জান্নাহ্
পর্বঃ৬
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
মেঘমেদুর দিন।সূর্যের আলোর প্রখরতা নেই বললেই চলে।পুরো পরিবেশে গুমোট ভাব।বৃষ্টি হবে ভেবে আজ আর স্কুল যায়নি জান্নাহ্।অবশ্য তার মনটাও ভালো নেই।সারহানকে বিয়ে করাবে এই কথা শোনার পর আর কিছুই ভালো লাগছে না।মস্তিষ্ক জুড়ে এলোমেলো চিন্তা ভর করছে।
শুভ্রার ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায় জান্নাহ্।অনেকটা দ্বিধা নিয়ে ভেতরে ঢুকে।জান্নাহ্কে দেখে পুলকিত হয় শুভ্রা।মেয়েটাকে দেখলেই আদর লাগে।জান্নাহ্কে বসতে বলে শুভ্রা।জান্নাহ্ এর চিন্তিত মুখ দেখে শুভ্রা কপাল কুঁচকে বললো—
“কিরে,কী হয়েছে?
জান্নাহ্ সংশয় নিয়ে বললো–
“একটা কথা বলবো?
“বল।”
ইতস্তত বোধ করে জান্নাহ্।দ্বিধান্বিত গলায় বললো–
“আম্মা,কী এখনো আমার উপর রেগে আছেন?তিনি খেয়েছেন তো?
শুভ্রা বিস্মিত হয়।মেয়েটাকে এতো কথা বললো তার পরেও কথা চিন্তা শাশুড়ির জন্য!
শুভ্রা অস্ফুট স্বরে বললো–
“খেয়েছে।”
শ্বাস ফেলে জান্নাহ্।তার বুকে যেনো পাথর চাপা ছিলো যা এখন অবতরণ করেছে মাটিতে।
তাদের দুই জনের কথার মাঝখানে ঘরে ঢোকে তিতি।গিয়েই ঝপাৎ করে জান্নাহ্ এর কোলে বসে যায়।আচমকা বসাতে জান্নাহ্ এর কনুই গিয়ে লাগে পেছনে থাকা দেয়ালে।ক্ষত স্থান ঝাঝিয়ে উঠে।মুখ দিয়ে আওয়াজ করে–
“আহ্!
তিতি তার আদো আদো বুলিতে বললো–
“ব্যাথা লেগেছে পরীমা?
“না সোনা।”
“দেখি,দেখি।”
তিতি জান্নাহ্ এর হাত ধরে কনুইয়ের ক্ষততে চুমু খেয়ে ঝমঝম করে বললো–
“এইবার ভালো হয় যাবে পরীমা।”
জান্নাহ্ তিতির দু’গালে দুটো শক্ত চুমু খেয়ে বললো–
“জানি তো।আমার তিতি সোনা চুমু দিলে সব ভালো হয়ে যায়।”
তিতি জান্নাহ্ এর করা আদরের বিপরীতে তার ঠোঁটে চুমু খায়।আর তখন তিতির চোখ যায় জান্নাহ্ এর গলার বেশ খানিকটা নিচে।কামড়ের দাগ স্পষ্টত।নীলচে হয়ে আছে তা।তিতি হঠাৎ বসাতে জান্নাহ্ এর জামার গলা অনেকটা নিচে নেমে আসে। তিতি বড় বড় চোখ করে বিস্মিত গলায় বললো–
“এখানে কী হয়েছে পরী মা?
জান্নাহ হতভম্ব হয়ে যায়। ত্রস্ত হাতে তিতিকে সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো–
“আমি গেলাম আপু।”
শুভ্রাও তা দেখেছে।কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া সে করলো না।
নিজের ঘরে এসে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে জান্নাহ্।ধীরপায়ে আয়নার কাছে গিয়ে নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকায়।জামার গলাটা নিচে টেনে ধরে।জান্নাহ্ এর বুকের কাছাকাছি অংশে সেই দাগ।সেখানে একটা লাল তিলও রয়েছে।তা সারহানের খুব পছন্দ।সেই বিয়ের প্রথম রাত থেকে সারহান তার তীক্ষ্ম দাঁতের সুক্ষ্ম ব্যবহার করে সেখানে।তা আজও চলমান।এই দাগ মিটানোর অধিকার জান্নাহ্ এর নেই।
জান্নাহ্ এর স্বলনালী দিয়ে বের হয়ে আসে এক শীতল দীর্ঘশ্বাস।এতোকিছুর পরেও সে পারবে তো সারহানকে নিজের করে রাখতে?
