ঘৃণার মেরিন সিজন ৪( পর্ব ২৪+২৫)

0
676

#ঘৃণার_মেরিন 4
part : 24
writer : Mohona

.

মেরিন গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। সেদিন এমন আচরন না করলে হয়তো আজকে মেরিন ওকে পাগলামো করে নিয়ে যেতো ।
জন : স্যার … বা…
নীড় বেরিয়ে এলো। ড্রাইভ করতে লাগলো। দেখতে পেলো যে জন ওর পিছে পিছে আসছে। মানে ওকে বাসায় ঠিকভাবে পৌছাতে জন ওর পিছু নিয়েছে । নীড় গাড়িটা থামালো। গাড়ি থেকে নামলো। ওকে দেখে জনও নামলো।
জন : স্যার কোনো সমস্যা ?
নীড় : নাহ… জন… আমি একটু নিজের সাথে সময় কাটাতে চাই প্লিজ…
কথা গুলো খুব কষ্টে বলল। গলাটা ধরে আসছে। চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে। জন স্পষ্ট দেখলো।
জন : কিন্তু স্যার…
নীড় : প্লিজ …
জন : হামমম।

জন চলে গেলো। নীড় গাড়ি নিয়ে ১টা নিরব জায়গায় গেলো। গাড়ি থেকে নেমে আকাশের দিকে মুখ করে চোখের পানি ফেলল। সারারাত নীড় বাসায় ফিরলোনা।
যতোই অভিমান করে থাকুকনা কেন… নীড়কে মেরিন ভীষন ভালোবাসে । নীড় না ফেরাতে সারাটা রাত মেরিন চিন্তায় ছটফট করেছে।

.

সকালে…
নীড় এখনও বাসায় ফিরেনি… নাহ মেরিনের মন আর মানছেনা। আর টেনশন করতে পারছেনা এখন মনে হচ্ছে যে নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। জনকে কল করার জন্য মোবাইল হাতে নিলো… আর তখনই নীড় রুমে ঢুকলো। মেরিনের জানে জান এলো।
নীড় ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে । মেরিন ১টা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। তবে আজকে শুক্রবার… কি করবে মেরিন ভেবে পাচ্ছেনা। আজকে তো অফিস বন্ধ । নীলিমাকে কি জবাব দিবে…
এসব ভাবতে ভাবতেই নীড় বেরিয়ে এলো । মেরিন ১টা ফ্রেশ হতে গেলো ।

.

খাবার টেবিলে …
নিহাল : আজও খেয়ে মনে হচ্ছে তোমার হাতের রান্না…
নীলিমা : তো রান্নাটা যখন আমিই করেছি তখন আমার হাতেরই তো মনে হবে তাইনা?
নিহাল : তোমার সাধের বউমা যে ৪দিন ধরে রান্না করা একেবারেই ছেরে দিয়েছে এর কাহিনি কি?
নীলিমা : তুমিই জিজ্ঞেস করো।
নীড়-মেরিন কিছুই বলছেনা । চুপচাপ কেবল খাচ্ছে।
নিহাল : বলছিলাম কি… রান্নাটা একটু ভালো হয় বলে বেশি খেয়ে ফেলি । তাই বলে কি শাস্তিস্বরূপ রান্নাই বন্ধ করে দিয়েছো নাকি? না মানে তুমি তো আবার শাস্তি দিতে ভালোবাসো তাই বললাম…
মেরিন : …
নিহাল-নীলিমা বুঝলো যে ২জনের মধ্যে কিছু হয়েছে।
নিহাল : আরো ১টা কথা… তোমাকে ৪দিন ধরে দেখাই যাচ্ছেনা কেন? সকাল-দুপুর-রাত … নীড় ঠিকই বলে যে তুমি অতৃপ্ত আত্মা …
মেরিন : …
নিহাল : আজকে তো শুক্রবার । বিয়ের পর থেকে তো বাসায় থাকলে শাড়িই পরো… তবে আজকে এসব পরে আছো কেন? ব্রেকফাস্ট করে গিয়ে চেঞ্জ করে দুপুরের রান্না করবে। বুঝেছো? শাড়িতে আমার ছেলের বউটাকে মা মা মনে হয় । আমার সুন্দরি মা।
নীলিমা : বললেই চলে যে ওকে শাড়িতে সুন্দর লাগে।
নিহাল : হ্যা সুন্দর লাগে বলেই তো বললাম…
এই ‘শাড়ি’ টপিকটাই নীড়-মেরিনকে নারিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। বিশেষ করে মেরিনকে…

মেরিন : আমার কিছু বলার ছিলো…
নীলিমা : কি?
মেরিন ১টা ফাইল নিহালের হাতে দিলো।
নিহাল : কি আছে এতে?
মেরিন : চৌধুরী সম্রারাজ্যের যে ৮০% আমার নামে ছিলো তা আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিলাম।
নিহাল-নীলিমা : হুয়াট ?
নিহাল পড়ে দেখলো মেরিন সত্যিই বলেছে।
নিহাল : এসব কেন?
মেরিন : সহজ জবাব…আমার ইচ্ছা। ওকে গাইস প্রজেক্ট ভিজিটে যেতে হবে। বাই।
বলেই মেরিন চলে গেলো।

