জান্নাহ্
পর্বঃ১০
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
ঠাস করে এক চড় মারে অন্তরা জান্নাহ্ এর গালে।নির্বাক হয়ে যায় জান্নাহ্।কঁকিয়ে উঠে সে।অন্তরা খেঁকিয়ে উঠে বললেন–
“শরম করলো না!আমার ওই চান্দের লাহান নাতিডারেও বশ করলি!
প্রথমে তো আমার পোলাডারে কাইরা নিলি নাগিন।এখন আবার আমার নাতিডারেও জাদু করলি!এক নাগরে হয় না তোর?
জান্নাহ্ মৃদু ধরা গলায়–
“আম্মা,এইসব কী বলছেন আপনি?
“চুপ।একদম কথা কবি না।তুই কী ভাবছোস আমি কিচ্ছু বুঝিনা!
জান্নাহ্ ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে।বাড়ির সবাই সেখানে উপস্থিত হলেও অন্তরার কথার উপরে কেউ কথা বললো না।আজ জান্নাহ্ স্কুল থেকে ফেরার সময় দেখে জাবিন দাঁড়িয়ে আছে।সে কোনোভাবেই জান্নাহ্কে এই বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য রাজী করাতে পারছে না।জান্নাহ্ এর প্রাণ সংশয়ে উৎকন্ঠিত জাবিন।দুই জনের কথার মাঝখানে এলোমেলো হাঁটতে গিয়ে একটা চলন্ত গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে জান্নাহ্ এর।পায়ের অনেকখানি কেটে যায়।তাই তাকে ধরে বাসায় নিয়ে আসে জাবিন।আর তা দেখেই খটমটিয়ে উঠে অন্তরা।
অন্তরার কথায় ফুঁসলে উঠে জাবিন।প্রতিবাদ করে বললো–
“নানুমা,আর একটা বাজে কথা বলবে না জান্নাহ্কে।”
শুভ্রা ছেলের গালে ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দেয়।রাগী গলায় বললো–
“বড়দের মুখে মুখে তর্ক!এইসব শিখেছিস?
জাবিন বিদ্রুপপূর্ণ হাসে।উপহাসমিশ্রিত গলায় বললো–
“বড়দের সম্মান!সম্মান তাদের করতে হয় যারা সম্মানের পাত্র।তোমার মা আর তার ছেলে কোন সম্মান পাওয়ার যোগ্যতাই রাখে না।”
জ্বলন্ত চোখে জাবিনের দিকে তাকায় অন্তরা।গমগমে গলায় বললো–
“বেদ্দপ পোলা।নিজের মামার নামে এইসব কইয়া বেড়াস।যা এখান থেকে।দুর হ।”
শুভ্রা নিজের ছেলেকে টেনে নিয়ে যায়।জমির নিরুত্তাপ।শীতল গলায় বললেন–
“অন্তরা,এখন এইসব বাদ দাও।তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।”
“কী কন আপনি!কিসের ভুল!এই মাইয়া আমার পোলার ভাত খাইবো না।এর এক নাগরে অয় না।তার আরো লাগবো।”
জমির বিরক্তি নিয়ে বললেন–
“সেরাজ এখানে অন্তরা।একটু তো সম্পর্কের লেহাজ করো।”
অন্তরা শক্ত গলায় বলে উঠে–
“জামাই,তুমি যাও এইহান তে।”
সেরাজ তাকিয়ে ছিলো জান্নাহ্ এর সরু নিতম্বের দিকে।শাশুড়ির ধারালো কন্ঠে সম্বিৎ ফিরে পায় সেরাজ।ধীর পায়ে সেখান থেকে সরে আসে।অন্তরা ফুঁসে উঠে বললেন–
“এর লাইগাই তুমি বাচ্চা লও না।বাচ্চা লইলে এই রঙ ঢঙ করবা কেমনে!
“আহ!অন্তরা।কী বলছো এইসব?
