#জীবনসঙ্গী_২
#Chhamina_Begam
ট্রেনে ওঠার পর রাহাত জানালার পাশে একটি সিট ফাকা পেয়ে বসে পরে। চারপাশে তখন নানা বয়সী যাত্রীদের কোলাহলে পুরো কামড়া সরগরম হয়ে উঠেছে । ব্যাগপ্যাকটা সিটের পিছনে রেখে ফোন করে কাউকে ।নিজের বর্তমান অবস্থার কথা জানিয়ে কল কেটে দেয় । জানালা দিয়ে আনমনে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা মনে করে আত্মগ্লানিতে মন বিমর্ষ হয়ে পড়ে রাহাতের । নিজের আচরণে নিজেই রুষ্ট হয় সে। ওর তাড়াহুড়োর কারণে মেয়েটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে মেয়েটি পড়ে গেল । অথচ সে কোনো হেল্প না করেই চলে এল। কি জানি মেয়েটি কোথায় যাচ্ছে ?ওর জন্য আবার ট্রেন মিস করেনি তো ? রাহাত মুখ দিয়ে বিরক্তিসূচক শব্দ করে । পুরো ট্রেন জার্নিতে বারবার সেই ঘটনা রাহাতকে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলতে দেয় না । এমনটা হওয়ার অবশ্য কোনো কারণ নেই । সাধারনত রাস্তা ঘাটে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে । তবুও সেই স্বল্পমেয়াদি স্মৃতি টুকু রাহাতের মানসপটে এক গভীর ছাপ রেখে যায় । বারবার মনে পড়তে থাকে মেয়েটিকে । অথচ সে আহামরি রুপসী ও নয় । তবে সেই চেহারায় স্নিগ্ধতা আছে। মেয়েটি যখন পড়ে যায় একপলকের জন্যে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছিল রাহাত । বিরক্তিতে মেয়েটির ভ্রু কুচকে গিয়েছিল । শ্যামলা মেয়েটির কোমর অবধি খোলা অবাধ্য চুলগুলো যখন মুখে এসে পড়ছিল আর সে ডান হাতে সেগুলো জোরপূর্বক সরিয়ে দিয়ে অগ্নি দৃষ্টি মেলে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল । তখন এক পলকের জন্য রাহাত ভড়কে গিয়েছিল । কিন্ত অ্যানাউন্সমেন্টের মহিলাটির যান্ত্রিক আওয়াজ কানে আসতেই দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে ট্রেন ধরার জন্য ছুটে চলে আসে । বড়ো বড়ো অপরাধীদের ধাওয়া করে বেড়ানো রাহাত এক বাচ্চা মেয়ের অগ্নিদৃষ্টিতে ভড়কে গেছে ভাবতেই হাসি পেয়ে যায় রাহাতের । কিন্তু সে হয়তো খেয়াল করে না সেই এক টুকরো মুহুর্ত কীভাবে মনের ডাইরিতে বন্দী হয়ে গেছে । যা হয়তো ইহজীবনে অস্পষ্ট হওয়ার নয় ।
রায়গঞ্জ স্টেশনে পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেল আদিলাদের । ওরা স্টেশনে একটি অটোরিকশা ভাড়া করে ওর খালার বাড়ি উদ্দেশ্যে রওনা দিল । কারণ ওর খালার বাড়ি রায়গঞ্জ শহরে নয় । একটু গ্রামের দিকে , প্রায় পৌনে এক ঘন্টার রাস্তা । ওরা যখন ওখানে পৌঁছলো ওর খালার বড় ছেলে ফাহিম এসে ওদের হালচাল জিজ্ঞেস করত শুরু করলে মাহি এসে আদিলাকে জড়িয়ে ধরে এবং টেনে নিজের রুমে নিয়ে নিয়ে যায় । তা দেখে বাকি সবাই হেসে উঠে ।
