#চিত্তবৃত্তি
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১৯
গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। দুপুরের খাবার ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয় সেরেছে ওরা৷ জীবনে প্রথমবার মুসকানকে নিয়ে দীর্ঘ যাত্রায় বেরিয়েছে ইমন। গাড়িতে চারজন ব্যক্তি। অথচ অপ্রয়োজনে কারো মুখ থেকে একটি শব্দও বেরুচ্ছে না। দীর্ঘ সময় প্রেয়সীকে পাশে পেয়ে। মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ তার মুখ দেখে ইমনের বুকের ভেতর পাহাড়সম ক্রোধটা যেন ধসে পড়তে চাইল। অভিমান গুলো পালাতে চাইল চুপিচুপি। কিন্তু সে জোরপূর্বক ধরে রেখেছে তাদের৷ শাসিয়েছে, প্রেয়সীকে জব্দ না করা পর্যন্ত তাদের ছুটি নেই। মুসকান মুখচোরা স্বভাবের। নিজের ভালো লাগা, মন্দ লাগার ব্যাপারে কখনো কাউকে তেমন কিছু বলে না। নিভৃতে তীব্র কষ্ট বুকে চেপে দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারে। প্রচণ্ড খিদে পেলেও খাবার চেয়ে খাওয়া মেয়ে সে নয়। ভালোবাসার মানুষদের দেয়া যন্ত্রণা গুলোও অবলীলায় সহ্য করে নিতে পারে। এ পৃথিবীতে মুসকানকে সবচেয়ে বেশি যে মানুষটা বুঝতে পারে। সে হলো ইমন। অনেক ছোটো থেকেই ইমন মুসকানকে বুঝতে চেষ্টা করেছে। ওর জন্য বুকের ভেতর জমিয়েছে শতসহস্র সম্মান আর ভালোবাসা। সে অনেক ধরনের মেয়ে দেখেছে। জেনেছে তাদের গতিবিধি। কিন্তু শুদ্ধ মেয়েদের মধ্যে অনুভব করেছে কেবল মুসকানকে। এই শুদ্ধতা শুধু চারিত্রিক নয়। এই শুদ্ধতা মনেরও। যা মুগ্ধতা এনে দিয়েছে তার মাঝে। যেই মুগ্ধতা পুরোপুরি আঁটকে গেছে তার হৃৎপিণ্ডে। যা শ্বাস রোধ হওয়ার পূর্বে ত্যাগ করা সম্ভব নয়। যাত্রা পথে আপাদমস্তক বুঝে নেয়া মুসকানের যখন পানি পিপাসা লাগল। অথচ মুখ ফুটে পাশের গাম্ভীর্য ধরে বসে থাকা পুরুষটিকে বলল না। তখন সেই পুরুষটি বা হাতে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে গমগমে কণ্ঠে বলে,
‘ তুমি বোবা নও, যে তৃষ্ণা পেলে মুখ ফুটে বলতে পারবে না। ‘
সেই মুহুর্তে মুসকানের দু’টি চোখ চিকচিক করছিল। চিনচিনে ব্যথা হচ্ছিল হৃৎপিণ্ডে। অনুভব করছিল, এই মানুষটাকে কষ্ট দেয়া অনুচিত। একদম অনুচিত। নিরুপায় সে। অনুচিতটাই করতে বাধ্য হচ্ছে।
শহর ছেড়ে বেশ ভেতরে। পূবালী গ্রামে পৌঁছাল ইমন। পাকা রাস্তা ছেড়ে আঁকাবাঁকা কাঁচা রাস্তায় গাড়ি চলছে। এই দেশে এখনো এমন রাস্তা আছে? বিস্মিত হলো ইমন। এই রাস্তা দেখে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নয়ন ঘটেছে। আসলে যত উন্নয়ন সব শহরমুখীই। এখনো বহু গ্রাম রয়েছে যেখানে উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও হয়নি। দীর্ঘশ্বাস ফেলল ইমন। মহিউদ্দিনের দেখানো রাস্তা ধরেই এগিয়ে চলল সে৷ একসময় চলন্ত গাড়ি থেমে গেল। মেজো কাকার কথা মতোই থামানো হয়েছে। গাড়ির হর্ণ শুনে মধ্যবয়সী এক লোক কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে এলো। ততক্ষণে মহিউদ্দিন আর দাদুভাই নেমে দাঁড়িয়েছে। মধ্যবয়সী লোকটার নাম রফিক মিঞা। মহিউদ্দিন, আর দাদুভাইকে দেখে বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে। আজ থেকে ঠিক একুশ বছর আগে শেষ দেখেছিল এই মানুষ দু’টোকে। স্পষ্টই মনে আছে তার। এতগুলো বছর পর আজ আবার তাদের মুখোমুখি। চোয়াল দৃঢ় হয়ে ওঠল রফিকের। ঘাড় ফিরিয়ে একবার তাকাল পাশাপাশি দুইটা কবরের দিকে। অনেক পুরোনো কবর দু’টো ছয় বছর আগে ইট দিয়ে বেষ্টন করেছে সে৷ দৃষ্টি ফিরিয়ে ঢোক গিলল রফিক। মহিউদ্দিন সালাম দিল। রফিক সালাম ফিরিয়ে মহিউদ্দিনকে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস না করে দাদুভাইকে জিজ্ঞেস করল,
‘ ভালো আছেন চাচা? ‘
তার এহেন আচরণে প্রকাশ পেল সে মহিউদ্দিনকে কতখানি ঘৃণা করে। তার সব শ্রদ্ধা কেবল দাদুভাইয়ের জন্যই। দাদুভাই মৃদু হেসে কুশলাদি সেরে ইমনকে ডাকল। সঙ্গে সঙ্গে ইমন বেরিয়ে এসে সালাম দিল রফিক মিঞাকে। সে সালাম ফিরিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। গভীর চিন্তায় মগ্ন হতে নিতেই ওপাশের দরজা খুলে বেরিয়ে এক তরুণী। যাকে দেখে বুক ধক করে ওঠল তার। দৃষ্টি আচমকাই ছলছল করে ওঠল। দাদুভাই ঈষৎ হেসে বলল,
‘ নয়নতারার মেয়ে মুসকান। ‘
গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই অদ্ভুত এক অনুভূতি আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল মুসকানকে। পা দু’টো মৃদু কেঁপে ওঠল। বুকের ভেতর আওয়াজ হলো ঢিপঢিপ। চারপাশে অদ্ভুত ভাবে নজর বুলাল সে। কী শান্ত, স্নিগ্ধ অনুভূতি হলো। দাদুভাই ডাকলেন,
‘ গিন্নি এইদিকে আসো। ‘
দৃষ্টি ফিরিয়ে মৃদু হেঁটে এগিয়ে এলো মুসকান। রফিক মিঞাকে সালাম দিল সেও। রফিক মিঞার পায়ের তলার মাটি কেঁপে ওঠল৷ ঠোঁট কামড়ে কান্না নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে গলা উঁচু করে চিৎকার দিল সে,
‘ আম্মা, ও আম্মা আপনি কোথায় আম্মা? ‘
এক মুহুর্ত স্থির থাকতে পারল না রফিক। ছুটে বাড়িতে ঢুকে গেল। সবাই সবটা বুঝতে পারলেও বুঝতে পারল না এক মুসকান৷ সে অবাক হয়ে গেল রফিকের আচরণে। দাদুভাইয়ের দিকে তাকাল ভ্রু কুঁচকে। দাদুভাই লাঠি ভর করে তার দিকে এগুলো। পরপর দুইটা টিনশেড বিল্ডিং ঘর। মাঝে গ্রিলের তৈরি গেট৷ সেই গেট পেরিয়ে মুহুর্তেই লাঠি ভর করে এক বৃদ্ধা বেরিয়ে এলো। পেছনে এলো রফিক মিঞা তার বউ এবং দুই ছেলে, মেয়ে। দাদুভাই বললেন,
‘এই বাড়িতেই তোমার জন্ম। যে বৃদ্ধা এগিয়ে আসছেন উনি তোমার নানু। তার পেছনের ভদ্রলোক তোমার মামা। এটা তোমার মায়ের বাড়ি!’
