গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে দ্বিতীয় খন্ড (পর্ব ৫)

0
553

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৫ (২য় খণ্ড)

আজ শনিবার। কোহিনূর প্রায়ই বেশ দ্রুতই ঘুম থেকে ওঠে সকালে। কাজের চাপে আজও তাড়াতাড়িই উঠেছে। তখন সবে সকাল সাড়ে ছয়টা। শীতের আমেজে মজে উঠেছে প্রকৃতি। শীত শীত করছে একটু। আলো ফুটতেও দেরি হয় এখন। বেশ খানিকক্ষণ গার্ডেনে এক্সারসাইজ করে যখন সে ব্ল্যাক কফি নিতে কিচেনে ঢুকতে চায় তৎক্ষনাৎ কিচেনে এক অন্য মানবীকে দেখে পিছিয়ে আসে। হাতে কফির মগ নিয়েই পিছু ফিরে নয়নতাঁরা তার বিগ ব্রাদারকে এমন ভড়কে যেতে দেখে গোল গোল চোখে তাকায়। কোহিনূর স্বস্তির শ্বাস নিয়ে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“তুমি? এত সকালে? কয়টা বাজে?”

কোহিনূর হুড়মুড়িয়ে ঘড়ির দিকে তাকায়। ঘড়ি নষ্ট হলো না তো? নাহ, সবে সকাল সাড়ে ছয়টা পার হয়েছে। নয়নতাঁরা নিজের ছোটো চুলের ঝুঁটিতে হাত বুলিয়ে কফির মগ নিয়ে এগিয়ে এসে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“সেটা তো আমারও প্রশ্ন বিগ ব্রাদার! কয়টা বাজে আসলে? রাতটা কি এত বড়ো হয়ে গেল? নাকি ঘড়ি নষ্ট?”

“রাত যতই বড়ো হক। নয়নতাঁরা আহমেদের পক্ষে ঘুম থেকে দশটার আগে ওঠা অসম্ভব! আজ এত সকালে তুমি! আই ক্যান নট বিলিভ!”

নয়নতাঁরা এবার রাগ নিয়ে কোহিনূরের হাতে মগ ধরিয়ে দিয়ে বলে,
“নয়ন চাইলেই সব করতে পারে। শুধু তুমি নিজে একা অলরাউন্ডার নও বুঝলে? আমিও শাহিদ আহমেদের মেয়ে!”

বলেই নিজের ছোটো চুলগুলো ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয় নয়ন। তার এমন কথা এবং কাজে নিজের হাসিটা আঁটকে রেখে মগটা একবার চেক করে নেয় কোহিনূর। সন্দিহান হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কফিও বানিয়েছ! সূর্য ঠিক ডিরেকশনে উঠেছে তো?”

“বাহিরে গিয়ে দেখে এসো।”

“কফির মধ্যে কিছু মিশিয়ে দাওনি তো?”

নয়নতাঁরা এবার ক্ষে’পে যায়। এতদিন পর সে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছে। তার ভাইয়ের উচিত তাকে উৎসাহ করা। কিন্তু তা না করে খুব সুন্দর করে তার মজা উড়িয়ে চলেছে। সহ্য করা যায় না! ছোঁ মে’রে কোহিনূরের হাতের মগটা টেনে নিয়ে তেতে উঠে বলল,
“খেতে হবে না তোমার কফি। নিজে বানিয়ে খাও। আমি খাব এই কফি।”

বলেই মূহুর্তেই এক চুমুক দিয়ে নাক সিটকায় নয়নতাঁরা। জিহ্বা বের করে কেশে উঠে ফের মগটা কোহিনূরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
“এগুলো মানুষ খায়? কফিতে মাত্র এক চামচ চিনি আর এতগুলো করে কফি বিন!”

কোহিনূর এবার স্বাচ্ছন্দ্যে কফিতে চুমুক লাগায়। দৃঢ়তার সুরে বলে ওঠে,
“বেশি মিষ্টি খেলে ডায়বেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে নয়তবা অল্প বয়সে পেকে যাওয়ার। যেমন তুমি পেকেছ!”