আদিলা আর মাহি প্রায় সমবয়সী । তাই তাদের মধ্যে খুব মিল । কখনো মুখে না বললেও একে অপরকে ওরা খুব ভালোবাসে। বলা যায় দুজন দুজনের সিক্রেট ডায়েরি। আদিলার খালা ওর মা রেহনুমাকে সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরে এবং ড্রয়িং রুমে নিয়ে গিয়ে বসে গল্প জুড়ে দেন। সায়নকে তো আসার পর থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ।সে মাহির ছোটভাই জিসানের সঙ্গে পুরো বাড়ি ঘুরঘুর করে বেড়াচ্ছে । ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়ার পর মাহি আর আদিলা গল্পের ডালি খুলে বসে। আজ তো আদিলা কথা বলার সুযোগই পাচ্ছে না । মাহি একনাগাড়ে ওর হবু বর আরমানের সম্পর্কে বলেই চলেছে । ওরা কোথায় কোথায় ঘুরতে গেছে ? কি কি করেছে ? আরমান কতটা ভালোবাসে মাহিকে ? ওকে স্পেশাল ফিল করানোর জন্য কি কি করেছে ? মাহির বিয়ের শাড়ি, গহনা দেখে গল্প করতে করতেই ডিনারের সময় হয়ে যাওয়ায় মাহির আম্মু ওদের দুজনকে খেতে ডাকে। আজ সারাদিনের জার্নিতে আদিলা খুব ক্লান্ত । তাই সে আর নিচে নামতে চাইল না । তাই মাহি ওদের দুজনের খাবার উপরে রুমে নিয়ে আসে ।খাওয়া-দাওয়ার পর অনেক রাত অব্দি গল্প করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ল।
ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল আদিলা-মাহি । দরজার কড়াঘাতে ঘুম ভেঙে গেলে মাহি ওর মাকে জানায় একটু পড়েই আসছে ওরা । ফ্রেশ হয়ে নীচে নেমে দেখে সবাই ওদের জন্যই নাস্তার টেবিলে অপেক্ষা করছে ।নাস্তা শুরুর আগে মাহির আম্মু ফাহিমকে না দেখতে পেয়ে মাহিকে বলে ওকে ডেকে নিয়ে আসতে । তখনই আদিলা বলে উঠল,
-” খালাম্মা আমি গিয়ে ডেকে নিয়ে আসি ভাইয়াকে ” -“যাবি ? আচ্ছা, যা ”
খালার সম্মতি পেয়ে আদিলা উপরে চলে যায় ।
ফাহিমের রুমটি মাহির রুমের পাশেই ।আদিলা রুমের দরজায় নক করার জন্য হাত ঠেকাতেই দখল দরজা ভেজানো আছে । একবার ফাহিমকে ডেকেও কোনো সারা না পেয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে । বিছানায় তখন ব্ল্যাঙ্কেট মুড়ি দিয়ে গভীর ঘুমে ডুবে আছে কেউ । আদিলার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসে। মাথার ওপর ব্লাঙ্কেট হালকা সরিয়ে নাকি সুরে ডেকে ওঠে ,
-“ভাইয়াআআ ,,,,,”
কিন্তু কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙলে তো ! তবে হাল ছাড়ার পাত্রী নয় আদিলা । সে তুমুল উৎসাহে আবার ঘুম ভাঙাতে লেগে যায় ফাহিমের । কাতুকুতু দিয়ে বলে,
