জীবন মানে তুমি পর্ব-৫১

0
3961

#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Rini (Irini Ori)
#পর্ব:৫১

(১৭২)

দেখতে দেখতে আরো এক সপ্তাহ কেটে যায়।এর মধ্যে ওর মামী অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছেন,দু’বৌয়ের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করতেও চেয়েছেন কিন্তু পারেননি।তবে ফাইকা তেমন একটা আবরারের পিছু পিছু না ঘুরলেও ওর মায়ের জন্য বারবার গায়ে পরতে হতো।আজ ইয়ারাবীর সেলাই কাঁটবে।সাধারন রোগী হলে হাসপাতালে যেতে হতো,কিন্তু আবরার ওকে হাসপাতালে নেয়নি।ডাক্তার বাড়িতে এসেই করবে, এমন কথা হয়েছে।আবরার আজ দুপুরের দিকেই বাসায় ফিরেছে।বাসায় ঢুকতেই দেখতে পায় ওর বাবা সোফায় বসে আছে,আবরার একবার হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ওর বাবার কাছে এগিয়ে যেয়ে সামনের সোফায় বসে বলে,
-“আব্বু তুমি এই সময়?অফিসে কী কাজ নেই?”

মি.রায়হান ছেলের আওয়াজ শুনে ম্যাগাজিন থেকে মুখ উঁচু করে বলে,
-“তোমার মামারা আজ চলে যাবে।তাই তোমার মম বাসায় আসতে বললো।”
-“কী?উনাদের তো আরো এক সপ্তাহ থাকার কথা ছিলো,সেদিন তো ফারহান বললো।”

ফারহান ব্যাগ নিয়ে নিচে নামতে নামতে বলে উঠলো,
-“সেটাই তো জানতাম আবরার ভাইয়া,কিন্তু মায়ের হঠাৎ কী হলো তা সেই জানে।আর ফাইকাও খুব চলে যেতে চাইছে।”

ওর মামী সবার সাথে নামতে নামতে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
-“থাকতে তো চেয়েছিলাম,কিন্তু তোরা দিলি কোথায়?”
-“কেন আমরা আবার কী করলাম?”
-“কী করিসনি তাই বল?তোর বৌয়ের কথা না হয় বাদ দিলাম কিন্তু তোর বোন।কাল একটু জারবাকে বললাম,অল্প সরিষার তেলটা গরম করে এনে আমার পা দু’টো মালিশ করে দে।কিন্তু যে হুমকি দিলো আর বললো,পারবোনা সার্ভেন্টদের কাউকে বলেন, আমার পরীক্ষা আছে।ক্যান ভাগ্নিরা কী মামীর সেবা করেনা।দু’টাকার রাস্তার মেয়ে,না আছে জন্ম পরিচয়….. না মানে কিরা কেটে বলছি মরে গেলেও তোর বোনকে কিছু বলবোনা।”

মামীর কথা শুনে উপস্থিত সবারই রাগ লাগছে।মি.রায়হান কিছু বলবেন তার আগেই জারবা বাসায় ঢুকতে ঢুকতে অবাক হয়ে ওর মামীকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“মামী আপনি আমাকে সব সময় দু’টাকার রাস্তার মেয়ে কেন বলেন?আর আমার জন্ম পরিচয় নেই মানে?আপনার সামনেই তো আব্বু দাঁড়িয়ে আছে, আপনি কী আব্বুর পরিচয় জানেন না।”

জারবার মামী কিছুটা থতমত খেয়ে যায়।বাড়ির সবাই পারে তো উনাকে চোখ দিয়েই ভষ্ম করে দেবে।মিসেস রায়হান জারবাকে জড়িয়ে ধরে আড়চোখে ভাইয়ের বৌয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তুই তো জানিস তোর মামী কেমন?পাগলের কথা কানে তুলতে নেই সোনা,রুমে যেয়ে চেন্জ করে খেতে আয়।”

জারবা ঠোঁট উল্টিয়ে ওর মায়ের কাছ থেকে সরে এসে আবরারে ডান বাম হাতটা ধরে ঝাকিয়ে বলে,
-“জানো ভাইয়া,মামী না আমাকে ফকির বলে।আরো বলে আমি বলে কেউ না এই বাসার,পাগল মেয়েও বলে।”

জারবার কথায় সবাই অবাক হয়ে যায়,আবরার ওর মুখে হাত দিয়ে বলে,
-“কী?এগুলো বলে তোকে?”
-“হ্যাঁ,তো….আচ্ছা তোমরা তো আমার কাজে বিরক্ত হওনা আর না আমাকে পাগল বলো।তাহলে উনি কেন বলবে?বদ মহিলা একটা কুটবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যাক্তি,হু।”

