#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪ (২য় খণ্ড)
মুখ লুকানোর বৃথা চেষ্টা করে গেলেন রাশেদ সাহেব। এসি এবং ঠাণ্ডা আবহাওয়ার মাঝেও দরদর করে ঘামছেন তিনি। আচমকা পলকহীন চোখে তাকিয়ে থাকা মহিলাটি বললেন,
“মুখ লুকিয়ে যাচ্ছেন কেন? আমি আপনাকে চিনে ফেলেছি।”
এমন কথায় মহিলাটির বড়ো বোন হকচকিয়ে তাকালেন। উনিও ঠিক বুঝতে পারছিলেন না তার ছোটোবোন কী বলছে। বোনের কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে বললেন,
“কী বলছিস এসব শামীমা? মাথা গেছে নাকি তোর? ডাক্তার সাহেব! আপনাকে বলছিলাম আমার বোনটার কিছু হইছে। এমন ভাব ধরে মনে হচ্ছে আপনারে চিনে। এটাও নির্ঘাত ওর মাথার সমস্যার কারণে। আপনিই কিছু করেন।”
রাশেদ সাহেব স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছেন না। অস্থির ভঙ্গিতে বললেন,
“এই মহিলার মেন্টাল হেলথ্ একেবারেই খা’রাপ হয়ে গিয়েছে। এভাবে উনার ট্রিটমেন্ট হবে না। আপনি উনাকে কোনো মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করুন।”
শামীমার বড়ো বোন কিছু বলার আগেই শামীমা উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়াল। চোখমুখ লাল করে চেঁচিয়ে উঠলেন তিনি।
“খবরদার আমাকে তাড়ানোর চেষ্টা করবেন না। আমাকে ইচ্ছেকৃত পা’গ’ল প্রমাণ করতে চাইছেন? না চাইতেও আজ আপনার দেখা পেয়েছি। এত সহজে আমি যাব না।”
“দেখুন! রিল্যাক্স! সিনক্রিয়েট করবেন না। মাথা ঠাণ্ডা করুন।”
“করতে তো চাইনি। আপনি বাধ্য করছেন। এতগুলো বছর আমি একা একা বেঁচেছি। আমাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমার অংশটুকুও রাখেন নি। ছি’নিয়ে নিয়েছেন সব। আজ যখন হাতের নাগালে পেয়েছি তখন আমি এত সহজে সব ছাড়ছি না। আপনার সন্তান আমায় ফিরিয়ে দিন শাহ্ রাশেদ।”
রাশেদ সাহেবও হকচকিয়ে উঠে দাঁড়ান। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকেন এক মায়ের দিকে যে নিজের সন্তানের দাবি নিয়ে দাঁড়িয়ে। চোখ দিয়ে স্পষ্ট ক্রো’ধের আ’গুন যেন বেয়ে পড়ছে শামীমার। তার বড়ো বোন এবার তাকে থামাতে ম’রিয়া হয়ে উঠলেন। তাকে চেপে ধরে রাশেদ সাহেবের উদ্দেশ্যে বললেন,
“কিছু মনে করবেন না। ও আসলে সন্তান হারাইছে। তারপর থেকে এমন করে মাঝে মাঝে। আর সমস্যা বেশি হওয়ায় আপনার কাছে নিয়ে আসছিলাম। আমি ওরে হসপিটালে ভর্তি করাব।”
“আপা! এই লোকটাই আমার বাচ্চারে গায়েব করছে। দেখতে সাদাসিধা হলেও নিজের এই মুখটা বাঁচাতে আমারে নিঃস্ব করে দিছে আপা! এই লোক! এটা অন্তত বলেন আমার বাচ্চাটা বেঁচে আছে তো? নাকি মে’রে দিছেন? ও ছেলে ছিল? নাকি মেয়ে? নার্স বলছিল আমার চাঁদের টুকরা ছেলে হইছিল। ওরে নিজের কাছে রাখছেন? আমার কাছে ফিরিয়ে দেন।”
রাশেদ সাহেব কী বলবেন কূল কিনারা পেলেন না। শুধুমাত্র উনি বাঁচতে চাইছেন এই শামীমা নামটি থেকে। হাঁসফাঁস করে চলেছেন এই ভয়া’বহ বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে। শামীমার এমন চিৎকার চেঁচামেচিতে রাশেদ সাহেবের চেম্বারে ঢুকে এলো নার্স এবং ওয়ার্ড বয়। সঙ্গে সঙ্গেই বিচলিত এবং পা’গলা’টে আচরণ করা শামীমাকে জোর করে ধরে বের করলেন। তারা বিদায় নেওয়া মাত্র বুকে হাত দিয়ে বসলেন রাশেদ সাহেব। বুকে যেন পাথর চাপা পড়েছে। দম নিতে ক’ষ্ট হচ্ছে ভীষণ। চোখ বুঁজে কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। এরপর একজন ওয়ার্ড বয়কে ডেকে বললেন,
“শোনো, একটু আগেই যেই অসুস্থ মহিলা এখান থেকে বেরিয়ে গেলেন উনি যেন কখনোই আর আমার চেম্বারে ঢুকতে না পারে। মনে থাকবে?”
