#জীবন মানে তুমি
#লেখিকা:H.B.Irini Ori
#পর্ব:৮
(৩০)
রাতে যথানিয়মে আটটার দিকে সবাই খেতে বসছে।তারার জোরাজুরিতে ইয়ারাবী নিচের আসতে বাধ্য হয়।একসাথে তিনটা ডাইনিং টেবিল জোড়া লাগিয়ে সবাই বসেছে।ইয়ারাবীকে নামতে দেখে ওর মেজো চাচা বলে উঠে,
-“আরে তারা,ওকে কেন নিয়ে এলি?এমনিতে তো জায়গা নেই এখানে পরে খাবে।”
-“মামা ও অসুস্থ, কথাটা আপনি ভালো করেই জানেন।”
ইরাক ইয়ারাবীকে টেনে নিজের পাশের ফাঁকা চেয়ারে বসিয়ে দেয়।তারা ওর মায়ের সাথে পরে বসবে বলে সবাইকে খাবার বেরে দেয়।তারা ইয়ারাবীকে একটা প্লেট দিতে গেলেই ইরাক দিতে নিষেধ করে।
-“কেন ভাইয়া?ওকে প্লেট না দিলে ও খাবে কীসে?”
-“আমি খাইয়ে দিবো,তাই।”
ওর ছোট চাচী বলে উঠে,
-“তোর কী কোনো কান্ড-জ্ঞান নেই?এত বড় মেয়েকে ভাই খাইয়ে দিবে,ছিঃ ছিঃ এসব দেখা বাকী ছিলো।বড় ভাবি আপনিও কী বলছেন না?”
-“খালা কী বলবে?আমি আমার বোনকে খাইয়ে দিবো সেটাতে আপনার কেন জ্বলছে সেটাই বুঝছিনা।এতই যখন দেখতে পারছেন না তখন যে রাস্তা দিয়ে এসেছেন সেটা দিয়ে বেরিয়ে গেলে খুশি হবো।”
কেউ আর কোনো দ্বিতীয় কথা বলার সাহস পায়নি।সবাই খুব ভালো করেই জানে ইরাকের বেশি শান্ত থাকা কোনো পূর্বাভাসের লক্ষন।ইফাজ সেতো না পারছে হাসতে না পারছে জায়গা থেকে উঠতে।কোনোমতে নিজের হাসি চেপে আছে।মিসেস ইশানি সবাইকে পোলাও ভাত বেরে দিচ্ছেন,তার সাথে রোস্ট,গরুর মাংস,খাসির মাংস,চিংড়ী, মিটচপ,ডাল,সবজি,সালাদ।ইরাকের প্লেটে ভাত বেরে দিয়ে গরুর মাংস দিতে গেলে ইরাক বলে,
-“খালা ইয়ারাবী খাবে কিন্তু,”
-“জানিতো আব্বু..”
-“যদি জেনেই থাকেন তাহলে গরুর মাংসা কেন দিচ্ছেন?আপনি তো ভালো করেই জানেন ওর প্রবলেম আছে।”
-“না মানে মনে ছিলোনা।”
-“কেমন মা আপনি?যে মেয়ের কোনো কিছুই মনে থাকেনা।”
-“ভাইয়া থামোনা,সব সময় যে সব মনে থাকবে তা তো নয়।খাওয়ে দাও পেটে ইন্দুর দৌঁড়াচ্ছে।”
ইরাক মিট চপ,রোস্ট আর দু’পিচ খাসির মাংস দিয়ে পুরো এক প্লেট খাওয়ে দিলো।অবশ্য এত খেতো না তবে ইরাকের চোখ রাঙানিতে ভয়ে ভয়ে সব শেষ করে ফেললো।খাওয়া শেষে তারা টক দই দিতে গেলে ইফাজ চিল্লিয়ে উঠে বলে,
-“পিচ্চিকে দিবেনা ওটা…”
-“কেন ভাইয়া তুমি তো জানো আমি রাতে ডিনারের পর এটা খায়।”
-“এখন খেতে পারবিনা তাই..”
-“কেন কেন খেতে পারবোনা কেন?”
