#ঘৃণার_মেরিন 4
part : 32
writer : Mohona
.
নীড় মেরিনকে থাপ্পর মেরে দিলো।
মেরিন : আপনি আমাকে …
নীড় : থাপ্পর মারলাম … এতো জটিলতার কারন কি … আমার মনে হয় যে তুমি নিউ ডিভোর্স পেপার রেডি করিয়ে রেখেছো।
মেরিন : …
নীড় : তো কোথায় তোমার ডিভোর্স পেপার? দাও সিগনেচার করে দিচ্ছি।
মেরিন বের করে দিলো। তবে ২টা কাগজ।।
মেরিন : ১টা ডিভোর্স পেপার অন্যটা বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার। আপনার আক আপনার বনপাখি নিরার… ২টাতেই সিগনেচার করুন।
নীড় : করবো… তবে আমার ছোট্ট ১টা প্রশ্ন। তার জবাব দিলেই সুন্দর করে সিগনেচার করে দিবো।
মেরিন : প্রশ্ন ? কিসের প্রশ্ন? আমি কোনো জবাব দিতে বাধ্য নই ।
নীড় : তাহলে আমিও সিগনেচার করতে বাধ্য নই… যদি ঝামেলা না চাও তবে জবাব দাও।
মেরিন : কি প্রশ্ন বলুন।
নীড় : ঘৃণার মেরিন হিসেবে থেকে কি লাভ পাও। ভালোবাসার মেরিন হতে কি ক্ষতি বলো তো?
মেরিন : সবার ভালোবাসার পাত্র সবাই হতে পারে… না তো এতে গর্বের কিছু আছে আর না তো প্রশংসা পাওয়ার মতো কিছু আছে। কারন… কারো ভালোবাসার পাত্র ২ভাবে হওয়া যায়। ন্যাচারালি ভালো হয়ে এন্ড এন্ড এন্ড ভালোগিরি দেখিয়ে ভালো হয়ে… তাই সবাই ভালোবাসার পাত্র হতে পারে। ইটস নট অ্যা বিগ ডিল… বাট বাট বাট … ঘৃণার পাত্র হতে গেলে কলিজা লাগে কলিজা … চাইলেই ভালোবাসার পাত্র হওয়া যায়। কিন্তু চাইলেই ঘৃণার পাত্র হওয়া যায়না। বিকজ…. কেউ ঘৃণার পাত্র হতেই চায়না … কারো সেই কলিজাই নাই…. বাট ওয়ান এন্ড অনলি মেরিন বন্যা খ …. উপস… মেরিন বন্যা নীড় খান চৌধুরীর সেই কলিজা আছে … আম হ্যাপী টু বি অ্যা হেটেড পার্সন। আমি #ঘৃণার_মেরিন … তবে এটা আমার লজ্জা নয়… এটা আমার গর্ব … এটা আমার পরিচয় … পেয়ছেন জবাব? এখন সিগনেচার করুন …
.
নীড় : ওকে…
বলেই নীড় কলম নিয়ে আকিবুকি করে ২টা কাগজই ছিরে ফেলল।
মেরিন : কাজটা ঠিক করলেননা…
নীড় : ঠিক কাজ করতে বোরিং লাগে যে … ওকে আসছি…
মেরিন : সিগনেচার না করে আপনি কোথাও যাবেননা।
নীড় : যাবো…
বলেই নীড় বের হতে নিলো। মেরিন পেছন থেকে নীড় ঘাড়ের দিকে ইনজেকশন পুশ করে দিলো।
মেরিন : এভাবে তো যেতে দিবোনা ….
.
২ঘন্টাপর…
নীড় চোখ মেলল। দেখলো ওকে চেয়ারের সাথে আটকে রাখা হয়েছে। তবে এতে নীড় একটুও অবাক হলোনা…
মেরিন : মু্ক্ত হয়েও কয়েদি আপনি … ইন্টারেস্টিং…
নীড় : পেছন থেকে আঘাত করলে যে?
