#চুপিচুপি_ভালোবাসি (অন্তিম পর্ব ২৬)
#আয়েশা_আক্তার
·
·
·
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই যে এতো বড় ধাক্কা খাবো কল্পনাতেও ছিলো না আমার। মা সকালে ডাকছিলো। আমি ঘুমু ঘুমু চোখে আম্মুর দিকে তাকালাম। কিন্তু যা শুনলাম সেটা সোনার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলাম না আমি। ঘুম থেকে উঠেই মায়ের মুখে শুনলাম আজ নাকি আমার বিয়ে! আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি আম্মুর দিকে। কিছুক্ষণ এমন ভাবে তাকিয়ে থেকে বললাম,,
–“তোমার মাথা ঠিক আছে আম্মু! আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে সেটা জানো না!”
আম্মু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,,
–“তোর বরের সাথেই তোর বিয়ে হবে। সবার সামনে বুঝেছিস। এখন কথা না বাড়িয়ে উঠে পর।”
এতটুকু বলেই আম্মু চলে গেল। আমি এখনও থ মেরে বসে আছি। আরে কি হচ্ছে কি এইসব। উফ সত্যি এই নির্ভীক নামক মানুষটা যেদিন ও থেকে আমার লাইফে এসেছে সেদিন থেকে আমার জীবনে যা কিছু হচ্ছ তার বিন্দুমাত্র আগাম ধারনাও আমার থাকছে না। কিন্তু এই মুহূর্তে এসব ভাবনা ভাবতে ইচ্ছে করছে না। ঘুম পাচ্ছে। হুট করেই দড়জা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো মারুফা। দাঁত কেলিয়ে বলল,,
–“রেডি হয়ে নে দোস্ত! তোর বিয়েতে আমি ব্যাপক মজা করবো।”
আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম,,
–“তুই মজা কর, নাচ কর, গান গা মা খুশি কর কিন্তু এখন আমাকে ঘুমোতে দে প্লিজ!”
বলেই আবার শুয়ে পড়লাম। মারুফা অনেক বার ডাকলো কিন্তু আমি শুনিনি। আবার তলিয়ে গেলাম ঘুমের দেশে। ঘুম ভাঙল বেলা ১২ টায়। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে যেতেই দেখি চৌদ্দ গুষ্টির সকলে এসে হাজির। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। এতো অল্প সময়ে এতো মানুষ জন এলো কোথা থেকে? এসব ভেবে কোন কাজ নেই আমার। আমি গিয়ে আমার কাজিন দের মাঝে ঠাস করে বসে পড়লাম। সবাই হতভম্বের মতো তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি পাত্তা দিলাম না। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওদের সাথে গল্পে মেতে উঠলাম আমি। ওদের সাথে আড্ডা দিতে দিতেই বেলা গড়িয়ে ২ টা বেজে গেলো। আখি আপু একটা হলুদ শাড়ি আমার হাতে দিয়ে বলল পড়ে নিতে। এখন নাকি হলুদের অনুষ্ঠান হবে। কি আর করা যাবে শাড়িটা পরে নিলাম। একে একে হলুদের অনুষ্ঠান ও শেষ হয়ে গেল। ঘরে এসে গোসল করে নিলাম। এবার একটু ভালো লাগছে। আম্মু এসে খাবার দিয়ে গেলো। আমার খেতে ইচ্ছে করছে না মোটেও কিন্তু আম্মুর চোখ রাঙানি তে বাধ্য হয়ে খেয়ে নিলাম।
_______________
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। বৌ সেজে বসে আছি আমি। আয়নায় নিজেক দেখে নিজেই চিন্তে পারছি না। এইটা কি আদোও আমি? জীবনে কখনো এতো ভারী মেকআপ করিনি। তার উপর এতো গুলো গয়না পড়ে কেমন দমবন্ধ দমবন্ধ লাগছে। কিন্তু সেদিকে কারোর খেয়াল নেই। সবাই তো নান কথায় ব্যস্ত। আমিও বিষয়টাকে পাত্তা দিলাম না। রাত আটটার সময় কাজি আসলেন। কবুল বলার সময় গলা দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিলো না আমার। সব কেমন এলোমেলো লাগছিলো। চোখের সামনে পুরোনো সব দিনগুলি ভেসে উঠছিলো। বাবা-মায়ের সাথে আর থাকতে পারবো না ভাবতেই খুব কষ্ট হচ্ছিল। অবশেষে কবুল বলেই দিলাম। তারপরেই কান্নায় ভেঙে পড়লাম আমি। আসার আগে ছোট বোনটা অনেক কাঁদছিলো। ওর কান্না দেখে মনে হচ্ছিল এখানেই থেকে যাই। আমি যবো না ঐ বাড়িতে। আমার এই পরীটাকে ছাড়া কি করে থাকবো আমি? যাবো না আমি। একবার তো বলেই দিয়েছিলাম আম্মু আমি যাবো না। কিন্তু সেটা কি সম্ভব? শেষমেষ গাড়িতে তুলেই দিলেন আব্বু। আমাদের বাড়ি থেকে এ বাড়ি পর্যন্ত পুরো রাস্তা কান্না করতে করতে এসেছি। নির্ভীক কিছু বলছিলেন না শুধু টিসু এগিয়ে দিচ্ছিলেন। এবাড়িতে এসে কান্না থামলো আমার। সব নিয়মকানুন মেনে আমকে নির্ভীকের রুমে বসিয়ে সবাই চলে গেলেন। পুরো রুম অর্কিড ফুলে সাজানো। ভারী শাড়ি আর গয়না যে দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম। ক্লজেট থেকে একটা সুতির শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে এলাম। চেঞ্জ করে সোজা বারান্দায় চলে এলাম। এবার একটু ভালো লাগছে। হঠাৎ কারোর ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে উঠলাম। নির্ভীক পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছেন আমায়। উনি আমাকে ছেড়ে আমার পাশে দাঁড়ালেন। চাঁদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, ওজু করে এসো নামাজ পড়বো। আমিও বাধ্য মেয়ের মত ওজু করে এলাম। দুজন একসাথে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করলাম। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো আসছে। উনি বললেন,,
–“তোমার দেনমোহর কিন্তু আমি পরিশোধ করে দিয়েছি।”
–“এতো টাকা দিয়ে আমি কি করবো?”