ওয়ার্ড বয় মাথা নাড়াল বাধ্য মতো। তারপর চলে যেতেই স্বস্তির শ্বাস ফেলে একমনে চেয়ে রইলেন উপরদিকে। এত বড়ো পৃথিবীতে বুঝি আর জায়গা ছিল না? আবারও কেন মুখোমুখি হতে হলো?
সোফায় মাথা নুইয়ে চোখমুখ শক্ত করে বসে রয়েছে অভিরূপ। সামনে গাম্ভীর্য নিয়ে বসে থাকা তার বাবা অর্থাৎ নাদিম সাহেবও রা’গ নিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।
“তুমি কি নিজের সিদ্ধান্ত বদলাবে না অভি?”
“না বদলাব না। আমি তোমাদের সাথে ফিরব না। তোমরা ফিরতে হলে ফিরতে পারো। আমি এখানে আরো কয়েকদিন থাকব।”
নাদিম সাহেব চরম বিরক্ত হলেন। বিতৃষ্ণা নিয়ে বললেন,
“চাইছ টা কী তুমি? আর এই দেশে কী কারণে থাকবে? আর কী পাওয়ার আছে এখান থেকে? যথেষ্ট পাওনি? অপ’মানিত হওয়া বাকি আছে তোমার?”
“কীসের অপ’মান বাবা? কে অপ’মান করেছে আমায়? রিজেক্টেড হওয়া মানে কি অপ’মানিত হওয়া? রাশেদ আঙ্কেলের উপর রে’গে আছো ঠিক কী কারণে? উনার মেয়ে বিয়ে ভেঙেছে সে কারণে? ভুলটা কোথায় করেছে? ও নিজের ভালো থাকার ব্যাপারে ভাববে না? ও তো আমার কথাও ভেবেছে। তুমি একজন ডক্টর আর সনামধন্য পরিবারের হয়েও সেইসব টিপিক্যাল ফ্যামিলির লোকজনের মতো আচরণ করছ না যারা বিয়ে ভেঙে যাওয়ার জন্য মেয়েকে আর মেয়ের পরিবারকে প্রতিটা মূহুর্ত দো’ষারোপ করে যায়?”
অভিরূপের মা মিসেস. সুরভী এবার ছেলের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় কথা বলে ব্যাপারটা মেটানোর চেষ্টা করলেন।
“বিষয়টা সেটা নয় বাবা। আমাদের কথা বোঝার চেষ্টা করো। এখানে থেকে আর কোনো লাভ নেই। কেন শুধু শুধু এখানে পড়ে থাকবে? গতকাল যা হলো তারপর তোমায় রেখে কী করে চলে যাব? তোমার লাভ কী এখানে থেকে? দেশে চলো! তারপর নিজের ইচ্ছেমতো চলাফেরা করবে আমরা বাঁধা দেব না তোমায়।”
অভিরূপ আবারও ভণিতা ছাড়াই বলল,
“আমি আর কয়েকদিন এখানে থাকতে চাই। কিছু কাজ আছে আমার। আমি এখনি দেশে ফিরছি না। এটা আমার লাস্ট আর ফাইনাল ডিসিশন। আমার উপর কেউ জোর খাটাবে না, মা! বাবাকেও বলে দাও।”
বলেই সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল অভিরূপ। নাদিম সাহেবের বারণ এবং কথা কিছুই কানে না তুলে হনহনিয়ে চলে গেল সেখান থেকে। সে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাদিম সাহেন রা’গ ঝেড়ে বললেন,
“দেখেছ তোমার ছেলেকে? দিন দিন কথার অবাধ্য হচ্ছে। অবশ্য বাধ্য তো কোনোদিন ছিলই না। এখন নিজের ভালোটাও বোঝে না। আর কী করার বাকি আছে তার সেটাই বুঝছি না আমি।”
মিসেস. সুরভী দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়লেন। উনি নিজেও বুঝতে পারছেন না ছেলেকে। তাদের সামনে এসে দাঁড়াল নোমান। ধীর গলায় বলল,
“আঙ্কেল!”
