#চিরেকুটের_শব্দ (পর্ব ৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
অর্থি নিজেও জানেনা তার ভাগ্যটা শেষে কোথায় গিয়ে দাড়াবে? গতকাল থেকে এই পর্যন্ত সময়টায় সে একজন মানুষকেই শুধু দেখেছে তার প্রতি স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকাতে। আর সে হলো তার শশুর ফয়েজ আহমেদ। আর বাকি সবাই তাকায় অবেলার দৃষ্টিতে।
অর্থি এই বাড়িতে আসা টা কারো কাছেই সন্তুষ্ট জনক নয়।
ফয়েজ আহমেদ সব সময় চাইতো তার ছেলের জন্য শান্তশিষ্ট, সুন্দর, গুনবতি, সংসারি একটা মেয়ে। আর সে পেয়েও গেলো।
প্রথম যেদিন অর্ণব সহ সবাই অর্থিকে দেখতে গেলো, তখন অর্ণব দেখলো বেলকনিতে একটা মেয়ে দাড়িয়ে। অসম্ভব সুন্দরি একটা মেয়ে। মুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলো মেয়েটার দিকে। লজ্জায় মুখ লুকিয়ে ভেতরে চলে গেলো মেয়েটা।
এর পর যখন অর্থিকে তাদের সামনে নিয়ে আসা হয় তখন হার্টবিট টা মুহুর্তেইবেড়ে গেলো অর্ণবের। সে তখন এতোকিছু জানতো না।
মাকে ফিসফিসিয়ে বললো,
– আমার এই মেয়েটাকেই লাগবে মা।
ফয়েজ আহমেদ খুশি মনে এ্যাংগেজমেন্ট এর রিং পড়িয়ে দিলো। আর অর্ণবও একটা ঘোরের মতো অর্থির মাঝে ডুবে যেতে শুরু করলো। ঈষিতার সাথে এই কয়দিন কোনো যোগাযোগ করেনি সে। একেই বলে, প্রকৃত সার্থপর।
অর্ণবের কথায় বিয়ের ডেট আরো এগিয়ে আনা হলো। আর তিনদিন পর বিয়ে। আর তখনই অর্ণব নিজের ঘোর থেকে বের হলো। যখন শুনতে পেলো তার হবু স্ত্রী কথা বলতে পারে না।
বিয়ে কেন্সেল করতে চাইলেও তার বাবার কারণে পারেনি। কারণ তিনি তার সম্মান হারাতে চায় না। আর বিয়ের সব ঠিকঠাক হয়েছে অর্নবের কথাতেই।
তাই বাধ্য হয়ে বিয়েটা করতে হলো তাকে। কিন্তু এর মাঝেই এই কয়েকদিনে নতুন প্লেন তৈরি করে ফেলে অর্ণব। এর পর হাসি মুখে বিয়ে করে সেও।
বিকেলে ঈষিতার সাথে দেখা করে অর্ণব। ঈষিতাকে সব কিছু খুলে বলে, যে বাবার জোড়াজোড়িতে বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছে সে। আর অর্থির থেকে অলরেডি ডিবোর্স প্যাপারে সাইন নিয়েও নিয়েছে।
অর্থি যতদিন টিকে থাকতে পারে ততোদিন এই বাড়ির বৌ হয়ে থাকবে সে।
প্রথমে ঈষিতার ঘোর বিরোধিতা ছিলো। অর্ণব কেনো এতোদিন অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে থাকবে? কিন্তু পরে সেও মেনে নিলো ব্যাপারটা।
অর্ণব যখন বললো, খুব তারাতারিই অর্থিকে ডিবোর্স দিয়ে ঈষিতাকে বিয়ে করবে সে।
আর মাঝখানে এই সময়টায় অর্থির সাথে সে এমন কিছু করবে যে, অর্থির সহ্যের বাধ ভেঙে নিজে থেকেই অর্ণবের থেকে সরে চলে যাবে। আর অর্থির ডিবোর্স পেপারে সাইনটা সবাইকে দেখিয়ে বলবে, অর্থি তাকে ডিবোর্স পেপার দিয়ে এই বাড়ি থেকে চলে গেছে। এর পর তাদের ডিবোর্স হওয়ার পর যখন অর্ণবের দ্বিতীয় বিয়ের কথা চলবে তখন ঈষিতাকে বৌ বানিয়ে ঘরে তুলে আনবে সে।
প্লেন টা ভালো লাগলো ঈষিতার। তাই সে না চাইতেও অর্ণবকে সময় দিলো কিছুদিন।
