#চিত্তবৃত্তি :৪
#জান্নাতুল_নাঈমা
ডাইনিং টেবিলে দু’হাতের কনুই ভর করে বসে ইমন৷ মুসকান খাবার গরম করছে। আর সে বসে ফেসবুকে সময় কাটাচ্ছে। মাঝেমাঝে অবশ্য আড়চোখে তাকিয়ে দেখছে মুসকানকে। খুব ধীরেসুস্থে, টিপটাপ কাজ করে মেয়েটা। সবকিছুতেই নিগূঢ় শান্তভাব। নেই কোনো উত্তাপ। সামনে পিছে যতই তাণ্ডব চলুক মেয়েটা যেই ধীর, সেই স্থির। পৃথিবী জুড়ে ঝড়-ঝাপটা বয়ে যাক এই মেয়েটার মুখে তাকালেই সব কেমন শান্ত আর শান্তির লাগে। এই শান্তরূপে শান্তি পায় ইমন। সব দুঃখ, কষ্ট, না পাওয়ার বেদনা ফিকে হয়ে যায় এই মুখটায়। যেদিন প্রথম সে টের পায়, মুসকানের মাঝেই তার সব সুখ নিহিত। সেদিন থেকেই মনে প্রাণে বিশ্বাস করে, এই আলো ছায়ার শহরে তার শূন্য হৃদয়ে নতুন রূপকথা সাজাতেই মুসকানের আগমন ঘটেছে। ইমনের গভীর ভাবনায় ভাঁটা পড়ল গ্লাসে পানি ভরার শব্দে। কিঞ্চিৎ চমকে মুসকানের দিকে তাকাল সে। মুসকান ইশারায় দেখালো, খাবার বেড়েছে। সামনের প্লেটে সাদা ভাত আর ইলিশ মাছ ভাজা দেখতে পেল ইমন। মৃদু কেশে বলল,
– তুমিও বসে পড়ো একসঙ্গে খাব।
ম্লান মুখে মৃদু হাসলো মুসকান। ক্ষীণ স্বরে বলল,
– আমার খিদে পায়নি। আপনি খেয়ে নিন।
মুসকানের বিষণ্ন মুখে প্রগাঢ় চাহনি ছুঁড়ে হাতে থাকা মোবাইলটা প্যান্টের পকেটে রাখল ইমন। নিজের প্লেটটা কিঞ্চিৎ টেনে কাছাকাছি নিয়ে নিল। ঝরঝরে সাদা ভাতে আঙুল নাড়াচাড়া করতে করতে শীতল কণ্ঠে বলল,
– বাড়ির প্রত্যেকের ঘর বাইরে থেকে আটকানো। যে পর্যন্ত তুমি আমার সঙ্গে বসে না খাচ্ছ, যে পর্যন্ত তোমার খাওয়া শেষ না হচ্ছে সে পর্যন্ত দরজা গুলো খোলা হবে না।
বিস্ময়ে কেঁপে ওঠল মুসকান। তার সবকিছুতে এই মানুষটার খুব নজর। দাদুভাই আর এই মানুষটার অগাধ স্নেহেই টিকে আছে সে। কিন্তু আর কতদিন এদের ছায়ায় বাঁচবে? একদিন না একদিন তো এদের ছাড়া বাঁচতে হবে। নিজেরটা নিজেকেই বুঝে নিতে হবে। মুহুর্তেই দুচোখ অশ্রুতে ভরে ওঠল। ইমন খেয়াল করে দৃঢ় স্বরে বলল,
– নো, নো। নিজেকে আরো শক্ত করতে হবে মুসকান। আরো শক্ত হতে হবে তোমাকে। এত অল্পতে ভেঙে পড়লে চলবে না। এত অল্পতে আবেগিও হওয়া যাবে না। চুপচাপ বসো আর খেয়ে নাও।
বাঁধ ভেঙে আসতে চাওয়া কান্নাটা গিলে ফেলল মুসকান। কিন্তু সহজভাবে চেয়ার টেনে বসতে পারলো না। ইমন তাকে সাহস জুগিয়ে বলল,
– কী হলো বসছ না কেন? কী নিয়ে দ্বিধা করছ? এই যে বসতে বলছি, খেয়ে নিতে বলছি এটা তোমাকে স্নেহ বা দয়া করে নয়। তোমার অধিকারটা তোমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি।
অবাক চোখে তাকাল মুসকান। সেই চাহনিতে নিজেকে সামলে নিল ইমন। বলল,
