ছন্দহীন পদ্য
.
পর্ব_১৯
.
আফরাও ব্যাপারটা বুঝে ফেলেছে। দীর্ঘ সময় রুমে দু’জন চুপচাপ বসা। নাঈমকে খুবই চিন্তিত দেখা যাচ্ছে। আফরা ওর কাঁধে হাত রেখে বললো, ‘থ মেরে বসে আছো যে? কিছু বলো। পদ্য মানে তো ভোরে যার বিয়ের কথা বলেছিলে সে, তাই না?’
নাঈম শূন্যদৃষ্টিতে বিছানার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, ‘হ্যাঁ, আর এই মেয়ে তার কম হলেও ৩-৪ বছরের বড়ো। সব সময় আপু বলেই তো ডাকতো। অথচ তোমার আদরের দেবর আপুর প্রেমে পড়েছে। ভাবো কত বড়ো ব*দমাইশ।’
ওর কাঁধ খানিক শক্ত করে ধরে আফরা বললো, ‘তুমি এত টেনশন করো না তো প্লিজ। শান্ত হও।’
– ‘টেনশন করবো কেন? সে যার-তার সাথে প্রেম করে ম*রলে কার কি আসে যায়?’
– ‘এভাবে বলো কেন? হয়তো প্রেমে পড়ে গেছে। প্রেম কি আর এত ভেবে-চিন্তে হয় না-কি? আমার এক বান্ধবী হিন্দু একটা ছেলের প্রেমে পড়ে গেল। ক্লাসমেট ছিল।’
– ‘কানের কাছে আজাইরা গল্প করো না তো আফরা।’
– ‘এত রাগছো কেন? সে তো তোমাদের কিছু বলেওনি। তার কষ্ট সে তার একা ভোগ করছে। কিন্তু ছেলেটার জন্য মায়া হয়। ইস কি যে করবে এখন। মেয়েটাও তাকে পছন্দ করে না। একতরফা লাভ। সবদিক থেকে ফেঁসে গেল।’
– ‘পদ্য তাকে পছন্দ করারও কথা না। পদ্য অন্যরকম মেয়ে৷ ছোটবেলা থেকে ওকে চিনি। খুবই ভালো, ভদ্র। ছোট ভাইয়ের মতো একটা ছেলের সাথে প্রেম করার মতো নির্লজ্জ না।’
– ‘কিন্তু অনিক কি এগুলো বুঝে না? ও তো অনেক বুদ্ধিমান। এই প্রেমের ভবিষ্যৎ সে কি জানতো না?’
– ‘বেশি বুদ্ধিমান বা*ল পাকনারাই এভাবে কু*ত্তা ম*রা ম*রে।’
– ‘আশ্চর্য! তুমি এত রে*গে যাচ্ছ কেন? তোমাকে এসে কি সে বলছে আমি ম*রে যাচ্ছি, বাঁচাও। আমাকেও কিছু বলেনি।’
– ‘মেয়ে রাজি না তাই বলেনি। রাজি হলে লাফাইতো বিয়ের জন্য।’
– ‘মেয়ে রাজি হলেও তোমরা মানতে না নিশ্চয়?’
– ‘আজাইরা কথা বলো না। আমি নিজেই কল দিয়েছিলাম। আমি ভেবেছি কোনো মেয়েকে হয়তো পছন্দ করে, দেখি কে, আর মেয়ে রাজি হলে বিয়ে করাতে সমস্যা কী? দরকার হয় তোমাকে দিয়ে মেয়েটিকে বুঝাইতাম।’
– ‘তো এখন বুঝানোর চেষ্টা তো করতে পারি আমরা। অনিকের অবস্থাটা মেয়েটিকে বলি না হয়।’
– ‘মাথা কি ঠিক আছে তোমার? গ্রামের মানুষ হাসাহাসি শুরু করবে। সবাই জানে অনিক ছোট। অনিক ওর কাছে পড়তোও ছোটবেলায়। বুঝতে পারছো ব্যাপারটা? যা বুঝো না, সেটা নিয়ে কম কথা বলবে। এজন্য আব্বা ধমক দিয়েছিল আসলে। আব্বা হয়তো জানে ব্যাপারটা।’
আফরা আর কথা বাড়াতে গেল না। নাঈম সচরাচর এরকম কথা বলে না। আজ মনে হয় প্রচণ্ড রে*গে গেছে। আফরা বিছানা থেকে উঠে সিটিং রুমে গিয়ে দীর্ঘ সময় সোফায় চুপচাপ বসে রইল। কি করবে এখন? ভীষণ কষ্ট হচ্ছে অনিকের জন্য। মেয়েটিকে ভোলা ছাড়া আর কোনো পথই তো খোলা নেই ওর। এভাবে একা একা অন্ধকার রুমে বসে থাকলেও তো কখন কি করবে ঠিক নেই৷ আফরা আবার উঠে গিয়ে নাঈমের পাশে বসে বললো, ‘এই, ইভাকে ঘটনাটা না জানানোই ভালো হবে মনে হয় তাই না?’