“ঠিক ই কইতাছি আমি।এইবার সারহান আসুক বাড়ি।এই মাইয়ারে আমি বিদায় কইরা ছাড়ুম।”
জমির সবটা সামলে নেওয়ার জন্য বললেন–
“হয়েছে।যা করার সারহান আসলে করো।এখন ওকে যেতে দাও।
জান্নাহ্ তুই ঘরে যা মা।”
জান্নাহ্ হালকা হাতে চোখের পানি মুছে নেয়।নিঃশব্দে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে।নিজের ঘরে এসে ঝুমঝুমিয়ে কাঁদতে থাকে জান্নাহ্।আর কতো সহ্য করবে সে!সব কী তার দোষ!সারহান চায় না এখন কোন সন্তান।তাহলে সে একা কী করবে!পুরুষবিহীন একজন নারী কী করে সন্তান জন্ম দিতে পারে?
জান্নাহ্ এর মোবাইল বেজে উঠে।রিসিভ করেই ফুঁপাতে থাকে জান্নাহ্।তার ফর্সা মুখটা নীল হয়ে আছে।চোখগুলোও ফুলে গেছে।ওপাশ থেকে মোহনীয় গলায় সারহান বললো–
“কাঁদছেন রজনীগন্ধ্যা?
জান্নাহ্ এর আজ কিছু হলো।সে একটুও ভয় করলো না সারহানের।তপ্ত গলায় বলে উঠে–
“যাবো না আমি স্কুলে।পড়বো না আমি আর।আপনি আমাকে বাচ্চা দিন।”
স্মিত হাসে সারহান।তার রজনীগন্ধ্যা ক্ষেপেছে।সারহান নরম গলায় বললো-
“মা আবার বকেছে আপনাকে?নাকি গায়েও হাত তুলেছে?
জান্নাহ্ রেগে বললো–
“কিচ্ছু না,কিচ্ছু না।এইবার বাড়ি এলে আপনি আমাকে বাচ্চা দিবেন।”
জান্নাহ্ এর বোকা বোকা কথায় হেসে ফেলে সারহান।মৃদু গলায় বললো–
“এক বাচ্চা আরেক বাচ্চা দিয়ে কী করবে!আগে বড় তো হয়ে নিন।”
“কে বললো আমি ছোট!আমি ছোট না।”
সারহান বিগলিত হাসে।কোন কথা বললো না সে।এপাশ থেকে জান্নাহ্ও নিশ্চুপ।একে অপরের নিঃশ্বাস গুনছে তারা।নিস্তব্ধতা ভেঙে কাতর গলায় ডেকে উঠে জান্নাহ্–
“সারহান!
“বলুন।”
“আম্মা বলেছে,বাচ্চা না হলে সে আপনাকে আবার বিয়ে করাবে।”
সারহান স্বশব্দে হেসে উঠে।নিজের হাসিকে প্রশমিত করে বললো–
“মানুষের জীবনে বিয়ে একবারই হয় রজনীগন্ধ্যা।আর আমার বিয়ে তো হয়ে গেছে।”
“সারহান!
“শাড়ি পড়েন।আমি আসছি রজনীগন্ধ্যা।”
লাইন কেটে দেয় সারহান।ল্যাপটবে অক্ষি নিবদ্ধ তার।সারহান তার রুমে হিডেন ক্যামেরা লাগিয়েছে।যা দিয়ে এখান থেকে সে তা কন্ট্রোল করতে পারে।জান্নাহ্কে দেখছিলো সে।কেঁদে চোখ,মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।মেয়েটা একদম চিনির দলা।তাপ লাগলেই গলে যায়।আর এই চিনির দলাই সারহানের প্রাণপাখি।জান্নাহ্কে কাছে পাবার তীব্র বাসনা জাগে সারহানের মনে।সেই মুহুর্তেই সেখানে উপস্থিত হয় শায়িখ।চোখে মুখে অবসাদ।কপালে চিন্তার ভাঁজ।সারহানের সামনে বসেই বললো–
“স্যার,কাল সকালেই সরফরাজ মাহমুদ আপনাকে দেখা করতে বলেছে।ফেনীতে নাকি একটা ইয়াবা চক্র ঢুকেছে।”
সারহান খানিক ভেবে উঠে দাঁড়ায়।সরস গলায় বললো–
“তাকে বলে দিও আমার এক সপ্তাহ সময় লাগবে।বাড়ি যাচ্ছি আমি।”
শায়িখ উদ্বেগ নিয়ে বললো–
“স্যার!
এখন বাড়ি!