– এ বাড়িতে তুমি কারো দয়ায় বেঁচে নেই। এই যে খাচ্ছ, থাকছ এটা তুমি ডিজার্ভ করো। এই দুনিয়ায় বিনা পয়সায় কিছুই পাওয়া যায় না। এই বাড়ির লোকেরা তোমার থেকে অনেক সুবিধা নিচ্ছে, উপকৃত হচ্ছে এটা ভুলে যেও না। বারবার কেন এটা মনে করে দিতে হয়? বড়ো হয়েছ এখন নিজেরটা বুঝতে শেখো।
নিজেকে শক্ত করে নিয়ে বসল মুসকান। খাবার বেড়ে খেতে শুরু করলে ইমনও নিশ্চিন্ত হয়ে খেতে লাগল। পাশাপাশি টুকটাক কথাও বলল। মুসকান হু, হা আর মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিল। খাওয়া শেষে চলে যাবার আগে ইমন বলে গেল,
– শোনো।
মুসকান মাথা তুলে নরম চোখে তাকালে সে মৃদু হেসে বলল,
– তোমার মর্জির মালিক তুমিই হও অন্য কাউকে হতে দিও না।
কথাটা বলেই মুসকানের মুখ এবং শরীরে দৃষ্টিপাত করল। মুসকান হকচকিয়ে গেল সেই দৃষ্টি দেখে। ইমন মৃদু স্বরে পুনরায় বলল,
– অনিচ্ছায় করা সাজগোজে মেয়েদের সৌন্দর্য লোপ পায়। খেয়েদেয়ে সাজসজ্জা ধুয়েমুছে তারপর ঘুমিও।
সহসা সর্বাঙ্গে শীতল শিহরণ বয়ে গেল মুসকানের। একজন মানুষ কীভাবে এত ভালো কথা, জ্ঞানী কথা বলে? মুগ্ধ করা ব্যক্তিত্বের এই মানুষটাকে যত দেখে ততই অবাক হয় সে। উপরওয়ালা যেন এই মানুষটাকে বিশেষ কিছু দান করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছে।
.
.
হাইস্কুল মাস্টার হিসেবে জয়েন করল ইমন। নিয়ম করে নিত্যদিন সকাল ন’টায় বেরোয়। ফেরে বিকেল পাঁচটায়। মুসকানকে নিয়ে আপাতত কোনো ঝামেলা চলছে না। বাড়ির বেশির ভাগ লোক যে মুসকানকে বাঁকা চোখে দেখতে শুরু করেছে টের পেল ইমন। কিন্তু মুসকান বুঝে ওঠতে পারে না হঠাৎ সে বাড়ির প্রত্যেকের চক্ষুশূল কেন হলো? অভ্র ভাইয়া, আর ইয়াশফা আপু ছাড়া কেউ তাকে দেখতে পারে না। মেজো কাকি ছোটোবেলা থেকেই দূর দূর ছাঁই, ছাঁই করত। যা এখন প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। পড়াশোনা জানা যুবতী মেয়ে মুসকান৷ সেও বুঝে এ বাড়িতে সে পরগাছা ছাড়া কিছুই নয়। তবুও ছোটোবেলা থেকে এ বাড়িতে এ মানুষ গুলোর আশ্রয়ে বেড়ে ওঠেছে বলে মায়াটা তীব্র হয়ে গেছে। দিনশেষে যে এই মায়া ত্যাগ করতে হবে ঢের বুঝতে পারে। তাই মনে মনে ভাবল যেভাবেই হোক একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে দাদুভাইয়ের সঙ্গে পরামর্শ করবে। শুনেছে অনাথ আশ্রম গুলোতে আঠারো বছরের পর কাউকে থাকতে দেয় না। সে তো অনাথ। তাই চৌধুরী বাড়ির আশ্রয়ে এতকাল আছে। তার বয়স একুশ। অতএব এবার নিজের রাস্তা নিজে মাপার সময় হয়ে গেছে। নয়তো অন্যেরা তাকে আগুনে ঝাঁপ দিতে বললে ঝাঁপ না দিয়ে উপায় নেই। যে বাড়ির আশ্রয়ে আছে তাদের মর্জিতে তো চলতেই হবে। ছোটোসাহেব যতই বলুক নিজের মর্জিতে চলতে তা কি আর সম্ভব হয়ে দাঁড়াবে? সে যে কূলকিনারা হীন এক নারী!
