গোধূলি লগ্নে হলো দেখা পর্ব ৪

0
123

#গোধূলি_লগ্নে_হলো_দেখা
#Part_4
#ইয়াসমিন_খন্দকার

“তোর ইটালি যাওয়ার ভিসা হয়ে গেছে মান্যতা। খুব শীঘ্রই তুই ইটালিতে যেতে পারবি।”

নিজের মায়ের মুখে এমন কথা শুনে আহ্লাদে আটখানা হয়ে গেল মান্যতা। অবশেষে কয়েক মাস অপেক্ষার পর তার কাঙ্ক্ষিত দিনটি এলো। কয়েক মাস আগে অনুরাগকে ইটালিতে ফিরে যাবার আগেই মান্যতার পাসপোর্ট ভিসার ব্যবস্থা করে দিয়ে গেছিল। পাসপোর্ট কিছুদিন আগেই পেয়ে গেছিল সে আজ ভিসাও হয়ে গেল। এবার নিশ্চিতে ভিনচেঞ্জোর দেশে যেতে পারবে মান্যতা। এটা ভাবতেও তার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে মনে।

মান্যতা মনে মনে বিড়বিড় করে বলতে লাগল,”আর মাত্র কিছুদিনের অপেক্ষা ভিনচেঞ্জো। তারপর আমি তোমার দেখা পাবো।”

মান্যতার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটল নোটিফকেশনের টুংটাং আওয়াজে। রাসেল তাকে ম্যাসেজ দিয়েছে। মান্যতা ম্যাসেজ চেক করে দেখে রাসেল লিখেছে,”তোকে একটা খুশির খবর দেওয়ার ছিল।”

“আমারও তোকে একটা খুশির খবর দেওয়ার ছিল রাসেল।”

“ঠিক আছে, আগে তুই বল।”

“আমি ইটালির ভিসা পেয়ে গেছি। এখন জাস্ট প্লেনে চড়ে উড়াল দেওয়া বাকি।”

“বাহ, তাহলে তো ভালোই। পরশু তাহলে তুই ভিনচেঞ্জোর কনসার্টটা দেখতে পারবি।”

“ভিনচেঞ্জোর কনসার্ট?”

“কেন জানিস না? তুই কি আদৌ নিউজ পোর্টাল বা ফ্যান গ্রুপ গুলোতে চেক করিস জীবনে?”

“না রে। তুই তো জানিস আমি ফোনে শুধু ইউটিউবে গিয়ে ভিনচেঞ্জোর গান শুনি আর নাহলে ম্যাসেঞ্জারে টুকটাক চ্যাটিং।”

“হুম। তো যাইহোক, তুই তো তাহলে ভালোই সুযোগ পেয়ে গেলি।”

“ঠিক বলেছিস, এখন এই সুযোগকেই কাজে লাগাতে হবে।”

~~~~
মহিউদ্দিন বসার ঘরে বসে টিভি দেখছিলে। একটু দূরে বসেই কাঁথা সেলাই করছিলেন রাহেলা বেগম। এমন সময় মান্যতা এসে বলল,”আব্বু, আম্মু তোমাদের কিছু বলার ছিল।”

“হ্যাঁ, বল।”

বলে উঠলেন মহিউদ্দিন। মান্যতা বলল,”তোমরা দ্রুত আমার জন্য প্লেনের টিকিটের ব্যবস্থা করো। আমি কালই ইটালির জন্য রওনা দিতে চাই।”

মহিউদ্দিন অবাক হয়ে বললেন,”কাল? এত তাড়াহুড়ো কেন? আজই তো তুই ভিসা হাতে পেলি। আর ক’টা দিন অপেক্ষা কর। আমি তোর খালার সাথে কথা বলি।”

“ওহ, আব্বু। তুমি বুঝছ না কেন? শুভ কাজে একদম দেরি করতে নেই।”

রাহেলা বেগম বলে ওঠেন,”ও তো ঠিকই বলছে। শুভ কাজে তো দেরি করতে নেই। তুমি ওর যাওয়ার ব্যবস্থা করে দাও। আমাদের পাসপোর্ট, ভিসা হতে তো কিছুদিন সময় লাগবে। ও নাহয় ততদিন ঐ দেশটা একটু ঘুরে দেখুক। কারণ এরপর তো ওকে ওখানেই থাকতে হবে।”

“কিন্তু ওকে একা আমি কিভাবে ভিনদেশে পাঠাতে পারি? মেয়েটা তো অনেক ছোট।”

“ছোট কই? ওর তো ১৮ বছর হয়েই গেছে। ও ঠিক সব সামলে নেবে। তাছাড়া ওখানে আপু আছে তো। আমি জানি আপু ওকে নিজের মেয়ের মতোই আগলে রাখবে।”

“তারপরেও…”

“শোনো মান্যতার বাবা, মান্যতা যখন যেতে চাইছে তখন তুমি এত আপত্তি করছ কেন? আমি আপুর সাথে কথা বলছি। আপু অনুরাগকে পাঠিয়ে দেবে বিমানবন্দরে মান্যতাকে রিসিভ করার জন্য। তুমি দেখো তো অনলাইনে প্লেনের টিকিট বুক করা যায় কিনা। আর মান্যতা তুই যা নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখ। কালকের ফ্লাইটেই তুই ইটালিতে যাবি।”

মান্যতা খুশি হয়ে নিজের রুমে চলে আসে। তারপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে নাচতে শুরু করে দেয়। রেডিওতে ছেড়ে দেয় ভিনচেঞ্জোর গাওয়া একটি গান। মান্যতা নাচতে নাচতে বলে,”আমি আসছি ভিনচেঞ্জো। তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো।”