মেরিন : উপায় ছিলোনা…
নীড় : ভালো লাগলো যে মেরিন বন্যা নীড় খান চৌধুরী আজকাল কেবল ঘৃণার আশ্রয় না ছলনার আশ্রয়ও নেয় …
মেরিন : সকল প্রেমিকের কাছে প্রেয়সী ভালোবাসতে শিখে , বাঁচতে শিখে …. আর আমি আপনার কাছ থেকে ছলনা শিখেছি…
নীড় : প্রথমত ছলনা কারো কাছে শিখতে হয়না … আর দ্বিতীয়ত আমি কি তোমার প্রেমিক ছিলাম আর তুমি কি আমার প্রেয়সী ছিলে …? হ্যা ছিলে। আর আমিও তোমারই প্রেমিক ছিলাম। ইভেন আছিও। তবে ভুল ধারমার শিকার আমি… আমরা । নয় কি?
মেরিন : আপনি আমার কি ছিলেন , কি আছেন আর কি থাকবেন সেটা কেবল আমিই জানি…. এখন সিগনেচার প্লিজ ।
নীড় : যদি না করি …
মেরিন : আপনার গলা থেকে মাথাটা কাটতে আমার একটু কষ্ট হবে …
নীড় : কাটতে পারবে…ট্রাস্ট মি… আমার গলায় ছুরি ধরেছো আমার একটুও ভয় করছেনা। বাট আই নো ভয় তুমি পাচ্ছে….
মেরিন : দুর্বলতা তো ১টাই আমার… আপনাকে ঘৃণা করার ক্ষমতা তো অর্জন করেছি। জানে মারার না। তবে তবে তবে … নাই বা মারতে পারলাম আপনাকে… বাট বাট বাট … আপনার সাধের ব…..নপাখি নিরাকে তো মারতে পারবো…. তাইনা?
বলেই মেরিন নীড় থেকে সরে গিয়ে ছুরিটা ঘোরাতে ঘোরাতে পিছাতে লাগলো।
নীড় : আই ডোন্ট কেয়ার… ডু হুয়াট ইউ ওয়ান্ট … বাট তুমি যেটা চাও সেটা হবেনা। আজকে তোমার জোর-জবরদস্তি তে কোনো লাভ হবেনা। আমি এই পেপারে সিগনেচার করবোনা। ছারতে পারবোনা আমি তোমাকে… কারন তুমিই আমার বনপাখি…
মেরিন : বাচাতে চাইছেন নিজের প্রথম ভালোবাসাকে?
নীড় : আমার প্রথম ভালোবাসাও তুমি…
মেরিন : ভালো লাগলো। তবে হাসি পেলোনা।
নীড় : হাসতে ভুলে গিয়েছো তুমি। তাই… বাই দ্যা ওয়ে… নিরার কাম তামাম হলে একটু দেখা দিও প্লিজ… কথা আছে। জরুরি।
মেরিন : কি কথা?
নীড় : বলবো তো। না তো তুমি হারাচ্ছো আর না তো আমি পালাচ্ছি । তাই শুভ কাজটা সেরে আসো । কারন শুভ কাজে দেরি করতে নেই মেরি মায়না …
.
একটুপর মেরিন ফিরে এলো।
নীড় : মরেছে নিরা? মরলে ভালো। আর না মরলে আরো ভালো। কারন ও মরে গেলে আজীবন ওকে নিজের হাতে শেষ না করার আফসোস থাকবে। বলোনা মরেছে?
মেরিন : কথা কমপ্লিট করুন … কি বলার ছিলো।
নীড় : হ্যা বলবো তো। তবে কিছু খেতে দাওনা। খেতে খেতে বলি। ভীষন ক্ষুধা লেগেছে ।
মেরিন : 😒।
নীড় : দাওনা গো… দেখো জাস্ট ডান হাতট ফ্রি করো… বাকি হাত পা আর করতে হবেনা। আর তুমি তো আর আমার হাত-পা দরি দিয়ে বাধোনি। সো জাস্ট চিল। ভয়ের কোনো কারন নেই। দাও না গো কিছু খেতে… পানি দিতেও ভুলোনা…
মেরিন খাবারের ব্যাবস্থা করলো । নীড় ডান হাত মুক্ত করলো। নীড় খাওয়া শুরু করলো।
নীড় : আচ্ছা অতৃপ্ত আত্মা বলো তো আম্মু কো…থায়?