ভোরবেলা ওঠে রান্নাঘরে ঢুকল মুসকান। দেখল, ছোটো কাকি ছুটোছুটি করে নাস্তা বানাচ্ছে। তার এই ছুটোছুটির কারণ বুঝল সে। তাই মৃদু হেসে এগিয়ে এলো। ছোটো কাকি পেশায় ডাক্তার। খুব ডিসিপ্লিন মেনে চলে। সচরাচর রান্নাঘরে দেখা যায় না তাকে। সকাল, সকাল ছুটতে হয় হাসপাতালে। ফিরতে ফিরতে রাত দশটা এগারোটা বেজে যায়। রোজ সর্বপ্রথম তাকেই নাস্তা বানিয়ে দেয় মুসকান৷ আজ শুক্রবার। ছোটো কাকি শুক্রবার আরো বেশি ব্যস্ত থাকে। এইদিন ক্লিনিকে বসে সে। তাই বাড়ির সবাইকে এইদিন পাওয়া গেলেও তাকে পাওয়া কঠিন। ডাঃ তাহমিনা আক্তার ওরফে ছোটো কাকি আজ রান্নাঘরে কারণ তার বড়ো ছেলে ইভান চৌধুরী দীর্ঘ সাত বছর পর আমেরিকা থেকে দেশে আসছে। তাকে রিসিভ করতে গেছে মেজো কাকা, ছোটো কাকা, ইমরান আর আনিস। বাকিরা বাড়িতেই তাকে অভ্যর্থনা জানাবে বলে তৈরি হচ্ছে। এই যেমন, ছোটো কাকি আদরের বড়ো ছেলে আসছে বলে খুশি আর উত্তেজনায় নিজেই সকালের নাস্তা তৈরি করছে! মুসকান বলল,
– ছোটো কাকি আমি কিছু করব?
তাহমিনা চটপটে গলায় বলল,
– তুমি ভাত বসিয়ে মুরগিটা রেঁধে ফেলো। মেজো ভাই আর ইভানের বাবা তো ভাত ছাড়া কিছু খাবে না। আর শোনো গত সপ্তাহে তুমি যে লুচি, মাংস করলে কাজের ফাঁকে ওটা শিখিয়ে দিও তো। দুপুরে আমি ওটা করব ইভান সহ সবার জন্য।
মুসকান মাথা কাত করে নিজের কাজে মন দিল। ছোটো কাকার কল এলো তখনি। ছোটো কাকি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তারা চলে এসে জানালো। ছোটো কাকি উত্তেজনায় কেঁদে ফেলল। প্রথম সন্তানদের প্রতি সবারই আলাদা অনুভূতি কাজ করে। সে যদি দূরে থাকে তাহলে তো কথাই নেই। ছোটো কাকির মতোন শক্তপোক্ত ডাক্তার মানুষও ছেলে আসার আনন্দে কাঁদতে পারে? বিষয়টা একদিনে বিস্ময়কর অপরদিকে মধুরও বটে!
বাড়ির সকলে ইভানকে স্বাগত জানালো। ক্লান্ত শরীরটা সোফায় এলিয়ে দিল ইভান। ছোটো কাকি ছেলের পাশে বসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মুসকানকে ইশারা করল, ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানীয় আনতে। মুসকান ত্বরিতগতিতে গিয়ে তিন রকমের ঠাণ্ডা পানীয় নিয়ে এলো। ইভান তাকাল মুসকানের দিকে। আপাদমস্তক এমন করে দেখল যে ভিনগ্রহের কোনো প্রাণীকে দেখছে। মুসকান ইতস্ততভাবে টি টেবিলের ওপর ট্রে রেখে সরে যেতে উদ্যত হলো। ইভান ভ্রু কুঁচকে ফেলল। ছোটো কাকি মৃদু হেসে বলল,
– চিনতে পারছিস না ও মুসকান।
ইভান দৃষ্টি গাঢ় করল। মুসকানের পায়ের নখ থেকে মাথায় ঘোমটা তোলা অফ হোয়াইট কালারের ওড়নাটা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেখে নিল। মুসকান ফিরে গেল ডাইনিং রুমে। সবার জন্য ব্রেকফাস্ট গোছাতে। এদিকে তার লম্বাটে দেহের আবেদনীয় শরীর, সদ্য প্রস্ফুটিত গোলাপের ন্যায় মুখশ্রী ইভানের ভেতরের সুপ্ত অভিলাষ জাগিয়ে তুলল। মনে পড়ে গেল সেই পুরোনো দিনের কথা। মনে পড়ে গেল চার মাসের ছোটো ভাই ইমনের হাতে কষিয়ে থাপ্পড় খাওয়ার কথা! বুকের ভেতরের সুপ্ত জ্বলুনিটাও তীব্র থেকে তীব্র হতে শুরু করল। আকস্মিক চোখ বুজে গরম নিঃশ্বাস ফেলল সে।
