জীবন মানে তুমি পর্ব-৬০

0
3821

#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Rini (Irini Ori)
#পর্ব:৬০

(২০৭)

নিলয় ওর পায়ের কাছে বসে কথাটা শুনার সাথে সাথে আপু বলে কেঁদে উঠে।য়ুহার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“যা…ক তাহলে তুই কাঁদতেও পারিস।মা দে..দেখেছো কেমন মেয়েদের মতো কাঁ..দে?”
-“আপু প্লীজ যাসনা,থাকতে পারবোনা একা।”
-“পাগল,বাঁচা-মরা মানু…নুষের হাতে নাকী?আ..ল্লাহ যা চাইবে তাই হ…বে।শোন সব সম…য় ফোন নিয়ে পরে থাক…বিনা।বাবা-মার খেয়াল রাখবি আর মন দিয়ে পড়াশোনা কর…বি।আমিতো থাক…কবোনা তোকে ব…কার জন্য, নিজের যত্ন নি…নিস।”

নিলয় আর বসতে পারেনা,কাছের মানুষের মৃত্যু চোখের সামনে সহ্য করা ওর পক্ষে সম্ভব নয়।তাই চোখ মুছতে মুছতে দৌঁড়ে বাইরে বের হয়ে যায়।য়ুহার শৈলের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আপনার পাগল…কে একটা সুন্দর মেয়ে দেখে বিয়ে দি…দিবেন।উকিল বৌ হয়ে বৌ-শ্বাশুড়ি ঝগ…ড়া করতে পারলা…লাম না।শৈল ওদিকে কী করছো কাছে আসো?ওই প্র…ফে…সর তাকাও এদিকে।”

শৈল জোড়ে শব্দ করে কেঁদে দেয় আর য়ুহারের চেহারায় হাত বুলায়।চোখের নিচে কালো হয়ে গেছে,মাথার চুলগুলো খুব কম কেননা ঝড়ে গেছে, মুখটা ফ্যাকাশে যেগুলে লোকচক্ষুর আড়াল করার জন্য মেকাপ দিয়ে ডেকে রাখতো।য়ুহার সবার সাথে শেষ বারের মতো কষ্ট হলেও কথা বলে,সবার চোখে পানি।কেউ কষ্টটা নিতে পারছেনা,মানতে পারছেনা এমন মেয়ে চলে যাবে।য়ুহার বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে বলে,
-“তোম…রা তো দেখছি আ…মি মা…রা গেলেও শা..ন্..তি দিবে..না।খবরদার বলছি,মারা গেলে কেউ উচ্চ…শব্দে কাঁ..দবেনা আ..আমার জন্য।দ..দোয়া ক কর…বে।”

য়ুহারের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে,তবুও আবার বলে উঠে,
-“যা…যারা নামায পরে তারা যেন আমার জানাযার গো…গোসল করায়।বা…বা সবার খেয়াল রাখবে আর আ…র বাচ্চাটা আসেনি আমাকে দে…খতে?”

য়ুহারের বাবা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-“এসেছে আম্মা,ওই দেখো আম্মা…”

য়ুহার হাত ইশারা করলে ইয়ারাবী ওর পাশে বসে, য়ুহার কাঁপা কাঁপা হাত ওর মুখে রেখে বলে,
-“বাহ্,তুই যে আ..জকাল খুব কাঁ…দতে শিখেছিস।আ…আগে তো ছিলিনা এমন।”
-“আপু,তুমি এমন কেন করলে?”