-“সমস্যা হবে তোর..মানে তোর হাত পা কেটে গেছে তাই টক কিছু খেলে সমস্যা হবে।এখন ওপর যা তো..”
-“কিন্তু ভাইয়া আগে তো নিষেধ করতেনা…”
-“আগের কথা আর এখনকার কথা এক নয় ইয়া,চুপচাপ রুমে যা আমি এসে মেডিসিন দিচ্ছি।”
ইয়ারাবী দ্বিতীয় কোনো কথা না বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে পরে।ও খুব ভালো করে জানে ওর ভাই রেগে গেল ওকে নাম ধরে বলে।ডাইনিং থেকে বেরনোর সময় বাপ্পি ওর ওড়না টেনে ধরে।ইয়ারাবী ওর দিকে ঘুরে ওড়না টান দেয়।বাপ্পির ভাগ্য ভালো যে ঘটনা ইফাজ,ইরাকরা কেউ দেখেনি।কেননা সবাই যে যার মতো খাবার খাচ্ছে।
বিপ্লব,বাপ্পি,হৃদয়,তৌফিক এরা চার ভাই দুনিয়ার সব বাজে জিনিসে আকৃষ্ট।গত ছয় বছর আগে ইয়ারাবীরা যখন গ্রামে গিয়েছিলো তাদের সাথে ইরাকরা তিন ভাইও যায়।ইয়ারাবী স্কুলে পরতো তখন।একদিন বিকালে ও নদীর পারে বসে ছিলো,ইরাক কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলো।এমন সময় পিছন থেকে এসে বিপ্লব আর তৌফিক ওর ওড়না নিয়ে নেয়।
-“ভাইয়া আমার ওড়না দাও,তৌফিক ওকে বল ওড়না দিতে।”
-“যদি না দি,কী করবি তুই?তোরে ওড়না ছাড়াই কিন্তু হেব্বি লাগছে,যে ফিগার তোর।”
-“ওর ফিগারের কথা বাদ দিয়ে নিজেদের টা ভাব।এখন ওড়নাটা ভালোই ভালোই দিয়ে দে নয়তো তোদের ফিগার ঠিক থাকবেনা।এত সুন্দর করে ডিজাইন করবো যে ডাক্তাররাও জোরা লাগাতে পারবেনা।”
-“দেখেন ভাই,আমরা ভাই বোনেরা মজা করছি এটা আমাদের ব্যাপার।”
ব্যাস এইটুকু কথা ইরাকের রাগ তোলার জন্য যথেষ্ট ছিলো।বিপ্লবের হাতটাই ভেঙে দিয়েছিলো আর তৌফিককে পানিতে চুবিয়েছিলো।এত কিছু হওয়ার সবাই ইয়ারাবীকে দোষ দিয়েছিলো।সেদিন তো মি.ফুয়াদও ভাইদের কথা শুনে ইয়ারাবীকে মেরেছিলো।ওই রাতে ইরাকরা ইয়ারাবীকে নিয়ে নিজের বাসায় চলে এসেছিলো।
কথায় আছেনা, স্বভাব যায়না ধুলি।মার খেয়েও এদের লজ্জা হয়নি।কুকুরের মতো সেই একই অভ্যাস আছে।কথাগুলো ভাবতেই ওর কষ্ট হয়।দোষ করলো ওরা আর মার খেতে হলো ওকে।নিজের বাবা-মা ভুল বুঝলেও ওর খালাতো ভায়েরা আর তার পরিবার সব সময় ওকে ভালোবেসেছে।গ্রাম থেকে আসার পর ইশানি যখন মেয়েকে আনতে যান তখন ওর খালা ইশানিকে নানা কথা শুনায়।ওর খালুতো ওর বাবার মুখের উপর বলেই দেয়,”তোমার যদি মেয়েকে নিয়ে এতই সমস্যা থাকে তাহলে মামনি আমাদের কাছে থাকবে।”আসলে যাদের ঘরে মেয়ে নেই তারা বোঝে মেয়েরা কী জিনিস।ওর খালু ওকে নিজের মায়ের মতো ভালোবাসে। ইয়ারাবী কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বেডে শুয়ে পরে।তারপর ওর খরগোশটা নিয়ে খেলতে থাকে।
(৩১)
আবরার টানা এক ঘন্টা ধরে ওর পরিবারের সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে কিছু বলার জন্য।আবির এবার অধৈর্য হয়ে বলে,
-“দেখ ভাই কিছু বলার থাকলে বল,নয়তো যেতে দে।অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে বিয়ের কত কাজ বাকী।”
-“আবীর ঠিকই বলছে,তাড়াতাড়ি বল কী বলবি?”