ভেংচি কাটে এবার নয়নতাঁরা। কিচেন থেকে বাহিরে বেরিয়ে দাঁত বের করে হেসে বলে,
“তোমার এমনিতেই ডায়বেটিস হয়ে যাবে খুব দ্রুত। আমার ভাবিটা তো পুরোই মিষ্টির দোকান। অবশ্য তোমার একান্ত। হিসেব করে বলো তো কয়টা মিষ্টি খেয়েছ আজ অবধি?”

সরু চোখে তাকায় কোহিনূর। নয়নতাঁরা আসলে কী বলতে চাইছে সেটা বুঝতে খানিকটা সময় লেগে যায় ওর। কথাটা বুঝে উঠতেই চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায় সে। ততক্ষণে নয়ন হাওয়া! তাকে কী আর পাওয়া যায়?

খুব সূক্ষ্ম চোখে নিজের লক্ষ্য ঠিক করছে কোহিনূর। ফট করেই ট্রি’গারে চাপ দিতেই সরাসরি লক্ষ্যভেদ হয়। রি’ভলবা’র থেকে হালকা ধোঁয়ার আভাস পাওয়া যায়। মেহরাজ রুমে ঢুকে আসে। বিনয়ের সাথে বলে,
“স্যার, রাগিনী ম্যাডাম এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে।”

রি’ভলবা’র থেকে চোখ সরিয়ে চকিতে তাকায় কোহিনূর। ধীর পায়ে ঘরটাতে প্রবেশ করে রাগিনী। আকাশি এবং সাদা রঙ দুটোর মিশ্রনে একটা লং স্কার্ট পড়েছে সে। গলায় ঝুলানো সাদা ওড়না। কোহিনূরের চোখটা যেন না চাইতেও সেখানেই থামল। বদলে গেল চাহনি। এ যেন আকাশে ভেসে বেড়ানো এক স্বচ্ছ মেঘ! যাকে ছুঁতে মনটা দাবি করে। রীতিমতো আন্দো’লন করে। মেহরাজের গলা খাঁকারিতে নড়েচড়ে উঠে ঢক গিলে দৃষ্টি সরিয়ে হাত থেকে টেবিলে রাখে রি’ভলবা’র কোহিনূর। মেহরাজ মিটমিটিয়ে হাসে। কোহিনূরকে লজ্জা বা বিব্রত করে আজকাল সে বেশ মজা পায়। আগে এমন কোনো বিষয় ছিল না যাতে তার স্যার লজ্জায় নেতিয়ে যাবে। এখন বিষয়বস্তু পেয়ে মোটেও সুযোগ ছাড়ে না সে। হাসতে হাসতে তার খেয়াল হয় কোহিনূর তার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। তাৎক্ষণিক চোখমুখটা ফ্যাকাশে হয় তার। দ্রুত দরজার দিকে ফিরে বিদ্যুৎ বেগে প্রস্থান নেয়।

“ব্যাপার কী? এমনিতেই তো সারাদিন কল্পনার শহরে সারাদিন রাজত্ব করো। এমনভাবে দখল করেছ সরাতেও পারি না। এখন যদি সামনাসামনি হুটহাট করে আসো তাহলে আমি তো শে’ষ! আমার চাকরিটা খে’য়ে ফেলার বুদ্ধি আঁটছ বুঝি?”

রাগিনী ছোটো ছোটো চোখে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। কোহিনূর রি’ভলাবা’রই ঘাঁটাঘাঁটি করছে তখনও। ভারাক্রান্ত কণ্ঠে রাগিনী বলে ওঠে,
“ঠিক আছে। তাহলে আমি বরং চলে যাই।”

উল্টো পথে হাঁটা ধরবে রাগিনী সেই সময় খপ করে তার বাম হাতটা চেপে ধরে টেনেই নিজের সংলগ্নে নিয়ে আসে কোহিনূর। অন্যহাতে তার চিবুক ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে,
“মেয়েরা বড্ড বেশি বোঝে! তুমিই তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।”

“বেশি বোঝার কী পেলেন? আপনি যা বলেছেন সেই অনুযায়ীই তো কাজ করতে যাচ্ছিলাম।”

“আমার মুখের কথায় শুনতে হবে? মনের কথা তোমার মনকে স্পর্শ করতে পারে না?”

