জীবন মানে তুমি পর্ব-৫০

0
4124

#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Rini (Irini Ori)
#পর্ব:৫০

(১৭০)

মানুষ সব সময় বলে যে সময় বদলে যায়, আসলে এগুলো নিজেরাই পরিবর্তন করতে হয়।আমাদের সবার জীবন দুটি,দ্বিতীয়টি শুরু হয় যখন আমরা বুঝতে পারি আমাদের কেবল একটি আছে।জীবন সমস্যা সমাধানের নয়, অভিজ্ঞতার বাস্তবতা।ইজি চেয়ারে চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে ডান হাতের আঙ্গুল দ্বারা পেন্সিল ঘুড়াচ্ছিলো আর দুপুরের কথাগুলো ভাবছিলো আবরার।আসলে দুপুরে যখন মি.ফুয়াদ আর মিসেস ইশানির সাথে কথা হয় তখন থেকে আরো বেশি চিন্তা হচ্ছে ওর।কেননা মি.ফুয়াদ যা বলেছেন সেটা শুনে নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগছে তাহলে ওই মেয়ের উপর কেমন প্রভাব পড়েছে।

দুপুরে যখন উনারা কথা শুরু করবেন এমন সময় জারবা কলেজ থেকে এসে হেলেদুলে বাড়িতে প্রবেশ করে।জারবা উনাদের দেখে সালাম বিনিময় করে একটু কথাবার্তা বলে।আবরার ইয়ামিলাকে জারবার সাথে ওর রুমে যেতে বলে।কারন এমন ধরনের আলোচনায় মধ্যে বাচ্চাকে রাখা ঠিক
হবেনা, তাছাড়া ওই সময় ইয়ারাবীর ব্যবহারে ও অনেকটা ভয় পেয়ে গেছিলো।জারবা ওকে সাথে নিয়ে বকবক করতে করতে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।

আবরার হালকা গলাটা ঝেড়ে বলে,
-“এবার বলুন আব্বু,আসল সমস্যাটা কোথায়?আপনারা কেন ওকে সহ্য করতে পারেন না।আমি যদি এখন আপনাদেরকে ওর পছন্দ নিয়ে প্রশ্ন করি তো নিঃসন্দেহ আপনারা তার উত্তর দিতে পারবেন না।”

মিসেস ইশানি ওর দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলেন,
-“যা বলছো তার অস্বীকার আমররা করতে পারবোনা।কারন আমরা সত্যিই জানিনা ওর পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারে।আমরা জানিনা আসলে ও কী চায়?আর না জানি ওর মনের অবস্থা,আসলে কোনোদিন ওর মা হয়ে উঠতে পারিনি।”
-“বিষয়টা খুব অদ্ভুদ না আম্মু।আপনাদের মেয়ে আর আপনারা জানেন না।”

কথাটা বলে অনেকটা বিদ্রুপের সাথে হাসলো আবরার।মি.ফুয়াদ মাথা নিচু করে বলেন,
-“অদ্ভুত হলে এটাই সত্য।তবে আজ একটা সুযোগের অপেক্ষা মেয়েকে কাছে পাওয়ার।অনেকদিন হলো আব্বু ডাক শুনতে পায়নি ওর মুখ থেকে।”

আবরার মুচকি হেসে বলে,
-“সুযোগ গ্রহণ করা! সমস্ত জীবন একটি সুযোগ। যে লোকটি সবচেয়ে বেশি দূরে যায় সে হ’ল সেই ব্যক্তিই যা করতে এবং সাহস করতে ইচ্ছুক।”

মি.ফুয়াদ ওর কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“মানে বুঝলাম না তোমার কথা।”

আবরার হালকা হেসে বলে,
-“ছাড়ুন এসব।পুরো ঘটনাটা বলুন।”

মি.ফুয়াদ পূর্বের ন্যায় মাথা নিচু করে বলতে শুরু করেন,
-“এটা প্রায় আঠারো বছর আগের কথা।আমাদের বিয়ের চার বছরের মাথায় ইস্মা হয়।জানো সেদিন গ্রামের বাড়িতে গেছিলাম ইস্মিতাকে নিয়ে।কারন আমার মা ইস্মিতাকে দেখতে চেয়েছিলো।আর যেদিন সন্ধ্যা বেলায় জানতে পারলাম একজন নতুন অথিতি পৃথিবীতে আসতে চলেছে।কতটা খুশি হয়েছিলাম বলে বোঝাতে পারবোনা।হতে পারে বাবা হওয়ার আনন্দ এটাই।আমার বাবা মানে তোমার দাদা শ্বশুড় পুরো গ্রামে মিষ্টি পাঠিয়েছিলো।কিন্তু তার পরেরদিন এমন একটা ঘটনা ঘটলো যা সবার প্রত্যাশার বাইরে ছিলো।”

আবরার খানিকটা কৌতুহল হয়ে বলে উঠে,
-“কী হয়েছে সেদিন?”