য়ুহার অনেক কষ্টে নিঃশ্বাস টেনে টেনে বলে,
-“‘সু…খ তুমি ফিরে আ…সো,দুঃখ নিয়ে যা..ও। পা..পারিনা আর স…ইতে জ্বা…জ্বালা, আমায় মুক্তি দাও।’
বাচ্চাটা,আমি তো…দের সাথে অনেক দিন বাঁচ…তে চ..চেয়েছি…লাম রে।ক..কিন্তু সে..টা আর হ..লো…না।আ…র যখ..ন মরতে চাই…লাম তখন মৃত্যু আমাকে কা…ছে টানল না। আর যখন আমি বাঁচতে চা…ইলাম ঠিক তখনই মৃত্যু আমা…র দু…দুয়া…রে কড়া নে..ড়ে আলি…ঙ্গন করতে চাই..ছে। আমি জানি…না এটা আ…মার কোন পাপের ফ…ল। কিন্তু আমি এই কষ্ট আর নিতে পারছি না…রে বাচ্চা।তোরা শুধু দোয়া করিস যেন আমি পরকা…লে যেন শা…ন্তি পাই।যদি আর ক.. কিছুদি…ন থাকতে পার…তাম তাহলে খুব ভালো হতো জা…নিস।আমা…কে যে যে..তেই হবে। জানিস মৃত্যু…কে কখনও কে…উ আটকা…তে পা..রে না। যদি সম্ভ…ব হতো আর কয়ে..ক..টা মা..ত্র কয়েকটা….দিন আ…মার মা-বাবা, শৈল, নি…লয়,তুই সবা…র সাথে আমার জীবনে..নের সবচে…য়ে ভালো দিন…গুলো কাটাতা…ম।ত…তবে আ..আল্লাহর ক…কাছে শু..করিয়া উনি এক..টা সু..ন…দর জীব…ন দিয়েছেন।আবরার অনেক ভা…লোরে,মনে রা..খিস ওই তোর সব।তুই সুখী হোস,আমি সব সময় তোদের দো…য়া করি।স..সব স..ময় হাসি-খুশি থাক..বি,সবাইকে দেখে রা…খিস। আমি জা…নি তুই পারবি।অনে…ক ইচ…চ্ছা চিলো,তো…র বাচ্…চাকে কো…লে নি..বো,কিন্তু সে..টা আর হ…লোনা।নি…লয় আ…মি ছাড়া তোর ক..থা খু…ব ভালো শো…নে,ওকে দেখিস।আবরার তু…মি প্লিজ আমার বাচ…চ্চাটাকে দে…খে রেখ। ওকে কস…ষ্ট দি..ও না। ওকে যে আমি অ..অনেক ভালো..বাসি। ও কষ্ট পেলে আমি ভা….লো থাক…ব না আবরার। ও…কে প..প্লি..জ কস…ষ্ট দিও না।ইশা ফু…পু,
মে…য়েটা..কে আপ..ন ক..করে নি…বে..ন।”

হঠাৎ করেই য়ুহারের টান পরতে থাকে,আদিবাসহ অনেকেই পাশে বসে জোরে জোরে দোয়া পড়ছে।তবে আল্লাহর রহমতে কষ্ট করে হলোও কলিমা পড়ে য়ুহার,আর তার পরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মায়ের কোলে মাথা রেখেই।

ইফাজ চেক করে দেখে য়ুহার আর নেই।য়ুহারের বাবা-মা যেন পাথর হয়ে গেছে,নিলয় ছুটে এসে ওর পায়ে কাছে বসে কাঁদতে থাকে।ইয়ারাবী আবরারকে জড়িয়ে কেঁদে দেয়।মুহুর্তের মধ্যে কতকিছু বদলে দেয়,রাত বারোটা এক মিনিটে য়ুহার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।রমজানের পর খুশির ইদ আসলেও,এদের পরিবারে দুঃখের ছায়া ভর করে।শৈল স্তব্ধ হয়ে গেছে,য়ুহারের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে শৈল য়ুহারের কাছে গিয়ে ওর মুখে হাত দিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে,
-“এমনটা না হলেও পারতো,তাই না য়ুহার।তুমি আর আমি অনেকটা পথ একসাথে পাড়ি দিতাম। অনেক সপ্ন ছিল তোমাকে নিয়ে জানো? অবশ্য জানবে কি করে?আমি তো তোমাকে বলিনি। বলার সময়ই তো পেলাম না য়ুহার। আর একটু সময় কেন দিলে না আমাকে। আমি তো তোমাকে অনেক সুখী দেখতে চেয়েছিলাম। তোমাকে একটা কথা বলতে চাইতাম য়ুহার কিন্তু বলা হতোনা।
‘যত দূূরে যাওনা কেন,থাকব তোমার পাশে,
যেমন করে বৃষ্টি ফোঁটা জড়িয়ে থাকে ঘাসে।
সকল কষ্ট মুছে দেবো,দেবো মুখের হাসি,
হৃদয় থেকে বলছি তোমায় অনেক ভালোবাসি।'”

হঠাৎ পিঠে কারো স্পর্শ পেয়ে পিছনে ঘুরল শৈল। শৈল পেছন ঘুরে দেখল ওর বাবা।সঙ্গে সঙ্গে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
-“বাবা ও চলে গেছে,আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে।কতটা স্বার্থপর দেখেছো,চলে গেলো আমাকে একা রেখে।ও বাবা,বাবা গো আমার য়ুহার আর নেই।কত কিছুর পরে ওকে পেলাম গো বাবা,কিন্তু বিয়ের ছয় মাস না ফুরাতেই ওর নামের পাতা শুকিয়ে ঝড়ে গেলো গো বাবা।বাবা আমার য়ুহার তো অন্ধকারে ভয় পায়,তাহলে একা থাকবে কী ভাবে?বাবা আমাকে মেরে ফেলে ওর পাশে কবর দাও গো বাবা।আমাকে প্রফেসার বলে কে ডাকার কেউ নেই গো।”

