জীবন মানে তুমি পর্ব-৬২

0
3511

#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Rini (Irini Ori)
#পর্ব:৬২

(২১২)

সকালে ডাক্তারের কাছ থেকে এসেই ইয়ারাবী বিছানায় মন খারাপ করে বসে অাছে।ভিতরটা কুঁকড়ে যাচ্ছে বারবার কিন্তু চিৎকার করে কাঁদতে পারছেনা।কারণ সামনের কাউচে আবরার বসে ল্যাপটপে কাজ করছে,ইতোমধ্যে চোখের জ্বলের জন্য বড় আকারের রামধমক খেয়েছে ইয়ারাবী ওর কাছে।আসলে সকালে ব্রেকফাস্ট করে আবরার ওকে নিয়ে ডা.মিকের কাছে গেছিলো।প্রথমে সাধারনভাবে ওর সব রিপোর্টগুলো দেখে আবার কিছু টেস্ট করাতে দেয় মিক।টেস্টের রিপোর্টগুলো হাতে পাওয়ার পর মিকের চেহারার রং পাল্টে যায়।আবরার কিছু একটা আচ করতে পেরে ইয়ারাবীকে বাইরে যেতে বলে।কিন্তৃ ইয়ারাবী নাছোড়বান্দা,ও কিছুতেই বাইরে যাবেনা।ও নিজেও জানতে চাই আসল সমস্যাটা কী।সর্বশেষে মিক ওর সামনে আবরারকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“এআর,এয়াকেও জানতে দাও সত্যটা বন্ধু।ও নিজে জানলে সচেতন থাকতে পারবে।”

আবরার বন্ধুর কথা শুনে মৃদু হাসির রেখা টেনে আড়চোখে ইয়ারাবীকে একবার দেখে মাথা নাঁড়িয়ে বলে,
-“এজ্ ইউর উইশ মাই ফ্রেন্ড।”

মিক খানিকটা হাসলো,ইয়ারাবী ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে আবরারের দিকে।মাঝে মাঝে আবরারের হাসিটা অনেকটা রহস্যময় লাগে ওর কাছে।আবরার ওর তাকানো দেখে ভ্রু নাঁচিয়ে ইশারায় প্রশ্ন করে কী হয়েছে?ইয়ারাবী মাথা নাঁড়িয়ে বোঝায় কিছু হয়নি।এবার আবরার ডেক্সের উপর রাখা ফোনটাকে হাত দিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে মিককে প্রশ্ন করে,
-“রিপোর্ট কিছুটা ভালো এসেছে নাকী খারাপ?”

মিক একবার ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে আবার বলে উঠে,
-“দুঃখীত বন্ধু,তবে রিপোর্টে বেশি ভালো আসেনি তবে আবার খারাপও নয়।”

আবরারের ভ্রু সংকচিত হয়ে আসসে,ও অবাক দৃষ্টিতে মিকের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“মানে?”
-“দেখ বন্ধু রিসেন্টলি ওর একটা বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে।যার জন্য অনেক মেডিসিন বন্ধ রাখা হয়েছিলো,তাছাড়া ও শারীরিকভাবে দুর্বল অনেক।দুঃখীত এয়া তোমাকে নাম ধরে ডাকছি কেননা তুমি আমার বয়সে অনেক ছোট।তোমার কাছে যেটা জানতে চাইছি সেটা সঠিকভাবে বলবে আমাকে।”

ইয়ারাবী আবরারের দিকে তাকিয়ে হালকা মাথা নাঁড়ায়।ডা.মিক রিপোর্টে একবার হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করে ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
-“সঠিক ভাবে ভোজন করো তুমি?রিপোর্ট তো প্রচুর দুর্বল দেখাচ্ছে তোমাকে।”

ইয়ারাবী নিচু স্বরে বলে উঠে,
-“আমি যতটুকু পারি খায়।”

আবরার কফিতে চুমুক দিয়ে বলে,
-“উহু,যখন আমি বাসায় উপস্থিত থাকি তখন বকে খাবার খাওয়াতে হয়।বিশেষ করে লন্ডনে ব্যাক করার পর থেকে নিজের খেয়াল মতো চলে।”
-“এটা সঠিক করো না এয়া,তোমাকে বেশি খেতে হবে।তুমি জানো তোমার বড় একটা অস্ত্রোপচার করা হয়েছে,তোমাকে বেশি ভোজন করতে হবে।রাতে জাগবেনা,আমরা জানি ডাক্তারি পড়া অনেকটা কঠিন কাজ।তবে তুমি বেশি চাপ নিবেনা মাথায়,তোমাকে সাবধান থাকতে হবে।আচ্ছা বাদ দাও এটা,তুমি এখন বলো,তোমার কী অস্বাভাবিক ভাবে পেটে ব্যাথা করে মাঝে মাঝে?খাবারের পরে সিক ফিল করো?”