মি.ফুয়াদ খানিকটা নরম সুরে ভেজা ভেজা কন্ঠে বলে উঠে,
-“আমার মা মারা গেছিলো।রাতে কত আনন্দ করলাম,মা ছিলো গ্রামের মানুষ।আধুনিকতার ছোঁয়া তেমন বুঝতো না আর না করতে চাইতো।সে কুসংস্কার বিশ্বাস না করলেও আমাদের ব্যাপারে খুব সাবধান থাকতো।ইস্মা হবে শুনে উনি মসজিদে সিন্নি দিতে চেয়েছিলেন পরের দিন,যাতে করে বাচ্চার কোনো ক্ষতি না হয়।ও আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি।”
-“কী কথা?”
-“তোমার দাদিশ্বাশুড়ির ঘাড়ে জ্বিন ছিলো।তাদের সাহায্যে অনেকের ভালো করেছিলো আবার অনেকের মিথ্যা ফাঁস করেছিলো।মায়ের ঘাড়ে যারা ছিলো তারা একদিন বাবার কাছে মায়ের মাধ্যমে বলেছিলো, মা মারা গেলে এই পরিবারের কোনো একজনকে তারা মায়ের মতো ধরবে।প্রথমে ওর ফাতেমার কথা বলেছিলো।কিন্তু বাবা মানতে নারাজ,তখন তারা বলেছিলো এই বংশের প্রথম মেয়েকে চাই তারা।কিন্তু বাবা এমনটা কিছুতেই চাননা,উনি বুঝতে পারেন মা থাকতেই উনাদের তাড়াতে হবে।যখন বাবা মাকে বিষয়টা বলে তখন মা অনেক কিছুর মাধ্যমে ওনাদের বিষয় বুঝায়,নিজেকে মুক্ত করে।এটা ঘটেছিলো আমাদের বিয়ের দুই বছরের মাথায়।উনাদের দ্বারা কোনোদিন আমাদের কোনো ক্ষতি হয়নি,উনারা মাকে ছেড়ে যেতে চাইছিলোনা।উনারা ভালো ছিলো বলেই কিছু জিনিসের বিনিময়ে চলে গেছিলো।কিন্তু সেটা ছিলো আমাদের কাল।”
-“কিন্তু এর সাথে আপনার মেয়ের কী সম্পর্ক?উনারা বলেছিলো উনারা আর আসবেনা।”
-“হ্যাঁ,বলেছিলো কিন্তু মাকে কিছু মেনে চলতে বলেছিলো।কেননা খারাপ জ্বিনেরা মায়ের ক্ষতি করতে পারে।দুই বছর মা এসব বিধি নিষেধ মেনে চলছিলো।পরদিন মা মসজিদে সিন্নি দিবে বলে মাগরিবের পর হুজুরের সাথে কথা বলে রাখতে চেয়েছিলো।মা ছিলো প্রচুর সাহসী,রাতে একা চলাচল করা মহিলা ছিলো সে।কিন্তু সেই জ্বিনেরা মাকে সন্ধ্যার পর বাড়ির সীমানার বাইরে পা রাখতে মানা করেছিলো,এটা ওইদিন মা সহ আমাদের কারো মনে ছিলোনা।সে একাই একটা হারিকেন জ্বালিয়ে হুজুরের সাথে নামায পর দেখা করে আসে।কিন্তু আসার সময় তার হারিকেন নিভে যায়,আর দ্রুত বাড়ির ফেরার জন্য বাঁশ তলার ভিতর দিয়ে আসে,যেখানে রাতে চলাচল নিষিদ্ধ ছিলো।রাতে দিকে সবাই মিলে জিনিসগুলো গুছিয়ে রাখে।তারপর শুতে চলে যায়।কিন্তু পরেরদিন সকালে বাবা এসে মাকে ডাকলে ভিতর থেকে কোনো সারা না পাওয়ায় দরজা ভেঙে ঢুকে দেখি মা মরে পরে আছে।”

