#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে_২
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-২
অসভ্যতা করার আর কোন জায়গা পেলেনা!পাবলিক প্লেসে কেউ অসভ্যতা করে। শেহরোজের কথা শুনে পেছন৷ না তাকিয়ে শেহনাজ বলে, তাতে তোর কি-বে?কথাটা বলেই সামনে ঘুরে বলে স্যার আপনি!
– তোমার মত মেয়েদের কাছ থেকে এর বেশি কিছু এক্সপেক্ট করা যায় না। ক্যারি অন। বলেই বিল পে করে বেরিয়ে পরলো।
মিলি এসে বলে, তোর আর প্রেম হবে নারে শেহনাজ। তোর আর প্রেম হবে না।
– আমার ওই এটিটিউডের বস্তাকে চাই মানে চাই। না পেলে কিডন্যাপ করবো।আসছে ভাষণ দিতে অস্যভতা করার জন্য আর কোন জায়গা পেলেনা। চান্দু তুমি বেশি সভ্য তাই তোমার বউ অসভ্য হবে।দারুণ কম্বিনেশন। জমে একদম আইসক্রিম।
নীল বলে,মেয়াটা পাগল হয়েছে।
-পাগল হয়েছি আমি স্যারের প্রেমে, সে কথা ছড়িয়ে দে তোরা শহর জুড়ে।
সবাই একসাথে হেসে উঠলো। বইন এইবার তোর নট্যাংকি বাদ দে চল খেয়ে বাসায় চলে চাই।
– নীল বললো, একে আমার স্যার মনে হয় না। কোন ঘাপলা আছে মনে হচ্ছে।
– তোর তো সব জিনিসেই ঘাপলা মনে হয়। বাদ দে ছা’গ’ল
– শেহনাজের বাচ্চি আমি সত্যি কইতাছি আমার হপায় মনে পরছে স্যারকে আমি হৃদয় ভাইয়ার ইউনিভার্সিটিতে দেখেছিলাম। মাস ছ’য়েক আগে।
– তুই প্রমাণ কর। তারপর তোর কথা বিশ্বাস করবো।তার আগে চুপচাপ খাবার শেষ কর।
খাবার শেষ করে শেহনাজ বাসায় না ফিরে সোজা চলে গেলো এতিমখানায় এখানে এস বাচ্চাদের সাথে হৈ হুল্লোড় করাই হলো শেহনাজের অবসর সময়ের কাজ।
______________________________________________
শেহরোজের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলে,এমন উগ্র মেয়ে জীবনে দেখেনি। শেহরোজ নিজের পার্সোনাল কাজ করে বাসায় চলে আসলো।
মিহি সেই কখন থেকে বসে আছে, শেহরোজ আসতেই মিহি বলে,কিরে এতো দেরি করে ফিরলি যে?
-আম্মু আমি বাচ্চা ছেলে নাকি আমার বয়সপঁচিশ বছর।আর তুমি তিন ঘন্টা দেরি করে ফেরার জন্য বকা দিচ্ছ।
মিহা নিজের রুম থেকে বের হতে হতে বলে, আসছে আমার বড় মানুষ। বিয়ে কর আগে তারপর বলব তুমি বড় এর আগে কোন বড় টর না।
-তোকে কে পাঁকামো করতে বলেছে আমি আম্মুর সাথে কথা বলছি তোর সাথে না।
– আম্মু তোমার ছেলেকে বুঝিয়ে বলে দাও পরিবারের ছোট মেয়ে হলো পরিবারের কর্তা তার কথা মানেই সঠিক কথা। আর ভার্সিটিতে কি যে তুমি ক্লাস কর জানা আছে।
– তবে- রে তোর কর্তাগিরি বেড় করছি।
– এতে হুমকি ধমকি দিয়ে লাভ নেই। ওইদিন তোমার ভার্সিটিতে গেলাম সেখানে যেয়ে জানতে পারলাম।
শেহরোজ উঠে এসে মিহার মুখ চেপে ধরে বলে, তুই যে পড়া লেখা বাদ দিয়ে সারাদিন ফেসবুকে গল্প পড়িস সেটা কি আমি বলবো?
– আরেহহ আমি তো মজা করছিলাম শেহরোজ মিহার কান টেনে বলে আর করবি এমন মজা?
– আম্মু তোমার ছেলেকে কিছু বলো।
– থাম তোরা দু’জনে কি শুরু করলি। শেহরোজ তুই ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়। মিহা যাও নিজের রুমে যাও পড়তে বসো।
মিহা রুমে এসেই কল করলো লেখক মহাশয় কে।
মিহার নামটা দেখে মুচকি হেসে কল রিসিভ করলো ওপাশ থেকে। আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো বাসন্তী পরি?
– ওয়া আলাইকুমুস সালাম। এইতো আছি।
দু’জনেই চুপ। প্রতিদিন এমন হয় এই দুই শব্দ বলে দু’জনেই চুপ করে থাকে তারপর মিহা কল কেটে দেয়।
কল কেটে নিজের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বলে,কবে আসবেন আমার সামনে লেখক মহাশয়!
______________________________________________
ইশরাক চেয়েরা বসে শাফিনের দিকে তাকিয়ে বলে,আপনি যা জানেন আমিও তাই জানি। তবে আহসান ইন্ডাস্ট্রির সম্পূর্ণ মালিক আমার বাবা ইকবাল আহসান ছিলেন। কিন্তু দু’বছর আগে হঠাৎ করে ইমদাদ আহসানের আবির্ভাব ঘটে। এবং আমাদের কোম্পানি পঁচিশ পার্সেন্ট শেয়ার তার নামে করে দেয় বাবা।
– লোকটা তোমার চাচা হবে হয়তো?
