#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Rini (Irini Ori)
#পর্ব:৩৪
(১১৮)
ইয়ারাবীর ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে চুল বাঁধছে, ঠিক তখনি আবরার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে আলতো করে ভালোবাসার স্পর্শ দেয়।আচমকা এমন হওয়ায় ইয়ারাবীর কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।ও তাড়াতাড়ি সরতে গেলে আবরার ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“সব সময় পালাই পালাই করো কেন হানি?”
-“আ আমি…”
আবরার ওকে ঘুরিয়ে কপালে ভালোবাসার একটা স্পর্শ দিয়ে বলে,
-“আমাকে দেখে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ দেখিনা।তোমার ধারনা মতে যদি আমি টিপিক্যাল স্বামীর মতো হতাম তবে বিয়ের রাতেই আসল চেহারা দেখাতাম..”
ইয়ারাবী মাথাটা নিচু করে বলে,
-“আমি এমন কিছু বলিনি আপনাকে..”
-“সব কথা মুখে না বললেও আচারনে প্রকাশ প্রায়।”
কথাটা বলে আবরার বেলকনিতে চলে যায়।ইয়ারাবীর মনে হচ্ছে আবরারর কোনো একটা ব্যাপার নিয়ে ওর উপর রেগে আছে।ইয়ারাবী বেলকনিতে যেয়ে দেখে আবরার গেন্জির হাতা ফোল্ড করে দুই কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে রেখেছে,সবুজ বর্নের চোখগুলো খুব ভয়ংকর লাগছে ফর্সা চেহারার চাপদাঁড়িতে, চোলগুলো এলোমেলো, বারবার হাত দ্বারা ঘাড় ডলছে বোঝায় যাচ্ছে রাগ কমাতে চাইছে।কিন্তু কেন?ও এমন কী করলো যার জন্য আবরার রেগে আছে?নাকী অন্যকিছু?ওর ভয় করছে কিন্তু নিজের স্বামী তাই মনে একপ্রকার সাহস নিয়ে আবরারের কাঁধে হাত রাখে।আবরার সামনের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ভিতরে যাও..”
-“আপনি কী আমার উপর রেগে আছেন?”
-“তুমি কী এমন কিছু করেছ যার জন্য আমি রেগে যাবো?”
ইয়ারাবী চুপ করে আছে।আবরার এবার ওর দিকে একবার তাকিয়ে বলে,
-“ভিতরে যেতে বলেছি,যাও।”
-“আপনার কী হয়েছে?আমি যদি কিছু করে থাকি তবে আমাকে বলুন,আমি শুধরে নিবো।”
-“তুমি কিছু করোনি,রেডি হয়ে নাও বেরতে হবে।”
-“আমি জানি একটু আগের জন্য আপনি রেগে আছেন?”
-“না…”
-“মিথ্যা কেন বলছেন?”
-“আমার রাগকে সহ্য করার ক্ষমতা তোমার মতো বাচ্চা মেয়ের নেই।হ্যাঁ,আমি রেগে আছি বাট্ তোমার জন্য নয়,অন্য কারণ আছে।তাই প্লীজ যাও,নয়তো আমি রাগের বসে অনেক কিছু করে ফেলতে পারি।”
ইয়ারাবী সাহস করে বলে,
-“যাবোনা আমি,আমিও দেখবো আপনি রেগে গেলে কী করেন?”
আবরার ধমক দিয়ে বলে,
-“যাও এখান থেকে,কথা বললে কানে যায়না..”
-“কেন যাবো,কেন যাবো আমি?আপনার কী দ্বিতীয় কোনো বৌ আছে যে তার কাছে গেলে আপনার রাগ পরে যাবে।ভালোই ভালোই বলবেন কোনো ভনিতা ছাড়া…”
আবরার ইয়ারাবীর এইরুপ দেখে পুরো অবাক।যে মেয়ে ওর সামনে নরম সুরে ছাড়া কথা বলেনা সে মেয়ে কীনা ওকে উল্টো ধমক দিচ্ছে।আবরারের এমন চাহনি দেখে ইয়ারাবী ভ্রু নাচিয়ে বলে,
-“যতদিন বেঁচে আছি দেখতে পারবেন,এখন বলেন সমস্যা কী?”
আবরার বেলকনির সোফায় বসে ইয়ারাবীকে টেনে উপরে কোলের উপর বসিয়ে দেয়।ওর কাঁধের উপরে নিজের থুতনি রেখে বলে,
-“ল্যাবে একটা সমস্যা হয়েছে,জানো অনেকদিন ধরে একটা ফর্মুলার উপর কাজ করছিলো আমার টিম।খুব কষ্ট করে এইটা বানানোর জন্য,দিন-রাত পরিশ্রম করা হয়েছে এটার পিছনে। কিন্তু টিমের মধ্যে কেউ একজন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।প্রচুর রাগ লাগছিলো তাই তোমার কাছে এসেছিলাম কিন্তু তুমি উল্টো বুঝলে আমায়।আচ্ছা আমি কী খারাপ আচারন করি তোমার সাথে?যদি এমন কিছু করতে চাইতাম তবে প্রথম দিনেই করতাম।”
ইয়ারাবীর সত্যিই খুব খারাপ লাগে।আচ্ছা,কীই বা এমন করেছিলো আবরার যে ওর কাছে দূরে সরতে চাই,ওতো স্বামীর অধিকার ফলাতে আসেনি।আবরার তো ওকে বলে দিয়েছে স্ট্যাডি কম্পিলিট না হলে ও এমন কিছু করবেনা যার জন্য ওর মনে অপরাধবোধ জাগে।ও আস্তে করে আবরারের কোল থেকে নেমে ওর সামনে ফ্লোরে বসে ওর হাঁটুতে মাথা রেখে বলে,
-“স্যরি,আসলে আমি চাইনা কিন্তু এমনটা হয়ে যায়।আমি সত্যিই দুঃখীত,আপনি জানেন তো আমার অতীত,ভয় করে।যার জন্য মন এক কথা বলে ব্রেন আরেক।আমি বুঝিনা কার কথা শুনবো।”
আবরার ওর মাথায় হাত রেখে বলে,
-“এখানে তোমার স্যরি বলার কিছু নেই,তোমার সময়ের প্রয়োজন আমি জানি।তুমি একপ্রকার ট্রোমার মধ্যে আছো।চলো অনেকবেলা হয়ে গেলো বেরতে হবে।”
-“আপনি?”