“হুম।এখনই।তুমি ফ্ল্যাটেই থেকো।আমি আসলেই তোমার ছুটি।
বাই।”
সারহান দ্রুতপায়ে বের হয়।এখন বাজে দুপুর তিনটা।সন্ধ্যে ছয়টার মধ্যেই সে বাড়ি পৌঁছে যাবে যদি কোনো বাঁধা না থাকে।
শায়িখ ইদানিং সারহানের ব্যবহারে কিছুই ধরতে পারে না।দীর্ঘশ্বাস ফেলে শায়িখ।
,
,
,
বইয়ে মুখ গুঁজে বসে আছে জান্নাহ্।কাল তার ইংরেজী ক্লাসটেস্ট।এরমধ্যে সারহান আসছে।মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে।সারহান আসলে না পড়া হবে না স্কুলে যাওয়া।ভাবতেই ঝিমঝিম করে উঠে জান্নাহ্ এর মস্তিষ্ক।তবুও যথাসাধ্য নিজেকে শান্ত রেখে পড়া চালিয়ে যাচ্ছে।আর ফাঁকে ফাঁকে ঘড়ি দেখছে।আজকাল স্কুলেও তাকে তটস্থ থাকতে হয়। প্রায় দুই ঘন্টা হতে চললো।জান্নাহ্ আবার কল করে সারহানকে।জানতে পারে তার আসতে একটু দেরি হবে।একটা কাজ এসে পড়েছে।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জান্নাহ্।এই সময়টুকুই সে চাইছিলো।আরো এক ঘন্টা লাগলো নিজের পড়া কভারআপ করতে।ঘর গুঁছিয়ে একটা লম্বা শাওয়ার নেয় জান্নাহ্।খুব খিদেও পেয়ে যায়।সারহান আসলে আর খাওয়াও হবে না।তাই আগেই কিছু একটা খেয়ে নেয়।
ঘড়িতে রাত আটটা।সারহান এখনো আসেনি।একটা গাঢ় নীল রঙের জামদানি পড়েছে জান্নাহ্।চুলে হাত খোঁপা করে চোখে কাজল দেয়।চুড়ি জান্নাহ্ এর পছন্দ হলেও এখন আর পড়ে না।সারহান রাগ করে।একবার চুড়িতে সারহানের বুকে আচড় লাগে।নিজেকে পরিপাটি করে আবারো পড়তে বসে জান্নাহ্।বিছানার কোণায় বসে পড়তে পড়তে কখন যে চোখ লেগে আসে বুঝতে পারে নি।
রাত দশটা।খেতে বসেছে সবাই।জাবিন এখনো বেজায় চটে আছে অন্তরার উপর।রাগ করে সারাদিন না খেয়ে ছিলো।জমির অনেক কষ্টে ধরে বেঁধে নিয়ে এসেছে।সেরাজ নির্লিপ্ত।এইসবে তার তেমন আগ্রহ নেই।সে অন্য ধ্যানে মগ্ন।
ডোরবেল বাজতেই সচকিত হয় সবাই।এতো রাতে কেউ তো আসার নেই।শুভ্রা দরজা খুলে হতবুদ্ধি হয়ে যায়।সারহান!
বিস্মিত গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে শুভ্রা–
“সারহান তুই?
সারহান মুখে গম্ভীরতা ধরে রেখে হেয়ালি গলায় বললো–
“কেন?
আমার বাড়িতে আমি আসতে পারি না?
ঘরে ঢুকে সোজা ডাইনিং এর চেয়ার টেনে বসে সারহান।তার ক্ষীপ্ত সরল দৃষ্টি অন্তরার দিকে।অন্তরা বুঝতে পারলেন হয়তো জান্নাহ্ কিছু বলেছে তাই আজ প্রথম তার ছেলে একই মাসে দুইবার বাড়িতে এসেছে।শান্ত ও শীতল গলায় সারহান বললো–
“কেমন আছেন মা?
অন্তরার মনটা ভার হয়ে আসে।আজ প্রায় বারো তেরো বছর ধরে সারহান তাকে আপনি সম্মোধন করে।যা অন্তরার মনটা বিষিয়ে তোলে।তবুও মুখে স্বাভাবিকতা ধরে রেখে বললো–
“আজ হঠাৎ…।”
“কেন!এই বাড়িতে আসার অধিকার আমার নেই নাকি!