মামী রাগী চোখে জারবার দিকে তাকালে, জারবা মুখ ভেংচি মেরে শয়তানি হাসি দেয়।আবীর ওর মামার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ক্ষমা করবেন মামা,আপনার স্ত্রীর ব্যাবহার যদি ঠিক করতে পারেন তবেই উনাকে নিয়ে এই বাড়িতে আসবেন নয়তো শুধুমাত্র আপনারা আসবেন।আজ জারবা যে কথাগুলো বললো সেগুলো সবটাই ঠিক।আমাদের এসবে কোনো সমস্যা নয় তবে আপনার স্ত্রীর কেন এতো সমস্যা।মম্-আব্বু কিছু বলছেনা তার মানে এই নয় তারা চুপ করে আছে।আসলে আজ আপনারা চলে যাচ্ছেন তাই রাগারাগী করতে চাইছেনা।আমি কী বলছি আপনি বুঝতে পারছেন।”

ওদের মামা উনার বোন-দোলাভাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে হাত জোর করে বলেন,
-“আমাকে ক্ষমা করবে আপু-দোলাভাই,আসলে কী বলতো বিজন্যাসের কাজে এতটা ব্যাস্ত থাকি যে ওদের ঠিকমত শিক্ষা দিতে পারিনি।যাও একটু মেয়েকে বোঝাতাম ওর মায়ের জন্য তা হলোনা।আসলে জীবন-সঙ্গী হিসাবে ভুল মানুষকে বেছে নিয়েছি সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।পারলে ক্ষমা করে দিয়ো,আসি ফ্লাইটের দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

মি.রায়হান আর আবীর উনাদের সাথে যান, হাজার হোক একজনের জন্য তো আর পুরো পরিবারের সম্পর্ক নষ্ট করা যায়না।জারবা আস্তে করে ফাইকার কাছে যেয়ে বলবো,
-“লজ্জা যদি হয় তাহলে আর নির্লজ্জের মতো কাজ করবেনা।”

ফাইকা কিছু না বলে সবার সাথে বের হয়ে যেতেই জারবা জোরে জোরে গান গায়তে গায়তে হেলেদুলে নিজের রুমে চলে যায়।ওর কাহিনি দেখে ইকরা,ওর মা আর আবরার হেসে দেয়।আবরার ইকরার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তোমার দেবর এখনো ফেরেনি?”
-“না,মায়ের কাছে ফোন করে বললো আজ বলে দেরি হবে।”
-“ওহ্,ডাক্তারের কাছে গিয়েছো সকালে।”
-“আরে মাসে মাসে চেকআপের কী দরকার বলতো।শুধু তোমার ভাই পাগল নয় বরং তুমিও পাগল।”
-“আমাদের চ্যাম্প আসবে পাগলামি না করলে হয়।”
-“সবাই বলছে মেয়ে আর তুমি বলছো ছেলে।”
-“আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তোমার টুইন্স হবে, যেভাবে জোড়া জিনিস খাচ্ছো।”
-“ওই আমার উপর নজর দিবেনা,মা দেখেন না কী বলছে।”

মিসেস রায়হান ছেলের কান টেনে বলে,
-“বাদর সবগুলো,আমার মেয়েদের পিছনে না লাগলে কী পেটের ভাত হজম হয়না তোদের।বৌ যে রুমে একা আছে সেই খেয়াল কী আছে আপনার।”
-“আহ্হ্,মম লাগছে তো ছাড়ো।আর কী করছে ও?”
-“পড়ছে,”

কথাটা শুনে আবরার ইকরার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আচ্ছা ভাবী,তোমরা কী মেয়েরা জন্মগত ঘাড়ত্যাড়া?”

ইকরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,
-“কী বললে?”

আবরার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
-“ঘ আকার ড বিন্দু র ঘাড়,ত য ফলা আকার ড বিন্দু র আকার ঘাড়ত্যাড়া।আপাতত ইংলিশটা মাথায় আসছেনা।বাংলা বোঝোনা পড়াও কীভাবে?”
-“তুমি যাবে নাকী মাকে ডাকবো….”
-“কথায় কথায় মম্,যাচ্ছি।”

আবরার কথাটা বলে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।ইকরা ওর শুনে হাসতে হাসতে কিচেনের দিকে যায় দুপুরের রান্নার কথা বলতে।আবরার রুমে যেয়ে দেখে ইয়ারাবী বিছানায় শুয়ে শুয়ে পড়ছে।আবরার যেয়ে ওর মাথায় হাত রাখতেই চোখ বই থেকে তুলে তাড়াতাড়ি উঠে গায়ের ওড়নাটা ঠিক করে বলে,
-“আপনি এই সময়?”
-“হ্যাঁ,কেন এসে সমস্যা করলাম নাকী?”
-“না না আমি তা বলিনি।আপনি এই সময় আসেন না তো তাই।”
-“এই একমাস এই সময়ে আসবো।সকালে ব্রেকফাস্ট করছো।”
-“হুম,সব করেছি।আপনি ফ্রেস হয়ে নিন,আচ্ছা উনারা চলে গেছে?”