ইয়ারাবী কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে,নিচের দিকে তাকিয়ে হাত কচলাচ্ছে বারবার।আবরার বাম হাতটা ওর হাতের উপর রাখে।মিক ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এয়া,আমাকে তুমি না বললে আমি বুঝবো কীভাবে?দেখো তুমি আমাকে তোমার ভাই ভাবতে পারো।তুমি জানো তোমার ভাই এফাজ আমার অনেক ভালো বন্ধু।তুমি আমাকে এফাজের মতো ভাবতে পারো।বলো এবার…”
-“হ্…হয় মাঝে মাঝে কিন্তু এমনি ঠিক হয়ে যায়।তাই উনাকে বলা হয়না।”
-“যা ভেবেছি ঠিক সেটাই।এআর শুনো,ইয়ারাবীর মা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম যদিও এটা তোমরা আগে থেকে জানো।ট্রিটমেন্ট করলে যে সবটা ঠিক হবে সেটার নিশ্চয়তা আমি কেন,কেউ দিতে পারবেনা।তবুও চেষ্টা করতে সমস্যা নাই।আমি আমার বেস্টটা দেওয়ার চেষ্টা করবো।তাহলে বন্ধু ঈশ্বরের কৃপাতে আগামীকাল থেকে এয়ার ট্রিটমেন্ট শুরু করা যাবে।তুমি কী বলো?”

আবরার খানিকটা হাসির রেখা টেনে বলে,
-“আমিও দেরি করতে চাইনা,দ্রুত আমি ওর সুস্থতা কামনা করি।”
-“তাহলে আমি কিছু মেডিসিন দিচ্ছে এগুলো খাওয়াবে আর আগামীকাল ওকে নিয়ে আসবে।আর এয়া,চিন্তা করবেনা সব ঠিক হয়ে যাবে। বিকালে আসবে তো বন্ধু পার্টিতে?”
-“ইনশাল্লাহ্,চেষ্টা করবো।”

কথাটা আবরার উঠে দাঁড়িয়ে ওর সাথে হাত মিলায়।তারপর ইয়ারাবীকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে পরে।এর মাঝে অনেকবার আবরার লক্ষ্য করছে স্ত্রীকে যে ওর মনটা ভিষন খারাপ।মুখ বাঁধা তবে আবরার ওর চোখের ভাষা সহজে পড়তে পারছে।ট্রাফিক জ্যামে গাড়ি আটকা পরে আছে।আবরার স্টিয়ারিং এ হাত রেখে ইয়ারাবীর মন হালকা করার জন্য কথা বলছে,কিন্তু ইয়ারাবী একধ্যানে জানালা দিয়ে রাস্তার পাশে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে।আবরার ওর দৃষ্টি লক্ষ্য করে সামনে তাকিয়ে দেখে,একটা মহিলা তার এক বছরের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আদর করছে।প্রথমে আবরারেরও খারাপ লাগলেও পরে কান্নার জন্য একটা বড় আকারের একটা ধমক দেয় ইয়ারাবীকে।যার জন্য আর কান্না করার সাহস পায়না ও।তাই সেই থেকে মন খারাপ করে আছে।

আবরার ল্যাপটপের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দেখে মাথা নিচু করে বসে আছে।এটা দেখেই ও অনেক জোরে ল্যাপটপটা শব্দ করে বন্ধ করে টেবিলের উপর রাখে।ইয়ারাবী অন্যমনস্ক থাকায় শব্দে অনেকটা কেঁপে উঠে আবরারের দিকে তাকাতেই বড় একটা ঢোক গিলে,কেননা আবরারের সবুজ চোখগুলো খুবই ভয়ংকর হয়ে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেকটা রেগে আছে।ইয়ারাবী কোলের উপর থেকে বালিশ সরিয়ে আস্তে করে বেড থেকে নেমে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আ..আপনি রেগে আছেন কেন?”

