয়ে করতে চায়।কিন্তু বড় ভাই ইরাক তা হতে দেয়না,ও সবার অগোচরে ওর খালা ইশানির সাথে কথা বলে বাবাকে নিয়ে তারাদের বাসায় যায়।ও জানে ওর ভাই কোথায় ভালো থাকবে,আর মি.রহমানের বড় ছেলের উপর বিশ্বাস আছে।মিসেস ফাতেমা ও তার স্বামী বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে আর না করেন না।কেননা ইয়ারাবী একবার মজার ছলে ওর মনিকে তারা ইফাজকে ভালোবাসে সেই কথা বলেছিলো।সবকিছু ঠিকঠাক করে ইরাকরা বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে।ইরাক ভাইয়ের বিয়েটা ধুমধাম করে দিতে চায়,তাই প্রথমে ইংগেজমেন্ট করবে।তারা পর্দার আড়াল থেকে সবটা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ে।ও মনে করে সবটা ইফাজ ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য করেছে।ও সাথে সাথে ফোনটা হাতে নিয়ে ইফাজকে ফোন করে।পাঁচবার রিং হওয়ার পর ইফাজ ফোন ধরলে তারা জানতে পারে ও এসবের কিছুই জানেনা।এতে করে তারার মন অনেকটা ভেঙে যায়,ও ইফাজের কথা শুনে বুঝতে পারে ওর বিয়েতে মত নেই আর না বিয়েটা করতে চায়।মি.রহমান আর ইরাক বাসায় ফিরলে ইফাজ খুব রাগারাগি করে উনাদের সাথে।এই প্রথম মি.রহমান ইফাজকে চড় মারেন আর বলেন,
-“দেখো,তোমাদের মধ্যে কি হয়েছে আমি কিছু জানিনা।শিখা ওকে এই বাড়ির বৌ করতে চেয়েছিলো,আর তুমিও ওকে ভালোবাসো সেটা আমিও জানি।মেয়ে রমযানের ইদে বাংলাদেশে ফিরলে জাঁকজমক ভাবে তারার সাথে বিয়ে হবে।এর বাইরে একটা কথাও নয়।”

মি.রহমান নিজের ঘরে চলে যান,কেননা কাল সকালে উনাকে কর্মস্থলে ফিরে যেতে হবে।আসলে উনি চারদিনের ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন তার মধ্যেই এতকিছু হয়ে গেলো।ইরাক ওর ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“রোজ রাতেই তো পুরিস তুই,ভালোবাসা সত্যিই নিষ্ঠুর।আচ্ছা তোর সমস্যাটা কোথায়?মেয়েটা ধর্ষিতা সেখানে তোর সমস্যা?তুইও বাকীদের মতো হয়ে গেলিরে মেজো,মা কী শিখিয়েছিলো ভুলে গেলি সব।ভুলিসনা চাঁদেরও কিন্তু কলঙ্ক আছে, তাই বলে চাঁদকে কেউ ঘৃণা করে?”

ইফাজ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ভাইয়া,ও ধর্ষিতা হলেও আমার সমস্যা নেই।আর না এখানে ওর কোনো হাত আছে।ওযে চুপচাপ অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়েছে সেটা দেখেছো।একটা বার জানালে সমস্যা কী হতো?বিয়ে হলেও ওর এই কাজের জন্য কোনোদিন ওকে ক্ষমা করবোনা আমি।”

ইফাজ কথাটা বলে চোখের জল মুছে গাড়ির চাবি নিয়ে বেড়িয়ে পরে।ইরাক রোজের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।রোজ ওর দিকে বড়বড় চোখ করে বলে,
-“কী হয়েছে?”
-“পরে জানতে পারবে।আমার ভাই-বোনগুলো ইলেক্ট্রিসিটি বুঝলে রোজ,যার ভোল্টেজ কখন বাড়ে কখন কমে কেউ বুঝতে পারেনা।কারেন্ট সবার শরীরে।”

কথাটা বলেই ইরাক হাসতে হাসতে উপরে চলে যায়।আর রোজ চোখ বড় বড় করে চেয়ারে বসে পরে আর ভাবতে থাকে কথাগুলো।এদিনে ঘরের মধ্যে ফোনে ইমন আর জারার প্রচুর কথা কাঁটাকাঁটি হচ্ছে,যার শেষ থামে সম্পর্কের বিচ্ছেদে।হ্যাঁ,এবারেরটা সিরিয়াসভাবে ঘটেছে ওদের।কথাটা শেষ করে ইমন ফোনটা ফ্লোরে আছাড় মেরে দুই টুকরো করে ফেলে রাগে।অন্যদিনে জারা নিজের ঘরের ফ্লোরের বসে কান্না করতে থাকে।আজকের ঝগড়াটা ভুল বোঝাবুঝি থেকে হয়েছে।

(২১৬)

