“আমার বয়স এখনো ১৮ হয়নি তাই আপনি আমাকে বিয়ে করতে পারেন না মিস্টার.. হোয়াট এভার।”
মান্যতার মুখে এহেন কথা শুনে ফিচেল হাসল অনুরাগ। নিজের টাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে চোখ মে’রে বলল,”আমি তো তোমাকে এখনই বিয়ে করতে চাইনি সুইটহার্ট। আমি তো অপেক্ষা করতে রাজি আছি। তোমার বয়স ১৮ হলেই আমি তোমাকে বিয়ে করব। আমি এটাও জানি তোমার বয়স ১৭ বছর ১১ মাস ১৩ দিন। সুতরাং আর মাত্র ১৭ দিন পেরোলেই আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব।”
মান্যতা দমল না। সে বলল,”আমি আপনাকে বিয়ে করব না।”
“কেন সুইটহার্ট আমি কি খুব খারাপ?”
“আপনি বুড়ো। আপনার বয়স ২৫+ আর আমি ১৭ বছরের একটা নাদান মেয়ে। আমি আমার বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করবো।”
“তোমার বয়ফ্রেন্ডের বয়স কত?”
“১৯ বছর বয়স।”
“ওর নামটা যেন কি?”
“রাসেল। কেন?”
“এত কম বয়সে যে ছেলেরা প্রেম করে তারা সাধারণত প্লেবয় হয়।”
“সে প্লেবয় হোক বা যেই বয় হোক ও তো আপনার মতো আধবুড়ো নয়। তাই আমি ওকেই বিয়ে করব।”
“২৫ বছর কেউ আধবুড়ো হয় কিভাবে?”
“ঐভাবে।”
বলেই দৌড়ে নিজের রুমে চলে এলো মান্যতা। অতঃপর দরজা বন্ধ করে দিল। অনুরাগ মান্যতার এহেন কান্ড দেখে হাসতে শুরু করে দিলো। আদতে মান্যতা হলো অনুরাগের খালাতো বোন। অনুরাগ যখন অনেক ছোট তখন তার বাবা মা তাকে নিয়ে ইটালিতে চলে যায়। অনুরাগ সেখানেই বেড়ে উঠেছে। বিদেশে বড় হলেও অনুরাগকে দেখে তা বোঝার উপায় নেই। চালচলন, কথাবার্তা সবদিকেই তার বাঙালিয়ানার স্পর্শ। সে যেন একদম খাটি বাঙালি। বিদেশের সুন্দরী রমণীরা অনুরাগের মন জয় করতে পারে নি। সে চেয়েছে নিজের দেশের কোন মেয়েকে বিয়ে করতে। এজন্যই তো সে ফিরে এসেছে নিজের জন্মভূমিতে। এখন তার ইচ্ছা এখান থেকেই বউ নিয়ে একেবারে ফিরবে।
অনুরাগের মা অনিতা খান নিজের বোনঝিকেই পছন্দ করেছেন নিজের ছেলের বউ হিসেবে। অনুরাগের বাবারও এই সম্পর্কে কোন আপত্তি নেই। আর বেচারা অনুরাগ তো একবারের দেখাতেই মান্যতার প্রেমে পড়ে গেছে। তাই সে ভেবে নিয়েছে বিয়ে করলে মান্যতাকেই করবে। সে মান্যতা যতই নিমরাজি হোক না কেন!
~~~~~
আপন শয়ন কক্ষে এসে নিজের ফোনটা হাতে তুলে নিলো মান্যতা। এরপর ধীরেসুস্থে ডায়েল করল কাঙখিত নম্বরটিতে। একবার, দুবার করে পাঁচবার ফোনের রিং বেজে চলেছে কিন্তু রাসেলের ফোন রিসিভ করার নাম নেই। মান্যতার ভীষণ রাগ হতে লাগল। সে বিড়বিড় করে বলতে লাগল,”রাসেলের বাচ্চা রাসেল ফোনটা রিসিভ কর। নাহলে তোর একদিন কি আমার দশদিন।”
কিছুক্ষণ বাদেই রাসেল ফোনটা রিসিভ করল। রিসিভ করেই ন্যাকা সুরে বলল,”সরি জান একটু লেইট হয়ে গেল। আসলে ওয়াশরুমে ছিলাম।”
“তোর এসব জানটান বাদ দে নাহলে তোকে গিয়ে ওয়াশরুমের কমোডে চু**বিয়ে আসব।”
“আরে জা…না মানে দোস্ত তুই এত রেগে যাচ্ছিস কেন? কিছু কি হয়েছে?”
“কিছু হয়েছে মানে? কি হয়নি সেটা বল। আমার ফ্যামিলি আমার বিয়ে ঠিক করেছে।”
“ভালোই তো অনেকদিন পর বিয়ের দাওয়াত খেতে পারবো। মেনুতে বিরিয়ানি থাকছে তো?”
“বিরিয়ানি আমি তোর মাথায় বানাবো! আমি পড়েছি বিপদে আর তুই মশকরা করছিস।”
“আচ্ছা, ঠিক আছে। কুল, কুল। বল কি সমস্যা।”
“তুই তো জানিস আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।”
“না করার কারণ কি দোস্ত? তুই কি কাউকে ভালো টালো বাসিস?”
“হ্যাঁ, আমি ভিনচেঞ্জোকে ভালোবাসি।”
“ভিনচেঞ্জো মানে তোর ঐ সিক্রেট সুপারস্টার?”