আবরার ওর কথা শুনে কাউচের থেকে উঠে ওর দুই বাহু শক্ত করে আকড়ে ধরে বলে রাগী কন্ঠে বলে উঠে,
-“তো এখানে আমার খুশি হওয়া কথা থাকবে নাকী?সেই থেকে মন খারাপ করে বসে আছো, তোমাকে বাংলা বললে বুঝো না তুমি।কেঁদে কেঁদে শরীর খারাপ করলে সমস্যাটা কার হবে?তোমারই হবে,আমার নয়।তোমার নিজেকে কী এতটাই অকেজো মনে হয়?নিজেকে কী বাচ্চা বানানোর মেশিন মনে হয় তোমার?মেয়েদের কী শুধু বাচ্চা জন্ম দেওয়া,বংশ বাড়ানোর জন্য,তাদের কদর কী এই পর্যন্ত?তোমার কী মনে হয়,বাচ্চা গাছে ধরে যে মন চাইলেই গাছ থেকে পেড়ে নিয়ে আসব।ইয়ারাবী লিসেন,নিজেকে এতটা হেয় কেন ভাবছো?জানি,একটা মেয়ের কাছে মা হওয়ার মতো সুখ আর নেই।কিন্তু সোনা এখানে যদি আল্লাহ না চাই তবে কারোর কোনো হাত নেই।তুমি তো জানো,বেস্ট ট্রিটমেন্ট দিচ্ছি তোমাকে।দেখবে আল্লাহর রহমতে তুমিও মা হতে পারবে।সন্তান পার্থিব জীবনে আল্লাহর সেরা দান। কোরআনে সন্তানকে জীবনের সৌন্দর্য আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘সম্পদ ও সন্তানাদি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪৩)।অন্য আয়াতে সন্তান লাভের বিষয়টিকে ‘দান’ শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি যাকে খুশি সন্তান দান করেন এবং যাকে খুশি পুত্রসন্তান দান করেন। যাকে খুশি কন্যা ও পুত্র উভয়টি দান করেন। যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল।’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ৪৯)।এখানে যদি আমাদের সন্তান নাও হয় তবে মনে করবে এর মধ্যে আমাদের কল্যাণ নিহিত আছে।”

ইয়ারাবী নোনা জলে ভর্তি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“সন্তানের মুখে বাবা ডাক শোনার জন্য ছেড়ে যাবেন না তো আমাকে,যদি না পারি মা হতে।”

আবরার ওর মুখটা দুই হাতের তালুতে আবদ্ধ করে নিয়ে বলে,
-“একদম না শ্যামলীনি,আমার পিচ্চি বৌকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা।”
-“পিংকি প্রমিজ।”
-“হামম,পিংকি প্রমিজ।আচ্ছা অনেক কথা হলো, আজ তো এনা আসেনি শরীর খারাপ তাই।লান্চের টাইম হতে চললো,তুমি বসো আমি কিছু রান্না করে আনি।”

ইয়ারাবী অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আপনি রান্না করবেন?”

আবরার বাম ভ্রুটা উঁচু করে ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
-“কেন রান্না কী শুধু মেয়েরা করে?তাছাড়া আমি এসব পারি সেটা তুমি খুব ভালো করে জানো।”
-“হ্যাঁ,জানি কিন্তু আজ আমি রাঁধবো।ঘরে বৌ থাকতে আপনি কেন রান্না করবেন?”
-“বৌটা যে পিচ্চি।”
-“নো,আজ আমি রান্না করবো।”
-“পারো রাঁধতে,আচ্ছা মানলাম পারো তবে এখনও সুস্থ হওনি।তাই আগুনের তাপে তোমাকে রাঁধতে দিতে পারবো।”
-“আবরার প্লীজ করতে দিন,সেই কবে এক অপারেশন হয়েছে তার জন্য আপনি সব কাজ বন্ধ করে রেখেছেন।আরে বাংলাদেশে থাকলেও জোর করে হলেও আম্মু,আপুর সাথে টুকটাক হাত লাগাতে পারতাম কিন্তু এখানে…পঁচা বর একটা।”

আবরার মৃদু হেসে মাথা নাঁড়িয়ে বলে উঠে,
-“পুরো অভিযোগটা মেনে নিলাম।তবে রাতের বেলা কিন্তু এই পঁচা বরের বুকেও মাথা রেখে ঘুমাও,আর হ্যাঁ…পঁচা বরের হাতেই কিন্তু খাবার খাও।”
-“ধুর…আপনি সত্যিই একটা খারাপ লোক।আপনার সাথে রাগ করে থাকা যায়না।”
-“পাগলি তোমার পাগলামোগুলো ভালোই লাগে, তাই রাগ করে থাকতে দেয়না।”