আবরার অনেকটা অবাক হয়ে বলে,
-“আপনার বাবা কোথায় ছিলো?”
-“আমাদের অনেক জমি-জমা ছিলো,তার জন্য রাতে দেখাশোনা করতে হতো।তাই ওইদিন বাবা আর ফাতিন জমিতে ছিলো।”
-“ওহ্হ্,তারপর….”
-“সবাই অনেকটা ভেঙে পরেছিলো।মা মারা যাওয়াটা অনেক অস্বাভাবিক ছিলো,মায়ের গালে অনেক গভীর হাতের ছাপ পরে ছিলো।প্রথমে আমরা কেউ বুঝতে পারিনি।ফাতিনের বৌ ছিলো গ্রামের মানুষ,ও চিৎকার করে বলছিলো পেটের সন্তানের জন্যই এমনটা হয়েছে,ও অপয়া-অলক্ষ্মী, কারোর জন্য শুভ নয়,যার জন্য মা মারা গেছে।গ্রামের অর্ধেক মানুষও তাদের কথায় তাল মিলিয়ায়,কেউ কেউ বলে আসতে না আসতে এমন হয়েছে,হলে তো আরো কীনা কী করে?আমার এক চাচীতো ওই সময় বলে উঠে বাচ্চাটা ফেলে দিতে।মায়ের শোকে সবাই অসহায়,ঠিক সময় এমন কথা কারোর ভালো লাগেনা।পরে বাবার চিৎকারে সবাই চুপ হয়ে যায়।হুজুর যখন মাকে দেখলো তখন উনার একটুও বুঝতে দেরী হয়নি এটা খারাপ জ্বিনের কাজ।উনি বিষয়টা বলার পর গ্রামের মানুষ অনেকটা শান্ত হয়ে যায়।”
-“তো এটার জন্যই কী….”
-“না,এটার জন্য নয়।ইস্মা হওয়ার পর সব কিছু ঠিকঠাকই ছিলো।এক মা হারিয়ে আরেক মা পেয়েছিলাম।ও ঠিক ওর দাদির মতো চেহারা পেয়েছে।মেয়ে হয়েছে বলে কখনো দুঃখ পায়নি,আমার বাবাও খুব খুশি ছিলো।উনি বলেছিলেন,ঘরে জান্নাত এসেছে ঠিক করে কদর করিস।মাথায় করে রাখতাম মেয়েকে,তবে ও মায়ের কাছ থেকে বেশি আমার কাছেই থাকতো।অফিস বা কোথাও যেতাম তবে ও নিজেও বায়না করতো যাওয়ার জন্য।অনেক কষ্টে ইস্মিতা ওকে বুঝিয়ে বাসায় রাখতো।মেয়েকে অনেক আদরে রাখতাম কেননা জন্মের সময় থেকে ওর জরায়ুতে একটু সমস্যা।
একদিন আমার অফিসে মিটিং ছিলো,সকাল থেকে কান্না ধরেছে আমার সাথে যাবে।কেউ ওকে নিজের কাছে রাখতে পারছেনা,অগত্যা সাথে নিয়ে যেতে হলো।ওই মিটিংটা অনেকটা জুরুরি ছিলো, কিন্তু কোনো ভাবে ওইটা হাত ফোসকে যায়,ডিলটা আমরা পায়না।বললাম না আমার সেই চাচীর কথা,উনি অসুস্থতার বাহানায় আমাদের বাসাতেই পরে থাকতেন,আমার ভাইয়েরাও গ্রাম থেকে প্রায় মাসের পর মাস নানা অযুহাতে বাড়িতে থাকতো।যদিও বুঝতাম কিছু বলতাম না।ডিলটা যখন হয়নি শুনলো তখন উনি ইস্মাকে দোষ দিতে শুরু করলেন।আমার ভাইয়েরা আর তাদের বৌয়েরাও ওইটুকু বাচ্চাকে কথা শুনাতে চাইলো।কিন্তু সাহসে কুলালো না তাদের।বললাম না, যেখানে যেতাম ও সাথে যেতো।এভাবে প্রায় তিন-চারটা অর্ডার আর ডিল হাত ছাড়া হয়ে যায়,কিন্তু দুর্ঘটনাবসত
প্রতিটা সময় ইস্মা আমার সাথেই থাকতো।আসতে আসতে বিজনেস লস,গাড়ি-বাড়ি সবকিছু চলে যেতে থাকে।আশেপাশের মানুষেরা বাচ্চাকেই দোষ দিতে থাকে।সবার কথা শুনতে শুনতে আমাদেরও এক প্রকার তিক্তটা কাজ করা শুরু করল ওর প্রতি।
ও বাকীদের থেকে অনেক আলাদা ছিলো,খুব ছোট বয়সে এমন এমন কাজ করতো যা চোখ ধাঁধিয়ে দিতো।কিন্তু এক প্রকার মূর্খের দল ওকে জ্বিনের আসর,অপয়া নামে দোষ দিতো।এমনি একদিন ভুল বসত আমার ভাইয়ের ছেলে হৃদয়ের সাথে খেলতে খেলতে ধাক্কা লাগলে হৃদয় সিঁড়ি থেকে পরে যায়,ভাইদের সাথে জমি-জমা নিয়ে ঝামেলা চলছিলো।এটাকে নিয়ে আরো বেশি কেন্দ্র তৈরি হয়,ধীরে ধীরে ও সহ্যের বাইরে চলে যায়।ছোট ছোট ভুলও আমাদের কাছে অপরাধ মনে হতো,তাই না চাওয়া সত্ত্বেও গায়ে হাত উঠে যেত।ইশার ভাই-বোন,আমার ভাইয়েরা ওর নামে নানা কথা বলতো।অন্যরা ভুল করলেও দোষটা ওকেই দিতাম।”