আবরার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বলে,
-“হুম,আব্বু আর ভাইয়া এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ছাড়তে গেছে।”
আবরার টাই খুলতে যাবে এমন সময় মনে হলো কেউ পিছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরেছে।স্পর্শটা খুব চেনা,তারপরও আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখে ইয়ারাবী ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে পিঠে মাথা দিয়ে রেখেছে।আবরার খানিকটা হাসে তবে ভিতরে ভিতরে,মুখে কিছুটা গাম্ভীর্যতা ফুটিয়ে তুলে বলে,
-“তোমাকে না প্রয়োজন ব্যতিত বেড থেকে নামতে বারন করেছি তবুও কেন নেমেছো?বড্ডো সাহস বেড়ে যাচ্ছে তোমার,আজকাল ভয় পাওনা আমাকে।”
-“সাহস সেটা তো বরাবরই আমার ছিলো তবে দেখাতাম না।আর ভয় তো এখনো পায়।”
-“তাহলে কথা শুনোনা কেন আমার?”
-“সবই তো শুনি,শুয়ে থাকতে আর ভালো লাগছেনা।নিজেকে কেমন একটা লাগে?”
-“জীবনটা তো একটাই,একটু ভালো থাকার চেষ্টা করো।”
-“জানেন,আমি যদি কখনও আমার জীবন সম্পর্কে একটি গল্প লিখি,সেখানে আপনার নামটি বিলিয়ন বার প্রদর্শিত হয়,অবাক হবেন না।”

আবরার মুচকি হেসে ওকে ঘুরিয়ে নিজের সামনে এনে বলে,
-“একটু্ও নয়,কেননা তুমি আমাকে ভালোবাসো তাই।আর জাস্ট কয়েকটা দিন,তারপর এভাবে আর থাকতে হবেনা।পড়ছো কতক্ষণ ধরে?তোমাকে না এখন মানা করেছি।”
-“আরে বেশিক্ষণ নয়,কিছুক্ষণ আগেই বইটা ধরেছি।ফোনটা তো আপনি দিচ্ছেন না।”
-“তোমার ভালোর জন্য,এখন বেডে যেয়ে বসো আমি ফ্রেস হয়ে আসি।”

আবরার কথাটা বলে ওর কপালে চুমু দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে।ইয়ারাবী ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বিছানায় যেয়ে বসে,হঠাৎ চোখ যায় টেবিলের উপর যেখানে আবরারের ফোনটা রাখা।ও ফোনটা হাতে নিয়ে লকটা খুলে ভিতরে ঢোকে।ওকে আবরার আগে থেকেই পিন বলে রেখেছিলো তাই ওর অসুবিধা হয়না।তবে কখনো ও আবরারের ফোন নেয়নি,কিন্তু আজ সামনে থাকায় দেখতে ইচ্ছা করলো।কী মনে করে সোজা গ্যালারীতে ঢুকে,কিন্তু যা দেখে তাতে ওর চোখে বিষ্ময় ভর করে।কেননা আবরারের গ্যালারীতে বেশির ভাগ ছবি ওর ঘুমন্ত অবস্থার নয়তো অগোচরে তোলা।আর কিছু দেখতে যাবে তখনি আবরার ওর হাত থেকে মোবাইলটা টান মেরে নিয়ে রাগী কন্ঠে বলে,
-“ফোনে কী করছিলে তুমি?”
-“ক..কিছুনা,এমনি দেখছিলাম।স্যরি আপনার অনুমতি ছাড়া ধরেছি।এমনটা আর হবেনা।”

আবরার ওর কথা শুনে হেসে দিয়ে বলে,
-“পাগলী,আমার জিনিস ধরতে অনুমতি নিতে হবেনা।তবে এসব এই মুহুর্তে তোমার জন্য ঠিক নয়,কাল না চোখে ব্যাথা করছিলো।”
-“সেটা বললেই হয়,সব সময় ভয় দেখান খালি।জানেন আজ রেজাল্ট দিয়েছে,ফোন নেই তাই কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারিনি যে পাশ করতে পেরেছি নাকী?চিন্তা হচ্ছে,আদেও কিছু করতে পারবো তো।”
-“কেউ তোমাকে ক্রেডিট দেয় না বলে কখনও দুর্দান্ত কাজ করা বন্ধ করবে না।আমি আশা করি এটি এর জন্য ইচ্ছুক। এটির জন্য স্বপ্ন দেখো। তবে সব উপায়ে: এটি করো!”
-“আমার মনে হচ্ছে ফেল করবো।”
-“একটু বেশিই চিন্তা করো,তোমার দেবর এসে জানিয়ে দিবে কী হয়েছে রেজাল্ট?এসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলো,আমি খাবার আনতে বলছি।”
-“আজ সবার সাথে করি।”
-“একা নিচে পর্যন্ত যাবে।”
-“প্লীজ আমি পারবো।আপনি বেশি রোগী বানিয়ে দিচ্ছেন মি.বর।”

আবরার হেসে ওর নাকটা টেনে দেয়।

(১৭৩)