নীলিমা : নীড় তুই কি বলেছিস মেরিনকে?
নীড়ও জবাব না দিয়ে বেরিয়ে গেলো ।

নীলিমা : সেদিন নীড়ের ড্রিংকস করে বাসায় ফেরাতেই বুঝেছিলাম যে বড় কোনো ঝড় আসতে চলেছে। এসেও পরেছে…
নিহাল : নীলা.. চিন্তা কোরোনা… বর্ষনের মুখোমুখি এবার বন্যা । বর্ষন যতোই গর্জন করুক না কেন তাতে বন্যার কোনো ক্ষতি নেই । বরং লাভ আছে। বর্ষন যতো কঠিন রূপ নিবে বন্যা ততো প্রলয়ংকারি হবে…
নীলিমা : কিন্তু যদি ২জনের মধ্যে বারাবারি কিছু হয়ে যায়?
নিহাল : হতেই পারে। তবে কি জানো? মেয়েটা নীড়কে ভালোবাসে… এর থেকে সত্য আপাদত কিছু নেই….

.

মেরিন খোলা আকাশের নিচে বসে আছে। তখন খেয়াল করলো যে টনিও এখানে। স্মোক করছে।
টনি : আরে মেরিন তুমি এখানে?
মেরিন : হামমম।
টনি : উফফস সরি।
বলেই টনি সিগারেটটা ফেলে দিলো।
টনি : আসলে এই জায়গাটা আমার খুব প্রিয়। মন খারাপ হলে চলে আসি।
মেরিন : …
টনি বুঝলো যে মেরিনেরও মন খারাপ। তাই ভাবলো হয়তো এখন এখানে থাকা ঠিক হবেনা।
টনি : মেরিন আমি আস…
মেরিন : আসছি।। বাই বলেই মেরিন চলে গেলো। টনি মেরিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
টনি : যদি আগেই সাহস করে তোমার সামনে ভালোবাসার দাবি নিয়ে তোমার সামনে দারাতাম তবে হয়তো তুমি আমার হতে… হয়তো তোমার জীবনটা সুন্দর করতে পারতাম…
টনির চোখের কোনে পানি চলে এলো।

.

রাতে…
মেরিন বাসায় ফিরলো । দেখে নীড় মনের সু়খে টিভি দেখছে। কোনো হেলদোল নেই। মেরিন চেঞ্জ করার জন্য কাবার্ডটা খুলল। আ়র খুলে অবাক হয়ে গেলো। কারন সারা কাবার্ড জুরে সব শাড়ি আর শাড়ি … আর কোনো ড্রেস নেই।

নীড় :
🎤🎵🎶
যদি বউ সাজোগো
আরো সুন্দর লাগবে গো …
যদি বউ সাজোগো …
আরো সুন্দর লাগবে গো …
🎤🎵🎶

মেরিন সবগুলো শাড়ি বের করে ওগুলোতে আগুন লাগিয়ে দিলো। নীড় দেখছেওনা…

নীড় : আহারে… এতোগুলো টাকার শাড়ি… যদি নিরাকে দিতাম তবে মাথায় তুলে রাখতো ।

মেরিন কিছু না বলে মোবাইল হাতে নিলো।
মেরিন : হ্যালো … লিলি…
লিলি : ইয়েস ম্যাম…
মেরিন : কালকে সকাল ৯টার মধ্যে কয়েকটা ড্রেস কিনে চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে আসবে। আর ৯টা মানে ৯টাই…
লিলি : জী ম্যাম।
মেরিন কল কেটে ফ্রেশ হতে গেলো । ফ্রেশ হয়ে এসে সোফায় শুয়ে পরলো ।
একটুপর মেরিন বুঝতে পারলো যে রুমের লাইটটা নিভে গেলো । কয়েক সেকেন্ডে পর ও বুঝতে পারলো যে ও নীড়ের কোলের মধ্যে। লাফিয়ে নামতে গেলে নামতে পারলোনা। মেরিন তো ছুটাছুটি শুরু করে দিয়েছে । কিন্তু কোনো লাভই হচ্ছেনা।
নীড় মনে মনে : দেখাচ্ছি মজা … খুব লাফালাফি করার শখ না…
নীড় মেরিনকে কোলে নিয়ে ঘুরতে লাগলো। ঘুরে থেমে গেলো । মেরিনের মাথা ঘুরতে লাগলো । এরপর নীড় মেরিনকে বুকে নিয়ে শুয়ে পরলো। মেরিন ছুটতে চাইছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। মেরিন ঠিক করলো যে নীড় ঘুমিয়ে পরলে উঠে যাবে…
কিন্তু নীড় ঘুমানোর আগে মেরিনই ঘুমিয়ে পরলো। মেরিন ঘুমানোর পর নীড় ওর সারা মুখে কিস করে দিলো।
নীড় : ভালোবাসি…

.

