#ছায়া_সঙ্গিনী
#পর্ব-১৮
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
আল্লাহ তা’আলা যেদিন চাইবে সেদিন হবে খালামনি।
– তার ফরেও তোমাগো ইছছা থাহন লাগবো না?তুমগো ইছছা থাকলে না আল্লাহ বাচ্চা কাচ্চা দিব। আমাগো কালে তেরো চইদ্দো বয়সে বাচ্চা কাচ্চা হইয়া গেছে।অনে তুমাগো নিয়ুম কানুন বুঝি না বাপু।
বৃদ্ধার কথার উত্তরে আমি আর কোন জবাব দিলাম না, হয়তো আমার ভালোর জন্যই বলছেন তিনি। ভাবছি রাহাতের সাথে কথা বলবো এই বিষয় নিয়ে। সবার মতো আমিও চাই আমার একটা ছোট্ট সোনামণি যার ছোট্ট শরীর টাতে আদরে আদরে ভরিয়ে দেব আমি। তার ছোট অধর দুটি ছুঁয়ে দেবে আমায়। আমিও তখন তার আঁখিপল্লব দুটো তে নিজের অধর ছুঁয়ে দেব। ধীরে ধীরে সে কথা বলবে, তখন আমাকে মাম্মা আর রাহাত কে বাবা বলে ডাকবে। পৃথিবীর প্রত্যেকটা নারী একবার হলেও এই সুখ অনুভব করতে চায়।
– কি হইলো বউ কিছু কইতাছো না ক্যান?
আমি উনার হাত দুটো ধরে বললাম,
– খালামণি আমাদের জন্য দো’আ কইরেন, আল্লাহ তা’আলা যেন খুব তাড়াতাড়ি আমার কোল আলো করে দেয়।
তারপর উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
– দো’আ করি বউ তোরে যেন আল্লাহ একটা নাতি দেয়।
আপু এসে বললো,
– আয়রা খেতে আসো। আম্মা আপনি ও আসেন।
তারপর ডাইনিং রুমে এসে দেখি রাহাত আসে নাই,আপু বললো রাহাত ঘুমিয়ে আছে।আপু কতো বার ডেকেছে তাও উঠে নাই।তাই আমি গেলাম ডাকার জন্য।
রুমে এসে দেখি সে আরামে ঘুমিয়ে আছে, এদিকে দুপুর দুটো বেজে গেছে তবুও উনার খাওয়ার খবর নেই। পাশে বসে কন্ঠস্বর ছোট করে ডাকলাম রাহাত উঠো, সবাই খেতে যেতে বলছে।তার কোন পাত্তাই নেই।গরম বলে সার্ট খুলে চিকন স্লিপের সাদা গেঞ্জি পরে ঘুমিয়ে আছে। আমি একটু ঝুঁকে তার চুল গুলো নেড়েচেড়ে বললাম এই রাহাত উঠো সবাই অপেক্ষা করছে তো। সে আচমকা আমার গলা জড়িয়ে তার একদম কাছে নিয়ে আসলো। তারপর ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,
– এভাবে মানুষ কে আদর করে ডাকতে আসলে, উঠার বদলে মানুষ আরো আরাম করে ঘুমাবে।
আমি তখন বললাম,
– তো কিভাবে ডাকবো শুনি?
– জোরে চেঁচিয়ে ডাকতে হবে, তাহলেই ঘুম দৌড়ে পালাবে।
– উহু এভাবে ঘুমের মানুষ কে জাগ্রত করা উচিৎ নয়। আকস্মিক চেঁচামেচি শুনে তার মস্তিষ্কে আঘাত লাগতে পারে।এক হাদিস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, “ঘুম হলো মৃত্যুর ভাই।” উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের শরীর থেকে আত্মা উঠিয়ে নেওয়া হয়। প্রধান পার্থক্য হলো- ঘুমের ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত আত্মা ফিরিয়ে দেয়া হয় কিন্তু মৃত্যুর ক্ষেত্রে আত্মা শরীর থেকে চিরদিনের জন্য আলাদা হয়ে যায়। তাই, এই যে প্রতিদিন আমরা জাগ্রত হই, এর মানে হলো আমাদের প্রকৃত অর্থেই আবার জীবন দেয়া হয়। এ জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জেগে উঠার পর বলতেন- “সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদের মৃত্যু দেয়ার পর আবার জাগ্রত করেছেন। আর পরিশেষে আমরা তাঁর নিকটেই ফিরে যাব।” প্রতিটি দিনই এক একটি নব জীবন, নব সূচনা।
তাই আমাদের উচিৎ ঘুমন্ত ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে ডেকে জাগ্রত করা।
আমার কথা গুলো রাহাত মনোযোগ দিয়ে শুনে, তাকিয়ে রইলো অপলক দৃষ্টিতে। আমি ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কি এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?