-“আমি তখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ড,তাই নতুন ফোন কিনে দিয়েছিল বাবা-মা। নতুন ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খুলেছিলাম। সেখান থেকেই ওর পরিচয় হয় দীগন্ত নামের এক ছেলের সাথে।পরিচিত হয়ে বন্ধুত্ব আর সেখান থেকে ভালোবাসা।প্রথম দুই মাস সম্পর্কটা বেশ ভালোই চলছিলো।আমি ওকে প্রচন্ড ভাবে ভালোবাসতে শুরু করি। প্রতিদিন দেখা করা, কথা বলা যেন একটা রুটিনে পরিণত হয়েছিল।যার জন্য মাঝে মাঝে ক্লাস ফাঁকিও দিতাম।কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই দীগন্তের মাঝে পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম।প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও পরে বিষয়টা একটা খটকা লাগতো।আমার এক্সট্রা কেয়ার যেন দীগন্তের ভালো লাগতোনা। তাই একটু কিছু হলেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করতো।প্রতিদিন চোখের জল ফেলা ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রাতের পর রাত জেগে থাকতাম শুধু দীগন্তের সাথে কথা বলবো বলে। কিন্তু দীগন্তের কোনো ফোন আসত না।আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম ও অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে।সবকিছু জানার পরেও শুধু চেয়লেছিলাম ওর ভালোবাসা। এভাবে ছয়মাস চলার পর এমন একটা শর্ত দীগন্ত দেয় যার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলাম না। একদিন দীগন্ত ফোন করে বলে,
-“তোমার ন্যাকামু আমার একদম ভালো লাগেনা।তবুও তোমার সাথে সম্পর্ক ভাঙতে ইচ্ছা করছেনা,থাকবো তোমার সাথে।কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।যদি তুমি শর্ত মানো তবে আমি থাকবো তোমার সাথে।”

আমি এক সেকেন্ডও না ভেবে বলে দিলাম,
-” কি শর্ত বলো। আমি তোমার সব শর্ত মানতে রাজি।”
-“তুমি তোমার কিছু হট পিক আমাকে দিতে হবে।”

সেকেন্ডের জন্য আমার দুনিয়া থেমে গিয়েছিলো। যাকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি আর সে কীনা আমার…..কিন্তু কথায় বলেনা,ভালোবাসা এমন এক জিনিস যা পাওয়ার জন্য মানুষ মরিয়া হয়ে ওঠে,হিতাহীত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে,সম্পূর্ন অন্ধ হয়ে যায়।আমারও ঠিক তাই হয়েছিলো,ওর একটু ভালোবাসাকে আটকে রাখার জন্য তার অশ্লীল শর্ত পূরন করতে হবে?ঠিকবে তো এই ভালোবাসা?নাকী দীগন্তের দেওয়া কোনো ধোঁকা হবে সেটা?
এসব কিছু না ভেবে নিজের সাথে যুদ্ধ করে দীগন্তের কথা মতো কিছু ছবি পাঠায়। তারপর দুমাস আর কোনো সমস্যা হয়নি।তবুও ও আমাকে লুকিয়ে অন্য রিলেশন করত।জানলেও কিছু বলতাম না,বড্ডো ভালবাসতাম যে। কিন্তু সমস্যাটা হয় তখন,যখন বাসায় ব্যাপারটা জেনে যায়। মা দীগন্তকে অনেক বকাবকি করে সাথে আমাকেও। কেউই চাইছিলো না আমরা একসাথে হই। সবার সাথে লড়াই করে চেয়েছিলাম সম্পর্ক যাতে শেষ না হয়। কিন্তু দীগন্ত শেষ পর্যন্ত ছেড়ে চলে যায়। পাগল প্রায় আমি,ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারছিলাম না, হয়তো ও নিজেও চাইছিলো না যোগাযোগ রাখতে।এসব সহ্যের বাইরে চলে গেছিলো, সুইসাইড করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি। একপর্যায়ে ঢাকায় নিয়ে এসে সাইক্রেটিস দেখানো হয়। কাউন্সিলিং এর পর ও কিছুটা স্বাভাবিক হই। তিন মাস যাওয়ার পর পুরোপুরি ভালো হলে আমাকে ফোন ফেরত দেয়।
এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারি আমার কিছু ছবি ভাইরাল হয়েছে। ইনবক্সে সবাই ছবি দিয়ে বিভিন্ন বাজে বাজে কথা বলতে থাকে।ছবিগুলো দেখে চমকে যায়,ভাবতে পারিনি এসব আমার সাথে হবে।কারণ এই সেই ছবি যা দীগন্তকে দিয়েছিলাম।ভালোবাসার নামে ধোঁকাটা লিখে দিলো।মরে যেতে চেয়েছিলাম,কিন্তু পরিবারের জন্য পারিনি।তাই এখনো বেঁচে আছে।রংপুরের অনেকেই ব্যাপারটা জানে।