আপাদমস্তক থরথর করে কেঁপে ওঠল মুসকানের। লক্ষ করে ত্বরিত পাশে এসে দাঁড়াল ইমন। একদম স্বাভাবিক গলায় বলল,
‘ স্টে স্ট্রং মুসকান। শুধু আমাকে মোকাবিলা করাতে কোনো সার্থকতা নেই। জীবনের সকল পরিস্থিতিকে। সে যত কঠিনই হোক না কেন। বুদ্ধিমত্তার সাথে মোকাবিলা করে নিজেকে সামলে নেয়াটাই সার্থকতা। স্টে স্ট্রং, টেক ইট অল, প্লিজ ডোন্ট ব্রেক ডাউন। ‘
এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে ঢাল সরূপ পাশে দাঁড়িয়ে রইল সে। তার কথা, উপস্থিতি যেন মুসকানকে বুঝিয়ে দিল,
‘ আমি আছি, নিজেকে সামলাতে না পারলে ভয় নেই৷ আমি সামলে নেব তোমায়। ‘
পুরো পৃথিবীটা ঘুরছে। বুকের ভেতরটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। দু পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে সে যেন হারিয়ে যাচ্ছে অতল গহ্বরে। আচ্ছা মাথার ওপর কি আকাশ আছে? চারপাশে ঝাপসা আঁধার। ধীরে ধীরে গাঢ় হতে শুরু করেছে। সম্মুখে পাঁচ জোড়া চোখ। বিস্ময় নিয়ে দেখছে মুসকানকে। কেউ একজন গিয়ে কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই বাইরে থাকা বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে দিয়েছে। সেই আলোতে দু-চোখ ভরে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা দেখছে একুশ বছর বয়সী তরুণিমাকে। দাদুভাই বললেন,
‘ মুসকান তোমার নানু। ‘
দাদুভাই কথাটা বলতেই বৃদ্ধা ডুকরে ওঠল। হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করল মুসকানের মুখ। অজান্তেই মুসকানের গাল বেয়েও অশ্রুপাত হলো৷ কিঞ্চিৎ নিচু হলো সে৷ বৃদ্ধাকে সাহায্য করল তাকে স্পর্শ করার জন্য। বৃদ্ধা আলতো হাতে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখল ওকে। অমন আদুরে দৃষ্টি, স্নেহময় স্পর্শে বিগলিত হলো মুসকান। দু’চোখের অশ্রু বাঁধহারা হয়ে ঝড়তে শুরু করল। মুসকানের কপালে, গালে চুমু খেল বৃদ্ধা। বারবার করে বলল,
‘ আমার নয়নের মাইয়্যা! আমার নয়নের মাইয়্যা আইছে। ও রফিক, ও রফিকের বউ দেহো আমার নয়নেই মাইয়্যা। ‘
রফিকের চোখ দু’টোও টলমল করছে। নিঃশব্দ অশ্রুপাতে হেঁচকি ওঠল মুসকানের। নানু শান্ত হলো তখন। দাদুভাই, মহিউদ্দিনের পানে তাকিয়ে মলিন কণ্ঠে বলল,
‘ আহেন, বাড়ির ভিত্তরে আহেন। ও রফিক, ও বউ ভিত্তরে নিয়া বইতে দেও উনাগো। ‘
***
সদ্য মধ্যবিত্ত পরিবার। রফিক বর্তমানে প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ওঠে এসেছে রফিক মিঞা। বিধবা মা, বউ বাচ্চা নিয়ে তার ছোট্ট একটি সংসার। সেই সংসার দেখে দাদুভাই বহু বছর আগে চলে গেলেন। বড়ো বড়ো বিল্ডিং ঘর তখন ছিল না। টিনের একটি ঘর ছিল৷ ঐ ঘরের মেঝেতেই বোধহয় জন্ম মুসকানের। একুশ বছরের ব্যবধানে বেশ পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন গুলো দু’চোখ ভরে দেখলেন সে। সোফার এক কোণে থম মেরে বসে আছে মুসকান৷ তার একটি হাত চেপে পাশে বসেছে নানু। খুব শক্ত করে হাতটা ধরে আছে সে৷ যেন ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে মুসকান। দাদুভাই, মহিউদ্দিন সম্মুখে বসে৷ ইমন বাইরে। উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। ঘরের ভেতরে কী চলছে বা চলবে সমস্তই অবগত সে৷