-“প্রফেশন প্রফেশনের জায়গায় আর ফ্যামিলি ফ্যামিলির জায়গায়।একটার জন্য আরেকটাতে কষ্ট দিতে চাইনা।দশমিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নাও।”
ইয়ারাবী মাথা তুলে ভ্রুটা কুচকে বলে,
-“সব সময় টাইম বেঁধে দেন কেন?”
-“আমার ইচ্ছা মাই উইশ…”
ইয়ারাবী ওর কথা শুনে খানিকটা বিরক্ত নিয়ে রুমে যেয়ে একটা ব্লাক গাউন পরে ওর উপর নেভি ব্লু কালারের বোরখা পরে নেকাব বেঁধে নেয়।আবরার একটা ব্লাক স্যুট পরেছে।অতিরিক্ত ফর্সা ব্যাক্তিদের গায়ে কালো রঙটা বেশি মানায়।আবরার আজ উইলিয়ামকে বিদায় জানিয়ে নিজে ড্রাইভ করছে।ইয়ারাবী জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে লন্ডন শহরটাকে উপভোগ করছে।হঠাৎ কী মনে হতেই ও বলে উঠে,
-“যেটা নষ্ট হয়েছে সেটা দ্বিতীয়বার বানাতে পারবেন?”
-“এসব নিয়ে তুমি চিন্তা করছো কেন?”
-“না করতে চাইলেও চলে আসে,আফটারঅল স্বামী হন আপনি।আল্লাহর পবিত্র কালাম মুখে নিয়ে বিয়ে করেছি।আপনার কষ্ট মানে আমার কষ্ট আর আপনার সুখ মানে আমার সুখ।বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন,তাই জন্য মনে হয় এমন।”
আবরার ওর কথা শুনে নিঃশব্দে হাসে।কেননা ও যা বলেছে তা একদম সত্যি।ইয়ারাবী হঠাৎ বলে উঠে,
-“আপনি ভাইয়াদের কবে থেকে চেনেন?”
-“পনের ব…”
কথাটা বলতে গেলে আবরারের টনক নড়ে।ও আনমনে কতোটা ভুল করতে গেছিলো।আবরার আড়চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“কী বললে তুমি?”
-“কিছুনা,ঠান্ডা লাগছে খুব..”
-“তোমাকে আগেই বলেছিলাম,তুমি শুনোনি…”
ইয়ারাবী ঠোঁট উল্টে অভিমানী সুরে বলে,
-“একটু ভুল হলে আপনারা সবাই বকা দেন কেন?”
-“তোমাকে ঠিকভাবে বলবে শোনো।তোমাকে বকলাম কখন?”
ইয়ারাবী কিছুনা বলে চুপ করে থাকে।আবরার পিছন থেকে হাত বারিয়ে চাদর নিয়ে ওকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে দেয়।ইয়ারাবী আড়চোখে তাকালে বলে উঠে,
-“এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই,আমার কাছে সবকিছু এক্সট্রা থাকে।”
-“তাহলে বৌও একটা এক্সট্রা রাখেন।”
আবরার কিছুটা মজা করে বলে,
-“ওটাও রাখতাম,তবে একটা সামলে রাখতে যেয়ে সময় থাকেনা তাহলে আরেকটাকে সময় দেব কীভাবে?”
-“মানে আপনি সত্যিই বিয়ে করবেন?”