পরদিন…
মেরিন নিচে দারিয়ে লিলির অপেক্ষা করছে । ৯টা বাজতে এখনো ৫মিনিট বাকি। তখন লিলি চলে এলো। মেরিন ব্যাগটা নিলো। নীড় ওপর থেকে সবটা দেখলো।
নীড় : তোমার ১০টায় মিটিং… আজকে তো শাড়ি পরেই তোমাকে বাসা থেকে বের হতে হবে…
মেরিন যাচ্ছে । হুট করে নীড় ধাক্কা দিলো। মেরিনের হাতের ব্যাগ পরে গেলো। মেরিনও পরে যেতে নিলো। কিন্তু নীড় ধরে ফেলল। নীড়ের দিকে চোখ পরতেই চোখ সরিয়ে নিলো। নীড় ব্যাগটা পাল্টে দিলো ।
মেরিন সোজা হয়ে উঠে দারালো। মেরিন যেতে নিলে নীড় পথ আটকে দারালো। মেরিন যেদিকে যাচ্ছে নীড়ও সেইদিকে যাচ্ছে । আসলে নীড় মেরিনের সময় নষ্ট করছে । নীলিমা কিচেন থেকে সবটা দেখছে । রান্না বাদ দিয়ে খেতে খেতে ২জনের কাহিনি দেখছে । মেরিনের ইচ্ছা করছে নীড়কে ১টা ঘুষি মারতো …
আর নীড়ের ভাব যেন কিছু হয়ইনি… মেরিন বাধ্য হয়ে নীড়ের পায়ে পারা দিয়ে ধরলো। কিন্তু তাতেও নীড়ের মাথাব্যাথা নেই।
৪-৫মিনিট পরও যখন নীড় রিয়্যাক্ট করলোনা তখন মেরিন বিরক্ত হয়ে রুমে চলে গেলো। ব্যাগটা নিয়েই ওয়াশরুমে ঢুকলো । তবে শাওয়ার নিয়ে ব্যাগটা খুলে দেখে তাতেও শাড়ি। মেরিন ঠিক বুঝে গেলো যে কাজটা নীড়ের। রাগে মেরিনের গা টা জ্বলে যাচ্ছে। বাথরোবটা পরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। দেখলো নীড় খবরের কাগজ পড়ছে। ১বার মেরিনের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজে মন দিলো।
মেরিন নিজের মোবাইল খুজতে লাগলো। কিন্তু পাবে কি করে? ওটাতো নীড়ের পকেটে…
মেরিন সোজা হয়ে দারালো । পা দিয়ে মেঝেতে ধীরে ধীরে বারি দিতে লাগলো। নীড় আড়চোখে মেরিনকে দেখছে।

নীড় মনে মনে : এখন তো শাড়ি পরতেই হবে । মিটিং এ তো তুমি লেইট হবেনা । হতে চাওনা।

মেরিন ওয়াশরুম থেকে নিজের ভেজা কাপড় নিয়ে এলো। এরপর ড্রায়ার দিয়ে শুকাতে লাগলো।

নীড় : 😒।

পোশাকটা কোনোরকমে অল্প একটু শুকালে মেরিন ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে অফিসে চলে গেলো। নীড় খবরের কাগজটা ছিরে ফেলল।

.

মেরিন : জন… জন… জন…
জন : জী ম্যাম …
মেরিন : নী… মিস্টার চৌধুরী ধীরে ধীরে মাথা ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। ওর কিছু করো…
জন : সরি ম্যাম ববববুঝলাম না।
মেরিন : না বোঝার কি আছে? যা করার করো বাট ওই মাথাব্যাথাটার কিছু করো।
জন পরে গেলো মহাবিপদে … কি করবে ? কিছু করলেও মেরিনের ধোলাই খাবে আর কিছু না করলেও ধোলাই খাবে।
মেরিন : দারিয়ে আছো কেন? গো ফাস্ট।
জন : ম্যাম নীড় স্যারের সাথে কি করবো?
মেরিন : জানে মেরে দাও।
জন : 😱।
মেরিন : দারিয়ে আছো কেন?
জন : ম্যাম সত্যি মারবো?
মেরিন : সত্যি মারবে মানে?
জন জানে এখানে থাকা মানে এখন বিপদ না মহাবিপদ … জন বেরিয়ে গেলো।
জন : কি করি? শমসের স্যার । হ্যা শমসের স্যারের কাছে যাই…

জন ছুটে দাদুভাইয়ের কাছে গেলো । সবটা বলল।

জন : ও স্যার কিছু বলুন…
দাদুভাই : আমি কি বলবো বলো তো? মানে কি যে হচ্ছে এসব? পরশুরাতে নীড় দাদুভাই এসে কাহিনি করলো। পাগলামো করলো। এখন দিদিভাই … আমি পাগল হয়ে যাবো।
জন : আমি কি করবো ?
দাদুভাই : কিচ্ছু করতে হবেনা … এখানে বসে থাকো।
জন : কিন্তু স্যার ম্যামতো সিওর না হয়ে কোনো কাজ করতে বলেনা। কোনো সিদ্ধান্ত নেয়না…
দাদুভাই : তো এখন কি নীড় দাদুভাইকে জানে মেরে ফেলবে?
জন : স্যার আমি বুঝতে পারিনি বলেই তো আপনার কাছে এলাম…
দাদুভাই : বসে থাকো চুপচাপ…

.