নোমান শান্তভাব নাদিম সাহেবকেও এবার নীরব করালো।
“তুমি? কী বলবে বলো!”
“অভির মানসিক অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। গত রাতে ঘুমোয় নি ঠিক করে। ছটফট করেছে। উঠে উঠে বারান্দায় গানের সুর তুলেছে। তাল মিলিয়ে গিয়েছে। তার প্রিয় গিটার ছুঁড়ে ফে’লেছে। ও এখন একটা রাগ আর জেদের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় ওকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। ওকে জোরাজোরি করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। ওর জেদ উঠলে আরো বেশি ব্যাপারটা বিগড়ে যাবে।”
“তো কী করতে বলছ আমাকে? ওকে রেখে যাব? নাকি থেকে যাব? এখানে থেকে যাওয়া যায় আর?”
নাদিম সাহেবের কথার বাক ভঙ্গিতে নোমান বুঝল তিনি আবারও রাগছেন। তবে নোমানও যথাসম্ভব নিবৃত হয়ে বলল,
“আপনি বোধহয় রাশেদ আঙ্কেলের প্রতি রাগ থেকে এখান থেকে যেতে চাইছেন। কিন্তু এটাও তো ভাবুন উনার দোষটা ঠিক কোথায়? উনিও তো নিরুপায় ছিলেন! তাছাড়া অভিরূপকে দেখে মনে হয় সে যাবে এখন?”
নাদিম সাহেব এবার নিভলেন। থমথমে হয়ে গেল মুখটা। নোমানকে উনার একারণেই ভরসা হয়। ছেলেটা সব বোঝে। এমনকি এই জেদি অভিরূপকে সামলাতেও পারে সে। এতবছর তো সামলে আসছে। কথায় আছে যেই কাজ মা-বাবা করতে পারে না সেটা বন্ধু করতে পারে। তাছাড়া ছেলেদের বন্ধুত্ব নিবিড় হয়। মা-বাবার সঙ্গে সব অনুভূতির খোলাসা করা যায় না।
“তাকে একটু সময় দিন আঙ্কেল। আর তাকে বোঝানোর সব চেষ্টা আমি চালাচ্ছি। সে বুঝবে। ওর মন শান্ত হলেই ফিরবে আমাদের সাথে।”
নোমানের কথায় শেষমেশ সম্মতি জানালেন নাদিম সাহেব। সময় গড়াতে থাকুক। দেখা যায় কী হয়!
রাতে ফিরতে আজ একটু দেরি হয়েছে রাশেদ সাহেবের। সদর দরজায় কলিংবেল বাজানোর পর রাগিনী বেশ ভয়ে ভয়েই দরজা খুলে দিল। দ্বার খুলে যাওয়ার পরে নিজের মেয়েকে দেখে একটুও চমকালেন না রাশেদ সাহেব। নিজের হাতের ব্যাগটা নিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বাড়িতে ঢুকে বললেন,
“কখন বাড়ি ফিরলে?”
রাগিনী নতদৃষ্টি নিয়ে থমথমে সুরে বলে উঠল,
“বাবা আমি…”
হাতের ইশারায় তাকে থামতে বললেন রাশেদ সাহেব। চাপা সুরে বললেন,
“নো এক্সকিউজ। জানতে চাইছি ট্রেনে উঠেছিলে বাকি তার আগেই ফিরেছ?”
“তার আগেই চলে এসেছি।”
“বাড়ির সবাই কি খাওয়াদাওয়া সেরে নিয়েছে? নাকি বাকি আছে?”