–“তোমার টাকা তোমার যা ইচ্ছা করতে পারো!”
আমি আর কিছু বললাম না। চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি আমার কাঁধের উপর নিজের থুতনি রেখে বললেন,,
“আই ওয়ান্ট ইউ ওয়াইফি! মে আই!
🌿
এতো টুকু পড়েই থেমে গেল সাবিনা খান। ডায়রিটা বন্ধ করে স্টুডেন্ট দের দিকে তাকালেন তিনি। ক্লাসের সবাই এতোক্ষণ ধরে সাবিনা খানের মুখেই এসব শুনছিলো। কলেজের ক্লাস করতে করতে সবাই বোর হয়ে গিয়েছিল বলে সব স্টুডেন্ট রা মিলে সাবিনা খানকে ধরেছিলো একটা গল্প বলার জন্য। স্টুডেন্ট দের জোরাজুরি তে উনি এই রাজি হন এবং পরের ক্লাস টিচারকে বলে দুটো ক্লাসের সময় নিয়ে নিজের ব্যাগ থেকে একটা ডায়রি বের করে পড়তে শুরু করেন। সবাই খুব মনযোগ দিয়েই শুনছিলঝ। সাবিনা খান থামতেই একজন দাঁড়িয়ে বলল,,
–“ম্যাম তারপর কি হয়েছিলো? আর এটা কার ডায়রি?”
সাবিনা খান বলেন,,
–“এটা আমার পরিচিত একজনের ডায়রি। নামটা বলা যাবে না।”
ঠিক তখনই ক্লাস বেল পড়ে যায় আর সাবিনা খান উঠে দাঁড়ান।
ওকে ক্লাস টাইম শেষ। কিছুদিন পর এক্সাম আছে সবাই সেটার প্রিপারেশন নাও। ভালো কর পড়াশোনা করো। আবার দেখা হবে।”
তারপর উনি চলে গেলেন। ক্লাসের সবাই উঠে দাঁড়ালো।
বাড়িতে আসতেই একটা ছেলে আর ৩ বছর বয়সী একটা ছেলে আর একটা মেয়ে দৌড়ে ওনার কাছে আসলেন। উনিও নিচু হয়ে তাদের জরিয়ে নিলেন। কিছুক্ষণ পরই ব্যাগ পত্র নিয়ে সিড়ি বেয়ে নামলো একজন পুরুষ আর একজন মহিলা। ওদের দেখে বাচ্চা দুটো বলল,,
–“মাম্মাম, বাবাই আমলা দাবো না প্লিত!”
বাচ্চা দুটোর বাবা বলল,,
–“আমারা আবার আসবো শৌর্য, নুরভী! এখন বাড়ি চলো দাদিমা ওয়েট করছেন।”
বাচ্চা দুটোর মা এবার বলল,,
–“নির্ভীক ঠিক বলেছে আমরা আবার আসবো ফুপি দাদুর কাছে। এখন বাড়ি চলো।”
শোর্য নুরভীও তেমন কিছু বলল না। মা বাবার কথা মেনে নিলো। তারপর নির্ভীক আর শর্মি সাবিনা খানের কাছে এসে বলল,,
–“আসি ফুপিমনি। মাঝে মাঝে আপনারও যাওয়া উচিত আমাদের সাথে দেখা করতে।”
বিনিময়ে সাবিনা খান হাসলেন। তারপর শর্মির ডায়রিটা শর্মিকে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন,,
–“তোমার আমানত! না বলে পড়ার জন্য সরি! কিন্তু না পড়েও শান্তি পেতাম না।”
শর্মি মুচকি হেসে ডায়রিটা নিয়ে নিলো। তারপর পুরো পরিবার একসাথে বাড়ির পথে রওনা দিলো। যাওয়ার পথে নির্ভীক বলল,,
–“ফুপিমনির বাড়িটা খুব সুন্দর তাইনা শৌর্যর মাম্মাম।”
–“হুম। কিন্তু আমাদের এখন মাহির (আয়াত- মারুফার মেয়ে) জন্য কিছু নেওয়া উচিত তাইনা নুরভীর বাবাই!”
তারপর দুজনেই একসাথে হেসে দিলো।
—(সমাপ্ত)—