আবরার হাসতে থাকে ওর কথা শুনে,মেয়েটা সত্যি পাগল।বয়স হলেও ম্যাচুরিটি আসেনি তবে দেখানোর চেষ্টা করে।আবরার একহাতে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“বৌ থাকতে বিয়ে কেন করবো,আমিতো মজা করে বলছি।পাগলি একটা,মজাও বোঝেনা।”
ইয়ারাবী আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমিতো পাগলি,সেটা আপনি জানেন না।বিয়ের আগেও বলার চেষ্টা করেছি বাট্ আপনি কখনো শোনেন নাই।আমার সত্যিই মেন্টালি সমস্যা আছে…”
-“বাজে কথা বলবেনা,”
ইয়ারাবী আর কোনো কথা বলেনি।আবরারও আর বিষয়টা নিয়ে ঘাটায়না।প্রায় এক ঘন্টা পরে ওরা একটা গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ইয়ারাবীকে ইশার নামতে বলে।ইয়ারাবী নেমে দেখে বাসার এরিয়াটা অনেক বড়।বাসাটার ডিজাইনটা অনেকটা আবরারের বাসার মতো তবে গার্ডেন এরিয়াটা অনেক বড় সাথে গাড়ি পার্কিং এর জায়গাটাও আছে।সামনের সুইমিংপুলটা বাড়িটার সৌন্দর্য অনেক বৃদ্ধি করেছে।আবরার গাড়ি পার্ক করে এসে স্বভাবসুলভ ভাবে ওর হাতটা নিজের মুঠোয় নিয়ে বলে,
-“ডি কার্লোজ,পেশায় গ্রান্ডস্কুলের শিক্ষক,আমরা আসবো বলে পার্টি রেখেছে।আশাকরি সবার সাথে বন্ধু সুলভ আচারন করবে।”
-“আপনার খুব ভালো ফ্রেন্ড তাইনা।”
আবরার হেসে মাথাটা নাড়িয়ে ওকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে গ্রে কালারের টপস্,মাথার চুলগুলো অনেকটা ছেলেদের মতো একজন ব্রিটিশ লেডি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।আবরার হালকা হেসে মেয়েটার কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে একটা মৃদ্যু হাসি দেয়।ইয়ারাবী বেশি একটা রিয়্যাক্ট করেনা কেননা ও জানে বিদেশে এগুলো কোনো ব্যাপায় নয়।মেয়েটা শ্যাম্পেইনের গ্লাসে হালকা চুমুক দিয়ে ওকে উদ্দেশ্য বলে,
-“তোমাকে অনেক মনে পরতো হ্যান্ডসাম…”
আবরার হেসে মেয়েটাকে বলে,
-“আমিও প্রতি মুহূর্তে তোমাদের অনুভব করেছি।”
একটা আমেরিকান সুদর্শন যুবক আবরারের পেটে একটা ঘুসি মেরে বসে,
-“মিথ্যুক,তোমাকে আমরা চিনি।নিজের অর্ধাঙ্গীনিকে পেয়ে প্রিয়দের ভুলে গেছো।আমি যদি না আমন্ত্রণ করতাম তবে তোমার দর্শন পেতাম নিয়ে সন্দেহ।”
ইয়ারাবী ছেলেটার কথা শুনে বুঝতে পারে এই সেই ডি কার্লোজ নামের ছেলেটা।মেয়েটা ইয়ারাবীর দিকে এগিয়ে বলে,
-“তোমার নামটা কী জানতে পারি প্রিয়?”
ছেলেটাও ওর সাথে মত মিলিয়ে আবরারকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“এআর তুমি,তোমার স্ত্রীর পরিচয় করিয়ে দাও।”
আবরার ইয়ারাবীকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“তোমাদের মতো বড় কোনো প্রফেশনের সাথে যুক্ত নেই,ওর নাম ইয়ারাবী।পেশার একজন স্টুডেন্ট আর বিভিন্ন সোস্যাল এক্টিভিটির সাথে যুক্ত।”
কিটি ইয়ারাবীর দিকে এগিয়ে ওর হাতটা ধরে বলে,
-“প্রিয় এয়া,তোমার নামটা আসলে আমার পক্ষে উচ্চারন করা কঠিন,তাই তুমি কিছু মনে করোনা। তুমি তোমার মুখের আবরণটা সরিয়ে ফেলো।এখানে সবাই নিজেদের মানুষ।তুমি আমার সাথে এসো,আমি তোমাকে রুম দেখিয়ে দিবো।”
ইয়ারাবী আবরারের দিকে তাকাতেই ও ইশারা করে বলে,
-“এ হলো মিস্টার এন্ড মিসেস ডি কার্লোজ,আর এই মেয়েটাও আমার বন্ধু কিটি।ওর সাথে যেয়ে বোরখাটা ছেড়ে আসো,ভয় পেওনা আমি আছি।”
কিটি ওকে নিয়ে চলে যেতেই আবরার কার্লোজকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“মিক কী এসেছে?”
-“তুমি চিন্তা করোনা,ও চলে এসেছে।তোমাদের অপেক্ষা করছিলো।”
ও আবরারকে নিয়ে পার্টির দিকে যায়।অনেক পুরাতন বন্ধুরা ওখানে উপস্থিত।কার্লোজ পাশ থেকে বলে,
-“বিষয়টা খুব জটিল,তোমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু এফাজকে আমন্ত্রণ জানালে ও আসতে অস্বীকার করে।যেটা কীনা আগে কখনো করতোনা।”
আবরার জানে ইফাজের না আসার কারণ।ও একটা জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে বলে,
-“তেমন ব্যাপার নয়,ও এই মাসে কিছুটা ব্যস্ত।”
-“তোমরা ভাই ডাক্তার মানুষ,প্রকৃত যোদ্ধা।”
-“তবে আমাদের থেকে প্রকৃত যোদ্ধা দেশরক্ষকরা।”
আবরার ঘুরে তাকিয়ে দেখে একজন আমেরিকান যুবক, নীল বর্নের চোখ,সোনালি চুল,পরনে একটা সাদা শার্ট উপরের তিনটা বোতাম খোলা,জিন্স প্যান্ট, ডানহাত পকেটে বাম হাতে গ্লাস ধরা, ছেলেটা আর কেউ নয় ডাক্তার মিক।আবরার হেসে ওকে জড়িয়ে ধরে।মিক ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তোমার স্ত্রীকে আনোনি?”
-“অবশ্যই,কিটির সাথে আছে আসছে।”
মিক ওর দিকে তাকিয়ে চেয়ারে বসতে বসতে বলে,
-“তুমি সত্যিই চাও ওকে না জানিয়ে কাজটা করতে?”