নাঈম চিন্তিত হয়ে দুইহাতে নিজের মুখ আঁজলা করে মুছে বললো, ‘ওকে না বলাই ভালো। পদ্যের বিয়ে তো ঠিক হয়েই গেছে। কয়েকদিন পর বিয়ে হয়ে যাবে৷ তখন এমনিতেই দেখবে ইভার দিকে ঝুঁকবে। ব্রেকাপের পর সাথে সাথে আরেকটা মেয়ে পেয়ে গেলে এসব ঢংয়ের প্রেম দেখবে উধাও।
– ‘নাঈম তুমি এভাবে কথা বলে মেজাজ খারাপ করো না তো আমার। তুমিও দেখি অন্যদের মতো। তুমি জানো? যখন দু’জন প্রেম করে, তারা কিন্তু খুবই সিরিয়াস হয়। কি পরিমাণ সিরিয়াস সেটা বুঝতে পারবে ব্রেকাপ হলে কত মানুষ আত্মহ*ত্যা করে, হাত কা*টে এসব খবর রাখলে। কিন্তু তখব কি হয় জানো? একমাত্র প্রেমের বেলায়ই তখন একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটে, সেটা হলো ওই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সবাই হাসে। কেউ বলবে ‘ঢং’। কেউ বলবে সামান্য একটা ছেলের জন্য বা সামান্য একটা মেয়ের জন্য এত পাগল হয়ে গেছে। অথচ এই সমাজেরই প্রায় বেশিরভাগ মানুষই একটা বয়সে প্রেম করেছে বা প্রেমে প্রত্যাখ্যান হয়ে কষ্ট পেয়েছে৷ কিন্তু অন্যদেরটা নিয়ে সে ঠিকই হাসাহাসি করবে। এবং আরও আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে অনেক পিতা-মাতা নিজে প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করবে৷ কিন্তু সন্তানের বেলায় খুবই কড়া।’
নাঈম খানিক রূঢ় গলায় বললো, ‘এত লেকচার কেন দিচ্ছ? আমি তো ভালো কথাই বললাম। পদ্যকে তো পাওয়া পসিবল না তার। তাই ইভা ওর সঙ্গে এখন মিশলে ভালো হবে।’
– ‘তা ঠিক। সেটা আমি নিজেই তোমাকে বলতে এসেছি। কিন্তু কথা হলো অন্যের প্রেমকে ঢংয়ের প্রেম বলা ঠিক না। তুমি মনে হয় ভুলে গেছো আমরাও প্রেম করে বিয়ে করেছি। আর অনিক আমাদের সহযোগিতা করেছিল। অনিকের কারণেই আমাকে তোমার মা-বাবা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে।’
– ‘আরে ধু*র, তুমি কোথা থেকে একেকটা কথা খুঁজে খুঁজে বের করতে শুরু করছো? একে তো মেয়েটা বয়সে বড়ো, তার উপর একতরফা ভালোবাসা। কীসের সাথে কি টানছো?
আফরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে গেল। নাঈমকে এত রেগে যেতে আজ প্রথম দেখেছে সে। ইভার দরজায় এসে দু’বার নক করতেই কারও সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে বলতে এসে দরজা খুলে দিল সে। আফরা গিয়ে বিছানায় বসলো। ইভা কথা বলা শেষ করে বললো, ‘কোনো সমস্যা আপু? আজ বাসা কেমন অন্যরকম লাগছে যে?’