বেশকিছুক্ষণ পরে আবরার দাঁড়িয়ে মুরগির মাংসগুলো ছুরির সাহায্যে কাটছে আর পাশে ইয়ারাবী বসে পা ঝুলিয়ে আইসক্রিমের বাটি থেকে আইসক্রিম খাচ্ছে।ওর দেখে মনে হচ্ছেনা একটু আগে কান্না করছিলো।আবরার বাকী সব সবজি এক এক করে কাঁটছে আর বলছে,
-“শুধু আইসক্রিম খেলে তো ঠান্ডা লাগবে।”
-“আপনি খাবেন।”
-“আমি খায়না,আর তুমি একটু খাওয়া কমিয়ে দিবে।”
-“উহু,পারবোনা।এখানে ফুসকা পাওয়া যায়না তাই আইসক্রিম খাবো।”
-“হায়রে পাগলি।এত আইসক্রিম খেলে খাবার খাবে কীভাবে?”

ইয়ারাবী চশমাটা ঠিক করে আরেক চামশ মুখে দিয়ে বলে,
-“খাবার আর আইসক্রিম এক নয় ডাক্তারবাবু।”

আবরার ওর কথা শুনে মুচকি হাসে।হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই মাংসটা ধুয়ে বোলে রেখে হাতের দস্তানা খুলে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“মেডিকেলে কী হয়েছে?”

ইয়ারাবী মুখে চামশ তুলে যেয়েও রেখে দিয়ে চোখ পিটপিট করে বলে,
-“ক…কী হবে?কিছু হয়নি তো….”

আবরার ওর হাত থেকে বাটিটা নিয়ে পাশে রেখে দুই হাত দিয়ে ওর কোমড় বন্ধন করে কাছে টেনে নিয়ে বলে,
-“মিথ্যা বলছো কেন?ওখানের বেশির ভাগ আমার পরিচিত ভুলে গেলে,তুমি কেন দুই দিন ধরে গড়িমসি করছো মেডিকেলে যেতে,সেটা খুব বেশি না জানলেও কিছুটা কানে তো এসেছে।এখন তুমি বাকীটা বলবে নাকী আমার স্টাইলে জানতে হবে।ইয়ু?”

ইয়ারাবী মাথা নিচু করে বলে,
-“একটা ব্রিটিশ ছেলেকে থাপ্পড় মেরেছি,সিনিয়র ছিলো উনি।”
-“থাপ্পড় মারার নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে,সেই কারণটা বলো আমাকে।”
-“আসলে,ওই ছেলেটার সাথে আরো একটা ছেলে ছিলো,দেখে মনে হলো বাংলদেশি।ওই ছেলেটা আমার কাপড় টেনে ধরেছিলো আর পাশের ছেলেটা ওকে উৎসহ দিচ্ছিলো কাজটা করতে।রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনি তাই থাপ্পড় মেরেছি।আমি জানতাম না ব্রিটিশ ছেলেটা ডা.মেক্রোর ছেলে।ডা.মেক্রো অনেক কথা শুনিয়েছেন আর এক সপ্তাহের ডিটেনশন দিয়েছেন।তাই এই দুই দিন যায়নি,আমিও ভেবেছি সব ঠান্ডা হোক তারপর…।”

আবরার সবটা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠে,
-“তুমি ডা.মেক্রোকে বলোনি,তুমি কে?”
-“উহু,আমি চাইনি আপনার নাম খারাপ হোক।”
-“এখানে খারাপের কিছু হয়নি,ডিলেন ছেলেটা প্রচুর উৎশৃঙ্খল।চিন্তা করোনা,কাল থেকে ক্লাস করবে।আর কেউ বাজে কিছু বললে আমার নাম বলবে।”

ইয়ারাবী মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ,জানায়।আবরার ওকে ছেড়ে দিয়ে চিকেন মাঞ্চুরিয়ান তৈরি করতে থাকে।

মুখরোচক চাইনিজ এই খাবারটি আবরারের কাছে বেশ প্রিয়।এটি চায়নার প্রায় সব রেস্টুরেন্টেই পাওয়া যায়। সুস্বাদু এই খাবারটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ও নুডুলসে্র সাথে খায়,তবে আজ ফ্রাইড রাইচের সাথে খাবে।এমনিতেও রান্না করতে ওর ভালোই লাগে।প্রথমে ও মুরগির হাড় ছাড়া বুকের মাংস নিয়ে আদা, রসুন, মরিচ গুঁড়া, লবণ, সয়া সস, টমেটো সস, ময়দা দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে তেলে ভেজে নেয়।ভাজা শেষ হলে অন্য একটি প্যানে অল্প তেল দিয়ে পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম, রেড চিলি সস, সয়া সস, ময়দা ও সাথে মাংস দিয়ে তৈরি করতে থাকে চিকেন মাঞ্চুরিয়ান।