মামি অতিথিদের জন্য রান্নাবান্না করছে। মামা গেছেন বাজারে। টুকিটাকি জিনিস কিনতে। মামাত ভাই, বোন পাশের ঘর থেকে চুপিচুপি দেখছে মুসকানকে। আর মিলাচ্ছে তাদের বড়ো ফুপুর সাথে। মা, মেয়ের মাঝে কত্ত মিল! ফুপুর মতোন চোখ, নাক, লম্বা চুল। সব মিলিয়ে মিলিয়ে ফিসফিস করছে ভাইবোন। ওদের মধ্যে ছেলেটা ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার। আর মেয়েটা ক্লাস নাইন। অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে। মনের কোণে তাই অগাধ কৌতূহল।
মহিউদ্দিন মাথা নিচু করে বসে আছে। মুসকান থমকানো দৃষ্টিতে একবার দাদুভাই, আরেকবার নানুর পানে তাকাচ্ছে। তার বুকের ভেতর অশান্ত ঢেউ। যে ঢেউ শান্ত করতে নানু বলতে শুরু করলেন বহু বছর আগের বিষাদমাখা এক গল্প।
স্বামীর মৃত্যুর পর তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে চরম দরিদ্রতায় ভোগে নানু। বড়ো ছেলে প্রচণ্ড ব্রিলিয়ান্ট। অল্প কিছু জমি ছিল। তাই বিক্রি করে ঢাকা শহরে লেখাপড়া করাচ্ছে তাকে। কিন্তু যুবতী মেয়ে দু’টো নিয়ে হয়েছে মুশকিল। বড়োটার গায়ের রঙ চাপা। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। গায়ের রঙ চাপা। তাই বিয়েশাদি নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। ছোটো মেয়ে মোটামুটি সুন্দরী বলা চলে। তার কয়েকটা বিয়ে আসছে। কিন্তু আর্থিক টানাপোড়েনে কথা বেশিদূর এগুচ্ছে না৷ পারিবারিক অবস্থা, সমাজের পরিস্থিতি। উভয় সম্পর্কে বাস্তব ধারণা পেয়ে বড়ো মেয়ে নয়নতারা সিদ্ধান্ত নেয়, সে স্বাবলম্বী হবে। এরপর নিজ দায়িত্বে বিয়ে দেবে ছোটো বোনের। এসএসসি পাশ একটা মেয়ে। এক পড়শি ফুপুর সহায়তায় ঢাকা শহরে এলো। মোটামুটি ভালো একটি গার্মেন্টসে চাকরিও হলো। বেতন সাড়ে সাত হাজার টাকা। সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত খাটতে হয় সেখানে। কয়েকমাস চাকরির পর নিজের ওপর আস্থা এলো তার। ঢাকা শহরে তখন তার মতো অগণিত নারীরা কাজ করছে৷ কেউ বিবাহিত, কেউ অবিবাহিত। তাদের হরেক রকমের দুঃখ, কষ্ট আর সংগ্রামের গল্প শুনে তার সকল কষ্ট বিলীন হয়ে গেল। যতটা মানসিক শক্তি নিয়ে সে ঢাকা শহরে পা রেখেছিল। তার চেয়ে দ্বিগুণ মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পেল৷ তৈরি হলো কিছু বান্ধবীও। তাদের মাধ্যমেই জানতে পারে তারা এই চাকরির পাশাপাশি আরো কাজ করে। যার মাধ্যমে প্রতি মাসে দশ, বারো হাজার টাকা উপার্জন হয়। আগের থেকে স্বচ্ছলও হয়ে ওঠেছে। সেই আরো কাজ গুলো কী কী গল্পে গল্পে শুনে নেয় নয়নতারা। এরপর সেও ইচ্ছা পোষণ করে সকাল, বিকাল লোকের বাড়ি রান্নার কাজও করবে। বান্ধবীর মাধ্যমে খোঁজ পেয়ে এক বাসায় কাজ পায় সে। সকাল, বিকাল ভাত, তরকারি রান্না করতে হবে। দু’জন সাহেব একজন ভালো রাঁধুনি খুঁজছেন। নয়নতারা তাদের সাথে দেখা করে৷ চব্বিশ, পঁচিশ বছরের দু’জন তাগড়া যুবক। সে সময়কার সবচেয়ে বড়ো কোম্পানিতে চাকরি করে ওরা। নয়নতারা ভীষণ বিব্রত হয়। সদ্য আঠারোতে পা দেয়া যুবতী সে। অভাবের তাড়নায় কাজের পেছনে ছুটছে। তাই বলে এমন দু’জন বলিষ্ঠ যুবকের বাসায় কাজ করা কি ঠিক হবে? তার এমন কথা শুনে বান্ধবী বলল,