,
,
,
দু’ধারে গোলাপ,চাঁপা আর গাঁদা ফুলের গাছ।বাদামী আর মেটে রঙের মিশেলে সুসজ্জিত মন্দির।প্রায় ত্রিশ ধাপ সিঁড়ি অতিক্রম করে মন্দিরে ঢুকতে হয়।পূজো শেষ করে হাতে পূজোর থালা নিয়ে নামছে শ্রীজা।গাঢ় বেগুনি রঙের শিপন শাড়ি ভেদ করে তার ফর্সা মেদহীন উদরে অক্ষি আবদ্ধ সারহানের।মন্দির থেকে কয়েক কদম দূরে নিজের গাড়ি দাঁড় করিয়ে সিঁড়ির শেষ লগ্নেই পকেটে দু’হাত গুঁজে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সারহান।অধরে স্মিত হাসি।যা শুধু শ্রীজার চোখে পড়েছে।সারহানের এই নির্লিপ্ত হাসিতে তাকে আরো কমনীয় লাগে।মারবেলের মতো বাদামী অক্ষিমনি দিয়ে যখন একবার তাকায় সেই চাহনিতেই নিজেকে আহুতি দেয় শ্রীজা।সারহানের সামনে এসে থালা থেকে কুমকুম নিয়ে সারহানের কপাল ছুঁতে গেলেই মাথা হটায় সারহান।গাঢ় গলায় বললো–
“একদম না।ভুলেও না।”
হতাশ শ্বাস ফেলে শ্রীজা।মানুষটাকে বোঝা মুশকিল।শ্রীজা অনুনয় করে বললো–
“অন্তত প্রসাদটাতো নাও।তোমার দীর্ঘায়ুর জন্য পূজো দিয়েছি।”
সারহান অধরের কোণ বাঁকায়।তাচ্ছিল্য করে বললো–
“পৃথিবীতে আগমনের পূর্বেই সবার ভাগ্য লিপিবদ্ধ হয়েছে ওই ভাগ্যবিধাতার খাতায়।তাই মৃত্যু দূত যখন আসবে তখন তা কেউ ঠেকাতে পারবে না।আর তুমি জানো আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না।শুধু একটাই চাওয়া মৃত্যুর সময় আমার এই তৃষ্ণার্ত দুই চোখ শুধু তাকেই যেনো দেখে যাকে আমি ভালোবাসি।”
এক উষ্ণ নিঃশ্বাস ফেলে শ্রীজা।সারহানের এইসব হেয়ালি কথায় বড্ড কষ্ট হয় তার।রোজ সোমবার নির্জলা ব্রত রেখে সারহানের দীর্ঘায়ু কামনা করে মন্দিরে পূজো দেয় শ্রীজা।কিন্তু সারহান!
ব্যথিত হয় শ্রীজার মনোষ্কোণ।
,
,
একটা এনজিওর সামনে এসে থামে সারহানের গাড়ি।”রজনীগন্ধ্যা চাইল্ড এন্ড ওমেন’স হোম কেয়ার” নামের এই এনজিওটি মালিকানাসত্ত্ব এখন সারহানের।এনজিওটির প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতার সাথে কাজের সূত্রেই পরিচয় সারহানের।একটা হৃদস্পর্শী সম্পর্ক তৈরি হয় তাদের মধ্যে।ভদ্রলোক বহু বছর দেশের বাইরে ছিলেন।তিনিও কোনো অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছিলেন।তাই তার জীবনে সমস্ত উপার্জন দিয়ে দেশে ফিরে এই এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন।বিয়ে থা করেন নি।নির্ভেজাল জীবন।মারা যাওয়ার পূর্বে এই এনজিওর সমস্ত দায়িত্ব সারহানকে দিয়ে যান।সারহান পরম আনন্দে তা গ্রহন করে।আর এর নাম পরিবর্তন করে।
দোচালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো করে সামনে করিডোর রেখে ইংরেজি এল এর মতো করে এনজিওর দালান ঘর।বেশ প্রশস্ত এর অবস্থান।এক পাশে খেলার মাঠ,বাগান।অন্যপাশে একটা লাইব্রেরি,যেখানে বাচ্চারা একাগ্রচিত্তে লেখাপড়া করে।চারপাশে বাউন্ডারি।সারহানকে দেখেই দৌঁড়ে আসে সেখানকার বাচ্চাগুলো।বিগলিত হাসে সারহান।লোক দিয়ে গাড়ি থেকে বাচ্চাদের জন্য আনা খেলনা গুলো ভেতরে নিয়ে যেতে বলে।কিন্তু বাচ্চাগুলো গোমড়া মুখ করে তাকিয়ে আছে।সারহান জিঙ্গেস করতেই রাগি রাগি গলায় সবাই বললো,কেন সে ভাবিকে নিয়ে আসে নি?