আপনাকে আমি কথাগুলো এই জন্য বললাম যে আপনার পরিবার আমাকে পছন্দ করেছে,আমি কাউকে ঠকাতে চাইনা।তাছাড়া আমাকে আপনার পছন্দও নয়।”

অনু এতক্ষণ ধরে ওকে দেখতে আসা পাত্রপক্ষের ছেলে অভিরুপ অর্থাৎ যার সাথে অনুর বিবাহ্ হবে তার সাথে নিজের অতীতের কথাগুলো বললো।কারণ ও চাই যে ওর পুরো অতীত শুনে গ্রহন করতে চাইবে তাকেই জীবন সাথী বানাবে।

আজ ভার্সিটি থেকে অনেকটা হাসি-মুখে বাড়ি ফেলে অনু।পরীক্ষায় টপের মধ্যে চতুর্থতে অবস্থান করেছে, আর প্রথমে আছে মেঘ।অনু বাড়িতে ঢুকতেই ওর মা ওর হাতে একটা শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে চেন্জ করে সেজে নিতে বলে।কেননা একটু পরে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।অনু একগাদা বিরক্তি সহকারে শাড়িটা নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।টানা দু’ঘন্টা পরে পাত্রপক্ষ আসে।অনুকে ওর মা পাত্রপক্ষের সামনে নিয়ে গেলে পাত্রের মা প্রথম প্রশ্ন করে,
-“তুমি রান্না করতে পারো?”

অনু সোজা ভাবে উত্তর দেয়,
-“জ্বি পারি,একা থাকি বেঁচে থাকার জন্য খাবার রান্না করে খেতে হয়।”

-“ওহ্হ্,তা তো ঠিক তবে একটু বেশি কথা বলো।এই ফ্লাটে কী একাই থাকো।এমন যুগে একা মেয়ে সাহস আছে বলতে হয়।তা কী নিয়ে পড়াশোনা করছো?”
-“আইন নিয়ে।”

অভিরুপের বাবা বলে উঠে,
-“বিয়ের পরে কিন্তু লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হবে।”
-“কী?”
-“হ্যাঁ,তাছাড়া বিয়ের পরে পড়ে করবে কী?বিয়ের পরে কোনো মেয়েই লেখাপড়া করেনা,ঘর-সংসার করবে।”

অনুর বাবা অভিরুপের বাবার দিকে তাকিয়ে বলেন,
-“এসব কী বলছেন আপনি?”
-“জ্বি ঠিকই বলছি,কেন ঘটক আপনাদের বলেনি।”

অভিরুপের মা একটা মিষ্টি মুখে দিয়ে বলে,
-“দেখেন দাদা,আমাদের একটাই ছেলে।তাই আমরা চাই ওকে বিয়ে দিয়ে বৌয়ের সেবা-যত্ম নিতে।আমাদের কিন্তু তোমাকে বেশ পছন্দ হয়েছে।তা তুমি অভিরুপের সাথে যেয়ে একটু কথা বলো আমরা বিয়ের ব্যাপারে তোমার বাবার সাথে কথা বলছি।”

অনু ওর বাবার দিকে তাকায়,ওর বাবা ইশারায় বলে তোমার পছন্দ ছাড়া হবেনা।যাও ওর সাথে।অনু একটা নিঃশ্বাস অভিরুপকে নিয়ে নিজের রুমে যেয়ে কথা বলতে থাকে।আসলে ওর নূন্যতম ইচ্ছা হচ্ছেনা ছেলের সাথে কথা বলার,উঁচতা অনুর থেকে দু’আঙ্গুল উপরে হবে,ফর্সা গায়ের রং,চুলগুলো ছোট ছোট করে কাঁটা,কপালের বাম পাশে কাঁটা দাগ,পেশার একজন অঙ্কের প্রফেসর।

অভিরুপ সবটা শুনে রেগে বলে,
-“এতবড় ধোঁকা,তোমার বাবা-মা লুকিয়ে আমার ঘাড়ে ঘছাতে চেয়েছিলো।তোমার আমাকে পছন্দ হয়নি কিন্তু তোমার মতো মেয়েকে বিয়ে করতে আমার বিন্দু মাত্র ইন্টারেস্ট নেই।আরে তোমাকে বিয়ে করবে কে?ধোঁকাবাজ পরিবার।”

কথাটা শুনে অনুর প্রচুর রাগ হয়,অভিরুপ এমন ব্যবহার করছে যে সব লুকিয়ে অনুর সাথে বিয়ে দিয়েছে।অনু রেগে হিতাহিত জ্ঞান ভুলে জোরে একটা থাপ্পড় মারে অভিরুপের গালে আর বলে,
-“আপনাকে ঠকালো কখন,যাতে না ঠকেন তার জন্যই তো সবটা খুলে বললাম।ওটা ছিলো আবেগের বয়স,যা ভুলের বসে হয়ে গেছে।এখানে আমার পরিবারকে ধোঁকাবাজ বলার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে।আপনার মতো নিচু মনের মানুষকে বিয়ে করার নূন্যতম ইচ্ছা আমার নেই, কেমন নিচু মনের মানুষ সেটা আপনার বাবা-মায়ের কথা শুনে বুঝতে পেরেছি।বেশি কথা বাড়ানোর আগে আপনি আর আপনার পরিবার আমার ফ্লাট থেকে চলে গেলেই খুশি হবো।”