ভাই, বোনরা সবাই ইভানের আনা জিনিসপত্র নিয়ে ব্যস্ত। ইভান বাড়ির প্রত্যেকের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে এসেছে। সবাইকে সবটা বুঝিয়ে দিচ্ছে। ইয়াশফা তার জিনিস নিয়ে চলে গেল উপরে৷ ক্লাস নাইন পড়ুয়া ইমা মেকআপ বক্সগুলো পেয়ে দারুণ খুশি৷ ভাইয়ের গালে টোপ করে চুমু খেয়ে পুরো বাড়ি হৈচৈ করতে লাগল সে। মুসকান তার হৈচৈ শুনে বেরিয়ে এলো। ইভান তখন তার মা’কে একটা ব্যাগ দিয়ে বলছিল,
– সবার জন্য সব দিয়ে দিলাম এই ব্যাগটা ইমনকে দেবে। ওকে মিটমাট তাহলে।
তাহমিনা মুসকানকে আসতে দেখে ইভানকে চাপাস্বরে জিজ্ঞেস করল,
– মুসকানের জন্য কিছু আনিসনি তো। বিষয়টা কেমন দেখাচ্ছে।
– ওহ হো একচুয়েলি বাড়ির সদস্যদের জন্য নিয়ে এসেছি। সার্ভেন্টদের জন্য এখান থেকেই কিছু কিনে দেয়া যাবে আম্মু।
তাহমিনা চুপসে গেলেন। মুসকান জোর পূর্বক মুখে হাসি টেনে সরে পড়ল। সে ইভানের থেকে কোনো গিফট আশা করে না। তবুও এভাবে বলাতে কিঞ্চিৎ আহত হলো। সহসা মনে পড়ে গেল সাত বছর আগের একটি তিক্ত ঘটনা, ক্লাস নাইনে ওঠেছে সবে। রাত জেগে পড়ার স্বভাব তার। সেদিনও রাত জেগে পড়ছিল। হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ে। খুলে দেখে ইভান দাঁড়িয়ে। সে জিজ্ঞেস করে,
– ইভান ভাই কোনো দরকার?
ইভান চট করে রুমে ঢুকে পড়ে। বিছানার দিকে এগুতে এগুতে বলে,
– কী করছিস পড়ছিস?
মুসকান মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বললে সে বিছানায় বসে বলে,
– বই নিয়ে আয় তোকে কিছুক্ষণ পড়াব। আই মিন ক্লাস নিব তুই তো সাইন্স নিয়েছিস তাই না?
বলেই অশ্লীল হাসে সে। পুনরায় বলে,
– চল তবে প্র্যাক্টিকেল ক্লাস নিই। বই আনতে হবে না শুয়ে পড় শুধু।
কথাটা বলেই এক লাফে দরজার কাছে গিয়ে দরজা আটকে দেয়। ত্বরিত চলে আসে মুসকানের কাছে। মুসকান ভীত চোখে দু পা পিছিয়ে যায়। কান্না করে দেবে এমন মুখ করে তাকিয়ে থাকে। ইভান এগিয়ে এসে তার ওড়নায় স্পর্শ করে আদুরে স্বরে বলে,
– কী হয়েছে মামুনি এমন মুখ করে আছো কেন?
কথাটা বলতে বলতেই এক ঝটকায় ওড়না সরিয়ে নেয়। তীব্র লজ্জা ভয়ে ডুকরে ওঠে পিছু ঘুরে দাঁড়ায় মুসকান। ইভান পিছন থেকে তার কোমর জড়িয়ে ধরে গ্রীবাদেশে ঠোঁট স্পর্শ করতেই সে গলা ফাটিয়ে দেয় এক চিৎকার। সেদিন বাড়িতে মেজো কাকি, ইয়াশফা আর ইমন উপস্থিত ছিল। তারা প্রত্যেকেই সেই চিৎকার শুনে নিচে ছুটে আসে। ইমন শক্ত চাপড় দিতেই মুসকান ছুটে এসে দরজা খুলে। পরিস্থিতি বিগড়ে গেছে টের পেয়ে ইভান সব দোষ মুসকানকে দিতে চেষ্টা করে৷ মুসকান তৎক্ষণাৎ ভয়ে জর্জরিত হয়ে ইমনের বাহু চেপে ধরে। বলে,
– আমি কিছু করিনি বিশ্বাস করুন। উনি আমাকে খুব খারাপ ভাবে ছুঁয়েছে। বাজে বাজে কথা বলেছে!