ইয়ারাবী কাউচে বসে মিসেস রহমান আর য়ুহারের ছবিগুলোতে হাত বুলাচ্ছে আর চোখের পানি ফেলছে।আসলে যদি ও মনের কথাগুলো কাউকে বলতে পারতো তবে হালকা হতো।কিন্তু কাকে বলবে,কাছের দুইটা মানুষ তো অনেক দূরে চলে গেছে যেখান থেকে ফেরা সম্ভব নয়।আর ইরাক ডিউটিতে,রোজের সাথে সম্পর্ক তেমন হয়নি ওর, তারা-ইফাজ নিজেদের মন-মানসিকতা ঠিক নেই আর বোনের কথা শুনলে ঠিক থাকতে পারবেনা ওরা।ইমনের সাথে তেমন একটা শেয়ার করেনা,আর অনু সে নিজের নতুন জীবনে পা দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর।তাকে কিছুতেই ইয়ারাবী নিজের দুর্দিনের কথা শুনিয়ে উত্তেজিত করতে চাইছেনা।আর বড়দের ব্যাপারটা আগে জানাতে চাইছেনা,নয়তো খালু,মনির সাথে কথা বলতো।শ্বশুড়-শ্বাশুড়িকে ব্যাপারটা ফিরে যেয়ে জানাতে চাই ইয়ারাবী।

আসলে অভাগা যেদিকে যায় সাগড় শুকিয়ে যায়।ইয়ারাবীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে,এই দুঃসময়ে কাছের মানুষগুলোকে পাশে পাচ্ছেনা।হঠাৎ কারোর আগমনের আওয়াজে চোখের পানি মুছে শান্তভাবে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে আবরার কফিতে চুমুক দিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে ভিতরে আসছে,মুখে সেই মারাত্মক হাসি যা ইয়ারাবীকে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট।আবরারের পরনে সাদা শার্ট,উপরে কালো কোটি,কালো প্যান্ট,কালো জুতা,ডান হাতে কালো ঘড়ি।ঘরে ঢুকেই ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে ফোনটা কেঁটে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কফির মগটা রেখে দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
-“খাবার খাওনি কেন?”

ইয়ারাবী খালার ছবিতে হাত বোলাতে বোলাতে বলে,
-“ক্ষুদা নেই তাই।”
-“মেডিসিন?”
-“আমার ইচ্ছা,আমার শরীর আমি যা খুশি তাই করবো।সেটাতে আপনার কী?আপনার কোনো অধিকার নেই আমার উপর এখন আর,বুঝলেন আপনি?”

ইয়ারাবী রেগে কথাটা অনেক জোরে বলে উঠে, আবরার ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে উচ্চশব্দে হাসতে থাকে আর একপা দুইপা করে ওর দিকে এগিয়ে আসে।ইয়ারাবীর ওর আগানো দেখে ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকায়,কেন যেন আবরারের হাসিটা ওর কাছে ভালো ঠেকছেনা।ও পিছাতে যেয়ে কাউচের উপর পরে যায়।ও ভ্রু কুঁচকে সন্দেহের দৃষ্টিতে আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আ..আপনি এভাবে হাসছেন কেন?আ আর এগোছেন কেন আমার দিকে?”

কথাটা বলতে না বলতেই আবরার ওর কাছে যেয়ে সামনে বসেই হুট করে ওর ঠোঁট দু’টো নিজের ঠোঁটের আয়ত্বে নিয়ে নিলে ইয়ারাবী বোকা হয়ে যায়।ছাড়া পাওয়ার জন্য ছুটাছুটি করতে থাকে খুব,কিন্তু যত ছোটাছুটি করছে তত জোরে আবরার ওকে নিজের বাম বাহুতে আবদ্ধ করে ডান হাতের মুঠোয় ইয়ারাবীর ভেজা চুলগুলো আকড়ে ধরছে।যখন দেখে ইয়ারাবী চোখ থেকে পানি পরছে তখন আবরার ওকে ছেড়ে দিয়ে ডান হাতটা ওর মাথার পিছনে রেখেই বাম হাত দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দেয়।তারপর ওর ঠোঁট দু’টো স্লাইড করতে করতে বলে,
-“ঠোঁটে কী দাও বলতো এতটা মিষ্টি লাগে।”

ইয়ারাবী আবরারের দুই হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,
-“আপনি একটা বাজে লোক,গাছেরও খাবেন তলারও কুড়াবেন।সরুন এখান থেকে আমার সহ্য হচ্ছেনা আপনাকে।”
-“গেন্জি-ট্রাউজার-স্কার্ফ আর ভেজা চুলে অনেকটা……অপূর্ব লাগছো।আর এমন জোড়াজুড়ি করে লাভ আছে একজন বক্সারের সাথে।নাও ছেড়ে দিলাম তবে খাবার খেয়ে মেডিসিন নিয়ে নিবে।”
-“খাবোনা আমি।”
-“যতক্ষণ আমার কাছে আছো খেতে হবে তোমাকে,নয়তো কী হবে তোমার সাথে সেটা কী মনে করাতে হবে তোমাকে?”