‘ শোন এইসব চিন্তা করলে ঢাকা শহরে কাজ করতে আসা তোর উচিত হয় নাই। আমাদের মতো মেয়ের জন্য এইসব কাজ ছাড়া আর কোনো কাজ নাই। তা যা পাবি তাই সৌভাগ্য মনে করে লুফে নিবি৷ মনে রাখিস নিজে ঠিক থাকলে জগত ঠিক। ‘
বান্ধবীর সে কথায় ভরসা পায় নয়নতারা। মনস্থির করে সে কাজ করবে। কাজ শুরু করেও দেও৷ রোজ ভোর ছয়টায় এসে সকালের খাবার রেঁধে যায়। আবার সন্ধ্যার আগে এসে রাতের খাবার রান্না করে যায়৷ বিনিময়ে প্রতিমাসে পায় পাঁচ হাজার টাকা। একদিন রান্না করার সময় দুই সাহেবের মধ্যে যাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায় নয়নতারা সে এসে উপস্থিত হয়৷ নাম মহিউদ্দিন চৌধুরী। উনাকে ভয় পাওয়ার কারণ হচ্ছে, প্রায় প্রায় সে শুনতে পায় মহিউদ্দিন ফোনে প্রচণ্ড রাগারাগি করছে। কখনো রাগের বশে নোকিয়া ফোনটা ভেঙে চুরমার করেও দিয়েছে৷ টেলিফোনে ভেঙে করেছে গুঁড়ো গুঁড়ো। লোকটা বোধহয় দাম্পত্য জীবনে সুখী নয়৷ কখনো হাসতে দেখেনি তাকে৷ আর না কখনো হেসে কারো সাথে কথা বলতে শুনেছে৷ তাই হঠাৎ উনার উপস্থিতিতে ঘাবড়ে যায় নয়নতারা৷ কাজে মন থাকলেও মৃদু মৃদু হাত কাঁপতে শুরু করে তার। মহিউদ্দিন খেয়াল করে বলে,
‘ তুমি কি ভয় পাচ্ছ? ‘
বয়সে অনেকটা ছোটো হওয়াতে তুমি করেই বলে মহিউদ্দিন। নয়নতারা দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়। হঠাৎই মুচকি হাসে মহিউদ্দিন। প্রথমবারের মতো তার মুখে হাসি দেখে বিস্মিত হয় নয়নতারা। কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে,
‘ আপনার কি কিছু লাগবে?’
‘ হ্যাঁ আসলে আমার কয়েকটা কাপড় বেশ ময়লা হয়েছে। ধোপাকে দিয়ে ধুইয়ে পোশাচ্ছে না। তুমি কি শুক্রবার দুপুরে আসতে পারবে? এ মাসে এরজন্য তোমার বেতন বাড়িয়ে দিব। ‘
নয়নতারা খুব সহজ মনের মেয়ে ছিল। মহিউদ্দিনের এহেন প্রস্তাবের আড়ালে কোনো বদ উদ্দেশ্য থাকতে পারে বোধগম্য হয়নি তার৷ তাই কোনোকিছু না ভেবেই রাজি হয়ে যায়। অভাবি সংসারের মেয়ে। কিছু বাড়তি টাকা ইনকামের লোভটা সামলাতে পারেনি। তাই শুক্রবার সময় অনুযায়ী এসেও পড়ে৷ সে যেমন বাড়তি ইনকামের লোভ সামলাতে পারেনি। মহিউদ্দিনও সেদিন ফাঁকা বাসায় সদ্য যৌবনে পদার্পণ করা এক গরিব ঘরের অসহায় নারী শরীরের লোভ সামলাতে পারেনি। প্রথমে আবেগপ্রবণ কথা বলে ঘায়েল করার চেষ্টা করেছিল। সফল হয়নি৷ তাই বাধ্য হয়ে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক ঘটায়৷ সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলের মতো শরীরটাকে বিধ্বস্ত করে তুলে। নিজের সেই করুণ দশা, বেইজ্জতি মেনে নিতে পারেনি নয়নতারা। বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। মহিউদ্দিন ঘাবড়ে যায় খুব৷ সে ভেবেছিল গ্রামের অসহায় মেয়ে। কিছু টাকা দিয়ে সামলে নিতে পারবে৷ কিন্তু তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। নয়নতারা সে ধরনের মেয়ে না৷ এতেই যেন দ্বিগুণ মোহে পড়ে যায় সে৷ এমন ধীরস্থির, স্নিগ্ধ মেয়কে নিজের করে পেতেই হবে এমন বাসনা জাগে৷ সেই থেকেই হয়ে যায় ভুল। এই ভুলের খেসারত দিতে হয় নয়নতারাকে বিয়ে করে৷ কারণ নয়নতারা যখন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আর সে আঁটকায়। নয়নতারা কাঁদতে কাঁদতে কাতর হয়ে বলে,
