জান্নাহ্
পর্বঃ২
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
সারহানের গায়ের সাথে লেপ্টে আছে জান্নাহ্।দুপুরের দিবাকর হেলতে শুরু করেছে।ঝলমলে রোদ ধীরে ধীরে নিষ্প্রভ হচ্ছে।জানালা দিয়ে যেটুকু রোদ ভেতরে আসতো তা এখন আর আসছে না।সূর্যের হেলে পড়ায় তার দীপ্ততা পথ বদলাচ্ছে।একটু পর পর উষ্ণ বাতাসে পটপট করে উড়ছে জানালার পর্দা।
জানালার সাথেই কাঁঠাল গাছ।গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কাঁঠাল,নারকেল,সুপারি আরো নানা ধরনের গাছ থাকেই।সারহানদের বাড়িটি পুরোপুরি গ্রামীন নয়।জেলা শহরে।তাই তার আশেপাশে আধুনিকতার ছোঁয়াও বিদ্যমান।কাঁঠাল গাছের গোলগোল পাতার ফাঁকে বসে আছে দুটো পাখি।সারহান নির্নিমেষ সেদিকে তাকিয়ে আছে।
নিজের শরীরে অপ্রত্যাশিত স্পর্শ একদম চক্ষুশূল সারহানের।ঘনিষ্ঠ মুহুর্তেও তার শরীরে হাত দিতে ভয় পায় জান্নাহ্।তাই যখন সে সুযোগ পায় তা লুফে নেয় সে।সারহানের গলার কাছে মুখ নিয়ে রেখেছে জান্নাহ্।তার শরীরের চন্দন আর গোলাপের মিশ্রিত নির্যাসের গন্ধে পাগল হয়ে যায় জান্নাহ্।আলতো করে নিজের হাত রাখে সারহানের বুকের উপর।অনুরক্তির সুরে বললো–
“আপনি কী আজ চলে যাবেন?
সারহান জানালার বাইরে নজর রেখেই বললো–
“আমি চলে গেলে আপনি খুশি হবেন?
“এভাবে কেন বলছেন?
সারহানের যেই হাতের উপর জান্নাহ্ তার মাথা রেখেছে তার পাঞ্জা জান্নাহ্ এর কোমরে।স্বাভাবিক অভিব্যক্তির সারহান তার পেশিবহুল হাতের থাবা কঠিন করতে থাকে।এতে করে জান্নাহ্ এর নরম শরীরে তার নখ গেঁথে যেতে থাকে।ঈষৎ কঁকিয়ে উঠে জান্নাহ্।এক ঝটকায় জান্নাহ্কে নিচে ফেলে তার উপর সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে দেয় সারহান।সারহানের চোখের ভয়ংকর চাহনিতে জান্নাহ্ এর বুঝতে বাকি রইলো না তার সাথে কী হতে চলেছে।এক ভয়ংকর সুখময় যন্ত্রণা।
,
,
“আপনাকে আম্মা কিছু বলেছে?
সারহান তার ভেজা চুল মোছায় ব্যস্ত।জান্নাহ্ অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে।লোকটার এই বুকে কী আছে জান্নাহ্ জানে না।এতো যন্ত্রণায়ও কী করে সুখ খুঁজে পায় সে!সারহানের স্পর্শে ক্ষনে ক্ষনে যেনো নিজেকে হারায় জান্নাহ্।লোকটার ওই চাহনিতেই প্রথম দেখায় নিজেকে সপেছে সে।এক অবিশ্বাস্য,অপ্রতিরোধ্য,অগ্রাহ্যপূর্ন চোখের দীপ্ততা।যেনো ওই চোখেই জান্নাহ তার সর্বনাশ দেখেছে।ওই ফর্সা সুদীর্ঘ বক্ষদেশে নিজের কবর খুঁড়ে রেখেছে।সারহানের ওই নিঃশ্বাসেই যেনো নিজের প্রানবায়ু মিশিয়েছে সে।
জান্নাহ্ এর কথায় প্রত্যুত্তর করে সারহান–
“কোন বিষয়ে?
জান্নাহ্ ছোট্ট দম ফেলে।ইতস্তত বোধ করে সে।লজ্জামিশ্রিত গলায় বললো–
“আম্মা বাচ্চার কথা বলেছে।”
অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে সারহান।হেসে হেসে বললো—
“কী বলেছে!বাচ্চা!
জান্নাহ্ নিঃশব্দে নিঃশ্বাস ফেলে।তার চোখে মুখে আতঙ্ক।জান্নাহ্ এর সামনে দাঁড়িয়ে ট্রাউজারে দু’হাত গুঁজে শক্ত হয়ে দাঁড়ায় সারহান।গম্ভীর গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে —
“বয়স কতো আপনার?