-“অবশ্যই,ও মেন্টালি সুস্থ নয়।এসব শুনলে আরো ভেঙে পরবে।বয়সটাও বেশি নয়…”
-“আমি তোমার ব্যাপার বুঝছি,আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো বন্ধু।”
এর মধ্যে কিটির সাথে ইয়ারাবী হলরুমে আসে,।পরনে ব্লাক কালারের গাউন,মাথায় ব্লাক কালারোর হেজাব,চোখে চশমা।ও কিটির সাথে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে থাকে।দুই-তিনটা মেয়ে এসে ওর সাথে পরিচিত হচ্ছে,ওই সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে সবার সাথে কথা বলছে।তবে ওর বেশ অস্বস্তি লাগছে।আবরার দূর থেকে সবটা বুঝতে পেরে মুচকি মুচকি হাসছে।মিক ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এমন কী মজার জিনিস দেখছো?”
-“তেমন কিছু নয়,ইয়ারাবীকে দেখছিলাম।”
-“স্ত্রীর সাথে তো পরিচয় করিয়ে দাও,তারপর যত মন চাই দেখো।কেননা তোমার স্ত্রীকে কেউ ছিনিয়ে নিবে না।”
-“আমাকে দুর্বল ভাবো।”
মিক গ্লাসে শেষ চুমুকটা দিয়ে বলে,
-“সেটা ভাবা বোকামি,আমি জানি তুমি কেমন?”
আবরার ওর কথা শুনে হাসে কিন্তু এখনো ওর দৃষ্টি ইয়ারাবীর দিকে।সব সময় এটাই ভাবে,মেয়েটার মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো জাদু আছে।নয়তো এত সুন্দরী,রুপসী মেয়েদের মধ্যে থেকেও একজন শ্যামবর্ণের মেয়েকে ভালোবাসলো।একটা মেয়ে ইয়ারাবীকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“তুমি নিচ্ছোনা কেন?”
-“আমি পছন্দ করিনা লিজা এসব।”
-“আমার জানা মতে অনেক বাঙালি মেয়েরা এখন এসব করে।”
ইয়ারাবী হেসে বলে,
-“দুঃখীত ,আমি বাকীদের মতো নই।”
কেলসি নামের মেয়েটা হেসে বলে,
-“তুমি সত্যিই খুব চমৎকার মেয়ে আর তোমার চেহারাও।”
-“কিন্তু আমাদের বিডিতে শ্যামবর্ণের অনেক মেয়েকে এখনো সমাজের অভিসাপ বলা হয়।”
-“দুঃখ পেলাম কথাটা শুনে,তবে কী কাউকে খুঁজছো।”
কিটি হেসে বলে,
-“আমি জানি কাকে খুঁজছে,নিশ্চয়ই এআর রাইট?পিছনের মুড়ে ত্রিশ ডিগ্রী এঙ্গেলে সামনে তাকাও।”
ইয়ারাবী পিছন ঘুরে দেখে আবরার গায়ের কোর্টটা খুলে একহাতে রেখে গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে আর হেসে হেসে কথা বলছে কিন্তু চোখটা ওর দিকে।ইয়ারাবী নিজে বিরবির করে বলে,
-“তারমানে এতক্ষণ উনি আমাকে চোখে চোখে রাখছিলেন,এজন্য এমন লাগছিলো।”
ইয়ারাবী কিটিদেরকে বলে আবরারের দিকে আসে ওকে একটা ফোন এগিয়ে দিয়ে বলে,
-“আপনার ফোন,আবীর ভাইয়া কল দিয়েছিলো।”
-“ওহ্হ্,দাও আমার মনে ছিলোনা,ধন্যবাদ।এই কোর্টটা একটু ধরবে।এদের সাথে পরিচিত হয়ে নাও, এহলো মিক,ব্রান্ডি,জনসেন,ব্রুজ আর কার্লোজ এদেরকে তো দেখেছো।আর গাইজস্ এ হলো ইয়ারাবী,আমার স্ত্রী।”
মিক হেসে বলে,
-“হাই মিসেস এয়ারবী,তুমি আমার ছোট তাই এয়া বলে ডাকবো।কিছু মনে নিয়োনা।”
-“কোনো ব্যাপার নয়,আপনি বলতে পারেন।”
কার্লোজ ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তুমি কিছু নিচ্ছোনা কেন?”
-“আমি এসব খাইনা…”
আবরার ইয়ারাবীর হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে,
-“জুস,ড্রিংকস্ আছে..”
-“ইচ্ছা করছেনা।”
-“ঠিক আছো তুমি?খারাপ লাগছে,আমি বলেছিলাম কিন্তু।”
ইয়ারাবী বিরক্ত নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমি ঠিক আছি,কিছু হয়নি।”
-“রেগে যাচ্ছো কেন?”
-“জানিনা,কিন্তু প্রচুর রাগ উঠছে…”
আবরার গ্লাসটা রেখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“কিটিদের কাছে যাও,ভালো লাগবে।যদি খারাপ লাগে আমাকে জানিও।পার্টি শেষ হলে চলে যাবো, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো ধৈয্য সহকারে।”
ইয়ারাবীর মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।মিক আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“কোনো সমস্যা,তোমাদের ভাষা কিছু বুঝতে পারিনি।”
-“সমস্যা বটে,ওর মেন্টালি সমস্যা হচ্ছে।আমি চাই পার্টির পরে ওকে তুমি ওকে দেখো।হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমার।”
-“ঠিক আছে।”
(১১৯)
মিসেস ইশানি আজ অনেকদিন পর মেজো বোনের বাসায় এসেছেন,সাথে উনার ছোট মেয়ে ইয়ামিলা আছে।মেইন গেট খোলায় আছে,কেননা কিছুক্ষণ আগে ইমন ক্যাম্পাস থেকে এসেছে।সোফায় বসে জুতা খুলছে আর মিসেস রহমান একটা এ্যালবাম দেখছেন।মিসেস ইশানি দরজায় নখ করে বলে,
-“আপু আসবো?”