– আমার সুন্দরী এবং জ্ঞানী বউ কে দেখছি।জানো তুমি না বয়সের তুলনায় বেশি ই বুঝো, মা শা আল্লাহ।
– হুম হয়েছে আর পাম দিতে হবে না, আমি পামে ফুলি না।
– তাই না??
ব্যাস শুরু হয়ে গেল তার ভালোবাসা নামক অত্যাচার! তবে এটা একটা পবিত্র বন্ধনের অংশ বিশেষ, যেখানে কোন কলঙ্ক নেই। যেখানে স্ত্রীকে ভালোবাসা সুন্নাত। আলহামদুলিল্লাহ।
কিছুক্ষণ পর আমাকে ছাড়লেন তিনি, আমি তার কান মলে দিয়ে বললাম,
– ফাজিল ছেলে কোথাকার,দরজা খুলে রাখা যদি কেউ চলে আসতো?
সে কান ডলতে ডলতে বললো,
– আরে আমি জানি কেউ আসবে না,তাইতো তোমার মিষ্টি অধরে টুপ করে ডুবে গেলাম হা হা হা,,
– হইছে এবার তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি যাই ওখানে, না জানি তারা কি ভাবছেন?
রাহাত বাথরুমে চলে গেল, আর আমি ডাইনিং রুমে আসলাম। এসে দেখি খালামণি আর জিহান খেয়ে চলে গেছে।আর আপু আমাদের জন্য বসে আছে। আমি চেয়ার টেনে বসে বললাম,
– আপু আপনি খেয়ে নিতেন, কয়টা বেজে গেছে এখনো অবধি আমাদের জন্য বসে আছেন। আপনার ভাই কে ডাকতে ডাকতে শেষ আমি। উঠতে ছিলই না।
– আরে সমস্যা নেই, তোমাদের রেখে আমি খাই কি করে।ভাই এরকম ই, অফিসে প্রচুর পরিমাণে কাজ করে তো সে জন্য ছুটি পেলে ঘুমিয়ে নেয়। কারণ আবার কাজে জয়েন হলে তো ঘুমাতে পারবে না তেমন।
– জ্বি বুঝতে পেরেছি আপু।
তারপর রাহাত আসলে খাওয়া শুরু করি।আপু অনেক কিছু তৈরি করেছেন_পাট শাক,মাছ ভাজা,মাছ ভুনা,ডিম ভাজা, গরুর গোশত, মুরগির রোস্ট,ডাল।আপু আমাদের দুজনের প্লেট ভরে খাবার দিল। আমি অল্প খেয়ে আর খেতে পারছি না, রাহাত আমার অবস্থা বুঝতে পেরে বললো, আজকে এগুলো খেয়ে তবেই উঠবে তুমি না হয় খবর আছে। ঠিক মতো খাবার না খেয়ে দিন দিন পাতলু হয়ে যাচ্ছ। শেষে না পেরে একটা একটা করে ভাত মুখে দিচ্ছি। রাহাত নিজের খাবার শেষ করে, আমার খাবার প্লেট নিয়ে গেল।যা দেখে আমি খুব খুশি হয়ে উঠতে যাবো তখনি রাহাত বললো,
– কোথায় যাচ্ছ? বসো এখানে।
এই বলে আমার খাবার গুলো মাখিয়ে লোকমান ধরলো আমার মুখের সামনে। আমি করুন চোখে তাকালাম, কিন্তু সে কোন পাত্তাই দিল না। উল্টো চোখ রাঙিয়ে ইশারা করলো খাওয়ার জন্য।
শেষে না পেরে খেতে হলো সব গুলো খাবার। খাবার শেষে আপু দই দিল, সেগুলো ও আমাকে খাওয়ালো বেয়াদব ছেলেটা। ইচ্ছে করছে কামড়ে দেই,আপু বলে কিছু করতে পারছি না। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে চলেছে তিনি।
খাবার খাওয়া শেষে আমি জিহান এর রুমে চলে গেলাম। রাহাত জোর করে খাইয়ে দিয়েছে বলে ওর রুমে গেলাম না আমি।
গিয়ে দেখি জিহান চিপস, চকলেট,ডাল ভাজা,জোস এগুলো দুই ভাগে বিভক্ত করছে। যেগুলো ওদের জন্য ওর মামা এনেছে। আমি গিয়ে ওর পাশে বসলাম। জিজ্ঞাসা করলাম দুই ভাগ কেন? বললো,এক ভাগ ওর আরেক ভাগ ওর ভাইয়ের। খেয়াল করে দেখলাম একদম সমান করে ভাগ করেছে। হঠাৎ জিহান বললো,
– মামি,মামা কি তোমার সাথে খুব বেশি দুষ্টুমি করে?
ওর এরকম কথায় বরকে গেলাম আমি। সাথে সাথে জিজ্ঞাসা করলাম, কেন এমন মনে হলো তোমার?
ও বললো,
– তখন দেখলাম তুমি মামার কান মলে দিচ্ছ তাই।
আমি বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়! কি বলে এই ছেলে?ও আবার আমাদের দু’জনকে একসাথে দেখে ফেলে নি তো?যদি দেখে থাকে! হায় আল্লাহ!এখন কি করবো আমি? কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
– তুমি কিভাবে জানলে জিহান? তুমি কি দেখেছো?