অভিরুপ গটগট করে রেগে রুম থেকে বের হয়ে ওর বাবা মায়ের সামনে যেয়ে বলে,
-“মা চলো এখান থেকে,এমন বেয়াদব মেয়েকে বিয়ে করতে চাইনা।এরা সবাই প্রতারক,না আছে মেয়ের চাল আর না আছে চুলো।”

অনুর বাবা উঠে দাঁড়িয়ে অভিরুপকে একটা চড় মেরে বলে,
-“তোমার মতো ছোটলোকের ঘরে আমার মেয়ের বিয়েও দিবোনা।”

অভিরুপের বাবা-মা উঠে দাঁড়িয়ে রাই রাই গলায় বলে উঠে,
-“আপনার সাহস তো মন্দ নয় আমাদের ছেলেকে মারলেন?”
-“চুপ,আপনাদের সাহস কীভাবে হলো আমার মেয়েকে বাজে কথা বলা।কাদের কী বলছি?যারা বাড়ির বৌকে সম্মান দিতে পারেনা,যাদের চিন্তা-ভাবনা নিচু তারা কখনো ভালো মানুষ হতে পারেনা।বেড়িয়ে যান বাসা থেকে।”

অভিরুপের মা মুখ বাঁকিয়ে বলে উঠলো,
-“যাচ্ছি যাচ্ছি,আমরাও এক মুহুর্তে আপনার বাড়িতে থাকতে চাইনা।এই চলো এর থেকে হাজার গুন ভালো মেয়ে পাবো।”

ওরা চলে গেলেই অনুর মা ওর কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“তুই বুঝি….”
-“মা আমি চাইনা কাউকে ধোঁকা দিতে।আজ লুকিয়ে বিয়ে হলো,বিয়ের পর যদি জানতে পারে তখন।তাই আগে থেকেই সব বলেছি।যে মন থেকে সব মেনে নিবে তাকেই বিয়ে করবো।”
-“এমন ছেলে আদেও আছে নাকী?”
-“আছে,পৃথিবীতে এখনো ভালো মানুষ মরে যায়নি।আচ্ছা খাবার দাও তো,পেটে ইন্দুর ছুটছে।”
-“দিচ্ছি,তুই চেন্জ করে আয়।”
-“করবো,আগে কয়টা ফটো তুলেনি।ওই পেত্মীরে পাঠাতে হবেতো।”
-“তোরা পারিস ও বটে।”

অনুর বাবা-মা হাসতে হাসতে ঘরে চলে যায়।অনু মন খারাপ না করে সোফায় বসে একেক পোজে ছবি তুলতে থাকে।

(১৭৪)

সন্ধ্যার দিকে মেঘ বাসায় ফিরে দেখে সবাই ডাইনিং এ বসে গল্প করছে শুধু ইকরা আর ইয়ারাবী বাদে।জারবা মেঘকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে মাজায় হাত দিয়ে বলে,
-“আজ তোমার রেজাল্ট দিয়েছে সেটা বলোনি কেন ভাইয়া?”

মেঘ বিরবির করে বলে,
-“আজকাল সব দেখি ফোরজি স্প্রীডে চলছে।তোকে কে বললো?”
-“বাড়িতে তুমি ছাড়া আরো একজন থাকে।তোমার বান্ধুপি ছোট ভাবী বলেছে।এখন বলোতো দেখি কী করেছো বাপু?”

মেঘ জারবার চুল টেনে বলে,
-“পাকা কথা কোথায় শিখছিস তুই?আর যা হই বরাবর তাই হয়েছি।”

মিসেস রায়হান মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আলহামদুলিল্লাহ্‌,খুব খুশি হয়েছি।ইয়ারাবীরটা জানিস,ওর রেজাল্ট কী?”
-“দেখেছি বড় আম্মু,বেশি ভালো নয় আবার খারাপও নয়।”

আবরার ভ্রু কুচকে বলে,
-“মানে?”
-“নাম্বার বেশি ভালো আসেনি।টপ টেনের বাইরে, বারোতে এসেছে।”

আবরারের কিছুটা খারাপ লাগে।মিসেস রায়হান খুশি মুখে বলে উঠে,
-“আলহামদুলিল্লাহ্‌,আল্লাহর কাছে কোটি কোটি সুকরিয়া যে বারোতে আছে।ওর জায়গায় অন্য কেউ হলে আরো বেশি খারাপ করতো।”
-“ইয়ারাবী ঘরে আমি যেয়ে দেখা করে আছি।”

মেঘ রুমে যেয়ে দেখে ইয়ারাবী বসে ইকরার সাথে কথা বলছে।মাথার ব্যান্ডেজটা খোলা,সেলাই কাঁটা হয়েছে।মেঘকে দেখেই ইয়ারাবী হাসি মুখে বলে উঠে,
-“মেঘ,রেজাল্ট কী তোর?আমারটা দেখেছিস, আর অনুর খবর কী?”
-“থাম থাম থাম,একসাথে এতগুলো প্রশ্ন।শোন অনু ফোর্থ পজিশনে আছে,আমারটা প্রথম আর তোর….”