ইয়ারাবী বসে বসে ওর রান্না করা দেখছে।ঠিক এই ভাবে ওর খালুকেও রাঁধতে দেখেছে,কিন্তু ওর বাবাকে কোনোদিন দেখেনি।হ্যাঁ,ওর বাবা মাঝে মাঝে রাঁধতো তবে সেটা ভাঁজি,খেচুড়ির ক্ষেত্রে।আর ওর বাবার একটা গুন হলো প্রতিটা খাবারে ওর বাবা জিরা দিতো,যার জন্য ইয়ারাবীর রাগ লাগলেও ভয়ে বলতে পারতোনা আর সেই জিরা দেওয়া খাবার খেতে হতো।আবরার ওর সামনে তুরি বাজিয়ে বলে,
-“কোন ভাবনাতে বসে আছো বেগম?”
-“আপনি ছাড়া কেউ বা থাকবে আমার ভাবনাতে মি.বর।আচ্ছা মি.বর একটা কথা বলি?”

আবরার ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
-“তোমাকে না বলেছি সরাসরি কথা বলতে।বলো কী বলবে?”
-“আচ্ছা আমাদের বিয়ের তো এক বছর হয়েছে।এর ভিতর আমি শুধু বড় ফুপুর কথাই বাড়িতে চলতে দেখেছি এবং উনি নিজের পরিবার নিয়ে প্রায় ফোন করে কথা বলেন।কিন্তু আপনার ছোট ফুপু লিজাকে কোনোদিন দেখেনি এভাবে কথা বলতে না বাড়িতে উনার কথা চলে।আর যদি দু’একটা কথা হয়তো আম্মু-আব্বু,ভাইয়া এমনকি আপনিও রেগে যান।দাদা-দিদাও উনার সাথে রেগে কথা বলেন কেন?”
-“এসব জেনে তুমি কী করবে?”

অাবরার অনেকটা রেগে কথাটা বলে,এতে করে ইয়ারাবীর মনটা খারাপ হয়ে যায়।আবরার চিকেন মাঞ্চুরিয়ানটা একটু নেড়ে দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে উঠে,
-“স্যরি,আসলে আমি হঠাৎ রাগটা কন্ট্রোল করতে পারিনি।ভুলে গেছিলাম তোমার সব জানার অধিকার আছে।তবে যা বলবো,এর একটা কিছুই তুমি পরিবারকে জিজ্ঞেস করতে পারবেনা আর না জারবাকে বলবে।”
-“আমি কাউকে বলবোনা।”
-“তাহলে শোনো,তুমি তো জানো জারবাকে আব্বু দত্তক নিয়েছিলো অনাথআশ্রম থেকে।”
-“হ্যাঁ,একবার শুনেছিলাম মামীকে বলতে শুনেছিলাম তবে বিষয়টা বিশ্বাস হয়নি।আর এই বিষয়ে কাউকে জানায়নি।”
-“ঠিক করেছো।আইসক্রিম গলে যাচ্চে তাড়াতাড়ি ফিনিশ করো।”
-“আর পারছিনা।”
-“আমাকে দাও,ফ্রিজে রেখে দেয়।”

আবরার বাটিটা ডিফে রেখে একটা স্প্রাইট বের করে দু’ঢেক খেয়ে ডান হাতে ধরে রেখে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
-“তুমি জানো আমাদের টুইন্স ভাই-বোন হওয়ার কথা ছিলো?জানিনা ভাই হতো না বোন তবে জমজ হওয়ার কথা ছিলো।মমের তখন সাড়ে ছয় মাস চলছিলো।ইন্ডিয়াতে ছিলাম,দাদুর বাসায়।একদিন হঠাৎ করে লিজা ফুপি বাড়িতে আসে,উনি আগে থেকেই প্রচুর ঝগড়াটে মহিলা ছিলেন।কোনো কাজ তার মন মতো না হলে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলতেন।উনার আসাতে সবাই খুব খুশি হয়,তখন মেঘের পাঁচ বছর চলছিলো।মম সেই সময় চলতে ফিরতে তেমন পারতোনা,কাজে মধ্যে শুধু মেঘকে খাওয়ানো আর গোসল করানোটা করতো।কেননা মেঘ সবার ছোট ছিলো।প্রথমদিন ফুপি এসে তেমন কিছু করেনি।তবে দ্বিতীয়দিন সকাল বেলা মম মেঘকে স্যুপ করে খাওয়াচ্ছে ঠিক তখনি ফুপির মেয়ে লিমা এসে মমকে বলে পিঠা খাবে।মম খুব ভালো করেই বুঝিয়ে বলে,
-“সোনা তোমাকে একটু পরে করে দিচ্ছি,”
-“না না না,মামী আমার এখনি লাগবে।”
-“আর জেদ করেনা মা,তোমাকে করে দিবো আগে মেঘকে খাইয়ে দেয়।”