“হ্যাঁ, যার ভিডিও আমি সবসময় দেখি। কি সুন্দর গান গায়, কি সুন্দর ছবি আঁকে। সে দেখতেও নিশ্চয়ই খুব হ্যান্ডসাম হবে।”
“হতেই পারে।”
“হতে পারে না হবেই। আমি ভিনচেঞ্জো ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না।”
“শোন, মান্যতা। তোকে একটা কথা বলছি। এই ভিনচেঞ্জো হলো একজন ইনস্টাগ্রাম সেলিব্রিটি যার চেহারাটা পর্যন্ত কেউ দেখে নি। এমনকি সে কোথায় আছে এটাও কেউ জানে না। গোটা বিশ্বে তার কোটি কোটি ফলোয়ার তবুও সে জনসম্মুখে আসে না। তার ব্যাপারে কেউ কিছুই জানে না৷ তুই শুধু শুধু তার অপেক্ষায় বসে থাকবি কেন বল তো?”
“আমি এত কিছু জানি না। আমার তো ভিনচেঞ্জোকেই লাগবে সেটা যে কোন কিছুর বিনিময়েই হোক না কেন।”
“তুই কিন্তু মরীচিকার পিছনে ছুটছিস।”
“সেটা আমার ব্যাপার তোকে এত ভাবতে হবে না। তোকে আমি যেটা বলছি তুই সেটা শোন। তুই প্রস্তুত থাকিস। তোকে যেকোন সময় আমার কাজে লাগবে।”
“আমাকে তোর কি কাজে লাগবে?”
“আমার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে মানে আমার খালাতো ভাই..নামটা যেন কি… হোয়াট এভার। আমি এই বিয়ে করব না জন্য তাকে বলেছি আমার একটা বয়ফ্রেন্ড আছে নাম রাসেল। মানে তোর কথাই বলেছি।”
“আমি আবার তোর কোন জন্মের বয়ফ্রেন্ড?”
“আরে ভাই চুপ করে আগে আমার কথাটা শোন।”
“হু, বল আমি শুনছি।”
” তোকে আমার খালাতো ভাইয়ের সামনে আমার বয়ফ্রেন্ড হওয়ার নাটক করতে হবে।”
“কি!!! বাচ্চো কি জান লোগি কেয়া? আমি পারব না।”
“তোকে পারতেই হবে….নাহলে আমি কিন্তু জেসমিনকে বলে দেব যে তুই তলে তলে অন্য মেয়েদের সাথে…”
“এই এমন করিস না প্লিজ। তুই তো জানিস আমি কত কষ্ট করে ওকে পটিয়েছি।”
“যদি নিজের ভালো চাস তাহলে আমার কথাটা শোন।”
“ঠিক আছে বোন ঠিক আছে। তোর কথাই মেনে নিলাম। তুই যা বলবি তাই করব। শুধু তুই জেসমিনকে কিছু বলিস না।”
“এই তো এজন্যই বলে সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাকাতে হয়। এখন তুই আমার সব কথা মেনে চললে আমিও জেসমিনকে কিছু বলব না।”
“আচ্ছা মান্যতা একটা কথা বল, তুই কি সত্যি ঐ ভিনচেঞ্জোর আশায় সবসময় বসে থাকবি।”
“হ্যাঁ।”
“যদি আজীবন তার দেখা না পাস, তবে?”
” তাহলে আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার জন্যই ওয়েট করব। কারণ আমি ভিনচেঞ্জোকেই নিজের স্বামী মেনে নিয়েছি। তাই তার স্থলে অন্য কাউকে বসানো সম্ভবপর নয়।”
“এসব তোর আবেগের কথা।”
“আবেগের বয়স আমার নেই।”
“এটা তো আবেগেরই বয়স। তুই, আমি আমরা সবাই তো আবেগের বয়সেই আছি।”
“আমি ডিফরেন্ট। তুই বুঝবি না। আমার মেন্টাল এইজ অনেক বেশি৷ আমি তোর মতো ইমম্যাচিউর নই। গট ইট?”
“ইয়া।”
“কল রাখ।”
~~~~
দুপুরের লাঞ্চ করতে ডিনার টেবিলে গিয়ে বসল মান্যতা। তার মা তার পাতে পোলাও, কোরমা তুলে দিলো। মান্যতা বুঝল তার খালার আগমন উপলক্ষেই এসব রান্না হয়েছে। নাহলে তার বাবা যা কৃপণ মাসে একবারও এমন রাজসিক খাবার তাদের পাতে পড়ে না। মান্যতার পাশেই বসে আছে তার ১৩ বছর বয়সী ছোট ভাই মুবিন। সে পোলাওয়ের সুবাস নিয়ে বলতে লাগল,”ইস যদি খালারা এভাবে প্রতিদিন আসত তাহলে আমরা প্রতিদিন এমন খাবার খেতে পেতাম।”
তাদের মা রাহেলা মুবিনের এমন কথা শুনে মুখ বাকিয়ে বলেন,”এমন ভাবে বলছিস যেন সারাদিন না খেয়ে থাকিস! রোজই তো ভালোমন্দ খাস।”
মান্যতা এবার আর থাকতে পেরে বলল,”হ্যাঁ, ঐ তো ডাল, ভাজি আর গরম গরম ভাত। এই তো ভালোমন্দ খাওয়া।”
মুবিন ও মান্যতা সমস্বরে হেসে উঠল। এরমধ্যেই সেখানে চলে আসল অনুরাগ ও তার বাবা-মা। তাদেরকে দেখেই হাসি থামিয়ে দিলো মান্যতা।
To be continue…
#গোধূলি_লগ্নে_হলো_দেখা
#ইয়াসমিন_খন্দকার
#Part_1