ইয়ারাবী ওর কথা শুনে কিছুটা মন খারাপ করে বলে,
-“কী বল?ফেল করেছি নাকী আমি?”
-“আরে ফেল কেন করবি তুই?মন খারাপ করছিস কেন,শোন বেশি ভালো হয়নি বারোতে আছিস।”
-“কী?আলহামদুলিল্লাহ্‌,পাশ তো করে গেছি।”
-“আস্তে কথা বল নয়তো ব্যাথা করবে।আচ্ছা আমি রুমে যাচ্ছি।”

আবরার কফি খেতে খেতে রুমে ঢুকে সোফায় বসে।ইকরা ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এখানে কী করছো তুমি?”
-“তোমাকে কেন বলবো?ভাইয়া ডাকছে….”
-“তোমার ভাইয়ের ডাকা মানে আমার উপর খাওয়ার টর্চার।ইয়ারাবী তুই থাক পরে এসে গল্প করবো।”
-“আচ্ছা আপু….”

ইকরা চলে যেতেই আবরার কফি শেষ করে কাপটা টেবিলে রেখে ইয়ারাবীর সামনে বসে।ইয়ারাবী কিছুটা ভ্রু কুচকে বলে,
-“কী হয়েছে?”
-“রেজাল্ট পেয়ে খুশি?”
-“বেশি ভালো হয়নি,এমন মার্কস্ পেলে জীবনে কিছুই হবেনা।”

কিছুটা হতাশ কন্ঠে কথাটা বলে উঠলে আবরার মুচকি হেসে বলে,
-“চিন্তা করছো কেন?তাছাড়া আল্লাহ যা দেয় সেটাতে খুশি থাকতে হয়।এবার সমস্যা ছিলো তাই, আর স্বপ্ন পূরণে কখনই বিরত থাকবে না,কারণ এটি অর্জনে সময় লাগবে।।আচ্ছা শোনো,তোমার য়ুহার আপু ফোন করেছিলো।”
-“কী আপু ফোন করেছিলো আর আপনি এখন বলছেন।”
-“তুমি ফোনে কথা বলতে পারতেনা।আমি বুঝতে পারছিনা বাকীদের তুলনায় তুমি এতটা কাহিল হয়ে পরছো কীভাবে?”

আবরার কিছুটা চিন্তিত কন্ঠে কথাটা বললে ইয়ারাবী উঠে আবরারের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
-“এসব শুধু আপনারই মনে হচ্ছে,কেননা আপনি আমাকে নিয়ে বেশি চিন্তা করছেন।আগে বলুন আপু কী বললো?”
-“কাল তোমার আপুর গায়ে হলুদ।”

ইয়ারাবী অবাক হয়ে বলে উঠে,
-“কী?আপু যে বললো আরো পরে করবে।”
-“হ্যাঁ,সেটাই জানতাম।তবে তোমার দোলাভাইয়ের দাদা খুব অসুস্থ।উনার শেষ ইচ্ছা শৈল ভাইয়ার বিয়েটা দেখা।”

ইয়ারাবী অনেকটা খুশি খুশি মুখে আবরারের দিকে চেয়ে বলে,
-“সে যাইহোক আমি তো যাচ্ছি তাইনা।”
-“উহু,আমরা যাচ্ছিনা।বিয়েটা রংপুরে হবে তুমি জার্নি করতে পারবেনা।”
-“প্লীজ আবরার এমনটা করবেন না।আমি যাবো, আমার ইচ্ছা আপুর বিয়েটা দেখা।জানি মজা করতে পারবোনা,কিন্তু তবুও।”

আবরার ইয়ারাবীকে দুই বাহুডোরে আবদ্ধ করে বলে,
-“না সোনা,বোঝার চেষ্টা করো।আপু বলেছে এমন কী সবাই চায় তুমি যাও।কিন্তু আমি জানি তোমার অবস্থা কেমন।নরমাল সময় তোমার জার্নিতে সমস্যা হয়,আর এখন তো এই অবস্থা।”

ইয়ারাবী কেঁদে দেবে এমন অবস্থা,চোখের জল চিকচিক করছে।
-“প্লীজ আমাকে নিয়ে চলুন না।আপু কী রংপুরে?”
-“না,রাতে রওনা দিবে।”
-“আবরার প্রমিস্ করছি কোনো ছুটাছুটি করবোনা,প্লীজ চলুন না।”