মিসেস রহমান দরজায় তাকিয়ে দেখেন ওনার বোন দাঁড়িয়ে আছে।উনি ইয়ামিলার দিকে তাকিয়ে বলেন,
-“কেন আমায় বাসায় বলে অশুভ ছায়া আছে,তুই তো একদিন বলেছিলি।”
-“মাফ করেদে আপু,সত্যিই নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারছি।”
-“ভিতরে আয়…”
মিসেস ইশানি ভিতরে ঢুকলে ইমন নিজের জ্যাকেট খুলতে খুলতে বলে,
-“এতটা মহান হওয়ার কারণটা কী জানতে পারি?”
-“আহ্ ইমু,খালার সাথে এভাবে কেউ কথা বলে।”
-“নিজের মেয়ের সাথে যে জঘন্য আচারন করেছে তার বেলায়।ফড়িংকে কত কষ্ট দিয়েছে,বাচ্চা মেয়েটার কান্না এখনো আমার চোখে ভাসে মা।”
মিসেস ইশানি বসতে বসতে বলে,
-“জানিস লোকচক্ষু খুব খারাপ জিনিস,সময়ের পরিস্থিতিতে তোমাকে যেভাবে বোঝাবে সেই ভাবে তুমি বুঝবে।আমরাও তাই করেছিলাম…”
ইমন নিজের ব্যাগটা নিয়ে বলে,
-“তার জন্য দুধের শিশুকেও টর্চার করতে বুক কাঁপলো না।আপনাদের কৃতকর্মের ফল মেয়েটা আজও ভোগ করে বেড়াচ্ছে।সত্যিই আল্লাহর কাছে কোটি কোটি সুকরিয়া যে আবরার ভাইয়ার মতো মানুষ ওর জীবনে এসেছে।”
-“ইমু তোকে না নিষেধ করলাম,ইয়ামিলাকে নিয়ে রুমে যা।”
ইয়ামিলা ওর খালার সামনে যেয়ে বলে,
-“আচ্ছা খালা,তুমি আপুকে আম্মু বলে ডাকো কিন্তু আমাকে নাম ধরে ডাকো কেন?আর ভাইয়ারাও আমাকে সেরকম আদর করেনা যেমন আপুকে করে।”
ওর খালা ওর মুখে হাত রেখে বলে,
-“জানিস তুই অনেক ভাগ্য নিয়ে জন্মেছিস,কিন্তু তোর আপুর সেটা ছিলোনা তাই।তুই তোর ভাইয়ার সাথে উপরে যেয়ে খেলা কর,আমি নাস্তা পাঠাচ্ছি।কী খাবি তুই?”
-“মোমো…”
-“জানিস ইয়ারাবী হলে পাস্তা চাইতো,তোরা যা আমি সাথীকে বলছি।”
ইমন ওকে নিয়ে রুমে যেয়ে হাতে ভিডিও গেম ধরিয়ে দেয়।ইয়ামিলা ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমি খেলবো না…”
-“তো কী করবি?”
-“গল্প শুনবো…”
-“খাইছে আমারে,তোরা দুই বোন কী শপথ করেছিস নাকী আমাকে প্যারা দেওয়ার?”
ইয়ামিলা মাজায় হাত দিয়ে বলে,
-“আপুর কথা জানিনা বাট্ আমি আজ শুনবো।”
ইমন বিছানায় আরাম করে শুয়ে বলে,
-“একটু ঘুমিয়ে নিই,পরে শুনাবো।”
-“না না না,আপনি উঠুন…”
ইমান কাত হয়ে শুয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“জানিস তোদের দু’বোনের মধ্যে কত তফাত?ফড়িং কখনো আমাদের তুমি ছাড়া কথা বলতো না।”
-“আম্মু বলেছে বড়দের আপনি বলে ডাকতে হয়..”
ইমন খানিকটা হেসে বলে,
-“আচ্ছা বল কী গল্প শুনবি?”
-“আপুর গল্প,জানেন আপু আমার নিজের বোন হলেও আমি কখনো আপুকে সেভাবে চিনিনা।আব্বু সব সময় বলে আপু নিজেকে গুটিয়ে রাখে।”
-“আপুকে যে ভালোবাসিস সেটা কখনো বলেছিস?”