মি.ফুয়াদ এতটুকু বলে চোখের পানি মুছলেন।মিসেস ইশানি আবরারের দিকে তাকিয়ে বলেন,
-“শাষন করতে চাইতাম তাই বলে কখন যে শাষনটা শোষনে পরিনত হলো বুঝতে পারিনি।ইস্মিতার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আরো বেশি করে ফেলি।আমাদের কাছে মনে হতো আমরা যা চাই তাই ওকে করতে হবে,কিন্তু ও কী চায় তা কখনো জানতে চাইনা।ওর ভালো চাইতে যেয়ে অনেক খারাপ করে ফেলেছি।মানুষের কথা শুনে গায়ে হাত তুলেছি,কখনো ওর কাছে শুনতে চাইনি ঠিক না ভুল।একপ্রকার ঘুটিয়ে নেয় আমাদের কাছে থেকে।ফাতেমা,মেজো আপু ওকে নিজের মেয়ের মতো আদর করতো,অধিকার দেখাতো সেটা আমাদের কাছে বিষের মতো লাগতো।তবে আজ বুঝছি ওরা যদি ওইটুকু অধিকার না দেখাতো তবে মেয়েটা মরে যেত।যদি ওর ছয় বছর বয়সে আপুকে দিয়ে দিতাম তবে মেয়েটা আজ হাসিখুশি থাকতো।”

আবরার এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে উনাদের কথা শুনছিলো।মিসেস ইশানির কথা থামার সাথে সাথে আবরার বলে উঠে,
-“তবুও ও আপনাদের খুব করে চাইতো।আপনারা কী জানতেন ও আট বছর বয়স থেকে মলেস্টিং এর স্বীকার।যদি ইরাকরা না থাকতো ওকে প্রটেক্ট করার জন্য তবে আপনারা আজ আর মেয়েকে পেতেন না।চৌদ্দ বছর বয়সের ঘটনাটার সত্য-মিথ্যার যাচাই না করে যে ভুলটা করেছিলেন তার জন্য শুধু আপনারা দায়ী।নিজের চাচাতো ভাইয়ের দ্বারা মলেস্টের স্বীকার হতে গেছিলো কিন্তু রক্তের বোন না হলেও সব সময় তাকে প্রটেক্ট করেছে আপনার মেজো বোনের ছেলেরা।আপনার বোন সব সময় নিজের মেয়ের মতো দেখেছে, আপনার দোলাভাই তার মায়ের আসনে বসিয়েছে।বাচ্চাদের মন-মস্তিষ্ক একটা সাদা কাগজের মতো হয় আম্মু,তাকে যা বোঝাবেন তাই বুঝবে,যা দেখাবেন তাই দেখবে।বাচ্চা মস্তিষ্কে যদি ভয় গেথে যায় তবে তা বাইরে বের করা সম্ভব হয়ে উঠেনা।আপনাদের অবহেলার জন্য ও নানা ধরনের সমস্যায় আছে।প্রথমত হলো:
হেডোনোফোবিয়া (আনন্দ-ভীতি): শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটাই সত্যি। এ ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি উপভোগ্য মূহূর্তগুলোকে ভয় পান। তাঁরা আনন্দ পেতে ও প্রকাশ করতে ভয় পান। এ ধরণের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সমাজের সবার থেকে আলাদা থাকতে পছন্দ করেন।সবার থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পছন্দ করে।আনন্দের দ্বারা যদি কোনো ভুল হয়ে যায় তাই।
আগ্রাফোবিয়া (Agraphobia)- যাকে বলে যৌন নিপীড়নের ভয়।যা এই ঘটনার পর থেকে হয়েছে ওর মধ্যে।নিজেকে শক্ত করে গড়ে তুললেও ছোটবেলার ঘটনা মাথায় জেকে বসেছে।
এলটোফোবিয়া (Altophobia) – উচ্চতা ভীতি,যা ওর ভিতর আগের থেকেই ছিলো।কেউ ভয়টা কাটায়নি তাই এখনো ভয় পায়।
এন্ড্রোফোবিয়া (Androphobia) – মানুষের ভয়, লজ্জা লাগলেও বলতে হয় এটা শুধুমাত্র আপাদের জন্য হয়েছে।
এনথ্রোপোফোবিয়া (Anthropophobia) – মানুষের বা মানুষের সঙ্গী হওয়ার বা এ জাতীয় ভয়।ও সব সময় ভয়ে থাকে,বিয়ের এত মাসেও ও শুধুমাত্র ভয়ের জন্য সহজ হতে পারেনি।
এরেখনোফোবিয়া (Arachnophobia) – মাকড়শার ভয়।হ্যাঁ,অনেকেরই আছে এটা,যা মানুষের জন্মগত হয়ে থাকে।
এটিচিফোবিয়া (Atychiphobia) – অকৃতকার্য হওয়ার ভয়।হতে পারে ওর অসফলতা হওয়ার পর আপনারা কখনো ওকে মেরেছিলেন যার জন্য আজও বিদ্যমান আছে।
গ্লসোফোবিয়া (Glossophobia) – জনসম্মুখে কথা বলার ভয়।
সিবোফোবিয়া, সিটোফোবিয়া (Cibophobia, Sitophobia) – খাবারের প্রতি বিরক্তি বা ভয়।ওর সমস্যা হলো ও খেতে চাইনা,অভক্তি এসে গেছে খাওয়ার প্রতি।
জেনোফোবিয়া (Xenophobia) – বিদেশি, অচেনা কিছু বা লোকের ভয়।হামম,এটা শুধু ইয়ারাবী নয় বরং অনেকের আছে।এটা অামার ভাবীরও আছে,তবে সেটা কাবু করতে পারে।
শুধুমাত্র একটা মানুষ এতগুলো ফোবিয়া, ব্যাপারটা বোঝেন।পুরোপুরি মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত।শারীরিক আরো আছে যা আপনাদের অজানা নয়।শুধু এসব নয়,রাতে ঘুমাতে পারেনা ইনসোমিয়া হয়ে গেছে।ঘুমের মেডিসিন দুধের সাথে মিশিয়ে রোজ দিতে হয়।রাতে ভয় পায়,অস্বাভাবিক আচারন করে,প্রচুর ডিপ্রেশনে আছে মেয়েটা।”