সারহান লাস্ট টাইম যখন আসে তখন বলেছিলো জান্নাহ্কে নিয়ে আসবে।
সারহান ক্ষমা চায়।অনুযোগের গলায় বললো–
“পরে সময় করে ঠিক নিয়ে আসবো।”
সারহান তার মোবাইর বের করে জান্নাহ্ এর ছবি দেখায়।বাচ্চাগুলো উৎফুল্ল হয়ে স্বমস্বরে বললো–
“এইটা বুঝি তোমার বউ!”
সারহান মৃদু হাসে।নরম গলায় বললো–
“রজনীগন্ধ্যা।আমার রজনীগন্ধ্যা সে।”
বাচ্চাগুলো পেছন ফিরে দালানের উপরের বোর্ডটার দিকে তাকায়।যেখানে এনজিওর নাম লেখা।খলখলিয়ে হেসে উঠে বাচ্চাগুলো।
অফিস রুমে এসে বসে সারহান।শ্রীজা আর সারহানের পরিচয় এই এনজিওতেই।শ্রীজার বাবা মায়ের ডিবোর্সের পর যখন কেউই তার দায়িত্ব নিতে অপারগ তখন হাইকোর্ট থেকে এই এনজিওতেই তাকে প্রেরণ করা হয়।এখানেই সে মানুষ।এখন সে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করে।
সারহানের পাশের ডেস্কে বসে আছে এখানকার অ্যাকাউন্টেড তৌহিদ।তার সামনে এখ লক্ষ টাকা রাখে সারহান।এনজিওর জন্য।পাশে ওয়ার্ডান তানিয়া।শান্ত গলায় তাকে জিঙ্গেস করে সারহান—
“গত সপ্তাহে ব্রোথেল থেকে যে মেয়েগুলোকে আনা হয়েছে তারা কোথায়?
“তারা পাশের রুমে স্যার।”
“চলুন।”
পাশের রুমে আসতেই অবাক হয় সারহান।মধ্য বয়স্ক দু’ একজন।বাকি সবাই যুবতী।শীতল নিঃশ্বাস ফেলে সারহান।পাশ ফিরে তাকাতেই একটা মেয়েকে দেখতে পায়।দেয়ালের সাথে লেপ্টে মুখটাও সেদিকে ফিরিয়ে রেখেছে।পেছন থেকে তানিয়া বললো–
“এই মেয়েটা বোধহয় নতুন।বয়সটাও একদম কম।”
তানিয়ার গলার আওয়াজে মেয়েটা হালকা করে ঘাড় ঘুরায়।ভীত সেই দৃষ্টি।চুলগুলো এলোথেলো।মেঘবর্ণ শরীরের সর্বত্র কামড় আর খামচির দাগ।কালশেটে পড়ে গেছে।চোখের নিচে কালোবর্ণ।গালের উঁচু অংশটা ফোলা।প্রস্ফুরণ তার শরীরে।এক মুহুর্তেই সারহানের জান্নাহ্ এর কথা মনে পড়লো।মেয়েটাও জান্নাহ্ এর বয়সি।বিকৃত মস্তিষ্কের থাবার শিকার মেয়েটি।সারহানের বড্ড মায়া হলো।বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো সে।সারহানকে দেখেই আরো জড়োসড়ো হয় মেয়েটি।সারহান আশ্বস্ত গলায় বললো–
“ভয় পেয়ো না।এখানে কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করবে না।ট্রাস্ট মি।”
মেয়েটা এইবার একটু চোখ ফিরিয়ে তাকায়।সারহান ভালো করে তাকায়।চোখের কোণে আঘাতের চিহ্ন।ঠোঁটের কোনে এখনো রক্ত লেগে আছে।ফোঁস করে এক দম ফেলে সারহান।পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটা ছবি বের করে।সাদাকালো,পুরোনো ছবি।একটা ষোলো সতেরো বছরের মেয়ে হবে।সারহান ছবিটা মেয়েটাকে দেখায়।আবেগী গলায় বললো–
“দেখতো একে চিনো কিনা?
