জান্নাহ্
পর্বঃ৫
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
বিছানার উপর লম্বা হয়ে শুয়ে আছে অন্তরা।শরীরটা কেমন ম্যাজম্যাজ করছে।মুখ ভর্তি পান।তা ভজভজ করে চিবিয়ে যাচ্ছে সে।তার পায়ের কাছে বসেই পা টিপছে জান্নাহ্।পানের পিচ ফেলে কঠিন গলায় প্রশ্ন করেন জান্নাহ্কে–
“সারহানকে তুমি বলেছো?
জান্নাহ্ নির্বিকার গলায় বললো–
“সে বলছে আপনি তার সাথে কথা বইলেন।”
অন্তরা খেঁকিয়ে উঠে বললেন–
“কী বলমু আমি তারে!তোমারে কইছি বাচ্চার কথা কইতে।কইছো তারে?
“সে বলছে এই ব্যাপারে আপনার কিছু বলার থাকলে আপনি তার সাথে কথা বলতেন।”
অন্তরা ঝাঁঝিয়ে উঠে বললো–
“এই ছোট্ট এখ্খান কাম করতে পারো না তুমি।সারদিন করো কী!হেই তো আমার পোলাডা আইলে ঘরের দরজা বন্ধ কইরা বইসা থাকো।”
“আম্মা,সে কী আমার কথা শুনবে!আপনারা তো জানেন সে কারো কথা শোনে না।”
অন্তরা খলবলিয়ে উঠেন।এক লাথি মারেন জান্নাহ্ এর কোমরের দিকটায়।বিছানা থেকে ধড়াস করে নিচে পড়ে যায় জান্নাহ্।তার কনুই গিয়ে ঠেকে ফ্লোরে।হালকা ছুঁলেও যায়।জান্নাহ্ কান্না জড়ানো গলায় বললো–
“আম্মা,সে তো আমার কোনো কথা শুনে না।আমি কী করবো?
অন্তরা বিশ্রি মুখভঙ্গি করে বললো–
“কেন শুনবো না!এই রূপ আর যৌবন দিয়া কী করবা তাইলে!নিজের স্বামীরেই যদি আটকাইতে না পারো।তার লগে শুধু বিছানায় শোয়ার লাইগা আনছি তোমারে!ছেলেটা আমার বাড়ি আসে না।তাই সুন্দরী,অল্প বয়সী মাইয়া বিয়া করাইছি।ভাবছি বৌয়ের মায়ার অন্তত বাড়িত থাকবো পোলাডা আমার।কিন্তু সেই আগের লাহান।দুই দিন আইয়া চইলা যায়।মাতারি শুধু তার লগে শুইবারই পারে।আর কিচ্ছু পারে না।”
জান্নাহ্ নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে। মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার।নিজের শাশুড়ির মুখে এই ধরনের কথায় তার কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে।সে তো কম চেষ্টা করে না।কিন্তু সারহান,এক দু’দিনের বেশি থাকেই না।এতে তার কী দোষ!
অন্তরা আবারো শাসিয়ে উঠে বললেন–
“ছয় মাসের মধ্যে যদি আমারে নাতি দিবার কথা দিতে না পারো তোমারে বাড়িত তে বাইর কইরা পোলারে আবার বিয়া করামু আমি।আমার পোলা লাখে এক।মাইয়ার অভাব হইবো না।তোমার চেয়ে সুন্দরী আর কচি মাইয়া বিয়া করামু।খালি জামাইর লগে শুইলেই হইবো না বাচ্চাও জনম দেওয়া লাগবো।বংশ আগে বাড়াইতে হইবো।”
শুভ্রা মেয়ের জন্য দুধ গরম করছিলো।মায়ের গলার আওয়াজ পেয়ে ঘরে আসতেই এইসব শুনতে পায়।জান্নাহ্ এখনো নিঃশব্দে কেঁদেই চলছে।শুভ্রা মায়ের কথায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বললো–
“এইসব কী বলছো তুমি!তুমি তো জানো সারহান কারো কথা শোনে না।আর এইটুকু মেয়ে এর চেয়ে বেশি কী করবে!
অন্তরা মেয়ের কথার তোয়াক্কা না করে তেতে উঠা গলায় বললেন—
“এই বয়সে আমাগো পোলাপান স্কুলে যায়।আর এই মাতারি এহনো নিজেই স্কুলে যায়।কতো শখ পড়ালেহার!এতো পড়ালেহা কইরা করবিডা কী!জামাইরেই তো সামলাইতে পারোস না।এই সাদা চামড়া কাইট্টা ফালাইয়া দে।মা**।
“ছিঃ!মা।এইসব কী বলছো!
“ঠিক ই কইতাছি।যাইতে ক ওরে আমার সামনে তে।আর ওরে বইলা দে যদি ছয় মাসের মধ্যে আমারে খুশির খবর না শুনাইতে পারে ওরে তালাক দিয়া সারহানরে আবার বিয়া করামু আমি।এই আমি কইয়া রাখলাম।”
শুভ্রা মায়ের কথায় বিরোধীতা করে।জান্নাহ্কে বললো–
“জান্নাহ্,তুই ঘরে যা।”
জান্নাহ্ উঠে চলে যায়।শুভ্রা মায়ের পাশে বসে।চাপা স্বরে বললো–
“এখন যদি ও সারহানকে এইসব বলে কী হবে বুঝতে পারছো!