শৈলর বাবা ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না কী বলবেন উনি?তবুও চোখ মুছে বলেন,
-“শৈল এভাবে কাঁদিসা,ওনা মানা করলো তো তোদের।ও কিন্তু তোদের দেখছে,কষ্ট হচ্ছেনা বুঝি ওর।ওকে নিয়ে যেতে হবে।ওকে বাড়িতে নিয়ে যাই আগে।তারপর জানাজা পড়ে ওকে কবর দিতে হবে তো তাই না বাবা।দয়া করে কাঁদিস না বাবা, পাগলামি করিসনা মেয়েটার কষ্ট হচ্ছে।”

শৈল কোনো কথা বলছেনা,চোখ মুছে এক ধ্যানে য়ুহারকে দেখছে।এদিকে নিলয়কে সামলানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।ইফাজ,ইমন,শুভ ওকে বুঝাচ্ছে কিন্তু ও থামছেনা।বারবার একটা কথাই বলছে,
-“আমার আপু আমাকে আর বকবেনা,বাঁদর বলে কান মলবেনা।আপু যে আর কোনোদিন আমাকে আদর করবেনা।আপুটা যে আর নেই।”
-“নিলয় দেখ ভাই,আল্লাহর বান্দাকে আল্লাহ ফিরিয়ে নিয়েছেন।”

এদিকে ইয়ারাবীও প্রচুর কাঁদছে,ওকেও শান্তনা দেওয়া যাচ্ছেনা।আবরারের আগে চিন্তা হচ্ছিলো কিন্তু বৌয়ের জন্য বেশি চিন্তা হচ্ছে।ইফাজ আর মি.তৌহিদ হাসপাতালের ফর্মালিটি শেষ করে ঢাকাতে যেখানে ও স্বামীর সাথে থাকতো সেখানে নিয়ে আসে।এর মধ্যে অনেক মানুষই এসেছে য়ুহারকে দেখতে।শৈলের বাসাটা একতলা,বাসার পাশে কিছুটা জায়গা এখনো আছে।মৃত্যুর আগে য়ুহার বলেছিলো,এখানে যেন কবর দেয়।য়ুহারের কথামতো সেই রাতেই ওকে দাফন করানোর জন্য গোসল করানো হলো।তারপর হুজুর জানাজার নামায পরিয়ে মাটি দিতে যান,খাটিয়া য়ুহারের বাবা,নিলয়,শৈল আর ইফাজ ধরেছে।য়ুহারের কথার মোতাবেক ওর বাবা,নিলয় আর শৈল ওকে কবরে নামায়।কিন্তু ওকে নামানোর পর য়ুহারের বাবা আর ভাই উঠলেও শৈল উঠেনা।লাশের উপর শুয়ে আছে,সবাই ভাবে হয়তো ছাড়তে চাইছেনা স্ত্রীকে।সবাই অনেক ডাকে কিন্তু শৈল জবাব দেয়না,টেনে উঠাতে গেলে শৈলের শরীর ভারী লাগে হুজুরের কাছে।আবরারের কেমন একটা খটকা লাগে,ও ইফাজকে চেক করতে বললে ইফাজ কবরে নেমে চেক করতেই মনে হয় মাথার উপর আকাশ ভেঙে পরেছে।কেননা শৈলের পালস্ পাওয়া যাচ্ছে অর্থাৎ সেই আর পৃথিবীতে নেই।নিজের প্রিয়তমার সাথে মৃত্যু লাভ করে পরপারে পাড়ি জমিয়েছে একত্রে।শৈলের মৃত্যুর খবর শোনার সাথে সাথে আরো ভেঙে পরে মানুষ।শৈলকে কবর থেকে তোলা হয়,ও য়ুহারের মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে হার্ট এ্যাটাকে ওখানেই মারা যায়।সত্যিই আল্লাহর কী উছিলা,শৈল সব সময় বলতো স্বামী-স্ত্রী যেন একসাথে জীবন কাঁটাতে পারি।কেউ কাউকে রেখে যেন আগে না যাই।আজ সত্যি আল্লাহ ওদের দোয়া কবুল করেছেন।

শৈলের বাবা-মা য়ুহারের মৃত্যুতে কষ্ট পেলেও ছেলের মৃত্যুতে আরো বেশি ভেঙ্গে পরেন।শৈলের মা বুক চাপরিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন,
-“এটা তুই কী করলি আমার মানিক?আমরা এখন কারে নিয়ে বাঁচবো।আমার সোনা তুই গেলি?আব্বারে তুই চলে ক্যান গেলিরে বাবা।একটাবার বাপ-মার কথা ভাবতে পারলিনা যে তোরে ছাড়া এই বুড়া-বুড়ি কেমনে থাকবে?আমার মানিক-সাত রাজার ধন,ক্যান চলে গেলি বাপজান।ও আল্লাহ!তুমি বৌরে নিছো আমার ছেলেটাকে নিয়ে মায়ের কোল খালি করলে।ও আমার বাপজান কেন গেলি মানিক আমার?”