জান্নাহ্ একটু সময় নিয়ে মিইয়ে গলায় বললো–
“ষোলো।”
বাঁকা হাসে সারহান।শক্ত গলায় বললো–
“নো।ফিফটিন প্লাস।আরো চাৱ মাস বাকি ষোলো হতে।”
জান্নাহ্ কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।সে চুপচাপ রইলো।সারহান তার পাশে বসে।ফিচেল হেসে বললো–
“আপনি তো বাচ্চা।এ বয়সের মেয়েরা কী মা হয়!প্রেমিকা হয়।কিন্তু আপনি তো বউ হয়ে গেলেন রজনীগন্ধ্যা।”
তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসে জান্নাহ্।বাচ্চা!আসলেই।এই বাচ্চাকেই বিয়ের প্রথম রাত থেকেই তার স্বামীর পৈশাচিক খিদে মিটাতে হয়েছে।তখন কী সে বড় ছিলো!
বিছানায় সোজা মাথা রাখে সারহান।গম্ভীর গলায় জিঙ্গেস করলো–
“আপনার পড়ালেখার কী খবর?
সারহান জান্নাহ্ এর পড়ালেখায় সদা তৎপর।এখানে না থাকলেও সবসময় তার পড়াশোনার খবর রাখে।জান্নাহ্ মৃদু গলায় বললো–
“ভালো।”
“কী হতে চান ভবিষ্যতে?
“ডক্টর।”
হা হা করে হেসে উঠে সারহান।জান্নাহ্ অবাক হয়।সারহান কখনো তাকে এই প্রশ্ন করেনি।ভীত গলায় জান্নাহ্ বললো–
“হাসছেন যে?
সারহান বাঁকা হেসে হেয়ালি গলায় বললো–
“যে মেয়ে রক্ত দেখে কেঁদে বুক ভাসায় সে হবে ডক্টর!
জান্নাহ্ সলজ্জ চোখ দুটো অবনত করে।সে জানে সারহান কেন এই কথা বলেছে।বিয়ের প্রথম রাতে ব্লিডিং দেখে সেই রাতে বাকিটা সময় শুধু কেঁদেছে জান্নাহ্।সারহান এখনো মাঝে মাঝে সেই কথা বলে তাকে ক্ষেপায়।
প্রথম প্রথম সবকিছু অসহ্যকর লাগতো।ধীরে ধীরে সারহানের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে জান্নাহ্।এখন যন্ত্রণার চেয়ে সুখটা অনুভূত হয় বেশি তার।সারহানকে কাছে পাবার তীব্র বাসনা তার মনে সদা জাগ্রত।অবশ্য সবসময় নাহলে যেটুকু সময় সারহান জান্নাহ্ এর কাছে থাকে তাকে নিরাশ করে না।সারহানের ভালোবাসায় তৃপ্ত জান্নাহ্।
,
,
,
খাওয়ার টেবিলে সারহান।তার দিকেই সকলের উৎসুক নিরব দৃষ্টি।সারহানের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।নিজেকে সে অনেকটা জঙ্গলের রাজা ভাবে।সবার দিকে তাকিয়ে চাপা সুরে দ্বিধান্বিত হয়ে শুভ্রা বললো–
“তোকে একটা বলবো?
সারহান অস্ফুট কন্ঠে বললো–
“বলো।”
শুভ্রা ঢোক গিলে।জড়ানো গলায় বললো–
“বলছিলাম যে এইবার না হয় জান্নাহ্কে সাথে নিয়ে যা।”
বিদ্রুপপূর্ণভাবে অধর বাঁকায় সারহান।ভ্রু কুঞ্চি করে সহজ গলায় বললো–
“কী!
ফাঁকা ঢোক গিলে শুভ্রা।মিইয়ে গলায় বললো–
“ও তো সারাদিন একাই থাকে।আর তুইওও।তাই বলছিলাম…।”
সারহান ফোঁস করে বললো–
“তুমি নিশ্চয়ই জানো আমি কী কাজ করি!আমিতো ফ্ল্যাটে তেমন থাকিই না।রাতে ফিরি।এমনো হয় তিন চার দিন ফ্ল্যাটের চৌকাঠও মাড়াই না।সেখানে জান্নাহ্ কে নিয়ে কী করবো আমি?