মেয়েটা সারহান থেকে চোখ ফিরিয়ে মোবাইলের দিকে তাকায়।কিছুক্ষন ধ্যান ধরে চেয়ে থেকে নিঃশব্দে মাথা হেলায়।সারহান হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে।পাশের মেয়েগুলোকেও দেখায়।কিন্তু কেউ চিনে না।উঠে দাঁড়ায় সারহান।তার এই খোঁজ কবে শেষ হবে?
দরজার কাছে যেতেই আবারো ফিরে তাকায় সারহান।মেয়েটা কাতর দৃষ্টিতে এক চোখ তুলে সারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।সারহানের বুকের ভেতর জ্বলে উঠে গনগনে আগুন।পুড়ে যাচ্ছে তার কলিজা।দ্রুত সরে আসে সেখান থেকে সারহান।তানিয়াকে পাঁচ হাজার টাকা বাড়তি দেয়। থমথমে গলায় বললো–
“মেয়েটাকে ভালো কিছু ড্রেস কিনে দিও।আর ওকে অন্য জায়গায় শিফট করো।শি ইজ নট কমফর্টেবল ইন দ্যাট রুম।ওকে ডক্টর দেখাও।দরকার হলে কাউন্সেলিং করাও।আজ থেকে ওর সমস্ত খরচ আমি দিবো।”
“কিন্তু স্যার..।”
“আমি যা বলছি তাই করো।”
“ওকে স্যার।”
সারহান বেরিয়ে আসে সেখান থেকে।দম আটকে আসছিলো তার।গাড়ির কাছে গিয়ে শ্রীজাকে বললো–
“টেক কেয়ার অফ হার।”
শ্রীজা অস্ফুট স্বরে বললো–
“হুম।ডোন্ট ওয়ারি।”
গাড়িতে বসে সারহান।বুকটা বেশ ভারি লাগছে তার।জান্নাহ্কে মনে পড়ছে।
,
,
,
সেন্টার টেবিল থেকে চশমাটা নিয়ে চোখে পড়ে নিলেন জমির।একটু আগেই বাইরে থেকে হেঁটে এসে হাত মুখ ধুয়ে বসেছেন।ডাইবেটিসের রোগী জমির।তাই নিয়মিত সকাল সন্ধ্যায় হাঁটার অভ্যাস।বসার ঘরের কোণায় টিভি রাখা।টিভির ট্রলির নিচের তাকে একটা শ্বেত পাথরের মূর্তি।ঝকঝক করছে এখনো।জমির টিভি অন করলেন।সন্ধ্যার খবর চলছে।সেন্টার টেবিলে রাখা সকালের খবরের কাগজ টা একটু পরপর উড়ছে।তাতে বিরক্তিকর আওয়াজ হচ্ছে।চোখ,মুখ কুঁচকে পেপার ওয়েটটা একটু জোরেই রাখলেন খবরের কাগজের উপর।উৎকর্ণ হয়ে শুনছেন খবর।দেশীয় তাজা খবর।
“বাবা,আপনার চা।”
জান্নাহ্ এর মিষ্টি গলার আওয়াজে চকিতে তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জমির।জান্নাহ্ এর হাস্যোজ্জ্বল মুখটা দেখেই প্রসন্ন হাসেন তিনি।হাত বাড়িয়ে চা নিয়ে বললেন–
“চা টা কে বানিয়েছে?