উনারা অবাক হয়ে আবরারের দিকে তাকায়।উনারা না চাওয়া সত্ত্বে কত বড় ভুল করেছেন সেটা বুঝতে পারছেন।আজ যেন কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে,মানুষের কু-মন্ত্রনায় আর অন্যের প্রতি না জেনে ন্যায় করতে যেয়ে মেয়েটাকে কালো আঁধারের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।এখন হাজার চাইলেও মেয়েটা তাদের কাছে আসবেনা।আসবেই বা কীভাবে?তারা তো মৃত্যুর পথযাত্রী মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে তার মৃত্যু কামনা করেছে।না জেনে না বুঝে কতটা আঘাত করেছে মেয়েকে।মানুষের বলে একটা ভুল থেকে শিক্ষা হয়।কিন্তু উনারা যে হাজারটা ভুল করেও শিক্ষা নিতে পারেননি।সমস্যা সমাধানের সমস্যাটি হ’ল সমস্যাটি ফিরে আসে।বেঁচে থাকার তাই চমকপ্রদ এটি অন্য কোনও কিছুর জন্য খুব কম সময় দেয়।আপনি অন্য পরিকল্পনা করতে ব্যস্ত থাকাকালীন আপনার জীবন যা ঘটার তা ঘটে যায়।কিন্তু বুঝায় মতো বুঝ থাকলেও তারা তা বুঝতে চাইতোনা।

হঠাৎ দরজায় নক করার আওয়াজে আবরারের ধ্যান ভাঙে।আবরার চেয়ার ছেড়ে উঠে বাইরে বের হয়ে দেখে ফাইকা দাঁড়িয়ে আছে।অনেকটা বিরক্তের সাথে ও প্রশ্ন করে উঠে,
-“এখানে কী করছিস?”
-“না মানে ডিনার টাইম তুমি করবেনা।তোমার শ্বশুড়-শ্বাশুড়িও বসে অপেক্ষা করছে,তাই ফুপু আমাকে ডাকতে পাঠালো।”
-“যা আমি আসছি….”

ফাইকা চলে যেতেই কিছু একটা ভেঙে আবার ফিরে এসে বলে,
-“তোমার বৌ কোথায়?”
-“তোর কী দরকার?আর ও তোর ভাবী হয়,সুতরাং সম্মান দিয়ে বলবি।”
-“গরীবের আবার সম্মান”

কথাটা অনেকটা বিরবির করে বললেও আবরার ঠিক শুনতে পায়।ও কিছুটা হেসে বলে,
-“ইয়ারাবী আমার কী হয়?”

ফাইকা কিছুটা অবাক হয়ে যায়।তবুও সামলে রাগী কন্ঠে বলে,
-“তোমার বৌ,আবার কে?”
-“হ্যাঁ বৌ হয়।আচ্ছা তোর বিয়ের পর সবাই তোকে তোর বাবার পরিচয়ে চিনবে না স্বামীর পরিচয়ে?”
-“অদ্ভুত তো,বিয়ের পর মেয়ের পরিচয় তার স্বামীর পরিচয়ে হয়।এটাই তো বাবা বলে,তখন কেউ জানতে চাইনা বাবা কী করে?বরং জানতে চাই স্বামী কী করে?”