~~~~~~
মান্যতাকে নিয়ে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছে তার বাবা মহিউদ্দিন। আর কিছুক্ষণ পরেই মান্যতার ফ্লাইট। এখন চলছে চেকিং। মান্যতার হৃদস্পন্দন আজ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। যতবারই সে ভাবছে এবার হয়তো সামনাসামনি ভিনচেঞ্জোর দেখা পাবে ততোবারই তার মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। মান্যতা শুধু অপেক্ষার প্রহর গুণে চলেছে। অবশেষে সেই সময় এলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ফ্লাইট। সে একটু পরেই প্লেনে আরোহন করবে। এমন সময় মহিউদ্দিন তাকে বলে দিল,”সাবধানে থাকবি কিন্তু ওখানে গিয়ে নিজের খালা-খালুর কথা শুনে চলবে। ওখানে কিন্তু সবকিছু তোর অচেনা। তাই একা একা কোথাও যাস না। প্রতিদিন বাসায় ফোন করে কথা বলবি৷ আমরা কিন্তু চিন্তা করবো।”

“ঠিক আছে, বাবা। তোমাকে এত চিন্তা করতে হবে না। আমি সব সামলে নেব। বাই বাই। টেক কেয়ার।”

“সাবধানে যাস।”

~~~~~
দীর্ঘ কয়েক ঘন্টার ফ্লাইটের জার্নির পর অবশেষে ইটালির মাটিতে পা রাখল মান্যতা। ইটালিতে পৌঁছে গিয়ে তার আনন্দের আর শেষ থাকল না৷ মান্যতা প্লেন থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে অনুরাগকে খুঁজতে লাগল। কিন্তু তার কোন দেখাই পেলো না। মান্যতার একটু একটু ভয় করতে লাগল। হঠাৎ করেই কেউ মান্যতাকে স্পর্শ করল। মান্যতা ভয়ে পিছনে ফিরে তাকাতেই সে বলে উঠল,”ওয়েলকাম টু ইটালি। সুইটহার্ট।”

“মিস্টার অনুরাগ?”

“হুম, আমিই। কেন চিনতে পারছ না?”

“সেটা নয়। আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম।”

“থাক, আর ভয় পেতে হবে না। চলো এসো আমার সাথে।”

অনুরাগকে অনুসরণ করে চলতে লাগল মান্যতা। হঠাৎ করেই তার সাথে একটা লোকের ধাক্কা লাগায় লোকটি বলে উঠল,”Scusa.”

বলেই চলে গেল। মান্যতা অনুরাগকে বললো,”আচ্ছা লোকটা আমাকে Scusa বলল কেন? এটা কি কোন গালি নাকি? ভুল করে তো একটু ধাক্কাই খেয়েছি সেইজন্য গালি দিতে হবে। দাঁড়ান আমি লোকটাকে দেখে নিচ্ছি। বাংলায় এমন সব গালি দিব যে…”

“আরে কাম ডাউন। উনি কোন গালি দেননি। ইটালিয়ান ভাষায় Scusa মানে হচ্ছে sorry বা দুঃখিত।”

“ওহ।”

“এইরকম আরো কিছু বেসিক ওয়ার্ড আছে যা তোমায় জানতে হবে। যেমন Grazie মানে ধন্যবাদ, Buongiorno মানে শুভ সকাল, Ti Amo মানে…”

বলেই মুগ্ধ চোখে মান্যতার দিকে দেখতে লাগল অনুরাগ। মান্যতা বলল,”কি হলো থেমে গেলেন কেন? বলুন তিয়ামো মানে কি?”

“বলব তার আগে তুমি আমায় বলো, তি আমো।”

“এর মানেটা তো আগে জানতে হবে।”

“তুমি আমায় বলো তাহলেই জানবা।”

“তি আমো।”

“আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

“কি?”

“এটার মানে।”

মান্যতা মনে মনে বললো,”এই কথাটা তো তাহলে আমি আমার ভিনচেঞ্জোকেই বলবো। তি আমো বলেই তাকে প্রপোজ করব। আমি শুধু ভিনচেঞ্জোকেই ভালোবাসি মিস্টার অনুরাগ। জানি আমি হয়তোবা শুধু মাত্র নিজের স্বার্থে আপনার ফিলিং নিয়ে খেলছি তবে এছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই। কারণ everything is fare in love and war.”