-“পাপা,,,আসলে যা তোমাদের বলবো সেটা শুনে কীভাবে রিয়্যাক্ট করবে সেটা বুঝতে পারছিনা।পাপা আমি ইয়ারাবীকে ভালোবাসি।”
-“রায়হান তোমার ছেলের মাথা মনে হয় খারাপ হয়ে গেছে।শোন তুই ভালোবাসিস বলেই তো বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিচ্ছি।”
-“মম…যদি কোনোদিন শুনু ইয়ারাবী মা হতে পারবেনা তখন কী এভাবে ওকে ভালোবাসবে নাকী দূরে ঠেলে দিবে।”
-“কী বলছিস তুই কিছুইতো বুঝতে পারছিনা…”
আবরার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবাইকে সত্যিটা খুলে বলে।পারলে ও নাও বলতে পারতো কিন্তু সেটা মিথ্যা দিয়ে শুরু হতো।আর ওর পরিবারকে ঠকাতে চায়না।সুখ-শান্তি সব সময় পরিবারকে ঘিরেই পাওয়া যায়।ওর পরিবার সবটা শুনে চুপ করে থেকে হঠাৎ ওর মা বলে,
-“জারবা তুই রুমে যা,তোর যে যে ফ্রেন্ডকে ইনভাইট করবি বলে দে।”
জারবা উঠে ওখান থেকে নিজের রুমে চলে যায়।তারপর আর ওর মা বলে,
-“ইফাজ বলেছে ট্রিটমেন্ট করালে ঠিক হয়ে যাবে তাইতো।”
-“মম এটার কোনো গ্রান্টি নেই।তবে ওর লাইফ রিক্স।”
-“জানিস জারবা তোদের নিজের বোন না।ওকে আমরা এডোপট্ নিয়েছিলাম যখন ওর বয়স মাত্র ২দিন ছিলো।এমন আরো অনেক বাচ্চা আছে যাদের বাবা-মা নেই তাদের মধ্যে কাউকে নিয়ে নাই ওর কোলে তুলে দিস।”
-“মম ও কিছুই জানেনা এই বিষয়ে।”
-“তুমি জানিস কাল যেটা হয়েছিলো সেটা দুর্ঘটনা নয়।”
-“ভাবী কী বলছো এসব?”
-“হামম,ওর খালার সাথে ধাক্কা লাগার কারনে ও রোডে পরে যায়।”
-“আমি ইফাজকে এখনি কল করছি।”
-“দ্বারা ইফাজ কিন্তু এখন ওদের বাসায় আছে।ভালোই ভালোই বিয়েটা মিটে যাক তখন নাই বলিস।”
-“কিন্তু..”