এদিকে য়ুহারের মা “আমার সোনা,আমার আম্মা” বলে কাঁদতে থাকে।কেউ মেনে নিতে পারছেনা মৃত্যুটা।য়ুহারের পাশে শৈলের জন্য কবর খুড়া হয়,
জানাযার গোসল-নামায পরিয়ে ওকে সেখানে দাফন করা হয়।শেষ হলে যায় শৈল-য়ুহারের জীবন।নিলয় চিৎকার করে কাঁদতে থাকে বোনের জন্য,ওইদিকে প্রাণো কাঁদে ভাই-বান্ধবীর জন্য।চারিদিকে ইদের আমেজ হলেও ওদের বাড়ি হয়ে উঠে শোকের আগমন।সত্যিই এমন মৃত্যু বেশি একটা দেখা যায়না।য়ুহার-শৈলের মৃত্যুর পরদিন খবর শুনে কলিগ,শিক্ষার্থীরা ছুটে আসলেও আত্মীয়রা বেশি আসেনা।ইরাক ছুটি পায়নি,আবিদ অসুস্থ, জারা ওর বাবার চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া গেছিলো এখনো আসেনি।অন্যদিকে ওর বড় খালার মেয়ে মুমু তার স্বামীর সাথে আসে, ছোট খালা আর নানীও আসেন দেখতে।এমন দিনেও মিসেস জামান আর মিসেস রায়ীনা,মিসেস নিন্দুর সামনে বসে বলছেন,
-“গেছে ভালো হয়েছে,জীবনটা অতিষ্ঠ করে তুলেছিলো য়ুহার।বাবা রে বাবা ওর সামনে তো কিছু বলাই যেতোনা।আপদ বিদায় হয়েছে।”
-“আরে আপু শুধু কী তাই?ওই ইশার বড় মেয়েকে নিয়ে কিছু বললেই তো বাঘের মতো গিলে খেতো আমাদের।আর আমাদের জারিকার তো জীবন শেষ করে দিয়েছে তাই না বল দিন্দু।”

মিসেস নিন্দু বলে উঠেন,
-“আমার মেয়ের জীবন আর কেউ নয় বরং আমি নিজেই শেষ করেছি।”

কথাটা বলে উনি সেই জায়গা থেকে চলে যেতেই উনারা দু’জন মুখে ঘুরিয়ে খাবার খেতে থাকেন।মিসেসে নিকি পানির গ্লাসে পানি ঢেলে বলে,
-“এর আবার কী হলো?”
মিসেস জামান বোনের দিকে তাকিয়ে বলেন,
-“বাদ দে তো,কত ডং যে দেখবো।”

দেখতে দেখতে একদিন পার হয়ে যায়,ইয়ারাবীর প্রচন্ড জ্বর তাই য়ুহারদের বাসায় আছে।নিলয়কে অনেক কষ্টে ইয়ারাবী খাইয়ে দিয়েছে।মিসেস অচলা মেয়ের শোকে বারবার বেহুশ হচ্ছেন আর ওর বাবার মুখে কোনো কথা নেই,পাথর হয়ে গেছেন।ইয়ারাবী উনাদের সামনে কোনো কান্না করেনা,বুকের উপর পাথর চাপা দিয়ে রাখে।কেননা য়ুহার বলেছে ওর বাবা-মাকে একটু সামলে নিতে।তাই ও অনেক কষ্টে উনাদের দু’জনকে নিজে হাতে খাইয়ে রুমে চলে আসে।আবরার নিলয়ের সাথে কথা বলছিলো,ওকে দেখে বলে উঠে,
-“সবাইকে তো খায়াচ্ছো,নিজে খেয়েছো?আর জ্বরটা তো দেখছি আরো বেরেছে।”
-“আমি ঠিক আছি,নিলয় রাত হয়েছে যেয়ে ঘুমিয়ে পর।”

নিলয় ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আপু ঘুম কি আদেও আসবে?”
-“না আসলেও ঘুমাবি,শুভ থাকবে তোর সাথে যা।”

নিলয় কথা না বাড়িয়ে নিজের ঘরে চলে যায়।য়ুহারের পরে যদি কারোর কথা শুনি সে হলো ইয়ারাবী।ও যেতেই একটা নিঃশ্বাস ফেলে,বুক ফেঁটে কান্না আসছে।আবরার ওর সামনে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত রেখে বলে,
-“মৃত ব্যাক্তির জন্য কান্না করতে হয়না।জানি য়ুহার তোমার জন্য কেমন ছিলো?সে যাতে বেহেশতে যেতে পারে সেই দোয়া করবে।মুগীরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী করিম (সা.) কে বলতে শুনেছি,”যে মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে কাঁদা হয়, তাকে এ ক্রন্দনের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। (বোখারি-১২৯১)।”