-“না,আপু আমাকে সহ্য করতে পারেনা।”
ইমন ওর কথাটা শুনে হাসে কিন্তু কিছু বলেনা।এদিকে মিসেস রহমান ছবির এ্যালবামে একটা পিচ্চির ছবি দেখিয়ে বলে,
-“দেখ ইশানি,ইয়ারাবীর তৃতীয় জন্মদিনের ছবি।কেক না খেয়ে পুরো মুখে মাখিয়ে ছিলো।”
-“মেয়েটাকে তোকে দিয়ে দিলে বোঁধ হয় ভালো থাকতো আপু।”
-“দেখ ইশানি সময় চলে গেলে মানুষ পস্তায়।তুই তো মেয়েকে মাথায় তুলে রাখতিস,ফুয়াদ ও কখনো মেয়েকে কোল থেকে নামাতো না আর তোরাই ওকে…”
-“আপু মেয়েটা আমার জন্য…”
মিসেস ইশানি মুখে শাড়ির আঁচল চেপে কান্না করতে থাকেন।মিসেস রহমান ওনাকে কিছু না বলে চুপ করে থাকেন।কীই বা বলবেন?এটা ওনার প্রাপ্ত শাস্তি,তবে নিজের ভুল অনেক দেরীতে বুঝতে পেরেছেন।
মিসেস রহমান এ্যালবামটা রেখে বলে,
-“লন্ডনে যাওয়ার পর আর কোনো কথা হয়েছে তোদের সাথে…”
-“না,আপু মেয়েটা আমার সাথে কথা বলেনা।ফুয়াদ আবরারকে কল করেছিলো কিন্তু তখন মেয়েটা ঘুমাচ্ছিলো।”
-“অসুস্থ হয়ে পরেছিলো,বাসায় এসে ঘুমের ভিতর সমস্যা হয়েছিলো দুইবার,আবরার কোনো ভাবে সামলে নিয়েছে।অবশ্য ইফাজ বললো বলে জানলাম।”
-“আচ্ছা আপু,তোমরা কী আবরারের ফ্যামিলিকে আগে থেকে চিনতে?”
-“তোকে মিথ্যা বলার কোনো ইচ্ছা নেই।হ্যাঁ,চিনি কেননা আবরার ইরাক-ইফাজের বাল্যকালের বন্ধু।”
মিসেস ইশানি চমকে যেয়ে বলেন,
-“এজন্য তোমরা ইয়ারাবীর বিয়েতে মত দিয়েছিলে তাইনা,কেননা এর আগে ওর বিয়ের কথা শুনলে তোমরা রাগ করতে।”
মিসেস রহমান সাথীকে নাস্তার কথা জানিয়ে বোনকে বলেন,
-“হ্যাঁ,কারণ একটা সেটা হলো ইয়ারাবীর ভালো থাকা।ছেলেটা খুব ভালো,ওর পরিবারও ভালো।ইয়ারাবীর প্রতি কেয়ার রাখবে,ওকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলবে।”
-“আপু মেয়েটার সাথে একবার কথা বলিয়ে দিবে।”
-“তুই ফোন করে কথা বল…”
-“ফোন রিসিব করেনা আর ওর বাবারটা তো ব্লক করে রেখেছে….”
-“তোর মনে আছে ইশা,পল্লবীর বিয়েতে কী হয়েছিলো?”
-“হ্যাঁ,আপু মনে থাকবেনা কেন?”
কথাটা বলে হাসতে থাকে মিসেস ইশানি।অনেক মজার ঘটনা ঘটেছিলো সেইদিন।ইয়ারাবীর বয়স সবে তেরো ছুই ছুই।পল্লবীর বিয়ে উপলক্ষ্যে মেজো খালার বাসায় থাকছে।গাঁয়ে হঁলুদ দেওয়ার পর রাতে বাসায় চলে এসেছে।ইয়ারাবীর জন্য এই বাসায় একটা রুম বরাদ্দ আছে।নিজের রুমে যেয়ে ফ্রেস হয়ে এসে সিড়ি দিয়ে লাফাতে লাফাতে নামতে নামতে বলে,
-“খালামনি,ও মাই সুইট কিউট খালামনি পেটে ইঁদুর দৌঁড়াচ্ছে।”
ইরাক সোফার আরাম করে বসে বলে,
-“রাক্ষসী নাকী তুই,এত কিছু খেলি তারপরও এখন খাবি?”
-“কথা বলবেনা তুমি,আমাকে খেতে দাওনি।এটা খাবিনা ওটা খাবিনা বলে চুপ করিয়ে রেখেছো।খালু দেখ তোমার ছেলে বকছে।”
খালু এসে ইরাকের কান টেনে বলে,
-“বজ্জাত তোরা একটাও আমার মেয়ের পিছু লাগবিনা।”
-“আহ্,বাবা ছাড়ো,ঘাড়ে আমার একটা মাথা বুঝেছো?”
ইয়ারাবী কিছু বলতে যাবে তখন দেখে ইমন ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বের করছে।ইয়ারাবী চুলটা ঠিক করে মুখে একটা হাসি ঝুলিয়ে ইমনের কাছে যেয়ে বলে,
-” ছোট ভাই…য়া,কী করো?”
ইমনও একটা হাসি দিয়ে বলে,
-“কাবাডি খেলি,খেলবি তুই?”
-“তুমি পঁচা কেন বলোতো?”
-“দেখ বোন,তোর একশো আশি এঙ্গেলের হাসি দেখে বুঝছি আইস খাবি।বাট্ স্যরি মাই সুইট ফড়িং তোরে ঠান্ডা লাগিয়ে আমি মার খেতে পারবোনা।”
ইয়ারাবী ওর দুই আঙ্গুল দিয়ে একটুখানি দেখিয়ে বলে,
-“এই দেখো এতটুকু খাবো,একটু দাওনা ভাইয়া।নয়তো কান্না করবো।”
-“যা ভাগ আমি দিবোনা।অনেক কষ্টে এই আইসক্রিমের বক্সটা বাঁচিয়েছি।”
ইয়ারাবী একটু ভালো করে বক্সটা দেখে লম্বা একটা হাসি দিয়ে বলে,
-“থাক লাগবেনা তুমি খাও…”
ইমনের এই হাসিটা ভালো লাগলোনা।ওর মনে হচ্ছে কোনো একটা ঘাপলা আছে।তবুও ওইদিকে নজর না দিয়ে ডাইনিংএ যেই বক্সটা রাখতে যাবে ওমনি ওর মা এসে হাত থেকে বক্সটা নিয়ে বলে,
-“ভালো করেছিস বাটিটা বের করে।আজ সাথি আসেনি,মেয়েটা রোস্ট খাওয়ার জিদ ধরেছে।”
ইমন অবাক হয়ে বলে,
-“তো আমি কী করবো?”