রাগিনী এবার মিষ্টি করে হাসে। রিনরিনে সুরে বলে,
“স্পর্শ করতে পারে তো। আপনার মনের কথার তীব্রতা এবং গভীরতা এতটা তীক্ষ্ণ কেন কোহিনূর সাহেব? সেই কথাই তো আমার দৃঢ় মনটার দ্বার ভেঙে প্রবেশ করতে পেরেছে।”

রাগিনীর নাক টেনে দেয় কোহিনূর। তারপর জিজ্ঞেস করে,
“এত সকাল সকাল ম্যাডামের আগমন ঠিক কী কারণে?”

এক হাতের টিফিনবক্সটা কোহিনূরের সামনে তুলে ধরে রাগিনী।
“বিরিয়ানি রান্না করেছিলাম। এতদিন তো রাগিনীর হাতের খাবার ছাড়া মেন্টাল পেশেন্ট কোহিনূরের চলত না। তাই ভাবলাম নিয়ে আসি।”

“এসব বলতেই আমার মনে পড়ে গেল তোমার সেই গাণ্ডেপিণ্ডে খাওয়ানোর কথা। কী সাংঘা’তিক বুদ্ধি করেছিলে তুমি! বিয়ের পর এমন সাংঘা’তিক বুদ্ধি করবে না প্লিজ! তাহলে প্রতিদিন আমায় ডক্টরের কাছে ছুটতে হবে।”

রাগিনী এবার শব্দ করে ওঠে। তার হাসির প্রতিধ্বনিতে মুখরিত হয় ঘর। কোহিনূর মনে মনে খুব করে চায় এই হাসিটা দেখার সৌভাগ্য তার সারাজীবনের জন্য হোক। এই হাসিটার আধিপত্যও শুধু তার হোক!

“এখানে আপনি প্র্যাক্টিস করেন?”

রি’ভলবা’রের দিকে তাকিয়ে আনমনে কথাটা প্রশ্ন করে রাগিনী। কোহিনূর অমায়িকভাবে উত্তরে বলে উঠল,
“আমি কেন? আমাদের এখানকার সবাই কমবেশি করে। আমি প্রতিদিন নিয়ম করে এলেও যখন মাথায় অনেক বেশি প্রশ্ন ঘোরে তখন এখানে এসে ইচ্ছেমতো নিশানা ঠিক করি আর বু’লেট নষ্ট করি। মাঝে মাঝে নিশানা হিসেবে মেহরাজও বাদ যায় না।”

“কী বলছেন? উনাকে নিশানা হিসেবে ব্যবহার করেন? কী ভয়ানক! একবার এদিক থেকে ওদিক হলে কী হবে ভেবেছেন?”

কোহিনূর নরম সুরে বলে,
“আমার মনে কী জানো? ও আমায় ভীষণ বিশ্বাস করে। প্রথমে ভয়ে কাঁপা-কাঁপি করলেও ঠিকই আমার কথা মেনে সামনে এসে দাঁড়ায়। ও চাইলেই ট্রান্সফার নিতে পারে অথবা চাকরি ছাড়তে পারে। এই শহরে চাকরির অভাব নেই। মেহরাজ একজন ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। ওর কোয়ালিফিকেশন অনেক ভালো। তবুও কেন যেন সে এখানেই পড়ে আছে।”

“উনি আপনাকে সম্মান করেন। শ্রদ্ধা করেন, ভালোও বাসেন।”

কোহিনূর মলিন হাসে। আসলেই হয়ত তাই। ছেলেটার সঙ্গে কথা বলে, আলোচনা করে এক অন্যরকম প্রশান্তি আসে তার মনে।

রাগিনী এখনো ফ্যালফ্যাল করে রিভ’লবা’রের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। বিষয়টা খেয়াল করে কোহিনূর তার হাতে রি’ভলবা’র তুলে নিয়ে বলল,
“ট্রাই করবে?”

শিউরে উঠল রাগিনী। দুই ধাপ পিছনে সরে গিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
“না না! একদম না। রেখে দিন ওটা। আমার ভয় করে।”

“কিছু হবে না। সাহস করে দেখো না একবার!”

“আপনি জানেন তো আমার ফোবিয়া আছে!”