এর পর কেটে গেলো দুই দিন। বাবার বাড়ি থেকে এই দুই দিনে কোনো খোজ খবর নিলোনা কেউ। তবুও মন খারাপ হলো না অর্থির। কারণ তাদের মাথার ভোজা কমছে। খোজ না নিলেও পারে। তারা তো দিব্যি ভালো আছে।
ফজরের নামাজ পড়ে কিচেনে চলে যায় সে। সবার জন্য নাস্তা বানাতে হবে। সারা দিনের রান্না বাড়াও সে করে। খারাপ লাগে না, ভালোই লাগে তার। সময়টা কেটে যায় সুন্দর ভাবেই। তার রান্নার বেশ প্রশংসা করে তার শশুর। বিয়ের আগেও বাড়িতে মায়ের সাথে সব কাজ করতো অর্থি। তার ছোট বোন ছিলো বাবা মায়ের খুব আদরের। তাকে কাজ করতে দিবো না তারা। আর ভাইও পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। ভাইয়ের বিয়ের পর শুরু হয়েছিলো অশান্তি। তার ভাবি দুই চোখেই দেখতে পারতো না তাকে। অর্থিকে সারা দিন বাড়ির সব গাধার খাটুনি খাটিয়ে নিজের ব্যাক্তিগত কাজ গুলোও করাতো সে।
তাই সেই সুবাদে প্রায় সব কাজই অর্থি জানে। রান্না বারা থেকে শুরু করে কাপর কাঁচা, ঘর মোছ সব কাজেই সে অভ্যস্ত।
নিজের মতো করে চুপচাপ নাস্তা তৈরি করছে সে। কারণ সময় মতো না হলে সকাল সকাল এক গাদা কথা শুনতে হবে। মামার বাড়িকে মধুর হাড়ির সাথে তুলনা করলেও শশুর বাড়িকে কেউ মধুর হাড়ির সাথে তুলনা করতে শুনেনি সে। কাজেই এখানে হিসেব করে চলতে হবে খুব।
সেদিন যখন বৌ-ভাত শেষ করে সবাই চলে গেলো, সেদিন সন্ধায় তার শাশুড়ি এসে বললো, আগামি কাল থেকে সকাল সকাল উঠে সবার জন্য নাস্তা তৈরি করতে হবে। এর পর ঘর মুছে রান্নাবারা করতে হবে। বাড়ির সব কাজ নিজের হাতে ধরে করতে হবে। নতুন বৌ সেজে বসে থাকলে চলবে না।
অর্থি কিছু না বলে চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে সম্বতি জানালো।
সে বুঝে গেছে এই বাড়িতে থাকতে হলে তাকে খুব লড়াই করেই থাকতে হবে। কারণ কাজের মেয়েটাকেও বাদ দিয়ে দিলো। এতো বড় বাড়ির সব কাজ এখন অর্থিকেই সামলাতে হবে।
হাতে গরম তেল ছিটকে পরতেই ভাবনা থেকে বেড়িয়ে লাফিয়ে উঠে অর্থি। হাতের অংশ টা গালে নিয়ে ঠান্ডা করার চেষ্টা করে। এরপর পুনরায় নিজের কাজে মন দিলো সে।
,
,
আজ ছুটির দিন তবুও সকাল সকাল বেড়িয়ে গেলো অর্ণব। সকলকে নাস্তা দেওয়া শেষে সারা বাড়ি গোছগাছ করছে সে। এই বাড়ির কেউ তার সাথে তেমন একটা কথা বলে না প্রয়োজন ছারা। মা মাঝে মাঝে আসে কাজের ফর্মেশ দিতে।
অর্ণবের ছোট বোন অর্ণি দুই দিন এসেছিলো তার কাছে। আর আড্ডা দিতে পারতো না দেখে বিরক্ত বোধ করতো সে ও। এখন আর আসে না, কলেজ থেকে আসার পর ফোন নিয়ে পরে থাকে।
অর্থি যখন একা থাকে, বোরিং ফিল করে তখন নিরিবিলি একজায়গায় বসে নিজের ইচ্ছে গুলো ডায়রিতে লিপিবদ্ধ করে রাখে। নানান ইচ্ছে জাগে তারও। ছোট বেলা থেকেই লিখতে লিখতে হাতের লেখা চমৎকার সুন্দর তার।
বিকেলে বেলকনিতে বসে আছে অর্থি। বাইরে হালকা বাতাসে গাছের পাতা গুলো দোল খাচ্ছে। সূর্য টাও সাদা থেকে হলদে হয়ে এখন কমলা রঙে রুপ নিচ্ছে। ঠোঁটে মুচকি হাসি রেখে বাইরে তাকিয়ে আছে সে। মনে জেগে উঠে তার ইচ্ছে গুলো।