জান্নাহ্ মিষ্টি হেসে বললো–
“আমি বাবা।”
“বাহ!তাহলে তো খাওয়াই যায়।শুভ্রার হাতের চায়ের স্বাদ একদম ই চিরতার মতো।”
মুখ বিকৃত করেন জমির।তা দেখে খলখলিয়ে হাসে জান্নাহ্।ডাইবেটিসের কারণে চায়ে চিনি খান না জমির।তাকে সুগার ফ্রি চা দেওয়া হয়।কিন্তু জান্নাহ্ এর হাতের সেই চিনি ছাড়া চাই ই বেশ আরাম করে খান জমির।শুভ্রা চায়ে চিনি দেয় না।কিন্তু জান্নাহ্ চিনি দেয়।সারহান তাকে ডাইবেটিস রোগীদের জন্য একধরনের আলাদা চিনি ব্যবহার করা হয় তাই এনে দিয়েছে।জান্নাহ্ চলে যেতে চাইলে জমির অনুনয় করে বললেন–
“একটু বসবি মা?
জান্নাহ্ নিঃশব্দে পাশে এসে বসলো।জমির চায়ে চুমুক দেয়।
“আহ!
তোর হাতের চা তো নয় যেনো অমৃত!
চোখে হাসে জান্নাহ্।শশুড় নামের এই মানুষটা বাবার মতোই স্নেহ করে তাকে।জমির টিভিটা বন্ধ করলেন।চায়ের কাপ টা সেন্টার টেবিলে রেখে গাঢ় গলায় বললেন–
“মায়ের কথায় কিছু মনে করিস নি তো?
জান্নাহ্ এর হাসি মুখটা ফাটা বেলুনের মতো হয়ে যায়।আর্তনাদ ভরা চোখ দুটো অবনত করে।জমির এক শীতল নিঃশ্বাস ফেলেন।নরম গলায় বললেন—
“মায়ের কথায় কিছু মনে করিস না।বয়স হয়েছে তো তাই।আর ছেলেটাকেও কাছে পায় না।তাই একটু রেগে থাকে।”
জান্নাহ্ একরাশ উদ্বিগ্নতা নিয়ে বললো–
“বাবা,আম্মা যে বললো তারে আবার বিয়ে দিবে!
“আরে দুর বোকা!তা কী হয় নাকি!সারহানকে আজ পর্যন্ত জোর করে কেউ কিছু করাতে পারে নি।এই যে তোদের বিয়েটাও তো।সে তো কিছুতেই বিয়ে করবে না।ছেলেকে কাছে পাওয়ার লোভে আটগাট বেঁধেই নেমেছিলো অন্তরা।কিন্তু সারহান কিছুতেই রাজী হচ্ছিলো না।জেদ করে ছয় মাস বাড়ি আসেনি।শেষে অনেক বুজিয়ে সুজিয়ে বললাম একবার দেখতে ক্ষতি কী!
আর সেই দেখাই ছেলে আমার হীরে তুলে নিয়ে এসেছে।”
নিজের সলজ্জ চোখ দুটো লুকানোর চেষ্টা করে জান্নাহ্।সরস গলায় বললো–
“কিন্তু আম্মা যে বললো..।”
“তার কথা ছাড় তো।তুই সারহানকে সামলা।ওকে ভালবাস।ও যেনো কখনো তোর মায়া ছাড়তে না পারে।তুই যেনো ওর মোহ না হয়ে যাস।”
“জ্বী বাবা।”
“সারহান যতদিন না চাইবে ওকে বিয়ে করানো তো দূরের কথা তোকে এই বাড়ির চৌকাঠের বাইরেও কেউ নিতে পারবে না।”
মনের কোণে প্রজাপতি উড়তে থাকে জান্নাহ্ এর।সারহান তাকে ভালোবাসে।তার আর কিছুই চাওয়ার নেই।মৃদু গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে জান্নাহ–
“বাবা,তারে কেন বলেন না এখানে এসে আপনার ব্যবসায় হাত দিতে?
“ওসবে ওর কোনো আগ্রহ নেই।ছোটবেলা থেকে শহরে লেখাপড়া।সেখানের মানুষের সাথে চলাফেরা,উঠাবসা করতে করতে সেখানেই নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে।মাসে একবার বাড়ি আসতো।কোনোমাসে আসতোও না।এই নিয়েই এতো ঝামেলা।”
জমির দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।জান্নাহ্ নির্বিকার হয়ে তাকিয়ে রইলো।সারহান কারো কথা শোনার পাত্র না।সে নিজের মর্জির মালিক।
চলবে,,,