আবরার দু’হাত পকেটে ঢুকিয়ে দরজার কাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠে,
-“একদম ঠিক,তাই তোর এখানে একদম বলা উচিত নয় ইয়ারাবী গরীব।ওর স্বামীর যথেষ্ট টাকা আছে,তাই ওকে কিছু বলার আগে অনেকবার চিন্তা করবি।তুই আমার মামাতো বোন,সব সময় বোনের নজরে দেখেছি।কিন্তু তুই আর তোর মা আমাকে জামাই করতে চেয়েছিলো।দেখ ফাইকা আমার বিয়ে হয়েছে।একজনের স্বামী আমি,আর তাকেই ভালোবাসি।তুই একজন মুসলিম,একটুকু তো বোঝা উচিত।একজন মুসলিম নারী হিসাবে জানা উচিত তোর।নারীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

‘(হে রাসুল! আপনি) ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। সাধারণতঃ প্রকাশমান ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বুকের ওপরে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, বাবা, শ্বশুর, ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, স্ত্রীলোক অধিকারভূক্ত বাদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও (এমন) বালক- যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতিত অন্য কারো সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। (এমনকি) তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তাওবা কর; যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩১)
কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা হলো, মুসলিম নারী-পুরুষ উভয়ে অবৈধ সংস্পর্শ, কথা-বার্তা ও দেখা-সাক্ষাৎ,আসক্তি ও সাজ-সজ্জা থেকে বেঁচে থাকা। নিজেদের দ্বীন ও আত্মসম্মান রক্ষা করা।
সুতরাং প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই ছোট হাদিসটির ওপর আমল করা জরুরি। যার বাস্তবায়নে তিনি মুসলিম উম্মাহকে দিয়েছেন জান্নাতের গ্যারান্টি।
তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের জিহ্বা ও লজ্জাস্থান হেফাজত করবে; আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর নারী-পুরুষ উভয়কে অবৈধ আসক্তি, সম্পর্ক, দেখা-সাক্ষাৎ, কথা-বার্তা ও যৌন লালসা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। (আমিন)
সুতরাং আমার পিছু ঘুরঘুর করার আগে পরকালের চিন্তা একবার করিস।হাদিস কেন শুনালাম জানিস,কারন তোর মধ্যে ইমানের একটুকরো ছিটেফোঁটা নেই।পারলে একজন পূর্ন নারীর মতো চলার চেষ্টা করিস।”

আবরার কথাগুলো বলে ওর পাশ কাঁটিয়ে চলে যায়।ফাইকার কোনোদিকে খেয়াল নেই এখন, আজ পর্যন্ত কেউ ওকে এভাবে কথা বলেনি।ওর বাবা ছোটবেলার বলতো তবে যখন দেখলো মেয়ের কিছু করা সম্ভব নয় তখন আসতে আসতে সরে এলো।সবচেয়ে বেশি ওর মায়ের জন্য কিছু সম্ভব হয়নি,অহংকারের আচ্ছাদনে বড় করেছে ওর মা।ফাইকা কিছু একটা গভীর চিন্তা করতে করতে নিজের রুমে দিকে হাঁটা দেয়।

আবরার নিচে নেমে দেখে সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে।মি.ফুয়াদ আর মি.রায়হান অফিসের কথা বলছে,আর বাকীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে।তবে ওর মামীর মুখটা কিছুটা পুড়ে আছে, মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।ও তেমন একটা তোয়াক্কা না করে বড় ভাইয়ের প্লেট থেকে এক পিচ শশা মুখে পুরে খেতে খেতে বললো,
-“আপনারা বসে আছেন কেন?আমার জন্য অপেক্ষা করার বা কী ছিলো?”

আবীর ওর পিঠে একটা কিল মেরে বলে,
-“তোকে রেখে খাওয়া যায় কীভাবে?”
-“ইয়ারাবী খেয়েছে?”
-“ইকরা ওর খাবার নিয়ে উপরে যাচ্ছে,খাইয়ে দিবে।”
-“এই সময় ভাবীর এসব করার দরকার নেই।আমি ওকে খাইয়ে তারপর খেয়ে নিবো।কী করছে ও?”

ইয়ামিলা আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আপুকে বই পড়তে দেখছি একটু আগে।”
-“কী?এই মেয়ে আমার একটা কথাও শুনেনা।ভাবী খাবারটা দাও তো।”

ইকরা একটা ট্রেতে ওদের দুই জনের পরিমান মতো খাবার সাজিয়ে দেয়।আবরার খাবারটা নিয়ে উপরে যেয়ে দেখে ইয়ারাবী তার ক্লাসের একটা বই পড়ছে।খাবারটা পাশে রেখে ওর হাত থেকে বইটা নিয়ে ওর দিকে রাগী চোখে তাকাই।ওর এভাবে তাকানো দেখে ইয়ারাবী ভয় পেয়ে গেলেও কিছুটা একটা ভেবে ওর ডান পাশে একটা চুমা বসিয়ে দেয়।আবরার অবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে ওর দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-“শরীর ঠিক আছে তো তোমার?”
-“কেন?”
-“একটু আগে কী করলে তুমি?”
-“কেন আপনি জানেনা?পাপ্পি দিয়েছি,আমার বর আমি করছি তাতে আপনার কী?আপনার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির কী?এটা আমার মৌলিক অধিকার,হু…”
-“তোমার হয়েছে কী বলোতো?কাহিনি কী,এমনটা তো করোনা।”
-“করিনা বলে কী কখনো করবোনা।”

আবরার কিছু বলতে যেয়েও বলেনা।ওর পা থেকে মাথা পর্যন্তু দৃষ্টি বুলিয়ে কথা না বাড়িয়ে খাসির মাংস দিয়ে পোলাও ভাত মাখিয়ে ওকে এক লুকমা খাইয়ে দেয়।ইয়ারাবী খেয়ে আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“মি.বর?”