“এমন একটা বিকেল চাই প্রিয় মানুষটার কাছে। যেই বিকেলে একে অপরের হাত ধরে নিরব রাস্তায় হেটে বেড়াবো। বাতাসে আমার চুল এলোমেলো করে দিয়ে যাবে। আর তা খুব যত্ন করে কানের পাশে গুজে দিবে সে। একটা রিক্সা নিয়ে সারা বিকেল ঘুরবো তার হাতে হাত রেখে। রাস্তার পাশে দাড়িয়ে ফুচকা নিবো। আর সে তা নিজ হাতে এক টা একটা তুলে পরম ভালোবাসা নিয়ে খাইয়ে দিবে আমায়। এর পর আরেকটু সামনে গিয়ে দুই জন মিলে একটা আইস্ক্রিম ভাগ করে খাবো। শুনেছি এই ছোট্ট ছোট্ট কাজ গুলোতেও ভালোবাসার জন্ম হয়।
সে একটা বেলিফুলের মালা নিয়ে আমার চুলে পড়িয়ে দিবে। এক সাথে নৌকায় করে ঘুরবো আমরা। কুল কুল পানির শব্দ ভেষে আসবে কানে। সেই পানিতে আলতা লাগালো পা দুটু ডুবিয়ে রাখবো আমি। পানি নিয়ে খেলা করবো। বাচ্চামোতে মেতে উঠবো। সে কিছু বলবে না, আমার বাচ্চামো দেখে হাসবো। আবার তার মুখে পানি ছিটিয়ে মারতেই তার হাসি মুখ রেগে ফায়ার হয়ে যাবে। তখন আমিই হেসে দিবো। আসার সময় কাঁচের চুড়ির বায়না করবো। এর পর সে চুড়ি নিয়ে আমার হাতে পড়িয়ে দিবে। তখন প্রায় সন্ধা হয়ে যাবে। তার হাত ধরে কিছুটা পথ এগিয়ে গিয়ে দুই কাপ চা নিবো দুজনে। বন্ধুর মতো আড্ডা হবে আমাদের। এর পর একটা রিক্সা ডেকে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিবো আমরা। রাতের আকাশের নিচে রিক্সায় করে বাড়ি ফিরবো আমরা। হুড তোলা রিক্সায়, সে আমায় এক হাতে জড়িয়ে কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে বলবে ভালোবাসি। বাসায় ফিরবো দুজন। দিনটা থাকবে আমার কাছে খুব আনন্দের একটা দিন। আর এই আনন্দটা আরো দ্বিগুন বেড়ে যাবে যখন সে আমার হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ দিয়ে বলবে, “তোমার না গোলাপ খুব পছন্দের?”। আমি মাথা দুলাবো, আর সে মুচকি হেসে গোলাপ গুচ্ছটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলবে, ” আর আমার পছন্দ হলে তুমি”
~~ দিবেন এমন একটা বিকেল উপহার হিসেবে আমাকে?
এগুলো নিতান্তই অবাধ্য কাল্পনিক স্বপ্ন আমার। যা হয়তো কখনোই পুরণ হবে না। আমি যদি অন্য মেয়েদের মতো স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারতাম, তাহলে হয়তো আমার সাথে এই স্বপ্ন গুলো মানানসই হতো। আবার একটা দির্ঘশ্বাস নিলো সে। একটু পর মাগরিবের আজান দিবে। ছাদ থেকে কাপর গুলো নিয়ে আসতে হবে।
ওদিকে তার প্রিয় স্বামি অন্য একটা মেয়ের বুকে শুয়ে আছে। অন্য কারো কাছে সুখ খুজতে ব্যস্ত সে। অর্ণব একটা পাতলা চাদরের নিচে ঈষিতাকে জড়িয়ে শুয়ে আছে। এদিকে অর্থি তাকে নিয়ে হাজারও স্বপ্ন বুনতে ব্যস্ত।
To be continue…..
~ গল্পটার সম্পর্কে আপনাদের মতামত জানাবেন কষ্ট করে। আপনাদের একটু উৎসাহ, লেখার আগ্রহ বাড়ায়। আরেকটা কথা, আমরা সবাই’ই এমন ভালোবাসা পিপাশু। তাই নিজেও ভালো থাকুন ও প্রিয় মানুষটা কেও ভালো রাখুন। বিশ্বাস টা যত্ন করে রাখুন, দেখবেন অনেক সুন্দর হবে সবকিছু। আমরা সবাই ই এমন একটা মানুষ চাই। যে হবে একান্তই আমাদের ব্যক্তিগত?