“তা হইবো কেন!এইটাতো তোরই বাড়ি বাপ।যহন মন চায় আসবি।”
অধর কোণে হাসে সারহান।জমিরের দিকে তাকিয়ে বললো—
“তোমাকে আরো শক্ত হওয়া উচিত ছিলো বাবা।তাহলে হয়তো তোমার ভাগ্যটা আরো ভালো হতো।”
সারহানের কথায় সবাই একে অন্যের দিকে তাকায়।তাদের এই ভূত দেখার মতো মুখভঙি দেখে সারহান ফস করে হেসে ফেলে।হেসে হেসে বললো–
“এতো সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই।
শুনলাম পাশের বাড়ির রজত ভাইয়ার মা নাকি সিড়ি দিয়ে পড়ে পা ভেঙে ফেলেছে।স্চু স্চু,আফসোস! এই বয়সে হাড় ভাঙলে কী জোড়া লাগে মা!
সকলের দৃষ্টি আবদ্ধ হয় অন্তরার দিকে।জাবিন ক্রুর হাসে।সে প্রসন্ন হয়েছে।ধুম করে উঠে দাঁড়ায় সারহান।শুভ্রা ব্যস্ত হয়ে বললো–
“খাবি না।”
“নাহ।খেয়ে এসেছি আমি।জান্নাহ্ খেয়েছে?
শুভ্রা দ্বিধান্বিত হয়ে বললো–
“সন্ধ্যায় একবার দেখেছিলাম।আরতো দেখিনি।ভাবলাম পড়ছে হয়তো।”
সারহান একটা প্লেট নিয়ে তাতে খাবার নিয়ে সোজা নিজের বেডরুমের দিকে হাঁটা ধরে।
সেরাজের চোখে ঘুম নেই।সারহান আসার পর থেকে তার শরীরে টান পড়েছে।তিতিকে বুকে জড়িয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে শুভ্রা।সেরাজ শুভ্রার কাঁধে হাত রাখতেই বিরক্তি নিয়ে তা সরিয়ে দেয় শুভ্রা।খসখসে গলায় বললো–
“কী শুরু করলে তুমি?আর একবার যদি গায়ে হাত দিয়েছো তো ধাক্কা মেরে ফেলে দিবো।অসহ্যকর!এখনো কুটকুটানি কমে না শরীরের।ছেলেটা বড় হয়েছে।একটু তো সামলাও নিজেকে।যত্তসব!
নিজেদের মধ্যে একফুটের মতো দূরত্ব রেখে ফের ঘুমে মগ্ন হয় শুভ্রা।সেরাজ ফোঁস করে এক শ্বাস ফেলে।চিত হয়ে শুয়ে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।তার চোখের সামনে ভেসে উঠে জান্নাহ্ এর অনাবৃত দেহ।যার প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিভোর হয়ে অবলোকন করছে সেরাজ।
সারহানের উন্মুক্ত বুকের সাথে জড়িয়ে আছে জান্নাহ্ এর অর্ধ বিবসনা দেহ।সারহান তার স্বভাবসুলভ কাজে ব্যস্ত।কিছুটা সংশয় নিয়ে ভীত গলায় জান্নাহ্ বললো–
“সারহান!
সারহান অস্ফুট আওয়াজ তোলে–
“হু।”
“কাল আমার ইংরেজি ক্লাসটেস্ট।”
“তো?
“আপনি?
“আমি কী আপনাকে স্কুল যেতে কখনো নিষেধ করেছি!
জান্নাহ্ এর ঠোঁটে ফুটে উঠে মসৃন হাসি।জান্নাহ্ এর সারাশরীরে বিচরণ চলছে সারহানের।তার শরীরের সৌরভে উন্মাদ হয়ে উঠে সারহান।জান্নাহ্ এর ঠোঁট,গলা,বুকে চুমুতে ভরিয়ে তোলে।জান্নাহ্ যখন পুরোই সারহানের দখলে তখনই সারহান জান্নাহ্ এর সেই পুরোনো ক্ষত জায়গায় একটা কামড় বসিয়ে দেয়।মৃদু গোঙানির আওয়াজ বের জান্নাহ্ এর মুখ থেকে।
চলবে,,,