কিন্তু কোনো ভাবেই লিমা ঠান্ডা হচ্ছেনা।মিসেস চৌধুরী অর্থাৎ মিসেস হেনার শ্বাশুড়ি লিমার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“একটা চড় দিবো,তুই জানিসনা তোর মামী অসুস্থ।তাও করে দিতে চেয়েছে,মেঘকে খাইয়ে করে দিবে।এতটুকু দেরি সহ্য হচ্ছেনা তোর।”

মিসেস লিজা সিঁড়ি দিয়ে রাগে ফুসফুস করে নামতে নামতে বলতে থাকেন,
-“এই বাড়িতে আমাদের কোনো মূল্য নেই।আমার মেয়ে একটু পিঠা খেতে চেয়েছে তাই তুমি ওকে ওকে মারতে চাইছো মা।আসলে মেয়েরা বিয়ে হলে পর হয়ে যায়।”
-“চুপ কর বেয়াদপ,তোর মেয়ে বলে অন্জুর হাতের বানানো পিঠা খাবেনা।নয়তো সেই কখন করে দিতাম,হেনা তো বলেছে করে দিবে মেঘকে খাইয়ে দিয়ে।তাও তোর পনের বছরের মেয়ে অবুঝ বাচ্চার মতো জেদ করছে।”
-“আমি অতসত বুঝিনা।ভাগ্নিরা মামীর কাছে চাইতে পারে এতে দোষের কী?”

মিসেস হেনা অনেক্ষণ ধরে উনাদের ঝগড়া দেখছিলেন,উনি মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-“আব্বু একটু কষ্ট করে হাত দিয়ে খাও,আম্মু একটু পিঠা বানিয়ে আনুক।”
-“বলো (বড়) আম্মু,তুমাকে বলো (বড়) আব্বু কাজ কলতে (করতে) মানা কলেছে (করেছে)।আমি বলো (বড়) ভাইয়াদেল (দের) বলে দিবো, ওলা (ওরা) বলো (বড়) আব্বুকে বলে দিবে।”
-“পাজি ছেলে একটা,সামান্য পিঠা বানাবো।তুমিও তো কাটাপাকান পছন্দ করো,সেটাই বানাবো তোমার জন্য।তাই কাউকে বড় আম্মুর কথা বলবেনা,বিশেষ করে আমার বড় অাব্বুর কাছে তার গোয়েন্দা চামচা মেঘ বুঝলে।”

মেঘ উনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে লম্বা একটা হাসি দিয়ে মাথা ঝাঁকায়।মিসেস হেনা ননদের দিকে তাকিয়ে বলেন,
-“রাগ করেনা লিজা,আমি এখনি তোমার মেয়েকে পিঠা করে দিচ্ছি।”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ,করো।যা করো তাতে না রেগে থাকা যায়না।”

মিসেস হেনা কিচেনে যেয়ে দুই ঘন্টা ধরে অনেক কষ্ট করে কাজের লোকের সাহায্যে কাটাপাকান পিঠা আর ভাজা পিঠা বানিয়ে এনে লিমা আর মেঘের সামনে দেয়।মেঘ অনেক খুশি মনে কাটাপাকান পিঠা খেতে থাকে আর মিসেস হেনাকেও দেয়।কিন্তু উনি মানা করেন খেতে,ছোট টাওয়েল দিয়ে মুখটা মুছে সোফায় বসতে যাবেন ঠিক সেই সময় মিসেস লিজা ভাজা পিঠা মুখে দিয়েই থু করে নিচে ফেলে বলে উঠেন,
-“এটা কী মানুষ খায়?”
-“কেন কী হয়েছে লিজা?”
-“কী হয়েছে মানে?পিঠার তো জাতই হয়নি,ছিঃ”