তাই ইয়ারাবী চোখের পানি মুছে নিয়ে ঔষুধ খেয়ে আবরারের সাথে ঘুমিয়ে পরে।সকালে চিৎকার চেঁচামেচিতে ইয়ারাবীর ঘুম ভাঙ্গে,ঘর থেকে বের হয়ে এত বড় ধাক্কা অপেক্ষা করছে সেটা ও ভাবতেই পারেনি।কেননা ঘর থেকে বের হয়েই শুনে ওর মামা অর্থাৎ য়ুহারের বাবা স্টোক করেছে।সবাই উনাকে নিয়ে হাসপাতালে যায়,এই তিনটা মাসে অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে যা কেউ প্রত্যাশা করেনি।

গাড়ির হর্নের আওয়াজে বাস্তবে ফিরে আসে ইয়ারাবী।বেলকনি থেকে তাকিয়ে এদেখে আবরার হাসপাতাল থেকে ব্যাক করেছে।ওর চোখের পানি মুছে আরো একবার ছবির দিকে তাকিয়ে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে ছবিটা ব্যাগে রেখে দেয়।আবরার এতক্ষণে ঘরে চলে এসেছে,স্ত্রীর চোখে পানি দেখে বুঝতে পারে কান্না করছিলো সে।আবরার এপ্রোনটা কাউচে রেখে শার্টের হাতা গুটিয়ে গলার কাছের বোতাম খুলতে খুলতে বলে,
-“আবার কাঁদছিলে?”
-“ক..কই না তো,চোখ জ্বলছে তাই।”
-“ডাক্তার আমি তুমি নও বুঝলে,ফিউচারে যখন ডাক্তার হবে তখন বোঝাবে এসব ফালতু কথা।আজ ক্লাসে যাওনি কেন?আজ ব্যস্ত ছিলাম বলে আগে বেড়িয়ে গেছিলাম,বলেছিলাম উইলিয়াম তোমাকে নিয়ে যাবে।তুমি জানোনা মেডিকেলের এক একটা লেকচার কতটা ইমপর্টেন্ট।”

কথাটা আবরার অনেকটা গম্ভীর কণ্ঠে বললে ইয়ারাবী এক গ্লাস পানি ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
-“পানিটা খেয়ে নিন,মাথা ঠান্ডা হবে।আর শরীরটা ভালো লাগছিলোনা তাই যায়নি।মারকোর কাছ থেকে বিষয়টা বুঝে নিবো,তাছাড়া আপনি তো আছেন।”
-“বরকে কীভাবে মানাতে হয় ভালোই জানো দেখছি।”

আবরার পানিটা খেয়ে বিছানায় বসে বলে,
-“ক্লাসগুলো কেমন লাগছে?”
-“খুব খুব খুব ভালো,আমি ভাবতেই পারিনি কোনোদিন ডাক্তারি পড়তে পারবো।হুয়াইট এপ্রোন ছুঁতে পারবো।”
-“যাক তাহলে ম্যাডাম আমার উপর খুশি।গত তিন সপ্তাহ ধরে তো মনে হতো রেগে ছিলে।”
-“উহু,এখনো রেগে আছি।আপনি এত কিছু করলেন আর আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি।তাছাড়া আমি শুনেছি এভাবে বলে ভর্তি হওয়া যায়না তাই আপনি…”
-“কে বলেছে তোমাকে?”
-“আব মানে আপনার শ্বশুড়।আমি ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে একবার ট্রাই করতে চেয়েছিলাম কিন্তু উনি বলেছিলো এমন হয়না।আপনি কীভাবে করলেন?”

আবরার উঠে কাবার্ড থেকে ড্রেস বের করতে করতে বলে,
-“তোমার রেজাল্ট ততোটাও খারাপ নয় যে মেডিকেলে পড়ার যোগ্যতা রাখোনা।তোমার এপ্লাই করা ছিলো।তাছাড়া আমি নিজেও এই মেডিকেল থেকে পাস করেছি এন্ড পার্ট টাইম লেকচার দেয়, সুতরাং সবাই আমাকে চেনে।বেশি কষ্ট করতে হয়নি,তোমার রেজাল্ট আর তার সাথে মেডিকেল রিপোর্ট দিতে হয়েছে যে এক বছর অসুস্থতার জন্য পড়তে পারোনি।আর সাথে একটু দৌঁড়-ঝাপ করতে হয়েছে আমাকে।বাদ দাও এসব,এখন মন দিয়ে পড়বে আর দেখিয়ে দিবে তুমিও পারো।আমি ফ্রেস হয়ে নিচ্ছি তুমি এনাকে খাবার দিতে বলো।”
-“জ্বি।”