মেরিনও আর জনের কোনো খোজ নেয়নি…. কাজ শেষ করে গাড়িতে বসলো। দেখে পাশে নীড় বসা। বসে বসে আপেল খাচ্ছে ।
মেরিন গাড়ি থেকে নেমে গেলো। খুব কষ্ট হচ্ছে মেরিনের খুব। কেমন যে লাগছে নিজেই বুঝতে পারছেনা। কি করবে আর কি করবেনা কিছুই বুঝতে পারছেনা।

এতো কষ্ট পেয়েছে ছোটোথেকে এতোকিছুর মুখোমুখি হয়েছে এই পর্যন্ত তবুও কখনো এমন লাগেনি। আজকে লাগছে। আর এসবের মূল নীড় … এই ১টা নাম সব তোলপার করে রেখে দিয়েছে…

নীড় মেরিনকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসালো । এর ড্রাইভ করে পৌছালো নদীর পারে…
গাড়ি থামলো। নিজে নামলো। মেরিনকেও টেনে নামালো…

নীড় : দেখো আমি সরি টরি বলতে পারিনা । আর আমি সরি বলবোও না। আর কেনই বা সরি বলবো? সরির তো কিছু নেই। তুমি আমাকে ভালোবাসো আর আমি তোমাকে ঘৃণা করি। তাই আমি তোমাকে কষ্ট দিবো আর তুমি কষ্ট পাবে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
মেরিন : …
নীড় : বাট কথা হচ্ছে এটা যে মেরিন বন্যার কষ্ট পাওয়াটা প্রকৃতি বিরোধী… মেরিন বন্যার সাথে কষ্ট দেয়াটাই সাজে…
মেরিন : …
নীড় : আমার মনে হয় … মেরিন বন্যার হিংস্রতা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে । ভাবা যায় ? দ্যা মেরিন বন্যা নীড় খান চৌধুরী এতো নিরব হয়ে আছে… এতো গম্ভীর… তাহলে আমি জিতে গিয়েছি… মেরিন বন্যাকে আমি হারিয়ে দিয়েছি। ইয়েস… আই হ্যাভ… ভালোবাসার খেলায় হারিয়ে দিয়েছি… ইয়েস ইয়েস & ইয়েস…
মেরিন নীড়ের দিকে তাকালো।

মেরিন : মিস্টার চৌধুরী আমি মেরিন বন্যা… আমাকে চাবি দিয়ে ঘুরানো যায়না। কি মনে করেছেন? আপনি আমার ইগো হার্ট করবেন আর আমিও আবার আপনাকে ভালোবাসবো? নো … নো মিস্টার চৌধুরী নো… আমি আমার মন-মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রন করতে জানি। আবেগ-অনুভূতি অনেক আগেই হারিয়ে গিয়েছে। যেটুকুও বাকি ছিলো সেটুকুও শেষ । এন্ড থ্যাংকস টু ইউ। আপনি জানেন আমি আপনার চেহারাটা কেন এরিয়ে চলেছি? কারন এই চেহারাটায় লেখা আছে মেরিন প্রস্টিটিউট … ইয়েস… ইটস ট্রু… এতোদিন আপনাকে ইগনোর করেছি কারন আপনাকে ঘৃণা করতে শিখছি … হামমম ঘৃণা করতে শিখছি। এসব স্টুপিড ড্রামা করে নিরাকে মেরে যতোই ভালোগিরি করেন না কেন লাভ হবেনা। আপনাকে আমার বন্দী হয়েই থাকতে হবে। তবে পার্থক্য কি জানেন? আমি আপনাকে ভালোবাসার চাদরে মুরিয়ে নিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আপনি ঘৃণার শেকল বেছে নিলেন … এতে আমার দোষনা …
নীড় : তুমি যদি সত্যিই আমাকে ঘৃণা করতে শিখে যাও তবে তবে তবে আমি তোমার সামনে দারিয়ে ছাই হয়ে যাবো …
কথাটা শুনে মেরিনের বুকটা কেপে উঠলো।
নীড় : না না ভয় পাওয়ার কিছু নেই… আমার কিছু হবেনা। রিল্যাক্স । কারন দুনিয়া ঘুরে গেলেও তুমি আমাকে ঘৃণা করতে পারবেনা। আই বেট…
মেরিন : মেরিন হারতে শিখেনি…
নীড় : কারন এর আগে আমার মুখোমুখি হওনি…
মেরিন ১টা বাকা হাসি দিলো ..তখন মেরিনের মোবাইল বেজে উঠলো । ফোন ধরে জানতে পারলো নিলয়ের জ্ঞান ফিরেছে।
মেরিন : আমি আসছি। সরি মিস্টার চৌধুরী। এখন আপনার সাথে ঝগড়া ঝগড়া খেলার ইচ্ছা আমার নেই…
বলেই মেরিন চলে গেলো।

.

কিছুক্ষন আগেই নিলয়ের জ্ঞান ফিরলো। আর শুনতে
পেলো : হ্যালো মিস্টার পাগল প্রেমিক…
নিলয় তাকিয়ে দেখে মেরিন দারিয়ে আছে ।
মেরিন : খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে তোর নিজেকে তাইনা? কারন এতোদিন পর জ্ঞান ফিরেছে। আর আমাকে দেখতে পেলি।। হাউ লাকি…
নিলয় : আআমি কিন্তু সততত্যিই তোমাকে ভালোবাসি…
মেরিন : হ্যা আমি জানিতো। খুব ভালোবাসিস।। তবে কি জানিস আমি তোর ভালোবাসার প্রতিদান দিতে পারছিনা… যেটার জন্য আমার বড্ড আফসোস হচ্ছে। খুব । তোকে প্রতিদান দিতে পারছিনা বলে। তবে ধৈর্য্যের ফল মিষ্টি হয়। তাই এতো অপেক্ষা। তবে মনে হয় অপেক্ষার পালা প্রায় শেষ। আমি তোকে প্রতিদান দিবো তোর ভালোবাসার… তোকে এই দুনিয়ার মোহমায়া থেকে মুক্তি দিবো… একটুখানি অপেক্ষা কর।

.

চলবে…

#ঘৃণার_মেরিন 4
part : 25
writer : Mohona

.