-“এত ঘাড়ত্যাড়া কেন তুই?পথে না হয় ব্রেক নিবি, মেয়েটা এতো করে বলছে।”
-“মম্ তুমি…”
-“আমি এতকিছু বুঝিনা,মেয়েটা কাঁদছে।সকালে বেড়িয়ে পরবি।আর একটা কথাও নয়,আমরাও যেতাম তবে কাজ আছে।তুই জারবা আর মেঘকে নিয়ে যাস সাথে।আর ফলগুলো ওকে খাইয়ে দে।”
-“তুমি যে কেন দজ্জাল শ্বাশুড়ি হলেনা?”
-“মেরে একদম সোজা করে দেব ফাজলামি করলে।আর ইয়ারাবী মন খারাপ করিস না,ওর নিয়ে যাবে মানে যাবে।”
-“বৌ-শ্বাশুড়ি এক হলে আমি কে?ঠিক আছে মহারানীকে নিয়ে যাবো।”

(১৭৫)

ডিনার শেষে সবাই রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।কিন্তু ইয়ারাবীর চোখে ঘুম নেই।পাশে শোয়া আবরারের চাপ দাঁড়ি ধরে বাম হাত দিয়ে টানছে।আবরার হাত সরিয়ে দিলেও একই কাজ করছে।
-“কী করছো তুমি এসব?আমার রাগ হচ্ছে কিন্তু ঘুমিয়ে পরো।”
-“আসেনা তো মি.বর।”
-“মি.বর তার মানে মাথায় কিছু চলছে।”
-“হ্যাঁ,চলছে তো,বলবো…”
-“আগে তুমি দাঁড়ি ছাড়ো।ব্যাথা পাচ্ছি তো…”
-“আপনার দাঁড়িগুলো এত কিউট কেন?আর চোখগুলো বিড়ালের মতো সবুজ কেন?আচ্ছা আপনার সাথে আমাকে কিন্তু একদম মানায়না তাহলে বিয়ে হলো কেন?”

আবরার ওর দাঁড়ি থেকে ওর হাতটা সরিয়ে দিয়ে বাম হাতের উপর ভর দিয়ে উঁচু হয়ে ওর মুখে ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে হালকা চেপে ধরে বলে,
-“কতদিন ধরে চড় খাওয়া না?”

ইয়ারাবী ডানহাতের আঙ্গুল গুনে বলে,
-“হাসপাতালেও তো একটা খেয়েছি।”

আবরার দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-“আরো একটা দিবো?”
-“না না দরকার নেই।একটা খেলে দু’দিন ধরে মুখে ব্যাথা থাকে,আপনার মনে তো দয়া-মায়া নেই ঠাস ঠাস করে চড় বসিয়ে দেন।”
-“আচ্ছা,তো দয়া মায়া কোথায় আছে শুনি?”
-“দেখুন এবার বকলে আমি কিন্তু আম্মুকে বলে দিবো।”
-“পারো শুধু মমের ভয় দেখাতে।”
-“তো কী করবো,আপনার বুকে ছাড়া ঘুম আসেনা।কিন্তু তা তো নিচ্ছেন না এখন?তাই জ্বালাতে ভালো লাগছে”

আবরার ওর এমন কথা শুনে হেসে দিয়ে বলে,
-“বাহ্ আগে তো কথায় বলতে না,হঠাৎ এই কয়েকদিনে কী হলো?আর বাম পাশে তো ঘুমাতে পারছোনা।সেদিন ঘুমের ঘোরে ঘুরে কী অবস্থা হয়েছিলো।”
-“ভালোবাসি।”
-“আমিও,আল্লাহর কাছে অনেক অনেক সুকরিয়া যে তোমার মতো জীবন সঙ্গী পেয়েছি।সঠিক ব্যক্তির সাথে বিবাহ করতে হয়।এই একটি সিদ্ধান্ত তোমার নব্বই শতাংশ সুখ বা দুর্দশা নিশ্চিত করে।আর আমার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।”
-“এই কারনে এতো সুন্দর ব্যবহার করেন।”
-“উহু,স্ত্রীর প্রতি ব্যাবহার যেমন হওয়া উচিত আমি ঠিক সেটাই করি।
জানো“রাসুল(ﷺ) বলেছেনঃ ‘আমার কাছ থেকে মেয়েদের প্রতি সদাচারণ করার শিক্ষা গ্রহণ করো। কেননা, নারী জাতিকে পাঁজরের বাঁকা হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে ওপরের হাড়টাই সবচেয়ে বাঁকা। অতএব, তুমি যদি তা সোজা করতে চাও, তবে ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনাই রয়েছে। আর যদি ফেলে রাখো, তবে বাঁকা হতেই থাকবে। কাজেই মেয়েদের সাথে সদ্ব্যবহার করো।( বুখারী, মুসলিম,রিয়াদুস সলিহীন :: হাদিস ২৭৩)
আরো আছে,এর মধ্যে সূরা আল-ফুরকানে রয়েছে,
“হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল ও হৃদয় ঠান্ডাক কারি হবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন।”
(সূরা আল-ফুরকান – ২৫:৭৪)”

#চলবে_____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here