-“ওর এই কিন্তুর চক্করে কাল গায়ে হঁলুদটা না মিস হয়ে যায়।তো বেটা তুই চল এখন আমার সাথে কাজ করবি।”
-“নো ওয়ে ব্রো,কোনোদিন শুনেছিস কোনো বর নিজের বিয়েতে কাজ করে।আমি তো ভাই এখন লম্বা একটা ঘুম দিবো।”
-“মা তোমার বান্দর ছেলের কিছু বলো।”
-“আবির তুই ওতো নিজের বিয়েতে কোনো কাজ করিসনি তাহলে ও কেনো করবে।”
-“মা ঠিকই বলেছে আমার দেবর কেনো কাজ করবে,যাও নিজে গিয়ে সব সামলাও।”
-“তুমিতো আমার পক্ষে থাকতে পারতে, তা নয় শুধু ওর দিকে।থাকবোই না আমি বাইরে গেলাম।”
আবির রাগ করে বাইরে যেয়ে নিজে সব কিছুর দেখা শুনা করে।আবরার ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তোমরা মন থেকে বলছো তো নাকী আমার কথা ভেবে বলছো।”
-“দেখ আবরার, পৃথিবীতে কেউ পার্ফেক্ট হয়ে আসেনা।আর মা হওয়া তো নিজের ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে নই।যদি আল্লাহ না চায় তবে কেউ কিছু করতে পারেনা।আর আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।”
সত্যিই পৃথিবীতে এমন কিছু ভালো মানুষ আজও বেঁচে আছে।যারা অন্ধের মতো মেয়েকে দোষ দেয়না।তারা বুঝে সব কিছু সবার হাতের মুঠোয় থাকেনা।আবরার জানতো তার পরিবার সবটা মেনে নিবে।তারপরও ব্যাপারটা ও ক্লিয়ার করে নেয়,সব সময় যে মানুষের ভাবনা ঠিক থাকবে তা কিন্তু নয়।আবরার সত্যিই নিজেকে ধন্য মনে করে নিজেকে এই পরিবারের সন্তান মনে করে।
(৩২)
মিসেস নিন্দু তড়িঘরি করে আসে মিসেস জামানের বাসায়।আদিব তখন টেবিলে বসে খাচ্ছিলো।মিসেস জামান আদিবের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তোর মামীকে একটা কাজের জন্য ডেকেছিলাম।তুই খা কিছু লাগলে ইতিকে বলিস।”
-“হু”
মিসেস জামান রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়।সেটা দেখে আদিব ইতিকে বলে,
-“তুমি কিছু জানো”
-“জানলেও তো চোখ কান বন্ধ করে রাখতে হয়।”
-“মানে?”
-“কিছুনা রাতে তোমাকে বলবো।এখন খাও তো।”
এদিকে মিসেস জামানে নিন্দুকে বলেন,
-“কী করে?কী দেয়েছে লোকটা?”
-“এই যে আপা, এই যে তাবিজ দেখেছেন এটা ওর ঘরে রাখতে বলছে আর এই লেবু ওর বিছানার নিচে।আর এই পুতুলটা কোনো পুকুরে ফেলতে বলেছে।”
-“কিন্তু ওর তো কাল গায়ে হঁলুদ। তাহলে”
-“আহ্ আপা ,ওতো ভাব্বেন নাতো।আপনার মেয়ে পেলেই হলো সেটা বিয়ের আগে হোক বা পরে।”
-“হামম,তা ঠিক বলছিস।শুনলাম ইরাক এসেছে তাই।”
-“আমিতো যায়নি ওখানে।তবে নিকি এমন কিছুই বললো।”
-“বাল এই ইরাককে নিয়ে খুব ভয় করে,ছেলেটা ঠান্ডা মিজাজের হলেও খুব রাগী।”
-“ঠিকই বলেছেন।কাল কখন যাবেন ওখানে?”
-“গায়ে হঁলুদের সময়ই যাবো।কত ঢং তা একমাত্র আল্লাহ জানে।আমি তো ভেবে পায়না ইয়ারাবীর মধ্যে এমন কী দেখে ফুয়াদের বস যে ওনার ছেলের জন্য বৌ করে ঘরে তুলছে।”
-“ও কিন্তু আমাদের আদিবার মতো ফর্সা না,তারপরও।কী জানি বাপু,,,আমার কী আমি এসবের আগেও নাই পরেও নাই।”
-“হ তা ঠিক কয়ছিস, আমাদের কী?”
অনেকক্ষণ কথাবার্তার পর নিন্দু ওদের বাসা থেকে চলে যায়।এদিকে আদিব ওর স্ত্রীর কাছে সবটা শুনছিলো।
-“তুমি একদম ঠিক করেছো ইতি,হ্যাঁ আমি হিংসা করি ওকে কিন্তু যেদিন ও তোমাকে রক্ত দিয়ে বাঁচালো সেদিন থেকে কিছুটা হলেও ওকে ভালোলাগে।”
-“তুমি ওকে হিংসা করতে কেন?”
-“কারন ওর জন্য আমার বোন কোথাও নিজের নাম ফুটাতে পারতোনা।”
-“ওহ্”
-“তবে আমি এটা সিউর মা ওর কিছুই করতে পারবেনা।”
-“তুমি কিছু বলবেনা তোমার মাকে?”