মেরিন : একটুখানি অপেক্ষা কর । আসছি।
বলেই মেরিন বেরিয়ে গেলো।

মেরিন জনকে ফোন করলো।
জন : স্যার মেরিন ম্যাম কল করেছে … কি করবো?
দাদুভাই : ধরো…
জন : ধরবো?
দাদুভাই : ধরো।
জন : হ্যালো ম্যাম…
মেরিন : ২১মিনিট সময় দিলাম নিরাকে নিয়ে শাস্তিমহলে পৌছাও। কোনো প্রশ্ন নয় …
জন : না ম্যাম প্রশ্ন করবো কেন। আমি আসছি…
মেরিন রেখে দিলো।

দাদুভাই : কি বলল?
জন : নিরাকে শাস্তিমহলে নিয়ে যেতে বলল ।
দাদুভাই : তাহলে আর দেরি কোরোনা… তারাতারি যাও।

.

নিরা বসে আছে। মুখোমুখি মেরিন পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে। হাতে করাত ।
সেই তখন থেকে নিরা পানিই খেয়ে যাচ্ছে ।

মেরিন : ২লিটার পানি খেয়ে নিয়েছিস। এবার কিছু বের করার পালা।
নিরা তো মনে করছে যে আজকে ও মরে যাবে।

মেরিন : পানি খাওয়া হয়েছে না আরো খাবি?
নিরা : …
মেরিন : কিছু জিজ্ঞেস করলাম তো.. বল আরো পানি লাগবে?
নিরা : না ।
মেরিন : গুড… এখন আমি তোকে কিছু প্রশ্ন করবো। তার ঠিকঠিক উত্তর দিবি। যদি একটুখানিও ভুল হয় তবে একেকদিন তোর শরীরের একেক অংশ কাটবো। কি যে ভয়ানক মৃত্যু দেবো তা আমি নিজেও জানিনা।
নিরা ১টা লম্বা ঢোক গিলল ।
মেরিন : সো যা বলার তা ভেবে বলবি…
নিরা : …

মেরিন : সেদিন তোর প্রেমিক তোর ওপর ক্ষেপলো কেন? তোকে মারলো কেন? কি হয়েছে…?
নিরা : …
মেরিন : যা বলবি ভেবে বলবি। সত্যি বলবি। ১পার্সেন্টও যদি মিথ্যা হয়… তাহলে… 😏…

নিরা : ….
মেরিন : বল…

নিরা : …
মেরিন ঝাড়ি মেরে
বলল : বল…

নিরা : নীড় জেনে গিয়েছে যে বনপাখি আমি না তুই…
মেরিন : হুয়াট?
নিরা : হামমম।
মেরিন : বনপাখি…? বনপাখির সাথে তোকে মারার কি সম্পর্ক ?
নিরা : …
মেরিন : এই জন… ঘটনা কি বলো তো? ভালোভাবে কেউ কোনো কথাই কেন শোনেনা বলো তো…
বলেই মেরিন নিরার ভাঙা হাত মুচরে ধরলো। নিরার জান তো যায়যায়…
নিরা : বলছি… বলছি..
মেরিন : দেখেছো জন… কি বললাম… বাট নিরা… ইউ নো হুয়াট? লেইট করার জন্য তোকে এভাবেই জবাব দিতে হবে… শুরু কর শুরু কর… আরো দেরি হলে কিন্তু ঝামেলা বারবে… বল বল বল…
নিরা : নীড় কখনোই আমাকে ভালোবাসেনি ।
মেরিন : তবে কাকে ভালোবেসেছে?
নিরা : তোকে। মানে ওর বনপাখিকে…
মেরিন নিরাকে ছেরে দিলো । চেয়ার নিয়ে পিছে চলে এলো।

মেরিন : মিস্টার চৌধুরী তোকে না বনপাখিকে ভালোবাসতে ইউ মিন বাসে … কুয়াইট ইন্টারেস্টিং। তোর স্টোরিটা ভালো লাগলো … যাহ নরমালি বল…

নিরা : নীড়ের বয়স যখন ৯কি ১০ বছর তখন ওর তোল সাথে দেখা হয়। আমাদের বাসার পাশের প্লে গ্রাউন্ডে …
মেরিন অনেকটা অবাক হলো।
নিরা : হয়তো তোর মনে নেই। কারন তুই তখন যথেষ্ট ছোট। ৪-৫বছর বয়স । তুই তোর মার সাথে যেতি রোজ বিকালে । তখন নীড়দের বাসা এখানেই ছিলো। তাই নীড় খেলতে আসতো। কোনো ভাবে তোর সাথে নীড়ের ফ্রেন্ডশীপ হয়। তখন ফ্রেন্ডশীপ এর কিছুই তুই না বুঝলেও নীড়ের কাছে ফ্রেন্ডশীপের মূল্য অনেক ছিলো। প্রায় বছর খানেকে মতো এমন ছিলো। তোর মা তোকে বনপাখি বলে ডাকতো। দীদা তোকে বন বন বলে ডাকতে। আর দাদুভাই তোকে দিদিভাই বলে ডাকতো। বাবা তো তোকে ডাকতোই না… তাই তুই মনে করতি তোর নাম বনপাখিই… আর তোর গলার লকেটটাতেও লেখা ছিলো বনপাখি। তাই নীড়ও ভাবে তোর নাম বনপাখি … তবে ১দিন নীড় জানতে পারে তোর অন্য ১টা নাম আছে। সেদিন তোর নাম জানার জন্য তোর আর তোর মার অপেক্ষা করে… কিন্তু সেদিনই দীদা মারা যায় তোর মায়ের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য । তাই ২-৩মাসের মতো তোর আর ওই প্লে গ্রাউন্ডে যাওয়া হয়নি। তবে প্রতিদিন নীড় প্লে গ্রাউন্ডে যেতো । এরপর নীড়রা উত্তরা শিফ্ট করে। কিন্তু ওর মনে আক্ষেপ যে বনপাখিকে দেখতে পারেনা । ধীরে ধীরে ও কৈশোর জীবনে পা রাখে। বনপাখি ওর বন্ধু থেকে ওর ভালোবাসা হয়ে যায়। ওর পাগলামো হয়ে যায় । ওর বয়স বারার সাথে সাথে ওর পাগলামো বেরে যায় । সাইকো হয়ে যায় ও। বড় প্রায়ই ওই প্লে গ্রাউন্ডে যেতো। বনপাখির আশায় । ইভেন এখনও যায়। তবে এখন যায় মন খারাপ থাকলে …