-“এই ভাইয়া ওঠ,,,সকাল হয়ে গেছে আর কত ঘুমাবি ? ভাইয়া,,,খালাম্মা ডাকছে তোকে ,, তাড়াতাড়ি ওঠ না “….বলেই ব্ল্যাঙ্কেট ধরে টানাটানি করতে শুরু করে দেয় । কিন্তু সড়ে যাওয়া ব্লাঙ্কেটের আড়াল থেকে যে বেরুল তাকে দেখে ভয়ে, বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠল আদিলা । সাথে সাথে ছিটকে সরে গেল বিছানা থেকে । বিছানায় বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে থাকা ব্যক্তিও তখন বিস্ময়ে হতভম্ভ ।
ফাহিম ব্যালকনিতে ওর গার্লফ্রেন্ড মিতুর সঙ্গে কথা বলছিল । ঘরের ভিতর আদিলার চিৎকার শুনে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে । আদিলার চুপসে যাওয়া মুখের দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখে ফাহিম একটু আস্বস্ত হল। আদিলাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি তুই ,,,
কিন্তু আদিলাকে নির্বিকার দেখে ফাহিম আবার বলে,
-আরে, এতে অকওয়াড হওয়ার কিছু নেই । ও আমার বন্ধু রাহাত । কাল তোরা আসার পরেই ও এসেছিল । তুই তো এসেই মাহির সঙ্গে গল্প জুড়ে দিয়েছিলি ,
। তাই আর পরিচয় করানো হয়ে ওঠেনি। ”
-” ওহ । তোকে খালাম্মা ডাকছে । তারাতারি নিচে আয় । নাস্তার টেবিলে সবাই ওয়েট করছে “- বলেই আদিলা বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। রাহাতের বিস্ময়ের ঘোর তখনও কাটেনি। ও এখনো আদিলার গমন পথের দিকে তাকিয়ে আছে । ওর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বুঝতে পেরে ফাহিম বলে,
– ” তুই এখনো ভুতের মতো বসে আছিস কেন ? ”
-“ও কে ? ”
-“ও আমার খালাতো বোন আদিলা । কাল তোর আসার আরেকটু আগে এসেছিল । নে এবার ওঠ । ফ্রেশ হয়ে আয় । সবাই অপেক্ষা করছে ।একসঙ্গে নিচে নামব দুজনে ।”
-“হুম , দশ মিনিট অপেক্ষা কর ।আসছি আমি ” বলে রাহাত বাথরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
আদিলা নিচে এসে চেয়ার টেনে বসতেই মাহি জিজ্ঞেস করল,
– ” কিরে এত দেরি হল কেন ? ”
“-” ভাইয়া আসছে ,” বলেই আদিলা খাওয়া শুরু করে। সিড়িতে জুতোর শব্দ হতেই মাথা তুলে দেখে রাহাত আর ফাহিম কথা বলতে বলতে একসঙ্গে সিঁড়ি বেয়ে নামছে । এই প্রথম আদিলা ভালো করে রাহাতকে লক্ষ্য করল । প্রায় ছয় ফুট লম্বা , চওড়া ছাতির রাহাত দেখতে বেশ সুন্দর । ফর্সা গায়ের রঙ ,ঘন জোড়া ভ্রু ,টিকালো নাক আর সিল্কি চুলগুলো হাওয়াতে একটু একটু উড়ছে আর চাপ দাড়ি গুলো ছোট কিন্তু সুন্দর করে ছাঁটা । আদিলার মুখ দিয়ে নিজের অজান্তেই “মাশাআল্লাহ” বেরিয়ে গেল। ফাহিমের সাথে কথা বললেও আড়চোখে আদিলাকে খেয়াল করছিল রাহাত । আদিলার চোখের মুগ্ধতা রাহাতের হৃদয়ে এক শীতল পরশ বইয়ে দেয় । ঠোঁটের কোণে সুক্ষ্ম এক হাসির রেখা ফুটে ওঠে । কিন্তু সুক্ষ্ম হলেও আদিলা ঠিকই ধরে ফেলে সেই হাসিটুকু । সাথে এক অজানা অস্বস্থি ঘিরে ধরে আদিলাকে । চোখ ফিরিয়ে নেয় সঙ্গে