-“কিছুনা বক্সটা খুলে দে,ঠান্ডায় জমে গেছে।”
ইমন কিছুটা অবাক হয়ে বলে,
-“আইসক্রিম বক্স খুলে কী করবে আম্মু?”
-“আরে সকালে তো এটাই মসলা রেখেছি..”
-“কী বলো তুমি?আমিতো কাল মেজো ভাইয়ার থেকে লুকিয়ে আইসক্রিম এনেছি…”
-“এনেছিলি কিন্তু এখন সেটা ইরাক আর ইয়ারাবীর পেটে চলে গেছে।সকালে তোকে বোকা বানিয়ে দু’জন পেট পুজো করে আমাকে খালি বক্সটা দিয়ে গেছে।তাই সকালে এটাতে মসলা ভরে রেখেছি,বাটিটা কাজে দিয়েছে।”
মিসেস রহমান কথাটা বলে বক্সটা নিয়ে চলে যায়। ইমনের তো মাথায় বাঁশ পরেছে মনে হচ্ছে,নিজের পকেট মানি দিয়ে কিনে এনেছিলো।ইমন ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে ইয়ারাবী ওর বাবার কোলে মাথা রেখে ইরাকের সাথে ওকে নিয়ে মজা করছে।ইমন বেচারা না পারছে কিছু বলতে না পারছে সইতে।কেননা বিষয়টার সাথে ওর বড় ভাই যুক্ত,ও বড় ভাইকে যমের মতো ভয় পায়।ইয়ারাবী ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“জানি তুমি পঁচা ভাইয়া আমাকে দিবেনা।তাই প্লান করে খেয়ে নিয়েছি,ভ্যা।”
একটা ভেংচি কেঁটে কার্টুন দেখতে থাকে।পরদিন পল্লবীর বিয়ে,তাই ওরা ওদের বাসায় যায়।স্বভাবসুলভ ভাবে ইরাক ওর হাত নিজের মুঠোয় রেখে ঘুরছে।এদিকে ইফাজ ইয়ারাবীর চুল ধরে টান মেরে কেঁটে পরে।ইয়ারাবী ওর খালাকে দিয়ে অনেক সুন্দর করে চুল বেঁধেছে,তাই মেজাজ ওর চরমে পৌঁছে যায়।তিন-চারবার এমন করে কেঁটে পরে,তাই ইয়ারাবী ঘুরে তাকিয়ে দেখে নীল পান্জাবি পরে একজন উল্টো ঘুরে ফোনে কথা বলছে।ইয়ারাবী ইফাজকে ভেবে ওর পিঠে পাঁচ-সাতটা কিল মেরে দিয়ে দেখে এটা ইফাজ নয় বরং পল্লবীর বর সায়ন।বেচারা কিল খেয়ে শেষ,ও কিছুটা ভয়ে ভয়ে ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“শ্যালিকা টাকা কী কম পরেছে যে কিল খেতে হলো?”
-“স্যরি ভাইয়া,আসলে বরেরা শেরোয়ানি পরে কিন্তু আপনি যেটা পরেছেন সেটা ইফাজ ভাইয়াও পরেছে।তাই আমি ওনাকে ভেবে আপনাকে মেরেছি।প্লীজ কাউকে বলেননা।”
সায়ন সেদিন মার খেয়ে কিছুটা ভয়ে ভয়ে থাকে, আর যখনি ইয়ারাবীকে সামনে দেখে দূরে থাকার চেষ্টা করে।মিসেস ইশানি আর মিসেস রহমান কথাটা বলে হাসতে থাকে।মিসেস ইশানি ওনার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আপু কেন জানিনা,ওইদিন ইয়ারাবীর উপর আমার রাগ উঠেনি।বরং ওই ঘটনা শুনে খুব হাসি পেয়েছিলো।ফুয়াদকে রাতে যখন বললাম,তখন ও প্রচুর হেসেছিলো।”
-“মেয়েটার সাথে তোরা একটু কথা বল,তোদের সাথে কথা না বললেও মন কিন্তু পোড়ে।প্রতি রাতে ঘুমের ঘোরে তোদের খোঁজে মেয়েটা।আবরার ইফাজকে ফোন করে বলে কথাগুলো,কান্না করে রাতে।তোরা কী জানি বিয়ের আগে রাতে মেয়েটা ঘুমাতো না?”
-“বলবো আপু,ভাবছি আজই মানিকটার সাথে কথা বলবো।আর জানবো কীভাবে?কখনো বুঝতে দেয়নি।”
-“শোন ইশানি ইয়ারাবীর কোনো কথা কাউকে জানাবিনা।”
-“আচ্ছা..”
