#চুপিচুপি_ভালোবাসি (পর্ব ২০)
#আয়েশা_আক্তার
·
·
·
উনার এমন ইনোসেন্ট ফেস দেখে আমিও আর কিছু বলতে পারলাম না। কি নিসংকোচে আবদার উনার। আমি উনাকে খাওয়াতে লাগলাম। উনিও আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন। খাওয়া শেষে কিছু একটা ভেবে উনাকে পানি ছুঁড়তে লাগলাম। একটানা কয়েকবার পানি ছুড়েই উঠে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ালাম। উনি রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে হাত,মুখ ঝাড়া দিলেন। আমি তো হেসেই খুন। উনি কিছুক্ষণ রাগী চোখে তাকিয়ে ‘তবেরে!’ বলে তেড়ে এলেন। আমিও ছুটতে লাগলাম। আমি আঁকাবাঁকা পথে ছুটছি, মাঝে মাঝে গাছের আড়ালে
লুকাচ্ছি আবার দৌড়াচ্ছি। কিন্তু এই দৌড়াদৌড়ি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। ধরা পরেই গেলাম উনার হাতে। উনি পেছন থেকে আমার হাত টেনে ধরে আছেন। আমি তো ভয়ে শেষ। উনি কি এবার আমাকে পানিতে ফেলে দিবে নাকি? আমি উনার দিকে ফিরে তাকানোর আগেই হ্যাঁচকা টান দিতেই আমি উনার উপর গিয়ে পড়লাম। দুই হাতে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে উনি আমাকে আরো কাছে টেনে নিলেন। আমার হাত উনার দুই কাঁধে। আমি ভয়ে ভয়ে ঘার উচু করে উনার দিক তাকালাম। কি আর করার কোথায় উনি প্রায় ৬ ফুটের খাম্বা আর কোথায় আমি ৫ ফুট ৩ ইঞ্চির পিচ্চি একটা মেয়ে। উনার ঘারের নিচেই পরে আছি আমি। তাই মাথা উঁচু করেই তাকাতে হলো আমায়। আমি অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছি। উনি বাঁকা হেসে বললেন,,
–“আমাকে পানি ছোঁড়ার শাস্তি তো তোমাকে পেতে হবে। আমার মুখে পানি ছিটিয়ে তুমি পালিয়ে যাবে সেটা তো হতে পারে না। তোমাকে কি শাস্তি দেওয়া যায় বলোতো?”
উনার কন্ঠ শুনে আঁতকে উঠলাম আমি। কেমন যেন ঘোর লাগা গলায় বললেন। আমি কিছু বলার আগেই উনি আমার আমার দিকে কিছুটা ঝুঁকে এলেন উনি। উনাকে এতোটা কাছে দেখে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে আমার। আমি খিচে চোখ বন্ধ করে আছি। কিছুক্ষণ পর কাঁধের উপর গরম হাওয়া জাতীয় কিছু অনুভব করলাম। আমি চোখ খুলতেই উনি ফিসফিসিয়ে বললেন,,
–“হোয়াট আ কিউট বিউটি সাইন ওয়াইফি! এই জিনিসটা আমার নজর এরালো কি করে? একদম পারফেক্ট!”
উনি ঠিক কি বলতে চাইছেন বুঝতে পারছি না আমি। ‘কিউট বিউটি সাইন!’ এটা দিয়ে কি মিন করছেন উনি? উনি সোজা আমার দিকে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,
–“তোমার ঠোঁটের নিচে এতো সুন্দর একটা তিল আছে সেটা তো আমি জানতাম ই না। মাশাআল্লাহ!”
উনার কথা শুনে আমার হাত সোজা তিলটার উপর চলে গেলো। আসলে দূর থেকে কেউ বুঝতেই পারবে না যে আমাদের ঠোঁটের নিচে একটা তিল আছে। উনি আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়ালেন। তারপর বললেন,,
–“অনেক্ষণ তো হলো এবার চল। তার ওপর তোকে নিলার রাগও ভাঙাতে হবে। চল চল।”
বলেই উনি বাইকের দিকে হাঁটা দিলেন। আমি কিছুক্ষণ থম মেরে থেকে মুচকি হেসে উনার পেছন পেছন ছুটলাম। রইলো বাকি নিলার রাগ ভাঙানো! ওটা তো আমার জন্য কোন ব্যাপারই না। ওর রাগ কি করে ভাঙাতে হয় সেটা খুব ভালো করেই জানা আছে আমার।
________________________
ঘরে ঢুকতেই একটা বালিশ উরে এসে আমার মুখের উপর পরবে ঠিক তখনই সেটা ধরে ফেললাম আমি। এটা যে নিলার কাজ সেটা বুঝতে বাকি রইল না আমার। মুখের কাছ থেকে বালিশটা সরাতেই দেখলাম নিলা রক্তচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আজ যে আমার উপর সুনামি বইয়ে দেওয়ার প্ল্যানিং করেছে এতোক্ষণ ধরে সেটা ওর চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আমি বালিশটা হাতে রেখেই বললাম,,
–“নিলু আমি,,”
আর কিছু বলার আগেই ও তেড়ে এলো আমার দিকে। আমি তো ভো দৌড়। ও আমার পেছনে ছুটছে আর হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই ছুড়ে ছুড়ে মারছে। এরকম করে শুধু আমাদের রুমটাই নয় আরো কয়েকটা রুমের পুরো নাজেহাল অবস্থা। আমি তো কোনরকম পাশ কাটিয়ে বেঁচে যাচ্ছি কিন্তু বেচারা জিনিসপত্র গুলো শাস্তি পাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আমি থেমে গেলাম। ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। এভাবে সবার ঘরের জিনিসপত্র ছুড়ে মারাটা রীতিমত বেয়াদবি। আমি পেছন ঘুরে তাকালাম কিন্তু ও আসছেই। আমিও নিজেকে বাঁচাতে ছুটলাম। ছুটতে ছুটতেই বললাম,,
–“আমার উপর রাগ বেচারা জিনিসপত্র গুলোর উপর বের করছিস কেন? আমার তো কিছু হচ্ছে না কিন্তু ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হচ্ছে ঠিকই।”
ও হাতে থাকা কাঠের ফুলদানি টা আমার দিকে ছুড়তেই আমি নিচু হয়ে গেলাম। আর ফুলদানি পাশের দেয়ালে গিয়ে বাড়ি খেলো। ও আরেকটা বস্তু হাতে তুলে নিতে নিতে বলল,,
–“ভাঙুক আজ সব ভেঙ্গে ফেলবো আমি! এতো বড় একটা কথ তুই আমাকে জানালি না! তোকে তো আমি,,”
আবার শুরু হলো দৌড়। আজ কি খালি দৌড়াদৌড়ি ই করবো নাকি? আমি বললাম,,
–“সরি না দোস্ত! সবকিছু এমন ভাবে হয়ে গেল যে আমি বুঝতেই পারছিলাম না। ক্ষমা করে দে না রে বাবা!