আবরার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে,
-“এটা আবার কেমন ডাক?”
-“আপনি আমার বর,তাই ভাবছি এটা বলেই ডাকবো।”
-“তোমার কী মাথা গেছি একেবারে।পাগলমি করছো কেন?”

ইয়ারাবী আস্তে করে এগিয়ে ওর গলা দু’টো জড়িয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,
-“পাগলামি নয় বরং ভালোবাসা।জানেন আপনার কাছে আসতে ভয় পেতাম কারন যদি আপনিও সবার মতো অবহেলা করতে শুরু করেন তাই।আসলে একমাত্র অনু ব্যাতিত সবার কাছে আমি বোরিং পার্সন ছিলাম।কারোর সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে মিশলে কাজ হাসিল হলে ছুড়ে ফেলে দিতো।কিন্তু আপনি তো বর,এতো সহজে সেটা করতে পারবেন না,তাইনা মি.বর।”
আবরার হেসে ওকে ঠিক করে সামনে বসিয়ে আরেক লুকমা ভাত দিয়ে বলে,
-“পাগলি,এখন খেয়ে নাও।”
-“আপনার শ্বশুড়বাড়ির লোক এখনো আছে?”
-“হ্যাঁ,বাট্ উনারা তোমার বাবা-মা।ভুল বুঝতে পারছে তাই…”
-“সুপারিশ করবেন না প্লীজ।জন্ম দিলে কেউ মা হতে পারেনা,আর বাবা শুধু টাকা ঢাললেই হওয়া যায়না।আপনি কিন্তু বেশি উনাদের আশেপাশে যাবেন না।”
-“কেন?”
-“নয়তো উনারা আপনাকেও আমার কাছে থেকে সরিয়ে দিতে চাইবে।আপনাকে ভুল বুঝাবে,আর আপনিও তখন আমাকে অবহেলা করতে শুরু করবেন।”
-“উহু,স্ত্রীকে অবহেলা করার সাহস আমার নেই।তোমার সাথে জান্নাতে যেতে চায়,জাহান্নামে নয়।জানো স্ত্রীকে ভালোবাসা প্রসঙ্গে হাদিসে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম যারা তাদের স্ত্রীদের জন্য উত্তম। আর আমি আমার স্ত্রীদের জন্য তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি।(তিরমিজি)”

ইয়ারাবী খাবার খাচ্ছে আর মাথা হালকা ভাবে নাড়িয়ে বলে,
-“বুঝলাম কিন্তু আমার ভালোবাসতে হবে।”
-“তুমি সত্যিই পাগলি,জানো তোমার এই রুপটা আমার অপরিচিত ছিলো।কিন্তু আজ তাও দেখে নিলাম।আর আমি তো শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।”
-“জানি তো কিন্তু আজ আমাকে ভালোবাসতে হবে।”

আবরার অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে দেখে চাতক পাখির মতো ওর দিকে তাকিয়ে আছে জবাবের অপেক্ষায়।ও বুঝতে পারছে ইয়ারাবী কেন এসব বলছে।আবরার একটা নিঃশ্বাস ফেলে আরেক লুকমা ওর গালে দিয়ে বলে,
-“আমি তো বলেছি তুমি এখনো অনেক ছোট।বিশের আগে কিছু করতে চাইনা।”
-“না ভালোবাসতে হবে মানে হবে।”
-“অসুস্থ তুমি,জেদ করবেনা।আমি জানি তুমি কেন এমন করছো।ট্রাস্ট মি ইয়ারাবী,দেখবে তুমিও মা হবে।বাট্ তুমি যতই পাগলামি করো,আমার কথার নড়চড় হবেনা।”
-“খারাপ লোক…”

আবরার মুচকি হেসে ওকে খাবার খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নেয়।আর এই সবটাই দূরে দাঁড়িয়ে মিসেস ইশানি দেখছিলো,মেয়েকে খুশি দেখে মনটা ভালো লাগছে আর অপরদিকে ভবিষ্যতের চিন্তা হচ্ছে।

(১৭১)