কথাগুলো বলে আবরার ওয়াশরুমে চলে যায়।ওর উপর ইয়ারাবী প্রথম দিকে রেগে থাকলেও মনে মনে খুব খুশি হয়।আসলে নিজের পছন্দমতো জিনিস না পেলে সেটাতো কখনো মনোযোগ দেওয়া যায়না,ঠিক তেমনি হয়েছিলো ইয়ারাবীর সাথে।আইন নিয়ে পড়তে গিয়ে প্রচুর সমস্যায় পরতে হয়েছিলো,বুঝতে পারলেও জেদ করে পড়ছিলো।কিন্তু আবরার ওকে এমন একটা সারপ্রাইজ দিবে বুঝতে পারেনি।

ইদুল আযহার নয়দিন পর,আবরার ওর স্ট্যাডি রুমে বসে ইয়ারাবীকে ডাক দেয়।ইয়ারাবী এই দ্বিতীয়বার ওর এই রুমে প্রবেশ করে,চারদিকে ভালো করে দেখে নেয়।ঘরের চারপাশে তিনটা বইয়ের স্লেফ,দরজায় বরাবর ওর টেবিল রাখা তারপাশে ফাইল,বই আর কাগজের ছড়াছড়ি, একটা মানব কঙ্কাল রাখা কর্ণারের দিকে,টেবিলে ল্যাপটপ অন রাখা,ঘরে আলোর পরিবর্তে ডিম ল্যাম্প জ্বালানো।আবরার ওর কান্ডে খানিকটা মুচকি হেসে বলে,
-“তোমার দেখা শেষ হলে একটু বসবে,কথা আছে।”
-“জ্বি বলুন।”
-“কোথায় ছিলে এতক্ষণ?”
-“আহনাফ-ইমুর কাছের,আপু খাচ্ছিলো তাই বসেছিলাম।জানেন বাচ্চা দু’টা আমার কোলে আসলে একটুও কান্না করেনা,চুপচাপ ছোট ছোট হাত-পা নাড়িয়ে খেলা করে।আচ্ছা আবরার, আহনাফ-ইমুর মতো আমারও ছোট বেবী হবে তো?আমি সত্যি মা হবো তো?”

কথাটা বলে ইয়ারাবী মুখ লটকিয়ে নেয়,আবরার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“আমরা সে জন্যই কাল লন্ডন যাচ্ছি।দেখবে ট্রিটমেন্টের পর তোমারও কী বলো যেন ওদের?ও হ্যাঁ,সুইট কিউট গুলুমুলু বেবী হবে।বিশ্বাস নেই আমার উপর?”
-“জ্বি,অনেক আছে।”
-“এটাই যথেষ্ট।আচ্ছা শোনো,তোমার যে সার্টিফিকেটগুলো আছে ওগুলো সাথে নিবে কিন্তু?”

আবরারের এই কথা শুনে ওর ভ্রু কিছুটা কুচকে যায়।ও বুঝতে পারেনা আবরার ওর সার্টিফিকেট দিয়ে কী করবে?তাই কৌতুহল চেপে না রেখে সরাসরি প্রশ্ন করে,
-“আপনি সার্টিফিকেট দিয়ে কী করবেন?”
-“যা বলছি এখন সেটা করবে,লন্ডনে যাওয়ার পর বুঝতে পারবে কেন করছি?আর শোন,বিবাহ বার্ষিকী তো এমন দুর্ঘটনায় জন্য পালন করতে পারিনি না তোমার মন ভালো ছিলো।যে পেনডেন্ট দিয়েছিলাম ওটাতো ছুঁয়েও দেখোনি,তাই বলছি এই চেইনটা খুলে এখন থেকে ওটা পরবে।”
-“কিন্তু এটা তো আম্মু দিয়েছিলো,খুলে ফেললে উনি মন খারাপ করবে।”
-“আর ওটা না পরলে আমি করবো,কাল ফ্লাইট তাই এখন যেয়ে ঘুমিয়ে পরো।আমি কাজ আছে, দেরি হবে।”

ইয়ারাবী বুঝতে পারেনা এই ছেলে এতো ঘাড়ত্যাড়া কেন?মনে হয়,দুনিয়ার যত ত্যাড়ামি শুধু ওর সাথেই করে ছেলেটা।ও কোনো কথা না বাড়িয়ে রুমের দিকে যায়,নয়তো আবার কোন সময় ধমক মেরে বসবে জানা নেই।