অন্তরা দম্ভ করে বললেন–
“তোরে চিন্তা করতে হইবো না।সারহান আর যাই করুক মায়ের গায়ে হাত তুলবো না।”
শুভ্রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।তার মা বদলাবার নয়।
,
,
,
ঘরে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে জান্নাহ্।কনুইটাও ভীষন যন্ত্রণা করছে।চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে গেছে।জান্নাহ্ এর ফর্সা মুখটাও ফ্যাকাশে।কাঁদতে পারে না জান্নাহ্।অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ায় একটু কাঁদলেই চোখ মুখ বিবর্ণ রূপ ধারণ করে।তখন সারহানের হাত থেকে বাঁচা মুশকিল।
এর মধ্যেই মোবাইল তার স্বশব্দ প্রচার করতে থাকে।জান্নাহ্ চট জলদি চোখ,মুখ মুছে টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে গিলে ফেলে।তার কান্না চাপা পড়ে পানির ফোয়ারায়।রিসিভ করতেই সারহান গম্ভীর গলায় বললো–
“এতো সময় কেন নিলেন রজনীগন্ধ্যা?
জান্নাহ্ শুকনো ঢোক গিলে।অতি সন্তর্পনে জবাব দেয়–
“ওয়াশরুমে ছিলাম।”
“কাঁদছেন?
সারহানের প্রশ্নেই দম আটকে আসে জান্নাহ্ এর।সারহান আবার বললো–
“বিদ্যুৎ আছে?
জান্নাহ্ অস্ফুট সুরে বললো–
“হু।”
“ল্যাপটপটা অন করুন।”
“কিন্তু সারহান..।”
“আমি যা বলছি তাই করুন।”
কল কেটে জান্নাহ্ ওয়াশরুমে যায়।মুখ টা ভালো করে ধুয়ে মুছে নেয়।ল্যাপটপ অন করে।সারহান ভিডিও কল করে।জান্নাহ্ এর মুখটাই এমন কোনো কিছু লুকাতে পারে না সে।সারহান কিছুক্ষন নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলো।জান্নাহ্ তার ভেজা আঁখিপল্লব লুকাতে ব্যস্ত।মোহনীয় গলায় সারহান বললো—
“মায়ের ঘরে ছিলেন?
জান্নাহ্ কোনো জবাব দিলো না।সারহান দুর্বোধ্য হাসলো।আবার বললো–
“মা আবার আপনার গায়ে হাত তুলেছে?
ফুঁপিয়ে উঠে জান্নাহ্।জান্নাহ্ এর কষ্ট হচ্ছে।সত্যিই কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু ব্যাথার জন্য নয়।তার শাশুড়ির কথার জন্য।সারহানকে সে সত্যিই ভালোবাসে।মানুষটাকে ছেড়ে কোথায় যাবে সে!
এই ভালোবাসার জন্যই তো এতো বঞ্চনা,গঞ্জনা শুনেও চুপ করে থাকে জান্নাহ্।সব অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তার।অনাথ হলে যা হয় আর কি!
কিন্তু আজ তার শাশুড়ি এইসব কী বলছে!সারহানকে আবার বিয়ে করাবে।তাহলে তার কী হবে!কোথায় যাবে সে!ভাবতেই দু’চোখ বেয়ে জোয়ার নেমে আসে।সারহান শান্ত ও শীতল গলায় বললো–
“কোথায় লেগেছে আপনার দেখি?
জান্নাহ্ না চাইতেও তার ডান হাতের কনুই দেখাই।বেশি না।হালকা একটুই লেগেছে।সারহান জানে তার রজনীগন্ধ্যা একদম কোমল।তুলোর বল যেনো।জান্নাহ্ এর দিকে একবার কঠিন চোখে তাকিয়ে শক্ত ও দৃঢ় গলায় বললো—
“আমি আসার আগেই যেনো এই দাগ মুছে যায়।”
জান্নাহ্ অসহায় গলায় বললো–
“সারহান!
ধপ করে ল্যাপটপের সাটার টা ফেলে দেয় সারহান।বিক্ষিপ্ত তার দৃষ্টি।তপ্ত তার দেহ।দাঁতের সাথে দাঁত নিষ্পেষণ করছে সে।ধীরেসুস্থে তার পাশে এসে বসে শ্রীজা।সারহানের শার্টের ভেতর এক হাত ঢুকিয়ে তার গলায় নাক ঘষতে থাকে।পরম আদরের সাথে প্রশ্ন করে—
“মেয়েটাকে খুব ভালোবাসো তাই না?
সারহান শক্ত কন্ঠে প্রত্যুক্তি করলো–
“নাহ।আমি ছাড়া তার গায়ে দাগ লাগানোর অধিকার কারো নেই।”
এক হাত দিয়ে শ্রীজাকে কাউচের উপর শুইয়ে ফেলে তার চড়ে বসে সারহান।তার নজরে কেঁপে উঠে শ্রীজা।এই চাহনি আজ তাকে শেষ করে দিবে।সারহান কতোটা এগ্রেসিভ তা আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে শ্রীজা।তার সমস্ত দেহে সারহান তার ছাপ ফেলে দিচ্ছে।
চলবে,,,