‘ এখন আটকাচ্ছেন। এ বাড়িতে সব সময় তো আর আঁটকে রাখতে পারবেন না। আপনার বন্ধু এলে নিশ্চয়ই আপনার এই রূপ তাকে দেখাবেন না? আর আমিও ছাড়া পাবো৷ এই কলঙ্ক বয়ে বেড়ানোর সাহস আমার নেই। এ বাসার বাইরে পা রাখা মাত্র নিজের জীবন দিয়ে এই কলঙ্ক আমি মুছব। ‘
শরীরে ক্ষণিকের উত্তেজনায় যে ভুল হয়ে গেছে। সেই ভুল কোনোভাবেই মেটানো সম্ভব হচ্ছিল না৷ বরং একটা নিষ্পাপ জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। নয়নতারার মুখশ্রী দেখে সেদিন খুব মায়া হয় তার। মনে হয় একটা নিষ্পাপ ফুলকে সে কলঙ্কিত করেছে। চৌধুরীর বাড়ির রক্তের বদৌলতেই বোধহয় কিছু সময়ের জন্য তার মাঝে মনুষ্যত্বের দেখা মিলে। সে নয়নতারার বিধ্বস্ত মনকে শান্ত করতে কথা দেয়, আগামীকালই বিয়ে করবে তারা। যেহেতু শারীরিক, মানসিক দুভাবেই সে আহত। সেহেতু একদিন পর বিয়ে করে নেয় তারা। মহিউদ্দিনের যে বন্ধু তার সঙ্গে একই কোম্পানিতে জব করে এবং একই বাসায় থাকে। সেই বন্ধু গ্রামের বাড়ি থেকে আসে পরেরদিন রাতে। এসে যখন সবটা জানতে পারে বিস্ময়ে বাকহারা হয়ে যায়। যেখানে মহিউদ্দিনের একটা সংসার রয়েছে। রয়েছে তিন তিনটা সন্তান। সেখানে এমন একটা কাণ্ড কী করে ঘটাতে পারে সে!
ঝোঁকের বসে মস্ত বড়ো ভুল করে ফেললেও যতদিন এগুতে লাগল ততই অদ্ভুত শান্তি অনুভব করল মহিউদ্দিন। গ্রামের বাড়ির সংসারের চেয়ে শহরের এই সংসারই অতি প্রিয় হয়ে ওঠল। প্রথম স্ত্রী তাকে কখনো মানসিক শান্তি দিতে পারেনি। অথচ কয়েক মাসে নয়নতারা তাকে মানসিক শান্তি দিয়েছে। এত যত্ন জানে মেয়েটা৷ এই যত্নই বাধ্য করল তার প্রেমে পড়তে। সে অনুভব করল প্রেম, ভালোবাসা আসলে বাহ্যিক রূপে জন্ম নেয় না। প্রেম আসে হৃদয় থেকে। শুরুটা দেহের টানে হলেও ধীরে ধীরে মনের টান তৈরি হয়৷ এই টান রূপ, সৌন্দর্য দেখে নয়। এই টান নয়নতারার যত্ন, ভালোবাসায় জন্ম নিয়েছে। শুরুতে নয়নতারা তাকে ভয় পেত এরপর ঘৃণাও করল। কিন্তু বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার পর থেকে মহিউদ্দিনের জন্য তার মনেও দৃঢ় একটি জায়গার সৃষ্টি হয়। মন থেকে ভালোবাসতে শুরু করে স্বামীকে। সেই ভালোবাসার ফল সরূপই তার গর্ভে মুসকান আসে৷ মহিউদ্দিন যখন জানতে পারে তখন বেশ ঘাবড়ে যায়। নয়নতারা তাকে ভরসা দেয় সে বা তার সন্তান তার প্রথম পক্ষদের জন্য অসুবিধার কারণ হবে না। সে যেভাবে ঢাকায় রয়েছে সেভাবেই থাকবে। শুধু স্বামীর পরিচয় আর সন্তানের বাবার পরিচয় পেলেই হলো। মুগ্ধতার যেন শেষই ছিল না। মহিউদ্দিন সেদিন নয়নতারাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারী বলেও সম্বোধন করেছিল।