-“আমি কী বলবো?তার থেকে বরং কাল কী পরে যাবে সেগুলো গুছিয়ে যাও।”
ইতি আর কিছু বললোনা।মনে হয় ওর জানা ছিলো,আদিব কিছু বলবেনা ওর মাকে।কিছু কিছু সন্তান আছে যারা মায়ের অন্যায় চোখের সামনে দেখেও চুপ করে থাকে।আদিবও তাদের মধ্যে একজন।
(৩৩)
রাত দশটা বাজে।ইয়ারাবী নিজের রুমে বসে শেক্সপেয়ার এর একটা উপন্যাস পরছে।এর মধ্যে তারা ওর রুমে এসে ওর পাশে বসে বলে,
-“আমার পুতুলটা কী করে?”
-“উপন্যাস পড়ি।স্টারপু আজ আমার কাছে থাকবে গল্প করবো।”
-“আমি তো তোর কাছেই থাকবো।তুই জানিস না পুতুল ছাড়া ঘুম আসেনা।”
-“আচ্ছা স্টারপু ইফাজ ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে।”
-“এসে তো সবার সাথেই বলেছি।”
-“এমন ঢং করছো যে ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানোনা।”
-“যা পাজি মেয়ে,আমি তোর বড়।”
-“হু তুমি ভালোবাসলে দোষ নেই আর আমি বললেই দোষ।”
-“তোর সাথে কথা বলাই ভুল হয়েছে আমার,গেলাম আমি ঘুমানোর সময় আসবো।”
তারা কোনো ভাবে মানে মানে জায়গা থেকে কেটে পরে।যখন প্রথমবার তারা ইফাজকে দেখেছিলো তখন থেকেই ওর ভালো লেগে যায়।আর ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা।এই বিষয়টা শুধু ইয়ারাবীয় জানে,ওই জানতো না।গল্পে গল্পে একদিন তারা কথাটা বলে ফেলে।তখন থেকেই তারাকে দেখলে এই বিষয় নিয়ে পচায়।
ইয়ারাবীর রুমে বসে থাকতে বোরিং লাগছে।তাই সে রুম থেকে বেরিয়ে ইরাকদের রুমে যাচ্ছিলো গল্প করার জন্য।মাঝ রাস্তায় বাপ্পি এসে পথ আটকায়।আজ ইয়ারাবীর একটা হাফ হাতা টপস্ এর একটা ট্রাওজার পরেছে,আর সব সময়ের মতো স্কার্ফ পরে আছে।বাপ্পি ওর দিকে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলে,
-“দিন দিন এত সুন্দর কীভাবে হচ্ছিস বলতো?”
-“তোদের মতো ক্যারেক্টারলেস্ মানুষদের সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছা নেই।”
-“খুব বাহাদুরি করছিস দেখছি।সব বাহাদুরি শেষ করে দিবো।”
-“ইউ্ নো বাপ্পি,আগেরবার তোর ভাইয়ের সাথে কী হয়েছিলো মনে আছে তো।”
-“দেখ বেশি বাড়াবাড়ি করলে কিন্তু…”
-“রাস্তা ছাড় নয়তো তোর অবস্থাও আমি বিপ্লবের মতো করবো।আর শোন নিজের ভালো চাইলে আমার সামনে আসবিনা।যা ভাগ এখান থেকে।”
ইয়ারাবীর চোখের চশমাটা ঠিক করে ইরাকদের রুমে যেয়ে নক করে।ওরা দু’ভাই কোনো একটা বিষয়ে কথা বলছিলো।ইয়ারাবীকে দেখে থেমে যায়।
-“তোমরা বিজি নাকী?ডিস্টার্ব করলাম তোমাদের?”
-“আমার হাতে কয়দিন জন্য মার খাসনা।ভিতরে আয়।”
ইয়ারাবী রুমে এসে ইফাজের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে।ইরাক হঠাৎ করে বলে উঠে,
-“তোর ওই চাচতো ভাইগুলোকে কাল চলে যেতে বলবি।”
-“কেন?ওরা তো এবার কিছুই করেনি?”