এক কথায়,দুই কথায় দুইজনের কথা কাটাকাটি হয়,ঠিক তার এক পর্যায়ে মিসেস লিজা রাগের বসে ক্ষুব্ধ হয়ে মিসেস হেনাকে ধাক্কা দেন।উনি নিজেকে সামলাতে না পেরে সোফায় সাথে জোড়ে অাঘাত লেগে নিচে পরে যান।অবস্থা খুব খারাপ থাকায় উনাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।”

এতটুকু বলে আবরার থেমে যায়,ইয়ারাবী নেমে আবরারের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
-“ত..তারপর কী হয়েছিলো?”
-“তারপর,মমকে হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার বলে উনাদের অবস্থা খুব খারাপ অর্থাৎ মা আর বাচ্চা।মমের বাঁচার কোনো চান্স ছিলোনা,আর পরে জানা যায় আঘাতের জন্য পেটের মধ্যে দুইটা বাচ্চা মারা যায়।সেই থেকে মম্ মা হওয়ার সুখ হারিয়ে ফেলে।মমের অবস্থা খুব খারাপ ছিলো, সামলানো যাচ্ছিলোনা।কেউ জানতো না কীভাবে হয়েছে এসব।পরের দিন মেঘ আব্বুর কাছে সব বলে দিলে সবাই ফুপির উপর রেগে যায়।সেই থেকে ফুপির দাদু বাড়ি আসা বন্ধ।শুধুমাত্র বিয়ে উপলক্ষ্যে দিদা উনাকে বলেছিলো,নয়তো উনাকে কেউ দাওয়াত তো দূরে থাক কথাও বলতোনা।”
-“আর তারপর জারবা এলো।কখনো বোঝা যায়না,জারবা আপনাদের রক্তের কেউ নয়।”

আবরার হেসে বলে,
-“ঠিক যেভাবে তোমার খালাতো ভাইয়েরা আপন বোনের মতো ভালোবাসে ঠিক তেমন আমরাও।ও আসার পরে মম কিছুটা স্বাভাবিক হয়।জানো জারবা পুরো পাগলি।ছোট থেকেই পুরোদিনে কী করেছে সেটা ভাইদের না বললে ওর ঘুম আসেনা।তবে চিন্তাও হয় মাঝে মাঝে,ও কিছুটা প্রতিবন্ধীদের মতো আছে।সব সময় বোঝা যায়না সেটা।”
-“চিন্তা করবেন না,আমাদের জারবার কিছু হবেনা।আচ্ছা এখনো হয়নি,আমার খুব ক্ষুদা লেগেছে।”
-“তুমি টেবিল সাজাও আমি নিয়ে আসছি।”
-“হুমম।”

(২১৩)

-“তুমি জানো মা,রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮)
এমনকি আল্লাহ নিজের জন্যও জুলুমকে হারাম করেছেন। রাসুল (সা.) হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর কথা বর্ণনা করে বলেন, ‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম কোরো না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৩৭)
আল্লাহ তাআলা সবাইকে ন্যায়পন্থার নির্দেশ দিয়েছেন। কল্যাণ ও ন্যায়পন্থা হলো মানবজীবনের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের ন্যায়পন্থা, অনুগ্রহ ও নিকটাত্মীয়দের হক প্রদানের নির্দেশ দেন এবং অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে নিষেধ করেন।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯০)
মানুষের অধিকার হরণ করা ও তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা অনেক বড় জুলুম। এই ধরনের জুলুমের কারণে পুরো পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়।যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬১৩)।
পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা জুলুমের ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সুরা : শুআরা, আয়াত : ২২৭)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জালিমরা কখনো সফলকাম হয় না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৭)
জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১১)।
তুমি জানো মা,যারা অন্যকে ক্ষতির মধ্যে ফেলে দেয়, হাদিসে তাদের অভিশপ্ত বলা হয়েছে। সাহাবি হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের ক্ষতিসাধন করে বা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সে অভিশপ্ত।’ (-সুনানে তিরমিজি: ১৯৪১)
তোমার এই অবস্থায় খারাপ লাগলেও আমার বলতে হয় এগুলো তোমার পাপের ফল।জীবনেতো আর কম পাপ করোনি।সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছো নিজের ভাই-বোনদের।বদদোয়া করতে হয়না মা,এটা এমনিতেই এসে যায়।অভিশাপ না দিলেও “রুহের হায়” বলে একটা কথা আছে,
যাকে “রিভেন্স অফ ন্যাচার” বলে। কোরআন-এর ভাষায় যেটা “কিফারাহ্”।প্রত্যেকটা মানুষ তার খারাপ কাজের শাস্তি পায়,কেউ আগে পায় তো কেউ পরে।কিন্তু শাস্তি সে পাবেই।আল্লাহ কাউকে ঠকায় না, তিনি কারোর একার না।”