ও রেগে বলল,,
–“সরি মাই ফুট! এখন কেন এসেছিস রাগ ভাঙাতে! যা না যা তোর বরের সাথে প্রেম করে বেড়া যা।”
আমি আমাদের রুমে এলাম। নিলাও আসলো পিছুপিছু। হঠাৎ কিছুর সাথে পা লেগে হুমরি খেয়ে খাটের উপর পড়ে গেলাম। নিলা এসে ধুম ধাম কয়েকটা কিল বসিয়ে দিলো। তারপর গাল ফুলিয়ে বসে পড়লো। আমিও উঠে বালিশ দিয়ে মারতে লাগলাম ওকে। তারপর আর কি শুরু হলো বালিশ ফাইটিং। বেশ কিছুক্ষণ পর দুজনেই থেমে হুহা করে হেসে উঠলাম। ভালোই ছিলো ব্যাপারটা। অনেকদিন পর বালিশ দিয়ে ফাইটিং হলো। নিলা হাসি থামিয়ে বলল,,
–“কলেজ লাইফে আমি যখন বলতাম দোস্ত নির্ভীক ভাইয়া মনে হয় তোকে পছন্দ করে। মনে হয় কেন আমি ২০০% শিওর যে নির্ভীক ভাইয়া তোকে ভালোবাসে। তখন কি বলতিস? বলতিস, না তুই ভূল ভাবছিস। আবার যখন বলতাম তোদের দুইজনের মধ্যে কি ফোরণ চলে? দুই বলতিস কিছুই না। কিন্তু এখন তো দেখছি তোরা সেই ফোরণ দিয়ে আচার ও বানিয়ে ফেলেছিস।”
–“আচার!!🤔
😳 ঐ তুই ভূল ভাবছিস?এমন কিছুই না!
–“থামতো দোস্ত আর মিথ্যা বলিস না।দোস্ত কাজটা কি ঠিক করলি? আমি খালামনি হবো আর তুই সেটা আমাকে একবার জানালি পর্যন্ত না?”
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম ওর দিকে। রাগী লুক নিয়ে বললাম,,
–“ঐ কিসের খালামনি হ্যাঁ কিসের খালামনি? তুই কোন খালামনি টালামনি হচ্ছিস না! ওটা উনি এমনি বলেছিলেন। আর তুই হাদি ঠিক বিশ্বাস করে নিলি। যত্তসব!”
–“তারমানে তুই,,”
–“না নই!”
–“কাহিনী কি বলতো? তোর বিয়ে হলো কি করে?”
আমি ওকে সবকিছু বললাম। সব শুনে নিলা কিছুক্ষণ আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে তারপর হোহো করে হেসে ফেললো। ওর এমন উদ্ভট হাসি দেখে কিছুক্ষণের জন্য ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম আমি। আমি হাসার মতো কি বললাম? ও হাসি থামিয়ে বললো,,
–“দোস্ত এটা তুই মানতে বাধ্য যে নির্ভীক ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে। আর তুই ও। খালি আমি জিজ্ঞেস করলে তোমার ভীমরতি ধরে। কেউ আমাকে বন্ধু ভাবে না। মারুফাও আয়াত ভাইয়ার কথা বলে নি আর তুই ও বললি না।” (দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে)
ওর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম আমি। ড্রামা কুইনের ড্রামাবাজি শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি বললাম,,
–“আর তুমি যে আয়াশের সাথে তলে তলে টেম্পু চালাও সেটা কইছিলা আমাদের?”
ও দাঁত দিয়ে জ্বিভ কেটে বলল,,
–“সেটা বড় কথা নয় বড় কথা হলো নির্ভীক ভাইয়া আমার এই বান্ধবী টাকে চুপিচুপি অনেক ভালোবাসে খালি মুখে প্রকাশ করে না। আর আমার এই বান্ধবী টাও তাই!”
–“বড় কথা হলো দুদিন বাদে আমাদের এক্সাম তাই এখন আমাদের পড়াশোনা করা উচিত।”
বাবরে কি ঝড় টাই না গেল আজ। আচ্ছা সত্যিই কি আমি নির্ভীক কে চুপিচুপি ভালোবাসি। হয়তো! না হয়তো না অবশ্যই ভালোবাসি আফটার অল হি ইজ মাই ওয়ান এন্ড অনলি হাসব্যান্ড!
·
·
·
চলবে…………………………