এটা মেরিন জানে যে নীড় মন খারাপ থাকলে ওখানে যায়। তবে কারনটা আজকে জানলো।

মেরিন : কিরে তোতাপাখি চুপ হয়ে গেলি কেন? বলতে থাক…

নিরা : বেশির ভাগ মেয়ের সাথে নীড় সোজা মুখে কথা বলতোনা । রুড বিহেভ করতো। নীড় তখন লন্ডনে হাইয়ার ডিগ্রি নিতে গিয়েছে। আর আমিও লন্ডন যায় পড়তে। ইষ্ট লন্ডনে যে বাংলাদেশি সোসাইটি আছে সেখানে নীড় থাকতো। আমিও থাকতাম। আমার বন্ধুরাও থাকতো। ওর- ওর পার্সোনালিটির প্রেমে পরে যাই। তবে বন্ধুরা বলে যে নীড় নাকি মেয়েদের ধারে কাছেও ঘেষতে দেয়না । আমি ওদের সাথে বাজি লাগি…
মেরিন : তুই মানতে পারিস নি না … যে তুই কোনো ছেলেকে পটাতে পারবিনা…
নিরা : …
মেরিন : ওকে বাকীটা বল…
নিরা : কি করবো কি করবো ভেবেই পাচ্ছিলামনা। ১দিন দেখলাম ১টা মেয়ে নীড়কে প্রপোজ করতেই নীড় ঠাস করে থাপ্পর মারলো। ভয়টা বেরে গেলো । গভীর রাতে বেলকনিতে দারিয়ে ছিলাম । তখন দেখলাম নীড়ের গাড়ি থামলো। ওর টলমল চলন দেখে বুঝে গেলাম যে ও ড্রিংকস করেছে। প্রচুর ড্রিংকস করেছে । গাড়ি থেকে বাসার দরজা পর্যন্ত যেতেই ২-৩বার পরে গিয়েছে। আমি ভাবলাম হয়তো মাতাল নীড়কে ফাসাতে পারবো। আমি ওর পিছে পিছে ওর বাসায় ঢুকে যাই । নীড় বাসায় একাই থাকতো। সার্ভেন্ট কেবল সকালো রান্না করে দিয়ে যেতো । তাই আমার ঢুকতে তেমন সমস্যা হয়নি। তবে মাতাল নীড়ের কাছে আমি বনপাখির কাহিনি জানতে পারি। কিছুটা ওর মুখে কিছুটা ওর ডায়রীতে। ব্যাস এরপর আমি ওরকাছে বনপাখি সেজে যাই। তোর লকেট । তোর মায়ের সাথে তোর ছবি নিজের কাছে আনিয়ে … মূল কথা আমি তুই হয়ে যাই । নীড়কে বোঝাই যে তোর মা আমার ছোটআম্মু … আম্মু না… তখন ছোট ছিলাম। তাই আম্মু আর ছোট আম্মুর মধ্যে পার্থক্য বুঝতামনা । ওকে এটাও বলি যে ছোটআম্মু কোথাও হারিয়ে গিয়েছে। কারন জানি তোর আম্মুকে তুই খান বাড়িতে ঢুকাবিনা। তোর আর আমার বয়সের পার্থক্য খুব বেশি না হওয়ায় আমার তেমন সমস্যা হয়নি। কিন্তু তখন বুঝিনি যে তুই নীড়ে আটকে যাবি…. সেদিন জানিনা কিভাবে নীড় সব সত্যটা জেনে যায়। আর …

.

সবশুনে মেরিন ৩বার তালি দিলো।
মেরিন : হুয়াট অ্যা স্টোরি …হুয়াট অ্যা স্টোরি… ফাটাফাটি…
নিরা : আমি সব সত্যি সত্যিই বলেছিরে।
মেরিন : তুই সত্যি বলেছিস না কি মিথ্যা সেটা তো আমি জেনেই যাবো। জন ওকে কাউকে দিয়ে বাসায় পাঠানোর ব্যাবস্থা করো। উইথ ডিউ রেসপেক্ট ।
জন : জী ম্যাম …
নিরা : নননা আমি যাবেনা । আমি ক্ষমা করে দে। দেখ আমি তো সব সত্যি সত্যি বলেছি… আমি জানি তুই গাড়িসহ আমাকে উরিয়ে দিবি।
মেরিন : আরে না নাহ… অমন করে আমি মারিনা…
মেরিন গানটা নীড়ের বুকে ঠেকিয়ে
বলল : মারতে হলে আমি এখানে গুলি করে মারি… জন…