মেরিন : মিরপুর ।
নীড় : হয়নি। আমি ওখানে রাখিনি।
মেরিন : দেন অ্যাসাইলাম ।
নীড় : না না হয়নি।
মেরিন : আপনাদের বাগান বাড়ি।
নীড় : এবারও ভুল।
মেরিন : কোথায় আম্মু …
নীড় : আন্ডারগ্রাউন্ড করে দিয়েছি।
মেরিন : হুয়াট ?
নীড় : ইয়াহ।
মেরিন কয়েকটা জায়গায় ফোন করলো। কনিকা নিখোজ। নীড়ের দিকে তাকালো।
নীড় : হিলু… ওহ হ্যা আম্মুর সাথে তোমার বাবা মানে আমার কবির বাবাও আছে। গ্রেট । এই সুযোগে তাদের হানিমুনটাও হয়ে যাবে। ওয়াও আমি তো মহাপুরুষ…
মেরিন : প্রথম কথা আম্মু কোথায়? দ্বিতীয় মিস্টার খানকে আমি বাবা বলে মানিনা।
নীড় : কিন্ত কথা বলো তার স্টাইলে… পছন্দ অপছন্দ সব তার মতো। জেদ তার মতো। এমনকি প্রিয় রং ও তার মতো। তুমি কথা বললে মনে হয় কবির ফয়সাল খান কথা বলছে। তার শিক্ষায় শিক্ষিত … সব বাবা মেয়েদেরকে ভালোবাসার বানায়। যা বোকামো হয় । বাস্তবতা থেকে দূরে রাখে। বাট তোমার বাবা তোমাকে ঘৃণার বানিয়েছে। দ্যা পারফেক্ট লেডি…
মেরিন : আপনার এই স্টুপিড কাহিনি শোনার কোনো ইচ্ছা নেই আমার । আম্মু কোথায়?
নীড় : খালি আম্মুর কথাই বলবে? বাবার কথা বলবে না?
মেরিন : সে আমার বাবা না।
নীড় : তো কি নিরার বাবা?
মেরিন : হামম।
নীড় : ইউ নো হুয়াট মেরিন … তোমার সেদিনের কথাটা আমার স্পষ্ট মনে আছে… ‘সে খুব শীঘ্রই পিতৃহারা হতে চলেছে।’ আমি কবির বাবাকে নিয়ে মহা চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম। তাই তাকে সুরক্ষিত জায়গায় রাখি। কিন্তু সে পালিয়ে যায়। এবং আজও জীবীত … সেই সাথে তোমার খোশ মেজাজ। অনেক সময় লেগেছে আমার মিস্ট্রিটা সল্ভ করতে। দাদুভাইয়ের কাছে যেদিন পাস্ট শুনলাম তখন থেকেই ভাবছিলাম যে যদি সেতুকে বাবা সত্যিই ভালোবাসে তবে কেনই বা আম্মুকে বিয়ে করবে? তখন অংকটা মিলাতে পারিনি। ইচ্ছাও ছিলোনা … বাট বাট বাট থ্যাংকস টু ইউ… মাই ডিয়ার বউটা …
মেরিন : আপনি কোন অসাধ্য সাধন করেছেন সেটাতে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমি আম্মুকে চাই …
নীড় : পেয়ে যাবে পেয়ে যাবে। তবে আই হ্যাভ অ্যা কন্ডিশন । ডিলও বলতে পারো।
মেরিন : আপনি কোন ডিল করার অবস্থায় নেই।
নীড় : সেটাতো তুমিও নেই … দেখো ডিলটা তোমার পছন্দ হবে। শুনেই দেখোনা।
মেরিন : নো। আমি আমার আম্মুকে ঠিকই খুজে নিবো।
নীড় : ওকে ট্রাই। বাট যাবার আগে তোমাকে থাপ্পর মারার কারন টা শুনে যাও। তোমাকে তখন থাপ্পর মারলাম কারন তখন তোমার বাহানাটা আমার বড্ড কাচা মনে হয়েছে তাই…
মেরিন নীড়কে ১টা লুক দিয়ে চলে গেলো।
নীড় : বেশি ছোটাছোটি কোরোনা । আমার বাচ্চাটার কষ্ট হবে।
.