সকালের দিকে অনুর ফোনের একটা কল আসার সাথে সাথে অনু ঘুমঘুম চোখে ফোনটা রিসিভ করে দেখে ওর মা কল করেছে।ও কিছু বলতে যাবে তার আগে ওর মা ওর ঘরের দরজা খুলতে চলে।ও কিছুটা অবাক হয়,তবুও সামলে বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুলে দেখে ওর বাবা-মা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।ও দৌঁড়ে তাদের কে জড়িয়ে ধরে।ওর মা ব্যাগটা রেখে বলে,
-“কেমন লাগলো সারপ্রাইজ?”
-“অনেক অনেক ভালো।আমি তো ভাবতেই পারিনি তোমরা আসবে।”
-“পাগল,মা কখনো সন্তান থেকে দূরে থাকতে পারেনা।এমনিতেও অনেকটা জুরুরি কাজের জন্য এখানে আসা।”
-“কী কাজ?”
-“ভিতরে আসতে দে,তারপর না হয় বলবো।”

অনু নিজের মাথায় একটা চাটি মেরে বলে,
-“দেখলে ভুলেই গেছি,আসো আসো।”

ওর বাবা-মা বাসায় ঢুকে ফ্রেস হয়ে নেয়।তারপর নাস্তা বানিয়ে টেবিলে সাজিয়ে অনুকে ডাক দিলে ও চলে আসে।অনুর বাবা খুব গম্ভীর ধরনের মানুষ,প্রয়োজন ব্যাতিত অযথা বকবক তার পছন্দ নয় আর করতেও চাননা।উনি পরোটা ছিড়ে ডিম দিয়ে মুখে পুরে খেয়ে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
-“তোমার বান্ধবীর তো বিয়ে হয়ে গেছে?”
-“হ্যাঁ,বাবা কেন?”
-“পড়াশোনা করছে?”
-“হ্যাঁ,ওর হাসবেন্ড ওকে কিছুতে বাঁধা দেয়না।”
-“হুমম,ভালো ছেলে অনেক বড় ডাক্তারও।বলছি আমিও চাই…”

অনু ওর বাবার কথা বুঝতে পেরে তাকে থামিয়ে বলে,
-“এক মিনিট বাবা,আমি আগেও বলেছি আমি এখন বিয়ে করবোনা।মানুষ ভুল থেকে শেখে,আমি ভুল করেছি শিখেছি,কিন্তু এমন যে আবার করবো সেটা কীভাবে ভাবছো।নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আগে বিয়ে করবোনা।”
-“আমরা এমন কিছুই ভাবছিনা,আর দেখলেই তো বিয়ে হয়ে যায়না।”
-“হয়ে যায়,দেখলেই বিয়ে হয়ে যায়।ইয়ারাবীর ও দেখতে এসে বিয়ে হয়ে গেছে।”

অনুর বাবা উনার মেয়ের দিকে একবার তাকায় আর উনার স্ত্রীর দিকে একবার তাকায়।তারপর আবার খেতে খেতে বলে,
-“ছেলে যদি তোমার পছন্দ না হয় তবে বিয়ে হবেনা।”
-“এখন এটা বললে আর পরে বলবে,ওদের সবাই তোমাকে পছন্দ করেছে।বিয়ে এখানেই হবে, আমার সম্মান জড়িয়ে আছে,রাজী হয়ে যাও ভালো চাইলে।হা হা হা….বাংলা সিনেমার ডায়লগ অনেক বাবারাই দেয় এখন।”

অনুর মা ওর পিঠে একটা থাবা মেরে বলেন,
-“তুই কবে থেকে বাংলা সিনেমা দেখিস।শোন একবার দেখা কর,ভালো ছেলে।”
-“এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে।”
-“সিনেমা দেখে দেখে মাথা গেছে।”
-“ডায়লগের জন্য সিনেমা দেখা লাগেনা,এর জন্য মেঘই যথেষ্ট।”
-“আচ্ছা বাবা ঠিক আছে,বলবোনা আর।একবার দেখা কর,তোর বাপের কসম তোর পছন্দ না হলে বিয়ে করতে বলবোনা।”

অনু অবাক চোখে ওর বাবার দিকে তাকায়।ওর বাবার পরোটা দাঁত দিয়ে চিবাচ্ছে আর বিরবির করে বলছে,
-“এই মহিলা জীবনে শুধরাবেনা।কথায় কথায় আমার কসম,বলছি এখন কী বললি পরে তো সেটাই তোর মনে থাকবেনা।”

অনুর মা ভ্রু কুচকে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলেন,
-“কিছু বলছো তুমি?”
-“না না,অকালে শহীদ কেন হবো?”
-“কী বললে?”
-“বলছি পরোটা হেব্বি টেস্টি,খাবে খাও।”

অনুর তো পেট ফেঁটে হাসি আসছে কিন্তু ওর মায়ের জন্য এখন হাজার হলেও হাসতে পারবেনা।কারন ওর মার অগ্নিরুপ ধারন করতে বেশি সময় লাগবেনা।অনু আস্তে করে চেয়ার থেকে উঠে পাশ থেকে ব্যাগ দিয়ে কোনমতে দু’জনকে বিদায় জানিয়ে ফ্লাটের বাইরে আসে।তারপর মন খুলে হাসতে থাকে।এতক্ষণ হাসির জন্য ওর পেট ফেঁটে যাচ্ছিলো।

#চলবে_____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here