সঙ্গে । মনে মনে নিজেকে খুব করে বকে দেয় সে । ছিঃ এত বেহায়া তুই আদিলা ! একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে এভাবে হাঁ করে গিলছিস কি করে ? মানসম্মান সব খোয়াতে চাস বুঝি ? তারপর কালকের ঘটনা মনে পড়তেই চাপা এক রাগ ভর করে মস্তিষ্কে । নিঃশব্দে নাস্তা টুকু শেষ করে উঠে পড়ে আদিলা । তাড়াতাড়ি সরে পড়তে চায় ওই স্থান থেকে । এড়িয়ে যেতে চায় । তবে সেটা নিজেকে নাকি রাহাতকে তা তো অদৃষ্টই ভালো জানে । মাহিকে বলে,
-” আপু আমি রুমে যাচ্ছি । তোর খাওয়া হয়ে গেলে চলে আসিস “,
রাহাতকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় একবার তীক্ষ্ণ চোখে দেখে নেয় । তারপর গটগট করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। ফাহিম ব্যাপারটা লক্ষ্য করে । অদ্ভুত লাগে ওর । কিন্তু কিছু বলে না । ছোটবেলা থেকেই ও খুব ভালো করে চেনে আদিলাকে। আদিলা কখন রেগে থাকে কখন হাসিখুশি থাকে তা সবই প্রায় নখদর্পণে ওর । পড়ে জেনে নেবে ভাবলেও নিজেকে প্রশ্ন করা থেকে আটকাতে পারে না । আদি এভাবে চলে গেল কেন ? মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে রেগে আছে । কিন্তু রাগ করার কথা তো নয় । বরং ওর লজ্জা পাওয়া দরকার ছিল এখন । এমনটাই তো হওয়ার কথা । কিন্তু স্ট্রেঞ্জ ! উলটো টা হচ্ছে । নিশ্চয়ই কোনো ব্যাপার আছে ? জিজ্ঞেস করতে হবে ।
-” রাহাত ভাইয়া কেমন আছ ? কালকে তো কথাই হল না ।আসলে কি বলতো ? অনেকদিন পর ওর সঙ্গে দেখা হলো তো তাই আমরা গল্প জুড়ে দিয়েছিলাম । তুমি যে এসেছ খেয়ালই করিনি । সরি ফর দ্যাট ”
মুচকি হাসে রাহাত ।বলে,
– “আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি, তুমি কেমন আছ মাহি ?”
– “আমিও ভালো আছি ”
– আপু তাড়াতাড়ি আয় ” আদিলার জোরালো কন্ঠস্বরে মাহি হেসে বলে,
– ” ভাইয়া, পরে কথা বলব, ঠিক আছে। ”
রাহাত মৃদু হেসে মাথা নাড়ে । মাহি চলে যেতেই রাহাত একবার মাথা ঘুরিয়ে উপরে তাকায় । দেখে আদিলা রেলিংয়ে ভর দিয়ে ওকে দেখছে । রাহাত তাকাতে ইতস্ততঃ করে চোখ সরিয়ে নেয় । অবাক হয় রাহাত । মেয়েটা মনে হয় রেগে আছে ? মুখ দেখে তো তাই মনে হচ্ছে । আমার সরি বলা উচিত ,,,”
মাহি ঘরে এসে দেখল আদিলা বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে মোবাইল চালাচ্ছে । বিছানায় বসে মাহি জিজ্ঞেস করল ,
-” কিরে আদি , তুই ওভাবে উঠে এলি কেন ? ”
-” এমনি । ওখানে ভালো লাগছিল না তাই ।”
-“আচ্ছা ? তাহলে মুখটা এমন বাংলার পাঁচ হয়ে আছে কেন ? ”
আদিলাকে চুপ করে থাকতে দেখে মাহি আবার বলল,
-“কিরে বল , মন খারাপ কেন তোর ? কেউ কিছু বলেছে নাকি ?”
-” সব ওই বদ লোকটার জন্য । ”
-বদ লোক ? সেটা আবার কে ?”