– ‘তেমন কিছু না। ওদের পারিবারিক কিছু সমস্যা হচ্ছে। অনিক যে বিয়ে-শাদি করে না এগুলো নিয়েই আরকি।’
– ‘হ্যাঁ অনিক ভাইকেও দেখলাম কেমন যেন।’
– ‘সবার বকা খাচ্ছে তো তাই। ওর চাচা-চাচিও ইংল্যান্ড থেকে কল দিয়ে বুঝিয়েছেন। তবুও সে বিয়ে করবে না৷ এগুলোর জন্য নাঈমের আব্বাও বকা দিছেন।’
– ‘ও আচ্ছা।’
– ‘তুই আবার ওকে গিয়ে বলিস না মন খারাপ কেন? এসব জানার চেষ্টা করার দরকার নেই।’
– ‘কি যে বলো আপু। আমি বসে আছি তোমার দেবরের মন খারাপের কারণ জিজ্ঞেস করতে। আমি তো এখন উনার ধারেকাছেও যাই না।’
– ‘যাবি না কেন, তোমরা তো প্রায় সমবয়সি। তাছাড়া তালতো ভাই-বোনের তো এমনিতেই ভালো সম্পর্ক থাকে।’
– ‘কি বললে? তোমার দেবরের সমবয়সী আমি?’
– ‘তা নয় তো কিরে বোকা? ধর তোর বিয়ে হবে, তখন কি তোর থেকে বয়সে কিছু বড়ো ছেলের সঙ্গে হবে না? এরকমই তো হয়। মেয়েরা কয়েক বছরের ছোট হলেও সমবয়সী ধরা যায়।’
– ‘হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক।’
– ‘চল তো, ওর আজ এমনিতেই মন খারাপ। গিয়ে গল্প-টল্প করি। সবার বকা খেয়েছে ছেলেটা।’
– ‘আহারে দেবরের জন্য কি প্রেম।’
আফরা ফ্যাকাসে মুখে কৃত্রিম হাসি এনে সঙ্গ দিল ওকে। দু’জন গিয়ে নক দিল অনিকের দরজায়। অনিক এসে দরজা খুলে দিল। এখন রুমে বাতি জ্বলছে। সে নিজেই বললো, ‘আসো।’
আফরার কেমন যেন ওর স্বাভাবিক আচরণকে আরও বেশি অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। চোখ দু’টা সিঁদুরের মতো লাল হয়ে আছে। দু’জন গিয়ে বিছানায় বসলো। অনিক দেয়ালে বালিশ ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে বসে বললো, ‘কবিতা পড়ছিলাম। শুনবে তোমরা? পা তুলে আরাম করে বিছানায় বসো। কবিতা পড়ে শুনাই তোমাদের।’
আফরা আসন পেতে বসলো উঠে। ইভা পাশে বসে বললো, ‘কার কবিতা?’
– ‘হেলাল হাফিজের, বইয়ের নাম ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ অদ্ভুত না নামটা?’
– ‘হ্যাঁ অদ্ভুত, জলে তো আগুন নিভে।’
‘কিন্তু উনি আরেকটা জল কোত্থেকে আবিষ্কার করছেন এটায় আগুন জ্বলে’ বলে অনিক অস্বাভাবিকভাবে হেঁসে উঠে আবার থেমে বললো ‘আচ্ছা পড়ি তাহলে।’
আফরা বললো, ‘হ্যাঁ পড়ো।’
অনিক একটা কবিতা বের করে পড়তে শুরু করলো,
“কষ্ট নেবে কষ্ট
হরেক রকম কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট!
লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট
পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,
আলোর মাঝে কালোর কষ্ট
‘মালটি-কালার’ কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট।
এখানে এসে থামলো অনিক। তারপর পাশ থেকে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে বললো, ‘বেয়াদবি মাফ করবে কিন্তু ভাবি।’
ইভা ফিক করে হেঁসে বললো, ‘অদ্ভুল লাগছে আজ আপনাকে।’
অনিক সিগারেট ধরিয়ে নিয়ে বললো,
– ‘তালতো বোন, কবিতাটা সুন্দর না?’
– ‘কিছুই তো বুঝিনি কবিতার।’
– ‘তাই না-কি? আচ্ছা আবার পড়ি তুমি বলবে কি বুঝোনি।’
– ‘আচ্ছা।’
“কষ্ট নেবে কষ্ট
হরেক রকম কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট!
লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট
পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট…’
ইভা থামিয়ে দিয়ে বললো, ‘পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট এটা আবার কি?’