~~~
ইটালিতে মান্যতার দ্বিতীয় দিন। আজ মান্যতা বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে। কারণ আজ রাতেই রোমে ভিনচেঞ্জোর কনসার্ট। সৌভাগ্যবশত অনুরাগরাও রোমের বাসিন্দা। অনুরাগ মান্যতার রুমে এসে বললো,”মান্যতা, তুমি কি রোম ঘুরে দেখতে চাও?”

মান্যতার তো এসব ঘোরাঘুরি নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। সে তো এখানে এসেছে ভিনচেঞ্জোর জন্য। তাই সে বলে,”আমি রোমে ঘুরতে চাই না। আপনি আমার জাস্ট একটা উপকার করে দিন আমায় ভিনচেঞ্জোর কনসার্টের টিকিট এনে দিন। আসলে আমি ভিনচেঞ্জোর অনেক বড় ফ্যান। আজ প্রথমবার উনি সামনাসামনি কনসার্ট করবেন।”

“ভিনচেঞ্জোর কনসার্ট?? বাট সেটার সব টিকিট তো মনে হয়ে সেল হয়ে গেছে।”

“আপনি একটু দেখুন না যদি ব্যবস্থা করতে পারেন কিনা?”

“আচ্ছা, দেখছি।”

বলেই অনুরাগ বাইরে এসে কাউকে ফোন করল। তারপর আবার রুমে গিয়ে মান্যতাকে বলল,”টিকিটের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। চিন্তা করো না তুমি কনসার্ট দেখতে পারবা।”

“আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।”

~~~~~
রাতে মান্যতা গেল অনুরাগের রুমে তাকে ডাকতে। গিয়ে দেখল অনুরাগের রুমে গিটারসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র। অনুরাগ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মান্যতাকে দেখে বললো,”আপনি রেডি তো?”

“হুম। আচ্ছা, আপনার ঘরে তো অনেক মিউজিক ওর্নামেটস দেখছি। আপনি কি গান করেন?”

“টুকটাক।”

“ওহ।”

“তাহলে চলা যাক।”

“হুম।”

~~~~
ভিনচেঞ্জোর কনসার্টে এসেছে লাখ লাখ মানুষ। তাদের হাতে রয়েছে অসংখ্যা প্ল্যাকার্ড। অনেক মেয়েরাই চিৎকার করে বলছে “তি আমো ভিনচেঞ্জো।”

“এসব দেখে মান্যতা তেলে বেগুনে জ্বলে যাচ্ছে। তার ভিনচেঞ্জোকে কেন অন্য মেয়েরা ভালোবাসবে?”

অনুরাগ মান্যতার পাশেই ছিল। হঠাৎ করে অনুরাগের ফোনে একটা কল আসে৷ অনুরাগ খুবই নিচু সুরে কথা বলে৷ তারপর মান্যতাকে বলে,”তুমি এখানেই থেকো। আমার কিছু জরুরি কাজ আছে। আমি আসছি। কোথাও যেওনা কিন্তু? আর আমার ফোন নাম্বার তো আছেই। কল দিও।”

“আচ্ছা।”

অনুরাগ চলে যায়৷ অনুরাগ যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই স্টেজে এসে উপস্থিত হয় ভিনচেঞ্জো। লক্ষ্য লক্ষ্য জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। সবার হই হুল্লোড় বেড়ে যায়। সবাই ভেবেছিল আজ ভিনচেঞ্জোকে সামনাসামনি দেখতে পারবে। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে সে এসেছে মাস্ক পড়ে। লক্ষ্য লক্ষ্য তরুণী আশাহত হলো।

to be continue

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here