সেদিনের সেই ঘটনা গুলো ওদের মধ্যেই চাপা থাকে। ইমনের হাতে কষিয়ে থাপ্পড় খেয়ে একরাশ ক্ষোভ নিয়ে নিজের ঘরে চলে যায় ইভান। মেজো কাকি ঘরের ছেলের দোষ দিতে চায়না বলে মুসকানকেই দোষারোপ করে। তিক্ত সেই স্মৃতি বুকের ভেতর হানা দিতেই মুসকান দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মনে মনে বলল,
– অমন মানুষের থেকে কিছু না পাওয়া, বিশাল দূরত্ব থাকাটাই ভালো।
.
.
বৃহস্পতিবার শুক্রবার ইমন বাড়িতে থাকে না। আজ রাত হলেও সে আসবে। জানে মুসকান। তাই সকলে খেয়ে যাবার পর সে খেয়ে নিয়ে ইমনের খাবার আলাদা করে গুছিয়ে রাখল। এমন সময় সহসা ইভান এলো ডাইনিং রুমে। মুসকানকে বলল,
– তুই কফি বানাতে জানিস?
মুসকান চমকে তাকাল। ইভানের দুর্বোধ্য মুখটা দেখে মাথা নিচু করে কাজে মন দিয়ে উত্তর দিল,
– হ্যাঁ।
– মাথাটা ধরেছে এক কাপ কফি করে উপরে আয়।
বুকটা ধক করে ওঠল মুসকানের। রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। মনটা কু ডাকল তার। কিন্তু ইভানকে মুখের ওপর না করতে পারলো না। ইভান আদেশ করেই চলে গেছে। এখন এই আদেশ অমান্য করলেও ঝামেলা হবে। দোটানায় ভুগতে ভুগতে শেষ পর্যন্ত কফি বানিয়ে সাহস করে উপরে এলো সে। ইভানের রুমের দরজা ভিড়ানো ছিল। হালকা ধাক্কা দিলেই খুলে গেল। দেখল, বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে ইভান৷ তাকে দেখেই অশিষ্ট হাসিটা হাসলো। বলল,
– আয়, আয় তোর অপেক্ষাতেই আছি।
মুসকান দুরুদুরু বুকে এগিয়ে বিছানার পাশের টেবিলে কফির মগটা রেখে দ্রুত চলে যেতে উদ্যত হলো। অমনি খপ করে ইভান তার হাতটা ধরে ফেলল। সামনের পাটির দাঁতগুলো হাসল বিশ্রী ভঙ্গিতে। আচমকা বাম হাতটা উঁচিয়ে ধরে বলল,
– তোর জন্য এটা এনেছি আমি পছন্দ হয়েছে?
ধরে রাখা হাত মোচড়াতে মোচড়াতে ইভানের বাম হাতে থাকা বিকিনির দিকে তাকাল মুসকান৷ মুহুর্তেই তার মুখটা শক্ত হয়ে গেল। ক্রোধ আর ঘৃণায় কাঁপতে লাগল হাত, পা। ইভান বলল,
– এভাবে দিচ্ছি বলে রাগ করছিস? আচ্ছা ব্যাগে ভরে দিচ্ছি। পরার পর কেমন দেখায় আমাকে দেখাতে হবে কিন্তু।
তীব্র ক্রোধে রক্তিম চোখে তাকাল মুসকান। ইভান সেই চাহনি দেখে বলল,
– ও বাবা এত রাগছিস কেন? ওহ শীট! বুঝেছি। এটা সাইজে ছোটো হয়ে গেছে তোর সাইজ আরো বড়ো মনে হচ্ছে। কী ব্যাপার মুসকান, এই ফিগারের রহস্য কী বলতো?
আচমকা বা হাতে কষিয়ে এক থাপ্পড় বসালো মুসকান। এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে চলে গেল রুম থেকে। ইভানের মাথায় রক্ত ওঠে গেল। সাত বছর আগের সেই থাপ্পড় আর আজকের থাপ্পড় দু’টো থাপ্পড় মিলেমিশে তার ভেতরকার আগুন ফুঁসে ওঠল চারগুণ। হাতে থাকা বিকিনিটা ছুঁড়ে ফেলল। ঘাড় বাঁকিয়ে জিদি স্বরে বলল,
– তোকে এই বিকিনি পরিয়ে গোটা একরাত ধ/’র্ষ/ণ করে আমার বুকের জ্বালা মিটাব মুসকান। এটা আমার নিজের কাছে নিজের প্রমিজ!!!