পরদিন…
নীড় : কালকে থেকে এই বন্ধ রুমটাতে আছি । ভালো লাগেনা।
মেরিন ভেতরে ঢুকলো।
নীড় : এলে… কেমন লাগলো দৌড়ভাগ করে? পেলে ২জনকে?
মেরিন নীড়ের গলা চেপে ধরলো।
মেরিন : আমার আম্মু কোথায় ? 😡।।
নীড়ের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম … তবে মেরিনকে কোনো বাধা দিচ্ছেনা। হয়তো এটা ওর প্রাপ্য ।
মেরিন : বলুন আমার আম্মু কোথায়? বলুন…
নীড়ের দশা দেখে মেরিন ওকে ছেরে দিলো। নীড় কাশি দিতে লাগলো।
মেরিন : আমার আম্মু কোথায়? বলুন… বলুন … বলুন।
নীড় : উফফ বলছিতো … নিঃশ্বাসটা নিতে দাও। আম্মু কোথায় আছে সেটা বলবো। ইভেন হাজির করবো । তবে আমাদের বিয়ের দিন।
মেরিন : বিয়ের দিন? আমি আপনাকে বিয়ে করবোনা ।
নীড় : আমি কি বলেছি তোমার আমার বিয়ে? শখ কতো? আমি তো বলেছি আমার আর আমার বনপাখি মানে নি…রার বিয়ে।
মেরিন : আপনি নিরাকে বিয়ে করবেন?
নীড় : হামমম। করবো। প্রথম ভালোবাসাকেই আবার বিয়ে করবো। আর বিয়ের দিনই ডিভোর্স পেপারে সিগনেচার করবো। আগে ডিভোর্স পরে বিয়ে।
কথাটা শুনে মেরিনের রাগ উঠলো।
মেরিন : যখন এই ২টা কাজ করবেনই তবে এতো ড্রামা করলেন কেন?
নীড় : কারন আছে তো। আর শোনোনা । কথা তো শেষই হলোনা। ডিভোর্সও হবে বিয়েও হবে। ডিভোর্স হবে ১টা বাট বিয়ে হবে ২টা।
মেরিন : মানে?
নীড় : আবার কথা বলে। শোনো। আমার আর নিরার বিয়ে তো হবেই । সেই সাথে তোমার আর তপুদা… সরি তোমার আর টনিরও বিয়ে হবে।
মেরিন : হুয়াট? নো নেভার ।
নীড় : আমি তোমার ওপর কোনো জোর করবোনা। তবে … আম্মুর খোজটা পাবেনা।
মেরিন : আম্মুর খোজ তো আমি পেয়েই যাবো… আপনি বলুন আর নাই বলুন।
নীড় : পাবার হলে অলরেডি পেয়েই যেতে। আফটার অল মেরিন বন্যা নীড় খান চৌধুরী বলে কথা। বাট যেহেতু পাওনি সেহেতু পাবেও না। কারন আফটার অল মেরিন বন্যা নীড় খান চৌধুরীর হাজবেন্ড নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন বলে কথা। 😘।
মেরিন : 😒।
নীড় : চাপ নেয়ার কোনো কারন নেই । ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নাও। আই ডোন্ট মাইন্ড। সমস্যা নেই কোনো। সমস্যা এই বদ্ধ রুম। তুমি তো জানোই ভালো লাগেনা এটা আমার। তাই। বাসায় যেতে পারি…
মেরিন : জন… জন…
জন হাজির হলো।
মেরিন : ভিডিও ক্লিপটা উনাকে দেখাও…
জন : জী ম্যাম…
জন ১টা ভিডিও প্লে করলো। নীড় দেখতে পেলো যে ওর মা-বাবা বন্দী অবস্থায় আছে।
নীড় : ওয়াও… আমার বাবাকে কতো কিউট আর মামনিকে কতো হ্যান্ডসাম ধুর… বাবাকে হ্যান্ডসাম আর মামনিকে কিউট লাগছে। ভালোই হলো কয়েকটা দিন ২জনের ঘ্যানঘ্যানানি শুনতে হবেনা। গ্রেট…
মেরিন চেয়ারে ১টা লাথি মেরে বেরিয়ে গেলো।
মেরিন যেতেই নীড় হাহা করে হাসতে লাগলো।
জন : স্যার আপনি কি ঠিক আছেন?