কে শোনে কার কথা? কোহিনূর রাগিনীর ব্যাগ আর টিফিন বক্স চেয়ারে রেখে রাগিনীকে নিজের সামনে এনে একবারে বুকের সাথে ঠেকিয়ে ধরল। রাগিনীর এক হাতে রি’ভলবা’র তুলে দিতেই থরথর করে কাঁপুনি শুরু হলো তার। তার ভয় পাওয়া দেখে হতাশ হয় কোহিনূর। এত ভয় পেলে চলে? রাগিনীর কাঁধে থুঁতনি রেখে সে ধীর গলায় বলে,
“ভয় পেতে নেই রাগিনী। ভয় জয় করতে হয়। নির্জন আহমেদ কোহিনূরেট স্ত্রী হতে যাচ্ছো তুমি! এই বিষয়ে ভয় থাকলে চলবে না। তোমার বাবার কথা কিন্তু আংশিক সত্য! আমাকে অনেক কিছু সামলাতে হয়, মোকাবেলা করতে হয়। সেই হিসেবে এতটুকু তোমার রাখতে হবে। ভবিষ্যতের জন্য সাহস সঞ্চয় করতে হবে রাগের রানি!”

রাগিনী মুখ কাঁচুমাচু করে নিশানার দিকে তাকায়। কোহিনূর ফের বলে,
“জাস্ট একবার! সাহস করো। দেখবে ভয় জয় হয়ে গিয়েছে। ভয়ের সামনাসামনি আসতে হয়! তবেই তা অতিক্রম করা যায়।”

রাগিনী ঢক গিলে বড়ো শ্বাস নিতেই তার হাত ধরে ট্রি’গারের কাছে রাখল কোহিনূর। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সামান্য শব্দে বু’লেট বেরিয়ে গেঁথে গেল নিশানা থেকে কিছুটা দূরে। মাথা ঘুরতে থাকে রাগিনীর। ঘনঘন শ্বাস নিতে থাকে। স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগে তার। বেশি শব্দ হয়নি। রি’ভলবা’রে সাইলেন্সার লাগানো। ফলে দ্রুতই ধাতস্থ করতে পারে নিজেকে রাগিনী। কোহিনূর তার গাল টিপে ধরে আশ্বস্ত করে বলে,
“মাই ব্রেভ ইয়ং লেডি!”

বুকটা এখনো ধুকপুক করছে রাগিনীর। নিজের হাতের ঘড়ি দেখে বেশ দ্রুত সরে এসে চেয়ারে রাখা ব্যাগটা কাঁধে তুলে বলে,
“অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে ফিরতে হবে।”

“তাড়া কীসের এত? আরেকটু থেকে যাও! শান্তি মিলেনি তো আমার।”

রাগিনী কড়া গলায় বলে,
“মিলতে হবেনা শান্তি। কাজ করুন আপনি। অফিসে এসে ফাঁকিবাজি করলে চাকরি থাকবে?”

রাগিনীর দুটো কাঁধ ধরে কোহিনূর তার সামনে দাঁড় করিয়ে মৃদু হেসে জবাব দেয়,
“এই শান্তি চিরজীবনের জন্য পেতে হলে যদি চাকরিটা নাও থাকে তবুও আমি রাজি।”

“মি. অফিসার! চাকরিটা না থাকলে বউকে কী খাওয়াবেন?”

রাগিনীও এবার কোহিনূরের কাঁধে দুটো হাত তুলে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে। কোহিনূরও ভণিতা ছাড়াই বলল,
“চায়ের দোকান নিয়ে বসব। যা ইন’কাম হবে তাতে তোমার হবে না? তুমি মাঝে মাঝে আসবে। এসে আমার ক্লান্তি এবং ঘর্মাক্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে সুন্দর করে হাসবে। ব্যস…তাতেই আমার কলিজা ঠাণ্ডা হবে রাগিনী!”

রাগিনী মাথা নুইয়ে লজ্জা নিয়ে হাসে। মানুষটা বোধহয় সত্যি পা’গল। তাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
“এখন আমি যাই। নয়ত দেরি হয়ে যাবে।”

বলেই যাওয়ার জন্য দরজার দিকে ঘুরে দাঁড়ায় রাগিনী। ফের ঘাড় ঘুরিয়ে বেশ আগ্রহ নিয়ে বলে,
“জানেন তো! আমি যখন কাল স্টেশন থেকে ফিরে যাই আর রাতে বাবা ফিরে আসে তখন তার আচরণ অন্যরকম ছিল।”

“কেমন ছিল?”