পরদিন ওরা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে।টানা বারো ঘন্টা পর ওরা লন্ডনে পৌঁছায়।বরাবরের মতো,বাই এয়ার জার্নিতে ইয়ারাবী কাহিল হয়ে পরে।তাই দু’দিন ধরে আবরার ওকে বেড রেস্ট করতে দেয়।তৃতীয় দিন আবরার ওকে নিয়ে একটা মেডিকেল কলেজে যায়,ও ভেবেছিলো ডাক্তার দেখাতে কিন্তু না,ওর ভাবনা ভুল প্রমাণিত করে আবরার।কেননা ওকে নিয়েছে মেডিকেল কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত কথা বলতে।কথাটা শুনে আর আবরারের ব্যবহার দেখে মনে হচ্ছে ও পড়ানোর বিষয়টা অনেক আগেই ঠিক করে রেখেছিলো।ইয়ারাবীরা প্রধানের রুম থেকে বের হয়ে আবরারকে প্রশ্ন করে,
-“এটা কী?”

আবরার এমন ভাব নেয় যেন প্রশ্নটা শুনতে পায়নি,তাই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চোখে সানগ্লাসটা পরে নিয়ে বলে,
-“কাল থেকে এসে ক্লাস করবে।”
-“কী বলছেন আপনি এসব?আমিতো….”
-“টিসি নিয়েছি তোমার,এখন তুমি ফিউচার ডাক্তার হওয়ায় দৃষ্টি দাও।আর যতটুকু আইন মাথায় ঢুকিয়েছো সেটা খালি করে সাইন্স ঢুকাও।”

ইয়ারাবী সেদিন রাগ দেখালেও বাসায় ফিরে আবরারের অনুপস্থিতে আপন মানুষগুলোকে ফোন করে কথাটা জানায়।ইরাক কথাটা শুনে আল্লাহর সুকরিয়া আদায় করে বলে,
-“তুই খুশিতো পিচ্চি?”
-“এতো এতো খুশি।”
-“কিন্তু আবরার বললো তুই রাগ করে আছিস?”
-“হুম,করবই তো উনি আমাকে কিছুই জানায়নি।তবে তুমি বলবেনা আমি খুশি।”
-“আচ্ছা বলবোনা।”

ইয়ারাবী পুরানো কথা ভেবে মাথায় একটা চাটি মেরে নিচে গিয়ে এনার সাথে খাবার রেডি করে।

(২০৮)

ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটার মাঝে তারা খালি পায়ে ঘাসের উপর এসে দাঁড়িয়েছে।সচারচ বাসার পাশের এই জায়গায় বৃষ্টির সময় তেমন মানুষের আনাগোনা নেই,আজ তারার চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি একসাথে মিথে একাকার হয়ে যাচ্ছে।বারবার ভাবছে,
-“যদি সেদিন মরে যেতাম তাহলে আর কষ্ট সহ্য করতে হতোনা।না পারছি মন খুলে বাবা-মাকে বলতে আর না পারছে ভালোবাসার মানুষকে আপন করে নিতে।নিজের শরীরের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে ওর?যদিও ইরাক ভাইয়া বলেছিলো,আমি চাইলে সাহায্য করতে পারে কিন্তু আমি সেটা করেনি।কেননা বাবা-মা কথাটা জানতে পেরে যেত।এখানে লোকটার দোষ থাকলেও সমাজ আমাকে দোষী করতো,কথা শুনাতো, পরিবারের সাথে বাজে ব্যবহার করতে ছাড়তো না।হায়রে সমাজ!যেখানে মেয়েদের সম্মান করার কথা সেখান তোমরা তার দোষ ধরতে পিছপা হওনা।
মরে তো যেতে চেয়েছিলাম তবে পারলাম কই।আসলে আল্লাহ চাইলেই সম্ভব হয়,নয়তো না।উনিই তো এরশাদ করেছেন,‘নিশ্চয়ই মৃত্যুর সময় নির্ধারিত। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো মৃত্যু হতে পারে না। কেউ পার্থিব পুরস্কারের জন্যে কাজ করলে তাকে তার পুরস্কার ইহকালে দান করবো। আর যদি কেউ পরকালের জন্যে কাজ করে তবে তার পুরস্কার সে পরকালে পাবে। শোকরগোজার বান্দাদের কাজের ফল আমি নিশ্চয়ই দেবো।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৫)
‘হে মানুষ! আমিই জীবন দান করি। আমিই মৃত্যু ঘটাই। আমার কাছেই সবাইকে ফিরে আসতে হবে। যেদিন জমিন বিদীর্ণ হবে এবং মৃত্যুরা উত্থিত হয়ে ছুটতে থাকবে, তখন তাদের সমবেত করা খুব সহজ একটি কাজ।’ (সূরা কাফ, আয়াত ৪৩-৪8)
সূরা আর রহমানেো উনি কত সুন্দর বর্ণনা করেছেন।আর আমি পাগলের মতো মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে গেলাম।আমার তো আল্লাহর সুকরিয়া আদায় করা উচিত।”