নীড় : আই ডোন্ট নো। বাই…
.
৩দিন হয়ে গেলো। মেরিন কনিকা-কবিরের খোজ কোথাও পায়নি । কি করবে ভেবেই পাচ্ছেনা।
.
চলবে…
#ঘৃণার_মেরিন 4
part : 33
writer : Mohona
.
মেরিন ভেবেই পাচ্ছেনা কি করবে? ওর মা ওর দুর্বলতা। নীড় এতোকিছু কি করে জানলো? এসব বিষয় তো দাদুভাইও জানেনা। জানলে হয়তো নিজেকেই অপরাধী মনে করবে।
মেরিন : নীড় নীড় নীড়… এই ১টা নাম আমার সবকিছু এলোমেলো করে দিলো । সবকিছু… ড্যাম ইট । কোথায় রাখতে পারে উনি আম্মুকে? উনার রাখার মতো সব জায়গাতেই তো খোজ করলাম। কোথাও নেই… নীড়ের কাছে হার মানতে হবে ? কেন আল্লাহ কেন? কেন ওই লোকটার কাছে হারতে হবে আমায় ? কতোবার হারবো আমি নীড়ের কাছে? আমি জানি নীড় আম্মুর কোনো ক্ষতি করবেনা । কিন্তু আম্মুকে দেখা ছারা যে আমি ১দিনও থাকতে পারবোনা। আর না অন্যকারো বউ হতে পারবো… আমি যে আজও… আহ…
মেরিনের বুকের ব্যাথাটা আবার উঠলো। বেশ কিছুক্ষনপর একটু কমলো।
মেরিন : এই অসহনীয় ব্যাথাটা কিসের? কেন আজকে এই ব্যাথা মৃত্যুর ভয় জাগিয়ে তুলল মনে? আগে তো কখনো মৃত্যুকে ভয় হয়নি। নীড়কে ভালোবেসেও তো মৃত্যু ভয় হয়নি। তবে আজ কেন হচ্ছে? শুধু কি এই কারনে যে আমার মধ্যে ১টা নতুন প্রাণ আছে?
.
৭দিনপর…
মেরিন নীড়ের সাথে দেখা করতে নীড়ের বলা রেস্টুরেন্টে পৌছালো। আর গিয়ে নীড়কে খেতেই দেখলো।
মেরিন : আপনার খাওয়া হয়ে গেলে আমরা কি কথা বলতে পারি?
নীড় : কথা বলার জন্য খাওয়া কমপ্লিট করার কি প্রয়োজন? আমিও খাবো । তুমিও খাবে।
মেরিন : আমি কিছু খাবোনা।।
নীড় : খেতেই হবে। মনে করো এটাও আমার শর্ত ।
মেরিন : আপনি কি আমাকে পাগল পেয়েছেন?
নীড় : না। পাগলি। যাই হোক তুমি খাওয়া শুরু করলে আমরা কথা শুরু করতে পারি।
তুরুপের তাস এখন নীড়ের হাতে। তাই আপাদত নীড়ের কথা শোনা ছারা কোনো উপায় নেই। এটা মেরিন ভালোভাবেই জানে। কাউকে এ কারনেই নিজের দুর্বলতা দেখাতে নেই। তাই বাধ্য হয়েই মেরিন কিছুটা মুখে দিলো ।
মেরিন : এখন তো বলুন।
নীড় : হামম। দেখো তুমি মা হতে চলেছো। এই টাইমে ডিভোর্স হয়না। কিন্তু বিষয়টা যখন নীড়-মেরিন … তখন সবই সম্ভব । আর তুমি অলরেডি সম্ভব করিয়েও দেখিয়েছো।তুমি সত্যি গ্রেট।
মেরিন : আসল কথায় আসুন।
নীড় : যাচ্ছিতো। দেখো সাধারনত অন্যস ডিভোর্সের ক্ষেত্রে অ্যাপ্লাই করতে হয় । হেয়ারিং হয়। ৬মাস একসাথে থাকতে বলে। অ্যাট লাস্ট ডিভোর্স হয় । আমাদের সেটা হয়নি। আর হবেওনা । তবে তবে তবে… ৬মাসর বদলে ১মাস তোমাকে আমার বউ হয়ে আমার বাড়িতেই থাকতে হবে… আর ১মাস পর আমাদের বাসাতেই জোরা বিয়ের উৎসব হবে। আমাদের বাসা থেকেই তুমি টনির ঘরে যাবে। আর এই ১মাসে ৭-৮বার তুমি তোমার আম্মুকে দেখতে পারবে।
নীড়কে খুন করার ক্ষমতা না থাকায় আজকে জীবনে প্রথম মেরিনের আফসোস হচ্ছে।
নীড় : কি হলো ঝিম ধরে বসে রইলে যে? রাজী না থাকলে বলো…
মেরিন : আপনি এসব কিছুর ফল কি হতে পারে?