গর্ভাবস্থার সাতমাস সময় তখন৷ হঠাৎ মহিউদ্দিন দশ হাজার টাকা হাতে ধরিয়ে নয়নতারাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বিয়ের পর পরই মাকে জানিয়েছিল নয়ন। সে ঢাকার এক সাহেবকে বিয়ে করে নিয়েছে। গর্ভবতী হওয়ার পর সে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল। কারণ ততদিনে ছোটো বোনের বিয়ে দিয়েছে সে। বড়ো ভাইয়ের পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে। তাই মায়ের কোনো ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়নি। বরং লোক মুখে শোনা রূপহীন মেয়ের বিয়ে হওয়াতে বেঁচে গিয়েছিল সে। নয়নতারা মায়ের কাছে যাওয়ার পর দু’বার যোগাযোগ হয় মহিউদ্দিনের সাথে। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি৷ আসলে মহিউদ্দিন ইচ্ছে করেই যোগাযোগ করেনি। তার প্রথম স্ত্রী পারভিন কয়েক মাস ধরেই সন্দেহের চোখে দেখছে তাকে৷ এই নিয়ে অশান্তি হচ্ছিল খুব। একদিন সন্দেহ করে বলেই ফেলল,
‘ হ্যাগো তুমি আবার ঢাকায় বিয়েশাদি করে ফেলোনি তো? আমার ওপর থেকে এমন মন ওঠা কেন? সত্যি করে বলো তো। শোনো অনেকের জামাই এমন করে। আমার জামাই এমন করলে কিন্তু আস্ত রাখব না। জেলের ভাত খাওয়ায়ে ছাড়ব। তিন সন্তানকে বিষ খাওয়ায়ে বাপের বাড়ি চলে যাব৷ ‘
পারভিন খুব দজ্জাল মেয়ে মানুষ। সে নয়নতারার মতো নম্র স্বভাবের নয়৷ তাই খুব ভয় পেয়ে যায় মহিউদ্দিন। নয়নতারা দ্বারা তার ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকলেও পারভিন দ্বারা আছে। এছাড়া তার বাবা যে মানুষ৷ এসব জানলে খু ন করে দেবে তাকে। তাই ভেবেচিন্তেই নয়নতারাকে বাপের বাড়ি পাড়িয়ে দিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ঢাকার চাকরি ছেড়ে নিজ শহরেই রেষ্টুরেন্টের বিজনেস শুরু করে। এরপর হুট করেই কীভাবে যেন তার ঠিকানা নিয়ে একদিন নয়ন তারার বড়ো ভাই রফিক দেখা করতে যায় তার গ্রামের বাড়ি৷ মহিউদ্দিন পরিচয় পেয়ে তাকে নিয়ে দূরের একটি চা স্টলে বসে। জানতে পারে দু’দিন আগে নয়নতারা মেয়ে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে। মহিউদ্দিন স্তব্ধ মুখে বসে রয়৷ রফিক জানায়, তাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। সে এখনো চাকরিবাকরি পায়নি। বোন মারা যাওয়াতে তারা খুবই ভেঙে পড়েছে। দুধের শিশুটিকে নিয়েও অসহায় বোধ করছে। তার ছোটো বোনের শশুর বাড়ির লোক সুবিধার নয়। তার মধ্যে ছোটো বোন পোয়াতি। এমতাবস্থায় এই বাচ্চার দায়িত্ব তাদের পক্ষেও নেয়া সম্ভব না। তারা যদি সচ্ছল থাকত আজ নয়নতারা বাড়িতে প্রসব করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করত না৷ আর না তার স্বামী তার সঙ্গে অনাচার করার সাহস পেত। এমন কথায় মহিউদ্দিন মুষড়ে পড়ে। রফিক আরো বলে। বলা যায় হুমকি দেয়,
‘ সসম্মানে যদি তার শিশু ভাগ্নিকে তার বাবা গ্রহণ না করে সে আইনের ব্যবস্থা নেবে। ‘
সেদিনই নিজের করা ভয়াবহ অপরাধ বাবা,মাকে জানায় মহিউদ্দিন। ছেলেকে সু পথে ফিরিয়ে আনার জন্য ঢাকা শহরে পাঠিয়েছিলেন মোতালেব চৌধুরী। সেই ছেলে কিনা ওখানে গিয়েই সর্বোচ্চ কু পথ অবলম্বন করেছে৷ পারভিন যে মানসিকতার নারী৷ তাকে বুঝিয়ে বলে এই বাচ্চার দায়িত্ব দেয়া যাবে না৷ দেখা গেল কবে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলল! চৌধুরী গিন্নি তাই নিজ স্বামীর সঙ্গে নয়নতারার বাড়ি এসে নিজ দায়িত্বে শিশু মুসকানকে নিয়ে যায়। বাড়িতে গিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। স্রেফ মুসকানের সুনিশ্চিত ভবিষ্যত দেয়ার জন্য।