অনিক সিগারেটে টান দিয়ে হেঁসে উঠলো।সেই হাসি দেখলে কান্না বলেই ভ্রম হবে। কান্নার মতো দেখাল হাসিটা। তারপর হাসি বন্ধ করে একেবারে শান্ত গলায় বললো, ‘মাঠের সবুজ ঘাসের উপর ইট রেখে দেখেছো কখনও?’
– ‘না তো।’
– ‘ইট বা পাথর কিছুদিন সবুজ ঘাসের উপর রাখলে সেই ঘাস সাদা হয়ে যায়।’
– ‘মরে সাদা হয়?’
– ‘না, জীবন্ত ঘাস সাদা হয়ে যায়। খুবই কোমল, নরম পিচ্ছিল লাগে তখন।’
– ‘ও আচ্ছা।’
‘এবার বুঝেছো পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট কি জিনিস?’
– ‘কিছুটা।’
আবার সিগারেটে টান দিয়ে চোখবুজে হাসলো অনিক। ইভা আফরার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উলটে ইশারা করছে৷ তার কাছে আজ অনিককে বিকৃত লাগছে। আফরা চুপ থাকতে ইশারা করলো ইভাকে।
অনিক খানিক পর বললো, ‘কবিতা টবিতা এত বুঝা লাগে না ইভা। কিছু বিষয় না বুঝলেও আমাদের ঠিকই মজা লাগে। রবীন্দ্রনাথ এ বিষয়ে কি বলেছেন জানো?’
– ‘কি?’
– ‘কেউ যখন কবিতা পড়ে বলে বুঝলাম না। তখন ভীষণ মুশকিলে পড়তে হয়। কেউ যদি ফুলের ঘ্রাণ শুঁকে বলে এটা কি বুঝলাম না। তখন বলতে হয় এখানে বুঝার কিছুই নাই, এটা কেবল গন্ধ।’
– ‘ও আচ্ছা।’
– ‘তাহলে আবার কবিতাটা শুরু করি।’
ইভা বাঁধা দিয়ে বললো,
– ‘না, দুঃখের কবিতা ভালো লাগছে না।’
অনিক সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে বললো, ‘আচ্ছা ভাবি, একটা ব্যাপার ভেবে দেখেছো মানুষ কত অদ্ভুত?’
আফরা নিঃশব্দে তার কথাবার্তা শুনছিল।প্রশ্ন শুনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, ‘না, ভাবিনি।’
– ‘তুমি দেখবে কেউ প্রেমে ব্যর্থ হলে বিরহের গান শুনে। এবং কেউ কষ্টের গান শুনলে আমরা বলিও ছ্যাঁকা খেয়েছিস না-কি? বলি না?’
আফরার আগে ইভাই বললো, ‘হ্যাঁ বলি।’
– ‘মানুষের এই ব্যাপারটা অদ্ভুত না? ধরো সে প্রেমে ব্যর্থ হলো। তার অনেক কষ্ট। তখন তার কি করার কথা ছিল? যেভাবে মন ভালো হয় তা করার কথা৷ কিন্তু সে তখন কেন উলটো বিরহের গান আরও বেশি শুনে? এর কারণ কি? দুঃখী মানুষরা আরও বেশি দুঃখ পেতে চায় কেন?’
ইভা মুচকি হেঁসে বললো,
– ‘কি জানি, আপনাকেই তো আজ কেমন যেন লাগছে।’
অনিক আবার হেঁসে উঠলো। আফরা বিরক্ত হয়ে ইভাকে চিমটি দিয়ে বললো, ‘আচ্ছা তুই যা তো। ওর সঙ্গে একটু কথা আছে।’
– ‘আমি চলে যাব?’
– ‘হ্যাঁ।’
ইভা উঠে চলে গেল। অনিক ঠোঁটে সিগারেট নিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে। আফরা খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে অবাক গলায় বললো, ‘পদ্যকে তুমি এতো ভালোবাসো অনিক? এতো বেশি? কীভাবে!’
প্রশ্ন শুনে অনিক তাকিয়ে দেখলো আফরার দু’টা চোখ জলে টলমল করছে।
.