রাগিনী ফ্যালফ্যাল করে দৃষ্টিপাত রইল উত্তর না দিয়ে। বাবার এত স্বাভাবিকতা মেনে নিতে পারছে না সে। ভেবেছিল আবার রাগারাগি করবেন। কিন্তু তা না করে রাশেদ সাহেব রোজকার দিনের মতোই রাগিনীর হাতে তার ব্যাগটা তুলে দিল। রাগিনী চমকে উঠে বলে উঠল,
“সবাই খেয়েছে। আমি আর তুমি বাদ আছি।”
“তাহলে ব্যাগটা রেখে এসে খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করো। একসাথে খেতে বসি।”
রাগিনী আরেক দফা অবাক হলো। হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইল বাবার দিকে। পরমূহুর্তেই নিজেকে ধাতস্থ করল সে। ঠোঁটে ফুটিয়ে তুলল হাসির রেখা। সে যেন তার আগের বাবাকে দেখতে পাচ্ছে। তার হাসির রেশের উজ্জ্বলতা দেখা গেল চোখেও। সে মাথা নাড়িয়ে দ্রুত ছুটল খাবার ব্যবস্থা করতে।
নিশুতি রাত। চারিদিকে নীরবতার মাঝে হালকা ঝিঁঝিপোকার ডাক। মৃদু হাওয়া ভেসে আসছে জানালা দিয়ে। ঘুমন্ত রিওটার মাথায় আস্তে করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে রাগিনী। আর রিও ঘুমের মাঝে ঘড়ঘড়ে আওয়াজ করছে। তার মায়াভরা মুখটা দেখে কেউ বলবেই না এই ছোটো বিড়ালও কারোর সঙ্গে তুমুল যু’দ্ধ পাকিয়ে ফেলতে পারে! রাগিনীর মাথায় চিন্তা এলো এবার। আসলেই কোহিনূরের বাড়িতে যাওয়ার পর সারাদিন দুজনের মাঝে কত প্রকারের তা’ণ্ডব লেগে থাকবে সেটা নিয়েই দুঃশ্চিন্তা ওর। এই উৎকণ্ঠার মাঝে ফোনের রিংটোনটা নিজ ছন্দে যখন বাজতে শুরু করল তখন তড়িঘড়ি করে উঠে বসল রাগিনী। এত রাতে কার ফোন? রিও-এর ঘুম ভাঙবে ভেবে তেমন কিছু না ভেবেই দ্রুত ফোনটা রিসিভ করল সে।
“হ্যালো কে?”
“আমি গো বউরানি! আমি!”
আশ্চর্য হয়ে ফোনটা কান থেকে সরিয়ে নম্বরটা পরখ করে নেয় রাগিনী। কোহিনূরের নম্বরটা তার ফোনে সেভ নেই। আগে তো কখনো ফোনে কথা হয়নি তাদের। আবারও কানের কাছে ফোন নিয়ে বলল,
“কাজকর্ম ফেলে ফাঁকিবাজি করা হচ্ছে সিক্রেট অফিসার?”
“এত কাজকর্মের ভিড়ে তোমার সিক্রেট অফিসার অবসাদগ্রস্ত। তাই শান্তি গ্রহণ করতে নিজের সিক্রেট শান্তির উৎসের কাছে ছুটে এসেছে।”
রাগিনী এবার মুখ নিচু করে মৃদু হাসে। মিনমিন করে বলে,
“বাড়িতে পৌঁছেছেন?”
“বাড়িতে তো পৌঁছে গিয়েছি। তবে কোন বাড়ির কথা বলছ সেটা ক্লিয়ার করো! আমার বাড়িতে নাকি শ্বশুরবাড়িতে?”