নীড় : আমার মামনি-বাবার জীবনও চলে যেতে পারে। আমি সবটার জন্যই প্রস্তুত । আমার দিক তোমাকে ভাবতে হবেনা…
মেরিন : …
নীড় : সিদ্ধান্ত নাও।
মেরিন : আমি রাজি…
নীড় : গুড বউ। ডিল পেপারটা যে কোথায় রাখলাম? কোথায় কোথায় কোথায় … গট ইট…
বলেই মেরিনের হাত নিজের মাথায় রাখলো।
নীড় : নাউ রিপিট মি… আপনার কথায় আমি রাজি।
মেরিন : এটাকি বাংলা সিনেমা চলছে?
নীড় : হ্যা … আসলে কি…তুমি ১টা জিনিস ভুল করেছো। আর সেটা হলো আমাকে নিজের দুর্বলতা দেখিয়ে। আমি জানি তোমার দুর্বলতা ৩
জন। আম্মু , দাদুভাই আর আমি…
মেরিন : নিজেকে লিস্টে রেখেছেন অকারনে।
নীড় : ভেবে নাওনা… তুমি যেমন কারন ছারা কাজ করোনা তেমনি আমি ‘অকারন’ ছারা কাজ করিনা। নাও রিপিট দ্যাট।
মেরিন : আপনার কথায় আমি রাজি। হয়েছে?
নীড় : ইয়েস…
মেরিন হাত নামিয়ে নিলো।
মেরিন : ডিভোর্স আর নিরার সাথে বিয়ে তো আমিই দিচ্ছিলাম। তাহলে এমন ড্রামা কেন?
নীড় : আমি বিয়ে করলে কি হতো ? তুমি তো আর করতেনা।
মেরিন কিছুনা বলে উঠে গেলো। চলে যেতে নিলো। নীড় চিল্লিয়ে
বলল : আজ রাতেই কিন্তু নিতে আসবো…
মেরিন চলে গেলো।
.
কবির : রাজি হয়েছে মেরিন?
নীড় : উল্টা দিকে যখন নীড় ছিলো তখন রাজি হওয়ারই ছিলো ।
কবির : আমার মেয়েটা যদি নিজের ক্ষতি করে ফেলে?
নীড় : করবেনা। কারন ও আরো ১টা ঘৃণার মেরিনের জন্ম দিতে চায়না।
কবির : মানে?
নীড় : জেনে যাবে। আম্মু কোথায়?
কবির : ছাদে। গাছে পানি দিচ্ছে…
নীড় ওপরে গেলো।
নীড় : হ্যালো বন্ধু…
কনিকা : তুমি এসেছো?
নীড় : হামম। সেই সাথে অনেক গুলো চকোলেটস ও এনেছি।
কনিকা : থ্যাংক ইউ। আচ্ছা আমি আর কতোদিন এখানে থাকবো গো? বোর হচ্ছি বসে থেকে থেকে। অ্যাসাইলামে জয়েন কবে করবো?
নীড় : রোগীদের মাঝে থাকতে বুঝি ভালো লাগে?
কনিকা : এত্তোগুলা …
নীড় : যাবে কিছুদিন পরই যাবে। তুমি গাছে পানি দাও আমি আসছি….
কবির : কি মনে হলো?
নীড় : যথেষ্ট ভালোর দিকে। এন্ড থ্যাংকস টু ইউ … আমি জানতাম যে তুমি আম্মুর সামনে এলে… আম্মুর আশেপাশে থাকলে আম্মুর জন্য ভালো হবে। রেজাল্ট আমাদের সামনে ।
কবির : এখন কি কনা পুরোপুরি সুস্থ ?