ইয়ারাবী ভীত চোখে আবরারের দিকে তাকালে আবরার মুচকি হাসে।এর মাঝে এনা খাবার নিয়ে রুমে ঢুকলে আবরার খাবারটা ওর হাত থেকে নিয়ে ওকে চলে যেতে বলে।তারপর ইয়ারাবী সামনে খাবারটা দিয়ে বলে,
-“শেষ করবে পুরোটা নাকী সেদিনের….”

পুরো কথাটা শেষ করার আগে ইয়ারাবী হাত ধুয়ে খাবারটা না চাওয়া সত্ত্বেও নিয়ে খেতে থাকে।এখানে না খেলে যে কী হবে সেটা ভাবতেই ওর গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো,তাই ভয়ে আর কোনো শব্দ না করে খাবারটা খেতে থাকে।আবরার মুচকি হেসে ওর গাল টেনে উঠে আবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
-“ইয়ু দাঁড়ি কী বেশি বড় হয়ে গেছে নাকী দেখতো?শেভ করবো নাকী ট্রিমিং করবো বলতো?দাঁড়ি রাখা সুন্নত তাই শেভ করতে চাইছিনা আবার বেশি বড় বড় লাগছে।ইয়ু কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে?চুপ করে আছো কেন?”
-“আমি কী বলবো?যা খুশি তাই করেন পারলে আপনার প্রেমিকার কাছে যান।”

কথাটা বলার সময় ইয়ারাবীর কন্ঠস্বর কেঁপে উঠে, ওর কল্পনা করতে কষ্ট হচ্ছে আবরারের অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক।যে জায়গাটা ওর ছিলো সেই জায়গা অন্য কারো হয়ে যাবে।আবরার মুচকি হেসে বলে,
-“এখন প্রেমিকা নেই তাই তোমার কাছে জানতে চাইছি।মুখমন্ডলে দাঁড়ি রাখা মুসলিমদের এক গুরুত্বপূর্ণ চিন্হ পুরুষদের ক্ষেত্রে যা তার মুসলমান হওয়ার পরিচয় বহন করে।মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) তার জীবনে যা করতেন অর্থাৎ তার কর্মপন্থাই মূলত সুন্নাত হিসেবে পরিগণিত। সেই দিক থেকে দাড়ি রাখা অবশ্যই সুন্নাত এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।জানো পবিত্র কোরআন মাজীদে মহান আল্লাহ পাক বলেছেন যে-
‘বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)
হাদীস শরীফে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলে পাক (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘দশটি বিষয় সকল নবী-রাসূলগণের সুন্নাত।)) তন্মধ্যে গোঁফ ছোট করা এবং দাড়ি লম্বা করা অন্যতম।’ (সহীহ মুসলিম শরীফ: ১/১২৯) এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে নবীর সুন্নাত হিসেবে দাঁড়ি রাখার গুরুত্ব অনেক।তারা আব্বু বলতো ছেলেদের দাঁড়ি রাখা উচিত,দাঁড়ি লম্বা রাখা,এক মুঠ পরিমানে রাখা।কিন্তু এক মুঠোর বেশি লাগছে,ট্রিমিং করে নেয় একটু।”

ইয়ারাবী খাচ্ছে আর আড়চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসছে।আবরার বিষয়টা দেখে মুচকি হাসি দিচ্ছে।ট্রিমিং করা শেষ হলে চুলটা সুন্দর করে ঠিক করে গায়ে সুগন্ধিযুক্ত আতর ব্যবহার করে।অদ্ভুত হলেও আবরারের পরিবারের ছেলেরা সবাই পারফিউম বাদে আতর ব্যবহার করে।

ইয়ারাবী খাবারটা শেষ করে আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ডি ডিভোর্স কবে দিবেন?”
-“এটাতো আর ছেলের হাতের মোয়া নয়,যে চাইলাম আর হয়ে গেলো।কত প্রসেস আছে জানো সেটা?তাছাড়া বাংলাদেশে না যেয়ে সম্ভব নয় সুইটহার্ট।”
-“আ…আমি প্রানো আপুর সাথে ক…কথা বলে নিবো।আপনি শুধু বাংলাদেশে…..”
-“আই সোয়্যার ইয়ু,যদি গায়ে হাত না তোলার ওয়াদা করতাম তবে এতক্ষণ সুস্থ থাকতে পারতেনা।”
-“দেখুন আপনি কিন্তু সীমা….”
-“চুপ!একদম চুপ!তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।”

আবরার অনেকটা ধমক দিয়ে কথাটা বলে।ইয়ারাবী ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,
-“আমি কোথাও যা..যাবোনা।”
-“তুমি যাবে তোমার স্বামীও যাবে।”
-“আপনার গা….”
-“ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।আর হ্যাঁ তোমার মতে আমার সো কল্ড গার্লফ্রেন্ডর সাথে দেখা করাবো।আফটার অল আমার ওয়াইফ বলে কথা।জানার তো অধিকার আছে নাকী?”

আবরার হাসতে হাসতে কথাটা বলে উঠে আর ইয়ারাবী ওর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে।

#চলবে_____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here