“অবশ্যই নিজের বাড়িতে। এখন আপনাকে শ্বশুরবাড়ি কে ঢুকতে দেবে? আপনার শ্বশুর তো আগেই বয়’ক’ট করবে।”
বলেই শব্দ করে হেসে ফেলে রাগিনী। তার হাসির একেকটা প্রতিধ্বনি যেন ছন্দানুগমন হয়ে কোহিনূরের হৃদয়ে পৌঁছায়। আনমনে কোহিনূর বলল,
“বিশ্বাস করো! তোমার হাসির শব্দে কলিজা ঠাণ্ডা হয়ে গেল।”
“তাই? তাহলে বিয়ের পরে খাবার না দিয়ে একটা করে হাসি দিয়ে দেব। সেটা দিয়ে কলিজা আর পেট দুটোই ঠাণ্ডা করে নেবেন।”
কোহিনূর ঠোঁট টিপে হেসে বলে,
“খাবার লাগবে না তখন তোমায় লাগবে।”
বোকা বনে গেল রাগিনী। মূহুর্তেই বাকশক্তি হারিয়ে একহাতে চোখমুখে হাত দিয়ে রাখল সে। লাজহীন প্রেমিক জুটেছে তার। কথা বলাটাই বন্ধ করে দিলো একেবারে। রাগের ভাব দেখিয়ে দ্রুততার সঙ্গে রাগিনী বলল,
“ফোন রাখুন তো আপনি।”
“আরে শোনো!”
কে শোনে কার কথা! অবিলম্বে কলটা কেটে দিয়ে ঘনঘন শ্বাস ফেলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সে। মুখটা লুকালো বালিশের ভাঁজে।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন নিস্তব্ধতা বাড়তে থাকে তখন শোনা যায় এক চাপা গোঙানির আওয়াজ। শক্ত চৌকির উপর শুধুমাত্র বালিশ আর চাদর নিয়ে শুয়ে আছে রূপাঞ্জনা। চাদরটা খামচে ধরে থরথর করে কাঁপছে সে। গা জ্বরে পু’ড়ে যাচ্ছে। দেখার মতো কেউ নেই। সে একা! এক নিঃসঙ্গ, অসহায় জীবের মতোই দেখাচ্ছে তাকে। যার মৃ’ত্যু ধীরে ধীরে ঘটছে। মাথাটা অসহনীয় য’ন্ত্রণায় ছিঁ’ড়ে যাচ্ছে তার। প্রয়োজনে ডাকলেও কেউ আসে না। কাতরাতে কাতরাতে হালকা আওয়াজে ডাক দেয় পানি খাওয়ার জন্য। কেউ আসে না। হঠাৎ করেই তার এই অসুস্থতা তাকে ভাবিয়ে তুলছে বেশ। নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে ওঠার চেষ্টা করে সে।
তার এই অসহায়ত্ব দরজার বাহিরে থেকে দেখে বেশ ভালোই পৈ’শা’চিক আনন্দ লুটছে মুখোশের আড়ালে থাকা এক মানবের। এই তো সবে শুরু। সামনে নিকটে একজন লোক এলো। জিজ্ঞেস করল,
“লেডি বসকে যখন বাঁচিয়ে রাখতেই চাইছেন না তখন একবারে মে’রে দিলেই তো হয় বস! এত ধৈর্য ধরার কী দরকার?”
ডার্ক ম্যাক্স কিছুটা বিরক্ত হয়। চোখমুখ কুঁচকে বলে,
“এত তাড়া নেই আমার। দেখতে পাচ্ছো ওর মাঝে ধুঁকে ধুঁকে ম’রার য’ন্ত্রণা? অনুভব করতে পারছ আনন্দ? আমি পারছি। রি’ভল’বার চালিয়ে একবারে শেষ করে দিলে আনন্দটা পাবো কোথায়? ওকে আর আমার কোনো কাজে লাগবে না। তাই একটু আনন্দ দেওয়ার কাজেই লাগুক। কবিরের জীবনাবসান তো নিশ্চিত করে এসেছি। তবে তাকে মা’রার ইনটেনশন আমার ছিল না। কিন্তু আমার লোকজনের বাঁচার ভাগ্য ততদিনই সহায় থাকবে যতদিন আমি চাইব। নয়ত নয়।”
“লেডি বসকে দেখে আমিও অবাক হয়েছি অনেক। হঠাৎ করে তার এই পরিবর্তন মেনে নিতে পারছি না। আমাদের সঙ্গে কাজ করতে করতে তার কী এমন হলো?”
ডার্ক ম্যাক্স বড়ো একটা নিশ্বাস নেয়।
“আমি জানতাম এই পরিস্থিতি আসবে। যার নিজের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না তাকে তো অন্যকেউ পরিচালনা করবেই। এতদিন আমি করেছি। এখন অন্যকেউ করবে। সিম্পল!”
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]