নানা কথা একমনে ভেবে চলেছিলো তারা,হঠাৎ কেউ একজন পিছে থেকে ডাক দেয় ওর।কণ্ঠটা খুব পরিচিত লাগে তাই পিছে ঘুরে ও পুরোটা অবাক হয়ে যায় মানুষটাকে দেখে।কেননা মানুষটা আর কেউ নয় স্বয়ং ইফাজ।তারার মনে হচ্ছে ও স্বপ্ন দেখছে তাই নিজের গায়ে চিমটি কাঁটে।কিন্তু না সেটা স্বপ্ন দেখছেনা,কেননা গায়ে ব্যাথা লেগেছে।ইফাজ কিছু বলবে তার আগে মিসেস ফাতেমা ছাতা মাথায় এগিয়ে এসে তারাকে বলে,
-“তোর কী কান্ড-জ্ঞান হবেনা?নিজেও ভিজছিস ছেলেটাকেও ভিজাচ্ছিস।”

তারা ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলে উঠে,
-“উনি এখানে কী করছে?”
-“আমি আসতে বলেছি।”
-“কেন?”

-“আমি কেন এসেছি সেটা তোমার না জানলেও চলবে।তুমি কেন বৃষ্টিতে ভিজছো?”
ইফাজ পকেটে হাত ঢুকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করে উঠে,এতোক্ষনে বৃষ্টি থেমে গেছে।তারা একটা বিষয় লক্ষ্য করেছে,ওর ব্যাপারে যেদিন জেনেছে সেদিন থেকে ইফাজ কেমন গম্ভীর কণ্ঠে কথা বলে ওর সাথে।কখনো হাসেনা,এই তিন মাসে তারা অনেক বার ফোন করেছে কিন্তু বেশির ভাগ কলই বেজে বেজে কেঁটে যায়,আর যদিও রিসিব করে তবে ব্যাস্ততার বাহানা দেয় ইফাজ।কিন্তু মানুষটা আজ কেন এখানে,সেটার হিসাব মেলাতে পারছেনা তারা।

ও বেশি কথা না বাড়িয়ে সবার সাথে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।নিজের ঘরে যেয়ে ফ্রেস হয়ে বের হয়ে দেখে ডাইনিংএ বসে ইফাজ গামছা দিয়ে নিজের মাথা মুচছে।তারা এক পা,দুই পা করে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
-“আপনি হঠাৎ আমাদের বাড়িতে কেন?”
-“বেশি কিছু নয়,একটা সেমিনারে এসেছিলাম।সেখানে যাওয়ার পথে তোমার বাবার সাথে দেখা তাই উনি জোর করলেন।তাছাড়া পিচ্চি ফোন করে পাগল করে দিচ্ছে,তুমি কেমন আছো সেটা দেখার জন্য।”
-“খুব ব্যস্ত মানুষ নিশ্চয়ই?”
-“হ্যাঁ,জীবন একটা ব্যাস্ত রেলগাড়ির মতো।কখন কোন প্লাটফর্মে থামে আর কখন চলে কেউ জানেনা,আর না জানে সামনের রেললাইনটা আদেও ঠিক আছে কীনা।কেমন আছো তুমি?”
-“নৈশ প্রহরীর মতো…”
-“মানে?রাতে ঘুমাও না দেখছি,চোখের নিচে কালি পরে গেছে?”
-“যার গায়ে দাগ তার চোখের দাগে কী হবে?”
-“এর মানে এটা নয় জীবন থেমে গেছে তারা।ইরশাদ হয়েছে,‘মুমিন পুরুষ ও নারীদের কেউ ভালো কাজ করলে আমি তাকে নিশ্চয়ই পবিত্র (উত্তম) জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কাজের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯৭)
তুমি তো সেচ্ছায় কিছু করোনি,সব সময় সবার ভালো করেছো তাহলে এমন কথা কেন বলো?
পবিত্র কোরআনে আরো বলা হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে এবং ভালো কাজ করে, পরম আনন্দ ও শুভ পরিণাম তাদের জন্য।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ২৯)”

তারা ওর দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলে,
-“গ্রহন করবেন আমায়?”

ইফাজ চুপ হয়ে যায় কিছুক্ষণ,তারপরে বলে উঠে,
-“তোমার যে ঔষুধগুলো তিন মাসের কোর্স দেওয়া হয়েছিলো সেগুলো খাও না বলে?”

তারা নিঃশব্দে হেসে বলে,
-“আপনি বসুন আমি খাবার নিয়ে আসি।”
-“আমি যা জানতে চেয়েছি তার উত্তর দাও,কথা কেন ঘুরাচ্ছো?”
-“আপনিও তো সেটাই করলেন।অবশ্য আমারই ভুল,এমন মেয়েকে কে গ্রহণ করবে?”

#চলবে_____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here