(১২০)
কিটি অ্যালকোহলের একটা গ্লাস নিয়ে তাতে হালকা চুমুক দিয়ে সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
-“এটেনশন গাইজস্,পার্টি যেহেতু করছি তো ড্যান্সতো অবশ্যই জুরুরি,তাহলে কাপর ড্যান্স হয়ে যাক।”
কার্লোজ স্ত্রীর হাতে হাত রেখে বলে,
-“অবশ্যই প্রিয়তমা,এমন সুন্দর মুহুর্তে নাচটা উপভোগ করা উচিত।”
মিউজিক ছেরে সবাই কাপল ড্যান্স করছে।কার্লোজ আবরারকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“এমন মুহুর্তে এআর বসে আছে,সত্যিই আমি বিস্মিত।”
-“তেমন কিছু নই বন্ধু,ইয়ার সমস্যা হবে এজন্য বসে আছি।”
মিকও আবরারের সাথে সহমত হয়ে বলে,
-“কোনো ব্যাপার নয় কিছু কাজ করার থেকে বসে দেখা অনেক ভালো।”
আবরার ওর কথা শুনে হেসে গ্লাসে চুমুক দেয়।ইয়ারাবী আবরারের হাত ধরে বলে,
-“আপনি অ্যালকোহল পান করেন?”
-“সব সময় নয় মাঝে মাঝে।”
-“এগুলো নেওয়া ভালো নয়।”
-“আই এ্যাম এ্যা ডাক্তার,ওকে স্যরি হানি আমি জাস্ট কিডিং করছি তোমার সাথে।এটা জুস,অ্যালকোহল নাই।”
-“আমি দুঃখীত”
আবরার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তুমি স্ত্রী বলতে পারো,আই লাইক ইট হানি।সুতরাং তোমাকে স্যরি বলতে হবেনা।”
-“আমি সেটা বলিনি,আমার জন্য আপনি ড্যান্স করতে পারলেন না।”
-“জানো বারবার তোমার ওই চোখে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে।তুমি যদি পাশে থাকো তবে জীবনে আর কীসের প্রয়োজন।”
-“বাসায় যাবোনা?”
-“হ্যাঁ,কেন খারাপ লাগছে?”
-“কিছুটা,”
-“মেন্টালি না ফিজিক্যালি?”
-“দু’টো,সমস্যা নেই।আপনার সুবিধা মতো যাবো।”
কাপল ড্যান্সের পরে পার্টিতে কিছুটা নাস্তা করে ওরা সন্ধ্যার দিকে বের হয়।আবরার ওকে একটা পানির বোতল দিয়ে বলে,
-“খেয়ে নাও এটা,তোমার তরল কিছু দরকার।তুমি জুস খেতে পারোনি আমি দেখেছি।”
ইয়ারাবী পানিটা খেয়ে আবরারের দিকে তাকায়।শীতের মধ্যে প্রতিটা গাড়ির গ্লাস উঠানো থাকলেও এদের গ্লাস নামানো।কেননা ইয়ারাবীর ভোমিট হয়,যার জন্য আবরার গ্লাসটা খোলা রেখেছে।সেই বাতাসে আবরারের ব্রাউন সিল্কি চুলগুলো হাওয়ার তালে তালে বাসাতে উড়ছে।ইয়ারাবীর আবরারের চাপদাঁড়িগুলো ভালো লাগে,ফর্সা মুখের সাথে বেশ মানিয়েছে।আবরারের ঘাড়ের পাশে একটা বড় গোল চিহ্ন যেটা আজ সকালে দেখেছে।চিহ্নটা দেখে গুলির মতো মনে হয়েছে কেননা এমন নিশান ইরাকের হাতে আছে।আবরার সামনের দিকে তাকিয়েই বলে,
-“আমি জানি আমি সুদর্শন যুবক,ক্রাস টাইপের সেটাও জানি। তবে এভাবে নজর দিলে তো মাসুম ছেলেটার নজর লেগে যাবে।”
-“আমি আপনাকে নজর দিচ্ছিনা।তাছাড়া স্ত্রীর নজর স্বামীর লাগেনা,ছোট খালামনি বলেছিলো একদিন।”
-“কী জানি?তুমি বিশ্বাস করো এসবে?”
-“না,তবে একটা প্রশ্ন করি?”
-“বলো?”
-“আপনার কাধে ওটা কীসের চিহ্ন?”
আবরার সাথে সাথে গাড়ির ব্রেক মারে।ইয়ারাবী সামনের গ্লাসের সাথে অনেক জোড়ে বারি খায়।মাথা ঢলতে ঢলতে বলে,
-“এতো জোরে কেউ ব্রেক মারে?”
-“স্যরি হানি,বাট্ তুমি কীভাবে দেখলে?”
-“আজ সকালে,এখন বলবেন না যে মুড নেই আপনার?একটা সত্যি কথা কী জানেন,আপনি না আমার কাছে এই চারমাসেও রহস্যজন থেকে গেছেন।”
আবরার কিছুটা শক্ত গলায় বলে,
-“এমন কিছু নয়,ছোটবেলায় ভাইয়ার সাথে মারামারি করছিলাম তখন লেগেছে।এসব নিয়ে আর কোনো কথা নয়।”
কথাটা বলে গাড়ি চালাতে শুরু করে।ইয়ারাবীর ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“কিন্তু?”
-“আমি বলেছিনা চুপ..”
-“এটা অন্য রাস্তা,আমি সেটাই বলছি…”
আবরার খানিকটা হেসে বলে,
-“শর্টকাট,তুমি ভেবোনা,তোমার স্বামী এখানকার সব চেনে।”
ইয়ারাবী কথাটা শুনে মুচকি হাসে।হঠাৎ করে ওর মাথা ভারী হতে থাকে আর চোখের সামনে সব কিছু ধোঁয়াশা।আচমকা ওর চোখ দু’টো বন্ধ হয়ে যায়।আবরার ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে একহাতে জড়িয়ে ধরে।
#চলবে_____