নীড় : না। ১০০% নয়। তবে প্রায় সুস্থ। তবে ১টা বার আম্মুকে হিপনোটাইজড করে দেখতে হবে।
কবির : তো দেখো…
নীড় : আজকে নয়। ২দিনপর। মেরিনকে দেখে কিভাবে রিয়্যাক্ট করে সেটা জানার পর। এই এতো বড় গেইম প্ল্যান করার কারন ২টা। মা-মেয়ে ২জন কেই সুস্থ করা। মেরিনেরও মানসিক রোগ আছে। হয়তো এই ১মাসে ওকে সুস্থ করা সম্ভব হবেনা। তবে ১টা উদ্দেশ্য হাসিল হবে। তবে আশা করছি খুব শীঘ্রই আম্মু সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে যাবে।
কবির : ১মিনিট… তুমি কি বললে? মেরিনের মানসিক রোগ আছে মানে? আমার মেয়ে একদম সুস্থ । বুঝেছো?
নীড় : না বাবা। ও সুস্থ নয়। ওর এই অদ্ভুদ আচরন ওর মাবসিক রোগের জন্য। তবে বুঝতে পারছিনা ওর প্রবলেমটা কি? বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার নাকি বাইপোলার অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডার।যদিও ২টা একই…
কবির : এগুলো তোমার ভুল ধারনা।
নীড় : না বাবা। ঠিক বলছি। ও যে এমন রাগী সেটা কেন? ডিপ্রেশন , একাকিত্বতা , ভয় , অনাদর সবকিছুতে ও এমন হয়ে গিয়েছে।
কবির : আমার মেয়েটা কি সুস্থ হবেনা?
নীড় : আমি আছি তো …
কবির : বলোনা তু…
মেরিন : কি বলবেন উনি?
২জন সামনের দিকে তাকালো দেখলো মেরিন দারিয়ে আছে।
.
নীড় মনে মনে : ড্যাম ইট … মেরিন কি করে পৌছে গেলো।
মেরিন তো পৌছে গিয়েছে। তবে নীড়ের কথা কিছুই শুনতে পায়নি ।
মেরিন নীড়ের সামনে গিয়ে দারালো।
মেরিন নীড়ের গলায় থাকা লকেটটা ধরলো।
মেরিন : এই কদিন আপনার ওপর নজর রাখতে পারি বলে এখানে আসেননি। আজকে যখন দেখলেন আমি রাজি হয়ে গিয়েছি তখন এখানে চলে এলেন। প্ল্যানিংটা কিন্তু চমৎকার ছিলো। ইমপ্রেসিভ। তবে দোষটা আপনার না। আমার। যখন ১বার এসে দেখলাম যে এই মাহমুদ ভিলায় আম্মু নেই তখন এসে দ্বিতীয়বার আর চেক করিনি। আর সেই ভুলের জন্যই গত কয়েকদিন ধরে এতো টেনশন করতে হয়েছে। কিন্তু ভুলে গিয়েছিলেন যে হারাতে চাওয়া বা হারানোর মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য ।
নীড় : হার জিতের খেলা তুমি খেলো। আমি না। আমি চেয়েছিলাম …
মেরিন : আপনি চেয়েছিলেন যে টনি আর আমার মিথ্যা বিয়ের নাটক করতে। তাইতো? আপনার ভাবনাটাকে সত্যি করে দেই । আপনার দেয়া সেই ১মাস পর আমি সত্যি সত্যিই টনিকে বিয়ে করবো… আপনি নিরাকে বিয়ে করুন আর না করুন সেটা আপনার ব্যাপার। কিন্তু আমি টনিকেই বিয়ে করবো। এন্ড ইউ মিস্টার খান … মিস্টার চৌধুরী আমাকে না চিনলেও আপনি তো আমাকে চিনেন?
কবির : আমি…
মেরিন : কিছু শুনতে চাইনা ।
বলেই মেরিন ওপরে গেলো।
.