-“তুই কী আমাদের কানা ভাবিস নাকী?তখন বাপ্পি তোর ওড়না টেনে ধরেছিলো সেটা খুব ভালো করেই দেখেছি।শুধুমাত্র টেবিলে ঝামেলা করতে চাইনি তাই ছেড়ে দিয়েছি।”
-“চিন্তা করনা ওরা আর এমন কিছুই করবেনা।”
-“না করলেই ভালো।”
ইরাক সোফায় বসে কফি খাচ্ছে।ইরাকের এটা খুব বাজে অভ্যাস যে সারাদিনে ১০-১২ কাপের মতো কফি খায়।ইফাজ ওর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
-“পিচ্চি?”
-“হামম, বলো…”
-“পেটে কী আর কোনো ব্যাথা করছে?”
-“খাওয়ার পর একটু করছিলো।দুই দিনে ঠিক হয়ে যাবে।”
ইফাজ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।মেয়েটা জানেনা ভবিষ্যতে কতবড় একটা খারাপ খবর তার জন্য অপেক্ষা করছে।যদি ভালোই ভালোই ট্রিটমেন্ট হয়ে যায় তবে আর কোনো কষ্ট থাকবেনা।ইয়ারাবী ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমি কি আগের থেকে আরো খারাপ দেখতে লাগছি ওভাবে তাকিয়ে আছো?”
-“কে বললো তুই দেখতে খারাপ।”
-“আচ্ছা বাদ দাও।ভাইয়া স্টারপুকে কেমন লাগে তোমার?”
ইরাক ওর কথা শুনে বড়সরো একটা বিষম খায়।তারপর হাসতে হাসতে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তুই কবে থেকে ঘটকালি শুরু করেছিস বলতো?”
-“আগে ভাইয়াকে বলতে বলো তারপর বলবো।”
ইফাজ এবার নড়েচড়ে বসে বলে,
-“এই স্টারপু কেরে?”
-“কেন তারাপু।”
-“আমার কেমন লাগা দিয়ে কী করবি তুই?”
-“বাহ্ বয়স কত হচ্ছে সে খেয়াল আছে,বোন হিসাবে দায়িত্ব আছেনা।তাছাড়া আমার স্টারপু খুব ভালো।তোমাকে ভালো মানাবে।”
-“আমার বড় কিন্তু ইরাক ভাইয়া তার জন্য আগে মেয়ে খোঁজ?”
-“ওটার মিশনও চলছে।”
ইরাক হাসতে হাসতে বলে,
-“ওকে তুই যেটাকে বলবি সেটাকে বিয়ে করবো।এখন যেয়ে ঘুমিয়ে পর অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে।আর শোন কাউকে সাথে নিয়ে ঘুমাবি।”
-“স্টারপুর সাথে থাকে,টিকলিও থাকবে।আর অনুতো আছেই।”
-“পিচ্চি শোন,রাতে যদি কোনো সমস্যা হয় কল করবি।কোনো রকম হেয়ালি করবিনা।”
-“আচ্ছা বাবা,আমি ঘুমাতে গেলাম গুড নাইট।বুঝছিনা আজ এমনিতেও খুব ঘুম পাচ্ছে।”
ইফাজ ওর কথা শুনে হাসে।ইফাজের ও তারাকে ভালো লাগে।কিন্তু মেয়েটা ওকে দেখলে কেমন একটা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।ইয়ারাবী চলে যাওয়ার পর মি.ফুয়াদ ওদের রুমে ঢোকে আর বলে,
-“যাক তোমার জন্য একটু হলেও মেয়েটা হাসছে।”
-“কিন্তু আপনি যা করেছেন তাও কিন্তু ভোলার মতো নয়।ইয়াকে আমরা নিজের বোনের মতো মনে করি।”
-“বিয়ে বাড়িতে ঝামেলা শুরু হবে তোমরা দু’ভাই একটু ওর দিকে খেয়াল রেখো।আমার ভাই এর অমানুষ ছেলেগুলো যেনো ওর কিছুনা করে।”
-“আপনি চিন্তা করবেন না খালু,ওর দিকে ভালো করে খেয়াল রাখবো।”
#চলবে________