সমস্ত ঘটনা খুলে বলতে বলতে নানু কান্নায় ভেঙে পড়লেন। ঠোঁট চেপে নিজের ক্রোধ, কান্না আটকাতে আটকাতে এক সময় ব্যর্থ মুসকান দু’হাতে মুখ চেপে ফুঁপিয়ে ওঠল। নানু তাকে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরল। এক সন্তান হারা মা আর মা হারা সন্তান। একে অপরকে জাপ্টে ধরে হাউমাউ করে কাঁদল অনেকক্ষণ। উঠোনে দাঁড়ানো ইমন সে কান্নার শব্দ শুনে দু-হাত মুঠ করে চোখ বন্ধ করে রইল। বুকের ভেতর কাঁপছে তার। এদিকে দাদুভাই লজ্জিত ভঙ্গিতে মাথা নত করে রয়েছেন। মহিউদ্দিনও অপরাধীর ন্যায় নত মস্তকে বসে। নানুর আদর পেয়ে, স্বান্তনা শুনে কান্না থামল মুসকানের। কিন্তু হাত, পা, ঠোঁট কাঁপতে লাগল তার৷ নানু তার কপালে আদুরে স্পর্শ দিয়ে বলল,
‘ হেদিন যদি তুমার মামায় একখান কর্ম করত বু। তাইলে তোমারে আমি দিতাম না। ‘
মুসকানের গলা কেঁপে ওঠল। আকস্মিক তার নজর পড়ল সম্মুখে বসে থাকা মহিউদ্দিনের দিকে। কত শত তিক্ত স্মৃতি মনে পড়ল তার। ছোটো থেকে এই মানুষটাও কম কষ্ট দেয়নি তাকে। তার আচরণে তখন কষ্ট না পেলেও এখন কষ্ট হচ্ছে। সে না হয় জানত না সে তার মেয়ে। কিন্তু এই মানুষটা তো জানত মুসকান তারই সন্তান। সে মুসকানের জন্মদাতা। নিজের আবেগ, ক্রোধ কোনোটাই সামলাতে পারল না মুসকান। আর না সহ্য করতে পারল কাপুরুষ জন্মদাতাকে। বুকের ভেতরটা ঘৃণায় বিষিয়ে ওঠল তার। সে কোথায় আছে সেসব পরোয়া করল না৷ চট করে ওঠে এক ছুটে বাইরে বেরিয়ে গেল। সে দ্বারের বাইরে পা দিতেই চমকিত হয়ে ঘুরে দাঁড়াল ইমন৷ থমকানো দৃষ্টিতে তাকাল বিধ্বস্ত তরুণীর পানে। মুসকান দিকবিদিকশুন্য হয়ে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে। দু’হাতে শক্ত করে খামচে ধরল ইমনের বলিষ্ঠ পিঠ। বুকে মুখ গুঁজে ভেঙে পড়ল এক নিষ্ঠুর কান্নায়। যে কান্না ইমনকে বুঝিয়ে দিল, ‘ এই পৃথিবীর মানুষ গুলো নিষ্ঠুর। সেই নিষ্ঠুরতারই প্রতিচ্ছবি সে নিজে। ‘
মাথার ওপর মস্ত বড়ো চাঁদ। উঠোন জুড়ে মৃদু জ্যোৎস্না, আর বৈদ্যুতিক আলো। একপাশে নারিকেল গাছ। গাছের নিচে বলিষ্ঠ এক যুবক। তার বুক জুড়ে এক চিরদুঃখিনী। কেঁদে ভাসাচ্ছে বুক। মনের সঙ্গে বোঝাপড়া শেষে তরুণীর কানে ফিসফিস করে ইমন বলল,
‘ যত পারে কাঁদো। চেখের জলে দুঃখ গুলো ভাসিয়ে দাও। মুসকান, দুঃখ বেচে সবাই সুখ কিনতে পারে না৷ আমি তোমার দুঃখ কিনে সুখ দিতে চাই। তুমি কি দুঃখ বেচে সুখ কিনতে প্রস্তুত? ‘
আচমকা কান্না থেমে গেল মুসকানের। দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেই মুখ তুলে তাকাল একবার। কাতর কণ্ঠে বলল,
‘ দুঃখ কিনে কী করবেন আপনি? ‘
‘ অঢেল সুখ বানাব। ‘
ক্রন্দনরত মুখশ্রীতে প্রগাঢ় চোখে তাকিয়ে কথাটা বলল ইমন। মুসকান ফের ওর বুকে মাথা রাখল। নানুর কথাগুলো মস্তিষ্কে ঘুড়ির মতো করে ঘুরপাক খেতে লাগলে আবারো ফুঁপিয়ে ওঠল। ইমন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
‘ শাস্তি গুলো তোলা রইল। আপাতত তোমায় সামলে নিই। ‘
চলবে…
এত্তবড়ো পর্ব হয়ে গেল আজ! ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷ রিচেক করা হয়নি।