গিয়ে দেখে কনিকা গুনগুন করে গান গাইছে আর গাছে পানি দিচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে যে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে। গাব গাইতে গাইতে কনিকা লাইনটা ভুলে গেলো । মেরিন গানটা ধরলো। গাইলো।
কনিকা মেরিনের সামনে গিয়ে দারালো।
কনিকা : ভারী মিষ্টি গলা তো তোমার।
মেরিন : থ্যাংক ইউ। তোমার কন্ঠও খুব সুন্দর। আর গানটাও।
কনিকা : এটা আমার খুব পছন্দের গান। হুট করে ভুলে গেলাম।
মেরিন : হতেই পারে।
কনিকা : তোমার নাম কি?
মেরিন : মে… মেহরিন …
কনিকা : খুব সুন্দর নাম। জানো কবিরের খুব ইচ্ছা যে ওর মেয়ে বাবু হলে নাম রাখবে মেরিন।
মেরিন : …
কনিকা : কতোদিন পর কবির ভিন্ন কারো সাথে কথা বললাম। ও হ্যা ওই নার্স ও ছিলো। নীড় তো আজকে এলো। আচ্ছা তুমিই বলো আমাকে দেখে কি অসুস্থ মনে হয়?
মেরিন : একদম না।।
কনিকা : সেটাই তো। কয়েকটাদিন ধরে বন্দী থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। আজকে বুঝলাম মানুষ কিভাবে মানুসিক রোগী হয়… ডক্টর হয়ে আজ বুঝলাম …
মেরিন : আপনি ডক্টর ?
কনিকা : হামমম । সাইকিয়াট্রিস্ট ।
মেরিন : ওহ গুড।
কনিকা : তুমি কিন্তু আজকে খাওয়া দাওয়া করে যাবে।
মেরিন : হামমম।
কনিকার কথায় মেরিন বুঝতে পারলো যে কনিকা অনেকটাই সুস্থ। ভালো লাগলো মেরিনের ।
মেরিন মনে মনে : এখন কি আম্মুকে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে? আর কি বলেই বা নিয়ে যাবো।
কনিকা : কি ভাবছো?
মেরিন : কিছুনা…
.
রাতে…
নীড় : মাঝেমাঝে নিজের ওপরই রাগ ওঠে ।
নীলিমা : নীড়… নীড়… এই নীড়। নিচে আয়।
নীড় নিচে নেমে গেলো।
নীড় : কি হয়েছে?
মেরিন : ওয়েলকাম করবেননা আমার?
নীড় ঘুরে দেখে যে দরজায় মেরিন দারিয়ে আছে। নীড় অবাক হলো।
মেরিন : আমাকে দেখা হয়ে গেলে এসে বরন করলে খুশি হবো মিস্টার চৌধুরী। প্লিজ …
নীড় : আমি বরন করবো ?
মেরিন : হামম। আপনি।
নীড় : মামনি বরনডালা সাজাও।
মেরিন : সাজাতে হবেনা। আমিই নিয়ে এসেছি। এই দেখুন।
নীড় দেখলো ।
মেরিন : আবার স্ট্যাচু হয়ে গেলেন যে?
নীড় গিয়ে মেরিনকে বরন করে নিলো। আজকে মেরিনের চোখে অন্যকিছু দেখতে পাচ্ছে।
মেরিন ভেতরে ঢুকলো।
নীড় : ওয়েলকাম ।
মেরিন : থ্যাংক ইউ…
নীড় : চলো ফ্রেশ হয়ে রেস্ট করবে চলো।
মেরিন : হ্যা অফকোর্স ।
.
একটুপর…
ডক্টর রুমে ঢুকলো।
নীড় : শী ইজ বেস্ট গাইকোনোলজিস্ট। মিসেস পপি। আজকে থেকে পার্মানেন্টলি এ বাসাতেই থাকবে ।
মেরিন : গুড ।
নীড় : ডক্টর …
ডক্টর চেকআপ করলো।
পপি : সবই তো ঠিক আছে। বিপি একটু বেশিই হাই । টেনশন ফ্রি থাকতে হবে। ওকে?
মেরিন ১টা হাসি দিলো। পপি চলে গেলো।
মেরিন : আমার ভীষন ক্ষুধা লেগেছে।
নীলিমা : এই যে হাজির …
নীলিমা এতো খাবার নিয়ে দারিয়ে আছে….
.
চলবে…