জন নিরাকে বাসায় পাঠিয়ে দিলো।

মেরিন : খেলাটা… ঘুরে গেলো।
জন : ম্যাম নিরাকে কি এখনই মেরে ফেলবেন?
মেরিন : আহা। এখনই মারবোনা। এতো তারাহুরা কিসের। আগে তো ওকে নীড়ের বউ বানাবো… ও নীড়ের সাথে সংসার করবে। তারপর মারবো।
জন : মানে ম্যাম?
মেরিন : খুব সহজ… আমি নীড়-নিরার বিয়ে দিবো। নিরার খুব শখ নীড়ের বউ হওয়ার… আর নীড়েরও শখ বনপাখিকে বিয়ে করার। আমি ২জন প্রেমীকে মিলাতে তাই… নীড়কে বনপাখির সাথে মিলাতে চাই…
জন : ম্যাম বনপাখি তো আপনি…
মেরিন : নাহ… নীড়ের জন্য নিরাই বনপাখি…
জন : স্যার তো সবটা জেনে গিয়েছে ।
মেরিন : হামমম। তাইতো নীড়কে বনপাখি দিবো।

.

মেরিন বাসায় পৌছালো। রুমে ঢুকে অবাক হয়ে গেলো। কারন সারারুম ফুল দিয়ে সাজানো …

নীড় : কেমন লাগলো আমার সারপ্রাইজ মিসেস অতৃপ্ত আত্মা? আজকে ইচ্ছা হলো তোমার সাথে বাসর করবো। অপূর্ন রয়ে গিয়েছিলোনা আমাদের বাসরটা… তাই আজকে নিজের হাতে সাজালাম।
মেরিন : …
নীড় ১টা লালশাড়ি নিয়ে মেরিনের মুখোমুখি দারালো।
নীড় : শাড়ি তো তুমি পরবেনা। তাই আমিই তোমাকে পরিয়ে দিবো…
মেরিন : আজকে আমি অনেক খুশি… তাই শাড়িটা আমি নিজেই পরবো… আর আগুন জ্বালিয়ে দিবো…
নীড় : আগুন?
মেরিন : হামমম। আপনার মনে… বাই দ্যা ওয়ে শুধু কি শাড়িই এনেছেন? আর কোনো অর্নামেন্টস নেই ?
নীড় খানিকটা অবাক হলো…
মেরিন : কি হলো? কিছু বলছেন না যে?
নীড় কিছুনা বলে আরো ১টা ব্যাগ দিলো। মেরিন দেখলো তাতে হালকা পাতলা জুয়েলারি আর টুকটাক কসমেটিকস আছে … মেরিন বাকা হাসি দিলো।
মেরিন : আমি ওয়াশরুম থেকে রেডি হয়ে আসছি।
নীড় : ওকে… বাট পালানোর চেষ্টা কোরোনা…
মেরিন : মেরিন পালায়না। তবে হ্যা ১টা ফেভার করতে হবে আমাকে….
নীড় : কি?
মেরিন : যখন বলবো তখন থেকে ৫মিনিট চোখ বন্ধ করে রাখতে হবে। অবশ্য আপনি বুঝেই যাবেন কখন চোখ খুলতে হবে।
নীড় : 😒।
মেরিন : কি হলো? এতোটুকু করবেননা।
নীড় : ভরসা হচ্ছেনা। কিছু ১টা করবে জানি।।
মেরিন : পালাবোনা বললাম তো। আজকে আপনি আমাকে চান তো ? বেশ আমি রাজি। তবে তারজন্য এতোটুকু তো করতেই হবে । বলুন…
নীড় : ওকে…
মেরিন : প্রমিস?
নীড় : প্রমিস…
মেরিন : গুডবয়….

.

একটুপর…
মেরিন ওয়াশরুম থেকে
বলল : শুনছেন?
নীড় : হ্যা বলো।
মেরিন : চোখ বন্ধ করুন।
নীড় : এখন?
মেরিন : হামম।
নীড় : ওকে।
নীড় চোখ বন্ধ করলো। মেরিন খুব নিরবে বেরিয়ে এলো। এরপর ওয়াইনের বোতলটা নিয়ে বেডের চারদিকে ছরিয়ে দিয়ে কিছুটা বেডের ওপরও ছরিয়ে দিলো। এরপর দিয়াশলাই দিয়ে আগুন লাগিয়ে দিলো।

নীড় চোখ মেলল। দেখলো আগুন জ্বলছে।
মেরিন : সি… আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছি…
দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে । তবে আগুনের এই লাল আভায় লাল রঙের শাড়িতে মেরিনকে অপরূপ সুন্দর লাগছে। অগ্নিকন্যা লাগছে।

নীড় ১বার ঘড়ির দিকে তাকালো। দেখলো ১২টা বাজে। ও মেরিনের দিকে এগিয়ে গেলো। মেরিনের কোমড় জরিয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
নীড় : তুমি যদি চাও তবে আজকে না হয় আগুনের বাসরই করবো… হ্যাপী বার্থডে ইউ এন্ড মি…
বলেই মেরিনের ঠোট জোরা দখল করে নিলো। মেরিন অবাক হলো। আজকে তো ওর মনেই ছিলোনা জন্মদিনের কথা…

নীড়ের ভালোবাসায় হুট করে ওর সেদিনের কথা মনে পরে গেলো। ধাক্কা দিয়ে নীড়কে সরিয়ে দিলো।
মেরিন : নিজের লিমিটে থাকবেন।
নীড় : তুমিই আমার লিমিট… তুমি বন্যা হলে বর্ষন.. আমি যখন বলেছি যে আজকে বাসর করবো তখন তো করবোই…
মেরিন : যেন সকাল হতেই ট্যাগ লাগিয়ে দিতে পারেন যে আমি প্র…
নীড় মেরিনের ঠোটজোরা দখল করে নিলো…

.