-” কে আবার ? তোর ওই রাহাত ভাইয়া । ”
মাহি অনুসন্ধিৎসু হয়ে তাকাল । আদিলা বলল, -“জানিস আপু কাল যখন আমি আলিপুর স্টেশনে ফাস্টফুড কিনতে নেমেছিলাম তখন ফেরার পথে ওই লোকটা আমায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল । সরি বলা তো দুরে থাক ওনার মুখ দেখে মনেই হচ্ছিল না যে সে নিজের কৃতকর্মের জন্য একটুও অনুশোচনা বোধ করছে । আর একটু হলে আমি ট্রেন মিস করে ফেলতাম ।এখন তুই বল আমাকে আমি রাগ না করে কি পুজো করবো ওনার ? ”
– ” আচ্ছা এই ব্যাপার । এই জন্যই তোর মুডের এমন করুন দশা । কিন্তু আবার মনে হয় তোর নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হচ্ছে । রাহাত ভাইয়া এমন ছেলেই নয় । তিনি একজন খুব ভালো মানুষ । সবাইকে কত হেল্প করেন !”
– ” বাহ, তুই তো দেখছি ওনার বিশ্বস্থ চামচি ! শোন আপু, তুই না একদম ওনার সাইট নিয়ে কথা বলবি না । তাহলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিচ্ছি । তিনি যত ভালো লোকই হন না কেন আমার সঙ্গে তিনি কোনো ভালো করেননি । বরং ওনার জন্য আমি ট্রেন মিস করে ফেলতাম । তাই আমি ওনার গুনগান শুনতে একদম আগ্রহী নই …”
– “আচ্ছা বাবা, ঠিক আছে আর বলবো না ”
এদিকে নাস্তা হয়ে গেলে ফাহিম রাহাতকে বলল ,
-“চল , আমরা একটু বাইরে ডেকোরেশনের কাজটা দেখে আসি ।কতদূর এগুলো ? ”
-” চল ”
বাইরে বেরিয়ে এসে ফাহিম রাহাতকে জিজ্ঞেস করে ,
-“বুনু তোর দিকে ওরকম করে তাকালো কেন রে ? মনে হচ্ছিল সে রেগে আছে তোর ওপরে ! যদিও এমনটা হওয়ার কথা নয় ! আচ্ছা, তোরা কি আগে থেকে চিনিস নাকি একে অপরকে ?”
– “আরে না না সেরকম কিছু নয়। তোকে কাল রাতে বললাম না স্টেশনে একটা মেয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মেয়েটি পড়ে গিয়েছিল ।আর আমি ওকে হেল্প না করে চলে এসেছি । সেটা আর কেউ নয় তোর বোন ছিল ।”
-“কি ! কি বলছিস তুই ,ওটা আদিলা ছিল! তাই বলি । ও এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেন ? তুই ও পারিস । দেখে চলবি তো । তোর জন্য যদি ও ট্রেন মিস করত …. ”
-” পোড়া জায়গায় তুই আবার নুনের ছিটা দিচ্ছিস ? এমনিতেই গিল্টি ফিল হচ্ছে । তুই সেটা আর বাড়াস না । ”
-” আচ্ছা কোনো ব্যাপার না ।ওর সাথে কথা বলে সব মিটমাট করে নিস ।তবে সে মাফ করলে ভালো নাহলে কপালে দুঃখ আছে তোর,,”
-“মানে ? বুঝলাম না ”
-মানে হচ্ছে , আদিলা এমনিতে শান্ত । তবে তুই কাজ তো ঠিক করিস নি । অন্তত একটা সরি বলা দরকার ছিল । কিন্তু তুই তা করিস নি ।ও হয়তো খুব রেগে আছে ! তাই একটু সামলে থাকিস । জানিসই তো ঝড়ের আগে প্রকৃতি খুব শান্ত থাকে ”
ফাহিমের কথায় রাহাত একটু চিন্তিত হয়ে পড়ল । ক্রিমিনালদের হ্যান্ডেল কথা ওর জন্য বা হাতের কাজ । কিন্তু মেয়েদের রাগ কিভাবে হ্যান্ডেল করে ?