শুভ্রা ঠোঁট চিপে ধাতস্থ হয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সারহান বললো–
“জান্নাহ্ এখানে থাকলে তোমাদের সমস্যা হয় তাই না।নিজের ঘর সামলাও আপু।তোমরা ভালো করেই জানো সারহানের জিনিসে কেউ হাত দিলে তার পরিণতি মৃত্যুর চেয়ে ভয়ংকর হয়।জান্নাহ্ এখানেই থাকবে।এই বাড়িতেই।”
হনহন করে উঠে যায় সারহান।শুভ্রার সংক্ষুব্দ দৃষ্টি সেরাজের দিকে।অন্তরা কিছুটা আঁচ করতে পারলেও মুখ খুললেন না।জমির নিরুপায়।
,
,
মোবাইলে কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত সারহান।তার পাশেই বসে আছে জান্নাহ্।হাতে তার কেমিস্ট্রি বই।যৌগমৌলের ক্রিয়ায় ঘেটে আছে তার মস্তিষ্ক।কিছুই ঢুকছে না।তার উপর সারহান আসায় স্কুল,কোচিং সব বন্ধ।
আচমকাই নিজের ঘাড়ে আর্দ্র ছোঁয়া অনুভব করে জান্নাহ্।সারহান।লোকটা একটা মিনিটও শান্তিতে বসতে দেয় না।একটা কলা পাতা রঙের শাড়ি পরেছে জান্নাহ্।আবেগী গলায় সারহান ডেকে উঠে–
“রজনীগন্ধ্যা!
জান্নাহ্ অস্ফুভাবে জবাব দেয়–
“হু।”
“আমার রজনীগন্ধ্যা শুকিয়ে কেন যাচ্ছে?
জান্নাহ্ ভরাট চোখে তাকায়।মোহনীয় গলায় সারহান বললো–
“জানেন বাসি ফুল আমরা কী করি?ফেলে দেই।আমার রজনীগন্ধ্যাকে ছাড়াতো আমি থাকতে পারবো না।নিজের যত্ন কেন নেন না আপনি?
দুধে আলতা গায়ের রঙে কলা পাতা রঙের শাড়িতে সত্যিই জান্নাহ্কে আজ রজনীগন্ধ্যা ফুল মনে হচ্ছে।কিন্তু সারহানের কথার মানে সে বুঝতে পারে।তার এই সৌন্দর্যই তো সারহানকে তার কাছে টেনে আনে।কিন্তু এই সৌন্দর্য যখন শেষ হয়ে যাবে তখন!
বাসি রজনীগন্ধ্যার মতো তাকেও ফেলে দেওয়া হবে!ভাবতেই বুক ভার হয়ে আসে জান্নাহ্ এর।এই মানুষটার সাথে থাকার জন্যই এতো কথা,মার খেয়েও এই বাড়িতে পড়ে আছে।এই বয়সেই স্বামীকে খুশি রাখার কঠিন কাজ করেছে।এতো কষ্ট সহ্য করেছে।কিন্তু সারহান এইসব কী বলছে!সত্যিই তার সময় শেষ হয়ে আসছে!
জান্নাহ্ চিন্তার ইতি ঘটে তার পেটের ব্যথায়।সারখান খামচি মেরে ধরেছে।চোখ ভরে আসে জান্নাহ্ এর।সারহান তার অধর ছোঁয়াতে থাকে জান্নাহ্ এর শরীরে।ঠোঁট কামড়ে সব সহ্য করছে জান্নাহ্।ক্ষনে ক্ষনে ব্যথায় ঈষৎ কাঁপুনি দিয়ে উঠে তার দেহপিঞ্জর।গাঢ় গলায় সারহান বললো–
“ছাদে কেন গিয়েছিলেন আপনি?
নিজের গালে নিজের চড় মারতে ইচ্ছে হলো জান্নাহ্ এর।এখন বুঝতে পারছে সারহান এমন কেন করছে।ধরা গলায় বললো–
“বিশ্বাস করুন,আমি জাবিন কে দেখিনি।সত্যি বলছি।”
“আমি কখন বললাম আপনি মিথ্যে বলছেন!
আমি তো আগেই বলেছি আমি ছাড়াও এই বাড়িতে আরো তিনজন পুরুষ আছে।তাদেরও যৌনপিপাসা আছে।তাই আমি আমার রজনীগন্ধ্যাকে সাবধানে থাকতে বলেছি।”
“আর ভুল হবে না।প্লিজ।”
“যান এখান থেকে।”
জান্নাহ্ অসহায় গলায় বললো–
“সারহান।”
সারহান চোয়াল শক্ত করে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো–
“যান এখান থেকে।আমার চোখের সামনে থেকে যান।”
জান্নাহ্ জানে।এখন এখানে থাকলেই সর্বনাশ।তাই সে উঠে চলে যায়।ফোঁস করে এক তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে সারহান।মেয়েটার নরম শরীর না ছুঁলে ঘুম ই আসে না তার।নিজের কামনাকে অবদমন করে ঘুমানো চেষ্টা করে সারহান।তার দুচোখ ক্লান্ত।বড্ড ক্লান্ত।
চলবে,,,