সকালে…
নীড় সোফায় ঘুমিয়ে আছে… মেরিন নীড়ের বুক থেকে উঠে এসে ছাইগুলো বার বার হাতে নিচ্ছে আর হাত খানিকটা ওপরে তুলে ছেরে দিচ্ছে। বেশ ভালো লাগছে এই খেলাটা খেলতে…
মেরিন : ভুল করতে মেরিন পছন্দ করেনা… তবুও দুর্ভাগ্যবশত রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ তো… তাই ভুল হয়েই যায়। কিন্তু মেরিন ১ভুল ২বার করেনা। আর যদি একই ভুল দ্বিতীয়বার করে… তবে তার পিছে কোনো না কোনো কারন থাকে। গতরাতে যা হয়েছে না তো সেটা ভুল… আর না তো সেটা আবেগ.. আপনি মনে করেছেন আপনি জোর খাটিয়েছেন… নো মিস্টার চৌধুরী নো… জোর খাটানোরে সুযোগ পেয়েছেন কারন আমি আপনাকে সুযোগটা দিয়েছি … মেরিন কারো কাছে ঋণ থাকেনা। আপনার কাছে কি করে থাকবে? কিছু অপবাদ ফেরত দেয়ার আছে যে… হামমম… অপবাদ… ধর্ষক অপবাদ…

একটুপর নীড়ের ঘুম ভাংলো। দেখে মেরিন ড্রেসি টেবিলের সামনে বসে রেডি হচ্ছে। অবাক হলো। কারন মেরিন শাড়ি পরা। সাদা রঙের।

নীড় : গুড মর্নিং আত্মা বউ…
মেরিন সারা দিলোনা।
নীড় : ওহ সরি ‘অতৃপ্ত’ ওয়ার্ডটা মিসিং গিয়েছে । গুড মর্নিং অতৃপ্ত আত্মা বউ। এন্ড হ্যাপী বার্থডে অলসো।
মেরিন : …

নীড় উঠে গিয়ে মেরিনকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো।

নীড় : হ্যাপী বার্থডে…
মেরিন যেন এতোটুকুরই অপেক্ষায় ছিলো। মেরিন দুম করে উঠে দারিয়ে নীড়কে ঠাস করে থাপ্পর মারলো। নীড় অবাক হয়ে মেরিনের দিকে তাকালো।
নীড় : তু…
মেরিন : আরো ১টা থাপ্পর মারলো ।
নীড় : …

মেরিন : আর কি চান আপনি? উদ্দেশ্য তো হাসিল করেছেনই আপনি। আর কি চান ? বলুন … আর কি চান ? আপনি যে কাজটা গতরাতে করেছেন সেটাকে কি বলে জানেন? রেপ… হামম সেটাকে রেপ বলে। ইউ আর অ্যা রেপিস্ট …

বলেই মেরিন বেরিয়ে গেলো । আর থাকা সম্ভবনা। বহুকষ্টে কথাগুলো বলেছে। হয়তো আরো একটু থাকলে কেদেই দিবে…

এতোদিন নীড় অনুতপ্ত ছিলো। কিন্তু আজকে নীড় বুঝতে পারছে যে সেদিন মেরিনের কেমন লেগেছিলো। ও যে ছেলে মানুষ তবুও মেরিনের কথাগুলো শুনে ওর চোখের কোনে পানি চলে এলো।

.

বিকালে…
মেরিন ওর নানুবাড়ি গেলো। যেখানে ওর মা আছে। মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। আর কল্পনা করছে নীড়ের সেই করুন-অসহায় দৃষ্টি…
যেই নীড়কে এতো ভালোবেসেছে সেই নীড়কে ও কি করে আঘাত করলো? কি করে থাপ্পর মারলো? কি করে? নীড় অনেক ভুল করেছে। অনেক… কিন্তু তবুও… আজকে তো নীড়ের জন্মদিন… আর জন্মদিনের দিন ও নীড়ের সাথে এমনটা করলো?

নীড় : থাপ্পর মেরে যখন কষ্টই পাবে তখন থাপ্পর মারলে কেন?
মেরিন মাথা তুলে দেখে নীড় দারিয়ে দারিয়ে কফি খাচ্ছে।

মেরিন : আপনি? আপনি এখানে কি করে এলেন?
নীড় : অতৃপ্ত আত্মার পাগল চৌধুরী আমি… একটু তো আত্মাগিরি করতেই হবে…
মেরিন : …
নীড় : বাই দ্যা ওয়ে… এটা কিন্তু আমার বেস্ট বার্থডে গিফ্ট এভার…
মেরিন : …
নীড় : ভাবা যায়… বউয়ের কাছে রেপিস্ট ট্যাগ পেলাম। ফিলিং প্রাউড ইউ নো…
মেরিন : 😒

.

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here