– “জানিস একবার কি হয়েছিল ? তখন আমরা অনেক ছোট । আমার বয়স তখন দশ কি এগারো । আর ও ছোট্ট পিচ্চি একটা । খালামনি সারাক্ষণ ওকে পুতুলের মতো সাজিয়ে গুছিয়ে রাখত । আমাদের সবার চোখের মনি সে । এত চঞ্চল ছিল যে ফ্রক পরে সারাক্ষণ ঘুরঘুর করত । আর ওর সঙ্গে আমাদের সবাইকেও চরকির মতো ঘুরতে হত । সেবার আমরা সবাই নানু বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম । তো আমি না ভুল করে ওর জন্য রেখে দেওয়া চকলেট খেয়ে ফেলেছিলাম ।তাই নিয়ে সেকি রাগ মেয়ের ! কিচ্ছু খাবে না । কারো সঙ্গে কথা বলবে না । গাল ফুলিয়ে কান্না জুড়ে দিয়েছিল । আমি হাজার বার সরি বলেও ওকে শান্ত করতে পারিনি । তারপর যখন বিকেলে সবাই ঘুরতে যেতে বেরুল । আমি আমার একটা জামাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না । শেষে মামিমা কলপাড়ে গিয়ে দেখে এক বালতি জলে আমার সব জামা ভালো জিয়ে রাখা । আমার বুঝতে বাকি নেই এইকাজ কার ? ও রাগ করে আমার সমস্ত নতুন জামাকাপড় জলে ভিজিয়ে রেখেছিল যাতে আমি মামা খালাম্মাদের সঙ্গে বেড়াতে যেতে না পারি । ভাব কেমন বদমাইশ ছিল ! ফলস্বরূপ আমাকে সারাদিন বাড়িতে একা থাকতে হয়েছিল নানুর সাথে ।আর ওরা সারাদিন ঘুরে বেরিয়ে মজা করে বিকেলে ফিরে ছিল। কিন্তু কি জানিস ও আমার উপর রাগ করেছিল ঠিকই কিন্তু আসার পথে ও আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসে । আমার ভীষণ মন খারাপ ছিল । ওর সঙ্গে কথা বলছিলাম না । তাই সে ওর ছোট ছোট হাত গুলো দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে ,
– “ভাইয়া ,তুমি কি আমার উপর রাগ করেছ ? ”
আমার উত্তর না পেয়ে সে আবার বলে ,
– ” ভাইয়া , এই দেখ আমি তোমার জন্য এত্তগুলো চকলেট এনেছি । ”
-” সর, বদ মেয়ে কোথাকার ! আমার যাওয়া বানচাল করে দিয়ে এখন ঘুষ দিচ্ছিস ? তোর সাথে কথা নেই আমার । ”
আমি ওকে ঠেলে সরিয়ে দিলে ও আর ও শক্ত করে গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
-” তুমি আমার চকলেট কেন খেয়েছ বল ? তাই তো আমি তোমার জামা গুলো ভিজিয়ে রেখেছি । তাহলে তুমি বেড়াতে যেতে পারবে না । এটা কিন্তু তোমার পানিশমেন্ট ছিল ,,”
ফাহিম হাসিমুখে বলে কথাগুলো । স্মৃতিচারণ করে আবেগী হয়ে পড়ে সে । স্বগোতক্তি করে ,
-পিচ্চি একটা , এত বদমাশ ছিল তখন !
রাহাত হাসে । সে মুগ্ধ হয় । পছন্দের মানুষ গুলোর কথা শুনতেও ভালো লাগে ।
To be continue…….
*আমি নিয়মিত এই গল্পটা দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু দিতে পারিনি । আজ দুদিন হল আমার নানা ইন্তেকাল করেছেন । লেখার মতো মন, মানসিকতা কিছুই ছিল না । আশা করি বুঝবেন…… ধন্যবাদ ।