উপরে কথাগুলো আদিবা তার মেয়েকে কোলে নিয়ে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে একভাবে বলছিলো।আর মিসেস জামান উনি বিছানায় শুয়ে কথাগুলো চুপ করে শুনছিলেন।চুপ করে না শুনে আর করবেনই বা কী?উনি যে গত এক সপ্তাহ ধরে প্যারালাইজড,সেই সাথে কথাও বলতে পারেননা।হঠাৎ করে যে কেন এমন হলো সেটা কারোর বোধগম্য নয়,তবে একপাক্ষিক লোক বলছে তার কর্মের ফল।আর উনার এই দুর্দিনে তার একমাত্র পুত্রবধু ইতিই এসে সেবা যত্ন করছেন,যাকে উনি দুই চোখে কখনো দেখতে পারতেন না।

আজ আদিবা নিজের মেয়েকে নিয়ে মাকে দেখতে এসে কথাটা বলেন।সেখানে মিসেস রায়ীনা,মিসেস দিপ্তীও উপস্থিত ছিলেন।মিসেস রায়ীনা আদিবার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলেন,
-“দিন দিন বেয়াদপ হচ্ছিস তুই ইশার মেয়ের মতো।মাকে এসব বলতে আছে,এখনি পা ধরে মাফ চা।”

আদিবা ওর খালার দিকে তাকিয়ে বলে উঠেন,
-“আমিতো এখানে ভুল কিছু বলিনি খালা,যেটা সঠিক আমি ঠিক সেটাই বলেছি।”
-“আবার মুখে মুখে তর্ক।”
-“এখানে তর্কের কিছু করিনি আমি,হাদিসে যা আছে আমি সেটাই বলেছি।অনেকবার তোমার বলেছি মা ভালো হয়ে যাও।কিন্তু তুমি হওনি।এখনো সময় আছে তওবা করো,আল্লাহ তার বান্দাদের কখনো খালি হাতে ফেরায়না।”

কথাটা বলে আদিবা মেয়েকে কোলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।ঠিক তখনি গ্রীল খুলে আদিব বাইরের থেকে এসে বোনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
-“কীরে তুই কখন এলি?”
-“এইতো ভাইয়া,এইমাত্র।”
-“হাসান এসেছে।”
-“না,ও অফিসে।”
-“থাকবি তো সোনা আজ?না করিস না।”
-“কোথায় থাকবো ভাইয়া,আমাদের তো দুইটা ঘর।আর ডাইনিংটাও খুব ছোট।”

আদিব হেসে বলে,
-“আরে চিন্তা করিস কেন?তোর ভাবী আর ছেলেকে নিয়ে আমি চিলেকোঠায় থাকবো,তুই মেয়েকে নিয়ে ঘরে থাকিস।”
-“না ভাইয়া,তোর এতো কষ্ট করতে হবেনা।”
-“কীসের কষ্ট?আর তোর ভাবীও দেখিস যেতে দিবেনা তোকে।”
-“মা ঠিক হয়ে যাবে তো ভাইয়া।”
-“সব পাপের ফল,আল্লাহ চাইলে সব সম্ভব।শোন তুই থাক,আমি তোর পছন্দের রুপচাঁদা মাছ নিয়ে আসি।দেখি বাজারে পায় কীনা।”
-“তুই পাগল ভাইয়া?”
-“জানিস অনেকদিন পরে আমরা এভাবে কথা বলছি।তুই থাক আমি গেলাম।”

আদিব কথাটা বলে হাতে ছাতাটা নিয়ে আবার বেড়িয়ে পরে,আর আদিবা ওর ভাইয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।ভাই-বোনের সম্পর্কের থেকে মধুর সম্পর্ক আর নেই,যা আজ আদিবা উপলব্ধি করতে পারছে।আদিবের বিয়ে পর ও মায়ের সাথে মিলে ইতির সাথে খারাপ ব্যাবহার করতো আর আদিবের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতোনা।কিন্তু আদিব বোনের সাথে আগের মতো মিশার চেষ্টা করতো কিন্তু হতোনা।কেননা আদিবা সুযোগ দিতোনা।আজ আদিবা বুঝতে পারছে ও কত বড় ভুল করেছে।

#চলবে_____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here