– আমি ছোট থেকে জানি আমার বাবার কোন ভাই নেই তার শুধু একটা বোন আছে। কিন্তু হঠাৎ এই চাচা কোথা থেকে উদয় হলো?
-তোমার মা’কে এবিষয়ে জিজ্ঞেস করেছো?
– আমার মা বারবারই চুপচাপ স্বাভের মানুষ। সে কিছুই বলেনি।
– তোমার বাবার অবৈধ ব্যবসা ছিলো। আর তার প্রমাণ আমার হাতে এসেছে।কিন্তু কথা হলো তার মতো একজন স্বনামধন্য বিজনেসম্যান এসব কেন শুরু করেছিলেন। আর কাজটা ইকবাল শুরু করছিল বছর খানিক আগে। তারমানে এর পিছনে হয়তো তোমার চাচার হাত আছে?
– থাকতে পারে। আঙ্কেল লোকটা একদম সুবিধের না। দেখতেই কেমন নে’শা খোড় মনে হয়।
– আজ তাহলে উঠি তুমি আমাকে ইমদাদ আহসান ওর ঠিকানা দাও। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
শাফিনের কনফিডেন্স দেখে ইশরাক অবাক না হয়ে পারেনা। এই বয়সেও কত স্ট্রং আর কাজের হাত কত ভালে।
শাফিন বাসায় ফিরে আসছে, কিন্তু বাসায় যাওয়ার তার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে নেই। ড্রাইভারের পাশের সিটে হেলান দিয়ে আনমনা হয়ে বসে আছে। শেষ বয়সে এরকম বাজে একটা বিষয় সামনে আসতে হলো!কিভাবে মেনে নেবে তার মিহি তাকে ঠকাচ্ছে! আর শেহরোজ কি সত্যি আমার ছেলে না।
মিহি বারান্দার রেলিং ঘেসে দাঁড়িয়ে রাস্তার পানে তাকিয়ে আছে।বয়স বাড়ার সাথে সাথে ভালোবাসাটাও যেনো বেড়ে যায়। এই যে এতো অপমান লাঞ্চনা সহ্য করার পরেরও মানুষটার ফেরার অপেক্ষায় চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে। এই ভালোবাসা কি শাফিন বুঝবে না?
রাত গভীর হচ্ছে শাফিনের গাড়ি সবে বাড়িতে ঢুকছে। মিহি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। বাসায় প্রবেশ করে মিহিকে দেখেই শাফিন আর নিজের রাগ সামলাতে পারলোনা। স্ব জড়ো একটা চড় বসিয়ে দিলো।
মিহি ছিটকে কিছুটা দূরে সরে পরলো।পরে যাওয়ার আগেই শেহরোজ মিহিকে আগলে নিয়ে বলে,বাবা আমি কিন্তু এসব বরদাস্ত করবো না।
শাফিন কোন কথা না বলে, নিজের রুমে চলে গেলো।
শেহরোজ নিজের মাকে নিয়ে ধরে সোফায় বসালো। এক গ্লাস পানি এনে মায়ের সামনে দিলো।
মিহি পানি পান করলো।
– দেখে আমি এখন ছোট বাচ্চা না আজ বাদে কাল আমার গ্রাজুয়েশন কম্পিলিট হবে। তাই আমি জানতে চাই এসবের মানে কি? আজ কয়েকদিন যাবত এসব আমি নোটিশ করছি। তোমরা কিছু না বললে, আমি আর মিহা বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।
– তুই রুমে যা বড়দের মাঝে তোর কিসের কথা?
– আম্মু আমি এখন আর ছোট নেই।
– হ্যাঁ একটু বেশি বড় হয়ে গিয়েছিস তাইতো মুখে মুখে প্রশ্ন করছিস।
শেহরোজ উঠি চলে গেলো। কিছু বলার নেই তার। তবে সে তো দমে যাওয়ার ছেলে নয়। এই কারণ তো সে বের করেই ছাড়বে।
মিহি রুমে আসল শাফিন দু’ হাতে মাথা ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।
মিহি ধীর পায়ে শাফিনের পাশে এসে শাফিন পায়ের কাছে বসলো। শাফিনের হাঁটুর উপর হাত রেখে বলে,এতো চিন্তা করলে তোমার পেশার ফল্ট করবে।
শাফিন মাথা তুলে কিছুটা ঝুকে মিহির চিবুক ধরে উপরে তুলে বলে,আমার জন্য এতো ভালোবাসা!ঈশানের সাথে ওইসব কারার সময় আমার কথা মনে পরেনি?
– তুমি ভুল ভাবছো। ঈশানকে আমি কখনো ওই চোখে দেখিনি।
-কেন করলে এমন? শেহরোজ আমার ছেলে না তাই না।
– বিশ্বাস কর শেহরোজ তোমার আমার ভালোবাসার প্রথম চিহ্ন। এটাই সত্য।
এবার শাফিন নিচে নেমে মিহিকে জড়িয়ে ধরে বলে,আমি কেন বিশ্বাস করতে পারছিনা। কেন মনে হচ্ছে তুমি মিথ্যে বলছো। কেন কেন?
শাফিন মিহিকে সরিয়ে দিয়ে বলে ডিভোর্স পেপারটা কই সেটা আমি চাই এক্ষুণি।
আলমারি থেকে কাগজ বের করে শাফিনের হাতে দিলো।
শাফিনের হার্টে সমস্যা আছে। এতো উত্তেজিত হতে ডাক্তার বারণ করেছে। মিহি শাফিনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,তুমি কিন্তু ভুল করছো। এখন আর সেই পাগলামি করার বয়স নেই। আমাদের দু’টো সন্তান আছে তাদের কথা তো ভাববে?
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