পদ্য বিছানায় শুয়ে আছে। বিকেলে ডাক্তার এসেছিল। পেট ব্যথার কথা বলে ভালোই যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে তার। ডাক্তার এসে কত কি জিজ্ঞেস করলো। সে যখন ইচ্ছা “হ্যাঁ, না” বলেছে। ডাক্তার একপর্যায়ে বললো, ব্যথা তো মনে হয় অ্যাপেন্ডিক্সের। হসপিটাল নিয়ে যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখুন কীসের ব্যথা। মনিরা বেগম অস্থির হয়ে গেলেন। মতিন মাস্টার চিন্তিত। পদ্য একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বললো, ‘ডাক্তার ভাই, আমার স্কুল থেকে এসে একটু ব্যথা করেছিল৷ আজই প্রথম। এখন ব্যথা আর নেই। আপনি প্লিজ গ্যাসের ওষুধ দিয়ে বাড়ি থেকে বিদায় হোন।’
এভাবেই একমত ডাক্তারকে বিদায় করেছে৷ সন্ধ্যায় একবার মোবাইলে অনিকের ছবি দেখে আবার কান্না এসে গেল। এত কান্না তার কোনোদিন আসেনি। এত ঘন ঘন কান্নার অভ্যাস হুট করে কীভাবে হলো কে জানে। সেটা দেখে মনিরা বেগম স্বামীকে বললেন, ‘এই, মেয়েটা একবার কাঁদে, আরেকবার স্বাভাবিক৷ উপরি কিছু কি-না বুঝতাছি না। মসজিদের হুজুরকে খবর দাও, দোয়া-দরুদ পড়ে ফুঁ দিয়ে গেলে ভালো হয়।’
মতিন মাস্টার সত্যি সত্যি গিয়ে মসজিদের হুজুর আনলেন। হুজুর পানি পড়া দিলেন। এবং বলে গেলেন স্কুলের পেছনে একটা পুরাতন দোষী গাছ আছে৷ সেখান থেকে কিছু লাগলে লাগতেও পারে। পানি পড়া দিয়েছি। আশাকরি আল্লাহ শেফা দান করবেন।
একটু আগে হুজুর চা-পান খেয়ে বিদায় হয়েছেন। পদ্যের রাগে-দুঃখে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু ঠিক করেছে আর কাঁদবে না৷ কান্না পেলে শব্দ হতে দেবে না। দরকার হয় বিছানা চাদর মুখে ঠেসে ঢুকিয়ে রাখবে। তারপরও কাউকে শুনতে দেবে না। এরা তাকে এখন শুধু হসপিটাল নিয়ে যাওয়া বাকি আছে। সারাটা দিন থেকে বড়ো অসহায় লাগছে। বারবার ভেতর গুলিয়ে কান্না পায়। যা ভাবে তাতেই কান্না আসে। সে এখন বিছানায়ই শুয়ে আছে। পালঙ্কের একপাশে মা-বাবা বসে আছেন। পড়ার টেবিলে মনিসা। কিন্তু সে কিছুই পড়ছে না। গল্প শুনছে। মতিন মাস্টার বললেন, ‘মনিরা তাহলে এটাই বলি ঘটককে?’
– ‘হ্যাঁ তাই বলো, বিয়েতে যেহেতু কোনো খরচ করছি না। তাহলে এই কাজ আগে করা দরকার। নতুন জামাই-বউ এই ঘরে থাকবে না-কি? বিয়ে পিছিয়ে দিলে। উঠানের দক্ষিণে মাটি দিয়ে টিনের ঘর তুলতে কয়দিন আর লাগবে? বিয়ের পর পদ্য জামাইকে নিয়ে সেখানে থাকলো।’
‘হ্যাঁ, ভালো কথাই বলেছো’ তারপর মতিন মাস্টার পদ্যের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘মা মোবাইলটা দে তো, ঘটকের সাথে একটু কথা বলি।’
পদ্য মোবাইল বাড়িয়ে দিল।
– ‘আহা নাম্বার বের করে দে মা।’
পদ্য ঘটকের নাম্বার বের করে দিয়ে রাগে-দুঃখে এখান থেকে উঠে অন্য রুমে চলে গেল। মতিন মাস্টার অবাক হয়ে বললেন, ‘কিরে মা? তোর আবার কি হলো?’
মনিরা বেগম স্বামীকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বললেন, ‘বিয়ের কথাবার্তা শুনে লজ্জা পাইতেছে হয়তো। তুমিও সবকিছু ওর সামনে বলা শুরু করো।’
__চলবে….
লেখা: জবরুল ইসলাম