বড় বড় পাপড়ি গুলো মেলে,চোখের কালো মণি গুলো আমার দিকে স্থির রেখে জিহান বললো,
– আম্মু তখন তোমাদের খাবার খেতে ডাকার জন্য আমাকে পাঠিয়েছিল, আমি গিয়ে দেখি তুমি মামার কান মলে দিচ্ছ।
– তাহলে যে তুমি আমাদের ডাকলে না?
– মামা দুষ্টুমি করেছে,আর তুমি শাসন করছো। আমি গেলে মামা লজ্জা পেত তাই চলে আসি।
আমি শুধু অবাক হয়ে ওর কথা গুলোই শুনলাম,মা শা আল্লাহ এইটুকুনি ছেলে ওর এতো জ্ঞান? আমি সাথে সাথে ওর গাল দুটো টেনে দিলাম।জিহান অনিমেষ চাহনিতে তাকিয়ে রইলো। আমি তখন বললাম,
– আমার বিজ্ঞ বাবাটা কি দেখছে এভাবে?
জিহান এক গাল হেসে বললো,
– মামি তুমি খুব সুন্দর।
আমিও হেসে বললাম,
– উহু আমি সুন্দর নই, তুমি সুন্দর।
– ছেলেরা সুন্দর হয় নাকি?মেয়েরাই সুন্দর হয়।
– কেন এমন মনে হয় তোমার?
– আমার ক্লাসমেট রিমু ও খুব সুন্দর।ও বলেছে ছেলেরা সুন্দর হয় না।মেয়েরাই সুন্দর হয়। মেয়েদের খুব বড় বড় চুল হয় চুল গুলো সুন্দর সুন্দর ফ্রান্স ক্লিপ দিয়ে বেঁধে রাখা যায়। কিন্তু ছেলেদের এই সুন্দর্যোটা নেই। তাছাড়া ওরা কতো সুন্দর সুন্দর ড্রেস পরতে পারে, ছেলেদের সার্ট প্যান্ট ছাড়া আর কিছুই নেই তেমন।
জিহানের কথা শুনে বুঝতে পারলাম, এই নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়েছে তার সুন্দরী ক্লাসমেট রিমুর সাথে।তাই জিহান কে বললাম, তোমার ক্লাসমেট রিমু কে বলবে মেয়েরা কখনোই সুন্দর হয় না! মেয়েরা হয় সুন্দরী।আর ছেলেরা সুন্দর।
জিহান ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বললো,
– সত্যি মামি? তবে কেন মেয়েরা সুন্দর হয় না?
– এটা তুমি বড় হলে এমনিতেই বুঝতে পারবে,কজ আমার জিহান অনেক বুদ্ধিমান।
মামা তুমি এভাবে উকি ঝুকি মারছো কেন? রুমের ভিতরে আসছো না কেন? তুমি কি ভয় পাচ্ছ মামি কে?
আমি পিছনে ফিরে দেখলাম, রাহাত জিহানের কাছে ধরা পরে এখন বোকা হেসে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওরে দেখে ভেংচি কেটে অন্য দিকে তাকিয়ে আছি। সে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে জিহানের সাথে বসে বললো,
– কি করছো তোমরা?
জিহান গাড় ঘুরিয়ে মাথা উঁচু করে বললো,
– মামা তুমি অনেক দুষ্টুমি করো মামির সাথে।পচারা দুষ্টুমি করে তুমি জানো না?
রাহাত এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– তোমার মামি আমার কথা একদম শুনে না, সেই জন্যই তো আমাকে দুষ্টুমি করতে হয়। এই দেখ আমি কতোবার ডাকলাম তাও তোমার মামি শুনলো না, এখানে এসে বসে আছে। তুমি ই বলো এখানে কি আমার দোষ?
জিহান বিপদে পড়ে গেল কি বলবে এখন?তাই সে বিছানার অন্য পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল। এদিকে রাহাত মুচকি মুচকি হাসছে। তারপর আমাকে টেনে রুমে নিয়ে এসে দরজা লাগিয়ে দিল। লাগিয়ে বললো, দুপুর বেলা না ঘুমিয়ে অন্যের ঘুমে ডিস্টর্ভ করছো। পিচ্চি কোথাকার,চলো ঘুমাবে চলো। তারপর জোর করে নিয়ে শুইয়ে দিল, সাথে নিজেও। আমি ঘুমানোর ট্রাই করছি আর সে আমাকে ঘুম পারানোর নাম করে উল্টো ঘুমের তেরোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।,,,,,,
#চলবে,,, ইনশা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম।
সবাই দেখছি এখন আর রেসপন্স করছে না, গল্পটা কি আর ভালো লাগছে না? শেষ করে দিব? সবাই শুধু নেক্সট নেক্সট করে ?)