“এমন ব্যবহার করছিল যেন সব স্বাভাবিক। যেন বাবা জানত আমি ফিরে আসব। এমনকি আমার সঙ্গে বসে একসাথে ডিনার করতে করতে গল্পও করেছে।”

কোহিনূর শব্দহীন হেসে নরম সুরে শুধায়,
“তাতে তুমি বেশ খুশি তাই না?”

রাগিনী চোখেমুখে চমক নিয়ে দ্রুত মাথা ঝাঁকায়। পরমূহুর্তেই উৎসুক পানে চেয়ে বলে উঠল,
“আপনি কবে বাবার সঙ্গে কথা বলতে যাবেন? আমার হাতে তো সময় নেই। রেজাল্ট দিলে আমায় চট্টগ্রাম ফিরতে হবে।”

কোহিনূর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রাগিনীর ডানহাতটা নিজের মুঠোয় নিয়ে তার হাতের পিঠে আলতো করে ওষ্ঠদ্বয় ছুঁইয়ে বলে,
“এই ডার্ক ম্যাক্সের কেইসটা ক্লোজ হলেই সব হবে। একটু সময় দাও প্লিজ!”
রাগিনী বিশ্বস্ত হয়ে মাথা দুলায়। কোহিনূরের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে সে। কোহিনূর তার যাওয়ার পানে চেয়ে রইল। দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতেই বুক চিড়ে বেরিয়ে এলো আরেকটা দীর্ঘশ্বাস। সে ভরসা পাচ্ছে না নিজের প্রতি। এই কেইস নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। সেকারণেই তার সময় চাওয়া।

শেরাটন রেস্টুরেন্ট বিকেল পাঁচটায় এসে বসে আছে নয়নতাঁরা। এখন বাজে সাড়ে পাঁচটা। তবুও রায়ানের দেখা পেল না সে। বোধহয় একটু বেশিই তাড়াতাড়ি এসে পড়েছে। রায়ানকে সে আসতে বলেছিল ছয়টায়। অতিরিক্ত অধীর হয়ে সে আগেই এসে বসে আছে। বারবার স্টাফ এসে জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে অর্ডার নেওয়ার জন্য। নয়নতাঁরা বারবারই কফি অর্ডার করছে। খানিকক্ষণ পর সে ওয়াশরুমে আসে। আয়নায় দেখে নেয় সব ঠিকঠাক আছে কিনা! আজ সে বেশ যত্ন করেই সেজেছে। প্রায় একঘণ্টা ধরে জামা বাছাই করেছে। শেষমেশ নীল রঙের একটা গাউন পড়েছে। তবুও তার চিন্তা হচ্ছে মানুষটা একটা বারের জন্যও মুগ্ধ হয়ে তাকাবে তো?

ছয়টা পেরিয়ে সাড়ে ছয়টায় ঘড়ির কাঁটা ছুঁইছুঁই। রায়ানের আসার নাম নেই। নয়নতাঁরা ভার মুখে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে আর আশেপাশে তাকাচ্ছে। একবার করে ফোন দেখছে। ফোনে সময় দেখে বলে,
“লোকটার মনে আছে তো আমি তাকে ইনভাইট করেছিলাম? হয়ত মনেই নেই। এতকিছুর মাঝে আমাকে আর আমার কথা মনে রাখার মতো স্পেশাল মানুষ বোধহয় আমি নই।”

এসব ভেবে ফ্যাকাশে হয় নয়নতাঁরার মুখশ্রী। মনে মনে ভাবছে কল করবে কিনা মানুষটিকে। পরক্ষণেই মত পাল্টে থম মে’রে বসে থাকছে। সময় কাটতে থাকল। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে ছুটতে থাকল। মিলল না রায়ানের দেখা। ধীরে ধীরে ভারাক্রান্ত হলো নয়নতাঁরার ছোট্ট মনটি। বিষণ্ণ হতে টিস্যু হাতে নিয়ে দ্রুত মুছে ফেলল ঠোঁটের হালকা গোলাপি লিপস্টিক। ওয়েটারকে বিলের কাগজ দিতে বলল। মানুষটি আর আসবে না!

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here